Announcement

Collapse
No announcement yet.

বই পাঠে মুসলিম উম্মা পিছেয়ে

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বই পাঠে মুসলিম উম্মা পিছেয়ে

    বই পড়া নিয়ে মহাসংকটে মুসলিম বিশ্ব
    হাতেম বাযিয়ান | নভেম্বর ৯, ২০১৫

    আল-কুর’আনের প্রথম যে শব্দটি অবতীর্ণ হয়েছিল সেটা হচ্ছে “পড়ো”—একটা আদেশমূলক ক্রিয়াপদ। প্রথমদিকের আয়াতগুলোতে শব্দটি দুবার এসেছে। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী আল-কুর’আন হচ্ছে মানবজাতির কাছে পাঠানো সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ঐশীগ্রন্থ। আর সেই ঐশী সত্ত্বাকে বোঝার জন্য, জানার জন্য, তাঁর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রথম যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে “পড়ো”। জ্ঞান অর্জনের চাবিকাঠি হচ্ছে বই পড়া। এতে স্রষ্টা আর তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বিকশিত হয়। এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয় যে, “কুর’আন” শব্দটাও যে-মূল শব্দ থেকে এসেছে তার অর্থ পড়া, পুনরাবৃত্তি করা বা আবৃত্তি করা। কাজেই সঠিক ইসলামিক বুঝ অনুযায়ী শুধু পড়াটাও হতে পারে এক ধরনের ‘ইবাদাত।

    আল-কুর’আনের অনেকগুলো নামের মধ্যে একটি হচ্ছে “আল-কিতাব” বা বই। প্রথম অবতীর্ণকৃত শব্দের সাপেক্ষে যদি এই নামের সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, ইসলাম ও মুসলিমদের জ্ঞানসংক্রান্ত ভিত্তিই হচ্ছে পড়াশোনা করা। সবধরনের জ্ঞান অর্জন, সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য এ এক ঐশী আদেশ। বই একদিকে যেমন জ্ঞানের উৎস, অন্যদিকে জ্ঞান সংরক্ষণের প্রাথমিক জায়গা। বই পড়ার মাধ্যমে উন্মোচিত হয় জ্ঞানের নতুন দিগন্ত।

    আমার মূল কথা হচ্ছে অধিকাংশ মুসলিমদের কাছে বই পড়া আজ এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প। বইয়ের সাথে সবধরনের সংযোগ যেন আজ মুমূর্ষ। গোটা মুসলিম বিশ্বে খুব কম পরিমাণ লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে বইয়ের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক আছে। অথচ ইসলামি সভ্যতাজুড়ে দেখা যায় বই এবং বই পড়াকে ইসলাম কত সম্মানিত আর মর্যাদার উচ্চ আসনই না দিয়েছে। এর স্বকীয়তা এখানেই যে বই ও বই প্রকাশনার সঙ্গে সাধারণ জনগণের ছিল সুশৃঙ্খলবদ্ধ সংযোগ। ফ্রান্*য রনসেনথাল তাঁর “Knowledge Triumphant: The Concept of Knowledge in Medieval Islam” বইতে লিখেছেন: “জ্ঞানের ধারণা ইসলামে অর্জন করেছিল অনন্য এক সাফল্য।” অতীতের সেই সাফল্য ছিল যথাযথ। আর এই সাফল্য অর্জন হয়েছিল অনবরত বইয়ের মধ্যে বুঁদ হয়ে থেকে এবং বৈচিত্রময় রকমারি সব বই থেকে স্বাদ নেওয়ার মাধ্যমে। যেসব বইয়ের মধ্যে এমন অনেক বইও ছিল যেগুলো ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বিপরীত।

    অনেকে হয়তো ইন্টারনেটের আবির্ভাব, নিত্যনতুন যোগাযোগ পণ্য এবং সংক্ষিপ্ত ভাষা ব্যবহারের প্রবণতাকে এজন্য দায়ী করবেন। হ্যাঁ, কথাটা একটা পর্যায় পর্যন্ত সঠিক। কিন্তু মূল সমস্যা আরও গভীরে। আর সেটার শুরু ইন্টারনেট আবির্ভাবেরও আগে। বইয়ের সাথে সংযোগ হারানো, এবং পরিণতিতে বই পড়াই ছেড়ে দেওয়া—এধরনের প্রবণতার শুরু আরও আগে, কম করে হলেও ১৮ শতকের দিকে। আর এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান।

