Announcement

Collapse
No announcement yet.

একটি কৌশলগত পর্যালোচনা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • একটি কৌশলগত পর্যালোচনা

    যেকোন সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন সমস্যাটিকে চিহ্নিত করা। একবার সমস্যাকে চিহ্নিত করার পর, করণীয় হল সেই সমস্যা সমাধানের একটি পন্থা বা পদ্ধতি তৈরি করা এবং তারপর সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা। যায়নিস্ট-ক্রুসেডার এবং মুসলিম বিশ্বে তাদের দালালদের সম্মিলিত চক্রান্তের ফলে ১৯২৪ সালে উসমানীদের পতন ঘটে। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ – বিশ্ব ময়দানে তার কতৃত্ব সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়ে ফেলে, এবং কুফফারের বহুমুখী আক্রমনে সামনে সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত ও অসহায় হয়ে পরে। যার ফলশ্রুতিতে কিছুদিন পর ফিলিস্তিন ও পবিত্র আল-আক্বসা মাসজিদ ইহুদিদের হস্তগত হয়। দুঃখজনকভাবে এই মহা বিপর্যয়ে পতিত হবার পরও মুসলিম উম্মাহর বিশাল অংশ মূল সমস্যাকে এবং সমস্যা নিরসনে করনীয় কি, তা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়। তবে কিছু দল তথা আন্দোলন সঠিক ভাবে সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং তার সমাধানে করনীয় কি – এই প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং একটি কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন ও সেটা অনুযায়ী কাজ করতে সচেষ্ট হয়। তারা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে, মুসলিমদের দুর্দশার কারণ খিলাফাহ না থাকা এবং উম্মাহ-র মধ্যে জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, আঞ্চলিকতা ইত্যাদির কারণে সৃষ্ট অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা। তারা সঠিকভাবে এও চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় যে এ সমস্যাবলী থেকে উত্তরনের পথ হল ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। শেষোক্ত কাজটী – অর্থাৎ খিলাফাহ কি ভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে, কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে – এই প্রশ্নের জবাব একেক দল একেক ভাবে দিয়েছে। আর আমাদের এই লেখার আলোচ্য বিষয় এই শেষোক্ত প্রশ্নটিই।

    আমরা এই লেখাটিতে চেস্টা করবো খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে সকল পদ্ধতি বা মানহাজ বর্তমানে কিংবা নিকট অতীতে অনুসৃত বা প্রস্তাবিত হয়েছে সেগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণের। আমরা বিশেষ করে ইখওয়ানী/জামাতী ধারা, হিযবুত তাহরীর, বিভিন্ন আঞ্চলিক জিহাদী তানজীম, তাকফির ওয়াল হিজরাহ (জামাতুল মুসলিমীন)/GIA/জামাতুল বাগদাদী(আইএস/আইএসএস), এবং শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ তথা তানজীম আল –ক্বা’য়িদাতুল জিহাদের পদ্ধতির দিকে নজর দিবো। একইসাথে আমরা দেখানোর চেষ্টা করবো, শাইখ উসামা বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ প্রস্তাবিত এবং অনুসৃত ধারাই সর্বাধিক বাস্তব সম্মত, কার্যকরী, সফল এবং বিচক্ষণতা পূর্ণ। আমাদের এই বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা হবে কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক। একারণে এক্ষেত্রে আমরা এই আলোচনায় এই বিভিন্ন পদ্ধতিগুলোর শার’ই বিশ্লেষণে এবং দালীলভিত্তিক আলোচনায় যাবো না।

    এই দল বা পদ্ধতিগত ধারার বাইরে আমরা আরো দুটি ধারা দেখতে পাই যারা দাবি করে তারা বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ ধারা দুটো হল – ১) তাবলীগ জামাত এবং ২) সালাফি দাওয়াহ (শায়খ আলবানীর প্রচারিত)। আমরা এই দুটো ধারা নিয়ে কোন আলোচনা করবো না। বস্তুত আক্বীদা এবং উসুলী ব্যাপক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, “খিলাফাত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উম্মাহর কি করনীয়” এ প্রশ্নের জবাবে, এই দুটো ধারা মূলত একই ধরণের জবাব দেয়। উভয়েই বলে তারবিয়্যাহর (শিক্ষার) মাধ্যমে পুনরায় খিলাফাহ ফিরে আসবে। তাবলীগ জামাত বলে, সব মুসলিম যদি সুন্নতী পোষাক পড়ে, সুন্নতি আমল করে, জামাতে সালাত আদায় করে, এবং সর্বোপরি সাচ্চা মুসলিম হয় যায় তবে খিলাফাহ অটোমেটিক ফেরত চলে আসবে। অন্য দিকে সালাফি দাওয়ার বক্তব্য হল, সব মুসলিম যদি সঠিক আক্বিদা গ্রহণ করে, শিরক-বিদ’আ-কুফর থেকে বিরত হয়, এবং দ্বীনের ব্যাপারে সালাফ-সালেহীনের যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- তা গ্রহণ করে তাহলে অটোমেটিক খিলাফাত ফিরে আসবে। আমরা সকল মুসলিম দল্কেই শ্রদ্ধা করি, এবং স্বীকার করি সকল মুসলিম জামাতের মধ্যে কল্যাণ আছে। কিন্তু একই সাথে আমরা বাস্তবতার দিকেই চোখ রাখি এবং আবেগের আতিশয্যে বিচার-বুদ্ধির ব্যবহার বন্ধ করি না। তাই তাবলীগ জামাত এবং সালাফি দাওয়ার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই আমরা বলি, এ দুটো পদ্ধতি সমাজ সংস্কারের জন্য একটা পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে, কিন্তু কখনোই খিলাফাত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হতে পারে না। শুধুমাত্র ব্যক্তি ও সমাজের পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করা যায় না। না মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে আর না সার্বিক ভাবে সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এরকম কোন নজীর আছে। বাস্তব দুনিয়া এভাবে কাজ করে না।

    খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিভিন্ন প্রস্তাবিত পদ্ধতি (মানহাজ):


    আগেই উল্লেখ করা হয়েছে আমরা এখানে পাঁচটি পদ্ধতি তথা মানহাজের দিকে নজর দেবো। সেগুলো হলঃ

    ১) ইখওয়ানুল মুসলিমীন/জামাতে ইসলামীর পদ্ধতি
    ২) হিযবুত তাহরিরের পদ্ধতি
    ৩) বিভিন্ন আঞ্চলিক জিহাদি জামাতের পদ্ধতি (হামাস, লস্কর-ই-তাইয়্যেবা, জেএমবি, এলআইএফজি ইত্যাদি)
    ৪) তাকফির ওয়াল হিজরাহ (জামাতুল মুসলিমীন), GIA, জামাতুল বাগদাদী (আইএস/আইএসএস)-ইত্যাদি দলের পদ্ধতি
    ৫) তানজীম আল ক্বাইদাতুল জিহাদের পদ্ধতি

    এই ধারাগুলোর প্রথম দুটি ধারা সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের ধারা। আর পরের তিনটি হল সশস্ত্র আন্দোলনের ধারা। এ ফোরামের সদস্যরা সবাই এই ধারাগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাই প্রতিটির বিশদ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন নেই। পারস্পরিক পর্যালোচনার জন্য আমরা অল্প কথায় প্রতিটি পদ্ধতির মূল নির্যাস তুলে ধরছি।

    ১)জামাতি-ইখওয়ানি ধারাঃ মূলত শাইখ হাসানুল বান্না এবং আবুল ‘আলা মওদুদীর রাজনৈতিক ধারনার উপর গড়ে ওঠা। যদিও এ দুটি দলই দাবি করে তারা শাইখ সাইদ কুতুব রাহিমাহুল্লাহর মতাদর্শও অনুসরণ করে, তবে শাইখ সাইদ কুতুবের লেখনীর সাথে পরিচিত যে কোন পাঠক, এই দাবির অসত্যতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিতে পারবেন। এই ধারার মূল লক্ষ্য হল এমন একটি আন্দোলন গড়ে তোলা যা হবে সামাজিক এবং রাজনৈতিক। এই আন্দোলনের একটি শক্তিশালী আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি থাকবে। আন্দোলনের কর্মীরা সমাজের মধ্যে গভীরভাবে “এমবেডেড” বা প্রোথিত থাকবেন। সমাজ ও রাস্টের সকল অংশের সাথে তারা জড়িত থাকবেন, ফলে এই দল এবং আন্দোলনকে সমাজ থেকে নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন হবে। দলের সদস্যরা তাদের সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলনের কাজে লাগাবেন। সমাজের ভেতরে আরেকটি সমাজ গড়ে তোলা হবে যারা দাওয়াহ এবং অন্যান্য কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হবেন। উপযুক্ত সময়ে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করা হবে। এই দলের বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠবে। এদের মধ্যে যোগাযোগ থাকবে। আর মুল নেতৃবৃন্দ যে রাজনৈতিক কর্মসুচি ও পন্থা গ্রহণ করবেন তাই শাখাগুলো অনুসরণ করবে। মুল একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের পদ্ধতি।

    ২) হিযবুত তাহরিরঃ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানীর মতাদর্শের উপর গড়ে ওঠা। দলের সদস্য দাওয়ার মাধ্যমে উম্মাহর মধ্যে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন [intellectual change/intellectual revolution] আনার চেষ্টা করবে, এবং খিলাফাহর প্রয়জনীয়তা সম্পর্কে উম্মাহকে অবহিত করবে। দাওয়াহর ক্লাজ চালিয়ে যাওয়া হবে যাতে উম্মাহ খিলাফাহর দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় সামরিক বাহিনীর কাছে “নুসরাহ” চাওয়া হবে। এবং সামরিক বাহিনীর “নুসরাহ” (সাহায্য) পেলে ক্যু-র মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হবে এবং খিলাফাতের ঘোষনা দেয়া হবে। একটি মূল নেতৃত্ব থাকবে যারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শাখার কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রন করবে এবং পলিসি ঠিক করবে। এটিও একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের পদ্ধতি।

