Announcement

Collapse
No announcement yet.

দরসুল কুরআন; রমযান; তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণশালা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দরসুল কুরআন; রমযান; তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণশালা


    يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
    হে ইমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো, গুনাহ হতে বেঁচে থাকতে পারো। সুরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩

    এখানে স্বভাবতই প্রশ্ন হয়, রোযা রাখার দ্বারা কিভাবে তাকওয়া হাসিল হবে? এর উত্তরে আলেমগণ বলেন, রমযানে রোযাদার হালাল চাহিদা পূরণ করা হতে বিরত থাকার মাধ্যমে হারাম থেকে বেঁচে থাকার যোগ্যতা অর্জন করে। দেখুন, পানাহার ও স্ত্রী সহবাস তো বৈধ চাহিদা, কিন্তু রোযা রাখলে এগুলো থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। সুতরাং যে রোযা রেখে বৈধ চাহিদা হতে বিরত থাকতে পারবে, সে কেন অবৈধ চাহিদা ও গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকতে পারবে না? হাঁ, তবে যে ব্যক্তি রোযা রেখেও বিভিন্ন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়, রোযা তার জন্য তাকওয়ার প্রশিক্ষণ কিভাবে হবে? এজন্যই হাদিসে রোযা রেখে ঝগড়া-বিবাদ না করা, গীবত না করা এবং সকল প্রকার গুনাহের কাজ হতে বেঁচে থাকার তাগীদ এসেছে এবং বলা হয়েছে, যারা রোযা রেখে গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় তাদের রোযা দ্বারা উপবাস ব্যতীত কোন ফায়দা নেই।

    «الصيام جنة، وإذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث ولا يصخب، فإن سابَّه أحد أو قاتله، فليقل إني امرؤ صائم». صحيح البخاري: (1904) صحيح مسلم: (1151)

    রোযা ঢালস্বরুপ, সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন যেন সে অশ্লীল কথা না বলে, ঝগড়াঝাটি না করে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যত হয় তাহলে সে তাকে বলবে, আমি রোযাদার, (আমি তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাই না) -সহিহ বুখারী, ১৯০৪ সহিহ মুসলিম, ১১৫১

    হাদিসের ব্যাখায় হাফেয ইবনে হাযার রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৮৫২ হি.) বলেন,

    ولأحمد من طريق أبي يونس عن أبي هريرة: «جنة وحصن حصين من النار». وله من حديث أبي عبيدة ابن الجراح: «الصيام جنة ما لم يخرقها» زاد الدارمي «يعني بالغيبة» وبذلك ترجم له هو وأبو داود، ... وقال القرطبي: جنة أي سترة، يعني بحسب مشروعيته، فينبغي للصائم أن يصونه مما يفسده وينقص ثوابه، وإليه الإشارة بقوله: «فإذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث» الخ، ويصح أن يراد أنه ستره بحسب فائدته وهو إضعاف شهوات النفس، وإليه الإشارة بقوله: «يدع شهوته الخ»... وقال عياض في الإكمال: معناه: سترة من الآثام أو من النار أو من جميع ذلك، وبالأخير جزم النووي. (فتح الباري: 4/104 ط. دار الفكر)

    … মুসনাদে আহমদে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রোযা ঢালস্বরুপ, যতক্ষন পর্যান্ত তাকে (গীবতের মাধ্যমে) ছিদ্র করা না হয়। … রোযাকে ঢাল বলা হয়েছে, রোযার ফায়দার দিকে লক্ষ্য করে, কেননা রোযার দ্বারা (গুনাহের প্রতি) অন্তরের শাহওয়াত কমে যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, ‘রোযাদার আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের শাহওয়াত ছেড়ে দেয়’ এ কথায় এ দিকেই ইশারা করা হয়েছে। -ফাতহুল বারী, ৪/১০৪

    عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لم يدع قول الزور والعمل به، فليس لله حاجة في أن يدع طعامه وشرابه». صحيح البخاري: (1903)
    عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «رب صائم ليس له من صيامه إلا الجوع».

