Announcement

Collapse
No announcement yet.

জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখণ্ডনঃ ২

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখণ্ডনঃ ২

    নিচে জামাতুল বাগদাদির খিলাফাহ প্রসঙ্গে ব্যবহৃত যুক্তি নিয়ে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনি হাফিযাহুল্লাহ-র বক্তব্য এবং তাঁর আলোকে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরা হল। প্রথমে আমরা শাইখের বক্তব্য উপস্থাপন করবো এবং তারপর তাঁর বক্তব্য, জামাতুল বাগদাদির বক্তব্য এবং আলোচ্য বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ-র অবস্থানের আলোকে বর্তমান অবস্থার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরবো।
    *প্রতিটি পর্বে আলাদা আলাদা বিষয় আলোচিত হবার কারণে, পৃথক থ্রেড করা হল।


    জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ২
    “দাওলাহ হক্ব কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে!”
    শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনি

    জামাতুল বাগদাদির সদস্য এবং সমর্থকরা বলেঃ

    আইসিস যদি হক্বের উপর না থাকে, তাহলে কেন আল্লাহ-স শত্রু কুফফার আইসিসের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। ওয়ারাকা বিন নাওফাল, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেছিলেনঃ “ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”

    এই বিভ্রান্তির জবাবঃ

    ১। প্রথমত এরকম একটি বিভ্রান্তিকে হক্বপন্থি হওয়া বা মানহাজের সঠিক কিম্বা ভুল হবার স্বপক্ষে দালীল হিসেবে উপস্থাপন করা প্রকৃতপক্ষে জামাতুল বাগদাদীর বিচ্যুতি, বিভ্রান্তি, খাহেশাতের অনুসরণ, এবং অসুস্থ হৃদয়সমূহের পরিচায়ক।আল্লাহ্* আযযা ওয়া জাল বলেছেনঃ

    তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর।[আলে ইমরান, আয়াত ৭]

    আইশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেনঃ

    “যদি তুমি সেসব লোকেদের দেখতে পাও যারা মুতাশাবীহাত [সংশয়পূর্ণ রূপক আয়াত] অনুসরণ করে, তাহলে বুঝবে এরাই সেসব লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্* আমাদের সতর্ক করেছেন।“

    কুর’আন-সুন্নাহ এবং সালাফদের মানহাজের ভিত্তিতে কে হক্বপন্থী আর কে বাতিলপন্থী তা বিচার করা হয়। জামাতুল বাগদাদির বাতিল হওয়া শারীয়াহ দ্বারা প্রমাণিত, তাই এধরণের হাজার “প্রমাণ” তাদের কাজে আসবে না।

    ২। দ্বিতীয়ত, শত্রুতা কখনো সত্য বা মিথ্যার প্রমাণ, পরিচায়ক বা মাপকাঠি হতে পারে না। যদি শত্রু সংখ্যা কারো সত্য হবার প্রমাণ হতো, তাহলে তো গাদ্দাফি বিরাট হক্বপন্থী ছিল। সারা পৃথিবী তার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঘোষণা করেছিলম এবং তাকে উৎখাত করেছিল। এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে, এরকম আরো অনেক দল আর ব্যক্তি আছে যাদের বিরুদ্ধে অনেক শত্রু একত্রিত হয়েছিল, কিন্তু সেটা তাদের হক্বপন্থি বানিয়ে দেয় নি। সুতরাং যাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা ঘোষণা করা হয় তারা সবাই হক্বপন্থি না। তবে সকল হক্বপন্থিকে নিঃসন্দেহে শত্রুতার মুখোমুখি হতে হয়।

    ৩। তৃতীয়ত, ওয়ারাকা বিন নাওফালের বক্তব্যের অর্থ এই না যে, নিজেকে হক্ব প্রমাণ করার জন্য একজন ব্যক্তির উচিৎ সবার সাথে শত্রুতা শুরু করা। একমাত্র আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথার অনুসরণের মাধ্যমে কারো সত্যের উপর থাকা প্রমাণিত হয়। পবিত্র রক্তকে সম্মান করা, এবং মুসলিমদের উপর তাকফির করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই সত্যের উপর চলার প্রমাণ পাওয়া যায়। খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ হুযাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেনঃ

    “তাদেরকে [শত্রুদের] উসকে [provoke] দিয়ো না।“

    তার মানে কি রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্যের উপর ছিলেন না?! [জামাতুল বাগদাদির যুক্তি অনুযায়ী – অর্থাৎ হক্বের মাপকাঠি হল শত্রু সংখ্যার আধিক্য] কারণ তিনি শত্রুদের নিষ্ক্রিয় করতে চেয়েছিলেন? নাকি যখন তিনি ﷺ মাদীনার ইহুদীদের সাথে চুক্তি করেছিলেন, তখন তিনি ﷺ সত্যের উপর ছিলেন না? রাসূলুল্লাহ ﷺ কি সত্য থেকে অনেক দূরে ছিলেন?! নাউযুবিল্লাহ।

    ৪। বাতিল কখনো বাতিলের মোকাবেলা করতে পারে না। সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল, এবং গোটা বিশ্ব তাদের সমর্থন দিয়েছিল। জার্মানির বিরুদ্ধে পৃথিবী কাঁপানো এই যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর অর্থ এই না যে জার্মানি হক্বের উপর ছিল, বা জার্মানির মানহাজ বিশুদ্ধ ছিল।

    ৫। পঞ্চমত, মুজাহিদিন শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদের সবদিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে, আর জামাতুল বাগদাদী মুজাহিদনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, আর মুজাহিদিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কিন্তু তাদের আচরণ এবং মানহাজ জামাতুল বাগদাদির আচরণ এবং মানহাজ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

    ৬। যদি জামাতুল বাগদাদির এই যুক্তিকে আমরা মেনে নেই, তাহলে এই যুক্তি অনুযায়ী তো অবশ্যই আল-ক্বাইদা ও তালিবান হক্বের উপর আছে। কারণ সমগ্র বিশ্ব তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সুতরাং, জামাতুল বাগদাদীর এই যুক্তি অনুযায়ী নিঃসন্দেহে আল-ক্বাইদা এবং তালিবান হক্বের উপর আছে। কিন্তু জামাতুল বাগদাদী আর আল-ক্বাইদার আক্বিদা ও মানহাজ তো ভিন্ন। জামাতুল বাগদাদীর মতে আল-ক্বাইদার মানহাজ বাতি। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব হয়?

    ৭। সপ্তমত, এরকম ভুল যুক্তির বদলে আমরা বরং এই বলি যেঃ
    এই উম্মাহ এবং উলেমা কোন বিষয়ের বিবেচনা করেন, সেটাকে কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় নাকি তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যদি কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে মিথ্যা না প্রমাণ করা যায় তবে সেটা হক্ব বলে পরিগণিত হবে। আর জামাতুল বাগদাদীর বাতিল হওয়া বিভিন্ন দিক থেকে, বিভিন্ন ভাবে প্রমাণিত, এবং এ বিষয়ে উম্মাহ এবং আলেমগণ একমত।
    [শাইখের বক্তব্য সমাপ্ত]
    আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

  • #2
    প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ

    শাইখের উপরোক্ত যুক্তিখন্ডনের আলোকে জামাতুল বাগদাদির এই বক্তব্যের দিকে একটু তাকানো যাক।

    জামাতুল বাগদাদীর সমর্থক ও সদস্যরা যে “যুক্তি” সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সেটা হল এটাঃ “যদি আমরা হক্বের উপর না থাকি তাহলে কেন সারা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে।“

    অথচ না কুর’আন, না সুন্নাহতে, এটাকে কারো হক্বপন্থী হবার প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র সবার শত্রুতা কাউকে হক্ব বা বাতিল প্রমাণের জন্য যথেষ্ট না। কুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যদি কেউ হক্ব পথে থাকে, এবং তারপর শত্রুরা তার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়, তখন এই শত্রুতা তাদের পক্ষে একটি ইঙ্গিত হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু কখনো সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে না। আর যদি কুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী কেউ বাতিল হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সমগ্র সৃস্টিজগত এক হওয়া তাকে হক্বপন্থী বানাতে পারবে না। মূল মাপকাঠি কুর’আন এবং সুন্নাহ, মূল মাপকাঠি শত্রুতা বা শত্রু সংখ্যা না। অথচ জামাতুল বাগদাদি কুর’আন সুন্নাহ কে রেখে এটাকে হক্বের মাপকাঠি এবং দালীল বানিয়ে নিয়েছে।