    ৩)বিভিন্ন আঞ্চলিক জিহাদি জামাতের পদ্ধতি (হামাস, লস্কর-ই-তাইয়্যেবা, জেএমবি, মরো ইসলামী লিবারেশান ফ্রণ্ট, এলআইএফজি ইত্যাদি): নিজ নিজ মুসলিম ভূখণ্ডের তাগুত ও মুরতাদীন শাসকগোষ্ঠীকে কিংবা কাফির আসলি দখলদারকে জিহাদের মাধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা এবং শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। “নিকটবর্তী শত্রুর” বিরুদ্ধে জিহাদ করা। এখানে উল্লেখ্য হামাস-লস্কর এ তাইয়্যেবার সূচনা মূলত এই আদর্শের উপর হলেও, তারা পরবর্তীতে এই আদর্শ ত্যাগ করেছে, গণতান্ত্রিক ধারায় অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে এই ধারাটি প্রায় বিলুপ্ত।

    ৪)তাকফির ওয়াল হিজরাহ (জামাতুল মুসলিমীন), GIA, জামাতুল বাগদাদী (আইএস/আইএসএস)-ইত্যাদি দলের পদ্ধতিঃ একটি ভূমি দখল করা যা “সেফ যোন” [safe zone] হিসেবে কাজ করবে। একজন আমীর নিযুক্ত করে তাকে “খালিফাহ” ঘোষণা করা। তার নেতৃত্বে “নিকটবর্তী শত্রুর” বিরুদ্ধে জিহাদের মাধ্যমে অঞ্চল দখল করা, এবং সেখানে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে বাই’য়াহ দাবি করা এবং তাদের নিযুক্ত খালিফাহকে বাই’য়াহ দেয়া সকলের উপর ওয়াজিব মনে করা এবং বাই;ইয়াহ যারা দেবে না তাদের মুরতাদীন-মুনাফিক্বীন মনে করা এবং তাদের রক্ত হালাল করা। ষাটের দশকের শেষ দিকে মিশরে আল তাকফির ওয়াল হিজরাহ বা জামাতুল মুসলিমীন এই মতাদর্শ প্রচার করে। তারা শুকরি মুস্তফাকে খালিফাহ এবং নিজেদের মুসলিমদের একমাত্র বৈধ জামাত দাবি করে, এবং নিজেদের দলের বাইরে বাকি সব মুসলিমকে তাকফির করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ইয়েমেনের পাহাড়ি অঞ্চলকে নিজেদের খিলাফাতের সেফ যোন হিসেবে ব্যবহার করা এবং সেখানে থেকে বিভিন্ন আক্রমণ চালিয়ে অন্যান্য অঞ্চল দখল করা। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় GIA একই রকম পদ্ধতি গ্রহণ করে। তারা খিলাফাহ ঘোষণা করে এবং নিজেদের একমাত্র বৈধ জামা’আ দাবি করে, ব্যাপকভাবে তাকফির করে এবং মুসলিমদের হত্যা করা। বর্তমানে জামাতুল বাগদাদী [আইএস/আইএসআইএস] একই রকম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। তারা নিজেদের খিলাফাহ দাবি করেছে, নিজেদের একমাত্র মুসলিম জামাত দাবি করেছে, সব মুসলিমের জন্য তাঁদেরকে বাই’য়াহ দেয়া ওয়াজিব ঘোষণা করেছে। যারা তাঁদেরকে বাই’ইয়াহ দেয় না তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে জামাতুল বাগদাদী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। যারা বাই’য়াহ দেয় না তাদের জান-মাল-সম্মান হালাল মনে করে। এবং তাদের বিরোধিতাকারী সকল মুসলিমকে মুরতাদ মনে করে।

    মূলত এই পদ্ধতিটি হল – প্রথমে খিলাফাহ ও খালিফাহ ঘোষণা করা, তারপর এই ঘোষনাকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। আর এই খিলাফাহ ঘোষণার ভিত্তিতে- ঘোষিত খালিফাহর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে মুসলিমদের মধ্যে ইমান ও কুফরের বিচার করা।

    ৫)তানজীম আল-ক্বাইদাতুল জিহাদঃ দাওয়াহ ও জিহাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা। একটি অগ্রগামী দল তৈরি করা যাদের কাজ হল “সাপের মাথা” তথা বৈশ্বিক কুফর শক্তির কেন্দ্র অ্যামেরিকাকে এবং পাশাপাশি অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলোকে আক্রমণ করা। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা, কিংবা যেসব সশস্ত্র জিহাদি জামাত আছে তাদের সাথে মিলে কাজ করা। এই সব দলকে একটি বিশ্বব্যাপী গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যে একীভূত করা। এই আঞ্চলিক দলগুলো নিজ নিজ প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কার্যক্রম চালাবে। দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করবে, এবং মুসলিমদের মধ্যে দাওয়াহর কাজ চালাবে। মূল গেরিলা যুদ্ধ শুরুর আগে তারা সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি পপুলার সাপোর্ট বেস তৈরি করবে। ক্ষেত্রে বিশেষে, প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এরা ভূমি দখল করবে এবং সেখানে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করবে [AQAP, AQIM , al-Shabab]. প্রতিটি শাখা মূল নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা মেনে চলবে। প্রয়োজনে অন্যান্য ইসলামি দলের সাথে সহযোগিতা করবে। এভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলা, দাওয়াহর কাজ চালানো, আঞ্চলিক তাগুত বা কুফফারকে যথেষ্ট দুর্বল করতে পারলে এবং যথেষ্ট ভূমি নিয়ন্ত্রনে আসলে ইমারাহ গঠন করা। এবং একই সাথে মূল শত্রু অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আক্রমন চালিয়ে যাওয়া। একটি Asymmetric war of attrition – শক্তিক্ষয়ের দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব, তথা অ্যামেরিকাকে জড়িয়ে ফেলা। এই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের মাধ্যমে অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষমতা নিঃশেষ করার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে অ্যামেরিকার সামরিক অভিযান চালানোর সক্ষমতা ধ্বংস করা। যখন পশ্চিমা বিশ্ব এবং অ্যামেরিকা মুসলিম বিশ্বে আগ্রাসন চালানো এবং সামরিকভাবে বিভিন্ন ভূখণ্ডের তাওয়াগীতকে সমর্থন করতে অপারগ হয়ে পড়বে - তখন শূরার মাধ্যমে, উম্মাহর সম্মতির ভিত্তিতে খিলাফাহ ঘোষণা করা। মূলত এটি দাওয়াহ ও জিহাদের পদ্ধতি। আগের পদ্ধতির সাথে এই পদ্ধতির পার্থক্য হল, এটি কোন আঞ্চলিক ভূমি দখলকে মূল উদ্দেশ্য মনে করে না। এটি আঞ্চলিক সংঘর্ষের চেয়ে বৈশ্বিক জিহাদের লক্ষ্যসমূহকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। গেরিলা যুদ্ধই যে উম্মাহ-র জন্য বাস্তবসম্মত একমাত্র পন্থা এটা স্বীকার করে এবং “দূরের শত্রু”(অ্যামেরিকার)-র উপর ফোকাস করে। এই মানহাজের কুফরের ইমামদের আগে ধ্বংস করাকে নিজেদের মূল উদ্দেশ্য বলে গ্রহণ করেছে।

    খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিভিন্ন প্রস্তাবিত পদ্ধতির (মানহাজ) কৌশলগত পর্যালোচনা - শাইখ উসামার পদ্ধতির শ্রেষ্ঠত্বঃ

    যেকোন পদ্ধতির দুটি অংশ থাকে। তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক। এমন হতে পারে একটি পদ্ধতি তাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত অভিজাত, কিন্তু প্রায়োগিক দিক দিতে দুর্বল। এ মানহাজগুলোর তাত্ত্বিক পর্যালোচনায় যাবো না, আগ্রহী ভাইরা এ ব্যাপারে শাইখ আওলাকী রাহিমাহুল্লাহ, শাইখ জসীমুদ্দিন রাহমানী ফাকাল্লাহু আশরাহসহ অন্যান্য উলেমা ও উমারাহগণের লেখা দেখতে পারেন। আমরা এখানে ফোকাস করবো প্রায়োগিক দিকটাতে। বিশেষ করে, মনোযোগী পাঠক হয়তো এরইমধ্যে খেয়াল করেছেন, একমাত্র তানজীম আল-ক্বাইদাতুল জিহাদ এবং আঞ্চলিক মানহাজ ছাড়া বাকি সব পদ্ধতিতেই প্রথমে খিলাফাহ ঘোষণা [হিযবুত তাহরীর, জামাতুল বাগদাদী] কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল [ইখওয়ান/জামাত] এবং তার পর খিলাফাহকে বাস্তবতায় পরিনত করাকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। একারণে “একাবার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল কিংবা কোন ভূখন্ডে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পর কি হবে” - আমরা চেষ্টা করবো, বর্ণিত প্রতিটি পদ্ধতির আলোকে এই প্রশ্নটির জবাব দিতে।

    রাজনৈতিক পদ্ধতিঃ


    প্রথমে আমরা প্রস্তাবিত রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থাৎ ইখওয়ানী/জামাতি এবং হিযবুত তাহরিরের দিকে নজর দিব। এ দুটি পদ্ধতির মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য বিদ্যমান। সর্বপ্রথম যে সাদৃশ্য এবং মৌলিক সমস্যাটা লক্ষ্যনীয় তা হল – এই দুটি ধারাই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে বেশ কিছু ফরয কাজ থেকে বিরত থাকাকে মানহাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে। হিযবুত তাহরির যদিও মুখে বলে তারা একথা মানে বর্তমানে জিহাদ ফারযুল আইন, কিন্তু দল বা জামাআ হিসেবে তারা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার আগে জিহাদ না করাকে বেছে নিয়েছে। একইভাবে শাতেমে রাসূলের শাস্তি কিংবা এধরণের কাজের জবাব দেয়াকেও তারা এখন প্রয়োজন মনে করে না। মুসলিম ভুমির প্রতিরক্ষা কিংবা দখলদারের হাত থেকে মুসলিম ভূমি মুক্ত করাকে তারা দায়িত্ব মনে করে না। যদিও তারা মুখে বা কাগজপত্রে স্বীকার করে এই কাজ গুলো ফরয কিন্তু কিন্তু জামা’আ হিসেবে তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই বলে এ সব সমস্যার সমাধান হল খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা – আসুন আমরা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার কাজ করি। সমস্যা হল, আমরাও স্বীকার করি, খিলাফাহ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আসবে না। কিন্তু তাই বলে ফরয আমলকে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। এটা অনেকটা মাসজিদ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই ফরয সালাত আদায় না করলেও হবে – এরকম বলার মত। সালাত আমাদের উপর ফরয, আমদের তা পড়তেই হবে। মাসজিদ না থাকলে, যেখানে সম্ভব সেখানেই সালাত আদায় করতে হবে- একই সাথে মাসজিদ তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু মাসজিদ নেই তাই – আসুন মাসজিদ তৈরি করি, এই বলে সালাত ত্যাগ করা যাবে না।