    আবু হুরাইরা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোযা রেখেও মিথ্যা কথা বললো, গুনাহে লিপ্ত হলো, তার পানাহার পরিত্যাগ করাতে আল্লাহর কোন গরজ নেই। সহিহ বুখারী, ১৯০৩
    অন্য বর্ণণায় এসেছে, কোন কোন রোযাদার উপবাস ব্যতীত তার রোযা দ্বারা কিছুই অর্জন করতে পারে না। সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৬৯০


    عن إبراهيم، قال: كانوا يقولون: «الكذب يفطر الصائم». (مصنف ابن أبي شيبة: 8981)
    عن كعب وأبي العالية، قالا: «الصائم في عبادة ما لم يغتب». (مصنف ابن أبي شيبة: 8982 ومصنف عبد الرزاق: 7896)

    ইবরাহীম নাখায়ী বলেন, সালাফ বলতেন, মিথ্যা কথার দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যায়। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৮৯৮১

    তাবেয়ী কাবে আহবার ও আবুল আলিয়া বলেন, রোযাদার যতক্ষণ পর্যন্ত গীবত না করে ততক্ষণ সে ইবাদতে থাকে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৮৯৮২ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ৭৮৯৬

    বস্তুত, রমযানে একদিকে শয়তান বন্দী, অপরদিকে রোযার কারণে নফসও দূর্বল হয়ে যায়, তাই এ মাসে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য মাসের সহজ, তাই এ মাস তাকওয়ার প্রশিক্ষণের এক সূবর্ণ সুযোগ। যদি এ মাসে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমরা সচেষ্ট হই তাহলে ইনশাআল্লাহ এর দ্বারা আমাদের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং ধীরে ধীরে আমরা সকল গুনাহ বর্জন করতে পারবো। তাই প্রত্যেকেরই মুহাসাবা করা উচিত, রোযা অবস্থায় আমার দ্বারা কোন গুনাহ হচ্ছে কি না? এমন যেন না হয় যে, আমরা হালাল খাবার হতে তো বিরত থাকলাম, কিন্তু হারাম সম্পদ উপার্জন করলাম, স্ত্রীসহবাস হতে বিরত থাকলাম কিন্তু চোখের খেয়ানত বা অন্য কোন হারাম পন্থায় যৌন চাহিদা মিটালাম। যদিও অধিকাংশ আলেমদের মতানুযায়ী গুনাহের দ্বারা রোযা ভাঙ্গে না, কিন্তু এর দ্বারা রোযা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং রোযার সওয়াব কমে যায়, বরং রোযার উদ্দেশ্য অর্থাৎ তাকওয়া অর্জনই ব্যাহত হয়। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আমিন।
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    মাশাল্লাহ ভাই খুব সুন্দর হয়েছে
    ভাই আপনার লিখা তাকওয়া অর্জনের এক অদম্য আগ্রহের জন্ম দিয়েছে
    আল্লাহ তায়ালা আপনার ইলম ও আমলে বারাকাহ বাড়িয়ে দিক আমীন আমীন
    জিহাদই হলো মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে
    পার্থক্যকারী একটি ইবাদাহ

    Comment


    • #3
      হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সকলকে মাহে রামাযানে তাকওয়া হাসিলের তাওফিক দান করুন। আমীন
      জাযাকাল্লাহ খাইর।
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        ভাই রোযা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস ব্যতীত অন্যসব অন্তরঙ্গতা যেমন চুমু দেয়া, আলিঙ্গন করা ইত্যাদি এসব তো জায়িজ, তাই নয় কি?
        মুসলিম উম্মাহ তো জিহাদের উম্মাহ!

        Comment


        • #5
          যুবকদের জন্য মাকরুহ। কেননা তাদের ক্ষেত্রে আশংকা রয়েছে যে, তারা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রোযাই ভেঙ্গে ফেলবে। আর যারা বয়স্ক তাদের ক্ষেত্রে এই আশংকা না থাকলে জায়েজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে রোযা অবস্থায় স্ত্রীদের চুম্বন সুপ্রামাণিত। কিন্তু তিনি নিজেই যুবকদের এ থেকে নিষেধ করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেছেন “নবীজি যেভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন তোমাদের কেইবা সেভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।”
          الجهاد محك الإيمان

          জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

          Comment


          • #6
            Originally posted by আদনানমারুফ View Post
            যুবকদের জন্য মাকরুহ। কেননা তাদের ক্ষেত্রে আশংকা রয়েছে যে, তারা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রোযাই ভেঙ্গে ফেলবে। আর যারা বয়স্ক তাদের ক্ষেত্রে এই আশংকা না থাকলে জায়েয। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে রোযা অবস্থায় স্ত্রীদের চুম্বন সুপ্রামাণিত। কিন্তু তিনি নিজেই যুবকদের এ থেকে নিষেধ করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেছেন “নবীজি যেভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন তোমাদের কেইবা সেভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।”
            আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আপনার ইলম ও আমালে বারাকাহ দিন। আমার জন্য দুআ'র দরখাস্ত।
            মুসলিম উম্মাহ তো জিহাদের উম্মাহ!

            Comment


            • #7
              মাশাআল্লাহ, খুবই উপকারী আলোচনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে যথাযথভাবে রামাদ্বানের হক্ব আদায় করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
              বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
              কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

              Comment

              Working...
              X