Announcement

Collapse
No announcement yet.

শুভ্রতার বার্তা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শুভ্রতার বার্তা

    শুভ্রতার বার্তা

    উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার গড়-আয়ু হিসাবে অর্ধেক আয়ু ফুরিয়ে গিয়েছে। তিন দিন আগে ৩২ শেষে ৩৩-এ পদার্পণ করলাম।জীবনের অর্ধেক সময় অতিবাহিত করলাম কিন্তু আমি অনুভব করতে পারছি না এতটা সময় কীভাবে কেটে গেল! এই ৩২ বছরের দীর্ঘ সময়পরিক্রমা আমার কাছে মোটেও দীর্ঘ মনে হচ্ছে না। অতীত ৩২ বছরকে এখন আমার কাছে একদিন বা আধা দিনের বেশি কিছু মনে হচ্ছে না। কী আশ্চরয! আমি অনুভব করতে চাইলেও অতীত ৩২ বছরের দৈর্ঘতা এখন আমি অনুভব করতে পারি না। ফেলে আসা ৩২ বছর ঘুরে আসতে ৩২ মিনিটও লাগে না। আমার অনুভূতি যদি এমন হয় তাহলে ৪০,৫০ এবং ৬০ ও ৭০-এর যারা উপনীত হয়েছে তাদের অনুভূতিও হয়তো এর ভিন্ন কিছু নয়। এভাবে একদিন আমাদের জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হবে, অথচ আমরা তখনও জীবনকে খুব সামান্যই মনে করতে থাকব।
    বেশ কিছুদিন ধরে আরশিতে চেহারা দেখা হয়েওঠে না।চৈত্রের মাঝা-মাঝিতেও গ্রামে ভোর বেলায় কিছুটা শীতের আমেজ রয়ে যায়।শীতের শুষ্কতায় ওষ্ঠ ও কপোল জ্বালা করছিল। আরশিটা হাতে নিয়ে আলো ঝলমলে বাতায়নের কাছে গেলাম।আজ প্রায় ১৫/২০ দিন পর আয়নার সাথে দেখা। চেহারার হালত পরীক্ষা করতে করতে হঠাৎ দৃষ্টি স্থির হল একটি শুভ্র দাড়ির পানে। আরেকটু খুটিয়ে দেখতে গিয়ে যা দেখলাম, তা দেখে আমার হৃদয়ে কম্পন ধরে গেল।দেখলাম, আমার চার-চারটা দাড়ি উজ্জল শুভ্রবর্ণ ধারণ করেছে। স্বাভাবিক বয়সের আগেই মাথার চুল অর্ধেক-এরও বেশি পেকে গিয়েছিল। সেটাকে বংশের দোষ বলে গা করিনি। প্রায় ছ‘মাস আগে এক গাছদাড়িও পক্কতার শিকার হয়েছিল, সেটাকেও বংশের দোষ বলেই এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।নিজেকে যুবক প্রমাণের জন্য বেশ কয়েকবার সেটাকে উপড়েও ফেলেছি। কিন্তু বার বার সেটা সমহিমায় নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছিল।আর আমি বার বার এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আজ আর এড়িয়ে যেতে পারলাম না। বংশের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে আর প্রবোধ দিতে পারলাম না। আজ এই দাড়ির শুভ্রতা আমাকে কাফনের শুভ্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দিল। এর সাথে সাথে কবর, হাশর, বিচার, পুলসিরাত ও জান্নাত-জাহান্নামের কথাও আমার মনে পড়েগেল। দাড়ির শুভ্র কেশরাজি আমার ভিতরকে নাড়াদিয়ে গেল। আমাকে চিন্তার গহীন সাগরে নিক্ষেপ করল। আমাকে ভাবতে শিখালো হায়াত নিয়ে, হায়াতের স্বল্পতা নিয়ে এবং মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী চরম বাস্তব এক অশেষ-অসীম জীবন নিয়ে।
    হায় আমি বাস্তবে-ই বুড়িয়ে যাচ্ছি! প্রজ্জলিত মোমবাতির ন্যায় ধীরে ধীরে আমার জীবনপ্রদীপ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। বরফের ন্যায় নিঃশব্দে গলে গলে আমার হায়াত নামক মূলধন নিঃশেষ হতে চলছে। চুলে সেই কবে পাকন ধরেছে। আর আজ দাড়িও সাদা হতে চলল। কিন্তু আমি নাদান এখনও নড়েচড়ে বসছি না, রবের সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি না।
    মার আঁচলের বাঁধন, বাবার স্নেহ, ভাই-বোনদের নিষ্কলুষ ভালবাসা, প্রিয়তমা স্ত্রীর ব্যকুলতা, মাসুম বাচ্চাদের নির্মল হাসি, ধন-সম্পদের প্রাচুরযতা, মান-সম্মানের মোহ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রবল আগ্রহ আমাকে শুধু দীর্ঘজীবনের স্বপ্ন দেখায়। অনন্ত-অসীমকাল বেঁচে থাকার জন্য প্রলুব্ধ করে। মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে রাখে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কেশে পক্কতা দিয়ে আর দাড়িতে শুভ্রতা দিয়ে আমাকে ক্ষণে ক্ষণে সতর্ক করে যাচ্ছেন, মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। হায়াতের ক্ষয়িষ্ণুতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আমি পক্ককেশের বার্তা এবং শুভ্র দাড়ির আবেদন অবহেলা করে যাচ্ছি। থমকে দাঁড়াচ্ছি না। অতীত থেকে ফিরে এসে রবের মর্জিমাফিক ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা করছি না।

