Announcement

Collapse
No announcement yet.

হাসপাতালের রোগশয্যা থেকে : মৃত্যুকে স্মরণ কর

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হাসপাতালের রোগশয্যা থেকে : মৃত্যুকে স্মরণ কর


    হাসপাতালের রোগশয্যা থেকে : মৃত্যুকে স্মরণ কর

    মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ

    হযরত মাওলানা আবু তাহের মেছবাহ দামাত বারাকাতুহুম এখন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি। এক সপ্তাহ যাবৎ সিসিইউতে আছেন। এমন নাযুক মুহূর্তেও আমরা যারা তালেবানে ইলম আমাদের জন্য তিনি এই নসীহতনামা নিজ কলমে লিখে পাঠালেন। সুবহানাল্লাহিল আযীম।

    আমি আশা করি আমরা নসীহতগুলোর খুব কদর করব। হুযুরের জন্য দুআ করি, হুযুরের উস্তাযের জন্য দুআ করি। আমাদের সকল আকাবিরের সিহ্হাত আফিয়াত এবং দীর্ঘ নেক হায়াতের জন্য দুআ করি। অনেকে মহব্বত ও ইখলাছ নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে ইয়াদাত করতে চান। কিন্তু একে তো হাসপাতালের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা। দ্বিতীয়ত হুযুরের পসন্দ হল, আমরা নিজ জায়গায় থেকে দুআতে থাকি। ইনশাআল্লাহ এতে আমরা ইয়াদাতের ছওয়াবও পেয়ে যাব। খুশির বিষয়, আলহামদু লিল্লাহ, হুযুরের হালত ভালোর দিকেই যাচ্ছে। (আবদুল মালেক)



    بسم الله الرحمن الرحيم

    হে প্রিয় তালেবানে ইলম! হাসপাতালের রোগশয্যা থেকে তোমাদেরকে, প্রথমত যারা মাদরাসাতুল মাদীনায় পড়, দ্বিতীয়ত যারা মাদানী নেসাবে পড়, তৃতীয়ত যারা না দেখে আমাকে ভালোবাসো, তোমাদের সবাইকে আমার মুহব্বতপূর্ণ সালাম।

    আলহামদু লিল্লাহ আমার কথাগুলো এখন মৃত্যুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে, আশা করি ইনশাআল্লাহ আমল করার নিয়তে গ্রহণ করলে কামিয়াব হবে। এ কয়দিন শুধু বিছানায় পড়ে আছি চিত হয়ে। মৃত্যুর সঙ্গেই যেন বসবাস করছি এবং মৃত্যুকে যেন কিছুটা ভালোবাসতেও শুরু করেছি। পুরোপুরি চিনে উঠতে পারিনি। তবু বুঝতে পেরেছি এ মৃত্যুর পোলটা পার হলেই মাওলায়ে করীমের সঙ্গে আমার মিলন।

    মৃত্যু এখন কত কাছে! এই যেন একটু সুঘ্রাণ পেলাম। এই হরফগুলো যখন লিখছি আমার খুব কাছে আল্লাহর এক বান্দা মৃত্যুযন্ত্রনা ভোগ করছে। দেখছি আর লিখছি। এমন লেখা কি সবসময় লেখা যায়?

    এই যে আল্লাহর বান্দা চলে গেলো, জীবনের সমাপ্তি হলো এবং অনন্ত জীবন শুরু হয়ে গেলো। আমার ডাক যখন আসবে, কখন আসবে জানি না, আমি ছুটে যাব, মা যেমন হাতছানি দিয়ে ডাকে আর অবুঝ সন্তান ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় নেয়। তোমরা শুধু একটু দুআ কর আসানির সঙ্গে আমার ঈমানের জন্য

    পরিবেশ এখন এমন, ইচ্ছে করলেও ফেরার কথা ভাবা যায় না। মনটা আল্লাহর প্রিয় আপনাতেই যেন সমর্পিত হতে চায়। তো নেয়ামতের শোকর হিসাবে বলছি, আমি তালেবানে ইলমকে সবসময় বলি, কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না। কথাটা হলো...

    সুবহানাল্লাহ! এত বড় আল্লাহু আকবার বলে, এইমাত্র আরেকজন...

    বলছিলাম, কথাটা হলো কিতাবের পাতা হলো ইলম হাসিলের সবচে’ দুর্বল মাধ্যম, এর চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ মাধ্যম হলো বিশ্বজগতের এই খোলা কিতাব, আরো শক্তিশালী মাধ্যম হলো উস্তাযের মুহব্বতপূর্ণ ছোহবত, আরো উর্ধ্বস্তরের মাধ্যম আল্লাহর সঙ্গে মুহব্বতের তাআল্লুক, তাফবীযের তাআল্লুক। তো এই সমস্ত মাধ্যম যে যথাযথরূপে ব্যবহার করে, সেই প্রকৃত আলিম, নূরান্বিত আলিম। কথাগুলো নতুন কিছু নয় তবে মউতের মাঝখানে বসে লিখছি এবং আমার আল্লাহর ইশারায় লিখছি, তাই ফায়দা আশা করা যায়।

    তোমরা আমার পেয়ারা ভাই আল্লাহকে মুহব্বত করো, আল্লাহ ও তার রাসূলের ইত্বাআত করো। আমাদের খোলা দুশমন শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো, আর সবসময় ইস্তিগফার কর, করতে থাকো। ইস্তিগফার যদি একটু শরমেন্দিগির সঙ্গে হয় তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর কাছাকাছি রাখবে, কখনো তোমাকে আল্লাহ থেকে দূরে যেতে দেবে না। আর শয়তানকেও কামিয়াব হতে দেবে না।

