Announcement

Collapse
No announcement yet.

ছোট একটি ঘটনা এবং তার প্রেক্ষিতে আপন হৃদয়ের কিছু ব্যথা.....।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ছোট একটি ঘটনা এবং তার প্রেক্ষিতে আপন হৃদয়ের কিছু ব্যথা.....।

    ইন্নাল হামদালিল্লাহ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসুলিল্লাহ

    সেদিন কোথাও যাওয়ার জন্য রাস্তায় পাবলিক বাস এর জন্য অপেক্ষা করছি । সময়টা ছিল এমন যখন বাসে যাত্রীদের খুব প্রেসার থাকে । দাড়িয়ে আছি কিন্তু নির্দিষ্ট বাসের দেখা নেই । ওহ ! এখন দেখা পেলাম একটি বাসের কিন্তু আরে ! তা তো স্টপিজ করছেনা , কারন বাসের ভিতরে যাত্রী বসে দাড়িয়ে কোণঠাসা অবস্থা । তবুও আমি রাস্তার মাঝে গিয়ে চলন্ত বাসে একপ্রকার লাফিয়েই উঠলাম কিন্তু দাঁড়াবার যায়গা কোথায় ! নেই , একদমই নেই । কোন রকমে পায়ের পাতা রাখার যায়গা পেলাম বাসের দরজার নিকট যেখানে বাসের কন্ট্রাক্টর ঝুলে থাকে । এবং সেখানে আমি একা নই , আমার সাথে আরও ২ জন এবং কনট্রাক্টর সহ ৩ জন । অর্থাৎ দরজার সামনে সিঁড়ির নিচে একজনের যায়গায় দাড়িয়ে আছি ৪ জন ।
    বাস চলছে... কিছুদূর গিয়ে বাস থেমেছে তার কোম্পানির লোক দেখানো কৃত্তিম নিয়ম চেকিং এর জন্য । এমন সময় একজন যুবতী নারী ও একজন স্বল্প বয়স্ক কলেজ ছাত্রী দূর থেকে দৌড়ে এসেছে বাসে উঠার জন্য । দরজার নিকটে আমাদের এমন কোণঠাসা অবস্থা দেখেও তারা উভয়ে বাসে উঠার জন্য পিড়াপিড়ি করছে । যেখানে আরেকজন পুরুষ মানুষ দাড়াতে পারবে কিনা সন্দেহ সেখানে ২ জন মেয়ে ! ভাবা যায় !
    আমি মুখ খুললাম - বললাম - একদম দাঁড়ানোর যায়গা নেই , আপনি তা দেখছেন । কিভাবে কোথায় দাঁড়াবেন ? এভাবে আপনারা মোটেও যেতে পারবেন না । এভাবে যাওয়া আপনাদের জন্য রিস্কি । প্রতি উত্তরে বোন বলল - " যেতেই হবে যেভাবেই হোক " জাস্ট এতোটুকু বলেই দরজার নিকট আমাদের মানব প্রাচীর ভেদ করে তারা বাসে উঠতে চেষ্টা চালাচ্ছে । আর বাস তখন ছেড়ে দিয়েছে । তারাও উঠছে এমন একটি অবস্থা । একটু ভাবুন - মেয়ে মানুষ ! এমন অবস্থায় তাদের বাস থেকে ছিটকে পরার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না । আর যদি সেতাই হতো তাহলে তাদের অবস্থাটা কেমন হতো !
    আসুন একটু চিন্তা করি - আচ্ছা যদি ওনারা এই বাসে না উঠতো তাহলে তাদের কি এমন বিশাল ক্ষতি হতো ! হয়তো যেখানে যাচ্ছে অফিস বা কলেজ সেখানে যেতে একটু দেরী হতো । যদি এমন হয় যে কোন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বা চাকরির সাক্ষাৎকার ছিল তাহলে হয়তো তাতে ইনটাইম প্রেসেন্ত মিস হতো । এটাই সর্বচ্চো সম্ভাব্য ক্ষতি , এর বেশী কিছু নয় হয়তো আল্লাহু আলাম । আবার এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল যে - এসবের কিছুই হয়তো হতো না , কারণ তিনি এই বাসে না উঠে আরেকটু অপেক্ষা করলেই অন্য বাস পেয়ে যেতেন । তাই নয় কি ? তাহলে সম্ভাব্য ক্ষতির তুলনায় ঝুঁকি গ্রহণ টা খুব বেশী হয়ে গেলো না ! বরং এটা বললেও তো হয়তো অতিরঞ্জন কিছু হবেনা - এই বোন যেমন রিস্ক নিয়ে বাসে উঠেছে তাতে বাস থেকে ছিটকে পড়ে তার কোন অঙ্গহানি হতে পারতো , এমনকি মৃত্যুও হতে পারতো । আল্লাহু আলাম ।