    একই অবস্থা জামাত-ইখওয়ানের। এদের মধ্যে ফরয আমল থেকে বিরত থাকা এবং পোষ্টপোন (postpone) করার প্রবণতা আরো বেশি। হিযবুত তাহরির মুখে অন্তত স্বীকার করে এই ফরয আমলগুলোর কথা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জামাত-ইখওয়ানী ধারার ভাইরা এই আমলগুলোর ফরয হবার কথাই স্বীকার করতে চান না। আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, তারিক রামাদানের আদর্শে অনুপ্রাণিত জামাত-ইখওয়ানের যে “লিবারেল”/উদারনৈতিক অংশ আছে তারা শারীয়াহ সংস্কার/রিফর্ম এবং “হুদুদ বর্তমান সময়ে প্রযোজ্য না” এরকম কুফরী আদর্শতেও বিশ্বাস করেন। যারা এধরণের কুফরী আদর্শ বিশ্বাস করেন না, এমনকি তারাও শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে অগ্রসর হবার নীতিতে বিশ্বাসী। এই কথার প্রমাণ আমরা মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমীন যখন ক্ষমতায় ছিল এবং বাংলাদেশে জামাতে ইসলামি যখন ক্ষমতাসীন জোটের অংশ ছিল, তখন তাদের কার্যক্রম থেকে পাই।

    এছাড়া ইখওয়ান ও জামাত দ্বীন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হিসেবে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেছে যা কুফরি ও শিরক। এওং খোদ ইখওয়ানের শাইখ হাসান আল বান্না এবং জামাতে ইসলামের মাওদুদী আজীবন গণতন্ত্রের বিরোধিতা করেছেন। অন্যদিকে হিযবুত তাহরির “নুসরাহ” পাবার জন্য সামরিক বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছে যেগুলো দলগতভাবে কাফির বা তাইফাতুল কুফর হিসেবে গণ্য – তাগুতের সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী এবং অন্যান্য জোটের সদস্য হিসেবে।

    কিন্তু আমরা যদি এ ব্যাপারগুলো বাদও দেই, সেক্ষেত্রেও এই দলগুলোর পদ্ধতি কতোটা বাস্তবসম্মত?
    আসুন আমরা দেখি কোন ভূখন্ডের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার পর (ইখওয়ান-জামাতি ধারা), কিংবা কোন ভুখন্ডে নুসরাহ পেয়ে খিলাফাহ ঘোষণা দেয়ার পর (হিযবুত তাহরির) কি হতে পারে।


    মূলত ইতিহাসের কোন ছাত্রের পক্ষে জামাত-ইখওয়ানী-হিযবুত তাহরিরের কর্মপন্থা এবং বলশেভিক বিপ্লবের মধ্যে গভীর সাদৃশ্য লক্ষ্য না করে থাকা অসম্ভব। বলশেভিক বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বিশ্বব্যাপী আদর্শিক আন্দোলন গড়ে তোলা (সমাজতন্ত্র) যা একটি কেন্দ্রীয় কাঠামোর নির্দেশনায় পরিচালিত হবে। এবং একটি ভুখন্ডে সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা। বলশেভিক বিপ্লবের ফলে ১৯১৭ তে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাশিয়াতে সমাজতান্ত্রিকরা ক্ষমতায় আসে এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রের আদর্শিক রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সমাজতান্ত্রিক দলগুলোকে অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষন, প্রপাগ্যান্ডা –বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে সাহায্য করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্রের কেন্দ্রে পরিণত হয় আর অন্য সমাজতান্ত্রিক দেশ-দল-আন্দোলনগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট বা উপগ্রহে পরিণত হয়।

    ইখওয়ান-জামাত এবং হিযবুত তাহরিরের ধারার সাথে এই মডেলের সাদৃশ্য লক্ষ্য করুন। একটি ভূখন্ডে ক্ষমতা অর্জন করা হবে বিপ্লব কিংবা নির্বাচনের মাধ্যমে [বাংলাদেশ, মিশর]। তারপর এই ভূখণ্ড থেকে অন্যান্য ভূখন্ডে অবস্থিত নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হবে। একইভাবে হিযবুত তাহরিরের অবস্থান হল “নুসরাহ”-র মাধ্যমে একটি ভুখন্ডে ক্ষমতা বা কতৃত্ব অর্জনের পর খিলাফাহ ঘোষণা করা হবে। তারপর বিভিন্ন ভুখন্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের বলা হবে “খিলাফাহর” ভূমিতে হিজরত করতে। অথবা যারা হিজরত করতে পারবে না তারা নিজ নিজ ভূখন্ডের জনগণ এবং সামরিক বাহিনীকে বলবে বাই’য়াহ দিতে।

    ধরা যাক, হিযবুত তাহরির কোন একটি ভুখন্ডে নুসরাহ পেলো। সামরিক বাহিনী তাদের সমর্থন দিল এবং তারা সেই দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করলো। খিলাফাহর ঘোষণা আসলো। হিযবুত তাহরিরের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেহস এবং পাকিস্তান হল খিলাফাহ ঘোষণার জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দুটি দেশ। ধরা যাক, খিলাফাহ ঘোষণা হল পাকিস্তানে। এবার কি হবে?

    খিলাফাহ ঘোষণার পর শারীয়াহ অনুযায়ী খালিফাহকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হবেঃ


    ১) সকল মুসলিমের হিজরতের জন্য খিলাফাহর ভূমিকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে, এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। দুনিয়ার সকল মুসলিমের জন্যই এ সু্যোগ থাকবে। এর মধ্যে সেসব মুসলিম থাকবে যাদেরকে অ্যামেরিকা সন্ত্রাসী মনে করে, এবং সেসব দল থাকবে যাদের অ্যামেরিকা সন্ত্রাসী দল এবং অ্যামেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মনে করে। খিলাফাহর রাষ্ট্রে ভূমিতে আসা সকল মুসলিমকেই খিলাফাহর নিরাপত্তা দিতে হবে।

    ২) সকল নির্যাতিত মুসলিমের সমর্থনে এগিয়ে আসা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হয়তো একইসাথে সকল জায়াগ্য সাহায্য নাও পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু নিকটবর্তী অঞ্চলে অবশ্যই পাঠাতে হবে। যেমন পাকিস্তানে খিলাফাহ ঘোষণা হলে, অবশ্যই কাশ্মীরে সেনা পাঠাতে হবে। পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আফগানিস্তানে ন্যাটোর যে সাপ্লাই রুট আছে তা বন্ধ করে দিতে হবে, এবং আফগানিস্তানে ন্যাটো/অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠাতে হবে। বাংলাদেশে খিলাফাহ ঘোষণা হলে আরাকান এবং পশ্চিমবঙ্গে সেনা পাঠাতে হবে। একইসাথে যেখানে সেনা পাঠানো যাবে না, সেখানের মুসলিমদের অর্থ, লোকবল এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে হবে , যেমন ফিলিস্তিন, সিরিয়া, চেচনিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদি। একাজগুলো এখনই মুসলিমদের উপর ফরয। হিযবুত তাহরির এ কাজগুলো এখন করে না, এই বলে যে এখন খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা এগুলোর চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ – খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পর এই কাজ থেকে বিরত থাকার কোন অজুহাত তাদের থাকবে না। এবং কাজগুলো তাদের করতেই হবে।

    ৩) যেহেতু তারা বলে এসেছে এটা হল বিশ্বব্যাপী শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি – তাই তাদের এখন বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু এই ভূখন্ডগুলোর শাসকর অবশ্যই এতে বাঁধা দেবে এবং তাদের পশ্চিমা মালিকরাও এতে বাঁধা দেবে সুতরাং শান্তিপূর্ণ কোন পদ্ধতিতে এটা করার কোন সম্ভাবনা নেই। খিলাফাহ রাষ্ট্রকে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম ভূমি মুক্ত করার জন্য জিহাদে নামতে হবে।


    যদি এই পদক্ষেপগুলো হিযবুত তাহরিরের “খিলাফাহ” রাষ্ট্র নেয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বহিঃশত্রুর আক্রমণের শিকার হবে। যদি আমরা পাকিস্তানে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ধরে নেই, তাহলে ভারত, এবং অ্যামেরিকা (ন্যাটো) দুটোই “খিলাফাহ”কে আক্রমণ করবে [ভারত করবে কাশ্মীরের জন্য, অ্যামেরিকা করবে সাপ্লাই লাইন, আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসী দমনের জন্য এবং ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ইস্রাইলের বিরুদ্ধে সহায়তা থামানোর জন্য]। ফলে খিলাফাহ রাষ্ট্র নিজ ভূখন্ডে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। যে যুদ্ধে শক্তির দিক দিয়ে সে পিছিয়ে আছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, এবং পারমাণবিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ন্যাটো এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্মিলিত শক্তির সামনে এই সেনাবাহিনী কনভেনশানাল ওয়ারফেয়ার বা সম্মুখযুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। যদি পাকিস্তান থেকে পারমানবিক বোমা ব্যবহার করা হয় তাহলে “খিলাফাহর” ধ্বংস নিশ্চিত হয়ে যাবে, কারণ সংখ্যা এবং ধ্বংসক্ষমতার দিক দিয়ে অ্যামেরিকার পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা বেশি। একই সাথে এটাও মাথায় রাখতে হবে যদি, পাকিস্তান থেকে প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তবে সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব পাকিস্তানের “খিলাফাহ” রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একাট্টা হবে।