    নেক আখলাক অর্জন করো। মানুষ যেন মনে করে এরা ইনসান নয়, আসমান থেকে নেমে আসা ফেরেশতা। বিশ্বাস কর, লড়াই করে হয়ত হকের কোন কথা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, কিন্তু মানুষের দিলের বদ্ধ দুয়ার খুলতে পারবে না। তা পারবে ভালোবাসা দিয়ে, হামদর্দি দিয়ে, যুক্তি দিয়ে, যেমন আল্লাহ আদেশ করেছেন।

    হাসপাতালে আমি ইচ্ছা করে আসিনি। এটাই আমার জীবনে প্রথম হাসপাতালে প্রবেশ। কিন্তু আমাকে যারা জানে তারা বোঝবে কত কঠিন অবস্থা হলে হাসপাতালে এসে এতদিন পড়ে থাকতে পারি। আমার প্রার্থনা, কাউকেই যেন হাসপাতালে আসতে না হয়, আল্লাহ যেন এমনিতেই আসান করে দেন। তবে আল্লাহর অনেক দয়া। হাসপাতালের এই কয়দিনের জীবনে আল্লাহ মেহেরবান যা কিছু দান করেছেন তা আল্লাহর কসম দুনিয়া-জাহানের সমস্ত সম্পদ থেকে উত্তম। দুআ করি, আল্লাহ তাআলা যেন এই সমস্ত সম্পদ ভরপুর পরিমাণে তোমাদেরকে দান করেন। তোমরা আমাকে এত ভালোবাসো তোমাদের জন্য দুআ না করে কি পারি! তবে ছাহিবে ফিকির ও ছাহিবে সাখছিয়াত হওয়ারও চেষ্টা করো, তখন দেখবে নিজেকে তোমার আকাশের পূর্ণিমার উজ্জ্বল চাঁদের চেয়েও নূরানী মনে হবে। তুমি বাসি ডাল খাবে, ছেঁড়া জামা গায়ে দেবে, ফাটা জুতা পরবে কিন্তু তোমাকে খরিদ করতে পারে এমন সম্পদ এবং এমন সম্পদশালী পৃথিবীতে পাবে না, তোমার খরিদ্দার শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

    আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে, মনে পড়ছে হাদীসে যেন এক মযমূন আছে ‘যার ষাট হয়ে গেছে তার আল্লাহর কাছে ওযর পেশ করার আর কিছু নেই।’ তোমাদের জন্য জীবন আছে, সেই জীবনের মধ্যে আমরা বেঁচে থাকতে চাই। বিশ্বাস করো, জীবনটা সত্যি কচুপাতার পানি। এই আছে, তো এই নেই। এমন জীবনের ধোকায় পড়ে থেকো না।

    চোখে চশমা নেই, ভাল করে দেখতে পাচ্ছি না, হাতের শক্তিও ফুরিয়ে গেছে, ডাক্তার বারবার নিষেধ করছেন, বলছেন, হুযূর! আপনার স্বাস্থ্যের বর্তমান পজিশন যদি জানতেন তাহলে কলম হাতে নেওয়ার কথা কল্পনাও করতেন না। কিন্তুু আপনার ইচ্ছার প্রতি সম্মান করাও কর্তব্য, আর মাত্র দু’মিনিট লিখুন তারপর সিসিইউতে যতদিন আছেন কলম হাতে নেওয়ার চিন্তাও করা ঠিক হবে না। কথাটা আবারও মনে পড়ে গেল, সামান্য একটু আখলাক যে চিকিৎসকের মত এমন জাগতিক মানুষকে এমন করে ভালোবাসাতে পারে।

    তোমরা সবাই সুখে থাকো, শান্তিতে থাকো, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে মঙ্গল করুন। আমীন। আমার এ কথাগুলো তোমাদের জন্য, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, কেয়ামত পর্যন্ত আমার সমস্ত তালেবানে ইলম ভাইয়ের জন্য। 

    صلى الله عليه و سلم

    তোমাদের খাদেম

    আবু তাহের মেছবাহ

    বুধবার

    আছর থেকে মাগরিব

    (১০/১১/১৪৩৬ হি.)

  • #2
    আল্লাহ হুজুরকে আপনি আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন,আমিন। হুজুরের লিখা বইগুলো জীবন চেঞ্জ করে দেওয়ার মত।
    ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তাআলা হুজুরকে পাক্কা ঈমানী হালাতে আল্লাহর সামনে উপস্থিত করুন, আমীন।
      যোদ্ধা হব, যুদ্ধ করব,
      ক্বিতালের জন্য দাওয়াত দিব, ইনশাআল্লাহ।

      Comment


      • #4
        ভাই আপনি যে লিখাটি দিয়েছেন এটাত আদীব সাহেব হুযুরের বর্তমান হালাতের নয়। অনেকে মনে করতে পারেন যে, এটা তাঁর বর্তমান হালাত অথচ এটা তিন বছর পূর্বের। লিখার সময় ক্লিয়ার করে দিলে মনে হয় ভালো হত। যেমন উপরের দুই কমেন্ট কারী ভাই এমনি বুঝেছেন ।যেটা তাঁদের কমেন্ট থেকে বুঝা যাইতেছে যদিও আপনার লিখাতে তারিখ দেওয়া আছে।

        Comment

        Working...
        X