    হৃদয়ের ব্যথা - ১
    আমরা আসলে এমনই করি - খুব ছোট ছোট পার্থিব কিছু বিষয়ের জন্য আমরা অনেক সময়ই বড় বড় ঝুঁকি গ্রহণ করি কিন্তু আহ ! যদি তার কিছুও স্বীয় দ্বীন বা কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর জন্য নিতাম বা করতাম তাহলে কামিয়াব হয়ে যেতাম ।

    হৃদয়ের ব্যথা - ২

    উপরিউল্লেখিত ছোট বাক্যটি - " যেতেই হবে যেভাবেই হোক " । এটি যদিও একটি কমন সেন্টেনস , যা আমরা ইহকালিন এই জীবনে বা যেকোনো কাজে অহরহ ব্যাবহার করে থাকি বা শুনে থাকি । কিন্তু উল্লেখিত ঘটনার বোনের কথার সাথে মুখের এক্সপ্রেশন এমন ছিল , যা অদম্য এক মানসিকতা এবং কর্ম সম্পন্ন করার তরে নাছোড়বান্দা স্বভাব কে স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলেছে । যা যেকোনো ঝুঁকি , বাঁধা-বিপত্তি কিংবা প্রতিবন্ধকতাকে পিছু ঠেলে সম্মুখে অগ্রসর হতে অসীম সাহস যোগায় ।
    ইস ! যদি দ্বীন কায়েমের তরে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর কাজে আমাদের প্রত্যেক ভাইদের এমনই এক অদম্য মানসিকতা বা সংগঠনে নিজ অধিনস্ত ভাইদের থেকে কাজ আদায়ের ব্যাপারে আমরা হতাশ না হয়ে বরং বিনয়ের সাথে নাছোড়বান্দা স্বভাবের হতে পারতাম তাহলে কতোই না উত্তম হতো ! এবং দ্বীন কায়েমের পথ কতোই না সুগম হতো !
    আসলে পার্থিব কিংবা ইহকালিন যেকোনো কাজেই সাফল্লের সর্বপ্রথম বা সর্বপ্রধান উপাদান বা সোপান হল অদম্য কিংবা নাছোড়বান্দা স্বভাবের মেহনত । ইহকালিন কাজ বা চেষ্টার বদৌলতে আল্লাহ্* তার ফল দিয়ে থাকেন । ঠিক এ কারনেই আমরা দেখি , যে যেই বিষয়ে দীর্ঘসময় লেগে থেকে খুব হার্ডওয়ার্ক করে , সে সেটাতে একসময় খুব এক্সপার্ট হয়ে উঠে এবং তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করে । এই হল ইহকালিন কাজের ফিতরাত বা ফল । আর দ্বীনী কাজে হার্ডওয়ার্ক এর সাথে আমাদের অতি কাঙ্ক্ষিত এবং পছন্দনীয় আরেকটি বিশেষ উপাদান যুক্ত হয় । তাহলো আল্লাহর ওয়াদাকৃত নুসরাহ । যা তখনই আসে বা আসবে যখন আমরা অকৃতিম ও অদম্য মানসিকতাসম্পন্ন হার্ডওয়ার্ক এর শেষ প্রান্তে উপনীত হবো । মানুষ ইহকালিন কাজে মৌলিক উপাদান শুধুমাত্র হার্ডওয়ার্ক এর বদৌলতেই এতো বড় বড় ফল লাভ বা সাফল্য পেয়ে থাকে । তাহলে দ্বীনী বা কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ তে যখন মৌলিক ২ টা উপাদান [ একনিষ্ঠ হার্ডওয়ার্ক ও আল্লাহ্* প্রদত্ত নুসরাহ ] মিশ্রিত হবে তখন সেই কাজে আমাদের কতো তড়িৎ বিশাল সাফল্য আসার কথা ! কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যেই হয়তো তার সাক্ষাত মিলে না । কারণ আল্লাহ্*র নুসরাহ পাবার প্রথম শর্ত হল একনিষ্ঠ ইখলাস সম্পন্ন মজবুত ও অদম্য হার্ডওয়ার্ক । কিন্তু আমরা তেমন একনিষ্ঠ দিঢ় ও অবিচল হার্ডওয়ার্কও করিনা , আর তাই আল্লাহ্* প্রদত্ত নুসরাহ অবলোকনের সৌভাগ্যও আমাদের কপালে জোটে না । আসলে এই বিষয়গুলো কিন্তু আমাদের সবারই খুব ভালো জানা কিন্তু আমাদের কাজ দেখে মনে হয় যেন তা আমাদের একদমই অজানা । আল্লাহ্* আমাদের উপর দয়া ও রহম করুন ।