    এর পেছনে বহু কারণ আছে। যেমন: অন্তর্দ্বন্দ্ব, সামরিক ও কলাকৌশলগত জ্ঞানের উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া, অনুদান কমে যাওয়া। তবে আমার মতে অন্যতম কারণ হচ্ছে ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে যাওয়া। কেননা ইসলামি সমাজে এগুলোই ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক মেরুদণ্ড। সমাজের প্রতিটি কোণায় কোণায় ‘আলিম, শিক্ষক ও শিক্ষণ পৌঁছে দেওয়ার মূল চালিকাশক্তি ছিল এই প্রতিষ্ঠানগুলো। ওয়াকফের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে দেখা যায় কেন্দ্রীয় সরকার একসময় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছিল এবং ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিণত করেছিল এই কারণে যে, যাতে ইতিমধ্যে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে রাষ্ট্র-আয় চুরি করার লক্ষ্যে এগুলোকে উদ্বৃত্ত হিসেবে তুলে ধরা হলো এবং যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের দুর্নীতির জন্য অর্থের জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলো এসব ওয়াক্*ফ প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

    একটি সমাজের অগ্রগতি ও উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে পড়া। না-পড়লে সমাজ থেমে যাবে। হবে অবনতি। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে পড়ার ব্যাপারটাকে মুসলিমরা সামগ্রিকভাবে পরিহার করা শুরু করেছে। সবধরনের জ্ঞান এখন সীমিত করে ফেলা হয়েছে ডিভিডি, লাইভ স্ট্রিমিং আর ইউটিউব লেকচারের মধ্যে। আমাদের সমাজ যেন ‘লাইক’ আর ‘শেয়ার’-এর মধ্যে বন্দি হয়ে গেছে। এর সাথে বই পড়া এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে জ্ঞান অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। উপরোক্ত জিনিসগুলোর আবেদন অবশ্যই আছে। বিশেষ করে সমাজে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে সেগুলোর ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগানো এবং মনযোগ আকর্ষণের জন্য এগুলোর দরকার আছে। কিন্তু সমাজের জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তির জন্য বই পড়ার সংস্কৃতির কোনো বিকল্প এগুলো হতে পারে না।

    আজ তাই এটা শুনতে আর আশ্চর্য লাগবে না যে, পৃথিবীর শীর্ষ ৫৬ বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটাই মুসলিম বিশ্বে অবস্থিত নয়। আল-কুর’আন, বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোর বাইরে অন্যান্য শীর্ষ বিক্রিত ও বহুল পঠিত বইয়ের কোনোটাই মুসলিম বিশ্বের নয় বা কোনো মুসলিম লেখক লেখেননি। নিজের বিশেষায়িত ক্ষেত্রের বাইরে সাধারণ পড়াশোনার চল নেই বললেই চলে। বই পড়তে অনীহা মুসলিম বিশ্বে বই পড়া নিয়ে মহাসংকটের দিকেই ইঙ্গিত করে। আমাদের সমাজে যে অজ্ঞতা গেঁড়ে বসছে তারও টের পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজন এখন উপরোক্ত সমস্যাগুলোর বাঁক ঘুরিয়ে দেওয়া।

    বই পড়া নিয়ে অনীহা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজন আলোকিত নেতৃত্ব। বহুমাত্রিক এবং বহুবছরব্যাপী পরিকল্পনা। রিডিং ক্লাব বা বই-পড়া কর্মসূচির মাধ্যমে এটা শুরু হতে পারে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বই-পড়া নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। আর এগুলোর তত্ত্বাবধানে থাকতে পারে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। এছাড়া বই প্রকাশনা এবং লেখকদের পেছনে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আয়োজন করা যেতে পারে বই পড়া নিয়ে বিভিন্ন ফেস্টিভাল। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত যে ধারা চলে আসছে: ‘চাকুরির জন্য ডিগ্রি অর্জন—এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেন বই পড়া ও বোঝার দিকে মনোযোগ দেয় সেই লক্ষ্য অর্জনে পরিবর্তন আনতে হবে।

    “পড়ো” এ আদেশটি জীবনভর জ্ঞান অর্জনের জন্য আদেশ। মুসলিম বিশ্বে পুনরায় বই পড়ার সংস্কৃতি চালুর প্রণোদনা।

    সূত্রঃ Daily Sabah

    লিংকঃ http://shoncharon.com/2015/11/09/%E0...6%B8%E0%A6%B2/
    MUJAHID IS ALL ROUNDER PERSON