    যদি পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার না হয়, তাহলে প্রথমে ন্যাটো একটা নো-ফ্লাই যোন ঘোষণা করবে এবং বোমা হামলা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এয়ারফোর্স ধ্বংস করে দেবে। তারপর সম্মিলিত সেনাদল পাঠান হবে যেরকম আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া কিংবা মালিতে পাঠানো হয়েছে। এই অসমশক্তির ভারসাম্যহীন যুদ্ধে যেহেতু কনভেনশানাল যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনী টিকতে পারবে না, তাই কিছুদিনের মধ্যেই অবধারিত ভাবেই গেরিলা যুদ্ধ কৌশল গ্রহণ করতে হবে। খালিফাহ এবং তার মাজলিশে শূরাকে রাজধানী ত্যাগ করে দুর্গম অঞ্চলে গোপন সেফ হাউসে চলে যেতে হবে, এবং সেখান থেকে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে। চোরাগুপ্তা হামলার নীতি গ্রহণ করতে হবে। যে তামক্বীন বা কতৃত্ব অর্জিত হয়েছিল তা হাতছাড়া হয় যাবে, এবং বিশ্বব্যাপী শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার বদলে “খিলাফাহ”কে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নামতে হবে। অস্তিত্ব রক্ষার এক দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধে “খিলাফাহ” জড়িয়ে যাবে। “খিলাফাহ” অস্তিত্ব থাকবে শুধুমাত্র মানে, বাস্তবে তা হবে একটি গেরিলা দল।
    আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পৃথিবীর যেখানেই শারীয়াহ কায়েম করা হয়েছে অ্যামেরিকা ও তার দোসররা কোন না কোন অজুহাতে সেখানে আক্রমণ করেছে। সোমালিয়া, ইয়েমেন, মালি সব জায়গাতেই এটা হয়েছে। সুতরাং উপরে বর্ণিত পদক্ষেপ যদি নাও নেয়া হয় তবুও শুধুমাত্র শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার কারণে কুফফার আক্রমণ করবে। কিন্তু যদি কেউ নিজেকে খালিফাহ কিংবা নিজেদেরকে খিলাফাত হিসেবে দাবি করে তাদের এই পদক্ষেপগুলো নিতেই হবে। আর এই পদক্ষেপগুলো নিলে তার ফলাফলস্বরূপ অবধারিত যুদ্ধের ফলাফল হল, “খিলাফাহ” একটি গেরিলা দলে পরিণত হবে।

    যদি জামাত-ইখওয়ান কোন ভূমিতে ৯৯% ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে, তারপর সেখানে শারীয়াহ কায়েম করে, খিলাফাহ ঘোষণা দেয় এবং উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয় [যদি আদৌ নেয়] তবে তাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। ঘোষনার কিছু দিনের মধ্যেই খিলাফাহ একটি গেরিলা দলেপরিনত হতে বাধ্য হবে, এবং শুধুমাত্র নামে মাত্র “খিলাফাহ” থাকবে। যদি তামক্বীন অর্জনের পর এই পদক্ষেপগুলো না নেয়া হয় এবং শুধুমাত্র তামক্বীন প্রাপ্ত অঞ্চলে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা হয়? তাহলে এটি খিলাফাহ হিসেবে গণ্য হবে না, বরং ইমারাহ বলে বিবেচিত হবে – এবং ইমারাতের আমীরের প্রতি বাই’য়াহ খাস হবে এবং ‘আম বাই’য়াহ হবে না। মুসলিমদের জন্য ইমারাতের আমীরকে বাই’য়াহ দেয়া ওয়াজিব হবে না। এবং এমনকি ইমারাতের ক্ষেত্রেও নিকটবর্তী অঞ্চলের মুসলিমদের সাহায্য করা ফরয দায়িত্ব বলে বিবেচিত হবে।

    সুতরাং আমরা যদি হিযবুত তাহরির কিংবা জামাতের কথা গ্রহণ করি, তাদের পদ্ধতি অনুসরণও করি তাও শেষমেশ আমাদের গেরিলা যুদ্ধেই যেতে হচ্ছে। বেশি থেকে বেশি একটি ইমারাহ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে। মাঝখান থেকে “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠার একটি ফাকা বুলি প্রচার করা হবে, যা উম্মাহকে আশান্বিত করার বদলে আরো বেশি হতাশাগ্রস্থ করবে। কারণ উম্মাহ দেখবে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যে খিলাফাহ একটি নামসর্বস্ব ঘোষণায় পরিণত হয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের ইমারাহ এবং গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতিতে যেতে হয়, খোদ “খিলাফাহ”-র ভূমিতে তাহলে, শুধুমাত্র একটা ঘোষণার জন্য উম্মাহ-র আশা-স্বপ্ন-ভরসা নিয়ে এরকম করাটা অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয় এবং মারাত্বক অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। শারীয়াহর কোন কিছুই নামসর্বস্ব হয় না। শারীয়াহর প্রতিটি জিনিষ বাস্তবের সাথে সম্পৃক্ত। তাহলে যে রাষ্ট্রের সমগ্র শারীয়াহকে বাস্তবায়ন করার কথা সেটা কিভাবে নামসর্বস্ব হতে পারে?



    সশস্ত্র পদ্ধতিঃ

    সশস্ত্র পদ্ধতির মধ্যে আমরা তিনটি পদ্ধতি দেখেছি। একটি হল আঞ্চলিক জিহাদী সঙ্ঘটনগুলোর পদ্ধতি। যেমন বাংলাদেশের জেএমবি কিংবা মিন্দানাওয়ের মরো লিবারেশান ফ্রন্ট বা লিবিয়ার এলআইএফজি। বর্তমানে এ পদ্ধতিটি বিলুপ্ত প্রায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এধরণের দলগুলো একটা পর্যায় পর্যন্ত সাফল্য অর্জন করেছে, কিন্তু তারপর হয় সরকারগুলো তাদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে (জেএমবি, এলএফআইজি), অথবা ঐ নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর তারা তারা আর অগ্রসর হতে সক্ষম হয় নি (মরো লিবারেশান ফ্রন্ট)। সর্বোপরি এই পদ্ধতিটির ফোকাস আঞ্চলিক, কিন্তু খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা হল একটি বৈশ্বিক লক্ষ্য। যদি এই পদ্ধতিটি কোনেক্টি ভূখণ্ডে সফলও হয়, তবুও তার মাধ্যমে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা হবে না। বরং বড়জোর একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি ইমারাহ প্রতিষ্ঠা হবে যা তার নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে।

    অন্য পদ্ধতিটি হল আত-তাকফির ওয়াল হিজরাহ (জামাতুল মুসলিমীন), GIA এবং হালের জামাতুল বাগদাদীর অনুসৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সফল হল জামাতুল বাগদাদী। আত-তাকফির ওয়াল হিজরাহ কিংবা GIA, কোনটাই জামাতুল বাগদাদীর মতো সাফল্য অর্জন করে নি। এই দলটি শুরুতে ছিল তানজীম আল-ক্বাইদার অধীনস্ত একটি ইমারাহ যারা, ইরাকে কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। ইরাকেও তাদের অবস্থা বেশির ভাগ সময় ছিল একটি গেরিলা দলের মত। পরবর্তীতে সিরিয়াতে আরো কিছু অংশের উপর তামক্বীন অর্জনের পর তারা নিজেদের খিলাফাহ এবং তাদের আমীরকে খালিফাহ হিসেবে ঘোষনা করেছে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে তারা মুসলিমদের তাকফির করেছে, তাদের জান-মাল-সম্মান হালাল করেছে এবং মারাত্বক সীমালঙ্ঘন করেছে। যদি আমরা জামাতুল বাগদাদীর অবস্থার দিকে তাকাই তাহলে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, কিছুক্ষন আগে আমরা হিযবুত তাহরির বা জামা-ইখওয়ানের সম্ভাব্য “খিলাফাহ”- ব্যাপারে যা যা হতে পারে বলে আলোচনা করলাম- তার সব কিছুই জামাতুল বাগদাদীর সাথে বাস্তবিকই হয়েছে। খিলাফাহ ঘোষণার মাস খানেকের মধ্যে তারা ব্যাপক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে এবং আক্রমণ ওঁ আত্বগোপনের (attack and retreat) একটি গেরিলা দলে পরিণত হয়েছে। খোদ তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলে তারা মুসলিমদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম না। এমনকি তাদের নেতাদেরকেও, তাদের রাজধানী রাক্কা থেকে অ্যামেরিকানর ধরে নিয়ে গেছে।

    পাশপাশি আমরা দেখেছি, জামাতুল বাগদাদী নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করতে সক্ষম বা ইচ্ছুক কোনটাই না। তাদের কথিত খিলাফাহ-র কাছেই মাদায়াহ শহরে ৪০,০০০ সুন্নি মুসলিম অনাহারে মারা যাচ্ছে, তারা সাহায্য করছে না, বা সাহায্য করতে অক্ষম। তাদের কথিত খিলাফাহর কাছে ইরাকের বিভিন্ন জায়গায় রাফিদা শি’আরা সুন্নিদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারছে, সুন্নি নারীদের ধর্ষণ করছে – তারা সাহায্য করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। তাদের খিলাফাহর পাশেই পশ্চিম তীরে মুসলিমদের ইহুদীদের হাতে নিহত হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, যেসব জায়গায় জামাতুল বাগদাদী উলাইয়্যা ঘোষণা করেছে – যেমন সিনাই, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং খুরাসান – এস্খানেও তারা না মুসলিমদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম আর না শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে। এর মধ্যে মিশরের কারাগারে আজ অসংখ্য মুসলিমাহ প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে, তাগুত সিসি, মুসলিমদের হত্যা করছে। ইয়েমেনে “খিলাফাহর” সেনারা আল-ক্বাইদার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে থেকে আল-কাইদার উপরই তাকফির করছে, আর লাখ লাখ মুসলিম অনাহারে ধুকছে। ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রন মানসূর হাদী, হুথি আর আল-ক্বাইদার মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ জামাতুল বাগদাদীকেই চেনে না, আর বাগদাদীর গভর্নরকেও চেনে না। খুরাসানে জামাতুল বাগদাদী প্রদেশ ঘোষণা করে বসে আছে, অথচ যারা বাগদাদীকে বাই’য়াহ দিয়েছে তারা হল ওরাকযাই গোত্রের যারা ওয়াযিরিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ঢুকে আক্রমণ করে আবার ওয়াযিরিস্তানে ফেরত যায়, তাদের নিয়ন্ত্রনে কোন ভূখণ্ড নেই, আর তারা কোথাও শারীয়াহও কায়েম করছে না। সুতরাং চক্ষুষ্মান সকলের জন্য এটা স্পষ্ট যে বাগদাদীর খিলাফাহ একটি বাস্তবতা বিবর্জিত ঘোষণা মাত্র। তাদের সর্বোচ্চ গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত একটি ইমারাহ বলা যায়, যা ইরাক-সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রন করে। সমগ্র ইরাকের উপর, শামের উপর কিংবা যে যে জায়গায় উলাইয়্যা ঘোষণা করা হয়েছে তার কোথায় তাদের পূর্ণ তামক্বীন নেই। আর না ই বা তারা এসব অঞ্চলের মুসলিমদের কুফফার ও তাওয়াঘীতের আক্রমণের মুখে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। এরকম একটি দলের নিজেদের খিলাফাহ দাবি করা, তাদের বাই’য়াহ ওয়াযিব দাবি করা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই না।


    সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রতিটি পদ্ধতিতে শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ইমারাহ প্রতিষ্ঠার দিকেই যেতে হচ্ছে। আর এটাই হল তৃতীয় সশস্ত্ পদ্ধতি - তানজীম আল-ক্বাইদা তথা শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহর মানহাজ, যা ইতিপুর্বে আলোচিত হয়েছে। হিযবুত তাহরির-জামাত/ইখওয়ানের তাত্ত্বিক পদ্ধতি তাঁদেরকে বাধ্য করেছে ফরয আমল ছেড়ে দিতে। পাশপাশি তারা যে পদ্ধতি অনুসরণ করছে এতে যদি তারা কোন অঞ্চলে সফলও হয় তবে তাদের অবধারিত ভাবে গেরিলা যুদ্ধের মডেলে যেতে হবে। আল-ক্বাইদা আগে থেকেই এই মডেল গ্রহণ করেছে এবং ফারযিয়্যাত পালন করছে। অন্যদিকে জামাতুল বাগদাদী নিজেদের ইমারাহকে খিলাফাহ বলে দাবি করলেও এতে বাস্তবতা বদলায়নি। বরং জিহাদী আন্দোলনের মধ্যে ফাটল ধরেছে, ইরাক ও শামের মুসলিমদের দুর্দশা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাকফির ও গুলুহর ভয়ঙ্কর রকমের প্রসার ঘটেছে এবং কুফফার উপকৃত হয়েছে। আর এসব কিছুর পর, জামাতুল বাগদাদী গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত একটি ইমারাহই আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদ্ধতির মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ঐ উপসংহারেই আসতে হচ্ছে যা আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ ও আল-ক্বাইদা এসেছিল। আর এটাই এই মানহাজের শ্রেষ্ঠত্ব, কার্যকারিতা, সফলতা এবং বাস্তবসম্মতা প্রমাণ করে।

    আগামী পর্বে তানজীম আল-ক্বাইদার মানহাজের বিস্তারিত পর্যালোচনা, সাফল্য এবং উপমহাদেশ এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষণীয় দিকগুলো আলোচনার করা হবে ইন শা আল্লাহ্।
    Last edited by Abu Anwar al Hindi; 01-13-2016, 06:47 PM.
    আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

  • #2
    মাশাআল্লাহ। খুবই সুন্দর পর্যালোচনা।

    আল্লাহ আপনার কাজে বরকত দান করুন।
    কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

    Comment


    • #3
      Originally posted by Taalibul ilm View Post
      মাশাআল্লাহ। খুবই সুন্দর পর্যালোচনা।

      আল্লাহ আপনার কাজে বরকত দান করুন।
      আমীন। এবং আপনারও
      আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

      Comment


      • #4
        ইতিপূর্বে আলোচনায় আমরা দেখেছি, খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন দল গণতন্ত্র, নুসরাহ, কিংবা আগে খিলাফাতের ঘোষণা তারপর বিশ্বব্যাপী জিহাদ- ইত্যাদি বিভিন্ন মানহাজ তথা পদ্ধতির কথা বললেও বাস্তবতা হল, শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পদ্ধতির ক্ষেত্রেই শেষ পরিণতি হল দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। এ গেরিলা যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় বড়জোর আঞ্চলিক ইমারাহ গঠন সম্ভব এবং নিয়ন্ত্রানাধীন জায়গায় শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু কোন ভাবেই সমগ্র মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব গ্রহণ, বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মুসলিমদের সকলকে সাহায্য করা এবং দখলকৃত সকল মুসলিম ভূমি মুক্ত করার লক্ষ্যে সকল স্থানে জিহাদ করতে সক্ষম এরকম একটি কেন্দ্রীয় খিলাফাহ গঠন করা সম্ভব না। বর্তমানে ইসলামের জন্য মুজাহিদিন – যাদেরকে পশ্চিমা ও তাদের তোতাপাখিরা “সন্ত্রাসী” বলে – তারা ছাড়া আর কেউ জিহাদ করছে না। মুসলিম ভূমিগুলোর উপর মুরতাদ তাউয়াজ্ঞীত শাসকগোষ্ঠী কুফফারের সহায়তায় জেঁকে বসে আছে, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কুফফার এবং মুসলিম তথা মুজাহিদিনের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে, এবং সর্বোপরি মুসলিম বিশ্বের সাধারণ জনগণ তাদের ফরয জিহাদের দায়িত্ব, খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব এবং নির্যাতিত মুসলিম ভাইবোনদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে বেখব্র কিংবা গাফেল হয়ে আছে। উম্মাহকে নেতৃত্ব দেবার এবং দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংসকারী এই বিপদজনক শীতনিদ্রা জাগাবার গুরুদায়িত্ব পালন যাদের করার কথা, সেই উলেমাগণের অধিকাংশই এই দায়িত্বকে ত্যাগ করেছেন। এই বিবিধ কারণে মুজাহিদিন এবং কুফফারের শক্তির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। লোকবল, প্রযুক্তি, অর্থ এবং অস্ত্র কোন দিক দিয়েই মুজাহিদিনের অবস্থা কুফফারের এক-দশমাংশও নয়। এছাড়া কুফফারের এমন একটি অস্ত্র রয়েছে যার প্রতিউত্তর দেয়ার কোন উপায় মুজাহিদিনের নেই – আর তা হল এরিয়াল বম্বিং বা বিমানহামলা।

        এ পর্যায়ে কোন ভাই প্রশ্ন করতে পারেন, “কেন আমরা দুনিয়াবী হিসেব-নিকেশের জন্য আল্লাহর দেয়া খিলাফা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবো না? আমাদের কি দুনিয়াবি হিসেব-নিকেশ ছেড়ে তাওয়ায়ক্কুল করা উচিৎ না?”

        এ প্রশ্নের জবাবে আমরা বলবো – অবশ্যই সাহায্য ও বিজয় একমাত্র আল্লাহ-র পক্ষ থেকে। এবং আমাদের সাধ্য যতোই কম হোক, আল্লাহ্ যা আমাদের উপর ফরয করেছেন সেই কাজ কখনোই ত্যাগ করা যাবে না। যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়ে আল্লাহ-র উপর ভরসা করে কাজে নেমে যেতে হবে। একথার সাথে আমরা পুরোপুরি একমত পোষণ করি। আর মুজাহিদিনরা এই কাজই করে আসছেন। আফগানিস্তানে অ্যামেরিকা এসেছিলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, কিন্তু ৫০ বছর আগের কোরিয়া যুদ্ধের আমলের একে-৪৭ হাতে, ইশ্তিশাদী বেল্ট পরিহিত, মৃত্যুকে জীবনের চাইতে অধিক ভালোবাসা মুসলিম তরুনদের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। কিন্তু একই সাথে আমাদের এও মনে রাখতে হবে শারীয়াহর আহকাম, মাস’আলা এবং পরিভাষাগুলো নিছক কিছু শব্দ বা বুলির সমাহার না। এগুলো হল কিছু নির্দিষ্ট ধারণা, যেগুলোর প্রতিটির নির্দিষ্ট বাস্তবতা আছে। খিলাফাহ একটি ধারণা যার একটি বাস্তবতা আছে। যদি চার ফিট বাই চার ফিট – একটি কামরাকে ঈদগাহ ময়দান ঘোষণা করে কেউ বলে, এখানে পুরো গ্রামের ২ লাখ মানুষের ঈদের সালাত আদায় করা হবে- তবে সেটা বাস্তবতা বিবর্জিত একটি ঘোষণা। একইভাবে একটি ভুখন্ডের উপর সাময়িক তামক্বীন অর্জন করে যদি বলা হয় এটা খিলাফাহ যা সমগ্র মুসলিমদের দায়িত্ব গ্রহণ করছে – তখন সেটাও বাস্তবতা বিবর্জিত। একারনে খিলাফাহ আমরা তখনই ঘোষণা করতে পারি, যখন আমরা খিলাফাহর উপর শার’ঈ ভাবে যেসব দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে সেগুলো পালন করতে পারি। অন্যথায় মৌখিক ঘোষণার কোন মূল্য নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সক্ষমতা অর্জিত না হবে ততোক্ষণ মুজাহিদিনের দায়িত্ব হল জিহাদ চালিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শারীয়াহর মাধ্যমে শাসন করা। এটা হতে পারে ইমারাহ ঘোষণার মাধ্যমে – যেমন ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান, ইমারাতে কাভকায। কিংবা হতে পারে ইমারাহ ঘোষণা ছাড়াই, যেমন আল-শাবাব, AQAP, AQIM ইত্যাদি করছে।

        উসামার মানহাজঃ

        আমরা কেন “উসামার মানহাজ” বলছি? কেন জিহাদের মানহাজ কিংবা আল-ক্বাইদার মানহাজ বা অন্য কিছু বলছি না? এটি একটি সংগত প্রশ্ন। কারণ আমরা জানি জিহাদ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, দল বা সময়ের উপর নির্ভরশীল না। জিহাদ বলবৎ থাকবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত। তাহলে কেন আমরা “উসামার মানহাজ” নিয়ে এতো আলোচনা করছি? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে।

        রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদ ছিল মুসলিম উম্মাহ-র প্রতি আল্লাহর একটি নি’আমত। হ্যা, একথা সত্য লাখো আফগান এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্ত এই জিহাদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ কয়েক শো বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মুসলিমদের একটি পশ্চিমা পরাশক্তির বিরুদ্ধে বিজয় দিয়েছেন। এবং আফগানিস্তানের মাটি থেকেই বৈশ্বিক জিহাদের সূচনা হয়েছে। আফগানিস্তানের জিহাদের আগে, তানজীম আল-ক্বাইদা গঠনের আগে কি জিহাদ ছিল না? অবশ্যই ছিল। বিভিন্ন আঞ্চলিক জিহাদি সংঘটন জিহাদের কাজ করছিল যেমন, মিশরের জামাহ ইসলামিয়্যাহ, আল-জিহাদ, লিবিয়ার এলএফআইজি, সিরিয়ার শাইখ মারওয়ান হাদীদের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত মুসলিম ব্রাদারহুডের সশস্ত্র অংশ, আলজেরিয়া এবং ইয়েমেনের কিছু ছোট ছোট জামা’আ। কিন্তু এ প্রতিটি জিহাদি জামা’আর উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক। তারা নিজেদের ভূখণ্ড থেকে তাগুতকে উৎখাত করে শারিয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করছিলেন। এই জামা’আ গুলোর কোন বৈশ্বিক উদ্দেশ্য ছিল না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঞ্চলিক লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছিলেন। একই সাথে জাতীয়তা, আক্বীদা, মাযহাব-মাসলাক গত উন্নাসিকতা এবং বিচ্ছিন্নতা এসব জামা’আর মধ্যে ছিল এই ধারণায় প্রথম যে ব্যক্তি পরিবর্তন আনেন, তিনি হলেন শাইখুল মুজাহিদিন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম।

        শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদী আঞ্চলিক উদ্দেশ্যের বদলে মুজাহিদিনের ধ্যানধারনায় একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাঠামো তৈরি করেন। আফগান জিহাদের শেষ দিকে যখন রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তখন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম এবং তার অনুগত আরব মুজাহিদিনের একটি অংশ জিহাদী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেন। এদের মধ্যে ছিলেন শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ, শাইখ আবু ফিরাস আস সুরি, শাইখ আবু মুসাব আস-সুরি, শাইখ আবু খালিদ আস-সুরি রাহিমাহুল্লাহ, শাইখ মুহাম্মাদ আতেফ রাহিমাহুল্লাহ, শাইখ সাইফ আল আদল, শাইখ মুহাম্মাদ ইসলামবুলি [আনওয়ার সাদতের হত্যাকারী মহান বীর খালেদ ইসলামবুলির ভাই], শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি এবং অন্যান্য আরো অনেকে। এসব বরেণ্য ব্যক্তিদের সবাই দুটি বিষয়ে একমত ছিলেন। ১) মুসলিম উম্মাহর উত্তরনের একমাত্র পথ – জিহাদ, ২) আফগানিস্তানের মাটিকে জিহাদের জন্য একটি ঘাঁটি তথা লঞ্চিং প্যাড হিসেবে ব্যবহার করা। কিন্তু ২ নম্বর বিষয়টি নিয়ে কিভাবে অগ্রসর হওয়া উচিৎ, এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন মত ছিল।

        শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের চিন্তা ছিল আফগানিস্তানের মাটিতে মুজাহিদিনের একটু ঘাঁটি তৈরি করা, যাতে সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম যুবকরা এসে প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে পারবে, এবং তারপর নিজ দেশে ফিরে গিয়ে জিহাদ শুরু করবে। প্রয়োজনে তাদের আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি একটি অগ্রবর্তী দল গঠন করা হবে, যাদের কাজ হবে ফিলিস্তিনে গিয়ে ইহুদিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। এবং মুসলিম বিশ্বের যেখানেই মুসলিম নির্যাতিত হবে, আফগানিস্তানের মাটি থেকে, এই ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষিত মুজাহিদিন সেখানে গিয়ে মুসলিমদের সহায়তায় জিহাদ করবেন। আল-ক্বাইদা [শাব্দিক ভাবে যার অর্থ হল “ঘাটি/ভিত্তি”] নামটির উৎস শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামই।

        আল-জিহাদ এবং জামা’আ ইসলামিয়্যার মিশরিয় মুজাহিদিনের চিন্তা ছিল মিশরের মুজাহিদিনকে আফগানিস্তানের মাটিতে মিশরে জিহাদ করার জন্য প্রশিক্ষন দেয়া এবং একটি অগ্রবর্তী বাহিনী তৈরি করা। জিহাদের মাধ্যমে মিশরের ক্ষমতা দখল করা, তারপর মিশরকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা। আলজেরিয়া এবং লিবিয়ার মুজাহিদিনের একইরকম পরিকল্পনা ছিল নিজ নিজ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। কিন্তু শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন । শাইখ মতব্যক্ত করলেন, আফগানিস্তানের মাটিতে একটি ঘাঁটি গড়ে তোলা হবে। সারা বিশ্ব থেকে আসা মুসলিম যুবকদের এবং জিহাদী বিভিন্ন জামা’আর সদস্যদের সেখানে প্রশিক্ষন দেয়া হবে। নিজ নিজ ভুখন্ডে জিহাদী কার্যক্রম চালানোর জন্য আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেয়া হবে। নিপীড়িত মুসলিমদের সুরক্ষায় এই ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষিত মুজাহিদিনকে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করা হবে। এ সবই ঠিক আছে। একই সাথে একটি অগ্রবর্তী বাহিনী গঠন করতে হবে। কিন্তু এই অগ্রবর্তী বাহিনীর লক্ষ্য শুধুমাত্র কোন আঞ্চলিক তাগুতকে উৎখাত করা না। নিছক ভূমি দখল করা না। ইস্রাইলের বিরুদ্ধে চোরাগুপ্তা হামলা চালানো না। বরং এই অগ্রবর্তী দলের উদ্দেশ্য হবে বৈশ্বিক ক্ষমতার কাঠামোকে উল্টেপাল্টে দেয়া। কুফরের সিংহাসন ভেঙ্গে ফেলা, এবং শক্তির যে ভারসাম্যহীনতা বিদ্যমান তা কমিয়ে আনা। এবং জিহাদকে কোন একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ না করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে জাগিয়ে তোলা। এবং কুফরের কেন্দ্র, কুফরের পরাশক্তি, এ যুগের হুবাল অ্যামেরিকাকে আঘাত করা।

        যখন এরকম বিভিন্ন মত নিয়ে আলোচনা চলছিল এমন অবস্থায় পাকিস্তানে এক বোমা বিস্ফোরণের শাইখুল মুজাহিদিন আব্দুল্লাহ আযযাম মৃত্যু বরণ করেন। আল্লাহ্ যেন আকে রহমতের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখেন, এবং তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আন্তর্জাতিক কুফর মিডিয়া আজো শাইখের পরিচয় দেয়ার সময় তাঁকে “Godfather of global jihad” – বলে আখ্যায়িত করে। যদিও তারা মিথ্যাবাদী, তবে তারা এক্ষেত্রে সত্য বলেছে। এই মহীরুহের শিক্ষা আজো জীবন্ত। আফগান রণাঙ্গনে তার শিক্ষা যতোটুকু উপযুক্ত, কারযযরকরি এবং বিচক্ষণতাপূর্ণ ছিল, আজ তিন দশক পর বাংলাদেশ, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনের মাটিতেও তা একই রকম কার্যকরী, উপযুক্ত ও সফল। শাইক আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিমাহুল্লাহর মৃত্যুর পর, শাইখ উসামাকে আরব মুজাহিদিনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, এবং আল-ক্বাইদার আমীর নিযুক্ত হন। শাইখ উসামার পরিকল্পনায় আল-ক্বাইদার মানহাজ হিসেবে গৃহীত হয়। শাইখ উসামার “সাপের মাথায় আঘাত করা”-র এই পরিকল্পনা নিচে তুলে ধরা হল।


        সাপের মাথায় আঘাত কর !

        শাইখ উসামার মানহাজকে যদি একটি বাক্যে প্রকাশ করা হয়, তবে তা হবে এই – “সাপের মাথায় আঘাত কর”। এখানে সাপ দ্বারা বোঝানো হয় বিশ্ব কুফর শক্তিকে। পশ্চিমা কুফর শক্তির আর্থিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামরিক শক্তি, ইস্রাইল এবং পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বে কুফফারের দালাল শাসকগোষ্ঠী, এই তাউয়াগীত শাসকগোষ্ঠীর অনুগত মুসলিম দেশগুলোর সামরিক বাহিনী – এ সবকিছুর সমন্বয়ে, সম্মিলিত বিশ্ব কুফর শক্তি হল একটি বিশালদেহী বিষাক্ত সাপের মত। আর এই সাপের মাথা হল অ্যামেরিকা। সাপের বিষ থাকে সাপের মাথায়। তাই সবচেয়ে দ্রুত, সবচেয়ে কম শক্তিক্ষয়ে যদি কেউ সাপকে হত্যা করতে চায়, তাহলে তার উচিৎ হবে সাপের মাথা কেটে ফেলা। সাপের মাথা কেটে ফেলা হলে পুরো শরীর নিয়ে অধিক চিন্তার কোন প্রয়োজন থাকে না। কিন্তু যদি মাথা ছাড়া অন্য কোন জায়গায় আঘাত করা হয়, সেক্ষেত্রে বিষাক্ত ছোবল থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না।

        ধরা যাক, আমরা মুসলিম বিশ্বের কোন একটি তাগুত থেকে উৎখাত করতে চাই। হতে পারে এটা মিশর, কিংবা সাউদী আরব কিংবা বাংলাদেশ। যেমন মিশরের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, মুজাহিদিন তাগুত আনওয়ার সাদাতকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর কি দেখা গেল? সাদাতের জায়গায় অ্যামেরিকা আরেক তাগুত, আরেক পুতুল হোসনি মোবারককে বসিয়ে দিল। হুকুমাতকে দুর্বল করা গেল না, শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা গেল না। এর কারণ হল- এই তাগুতের পেছনে মূল শক্তি হল অ্যামেরিকা। তাই মূল শক্তিকে না সরিয়ে যতোজন সাদাতকে হত্যা করা হোক না কেন, তাতে অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

