Announcement

Collapse
No announcement yet.

আমার খুবই কষ্ট লাগে

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আমার খুবই কষ্ট লাগে

    নাহমুদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রসূলিহিল কারীম। আম্মা বা-আদ।

    সম্মানিত উপস্থিতি,
    আজ আমার হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত।

    আমার খুবই কষ্ট লাগে……
    যখন দেখি মসজিদে মুয়াজ্জিন আযান দেয়, আর আমার মুসলমান ভাইয়েরা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়, যুবক সহ বৃদ্ধ লোকেরা পর্যন্ত টিভির সামনে বসে খেলা দেখে আর হৈ-হুল্লোর করে। মসজিদে নামায শুরু হল, কিন্তু মুসলমানদের চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া-খেলা দেখা শেষ হল না, নামাযেও যাওয়া হল না।

    আমার খুবই কষ্ট লাগে……
    যখন দেখি বৃদ্ধ লোকগুলো এখনো দাড়ি রাখেনি, পাঞ্জাবি ও টুপি পড়েনি আর মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনার পরও নামাযে এসে শামিল হয়নি। কিন্তু বাজারের দোকান-পাট সহ বিভিন্ন জায়গায় আড্ডায় অযথা সময় কাটাচ্ছে।

    আমার খুবই কষ্ট লাগে……
    যখন দেখি আমার যুবক ভাইয়েরা মোবাইল নিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে নানা অশ্লীল চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত, গান-বাজনা-ফালতু আড্ডা আর অবৈধ প্রেম-ভালবাসায় মত্ত আর যিনার মত নিকৃষ্ট পাপাচারে লিপ্ত। অথচ, আল্লাহ তা’আলার ফরজ হুকুমের ব্যাপারে তারা উদাসীন, রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহর ব্যাপারে তারা উদাসীন।

    আমার খুবই কষ্ট লাগে……
    যখন দেখি আমার মুসলিম বোনেরা আল্লাহ তা’আলার পর্দার হুকুম কে তোয়াক্কা না করে রাস্তা-ঘাটে বেপর্দায় চলাফেরা করে, বয়ফ্রেন্ডের সাথে রিক্সায় চড়ে নোংরামি করতে থাকে, খোলা-মেলা পোশাক পড়ে বিভিন্ন পার্টি ও দিবস উদ্-যাপন করে, এমনকি পার্কে বা গেস্ট হাউজে গিয়ে যিনার মত নিকৃষ্ট পাপাচারে লিপ্ত হয়।

    হে বোন, যদি আজকে তুমি নামায পড়তে, পর্দা করতে, তাহলে তুমি কতই না সম্মানিত হতে। ইসলামই তোমাকে সম্মানের জীবন দিয়েছে, তোমার গুনাহ তে লিপ্ত হওয়া অবাধ এই স্বাধীনতা নয়, চাকচিক্যে ভরা দুনিয়ার এই মোহ নয়। হে বোন, লাঞ্ছনার জীবনকে উপভোগ না করে আল্লাহর দেয়া সম্মানের জীবনকে বেছে নাও।

    আমার খুবই কষ্ট লাগে……
    যখনি দেখি আমার বেশিরভাগ মুসলিম মা-বাবারা তাদের সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় ভর্তি না করে, স্কুলে কিংবা কলেজে ভর্তি করছে। নামাযের জন্য তাগিদ না করে, আরবি পড়ার জন্য তাগিদ না করে স্কুল-কলেজে ভাল রেজাল্ট করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। অধিকাংশ মা-বোনেরা পর্দার হুকুম লঙ্ঘন করে ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে দিয়ে আসা-নিয়ে আসার কাজে খুবই ব্যস্ত।
    আর স্কুলে পড়ার কারণে ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন গুনাহতে লিপ্ত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রী/শিক্ষক-শিক্ষিকা একসাথে মিশে আড্ডা দিচ্ছে, স্কুল-কলেজগুলোর দিকে একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবেন, কত স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ শিক্ষকগণও কত গুনাহতে লিপ্ত রয়েছে। এতে করে পার্থিব দিক দিয়ে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? সেটা মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হলো তারা তো আখিরাতের (চিরস্থায়ী জিন্দেগীর) দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আজকে মা-বাবারা তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে পড়ার ব্যাপারে যে পরিমাণ চাপ আর উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়ে থাকেন, এর চেয়ে অল্প পরিমাণই যদি ইসলামের ব্যাপারে চাপ আর উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাতেন। তাহলে পিতা-মাতা ও তাদের সন্তান, উভয়ের জন্য দুনিয়া ও অখিরাত দুটোই কল্যাণময় হত (ইন্শাআল্লাহ)।