  • #2
    বইপড়ার সেকাল একাল

    ছোটকালে বই পড়া হতো দুটো কারণে। প্রথমটি ক্লাসে পরীক্ষা পাশের জন্য। দ্বিতীয়টি শখে বন্ধু-বান্ধবদের দেখাদেখি। অনেকটা আনন্দ-বিষাদের বই পড়ার মতো। ক্লাসের পড়া নিরস। কারণ ওটা বাধ্যতামূলক। শখের পড়াই আনন্দের। শখের বই হতো সাধারণত উপন্যাস কিংবা গল্প। একটি বই বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছে। বইয়ের কাহিনী পাঠকদের মধ্যে ঝড় তুলছে। বন্ধু-বান্ধব সহপাঠিদের মধ্যে সারাদিন শুধু বইয়ের গল্প। এ থেকেই মূলত বই পড়ার কৌতুহল জাগতো। পরিবার থেকে পাওয়া হিসেবের কড়ি থেকেও চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা দিয়ে একটি উপন্যাস কিনতে দ্বিধা হতো না।

    শখের তালিকায় বইপড়ার আরও একটি কারণ হলো অবসর কাটানো। সিলেট-ঢাকা জয়েন্তিকা আন্তনগর ট্রেনের জার্নি। সাত ঘন্টা কাটবে কীভাবে? একটি উপন্যাস হাতে থাকলে কেল্লাফতে। গল্পকাহিনীতে ডুব দিয়ে অনায়াসেই পার করা যেতো দীর্ঘ জার্নি। কর্মজীবনে এসে বইপড়া বেমালুম ভুলে গেলাম। বইয়ের জায়গাটি দখল করে নিলো সংবাদপত্র। পালটে গেলো জ্ঞানাহরনের ধরণ। আগে একটি উপন্যাস কিংবা গল্পকাহিনী থেকে অনেক কিছুই শেখা যেতো। এখন কোথায় বাস খাদে পড়ে কতজন মারা গেলো। কোন সমাবেশে কোন নেতা কী বললেন- এসব খবর নিত্যদিন গিলতে হয় নিজের পেশার তাগিদেই। এতে করে নিজের তথ্যভান্ডার কিছুটা সমৃদ্ধ করা গেলেও প্রকৃত জ্ঞানচর্চার সুযোগ একেবারেই সীমিত। তবে মাঝে মধ্যে আবারও পেশাগত প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই বই হাতে নিতে হয়। সংবাদপত্রের জন্য একটি রিপোর্ট অথবা আর্টিকেল লিখতে রেফারেন্স দেওয়ার জন্য বই খুঁজতে হয়। আর এতে করে কিছু পড়া হয়ে যায়।

    বাধ্যতামূলক বই পড়ার একটি মজার ঘটনা বলতে চাই। তখন আমি সাপ্তাহিক নতুন দিন-এর নির্বাহী সম্পাদক। বোরকা ও হিজাব নিয়ে বৃটেনের মূলধারার মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। একটি বিশেষ প্রতিবেদন করবো তাই একজন ইসলামি স্কলারের মতামত প্রয়োজন। ফোন দিলাম ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়েখ আব্দুল কাইয়ূমকে। তিনি দুটো প্রশ্নের জবাব দিয়ে বললেন- তাইছির ভাই, বাকিটুকু সূরা আহযাবের তাফসির দেখে নেবেন। আরও বললেন, এভাবেই কিন্তু পড়তে হয়। নতুবা পড়া হয়ে উঠে না। আমি তৎক্ষণাত কিছুটা মনক্ষুন্ন হলেও পরে বুঝতে পারলাম তিনি আমার বেশ উপকারই করেছেন। কারণ আমাকে বাধ্য হয়েই সুরা আহযাবের তাফসির পড়তে হয়েছিলো। পড়া শুরু করার পর শুধু পড়তেই মন চায় এবং এক সময় কুরআনের পূর্ণ বাংলা তাফসির কিনে নিতে হয়। তখন থেকেই লেখালেখি, রিপোর্টিং যেকোনো ধর্মীয় ইস্যুতে কুরআন হাদীস পড়া ও ঘাটাঘাটি করার অভ্যোস হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকও কিন্তু পড়ার একটি বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটি শেখার জন্য ব্যবহার করা হবে নাকি শুধু সময় কাটানোর জন্য এটি নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের রুচির ওপর। এখানেও শিক্ষনীয় অনেক কিছু আছে। তবে অখাদ্য ও কুখাদ্যের মধ্যে ভালোটি বেছে নিতে হয়। কম্পিউটারে কাজের ফাঁকে অনেক কিছুই শেখা যায়। জ্ঞানার্জনের জন্য এখন আর শুধু লাইব্রেরীতে দৌড়াতে হয় না। হাতের মুঠোয়ই জ্ঞানের সমুদ্র। কীবোর্ডের বাটন টিপলেই জ্ঞান।

    কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস কুরআনের একটি লম্বা সুরা অনুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ মুখস্থ করতে আমার জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। একদিন ফেসবুকে এক আজব শিশুর ছবি দেখলাম। সদ্যজাত শিশুটি দেখতে আশি বছরের বৃদ্ধের মতো। ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে- ভারতের একটি রাজ্যে শিশুটির জন্ম হয়েছে। আর তা প্রমাণ করে ক্বেয়ামতের খুব বেশি দিন বাকী নেই। কারণ পবিত্র কুরআনের সুরা মুজাম্মিলে বলা হয়েছে, ক্বেয়ামতের আগে এভাবেই শিশুকে বৃদ্ধে রূপান্তরিত করে জন্ম দেওয়া হবে।’

    স্ট্যাটাসটি আমাকে বেশ কৌতুহলী করে তুললো। এমনিতে এ ধরনের স্ট্যাটাসে সাধারণত চোখ আটকে না। কিন্তু কুরআনের রেফারেন্স দেখে আমাকে ব্রেক কষতে হলো। বিষয়টি কী? সত্য মিথ্যা ঘেটে দেখতে অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠলাম। ঘরে ফিরে বুকসেলফ থেকে আল-কুরআন একাডেমীর ‘আমার শখের কুরআন মজিদ’ বইটি হাতে নিলাম। সোজা চলে গেলাম উনত্রিশ পারায় সুরা মুজাম্মিলে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেহেতু আয়াত নাম্বার উল্লেখ ছিলোনা, তাই বিশ আয়াতের সুরাটির অনুবাদ শুরু থেকেই পড়তে হলো। সতেরো নম্বর আয়াতে ‘পৌছেই পেয়ে গেলাম কাংখিত জবাব। এতে বলা হয়েছে- ‘ফাকাইফা তাত্তাকুনা, ইন কাফারতুম, ইয়াওমাই ইয়াজআলুল ওয়েলদানি শিবা’। অর্থাৎ তোমরা যদি আল্লাহকে অবিশ্বাস করো তাহলে সেদিন নিজেদের কীভাবে রক্ষা করবে, যেদিন কিশোরকে পরিণত করা হবে বৃদ্ধে।

    আয়াতের অনুবাদ আমাকে আরও অনুসন্ধিৎসু করে তুললো। হ্যা, সত্যিই তো কুরআনে কিশোরকে বৃদ্ধে রূপান্তরিত করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে কি কেয়ামত অত্যাসন্ন? বিস্তারিত জানতে এবার হাতে নিলাম তাফসিরে ইবনে কাসির। সেখানে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেখে বিভ্রান্তি কেটে গেলো। উক্ত আয়াতে ক্বেয়ামতের দিবসের ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ক্বেয়ামতের দিন এত ভয়াবহ হবে যে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে একজন কিশোর বৃদ্ধে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আমি স্ট্যাটাসদাতাকে ভর্ৎসনা না করে বরং মনে মনে ধন্যবাদই দিলাম। কারণ ওই ভুল স্ট্যাটাসের কারণেই কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করি এবং একটি সুরার আদ্যপান্ত পড়তে বাধ্য হই। এর আগে সুরাটি এভাবে গুরুত্বের সাথে পড়া হয়নি। ফেসবুকের ভুল স্ট্যাটাস থেকে জানা ও শেখার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সুরাটির অনুবাদ, শানে নুজুল, কাহিনী আমাকে আরও কাছে টেনে নেয়। কবিতার ছন্দে ছন্দে প্রতিটি পঙি। আবৃত্তি করে পড়তে দারুন ভালো লাগে। ঘরে হাঁটতে বসতে চলাফেরা করতে গুনগুন করে পড়ি। ড্রাইভিংয়ের সময় পড়ি। রাসুলকে (সাঃ) ‘ইয়া আইয়ুহাল মুজ্জামিল’ বা হে বস্ত্রাবৃত (ব্যক্তি) বলে সম্বোধন করে তাঁকে রাতের কিছু অংশ ছাড়া পুরো রাত্রি জেগে ইবাদত (তাহাজ্জুদ পড়তে) করতে বলা হচ্ছে। সম্ভব না হলে অর্ধরাত্রি, কিংবা অর্ধরাত্রির চেয়ে আরও কিছু কম, অথবা অর্ধরাত্রির চেয়ে খানিক বেশি রাত জেগে ইবাদত করতে এবং সুন্দর ও সুললিত কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আয়াতগুলো যখন পড়ি তখন মসজিদে নববী, রাসুলের ঘর, তাঁর বিছানা, পরনের চাদর ইত্যাদি দৃশ্য মনজগতে ভেসে ওঠে। তাই পড়তে ভালো লাগে। এভাবে পড়তে পড়তে এক সময় পুরো সুরাটিই মুখস্থ হয়ে যায়।

