Announcement

Collapse
No announcement yet.

আল-কায়দা খারেজীঃ একটি ভ্রান্ত প্রচারণা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আল-কায়দা খারেজীঃ একটি ভ্রান্ত প্রচারণা

    আফগানিস্থানে আল-কায়দার কাছে মার্কিন সামরিক শক্তিসহ মোট ৪৮টি তাগুদ রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি লজ্জাস্করভাবে পরাজিত হওয়ার পর ইসলাম চির শত্রুরা তাদের পরিকল্পনা পাল্টিয়ে ফেলে । তারা এখন নিশ্চিত যে, সমরে ইসলামের শক্তি আল-কায়দার সাথে পেরে উঠা অসম্ভব । তাই, আবারও তারা আশ্রয় নিল মিডিয়ার । তবে, একটু অন্যভাবে । মুসলিম নামধারী কিছু আলেমের দ্বারা তারা প্রচার করতে থাকলো যে, আল-কায়দা খারেজী । আর খারেজী আক্বীদার বিষয়ে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম যেহেতু জ্ঞাত সেকারণে সাধারণ মুসলিমদের অনেকেই মিডিয়ার অপপ্রচারে খুব সহজেই প্রভাবিত হচ্ছে । আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে যে, বর্তমান বিশ্বে সব ধরণের যোগাযোগ মাধ্যম ইসলাম শত্রু এবং তাদের দোশরদের হাতে নিয়ন্ত্রিত । তাই, মিডিয়ার অপপ্রচারের জবাব হিসেব এই ছোট্ট পর্যালোচনা । অনুরোধ থাকবে, চিন্তাশীল পাঠকমন্ডলীই সত্যতা বিচার করবেন…





    খাওয়ারীজ আসলে কারা???



    খাওয়ারীজদের প্রথম পূর্ণাঙ্গভাবে আত্নপ্রকাশ ঘটেছিলো আলী (রাঃ)- এর বিরুদ্ধে । তারা আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যায় এবং তাঁকে ত্যাগ করে, তাই তাদেরকে খাওয়ারীজ বলা হয় । তবে এটা সত্য যে, যুগে যুগে খাওয়ারীজদের বংশধররা থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে । কিন্তু, তারা নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়েই আত্মপ্রকাশ করবে । প্রসঙ্গত, আল-কায়দা কি হোসনি মুবারকের অধীনস্থ ছিল অতঃপর তার বিরোধীতা করে? নাকি তারা বাদশা ফাহাদের অধীনস্থ ছিল অতঃপর তার বিরুদ্ধে চলে যায়?? না, তারা কখনোই কারো অধীনস্থ ছিল না, তাহলে আমরা কিভাবে বলতে পারি তারা কারো বিরুদ্ধে চলে গেছে? তাছাড়া, তাগুদি শক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষ নেয়া কোন মুসলিমকে খারেজী করে তোলে না । অথচ, তাগুদি শক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষ নেয়াই ইসলামের বিধান । এ বিষয়ে নিচে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হলোঃ



    প্রথম যুক্তিঃ

    আল-কায়দা খাওয়ারিজ নয় কারণ খাওয়ারিজরা সাহাবীগণকে (রাঃ) কাফের ঘোষণা করে । আল-কায়দা সাহাবীগণকে (রাঃ) কাফের ঘোষণা করে না ।



    দ্বিতীয় যুক্তিঃ

    খাওয়ারীজরা কবিরা গুণাহকারীকে কাফের ঘোষণা করে আল-কায়দা তা করে না ।



    তৃতীয় যুক্তিঃ

    খাওয়ারীজরা কোন মুসলিম শাসকের অধীনে থাকার পরে তার বিরুদ্ধাচরণ করবে অথচ আল-কায়দা কখনোই কোন শাসকের অধীনে ছিল না । আল-কায়দা কখনোই কোন সরকারের অধীনস্থ ছিল না, সেখানে আমরা কিভাবে বলতে পারি তারা সরকারের বিপক্ষে গেছে? বরং, সূচনালগ্ন থেকেই তারা মানব রচিত কোন শাসন ব্যবস্থার অধীনস্থ ছিল না । সেখানে আল-কায়দা সম্পর্কে কোন শাসকের বিরুদ্ধাচরণ করার বিষয়টি তাদের ব্যাপারে মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না ।