    এভাবে দুনিয়ায় ব্যস্ত থাকতে থাকতে কত মূল্যবান সময় যে চলে যাচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। এভাবে চলতে চলতে অনেক লোক নামায না পড়া অবস্থায়, নেক আমল না করা অবস্থায়, গুণাহ তে লিপ্ত থাকা অবস্থায় এই নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

    আজকে আমরা দুনিয়ার মোহে অন্ধ হয়ে আমাদের রবকে ভুলে গেছি, আমাদের প্রতিপালককে ভুলে গেছি। আমাদের চিরস্থায়ী আবাসস্থলকে ভুলে গেছি। কবর, হাশর, মীযান, পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম এই সবকিছুর ব্যাপারেই আজকে আমরা খুবই উদাসীন। কিন্তু কেন? আমাদের কি আমাদের প্রতিপালকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না? আমাদেরকে কি আমাদের কর্মের ফল ভোগ করতে হবে না? অবশ্যই আমাদেরকে প্রত্যেকটি জিনিসের ব্যাপারে মহান রবের নিকট হিসাব দিতে হবে।

    আমার খুবই কষ্ট লাগে……
    যখন দেখি একদল মুসলমান মাঝারে যায়, ভন্ড পীরের মুরিদ হয়, পীরের পায়ে চুমু খায়, পীরকে সেজদা করে, পীরের কাছে সন্তান চায়, নারী-পুরুষ এক সাথে মিশে বাদ্য-বাজনা আর শিরকী গানে মেতে উঠে। পীরের সাথে ঢলাটলি করে আর যিনায় লিপ্ত হয়। বাড়িতে অসুস্থ বুড়ো বাবা-মাকে খাবার না দিয়ে দিয়ে পীরের জন্য মোরগ-পোলাও, বিরিয়ানী, আঙ্গুর বেদানা, ইত্যাদিসহ নগদ টাকা নিয়ে পীরের পুজা করে পীরকে খুশি করে। অথচ ঘরে অসুস্থ বাবা-মা বিনা চিকিৎসায়, খাবারের অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

    ওরে মুসলমান….. পীরকে খুশি না করে তোমার বাবা-মাকে খুশি কর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তোমার প্রতি খুশি হয়ে যাবেন। যা চাওয়ার আছে, আল্লাহর কাছে চাও। ভন্ড পীরের দরবারে যেওনা, আল্লাহর নাফরমানী করনা, নিজের ঈমানকে ধ্বংস করোনা। জেনে রেখ- আল্লাহ শিরককারীকে কখনই ক্ষমা করবেন না। যদি এইসব শিরকী কর্ম কান্ড কর-তাহলে অবশ্যই তোমার ঠিকানা হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম, যার শাস্তি বড়ই যন্ত্রণাদায়ক।

