Announcement

Collapse
No announcement yet.

অন্তরের ব্যাধি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অন্তরের ব্যাধি

    অন্তরের ব্যাধির কথা জিজ্ঞেস করলে অনেক মুজাহিদ ভাই বলেন যে, তাঁদের মধ্যে “আমি জিহাদ বুঝে গেছি, নাজাত পেয়ে গেছি, বড় কিছু হয়ে গেছি, আমি জিহাদের কাজের সাথে জড়িত আছি, বা আমি বিশেষ কিছু হয়ে গেছি” এমন মনোভাব আসে।

    তো আমাদের মাঝে এমন মনোভাব আসে কেন? এর কারণ কী? আর এটা কীভাবে দূর করা যায়?

    উত্তরঃ এর একটি কারণ হলো বর্তমান যুগের ট্রেন্ড। বর্তমান যুগে অহমিকা, ঔদ্ধত্য ও প্রদর্শন করার ইচ্ছাকে একটা ভালো গুণ হিসাবে দেখানো হয়। মিডিয়া, কালচার, ও সোসাইটির মাধ্যমে এই ধরনের আচরণকে উৎসাহিত করা হয়। “তুমি কতো আলাদা, তুমি কতো ভালো, তুমি কতো স্পেশাল – এটা সবাইকে জানাও, এতেই তোমার ক্রেডিট।” এরকম একটা মেসেজ দেয়া হয়। সামাজিক গণমাধ্যম আত্মমুগ্ধতার এই প্রবণতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

    তো আমার মনে হয়, আমভাবে এটা পুরো সমাজকে প্রভাবিত করেছে, বিশেষ করে তরুণদের। আর আমাদের ভাইরা তো এই সমাজেরই অংশ। সুতরাং, এই জাহালতটা আগে থেকেই অনেকের মধ্যে থাকে, যেটার পরে ‘ইসলামীকরন’ ঘটে এভাবে – আমি জিহাদ বুঝেছি, আমি বাকি সবার চেয়ে ভালো, আমি অনেক নেককার, ইত্যাদি।

    আরেকটি কারণ থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে। সেটি হলো – বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে দ্বীনি ইলমের অনেক ঘাটতি আছে। এটা আকিদা, ফিকহ, ইসলামী ইতিহাস, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী – সবদিকেই। একজন জিহাদ বুঝা ভাই এসব বিষয়ে আলহামদুলিল্লাহ প্রাথমিক পর্যায়েও অনেক কিছু জানতে পারেন। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক বিদাত, কুসংস্কার, ভুল ধারণা, ইত্যাদিও প্রচলিত আছে। জিহাদ বুঝা একজন ভাই যখন এরকম মানুষদের মাঝে যায় – সেটা হতে পারে মসজিদে, ওয়াজে, মাদ্রাসায়, কিংবা ক্লাসে – তখন সে বাকিদের তুলনায় নিজের অবস্থা দেখে এক ধরনের গর্ব অনুভব করে। আমি এদের চেয়ে কতো এগিয়ে, আমি কতো জানি, আমি ফরজ জিহাদ করি আর এরা তো জিহাদ ফরজ হবার কথাই জানে না – এরকম বিভিন্ন ধারণা হয়তো তাঁর মধ্যে কাজ করে। এর ফলে তাঁর মধ্যে আলোচ্য মনোভাব তৈরি হয়।

    এ মনোভাব দূর করার উপায়ঃ

    এটা দূর করার অনেক উপায় আছে। তাযকিয়াতুন নফসের সাথে সম্পর্কিত অনেক উপায়ের কথা হয়তো আপনারা বলতে পারেন। আমি এখানে জিহাদের দিক থেকেই একটি উপায় বলি, যেটা আমার কাছে বেশ শক্তিশালী মনে হয়েছে।

    ঈমামের সাথে দিনগুলো – লেকচার সিরিজের একটি পর্বে শায়খ আইমান (হাফিজাহুল্লাহ) একটি ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। শায়খরা খুরাসানে বসে খবর দেখছিলেন এবং এই সময় টিভিতে ফিলিস্তিনের গাজাতে বিক্ষোভের দৃশ্য দেখানো হচ্ছিলো। ঐ মূহুর্তে টিভি পর্দায় একজন ফিলিস্তিনী মহিলাকে দেখানো হচ্ছিলো, যিনি একটি ব্যানার উচিয়ে রেখেছিলেন যাতে লেখা ছিলো – হে উসামা! আমরা তোমার শপথ শুনেছি, আর আমরা অপেক্ষা করছি তোমার পক্ষ থেকে এই শপথ পূর্ণ হবার।

    শায়খ উসামা (রাহিমাহুল্লাহ) একটি বিখ্যাত শপথ করেছিলেন – উকসিমুবিল্লাহিল আযিম...আমেরিকা ও আমেরিকার অধিবাসীরা শান্তি চিনবে না...
    সেই মহিলা এই শপথের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। শায়খ আইমান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, আমি দেখলাম এটি শায়খের উপর অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করলো। তাঁর চেহারার রং বদলে গেলো। কিছুক্ষন পর তিনি উঠে পাশের রুমে গেলেন। তিনি সালাতে দাঁড়ালেন, আর আমরা তাঁর কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম।