    ৪র্থ যুক্তিঃ

    খারেজীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে অথচ আল-কায়দা মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার্থেই ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে । তাহলে কিভাবে আমরা আল-কায়দাকে মুসলিমদের হত্যায় অভিযুক্ত করতে পারি? অথচ তারা সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সুদান ইত্যাদি মুসলিম দেশের সম্পদশালী পরিবার থেকে এসেছে এবং তারা চাইলেই আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারত । স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে তারা শুধু মুসলিমদের হত্যার চিত্র দেখতে পায় । তারা দেখলো যে, কাফিররা কাফিরদের হত্যা করছে না বরং, শ্যারন (কাফিররা) ফিলিস্তীনিদের (মুসলিম) হত্যা করছে । তারা দেখেছে, আমিরিকানরা ইরাকীদের হত্যা করছে, কাফিরদের নয় । অন্যথায়, আল-কায়দা ইরাকে মুসলিমদের প্রতিরক্ষায় যেত না এবং মুস’আব যারকাউয়ী ইরাকে যেতেন না মুসলিমদের রক্তের প্রতিরক্ষায় । তাই, আল-কায়দা নিয়ে এসব প্রচারণা হচ্ছে মিথ্যাচার যেন মুসলিমরাই আল-কায়দা সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে । যাতে করে মুসলিমরা তাদের ব্যাপারে জনমত তৈরি করার সুযোগ না পায় ।



    ৫ম যুক্তিঃ

    শায়খ ওসামা বিন লাদেন নিজে (ফস্টাটাইন) অর্থাৎ দু’দলের কাহিনী বলে যাননি বরং রসূল (সঃ) নিজে সে কাহিনী বর্ণনা করে গেছেন । আর যদি লোক সকলকে দু’দলে পৃথক করা খাওয়ারীজদের বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে তাহলে তা উসামা বিন লাদেনের পূর্বে রসূল (সঃ) করে গেছেন । রসূল (সঃ) বলে গেছেনঃ এমন একটা সময় আসবে যখন লোকেরা দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাবে- একটি ঈমানের শিবির যেখানে কোন নিফাক থাকবে না এবং অপরটি নিফাকের শিবির যেখানে কোন ঈমান থাকবে না ।



    ৬ষ্ঠ যুক্তিঃ

    এটা সত্যের বিকৃতি যারা একথা বলে যে, আল-কায়দা মুসলিমদের উপর সেসব আয়াত প্রয়োগ করেছে যা কাফিরদের প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছে । এই কাজ মূলত খাওয়ারিজরা করেছে । তারা কোন আয়াতকে সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গের বাইরে প্রয়োগ করেছে ।



    উদাহরণস্বরুপ, নিম্নোক্ত আয়াতটি ঐ সকল মুসলিমদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহূদী-খ্রীষ্টানদেরকে সাহায্য করেছিল অথবা আহলে কিতাবদের ব্যাপারে যারা নাবী (সঃ) – এর বিপক্ষে লড়াই করেছিল । পরবর্তী মুসলিমদের মধ্যে এরকম লোক ছিল এবং থাকবে যারা একই কাজ করার কারণে তাদের উপরও এই আয়াত কার্যকর হবে ।



    “অতঃপর সে তার সম্প্রদায়কে বোকা বানিয়ে দিল, ফলে তারা তার কথা মেনে নিল । নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়” (৪৩: ৫৪)



    যেমন, আল্লাহসুবাহানাহুওয়াতাআলা ঘোষণা করেন যে, যারা লাত ও উযযার ইবাদাত করে তারা কাফির । এ আয়াত নাযিল হয়েছিল আবু জাহেলকে উদ্দেশ্য করে । কিন্তু এ আয়াত যে শুধু তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে তা কিন্তু নয় বরং যুগে যুগে যারাই লাত ও উযযার ইবাদাত করবে (মূর্তি পূজা তা যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন) তখন আবু জাহেলের ব্যাপারে যে সমস্ত আয়াত নাযিল হয়েছে তা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে । সুতরাং কোন কাফিরই কুরআনের আয়াত থেকে নিরাপদ নয় যদি তারা একই কাজ সম্পাদন করতে থাকে ।



    ৭ম যুক্তিঃ

    এই পয়েন্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে একটা সংশয় তৈরি হয় যেটা প্রফেসর আল-ইয়াকুতি উল্লেখ করেছেন । তিনি বলেন, খাওয়ারিজদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খমিস (জামা) ছোট করা । এখন, খমিস বা ইজার ছোট করা সুন্নাহ ।



    উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, “নাবী (সঃ) – এর ইজার পায়ের অর্ধভাগ পর্যন্ত নামতো”