    -এটা প্রকৃতপক্ষে আহলুল বিদ’আর একটি চিরাচরিত বৈশিস্ট। তারা কুর’আন- সুন্নাহ বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো দ্বীনের মধ্যে নতুন মাপকাঠি তৈরি করে নেয়।। খাওয়ারিজ, রাফিদা, বাতেনী, জাহমিয়্যাহ সহ যতো বাতিল ও বিদ’আতি ফিরকা আছে, তারা সবাই এই কাজ করেছে। তারা দ্বীনের মধ্যে নতুন মাপকাঠি উদ্ভাবন করেছে নিজেদের খেয়াল-খুশি আর সুবিধামতো। আজকেও এরকম দল আছে, যারা জনসমর্থনকে হক্ব হবার দালীল মনে করে, কিম্বা তাগুত কতৃক নিষিদ্ধ হওয়াকে হক্ব হবার দালীল মনে করে, নেতাকর্মীর জেলে থাকা বা ফাঁসি হওয়াকে হক্ব হবার দালীল মনে করে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই কুর’আন সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত না এবং প্রকৃতপক্ষে, তারা এগুলো নিজেরা উদ্ভাবন করেছে।

    -তীব্র শত্রুতা এবং বিরোধিতা যদি হক্বের মানদন্ড হয়, তাহলে তো মানসুর আল হাল্লাজও হক্বপন্থী ছিল। খালীফাহ তার বিরুদ্ধে গেছে, তৎকালীন আলেমরা তার বিরুদ্ধে গেছে, জনগণ তার বিরুদ্ধে গেছে, কিন্তু সে তো শুধু ঘুরে ঘুরে দাওয়াহ করছিল।

    ““ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”

    জামাতুল বাগদাদির মতে নাওফাল ইবন ওয়ারাকার এই উক্তি অনুযায়ী নিজেকে আল্লাহ দাবিকারী মানসুর আল হাল্লাজ ও হক্বপন্থী ছিল? সবাই তার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল অথচ সে শুধু মানুষকে দাওয়াহ দিচ্ছিলো? তাহলে সে হক্ব?! লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।

    -আহলুল বিদ’আর আরেকটি বৈশিষ্ট হল, তারা দালীল বোঝে না। তারা দালীল উপস্থাপন করে কিন্তু তার তাৎপর্য ও অর্থ বোঝে না। মু’তাযিলারা ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহকে, “কুর’আন সৃষ্ট” তাদের এই কুফর বিশ্বাসের স্বপক্ষে এই আয়াত দিয়ে দালীল দিয়েছিলঃ

    “তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে।“ [আল-আম্বিয়া, আয়াত ২]

    তারা আয়াত সঠিক ভাবে উদ্ধৃত করেছিল কিন্তু তাদের প্রয়োগ ভুল ছিল। আহলুল বিদ’আ মিলাদের পক্ষে বিভিন্ন দালীল পেশ করে। যেমন সোমবার রাসূলুল্লাহ ﷺ সিয়াম পালন করতেন কারণ এই দিন ছিল তাঁর ﷺ জন্মদিন ! তাই আমাদেরও তাঁর জন্মদিন পালন করা উচিত। নাউযুবিল্লাহ। সোমবার যে রাসূলুল্লাহ ﷺ সিয়াম পালন করতেন, এই দালীল তারা সঠিক উথাপন করেছে কিন্তু ব্যাখ্যা করেছে ভুল।খাওরারিজ সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকফির করার সময়য় যে দালীল উপস্থাপন করেছিল [হুকুমাত শুধু আল্লাহ-র জন্য] সেটা সঠিক, কিন্তু তাদের প্রয়োগ ছিল ভুল।

