Announcement

Collapse
No announcement yet.

কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিটি উত্তম ? ধীরে ধীরে ? না, তাড়াতাড়ি ?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিটি উত্তম ? ধীরে ধীরে ? না, তাড়াতাড়ি ?

    কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিটি উত্তম ? ধীরে ধীরে অল্প তেলাওয়াত করা ? না, তাড়াতাড়ি বেশি তেলাওয়াত করা ?

    ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. তাঁর 'যাদুল মা'আদ' গ্রন্থে বলেন, এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের দু' ধরনের অভিমত রয়েছে। একটি হল, তারতিল ও তাদাব্বুর অর্থাৎ ধীরে ধীরে, চিন্তাভাবনা সহকারে অল্প তেলাওয়াত করা, দ্রুততার সাথে বেশি তেলাওয়াত করা অপেক্ষা উত্তম।
    কারণ,*কোরআনের বিষয়বস্তু বুঝা এবং তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা এরপর সে অনুযায়ী আমল করাই হল মূল উদ্দেশ্য। কোরআনের তেলাওয়াত ও তার শব্দ মুখস্থ করা মূল উদ্দেশ্যের জন্য সহায়ক মাত্র।

    *পূর্ববর্তী আলেমদের মধ্যে একজনের মন্তব্য,

    نزل القرآن لِيعمَل به، فاتخذوا تلاوته عملاً -

    কোরআন নাযিল হয়েছে সে অনুযায়ী আমল করার জন্য। কিন্তু মানুষ শুধু এর তেলাওয়াতকে আমল বানিয়ে নিয়েছে।

    এ কারণেই 'আহলে কোরআন-কোরআনের বাহক' তাঁরাই যারা কোরআনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এবং সে অনুযায়ী আমল করে। যদিও তারা পুরো কোরআন মুখস্থ করেনি। পক্ষান্তরে যারা পুরো কোরআন মুখস্থ করল কিন্তু বুঝল না এবং সে অনুযায়ী আমল করল না তারা কোনভাবেই 'আহলে কুরআন বা কোরআনের বাহক' নয়। যদিও তারা কোরআনের হরফগুলোকে তীরের মতো সোজা করে।

    দ্বিতীয় কারণ হল, সমস্ত আমলের মধ্যে ঈমানই হল সর্বোত্তম আমল। কোরআনের বিষয়বস্তু বুঝা এবং তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে মুমিনের ঈমান বৃদ্ধি পায়। (তাই বুঝে বুঝে চিন্তা ভাবনার সাথে তেলাওয়াত করাই হবে উত্তম আমল) কেননা, বিষয়বস্তু বুঝা এবং চিন্তা ভাবনা ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত তো ভাল-মন্দ, মুমিন-মুনাফিক সবাই করে।
    *
    যেমন হাদীসে এসেছে, যে মুনাফিক কোরআন তেলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত ওই ফুলের মত যার ঘ্রাণ সুন্দর কিন্তু স্বাদ তিতা।

    এ ব্যাপারে মানুষ মোট চার ধরনের। এক- যার মাঝে ঈমান আছে এবং কোরআনের তেলাওয়াতও আছে। দুই- যার মাঝে ঈমান আছে। কিন্তু কোরআনের তেলাওয়াত নেই। তিন- যার মাঝে কোরআনের তেলাওয়াত আছে কিন্তু ঈমান নেই। চার- যার মাঝে ঈমানও নেই। কোরআনের তেলাওয়াতও নেই।