    সুতরাং, শায়খ উসামা বিন লাদেনের (রাহিমাহুল্লাহ) মতো মুজাদ্দিদ ব্যক্তিও এমন দৃশ্য দেখে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন। এর পেছনে ভয় কাজ করেছে – যা করছি তা যথেষ্ট হচ্ছে না, আমরা তো যথেষ্ট করতে পারছি না, হে আল্লাহ! আমরা দুর্বল বান্দারা এই গুরুভার ঠিকমতো বহন করতে পারছি না, এরকম অনেক অনুভূতি নিঃসন্দেহে তাঁর মনের মধ্যে কাজ করছিলো।

    চিন্তা করুন, ইনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি সমগ্র কুফফার ও তাওয়াগ্বিতের অন্তরকে আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকম্পিত করেছেন, উম্মাহকে নুসরত করেছেন, উম্মাহর গায়রত আর আযীমতের দৃষ্টান্ত কুফফারদের দেখিয়েছেন, আল্লাহ্*র ইচ্ছায় তিনি জিহাদের ঝান্ডাকে উঁচু করেছেন। দিন শেষে আল্লাহর সামনে সেই লোকও মনে করেছেন – আমি কিছুই করতে পারিনি। আমি যথেষ্ট করতে পারিনি।

    তাহলে ভাই, আমরা আসলে কতোটুকু করতে পেরেছি একটু চিন্তা করে দেখুন।

    এখনো এই ভূখন্ডে আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – আমাদের জানমাল, পিতামাতা, সন্তানসন্ততি তাঁর জন্য কুরবান হোক – নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে, মুওয়াহিদ ও মুজাহিদদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তাঁদের বন্দী করা হচ্ছে, শুধু ভাইদের না মুসলিম বোনদেরও তাগুতের সৈন্যদল বন্দী করছে, নির্যাতন ও অপমান করছে। আমাদের আরাকানী বোনদের সাথে কী হয়েছে তা আমরা জানি, এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাঁদের উপর কতো ধরনের ঝামেলা যাচ্ছে, হিন্দে গরুর গোশতের প্রশ্ন তুলে মুসলিমের রক্ত ঝড়ানো হচ্ছে, তাওহিদে বিশ্বাসীকে বাধ্য করা হচ্ছে তাগুত রামের নামে স্লোগান দিতে, এর সাথে আরো অনেক কিছু যুক্ত করা যায় – উইঘুর, ফিলিস্তিন, বিলাদ আশ-শাম... আমাদের শত্রু ক্রুসেডার ও জায়নিস্টরা ক্রমাগত আমাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষন চালিয়ে যাচ্ছে। এক মুহুর্তের জন্যও ছাড় দিচ্ছে না, মনোযোগ সরাচ্ছে না।
    তাহলে ভাই বলুন, আমরা কী করেছি? কতোটুকু করেছি আর কতোটুকু বাকি আছে? আর কীভাবে আমাদের মধ্যে আত্মতৃপ্তি কাজ করে?
    আমাদের ঈমান যদি সালফে সালেহিনের মতো হতো, তাহলে হয়তো রাতে আমাদের আরামের ঘুম হতো না, খাবারের লোকমা আমাদের মুখে রুচতো না। কিন্তু আমাদের অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ হওয়াতে আমরা এই বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে পারছি।

    তাই এধরনের কোন মনোভাব নিজের মধ্যে আসলে একবার এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে দেখা যেতে পারে। যদি সত্যিকার ভাবেই ফরজিয়াত বুঝতাম, জিহাদ বুঝতাম, তাহলে আমাদের আত্মতৃপ্তি থেকে সবচেয়ে দূরে থাকার কথা।

    মঞ্জিল তো এখনো বহু দূর...কীভাবে এখন বিশ্রামের কথা চিন্তা করা সম্ভব?

    - সংগৃহীত (আল্লাহ তা’আলা ভাইকে কবুল করুন এবং সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।)

  • #2
    সুন্দর এবং গুরুত্বপুর্ন পোস্ট। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা আমাকে সহ অন্য ভাইদেরকে শুধরে দিন, আমিন!

    Comment


    • #3
      আমীন। আল্লাহ আপনাকে এবং ঐ ভাইকে এর জন্য উত্তম প্রতিদান দিক।
      আল্লাহ আমাদের অন্তরের রোগ দূর করে দাও।
      اللھم لا يأ تي بالحسنات الاانت ولايدفع بالسيآت الاانت

      Comment


      • #4
        আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আত্মতৃপ্তি থেকে বেচে থাকার তওফিক দান করুন । আমিন ।

        জাযাকাল্লাহ খাইর ভাই ।

        Comment

        Working...
        X