    শুধু এখানেই শেষ নয়, আট বছরের ছেলে জিবরিল আমার পড়া শোনে বললো, সুরার ছন্দমিল তাঁর কাছে চমৎকার লাগে। আমার অজান্তে সেও মুখস্থ করতে লাগলো। দেখলাম বিশ আয়াতের মধ্যে প্রায় ১৫ আয়াত ইতোমধ্যে মুখস্থ করে ফেলেছে। সাত বছরের মেয়ে সারাহ কিন্ত বসে নেই। সেও গুনগুন করে পড়ছে। একদিন আমাকে বললো, বাবা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আমাকে একটি গিফট কিনে দিলে বলবো। পরদিন ওর হাতে তার পছন্দের গিফটি তুলে দিয়ে বললাম সারপ্রাইজটা কী এবার বলো। গিফট হাতে নিয়ে সে সুরা মুজাম্মিল পড়তে শুরু করলো এবং একনাগাড়ে প্রায় দশ আয়াত তেলাওয়াত করে থামলো। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। আড়াই বছরের শিশুপুত্র মিকাইল, সেও যে পড়ছে তা আমার জানা ছিলো না। সে ভাই-বোনকে অনুসরণ করছিলো। দুচারটি শব্দ উচ্চারণ ছাড়া অন্য কিছু শিখতে না পারলেও মুজ্জামিলের চার আয়াত সে মুখস্থ করে নিয়েছে। আমি অবাক হলাম। ফেসবুকের একটি ভুল স্ট্যাটাস আমাদের কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। তাছাড়া সন্তানেরা অভিভাবকদের কীভাবে অনুসরন করে। আমরা তাদের সম্মুখে কত বেমানান কাজই না করে থাকি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বইপড়ার একটি উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে, বইগুলো নিজের চোখের সামনে রাখা। ঘরে, অফিসে, ঘরের উইন্ডো সিলে, বেডসাইড টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে হঠাৎ একটি বই চোখে পড়বে। নাম ভালো লাগবে। পড়তে ইচ্ছা হবে। এভাবেই বই পড়া হয়। যখন কোনো বিষয়ে বিভ্রান্তি দেখায় দেয় তখন সমাধান খুঁজতে বইটি হাতে নিতে হয়।

    মানুষকে বই পড়তে উদ্ধুদ্ধ করার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বই মেলা। লন্ডনে এখন বছরে দুটো বই মেলা হয়। একটি বাংলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায়। অপরটি আল-কুরআন একাডেমির উদ্যোগে। বাংলা একাডেমির বই মেলা শুরু হয় ২০১০ সালে। চলতি বছর ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে মেলায় গিয়েছি। সুন্দর আয়োজন। খ্যাতনামা লেখকদের বইয়ের সমাহার। তবে একটি শুন্যতার কথা জানালেন একজন বইপ্রেমি। বললেন, মেলায় ইসলামিক বইয়ের কোনো স্টল নেই।

    তবে আমার মনে হয় ওই শুন্যতা কাটাতেই আল কুরআন একাডেমি ২০১২ সাল থেকে লন্ডনে শুরু করেছে ইসলামিক বই মেলা। এ বছর চতুর্থ বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর তিনদিনব্যাপী। দুটো মেলারই উদ্দেশ্য অভিন্ন- বই পড়তে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করা। তবে আল কুরআন একাডেমির বই মেলার শ্লোগান ব্যতিক্রমী। শুরু থেকেই তাঁদের শ্লোগান- ‘একটি ভালো বই পড়ুন’। হ্যা, আমাদের সন্তানদের অবশ্যই ভালো বই পড়তে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। বইয়ের একটি কাহিনী যেমন মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, তেমনি জীবনকে আবার ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

    http://www.bdfirst.net/newsdetail/detail/49/165634
    যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী। (১১০ঃ১-৩)

    Comment

    Working...
    X