    উলামায়ে কেরাম বলেছেন,

    فكما أن من أوتي إيماناً بلا قرآن أفضلُ ممن أوتي قرآناً بلا إيمان، فكذلك من أوتي تدبراً، وفهماً في التلاوة أفضل ممن أوتي كثرة قراءة وسرعتها بلا تدبر .
    যার মাঝে ঈমান আছে কোরআনের তেলাওয়াত নেই সে যেমন ওই ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম, যার মাঝে কোরআনের তেলাওয়াত আছে কিন্তু ঈমান নেই তেমনি ভাবে যে ব্যক্তি বুঝে বুঝে, চিন্তাভাবনার সাথে তেলাওয়াত করে সে ওই ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম যে চিন্তা ভাবনা ছাড়া দ্রুততার সাথে বেশি পরিমাণে তেলাওয়াত করে।*
    তাছাড়া ধীরে ধীরে চিন্তা ভাবনা সহকারে* তেলাওয়াত করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের সুন্নত। হাদিসে এসেছে, তিনি খুব ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। ফলে একটি সূরা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়ে যেত। কখনো তিনি একটি মাত্র আয়াত সারারাত তেলাওয়াত করতে থাকতেন।

    দ্বিতীয় মতটি হল, তাড়াতাড়ি বেশি পরিমাণে তেলাওয়াত করা ধীরে ধীরে অল্প তেলাওয়াত করা অপেক্ষা উত্তম। কারণ, (এর মাধ্যমে* সওয়াবের পরিমাণ অনেক বেশি হয়) হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি.*থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
    *مَنْ قَرَأَ حَرْفاً مِنْ كِتَابِ اللهِ، فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لاَ أَقُولُ الم حَرْف، وَلَكِنْ أَلِف حَرْفٌ، وَلاَمٌ حَرْفٌ، وَمِيمٌ حَرْفٌ .
    যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ তেলাওয়াত করবে সে এর বিনিময়ে একটি নেকি পাবে এবং একটি নেকি দশটি নেকীর সমান। আমি এ কথা বলি না যে, الم - 'আলিফ লাম মীম' একটি হরফ। বরং 'আলিফ' একটি হরফ, 'লাম' একটি হরফ এবং 'মীম' একটি হরফ। (জামে তিরমিযী)

    দ্বিতীয় কারণ হল, হাদিসে এসেছে, হযরত উসমান রাযি. (কোন কোন রাতে) এক রাকাতে পুরো কোরআন তেলাওয়াত করে ফেলতেন। পূর্ববর্তী অনেক বুজুর্গদের ব্যাপারে এ ধরনের বর্ণনা এসেছে।

    দু'টি মতের মধ্যে সমাধান হল, ধীরে ধীরে, চিন্তাভাবনা সহকারে তেলাওয়াতের সওয়াব মানের দিক দিয়ে ঊর্ধ্বে। পক্ষান্তরে তাড়াতাড়ি বেশি পরিমাণে তেলাওয়াতের সওয়াব সংখ্যার দিক দিয়ে বেশি। এর দৃষ্টান্ত হল, যেমন- একজন অনেক দিরহাম সদকা করল। আরেকজন অনেক মূল্যবান একটি মাত্র মুক্তা সদকা করল।

    সহীহ বুখারীতে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, হযরত কাতাদা রাযি. বলেন, আমি হযরত আনাস রাযি.কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে হযরত আনাস রাযি. বলেন, তিনি ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। (সহি বুখারি)
    হযরত আবু জামরা রহ. বলেন, আমি একবার হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. কে বললাম, আমি খুব দ্রুত তেলাওয়াত করতে পারি। কখনো এক রাতে একবার কিংবা দু'বার পুরো কোরআন তেলাওয়াত করে ফেলি। আমার কথা শুনে তিনি বললেন, এভাবে তেলাওয়াত করা অপেক্ষা আমার কাছে ধীরে ধীরে একটি মাত্র সূরা তেলাওয়াত করা অধিক উত্তম। তুমি যদি করতে চাও তাহলে এমন ভাবে তেলাওয়াত কর যেন তোমার তেলাওয়াত তুমি শুনতে পাও এবং অন্তর দিয়ে তার মর্মও উপলব্ধি করতে পারো।

    হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন, একবার* হযরত আলকামা রহ. হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি.র সামনে কোরআন তেলাওয়াত করলেন। তার কণ্ঠস্বর ছিল খুব সুন্দর। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বললেন,
    رتل - فداك أبي وأمي - فإنه زين القرآن -
    *ধীরে ধীরে পড় -আমার মা বাবা তোমার জন্য কোরবান হোক- এটাই কোরআনের সৌন্দর্য।

    *হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বলতেন,

    لا تهذُّوا القرآن هذَّ الشعر ، ولا تنثروه نثر الدقل ، وقفوا عند عجائبه ، وحركوا به القلوب ، ولا يكن هم أحدكم آخر السورة .