    হৃদয়ের ব্যথা - ৩

    ইস ! যদি আমাদের সাধারণ মুসলিম বা দ্বীনদার কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ-তরুণী , যুবক-যুবতী , আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কিংবা গোটা উম্মাহ চিরস্থায়ী ভোগ বিলাস আনন্দ ফুর্তির জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে উপরিউল্লেখিত ছোট বাক্যটি [ " যেতেই হবে যেভাবেই হোক " ] ব্যাবহার করতো এবং তদ্রূপ নাছোড়বান্দা স্বভাবের ন্যায় কর্ম নামক রূপক বাসে উঠে পরতো , তাতে যতো বড় থেকে বড় কিংবা বিশাল ঝুঁকি বা প্রতিবন্ধকতাই থাক না কেন !

    আল্লাহ্* এমনই করে দিন আমাদের মুসলিম সমাজ টাকে । সর্বোপরি আপন হৃদয়ের ব্যথার উপর আগে আমাকেই আমল করার তাওফিক দান করুন । আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন ।

    ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ...

    আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (আলে ইমরান ১৪৬)

  • #2
    আখি, জাযাকাল্লাহ। খুব সুন্দর ও শিক্ষনীয় পোস্ট। এগিয়ে যাবেন।
    আল্লাহ আমাদের মুজাহিদ হিসেবে কবুল করে নিন আমীন।

    Comment


    • #3
      প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ কর্মের জন্য দায়ী। আল্লাহ তা'লা আরো বলেনঃআমি তাদের উপর জুলুম করেনি,কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করেছে। আল্লাহ আমাদের হিদায়তের উপর অটল রাখুন,আমিন।
      প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা, আমরা যখন নেট ব্রাউজ করি। এ ক্ষেত্রে আনরা হয়ত টর ইউস করি/ সাধারণ এপস ইউস করি। টর ইউস করলে সাধারণত স্কিনে এড আসে না। কিন্তু যখন uc, firefox, operamini, ইউস করি তখন আমাদের মোবাইলে/ পিসিতে এড আসে। কখনো ভালো কিছু আসে কখনো আবার কবিরা হওয়ার মত কিছু আসে। প্রিয় ভাইয়েরা, দ্বীনের মুজাহিদিনরা ছোটছোট বিষয়ও খিয়াল করা দরকার। এম্বি সস্তা বিধায় আমরা যেনো পাপে লিপ্ত না হয়।
      আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
      আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

      Comment


      • #4
        আল্লাহ, আমাদের হিদায়তের উপর অটল রাখুন, আমিন।
        ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

        Comment


        • #5
          জাজাকুমুল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে দীনের জন্য কবুল করুন আমীন
          যারা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় শহিদ হয় তাদের কে তোমরা মৃত্যু ধরানাও করোনা বরং তারা জিবিত

          Comment


          • #6
            আল্লাহ, আমাদের গাফেলদের থেকে হিফাজত করুন, আমীন।
            বিলাসিতা জিহাদের শুত্রু,শাইখ উসামা রাহ।

            Comment


            • #7
              যাজাকাল্লাহ প্রিয় আখি খুব সুন্দর পোস্ট করেছেন আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন, আমিন