    সম্মানিত উপস্থিতি,
    আমাদের হৃদয়গুলো আজ পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। আল্লাহ ভয়, মৃত্যুর যন্ত্রণার ভয়, কবরের আযাবের ভয়, হাশরের মাঠের ভয়, মীযানের ভয়, পুলসিরাত পাড় হওয়ার ভয়, জাহান্নামের শাস্তির ভয়, কোনও ভয়েই যেন আমাদের হৃদয়গুলো বিগলিত হয় না। আর কবে আমরা বুঝব? আর কবে? কোরআন-হাদীসের এত আলোচনা শুনার পরেও আমরা তো এখনও এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে নিয়েই পড়ে আছি।
    পরিশেষে ওলামায়ে কেরামদের কাছে অনুরোধ,
    আপনারা তো নায়েবে নবী। আম জনতা আপনাদের উপর নির্ভরশীল। কারন আপনারা দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহ প্রায় সকল বিষয়ই জানেন। আম জনতার অনেকাংশই আজকাল সঠিক দ্বীন বুঝতে চায়। তাই, সম্মানিত উলামায়ে কেরাম, আপনারা আল্লাহর মনোনীত দ্বীনকে স্পষ্টরূপে প্রকাশ করুন। এই দ্বীনকে আপনারা স্পষ্টরূপে বর্ণনা করুন। কাফের-মুশরিকদের ইসলাম ধ্বংসের ফাঁদে পা দিবেন না। কেননা, কাফের-মুশরিকরা আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। কিন্তু তারা জানেনা, তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাদের হক পথে থাকার হকের পক্ষে আমরণ লড়ার তাওফীক দান করুন। আমিন।

    সম্মানিত উপস্থিতি,
    মৃত্যুর কথা স্মরণ করুন। পরকালের জীবনের কথা চিন্তা করুন। আমাকে আপনাকে আমাদের সবাইকেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদের চোখের সামনে অনেক সুস্থ মানুষও মৃত্যুবরণ করছে। কিন্তু আমরা এথেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করছি? প্রত্যেক প্রাণীর জন্যই মৃত্যু অবধারিত। তাই আমাদেরকেও মরতে হবে। কিন্তু কখন আমরা মারা যাব, তা কি কেউ জানি? জানিনা। আমার মৃত্যু কখন হবে? যুবক অবস্থায়? না কি বৃদ্ধ অবস্থায়। সকালে? নাকি দুপুরে? নাকি বিকালে? এই মূহুর্তে? নাকি একটু পরে। সুস্থ অবস্থায়? নাকি অসুস্থ অবস্থায়? আমরা কেউ জানিনা। যেহেুত আমরা জানিনা যে, আমাদের মৃত্যু কখন কিভাবে কোন অবস্থায় আমাদের জন্য উপস্থিত হবে? তাহলে কিভাবে আমরা এই তুচ্ছ দুনিয়াকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে থাকতে পারি। আমাদের আখিরাতের জন্য, যেটা আমাদের আসল ঠিকানা, সেই আখিরাতের জন্য আমরা কি অর্জন করছি? কি সঞ্চয় করছি?

    আমরা তো খুব সহজেই বুঝতে পারি যে, ইসলাম থেকে আমরা কতটা দূরে সরে এসেছি। শুধু এই তুচ্ছ দুনিয়ার কারণে আমরা আমাদের দ্বীন থেকে দূরে সরে আছি। দুনিয়ার মোহই আপনাকে আমাকে পরকালের ভাবনা থেকে গাফেল করে রেখেছে। রাসূল (সা এবং তার সাহাবীগণ দ্বীনের সম্মান রক্ষার জন্য কী করেছেন, তা কি আমাদের অজানা? আজ আমরা দ্বীন থেকে সরে গিয়ে নিজেদেরকে মুসলিম/ঈমানদার দাবী করি। অথচ আমরা দ্বীনের চাইতে দুনিয়াকেই বড় মনে করি।

    সম্মানিত উপস্থিতি,
    মৃত্যুর সাথে সাথে আমাদের সব আমল বন্ধ হয়ে যাবে, আর কোন আমল করার সুযোগ পাবো না। তাই আসুন, আর দেরি কেন? এখন থেকেই দ্বীনকে আকড়ে ধরি, আল্লাহর হুকুমগুলোকে পুরোপুরি মানি। আর রাসূল (সা) এর আদর্শে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করি। শয়তানের ধোকা আর দুনিয়ার মোহ কোনটাই যেন আমাদেরকে গ্রাস করতে না পারে।






    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা-আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং এই দ্বীনের আলোকে আমাদের জিন্দেগী পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
    আপনাদের নেক দু‘আয় মুজাহিদীনে কেরামকে ভুলে যাবেন না
Working...
X