    একইভাবে ওয়ারাকা বিন নাওফাল যে এ কথা বলেছেন তা সত্য, এবং জামাতুল বাগদাদি এটা সঠিক ভাবে উদ্ধৃত করেছে, কিন্তু তারা এমন ব্যাখ্যা করেছে এবং এ থেকে কিয়াস করে এমন এক নতুন বিষয় দ্বীনে এনেছে যা তাদের স্বীয় মস্তিস্কপ্রসূত।

    –তর্কের খাতিরে যদি নাওফাল বিন ওয়ারাকার এইকথার আলোকে আমরা ধরেও নেই যে শত্রুতা ও শত্রু সংখ্যা কারো হক্ব হবার মাপকাঠি হতে পারে, তাও কি সেটা জামাতুল বাগদাদীর ক্ষেত্রে কিয়াস যোগ্য? দেখা যাক নাওফাল আসলে কি বলেছেন?

    ““ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”

    সিরাহ থেকে আমরা জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম ওয়াহী নাযিলের পর ওয়ারাকার কাছে যান, যিনি ইঞ্জিল ও তাওরাতের ব্যাপারে সঠিক ও গভীর জ্ঞান রাখতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ হেরা গুহায় যা ঘটেছে তা বিস্তারিত নাওফালের কাছে বর্ণনা করেন। শোনার সাথে সাথে নাওফাল হেরা গুহায় আগমনকারীকে “নামুস আল-আক্ববার” বা রূহ-উল-ক্বুদ্দুস জিব্রিল আলাইহিস সালাম বলে চিনতে সক্ষম হন। যার প্রেক্ষিতে তিনি বুঝতে সক্ষম হন, যা নাযিল হচ্ছে তা প্রকৃতপক্ষে মালিকুল মুলক আল্লাহ আযযা ওয়া জালের পক্ষ থেকে ওয়াহী। এবং তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেন, যে তাঁর সাধ হয় যখন কুরাইশ রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিতাড়িত করবে তখন জীবিত থাকার। উল্লেখ্য ওয়ারাকা এসময় বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এই কথা শুনে বিস্মিত হন। কিভাবে কুরাইশ তাদের সম্ভ্রান্ত গোত্রের, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সম্মানিত সন্তানকে বিতাড়িত করতে পারে? তখন ওয়ারাকা বিন নাওফাল আলোচ্য উক্তিটি করেন।

    ““ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”

    সম্মানিত ভাইরা, লক্ষ্য করুন, “তুমি যে ধরণের বানী পেয়ছে” বলতে এখানে কি বোঝানো হচ্ছে? জিব্রিল আলাইহিস সালাম যে ওয়াহী নিয়ে এসেছিলেন – অর্থাৎ কুর’আন – সেটাকে বোঝানো হচ্ছে। ওয়ারাকা বলছেন যখনই কারো উপর ওয়াহী নাযিল হয়েছে, তখন তাঁর সাথে শত্রুতা করা হয়েছে। একথা সত্য। এবং হাদীস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন সবচেয়ে বেশি শত্রুতা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় নাবী-রাসূলরা। জামাতুমাউল বাগদাদী কি দাবি করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে যে বানী হয়েছিল, তাদের কাছে এমন কিছু নাযিল হয়? নাউযুবিল্লাহ।

    ওয়ারাকা কি বলেছিলেন যখনই কোন দল নিজেদের একমাত্র বৈধ জামা’আ দাবি করে, নিজেদের খিলাফাহ দাবি করে তখন তাদের শত্রুতা করা হয় – তাই তারা হক্ব?