              Comment


              • #8
                বাবর আহম্মদ--লেখক

                কষ্ট ও পুরষ্কার
                “আর (স্মরণ কর) আইয়ুবের (আ) কথা, যখন সে তাঁর প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিলেন: আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু”। (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৩)
                কুরআনে বর্ণিত সকল নবীর মাঝে এমন একজন নবী আছেন যার দাওয়াতী কার্যক্রম ও অনুসারীদের ব্যাপারে কুরআনে কোনো উল্লেখ নেই। সেই নবী হলেন হযরত আইয়ুব (আ), ইংরেজিতে তিনি ‘জব (Job)’ নামে পরিচিত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, আল্লাহর বাণী প্রচার করাই যদি নবীদের কাজ হয় তাহলে একজন নবীর দাওয়াতী কাজের কথা উল্লেখ না করার পেছনে যুক্তি কী? এর জবাব হচ্ছে কুরআনে যেকোনো কিছুই বর্ণিত হওয়ার পিছনে একটি কারণ আছে, কোনো কিছুই অনাবশ্যক নয়। আইয়ুব (আ) এর বিশেষত্ব হল তার সাবর, ধৈর্য ও দৃঢ়তা, যার থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার বিষয় আছে। প্রশ্ন হচ্ছে কী সেই কাহিনী?
                আল্লাহ আইয়ুব(আ) কে দু হাত ভরে স্বাস্থ্য, সম্পদ ও সন্তান দিয়েছিলেন, এবং এগুলো ফিরিয়ে নেবার মাধ্যমে তিনি তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাঁর সন্তানেরা প্রাণ হারালো, তাঁর গবাদিপশু মরে গেল, খামার ধ্বংস হয়ে গেল এবং তিনি সব রকম রোগে আক্রান্ত হলেন। এর মধ্যে একটি অসুখ ছিল এমন যে, পোকামাকড় তার শরীরের ক্ষতস্থান ভক্ষণ করতে লাগলো। বছরের পর বছর এভাবেই পেরিয়ে গেল। তাঁর আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের লোকেরা একে একে তাঁকে বর্জন করল। রোগ সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তারা তাঁকে দেখতে যাওয়া বন্ধ করে দিল। স্বামীর ছোঁয়াচে রোগ স্ত্রীকেও আক্রান্ত করতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁর স্ত্রীকেও (যিনি নিজের ও স্বামীর জন্য অর্থ উপার্জনে বাইরে যেতেন) এই ভয়ে সামাজিকভাবে বয়কট করা হল। এত কিছুর পরেও আইয়ুব (আ) ছিলেন ধৈর্যশীল এবং কৃতজ্ঞ।
                একদিন তাঁর স্ত্রী এই দুঃখ-কষ্টের ভার সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠে বললেন, “আর কতদিন এই দুর্দশা চলবে? কখন এই দুঃসময় শেষ হবে? কেন আপনি আপনার রবকে বলছেন না এই কষ্ট থেকে আমাদের মুক্তি দিতে?” আইয়ুব (আ)এটি শুনে রাগান্বিত হয়ে স্ত্রীকে বললেন, “এই কষ্টের আগে কত দিন যাবত আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ উপভোগ করেছি?”
                তাঁর স্ত্রী জবাবে বললেন, “৭০ বছর”।
                আইয়ুব(আ)তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আর কত বছর ধরে আল্লাহ আমাদের এভাবে পরীক্ষা করেছেন?”
                তাঁর স্ত্রী উত্তর দিলেন, “৭ বছর।” (অন্য বর্ণনাতে আছে তিন বা আঠার বছর, যাই হোক না কেন মূল বিষয় হচ্ছে এর মেয়াদ ছিল ৭০ এর অনেক কম)
                আইয়ুব (আ) প্রত্যুত্তরে বললেন, “৭০ বছর ধরে আল্লাহর নি’আমত ভোগ করেছি, আর মাত্র ৭ বছর হল তিনি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, এ ব্যাপারে আল্লাহকে নালিশ করতে আমার লজ্জা হচ্ছে। নিশ্চয়ই তোমার ঈমান দুর্বল হয়ে পড়েছে। যাও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও।”
                অতঃপর বহুদিন পর আইয়ুব (আ) তাঁর সেই বিখ্যাত দু’আটি করেন, তবে সেটাও ছিল পরোক্ষভাবে এবং বিনয়ের সাথে, তাতে অনুযোগের কোন সুর ছিল না। যা কুরআনের ২১ নং সূরার ৮৩ নং আয়াতে আছে
                “আর (স্মরণ কর) আইয়ুবের (আ )কথা, যখন সে তাঁর প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
                আল্লাহ তাঁর দু’আর জবাব দেন এবং তাঁর স্বাস্থ্য, সম্পদ ও সন্তান ফিরিয়ে দেন। তদুপরি, তাঁর ধৈর্যের জন্য তাঁর জন্য নি’আমত আরও বাড়িয়ে দেন।
                হে আল্লাহর পথের বন্দী, কতদিন ধরে আপনি কারাগারে? এক বছর? পাঁচ বছর? দশ বছর? বিশ বছর? আর আল্লাহর অনুগ্রহ ভোগ করেছেন আপনি কত বছর ধরে?
                কত বছর আপনি স্বাধীনভাবে রাস্তায় হেঁটেছেন? কতগুলো বছর আপনি পরিবার-পরিজন আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গ উপভোগ করছেন? কত বছর ধরে সুস্বাদু সব খাবার খেয়েছেন, সবচেয়ে উত্তম পানীয় পান করেছেন, সুন্দর সব পোশাক পরেছেন? আপনি দেখবেন আপনি যতদিন কারাগারে আছেন তার থেকে বেশি সময় ধরে আপনি আল্লাহর নিয়ামতরাজি ভোগ করেছেন। এরপরেও কোন সাহসে আপনি অন্যদের কাছে আল্লাহর জন্য কারাভোগ নিয়ে অনুতাপ আর অভিযোগ করছেন? আপনি কি মানুষের কাছে নিজের অবস্থা সম্পর্কে মাতম করে লজ্জিত হন না? আপনি কি সেসব বছরের কথা ভুলে গেছেন যা আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে কাটিয়েছেন?
                “মানুষ অবশ্যই অতি মাত্রায় যালিম, অকৃতজ্ঞ।”(সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৪)
                মহা আরশের অধিপতির শপথ, আপনি যদি আল্লাহর রাহে ১০০০ বছরও একাকী কক্ষে বন্দীদশায় কাটিয়ে দেন, তা আপনার বুড়ো আঙ্গুলের কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে না, যা দিয়ে আপনি খান, পড়েন, লেখেন, কুড়ান, আঁকড়ে ধরেন, জিনিস পত্র সামলান। রাসুল(সাঃ) কি বলেননি, “যদি একজন মানুষের মুখকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মাটিতে ফেলে ছ্যাঁচড়ানো হয় তবুও পুনরুত্থান দিবসে সে আফসোস করবে এই ভেবে যে সে যথেষ্ট ভালো কাজ করে নি”।
                আপনার ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকুন। যখন আপনি আপনার বন্দীত্বের প্রতিটি দিনকে অনুগ্রহ ও দয়া না ভেবে নির্যাতন ও শাস্তি হিসেবে মনে করবেন, তখন প্রতিটি মুহূর্ত আপনি ব্যথা অনুভব করবেন। আইয়ুব (আ) যদি তাঁর অবস্থার ব্যাপারে তাঁর রব্বের কাছে অনুযোগ করতে লজ্জিত বোধ করেন, তবে আপনার কী কারন থাকতে পারে মানুষের কাছে পরিবার পরিজনের ব্যাপারে অভিযোগ করতে? সেসব সুস্বাদু খাবারের কথা ভাবুন যা আপনি খেয়েছেন, সেসব অসাধারণ স্থানের কথা ভাবুন যেখানে আপনি ভ্রমন করেছেন। আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে কৃতজ্ঞ হতে শিখুন, তিনি আপনাকে আরো দেবেন।
                “যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেনঃ তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। (সূরা ইবরাহীম ১৪:৭)
                আপনি যদি সাম্যের ভিত্তিতে সবকিছু হিসেব করেন তবে অন্তত আপনার কারাগারের বাইরে যতদিন কেটেছে ঠিক ততদিন কারবাসের আগ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাওয়ার কথা না! তাই আপনি যদি কারাগারের বাইরে ৩০ বছর কাটান, তাহলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করার আগে অন্তত ৩০ বছর কারাবাস করা উচিত! কিন্তু না, আল্লাহ তার চেয়ে দয়ালু। আপনার যদি সহ্য করতে না পারেন, তবে তাঁর কাছে, একমাত্র তাঁর কাছেই অভিযোগ করুন। তারপর ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না তিনি সাড়া দেন। মনকে প্রবোধ দিন ইয়াকুব (আ) এর দুআর মাধ্যমে যা তিনি তার পুত্রের জন্য করেছিলেন,
                “আমি আমার বেদনা ও আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি…” (সূরা ইউসুফ ১২:৮৬)

