Announcement

Collapse
No announcement yet.

বন্দিদের মুক্তির চেষ্টা সবার উপর আবশ্যক

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বন্দিদের মুক্তির চেষ্টা সবার উপর আবশ্যক


    আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়াতা'আলা কুরআনে সূরা বাকারাহ-এ বলেন,

    “অতঃপর তোমরাই পরস্পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।” [ ২:৮৫]

    এই আয়াতে বনী ইসরাইলের একটি ঐতিহাসিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে । তা হচ্ছে তারা কখনই তাদের গোত্রীয় বা জ্ঞাতিভাইকে ভুলে যায় না।

    ইউশা ইবনে নুন (আঃ) এর মৃত্যুর পরে বনী ইসরাইলের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাদের এক গোত্র অন্য গোত্রকে আক্রমন করতে থাকে এবং নিজ ভূমি থেকে তাড়িয়ে বহিঃশত্রুর হাতে নিজেদের ভাইদের তুলে দিতে থাকে। তাদের মধ্যে একটি গুণ তখনও বিদ্যমান ছিল, তা হচ্ছে তাদের গোত্রের কেউ বন্দি হলে তারা তাকে উদ্ধার করতে ব্যস্ত হয়ে যেত, যদিওবা তারা নিজেরাই প্রাথমিকভাবে এসব শুরুর পেছনে দায়ী!।
    আজকেও আপনারা তাদের এই মধ্যে বৈশিষ্ট্য দেখতে পারবেন, যখনই কোন ইসরাইলী সৈন্যকে বন্দি করা হয় তখনই তারা তাকে উদ্ধারে সচেষ্ট হয়ে পরে। ২০০৬ সালে গোটা ইসরাইলী বাহিনীর লেবানন আক্রমনের পেছনে অজুহাত ছিল গুটিকয়েক ইসরাইলী সৈন্যকে মুক্ত করা। এমনকি ইসরাইলীরা যখন হামাসের সাথে প্রায়ই বন্দী বিনিময় করে তখন বন্দী বিনিময়ের অনুপাতটি বেশ চমকপ্রদ, যেমন দশ হাজার প্যালেস্টাইনীর বিনিময়ে মাত্র তিন জন ইসরাইলী সৈন্য। বনী ইসরাইলের এটি একটি ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য যা তারা আজও ধরে রেখেছে। শত্রুর হাতে পতন আসন্ন হয়ে পড়লেও তারা যেকোন মূল্যে তাদের বন্দীভাইকে মুক্ত করার চেষ্টা করে।

    প্রথম যুগের মুসলিমরা তাঁদের বন্দী মুসলিম ভাইদের উদ্ধারের ব্যাপারে ঠিক এমনই যত্নশীল ছিলেন। ‘উমার ইবন ‘আবদুল আজিজ (রা) যে কোন পরিমাণের মুক্তিপণ দিয়ে হলেও মুসলিম বন্দীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। আল ইমাম আল আওযা’ই নিজেই দায়িত্ব নিয়ে চিঠি লিখে আবু জা’ফর আল মানসুরকে নিয়মিত স্মরণ করিয়ে দিতেন, যেকোনো প্রকারেই যেন রোমানদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের উদ্ধার করা হয়। মুসলিম বন্দীদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ ছিলেন নিবেদিত এক অক্লান্ত প্রাণ- চিঠি লিখে, সমঝোতা করে, যুদ্ধ করে হলেও তিনি মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। আল হাজ্জাজ ও আল মু’তাসিমের মত অত্যাচারী মুসলিম শাসকরাও কুফফারদের কারাগারে বন্দী এক দুজন মুসলিমকে উদ্ধার করতে সমগ্র শহরে আক্রমন করতে দ্বিধাবোধ করেন নি। আল মানসুর বিন আলি ‘আমির ঘোড়ার পিঠে চড়ে কর্ডোভা থেকে উত্তর আন্দালুসিয়ায় এসেছিলেন শুধুমাত্র এক মুসলিম বন্দীর মায়ের অনুরোধ রক্ষার্থে, খ্রিস্টানদের হাতে আটক তার ছেলেকে উদ্ধারের জন্য।

    এটাই আমাদের অতীত, এটাই আমাদের ঐতিহ্য- যা বিশ্বস্ততা, সাহস আর নিঃস্বার্থতার কাহিনীতে পূর্ণ। এ ছিল এমন এক অতীত, যখন মানুষ নিজের আরাম আয়েশের চেয়ে অন্যের স্বস্তি আর নিরাপত্তার প্রতি অধিক মনযোগী ছিল। আমাদের উচিত তাঁদের থেকে শিক্ষা নেয়া, - এবং বনী ইসরাইল থেকেও। আমাদের হৃদয় থেকে কাপুরুষতা দূর করতে হবে, সরিয়ে ফেলতে হবে স্বার্থপর ধ্যান ধারণা এবং উম্মাহর প্রতি আরো অনুগত,বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল হতে হবে। একজন মানুষ কিভাবে পারে নিজেকে মুসলিম কমিনিউটির ‘‘সক্রিয় কর্মী’’ বলে দাবি করতে, অথচ তাদের ভাইরা (শুধু ভাই নয়, এখন আমাদের বোনেরাও) বন্দী রয়েছে কানাডা, আমেরিকা, গুয়ান্তানামো বে, ব্রিটেন, ভারত ইত্যাদি দেশের কারাগারে আর সে তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে কোন ভূমিকাই পালন করছে না। মুসলিম ভাইদের পাশে দাঁড়ালে আপনার কি ক্ষতিটা হত? পশ্চিমা “আলেম’’রা পরিষ্কার ভাবেই এই ব্যাপারে নিজেদের অনাগ্রহ দেখিয়ে দিয়েছে, কাজেই অতীতের দিকে ফিরে তাকান। রাসুল(সা) ছিলেন একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক প্রধান, স্বামী, পিতা, শিক্ষক এবং আল্লাহর রাসুল। এই শত ব্যস্ততাও তাঁকে অত্যাচারিত মুসলিমদের নাম স্মরণ করতে ও তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে নি। আবু হুরায়রা(রা) হতে বর্ণিত যে, রাসুল (সা) তাঁর দু’আতে মুমিনদের নামগুলো ধরে ধরে উচ্চারণ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন এই বলে যে, “ও আল্লাহ্*! আল ওয়ালিদ বিন আল ওয়ালিদ, সালামাহ বিন হিশাম এবং আইয়াশ বিন আবু রাবিয়াহ সহ সকল অত্যাচারিত মুমিনদের তুমি উদ্ধার করো।” প্রকাশ্যে ও জনসম্মুখে তিনি মজলুমদের জন্য দু’আ করতেন।

    বনি ইসরাইলীরা ফিতরাতে যে বৈশিষ্ট্যটা পেয়েছে তা তারা ধরে রেখেছে। এটা মুসলিমদের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা তাদের পেছনে পড়ে আছি। এটি লজ্জার বিষয় যে আমরা আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষায় লজ্জাজনক ভাবে ইহুদিদের কাছে পরাস্ত হচ্ছি।

    তারিক মেহান্না,
    প্লিমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি,
    আইসলেশন ইউনিট – সেল # ১০৮

  • #2
    জাযাকাল্লাহ আখি , আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরাতে আপনার লিখনি আরও মজবুত হোক

    Comment

    Working...
    X