    প্রিয় নওজোয়ান ভাই আমার! তোমার কেশে হয়তো এখনো পক্কতা আসেনি, শুভ্রতা উঁকি দেয়নি। তোমার শরীরে হয়তো কোনোরূপ দুর্বলতা দেখা দেয়নি কিন্তু অচিরেই এমন এক দিন আসবে, যে দিন তোমার কেশে পক্কতা দেখাদিবে, তোমার দাড়ি শুভ্রতায় সমুজ্জল হবে, তোমার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, তুমি কোনো কাজের যোগ্য থাকবে না, তুমি অপারগ-অক্ষমে পরিণত হবে। সেই দিন আসার আগেই তোমাকে, আমাকে, আমাদের প্রত্যেককে যৌবন, সুস্থতা এবং অবসরকে কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি দ্বীনের কাজ করতে হবে। বেশি থেকে বেশি নেকী অর্জন এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতি মনোনিবেস করতে হবে। পাকাপোক্ত, সংশয়হীন, দৃঢ়-ঈমান আনয়নের পর জিহাদের চেয়ে উত্তম আর কোনো আমল নেই। অতএব, যে আখেরাতের পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস নিয়ে পাস করতে চায়, পরীক্ষায় সাফল্যের চিরউন্মদনা ও আনন্দ-আহ্লাদে মত্ত হতে চায়, যে এমন হুরে ঈনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় যার মাথার দোপাট্টা পুরো দুনিয়ার সম্পদ থেকেও উত্তম, যার চেহারার উজ্জলতার কাছে আক্ষরিক অর্থেই রবিকিরণ ম্লান হয়ে যাবে, যার লালার মিষ্টতায় কুলহীন বিশাল সমুদ্রের তিক্ত-লবনাক্ত পানি সুপেয় মিষ্টি পানিতে পরিণত হবে, সে যেন দৃঢ় ঈমান আনয়নের পর জিহাদ, রিবাত ও শাহাদাতকেই নিজের কামনা-বাসনা বানিয়ে নেয়। আল্লাহর সমস্ত হুকুম সাধ্যমত আদায় করার সাথে সাথে জান-মাল দিয়ে জিহাদে শরীক হয়ে শাহাদাহ অর্জন করাই যেন তার প্রতিজ্ঞা হয়।
    প্রিয় বন্ধু! আফগান, কাশ্মীর, ফিলিস্তীন, সিরিয়াসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় হাট বসেছে। মুমিনদের জান-মাল ক্রয় বিক্রয়ের হাট। যে হাটে মুমিন তার রবের কাছে জান্নাতের বিনিময়ে জান-মাল বিক্রয় করে । কিন্তু আমরা এখনও আমাদের দেশে জিহাদ-কিতাল নামক জান্নাত ক্রয়ের সেই হাট বসাতে পারিনি। অথচ বিভিন্ন এলাকার ভাইয়েরা আমাদেরকে পিছনে ফেলে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত জান্নাত ক্রয় করে বেড়াচ্ছেন। তাই বন্ধু অলসতা ঝেড়ে ফেলে অগ্রসর হও। সবর ও তাকওয়াকে নিজের পাথেয় হিসাবে গ্রহণ কর। অটল-অবিচল থাক। বিজয় তোমার পদচুম্বন করবেই।

    হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এবং আমার সকল মুমিন ভাই-বোনকে শুভ্রকেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণের তাওফীক দেও। জিহাদভীতির এই যুগে জান-মাল দ্বারা পরিপূর্ণভাবে জিহাদে শরীক হওয়ার হিম্মত দাও। আর আমাদের হায়াতের খাতেমা তোমার ও তোমার দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে কিতালরত অবস্থায় ইখলাসপূর্ণ শাহাদাতের মাধ্যমে কর। আমীন।

  • #2
    মুহতারাম আখি! খুব ভাল বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং লেখাটাও খুব সুন্দর হয়েছে।
    আল্লাহ সুব. আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন,আমীন।
    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

    Comment


    • #3
      হে প্রিয় আল্লাহ ! হে আমার প্রিয় রব!আমদের তো দুনিয়ার মুহাব্বাত মহাবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। প্রিয়তম আল্লাহ আমাদের এই করুন অবস্থার উপর একটু করুণা করোনা! আমরা বড় অসহায় এবং পিছপড়া।
      অবিরাম করাঘাতে বদ্ধ দরজাও খুলে যায়।

      Comment


      • #4
        মুহতারাম ভাই
        আপনার লিখাটা মাশাল্লাহ খুব সুন্দর হয়েছে একটি মুহাসাবা মূলক লিখা
        আললাহ তায়ালা আপনার লিখা কে আরো ক্ষুরধার করুক
        আমীন আমীন আমীন
        জিহাদই হলো মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে
        পার্থক্যকারী একটি ইবাদাহ

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর হয়েছে। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। আমীন।
          ভাই আপনাকে নিয়মিত চাই।
          ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর হয়েছে। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। আমীন।
            কে আছো জোয়ান, হও আগোয়ান।

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহ খাইরান। আল্লাহ তাআলা আপনাকেও কবুল করেন।

              Comment


              • #8
                Originally posted by Diner pothe View Post
                মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর হয়েছে। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। আমীন।
                ভাই আপনাকে নিয়মিত চাই।
                দুআর দরখাস্ত। আল্লাহ তাআলা যেন সুযোগ দেন, সময় দেন এবং সময় ও সুযোগের উত্তম ব্যবহারের তাওফীক দেন।

                Comment


                • #9
                  আপনাকেও আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। আমীন।

                  Comment


                  • #10
                    উত্তম পোস্ট,, হজরত পরবর্তীতে এমন পোস্ট আরো
                    করবেন,,

                    ঈমান সবার আগে
                    সর্বোত্তম আমল হলো
                    আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং মহান মহীয়ান
                    আল্লাহর পথে জিহাদ করা।নাসায়ী,শরীফ

                    Comment


                    • #11
                      মাশাআল্লাহ

                      জাযাকাল্লাহু আহসানাল জাযা
                      আখি !আপনি এমন একটা লেখা দিয়েছেন যা
                      আমাদের অন্তরকে নাড়া দিয়েছে।
                      হে আল্লাহ !আপনি আমাদের সকল কে আপনার দীনের
                      জন্য কবুল করুন । আমীন

                      Comment

                      Working...
                      X