    সুতরাং, “যার খমিস তার পায়ের অর্ধভাগ পর্যন্ত পৌঁছায় সে খাওয়ারিজ” - এ কথা সাব্যস্ত করে যে, রসূল (সঃ) খাওয়ারিজদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ) কারণ নাবী (সঃ) – এর খমিস তার পায়ের অর্ধভাগ পর্যন্ত পৌঁছাত । উল্লেখ্য, আল-কায়দা রসূল (সঃ) – এর এই সুন্নাত আদায় করে বলে তাদেরকে খাওয়ারিজ আখ্যায়িত করা নিতান্তই অযৌক্তিক ।



    ৮ম যুক্তিঃ

    ফিকহ-আল-ইসলামিয়াতে (ইসলামী আইনশাস্ত্র) একটি নীতি আছে যে, কুফরের ধ্বংস সাধনের গতি ধীর করার ব্যাপারে মতভেদ কোনো দলকে খাওয়ারিজে পরিণত করে না ।



    উদাহরণস্বরুপঃ যখন আলিম-উলামাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য দেখা দেয়ঃ “এই স্থিতিকাল কুফর হবে কি হবে না” – এরকম ক্ষেত্রে যারা “হ্যা” বলেন তাদের পক্ষে যেমন প্রমাণ আছে তেমনি যারা “না” বলেন তাদের পক্ষেও প্রমাণ আছে । এই রকম পরিস্থিতি আপনাকে মুর্জিয়াদেরও অন্তর্ভক্ত করে না আবার আমাকে খাওয়ারিজেও পরিণত করে না ।



    যেমন, তারিক আস-সালাহ অর্থাৎ সলাত পরিত্যাগকারী-র রায়ের ব্যাপারে ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন, “যে সলাত পরিত্যাগ করল সে কাফির” আবার ইমাম শাফেঈ (রঃ) এর মতে, “তা কুফর নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা খাটো করে ও তা নিয়ে উপহাস করে” । এখন, এক্ষেত্রে ইমাম শাফী (রঃ) ইমাম আহমাদ (রঃ) – কে একজন তাকফিরি কিংবা খাওয়ারিজ ঘোষণা করেননি, আবার ইমাম আহমাদ (রঃ) ইমাম শাফী (রঃ) – কে মুর্জিয়া বলে আখ্যায়িত করেননি । কাজেই মতভেদ আসলে প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ভিত্তিকে কেন্দ্র করে নয় ।



    উদাহরণস্বরুপঃ ঈমানের সংজ্ঞার ব্যাপারে মতভেদ, যদি কেউ বলে যে ঈমান হচ্ছে শুধুই অন্তরের বিশ্বাস আর আমরা যে গুণাহ করি তা আমাদের বিশ্বাসে পরিবর্তন ঘটায় না – তাহলে এটা মুর্জিয়াদের আক্বিদাহ । আবার কেউ যদি বলে যে “সব গুনাহ কুফর” তাহলে সে খাওয়ারিজদের একজন । এখন আমরা যদি এই নিয়ে মতভেদ করি যে, “এই বিষয়টি কুফর না ইসলাম”, তাহলে উভয় পক্ষই স্বপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করবে এবং এটা কাউকে খাওয়ারিজে পরিণত করবে না ।



    আল্লাহসুবাহানাহুওয়াতাআলা আমাদেরকে হক্ব বুঝার তৌফিক দান করুন । আমীন…

  • #2
    জাযাকাল্লাহ । অনেক সুন্দর হয়েছে।

    Comment


    • #3
      শুকরান................

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ!! ভাই মুজাহিদ অফ হিন্দ!!

        Comment


        • #5
          মাশাঅাল্লাহ অনেক দরকারী পোস্ট। অাখি কিছু কিছু কথার দালীল বা রেফারেন্স দিলে অনেক ভাল হতো।
          রসূল (সঃ) বলে গেছেনঃ এমন একটা সময় আসবে যখন লোকেরা দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাবে- একটি ঈমানের শিবির যেখানে কোন নিফাক থাকবে না এবং অপরটি নিফাকের শিবির যেখানে কোন ঈমান থাকবে না ।
          সলাত পরিত্যাগকারী-র রায়ের ব্যাপারে ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন, “যে সলাত পরিত্যাগ করল সে কাফির” আবার ইমাম শাফেঈ (রঃ) এর মতে, “তা কুফর নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা খাটো করে ও তা নিয়ে উপহাস করে” ।
          কাফেলা এগিয়ে চলছে আর কুকুরেরা ঘেঊ ঘেঊ করে চলছে...

          Comment


          • #6
            jajakallah

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহ আখি, আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ ।

              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ আখি,অনেক সুন্দর ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা...
                আল্লাহ আপনাকে মুজাহিদ হিসেবে কবুল করুন,আমীন।

                Comment

                Working...
                X