    তোমরা কোরআনকে কবিতা পড়ার ন্যায় দ্রুত পড়ো না এবং পুরাতন খেজুরের ন্যায় এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিও না। কোরআনে আশ্চর্য হওয়ার মতো বিষয়গুলো এলে থামো। অন্তরে নাড়া দাও। তেলাওয়াতের সময় সূরার শেষ পর্যন্ত পৌঁছাটাই যেন তোমাদের মূল লক্ষ্য না হয়।

    *তিনি এও বলতেন,

    إذا سمعت الله يقول : يأيها الذين آمنوا فأصغ لها سمعك ، فإنه خير تؤمر به ، أو شر تصرف عنه .

    *(কোরআনে) যখন শোনো, আল্লাহ বলছেন,* يا أيها الذين آمنوا - হে ঈমানদার গণ!* তখন (পরবর্তী কথা শোনার জন্য) মনোযোগী হও, কারণ, এরপর হয়তো কোন ভাল কাজের নির্দেশ দেয়া হবে কিংবা কোন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হবে।
    - যাদুল মা'আদ
    হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সবাইকে সাআদাতের জীবন এবং শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন।

  • #2
    জাযাকাল্লাহ ভাই ৷ যারা জেনারেল ভাই ; অারবি অর্থ জানে না বা বুঝে না তাদের জন্য কিছু উপদেশ দিন কুরঅান তেলাওয়াতের বিষয়ে ৷

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

      এইভাবে পোষ্ট দিয়ে সবার খেদমত জারি রাখার আহবান রইল ভাই...
      কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

      Comment


      • #4
        Originally posted by Sadhin View Post
        জাযাকাল্লাহ ভাই ৷ যারা জেনারেল ভাই ; অারবি অর্থ জানে না বা বুঝে না তাদের জন্য কিছু উপদেশ দিন কুরঅান তেলাওয়াতের বিষয়ে ৷
        ................
        السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
        জেনারেল শিক্ষিত ভাইয়েরা কোরআনের বিষয়বস্তু*সহজে বুঝার জন্য মাকতাবাতুল আশরাফ, বাংলাবাজার, ঢাকা- থেকে প্রকাশিত মুফতি তাকি উসমানি দা:বা:'র 'তাওযিহুল কোরআন' কিংবা ইসলামি ফাউন্ডেশন ঢাকা- থেকে প্রকাশিত শাইখুল হিন্দ রহ.ও মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানি রহ.র 'তাফসীরে উসমানি' কিতাবটি পড়তে পারেন।

        এর পাশাপাশি নিম্নের কিতাবগুলো পড়ে নিলে ইনশাআল্লাহ কোরআন বুঝা সহজ হবে।

        01 - তাওযিহুল কোরআন'র প্রথম ও দ্বিতীয়/তৃতীয় খন্ডের শুরুতে উল্লেখিত মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব দা:বা:'র ভূমিকা।

        *02 - কোরআন অধ্যয়নের মূলনীতি, মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

        03 - কোরআন আপনাকে কী বলে ? মাওলানা মনযূর নোমানী রহ., ইসলামিয়া কুতুবখানা, ঢাকা।

        04 - দীপ্তিময় কোরআন, মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

        05 -* আল ফাউযুল কাবীর-তাফসীরের মূলনীতি, বাংলা, মাওলানা সফিউল্লাহ ফুয়াদ দা:বা: ইসলামিয়া কুতুবখানা, ঢাকা।
        হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সবাইকে সাআদাতের জীবন এবং শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন।

        Comment


        • #5
          জাঝাকাল্লাহ্ খায়রান প্রিয় ভাই

          Comment

          Working...
          X