Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির)- ০৮: দুই নির্বাসন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির)- ০৮: দুই নির্বাসন

    দুই. নির্বাসন
    কোন অপরাধীর বেলায় যদি মনে হয়, তাকে অন্যত্র নির্বাসন দিলে একাকিত্বের যাতনায় কিংবা নির্বাসিত এলাকার নেক পরিবেশে থেকে সে সংশোধন হয়ে যাবে, তাহলে তাকে অন্যত্র নির্বাসন দেয়া যেতে পারে। এতে এক দিকে সে নিজে সংশোধন হবে, অন্য দিকে লোকজন তার অনিষ্ট থেকে রেহাই পাবে।

    এই নির্বাসনের কথা কুরআন ও হাদিসে এসেছে। আল্লাহ তাআলা রাহজানদের শাস্তির ব্যাপারে বলেন,
    {إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ}
    “যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং যমিনে ফাসাদ-বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত পা কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে ওদের নির্বাসিত করা হবে। এটা দুনিয়াতে ওদের লাঞ্চনা, আর আখেরাতে ওদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [ মায়েদা: ৩৩]


    অনেকের মতে এখানে أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ দ্বারা নির্বাসন উদ্দেশ্য।


    হাদিসে অবিবাহিত যিনাকারীর শাস্তিতে এক বৎসরের নির্বাসনের কথা এসেছে। মুসলিম শরীফে হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
    (البكر بالبكر جلد مائة ونفي سنة)
    “অবিবাহিত অবিবাহিতার সাথে যিনা করলে তার শাস্তি: একশো বেত্রাঘাত ও এক বৎসরের নির্বাসন।” [সহীহ মুসলিম: ১৬৯০]


    বুখারী শরীফে এসেছে,
    عن زيد بن خالد الجهني قال: (سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يأمر فيمن زنى ولم يحصن جلد مائة وتغريب عام)
    “হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবিবাহিত যিনাকারীকে একশো বেত্রাঘাত ও এক বৎসরের নির্বাসন দেয়ার আদেশ দিতে শুনেছি।” [ সহীহ বুখারী: ৬৪৪৩]


    অন্য হাদিসে এসেছে- এক লোক এক বাড়িতে কর্মচারি ছিল। সে বাড়ির মালিকের স্ত্রীর সাথে যিনা করে ফেলে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর হদ কায়েম করেন। কর্মচারি লোকটি অবিবাহিত ছিল তাই তাকে একশো বেত্রাঘাত করেন এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দেন। আর মালিকের স্ত্রী বিবাহিত হওয়ায় তাকে রজম করে হত্যা করেন। [সহীহ বুখারী, কিতাবুশ শুরূত, বাবুশ শুরূতিল্লাতি লা তাহিল্লু ফিলহুদুদ; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হুদুদ, বাব: মানি’তারাফা আলা নাফসিহি বিয-যিনা।]



    সাহাবায়ে কেরাম থেকেও নির্বাসনের ঘটনা বর্ণিত আছে। তবে আমাদের আইম্মায়ে কেরামের মতে এগুলো হদ হিসেবে নয়, তা’যির হিসেবে। অতএব, যার ক্ষেত্রে উপযোগী মনে হয়, তাকেই শুধু নির্বাসন দেয়া হবে; যাকে নির্বাসন দিলে তার নিজের বা অন্যদের ফিতনার আশঙ্কা আছে, তাকে নির্বাসন দেয়া যাবে না। হযরত উমর রাদিল্লাহু আনহু ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এমনই বর্ণিত আছে।


    হিদায়া গ্রন্থকার (৫৯৩হি.) বলেন,
    "إلا أن يرى الإمام في ذلك مصلحة فيغربه على قدر ما يرى" وذلك تعزير وسياسة لأنه قد يفيد في بعض الأحوال فيكون الرأي فيه إلى الإمام وعليه يحمل النفي المروي عن بعض الصحابة رضي الله عنهم. اهـ
    “তবে যদি ইমামুল মুসলিমীন নির্বাসন দেয়াতে মাসলাহাত রয়েছে মনে করেন, তাহলে যত দিন মুনাসিব মনে করেন নির্বাসন দিতে পারেন। এটি হবে তা’যির ও সিয়াসতরূপে। কেননা, কোন কোন অবস্থায় এটি উপকারী হয়। কাজেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ভার ইমামের উপর ন্যাস্ত। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের কারো কারো থেকে বর্ণিত নির্বাসন দেয়ার ঘটনাকে এর উপরই প্রয়োগ করা হবে।” [আলহিদায়া: ২/১৮৪]


    আল্লামা শামী রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
    (قوله ويكون بالنفي عن البلد) ومنه ما مر من نفي الزاني البكر ونفي عمر - رضي الله عنه - نصر بن حجاج لافتتان النساء بجماله وفي النهر عن شرح البخاري للعيني أن من آذى الناس ينفى عن البلد. اهـ
    “দুররে মুখতার গ্রন্থকারের বক্তব্য [নিজ জনপদ থেকে নির্বাসন দেয়ার মাধ্যমেও তা’যির হতে পারে।]- অবিবাহিত যিনাকারীকে নির্বাসন দেয়ার কথা যা আগে গেছে, সেটা এর মধ্যেই পড়ে। নসর ইবনে হাজ্জাজের সৌন্দযের কারণে মহিলারা যখন ফিতনার শিকার হচ্ছিল, তখন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে নির্বান দিয়েছিলেন। এটাও এর মধ্যেই পড়ে। আননাহরুল ফায়েক্বে আইনী প্রণীত বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি লোকজনকে কষ্ট দেবে, তাকে নিজ জনপদ থেকে অন্যত্র নির্বাসন দিয়ে দেয়া হবে।” [ রদ্দুল মুহতার: ৪/৬৪]


    আল্লামা কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
    وفعل الصحابة محمول على أنهم رأوا ذلك مصلحة على طريق التعزير ، ألا يرى أنه روي عن سيدنا عمر رضي الله عنه أنه نفى رجلا فلحق بالروم فقال : لا أنفي بعدها أبدا .
    وعن سيدنا علي رضي الله عنه أنه قال : كفى بالنفي فتنة؛ فدل أن فعلهم كان على طريق التعزير ، ونحن به نقول : إن للإمام أن ينفي إن رأى المصلحة في التغريب ، ويكون النفي تعزيرا لا حدا. اهـ
    “সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত নির্বাসন দেয়ার ঘটনা এর উপর প্রয়োগ হবে যে, তা’যিররূপে তারা তা উপকারী মনে করেছেন। আপনি কি দেখেন না- হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক ব্যক্তিকে নির্বাসন দিলে সে রোমানদের সাথে গিয়ে মিলে যায়। তখন তিনি বলেন, ‘এরপর আর কখনও আমি নির্বাসন দেব না।’

    হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘ফিতনার জন্য নির্বাসনই যথেষ্ট।’ অতএব, বুঝা গেল- তারা তা করেছেন তা’যিররূপে। আমরাও এ অভিমত পোষণ করি যে, যদি মাসলাহাত মনে করেন, তাহলে ইমামুল মুসলিমীন নির্বাসন দিতে পারেন। এ নির্বাসন হবে তা’যির, হদ না।” [ বাদায়িউস সানায়ি’: ১৫/৫২]



  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ!
    শুকরিয়া ভাই! আল্লাহ সুবহানাহু অতা'আলা আপনার মেহনতগুলো কবুল করে নিন ও সেগুলোর বিনিময় বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিন। আমীন ইয়া মুজিবাদ দাওয়াত।

    Comment

    Working...
    X