                Comment


                • #9
                  আল্লাহ্* যা চান,তাহাই করতে পারেন । নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক যাহা ইচ্ছা করেন তাহাই করিতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ্* তায়ালা সকল বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। ক্বুরয়ানুল মাজীদ।


                  আল্লাহ্* এমনই করে দিন আমাদের মুসলিম সমাজ টাকে । সর্বোপরি আপন হৃদয়ের ব্যথার উপর আগে আমাকেই আমল করার তাওফিক দান করুন । আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন ।

                  আমিন।সুম্মা আমিন।

                  Comment


                  • #10
                    ভাই এই পোস্ট দ্বারা যেই কথা বুঝা নোর চেস্টা করবছেন আল্লাহ আমাদের কে ও ভাই কেও তার উপর আমল করার তাওফিক দান করুন আমিন সবার কাছে বিশেষ ভাবে এই অদম্য বান্দাকে আল্লাহ যেন আমাল করার তাওফিক দান করেন
                    যদি রাসুলকে কটুক্তি করা হয়, ওদের বাক সাধিনতার অংশ
                    তাহলে ওদেরকে ধারালো চাপাতির আঘাতে হত্যা করা আমাদের
                    দিনের অংশ। (আনওয়কর আল-আওরাকি রহি

                    Comment

                    Working...
                    X