        একইভাবে যদি আমরা ইস্রাইলের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখতে পাই তাদের তিনদিকে তারা আরব মুসলিমদের দ্বারা পরিবেষ্টিত, আর অপরদিকে হল সমুদ্র। তারা হল সংখ্যায় দিক দিয়ে নগন্য কিছু কাপুরুষ ইহুদী। কিন্তু এরাই দশকের পর দশক পুরো অঞ্চলের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে এটা কি ভাবে সম্ভব? তাদের কোন খনিজ সম্পদ নেই, তারা ব্যাপকভাবে কৃষিপন্য উৎপাদন করে না। তাদের বিশাল বিশাল ইন্ডাস্ট্রি নেই। তাহলে তাদের শক্তির উৎস কি? তাদের শক্তির উৎস হল অ্যামেরিকা। অ্যামেরিকাই জাতিসংঘ তৈরি করে ইস্রাইল রাষ্ট্র গঠন করার ব্যবস্থা করেছে এবং স্বীকৃতি জোগাড় করেছে। অ্যামেরিকায় ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক ও সামরিক সাহায্য ইস্রাইলকে দিচ্ছে। অ্যামেরিকাই ইস্রাইলের তিন পাশে থাকা মুসলিম ভূখণ্ডের [জর্ডান,লেবানন, সিরিয়া,মিশর ] মুরতাদীন শাসকগোষ্ঠীকে লালনপালন করছে, এবং এই শাসকদের মাধ্যমে ইস্রাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এই দেশগুলোর শাসকরা নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে অক্ষম, কিন্তু প্রভু অ্যামেরিকাকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এরা মুজাহিদিনের হামলা থেকে ইস্রাইলকে রক্ষা করার জন্য ইস্রাইলের সীমানায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। শুধু তাই না ইস্রাইলের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের সর্বশক্তি তারা মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ করে। তাই ইস্রাইলের বাইরে থেকে ইস্রাইলে ঢুকে যদি মুজাহিদিন হামলা চালাতে চান, তাহলে প্রথমে এসব অ্যামেরিকার আজ্ঞাবাহী সরকারগুলোকে উৎখাত করতে হবে। আর যদি অ্যামেরিকাকে দুর্বল না করে সরকারগুলোকে উৎখাত করা হয়, তাহলে পুরনো পুতুলের বদলে নতুন এক পুতুল ক্ষমতায় আসবে। যেমন সাদাতের পর মোবারক এসেছে। মোবারকের পর সিসি এসেছে।

        সুতরাং এই সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধানের জন্য আগে অ্যামেরিকাকে আঘাত করতে হবে। একবার যদি অ্যামেরিকার মুসলিম বিশ্বে নাক গলানোর ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়, তখন এসব তাউয়াগীতের অপসারণ ইন শা আল্লাহ্* সামান্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। একারণে খিলাফাহ ঘোষণা এবং ইস্রাইল তথা ইহুদীদের সাথে চূড়ান্ত মোকাবেলার আগে অ্যামেরিকাকে দৃশ্যপট থেকে সরানো জরুরি।


        এই উদ্দেশ্য নিয়ে শাইখ উসামা এবং আল-ক্বাইদা তাদের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি তারা আঞ্চলিক জিহাদী আন্দোলনগুলোকে সহায়তা করতে থাকে, এবং নিজেদের নেটওয়ার্ক সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়।

        অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আল-ক্বাইদার প্রথম সফল, অফিশিয়াল হামলা ছিল ছিল নাইরোবি ও দারুস সালামে অ্যামেরিকার দূতাবাসে জোড়া বোমা হামলা। এর আগে অ্যামেরিকার সেনাদের লক্ষ্য করে ৯২ - এ ইয়েমেনে হোটেল বোমা হামলা, ৯৩ সালে মোগাদিসুতে আরপিজির মাধ্যমে দুটি ব্ল্যাক হ’ক হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার সাথেও আল-ক্বাইদার সম্পৃক্ততা ছিল। নাইরোবি ও দারুস সালামের জোড়া হামলা হয়, ৯৮ এর অগাস্টে। এর আগে ৯৩ এর ফেব্রুয়ারী মাসে, শাইখ উসামা World Islamic Front for Combat Against the Jews and Crusaders (ইহুদী ও ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য বৈশ্বিক ইসলামি ফ্রন্ট) তৈরির ঘোষনা দেন। এ ঘোষনায় শাইখ আইমান আল যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ আল-জিহাদের পক্ষ থেকে এবং শাইখ ফাজলুর রাহমান রাহিমাহুল্লাহ হারাকাতুল জিহাদের পক্ষ থেকে সই করেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের একত্রিত হয়ে ইহুদী ও ক্রুসেডারদের প্রতি জিহাদের জন্য আহবান করা হয় – এবং পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে অ্যামেরিকাকে হুশিয়ার করে দেয়া হয়। এর আগে বিলাদুল হারামিনে অ্যামেরিকার সেনাদের উপস্থিতির কারণে, ১৯৯৬ সালে শাইখ আরেকটি ঘোষণা দেন যেখানে তিনি আলাদা করে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দেন।

        এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালে ইয়েমেনের আদেন বন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত ইউ.এস.এস কোলে আল-ক্বাইদা হামলা চালায়।


        ৯/১১ঃ

        নব্বইয়ের দশক জুড়ে বারবার শাইখ উসামা অ্যামেরিকার উপর হামলা চালান। পরতিটী হামলার ক্ষেত্রে কিছু আঞ্চলিক উদ্দেশ্য ছিল, এবং একই সাথে বৈশ্বিক লক্ষ্যও ছিল। যেমন আদেনে ইউ.এস.এস কোলে হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেন থেকে অ্যামেরিকার সেনাদের বিতাড়িত করা, এবং অ্যামেরিকাকে এই বার্তা দেয়া যে পৃথিবির কোথাও তারা আল-ক্বাইদার কাছ থেকে নিরাপদ না। কিন্তু এসবের পাশাপাশি একটি মূল বৈশ্বিক লক্ষ্য নিয়েও এসব হামলা চালানো হচ্ছিল। আর তা ছিল, অ্যামেরিকাকে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা। শাইখ উসামা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন – অ্যামেরিকাকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হামলা করে, তাদেরকে সেসব জায়গা থেকে সাময়িকভাবে বিতাড়িত করা তো সম্ভব হবে, কিন্তু তাদের সামরিক সক্ষমতাকে নষ্ট করা যাবে না। আর যতোদিন পর্যন্ত অ্যামেরিকার এই প্রবল সামরিক শক্তি ও দানবীয় অর্থনীতি বিদ্যমান থাকবে – ততোদিন অ্যামেরিকাকে হারানো যাবে না, এবং খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়া যাবে না। কারণ যখনই কোন জায়গায় কোন ইসলামি দল বা আন্দোলন অ্যামেরিকার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, এবং খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি করবে – তখনই অ্যামেরিকা সেটাকে আক্রমণ করে সেই দলকে বা আন্দোলনকে নিঃশেষ করে দেবে। একারণে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য আগে প্রয়োজন অ্যামেরিকার এই হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা নষ্ট করা।

        একারনে অ্যামেরিকার উপর প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য ছিল অ্যামেরিকাকে কোন একটি মুসলিম ভূখণ্ডে টেনে আনা। কিন্তু ইতিপূর্বে বর্ণিত হামলা গুলো সফল হওয়া সত্ত্বেও, শাইখ উসামা অ্যামেরিকার দিক থেকে যে প্রতিক্রিয়া আশা করছিলেন, তা পাচ্ছিলেন না। বারবার মার খেয়েও অ্যামেরিকা ঠান্ডা মাথায় নিজের চাল ঠিক করছিল। একারণে দরকার ছিল এমন একটি আক্রমণ যা অ্যামেরিকাকে বাধ্য করবে আল-ক্বাইদার বিরুদ্ধে মুসলিম কোন একটি ভূখণ্ডে যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে। একই সাথে এই হামলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ-র জন্য একটি জাগরণী বার্তা হিসেবে কাজ করবে যা উম্মাহ-র যুবকদের মনে জিহাদের স্ফুলিঙ্গ প্রজ্জলিত করবে। সর্বোপরি এটি হবে এমন একটি হামলা, যা সমগ্র পৃথিবীর সামনে সুপারপাওয়ার অ্যামেরিকার “অজেয়” ভাবমূর্তিকে তছনছ করে দেবে। আর এই প্রেক্ষাপটেই, এসকল উদ্দেশ্য সামনে নিয়েই সংঘটিত হয় বরকতময় মঙ্গলবারের, গাযওয়াতুল ম্যানহাটন বা ৯/১১ এর হামলা।

        ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনা শুরু হয় প্রায় ৫ বছর আগে, ১৯৯৬ এ। শাইখ খালিদ শাইখ মুহাম্মাদ ফাকাল্লাহু আশরাহ এই সময় অ্যামেরিকাতে হামলা করার জন্য প্যাসেঞ্জার বিমান ব্যবহার করার সম্ভাবনার কথা উপস্থাপন করেন। এ সময় শাইখ খালিদ আল-ক্বাইদার সদস্য ছিলেন এবং শাইখ উসামার প্রতি তাঁর বাই’য়াহ ছিলো না, যদিও আল-ক্বাইদার নেটওয়ার্কের সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে ৯/১১ এর আক্রমণের আগে শাইখ খালিদ, শাইখ উসামাকে বাই’য়াহ দেন এবং আল-ক্বাইদার সদস্য হন। আল-ক্বাইদার ইতিহাসে এই প্যাটার্নটি বারবার দেখা গেছে। বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন জামা’আর সবচেয়ে মেধাবী সদস্যদের বাছাই করে আল-ক্বাইদা নিজেদের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। শাইখ আবু ইয়াহিয়া আল লিব্বি রাহিমাহুল্লাহ এরকম আরেকটি উদাহরণ। জিহাদি সংঘঠনগুলোড় মধ্যে আল-ক্বাইদার অবস্থান অনেকটা অক্সফোর্ডের মত – সর্বাধিক মেধাবী, উদ্যমী ও সম্ভাবনাময় যোদ্ধারাই কেবল এতে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পায়।