    কিয়াসের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিজের ইচ্ছেমত মিলিয়ে দিলে হয় না। প্রথমত দেখতে হয় যে মূল দালীল থেকে কিয়াস করা হচ্ছে, তাঁর সাথে যে বিবেচ্য বিষয়ের উপর কিয়াস প্রয়োগ করা হচ্ছে তার মিল আছে কি না। এবং দুটি ক্ষেত্রে মূল অন্তর্নিহিত বাস্তবতা এবং উদ্দেশ্য একই কি না। এক্ষেত্রে দেখুন যে ঘটনা থেকে কিয়াস করা হচ্ছে – অর্থাৎ ওয়ারাকার বক্তব্য – তা বলা হয়েছে একজন নাবী কে এবং ওয়াহীর ব্যাপারে। এই দুটি বিষয় সম্পূর্ণভাবে সন্দেহের ঊর্ধ্ব। কিন্তু নাবী ছাড়া আর কোন ব্যক্তি বা সংগঠন সন্দেহের ঊর্ধ্বে না, এবং ভুলত্রুটি মুক্ত না। একইভাবে ওয়াহী হল রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে। ওয়াহীর সাথে ওয়াহী ছাড়া আর কোন কিছুর তুলনা হতে পারে না এবং ওয়ারাকাও কিন্তু এটিই বুঝিয়েছেন।

    “তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে…”

    এখানে বলা হচ্ছে ওয়াহীর কথা, কারণ এই কথা বলার আগেই ওয়ারাকা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জানিয়েছেন যে সত্ত্বা “ইক্বরা বিসমি…” নিয়ে হেরা গুহাতে এসেছিলেন তিনি আল্লাহ-র পক্ষ থেকে প্রেরিত জিব্রিল আলাইহিস সালাম। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যাকে উদ্দেশ্য করা বলে হচ্ছে – নাবী – সে দিক দিয়ে জামাতুল বাগদাদির ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য না। যেই বানী সম্পর্কে বলা হচ্ছে – ওয়াহী – সেটা জামাতুল বাগদাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। এবং যেভাবে এই বানী মূল ক্ষেত্রে এসেছিল – জিব্রিল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে – সেটাও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। অর্থাৎ, উদ্দেশ্য, সারমর্ম, মাধ্যম – কোন দিক দিয়েই এ ঘটনার সাথে জামাতুল বাগদাদির ঘটনা মেলে না, তাহলে এখানে কিভাবে কিয়াস হয়? জামাতুল বাগদাদী এসব কিছু বাদ দিয়ে শুধু শত্রুতার অংশটা গ্রহণ করেছে, কারণ এটা তাদের অবস্থার সাথে মেলে, আর তারপর ইচ্ছেমত এটা প্রয়োগ করেছে নিজেদের উপর।

    এছাড়া আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, কিয়াস হয় কুর’আন ও হাদীসে দালীলের উপর ভিত্তি করে। ওয়ারাকার বক্তব্য এ দুটোর একটাও না।

    বস্তুত জামাতুল বাগদাদী প্রচ্ছন্নভাবে যা চাচ্ছে তা হলে নিজেদের রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপতে। আউযুবিল্লাহ, সুম্মা আউযুবিল্লাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর ওয়াহী পাবার প্রেক্ষিতে যে কথা, ওয়াহী পাবার ব্যাপারে বলা হয়েছে, একজন নাবী ও রাসূল হিসেবে সেটা জামাতুল বাগদাদী কিয়াস করে নিজেদের ব্যাপারে চালাতে চায়। এবং আসলে এটা নতুন কিছু না,। কারণ আমরা জানি তারা এটাও বলে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করলে সে কাফির হয়ে যাবে। [“…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”]

    অথচ আহলুস সুন্নাহ-র অবস্থান হল একমাত্র কোন নাবী বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কাউকে কাফিরে পরিণত করে না। যেমন আলি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, অন্যান্য সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনাহু তা’আলা ইজমাই’নকে কাফিরে পরিণত করে নি, যদিও তিনি বৈধ খালিফাহ ছিলেন যিনি শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।ইমাম ইবন তাইমিয়্যা তার কিতাব “আস-স্ব’রিমুল মাসলুলল”-এ [২/১৫] উলেমাদের ইজমার কথা উল্লেখ করে বলেছেন – “ব্যক্তি কোন নবীকে হত্যা করে সে কাফির”।

