Announcement

Collapse
No announcement yet.

উম্মাহর ভোরের-পাখিদের তুমি বরকত দাও!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • উম্মাহর ভোরের-পাখিদের তুমি বরকত দাও!


    বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

    আল্লাহ তা’আলা সূরাহ আলে-ইমরানের ১২১ নম্বর আয়াতে বলেছেনঃ

    "আর স্মরণ করুন আপনি যখন ভোরবেলায় আপনার আপনজনদের কাছ থেকে ভোরবেলা বেরিয়ে গিয়ে মুমিনগণকে যুদ্ধের ঘাটিসমূহে মোতায়েন করলেন…"


    উহুদের যুদ্ধ নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া প্রায় ৬০টি আয়াতের মধ্যে এ আয়াতটি-ই প্রথম। এ আয়াতে বলা হচ্ছে কীভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ উহুদ পর্বতে মুজাহিদীনদের সংগঠিত করার জন্য ভোরবেলাকে বেছে নিয়েছিলেন। এখানে লক্ষণীয় বিষয়টি হলো সময়ের উল্লেখ - আল্লাহ ﷻ সুনির্দিষ্ট ভাবে ঃভোরবেলা" কথাটি বলে দিয়েছেন। কিন্তু কেন? আসুন একটু চিন্তা করে দেখি...

    ভোরবেলা বা দিনের সবচেয়ে প্রথম ভাগ হলো কাজ সেরে ফেলার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময়। শাকর বিন ওয়াদা’আ আল-গমিদী বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ "হে আল্লাহ! আমার উম্মাহর ভোরের-পাখিদের তুমি বরকত দাও!" আল্লাহর রাসূল ﷺ যখনই কোনো সেনাবাহিনী পাঠাতেন বা অভিযান পরিচালনা করতেন, তিনি তা করতেন একেবারে দিনের প্রারম্ভে। শাকর বিন ওয়াদা’আ নিজেও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, তিনি তার কাফেলা সবসময় সকালবেলায় প্রেরণ করতেন, যার ফলে তার ছিল অঢেল প্রাচুর্য।

    সত্যি বলতে কী, কুর’আনের মধ্যে একটু ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে যে বহু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা দিনের প্রারম্ভে সংঘটিত হয়েছে।
    এই ভোরবেলাতেই আল্লাহ ﷻ লুতের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সূরাহ হুদের ৮১ নম্বর আয়াতে এই ঘটনার কথাই বর্ণিত হয়েছেঃ

    "নিঃসন্দেহ তাদের নির্ধারিত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। ভোরবেলা কি আসন্ন নয়?"


    আর সূরাহ আল-হিজরের ৬৬তম আয়াতঃ

    "আমি লূতকে এই বিষয়ে জানিয়ে দিলাম যে, সকাল হলেই তাদেরকে সমুলে বিনাশ করে দেয়া হবে।"


    এবং সূরাহ আল-ক্বমারের আয়াত ৩৮তম আয়াতঃ

    "আর নিশ্চিতভাবে প্রত্যুষে তাদেরকে নির্ধারিত শাস্তি আঘাত হেনেছিল।"


    এভাবে বার বার "ভোর" কথাটি কুরআনে এসেছে। সূরাহ আশ-শু’আরার ৬০-৬৬ আয়াতেও আমরা দেখি যে, ফেরাউন ও তার সৈন্যদলের ধাওয়া করার পর, এই সূর্যোদয়ের সময়েই মূসা (আ) সমুদ্র বিদীর্ণ করেছিলেন।

    এই ভোরবেলার ফজরের ফারদ সালাতের পূর্বে আদায় করা দু’ রাকআত সুন্নাহ সালাতের কথা বলতে যেয়েই আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেনঃ "এটি আমার নিকট দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তার চাইতেও বেশি প্রিয়।" সত্যিই! তাঁর কাছে তা এতোটাই প্রিয় ছিল যে তিনি ﷺ কোনদিনও এ দু’রাকআত সালাহ বাদ দেন নি। আর এই ফজর সালাত-ই যখন জামাতের সাথে কায়েম করা হয়, তার বর্ণনা নিয়ে নবীজি ﷺ বলেনঃ "এ নামাজ বান্দাকে আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের ছায়াতলে নিয়ে আসে।"

    আসলে আপনি নিজের দিকে লক্ষ করলেই বুঝতে পারবেন, যে দিনগুলোতে আপনি ফজরের পর থেকেই কাজকর্ম শুরু করে দেন, সে দিনগুলি অন্যান্য দিনের চাইতে অনেক বেশি কার্যকর। আর যে দিনগুলিতে ফজর পড়ে কয়েক ঘণ্টা ঘুম দেন, সে দিনগুলো কখনোই এত কর্মমুখর হয় না। সকালে উঠে মর্নিং ওয়াকে যাওয়া থেকে শুরু করে তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছনো, ক্লাসের পড়াটা তৈরি করে ফেলা, কুর’আন মুখস্থ, সকাল থেকে ভ্রমণ করা, কিংবা সকালে উঠে নাস্তা খাওয়া - এসবের সাথে তুলনা করুন সেই দিনগুলির কথা যখন পুরো সকালটা আপনি কিছু না করেই কাটিয়ে দেন - ঘুম থেকে উঠে কেবলমাত্র সকালের নাস্তা সারতে সারতেই বেলা বারোটা বেজে যায়। এই দু’ ধরণের দিনের প্রোডাক্টিভিটি কি কখনো সমান? তফাৎটা তো দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার! আর এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবাদের সুন্নাহ ছিল সকাল সকাল কাজ শুরু করে দেয়া, এমনকি জিহাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি, যেখানে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন অত্যধিক।