    একইভাবে যে নাবীকে হত্যার চেস্টা করবে সে তার ঐ কাজের মাধ্যমে কাফির। নাবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও হত্যাচেস্টার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এবং নাবীর দাওয়াহর বিরোধিতা। আর নাবীর দাওয়াহর বিরোধিতা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ-র বিরোধিতা। একারণে কেউ নাবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে সে কাফির। কিন্তু এটা শুধু আল-আম্বিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন ব্যক্তি বা দল এটা দাবি করতে পারে না যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে কেউ কাফির হয়ে যাবে, এমনকি তিনি যদি খালিফাহ হন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আপন চাচাতো ভাই হন, এবং মেয়ের জামাইও হন। অথচ এই আহলুল গুলুহ, আহলুল বিদ’আ, গোমরাহ জামাতুল বাগদাদি অবলীলায় এরকম দাবি করে যাচ্ছে আর সাথে সাথে, ইচ্ছেমতো কিয়াস করছে, নিজেদের নাবী ﷺ এর সমতুল্য ধরে। লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।

    –এছাড়া শাইখ মুহাইসিনি #৭ পয়েন্টে যা বলেছেন তা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। শাইখ বলেছেনঃ

    “এই উম্মাহ এবং উলেমা কোন বিষয়ের বিবেচনা করেন, সেটাকে কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় নাকি তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যদি কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে মিথ্যা না প্রমাণ করা যায় তবে সেটা হক্ব বলে পরিগণিত হবে।“

    অনেকের কাছে খটকা লাগতে পারে, যে আগে কেন মিথ্যা প্রমাণ করার চেস্টা করতে হবে। ব্যাপারটা হল যখন আপনি কোন কিছুকে সত্য ধরে নিয়ে দালিল তালাশ শুরু করবেন, তখন আপনি অবধারিতভাবেই এমন কোন না কোন দালীল পাবেন যা আপনি তাউয়ীল করে আলোচ্য বক্তব্যকে সত্য প্রমানে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন যদি আপনি গণতন্ত্রকে হক্ব ধরে দালীল তালাশ শুরু করেন তখন আপনি শূরারা দালীলের অপব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি আর্মির কাছে নুসরা খোজাকে হক্ব মনে করে দালীল খোজা শুরু করেন তাহলে আপনি মাক্কী জীবন থেকে দালীলের তাউয়ীল করতে পারবেন। আপনি যদি বাতেনী ‘ইলমের পক্ষে দালীল চান তাহলে হিজরতের সময়য় গুহায় অবস্থানের সময়ের দালীলের অপব্যাখ্যা করতে পারেন। এভাবে আপনি যে অবস্থানই চান তার পক্ষে দালীল পেশ করা সম্ভব তাউয়ীলের মাধ্যমে।

    কোন অবস্থানকে সত্য ধরে নিয়ে দালীল তালাশ করা হল, নিজের মনমতো অংকের উত্তর প্রথমে লিখে তারপর সেই উত্তরকে সঠিক প্রমাণের জন্য ব্যাক ক্যালকুলেশান করা। এজন্য আহলুস সুন্নাহ-র পদ্ধতি হল এটা দেখা যে কোন অবস্থানকে কি বাতিল প্রমাণিত করা যায় নাকি। যদি তা করা না যায় তাহলে সেটাকে সঠিক বলে ধরে নেয়া হয়।

    পরিশেষে আমরা বলতে চাই, আমরা হক্বের মাপকাঠি নেই কুর’আন ও সুন্নাহ থেকে। আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো মাপকাঠি তৈরি করে নেই না। যদি আল-ক্বা’ইদা এবং তালিবান কুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বাতিল বলে প্রমাণিত হয়, তবে সমগ্র সৃস্টিজগত তাদের বিরোধিতা করলেও তারা হক্ব হয়ে যাবে না। আর তারা যদি কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে হক্ব হয়, তবে কেউ শত্রুতা করুক আর না করুক – তারা হক্বই থাকবে। হক্ব শত্রু সংখ্যা বা শত্রুতার তীব্রতা দ্বারা নির্ধারিত হয় না। হক্ব নির্ধারিত হয় শারীয়াহ-র মাপকাঠি দ্বারা। আর তাই জামাতুল বাগদাদীর শত্রু সংখ্যা তাদের হক্ব প্রমাণ করে না, যখন তাদের গোমরাহি শারীয়াহ দ্বারা প্রমাণিত।

    আর আমরা তো এও জানি যে ১৩ মাস ধরে আমেরিকা তাদের বিরুদ্ধে বম্বিং করলেও এই তের মাসে, আমেরিকা জামাতুল বাগদাদীর তেলবাহী ট্রাকের বহরে একবারো আগাহত করে নি। কিছুদিন আগে রাশিয়া প্রথম বারের মতো তা করেছে। আমরা জানি তুর্কি বাহিনী এবং জামাতুল বাগদাদির সেনার বেশ কিছু জায়গায় পাশাপাশি অবস্থান করেছে কিন্তু কেউ কাউকে হামলা করে নি। আমরা জানি আলেপ্পোতে নুসাইরী বাহিনি আর জামাতুল বাগদাদি পাশাপাশি অবস্থান করেছে, এবং কেউ কাউকে আক্রমন করে নি। তাই তারা শত্রুতা নিয়ে যেসব কথা বলেও সেগুলোও তাদের অনশব কথার মতোই অর্ধ-সত্য আর সম্পূর্ণ মিথ্যা মিশ্রিত।

    নিজেদের হক্ব প্রমাণের এই হাস্যকর প্রচেস্টা তিনটি বিষয় প্রমাণ করেঃ

    ১। কুর’আন ও সুন্নাহ থেকে কোন সুস্পষ্ট দালীল তাদের কাছে নেই, যে কারণে তারা এরকম তাউয়ীল করে দালীল তৈরির চেস্টা করে।

    ২। তারা, তাদের সমর্থকরা, এবং আবু বারা’র [যে এই “দালীল” প্রচারে ভূমিকা রেখেছে] মতো তাদের “শাইখরা” ‘ইলমের দিক থেকে মিসকীন পর্যায়ের। এবং এক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ-র চাইতে আহলুল বিদ’আর সাথে তাদের সাদৃশ্য বেশি।

    ৩। তারা নিজেদের এই দালীলের অভাব সম্পর্কে জানে, এবং এজন্য যেকোন মূল্যে দালীল তৈরি করে নিতে সচেষ্ট হয়, এবং একই সাথে কুর’আন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে আবেগ ভিত্তিক প্রচারন চালায় সমর্থকদের মন জয় করার জন্য। কুর’আন সুন্নাহ-র বদলে তাই তারা বিজয় অর্জন, শত্রু সংখ্যা, তাদের “রাষ্ট্রের” প্রসারকে হক্ব হবার দালীল বলে উপস্থাপন করে।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেন আমাদের তাউফীক দান করেন সিরাতুল মুস্তাক্বীমের উপর অটল থাকার, কুর’আন ও সুন্নাহ আকড়ে ধরে থাকার, এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর মানহাজে অবিচল থাকার। আমরা আল্লাহ রাহমানুর রাহীমের কাছে আশ্রয় চাই, খেয়াল-খুশি ও খাহেশাতের অনুসরণ থেকে এবং আহলুল বিদ’আর ভ্রান্তিসমূহতে পতিত হওয়া থেকে।

    ইন শা আল্লাহ চলবে।

    ___________

    সম্পূর্ণ লেখাটি এক সাথে পাবেনঃ https://tinyurl.com/najkru4
    আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

    Comment


    • #3
      তৃতীয় পর্ব প্রকাশিতঃ

      https://tinyurl.com/jzklrsg

      দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে প্রকাশিত হয়েছে - এই থ্রেডেঃ https://tinyurl.com/h4vv7de

      তিন পর্ব একসাথে পড়ুনঃ



      [প্রথম পর্বের লিঙ্ক]- https://tinyurl.com/jumrf5f

      [দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক]- https://tinyurl.com/jyuqrqk

      [তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক] - https://tinyurl.com/jzklrsg
      Last edited by Abu Anwar al Hindi; 02-10-2016, 09:59 AM.
      আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

      Comment

      Working...
      X