    সুতরাং ফজর সালাতের পর অলসতা ঝেড়ে ফেলুন, জড়তা কাটিয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা করুন। আর এসময়টিকে কাজে লাগান। আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো আগে আগে সেরে নিন। সেই দলের সাথে যোগ দিন যাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ আখ্যায়িত করেছেন "ভোরের-পাখি" হিসেবে, যাদের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে বরকতের দু’আ চেয়েছেন! আর জেনে রাখুন সকালে করা সবচেয়ে উত্তম, সজীবতাময় ও উপকারী কাজটি হলো আল্লাহর স্মরণে বিজড়িত হওয়া। নবীজি ﷺ তাঁর নিজের সম্পর্কে বলেছিলেনঃ "ইসমাঈল (আ) এর উত্তরসূরীদের মধ্য হতে চারজন দাস মুক্ত করার চাইতে ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর স্মরণে রত কোন দলের সাথে বসে থাকা আমার নিকট অধিক প্রিয়।"

    ভোরে ওঠার কার্যকারিতা নিয়ে তো অনেক কথাই হলো, তবুও একটি বিষয় বলা বাকি রয়ে গেছে। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা দিনের প্রথম ভাগের নি’আমত সম্পর্কে ভালো ভাবেই অবগত, যারা সকাল থেকে শুরু করে সমগ্র দিন কাজে লাগাতে চান, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিদিন সকালে শরীরে যে দুর্বলতা আর জড়তা জেঁকে বসে, তা কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারেন না। আমার মতো আরো অনেকেই মোটেও "ভোরের-পাখি" নন। তাহলে কীভাবে আমরা নিজেকে বদলাবো? কোথায় খুঁজে পাবো সেই অপরিসীম শক্তির ভাণ্ডার যা দিয়ে সারাদিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ কাজ সম্পাদন করতে পারা যায়?

    প্রথমত, আমাদের নিজেদেরকে এমন একটি নিয়মের মাঝে নিয়ে আসতে হবে যেন আমরা ইশার পর কর্মকাণ্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনি, আর জলদি জলদি শুয়ে পড়ি। সহীহ হাদীস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে - ইশার সালাতের পরে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা এবং ইশার পূর্বে ঘুমানো - এ দু’টি কাজের ব্যাপারে রাসূল ﷺ অত্যন্ত জোরালোভাবে আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কেননা এই দু’টো অভ্যাস ত্যাগ করলে আমরা দ্রুত ঘুমাতে পারবো। আর গাঢ় একটি ঘুমের পরে ঝরঝরা দেহ ও মন নিয়ে পরদিন সকালে জেগে উঠবো।

    দ্বিতীয়ত, ভোরের কিছু আগে উঠে ইবাদতে নিয়োজিত হওয়ার বিষয়টি আমাদের মন ও মেজাজের উপর সরাসরি ছাপ ফেলে। বুখারী ও মুসলিম উভয়েই বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ

    "যখন তোমাদের কেউ ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তোমাদের (মাথার) পশ্চাদাংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়, "তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। অত:পর যদি সে ওজু করে আরেকটি গিঁট খুলে যায়, তারপর যদি সে নামাজ পরে আরেকটি গিঁট খুলে যাবে। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে।" [বুখারীঃ ১১৪২, মুসলিমঃ ৭৭৬]

    এসব কিছু চিন্তা করার পর যখন উপরের আয়াতটির দিকে আবার তাকাই তখন বুঝি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা কেন বিশেষ ভাবে সময়ের উল্লেখ করেছেন। এই একটি আয়াত-ই আমাদের দিনগুলোকে আরো বেশি কর্মতৎপর করে তুলতে পারে, ইনশা আল্লাহ..।

    طارق مهنا
    তারিক্ব মেহান্না
    প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
    আইসোলেশন ইউনিট - সেল # ১০৮

  • #2
    ভাই তারিক মেহান্নার সব লিখাগুলা এক করে যদি দেওয়া যেত।

    Comment


    • #3
      jajak Allah Khair
      হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। (47:07)
      হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (3:200)

      Comment


      • #4
        Black Flag ভাই,

        আল কোরআন অংশে তারিক মেহান্না ভাইয়ের সব লেখা pdf আকারে দেয়া আছে।
        আবার আলাদা করেও সব গুলো লেখা দেয়া হচ্ছে। সব আল কোরআন অংশেই পাবেন।

        Comment

        Working...
        X