        ১৯৯৬ থেকেই আক্রমণের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু হয়। মূল আক্রমণকারী টিমের সদস্য বাছাই করা হয়, তাদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। আর্থিক সহায়তার জন্য নিরাপদ ব্যাঙ্কিং রুট ঠিক করা হয়। আক্রমণের শেষ পর্যায়ে শাইখ উসামা নিজে টার্গেট ঠিক করেন। এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। আল-ক্বাইদার উচ্চ পর্যায়ের অনেক সদস্য এবং হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে জানতেন না, শুধু জানতেন অ্যামেরিকার প্রাণকেন্দ্রে বিশ্ব কাপিয়ে দেয়ার মতো একটি অপারেশান হতে যাচ্ছে। এমনকি আক্রমণকারী টিমের আমিররা ছাড়া অন্যান্য সদস্যরাও একে বারে শেষ পর্যায়ে লক্ষবস্তু সম্পর্কে জানতে পারেন।

        ৯/১১ হামলার পেছনে শাইখ উসামার তিনটি মূল লক্ষ্য ছিলঃ


        ১) অ্যামেরিকাকে আফগানিস্তানে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে টেনে আনা, এবং সেখানে তাদের আটকে ফেলা। পাশাপাশি অ্যামেরিকাকে অন্যান্য আরো ভূখণ্ডে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে তাদের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করা
        ২) অ্যামেরিকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া
        ৩) অ্যামেরিকার জাতীয় ও রাজনৈতিক ঐক্য নষ্ট করে দেয়া।

        নব্বইয়ের দশকের শুরু দিকেও মুজাহিদিনরা বিশ্লেষণ করেছিলেন কোন কোন ভূখণ্ডে দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে বিজয়ের সম্ভাবনা সবেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে সকল মুজাহিদিন একমত হন এ ভূখন্ডগুলো হল লিবিয়া, সোমালিয়া, আশ-শাম এবং আফগানিস্তান [এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা, শাইখ আবু মুসাব আস-সুরির আল মুক্বাওয়ামা/The Global Islamic Resistance Call এ আছে, যার কিছু নির্বাচিত অংশ Inspire ম্যাগাযিনে ছাপা হয়েছে]। একারণে শাইখ উসামা অ্যামেরিকাকে আফগানিস্তানে টেনে আনতে চেয়েছিলেন।। মজার ব্যাপার হল খোদ আল-ক্বাইদার ভেতরে বেশ কিছু নেতা ৯/১১ হামলার বিরুদ্ধে ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন শূরা সদস্য শাইখ সাইফ আল আদেল হাফিযাহুল্লাহ, শাইখ আব্দুল্লাহ আহমেদ আব্দুল্লাহ ফাকাল্লাহু আশরাহ, সাইদ আল মাসরি রাহিমাহুল্লাহ এবং আবু হাফস আল মৌরিতানি হাফিযাহুল্লাহ। তবে মুর’জিআ পন্থী সালাফি এবং হিকমতের আতিশয্যে শয্যশায়ী হেকমতীদের মতো তাদের এই বিরোধিতা কুফফারের এর রক্তপাতের ইস্যুতে ছিল না। বরং তাদের বিরোধিতার কারণ ছিল, ইমারাতে ইসলামিয়্যার নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের শংকা। এটা নিশ্চিত ছিল ৯/১১ এর আক্রমণের পর অ্যামেরিকা তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে আফগানিস্তান আক্রমণ করবে। আর এর অবধারিত ফল হবে ইমারাতের পতন। এ কারণে এই শাইখগণ এই আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন। শাইখ আবু মুসাব আস-সুরি ও তার লেখায় এই আক্রমণের বিরোধিতা করেছেন এই একই কারণে। তাদের মত ছিল, এই আক্রমণের জন্য ইমারাতের পতন অনেক বেশি চড়া দাম হয়ে যায়।

        কিন্তু শাইখ উসামা ছিলেন তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। এই আক্রমণের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং ফলাফল সম্পর্কে তাঁর মধ্যে দৃঢ় প্রত্যয় কাজ করছিল। বিভিন্ন শূরা সদস্যদের বিরোধিতার পরও, তিনি তানজীমের আমীর হিসেবে এই আক্রমণের নির্দেশ দেন।

        ৯/১১ এর হামলা পুরো পৃথিবীর দৃশ্যপট বদলে দেয়। পৃথিবী জুড়ে মুসলিম উম্মাহর যুবকদের এই হামলার মাধ্যমে আল্লাহ্* জাগিয়ে তোলেন। এই হামলার মাধ্যমে শুরু জিহাদের এক দাবানল যা ছড়িয়ে পড়ে মাগরিব থেকে মাশরিখ পর্যন্ত। ৯/১১ এর আগে যে আল-ক্বাইদা এবং যে জিহাদ ছিল আফগানিস্তানে সীমাবদ্ধ, ৯/১১ এর পরে তা ছড়িয়ে পড়ে, সারা বিশ্বে। জ্যামিতিক হারে আল-ক্বাইদা এবং বৈশ্বিক জিহাদ বিস্তৃতি লাভ করে। শাইখ যে তিনটি উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছিলেন তার প্রতিটি অর্জিত হয়।

        ১) অ্যামেরিকা আফগানিস্তানে এক দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যা আজ প্রায় ১৫ বছর ধরে চলছে। এবং অ্যামেরিকা এই যুদ্ধে প্রয়াজিত হয়েছে।

        একই সাথে অ্যামেরিকা ইরাকেও পরাজিত হয়েছে। আর এখন প্রিইথিবির কোথাও সরাসরি মুজাহিদিনের বিউরধে নিজেদের সেনা পাঠাতে অ্যামেরিকা নারাজ। যেকারনে শামে এতো কিছু ঘোটে যাবার পরও অ্যামেরিকা সেখানে সেনা পাঠাচ্ছে না।

        ২) অ্যমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নেমেছে যার শুরু হয়, ২০০৭-০৮ এ। এসময় অ্যামেরিকার জাতীয় ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। আর ২০০১ থেকে ২০০০৭-০৮ পর্যন্ত আল-ক্বাইদার বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে” অ্যামেরিকার মোট ব্যয়ের পরিমাণ? ১.৩ ট্রিলিয়ন ডোলার। অর্থাৎ অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক বিপর্যয় সরাসরি আল-ক্বাইদার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের ফল।

        ৩) অ্যামেরিকার রাজনৈতিক ঐক্য আজ সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ডেমোক্রেট-রিপাবলিকান কেউই আর ক্ষুদ্র দলীয় আর ইহুদী লবির স্বার্থ ছাপিয়ে দেশের জন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অ্যামেরিকার জনগণ বাপকভাবে রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বাল্টিমোর, অরিগন, নিউ জার্সি ইত্ত্যাদি শহরগুলোটে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আন্দোলন গুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে, জনগণ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে। অ্যামেরিকার মানুষ আর রাষ্ট্রকে নিজেদের বঁধু মনে করছে না। এই অবস্থায় অ্যামেরিকার সামরিক সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারিত হচ্ছে জাতীয় রাজনীতির জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে, পরকৃত পক্ষে যুদ্ধ জয়ের লক্ষ্যে না। এর ফলে মুজাহিদিনের জন্য বিভিন্ন সু্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

        সর্বোপরি জিহাদ ও খিলাফতের ডাক আজ সারা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। শাইখ উসামা সঠিক প্রয়াম্নত হয়েছেন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হরমুযানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পারস্য সাম্রায্যকে হারাতে হলে কি করনীয়। ধুর্ত হরমুযান পারস্য সাম্রাজ্যকে পাখির সাথে তুলনা করে বলেছিল, কোন একটি পাখাতে আক্রমণ করতে। কিন্তু উমার রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু বলেছিলেন – পাখির মাথা কেটে ফেলাই যথেষ্ট। শাইখ উসামার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমরা এই বিচক্ষণতার চিহ্ন খুজে পাই। শাইখ মুজাহিদিনের সীমিত সামর্থ্যকে এদিক-সেদিক আক্রমণে কাজে না লাগিয়ে, তা কাজ লাগিয়েছিলেন সাপের মাথায় আঘাত করার জন্য। আজ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, শাইখের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। আর একারনেই আমরা এই মানহাজকে উসামার মানহাজ বলে আখ্যায়িত করছি। আল্লাহ-র ইচ্ছায় উসামার এই অন্যবদ্য কৌশল ছাড়া বৈশ্বিক জিহাদ হয়তো আজ এই পর্যায়ে আসতো না। হয়তো আজ আমরা বাংলাদেশে বসে বৈশ্বিক জিহাদের অংশ হতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। একারণে আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল এই শ্রেষ্ঠ মানহাজের অনুসরণ করা। আলাহ আমাদের তাঁর দ্বীনের সৈনিক হিসেবে কবুল করুন এবং শুহাদাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আল ইমাম আল মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদিনকে আল্লাহ্* রহমতের চাদর দিয়ে জড়িয়ে রাখুন।

        ইন শা আল্লাহ্* শেষ পর্বে, বাংলাদেশের তথা উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে শাইখ উসামার মানহাজের শিক্ষা এবং শামের জিহাদ থেকে প্রাপ্ত কিছু শিক্ষা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে।
        আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

        Comment


        • #5
          جزاك اللاه
          بارك اللاه فى عملك ىا اخى

          Comment


          • #6
            জাঝাকাল্লাহু খাইরান।

            সকল ভাইদেরকে এই পোষ্টটা কষ্ট করে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।

            পোষ্টটির গুরুত্বের কারণে এটাকে ষ্টিকি করা হচ্ছে।
            কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

            Comment


            • #7
              যাযাকআল্লাহ
              ইলম আমাদের বুঝতে শিখায় এবং জিহাদ আমাদের মানতে শিখায়

              Comment


              • #8
                জাঝাকাল্লাহু খাইরান।
                মাশাআল্লাহ।
                চমৎকার পর্যালোচনা !
                সকলেই পড়া জরুরী।

                Comment


                • #9
                  কেন "উসামা মানহাজ" প্রয়োজন, তা শাইখ হানি আস সিবাঈ (হাফিজাহুল্লাহ) এর মুখে শুনুন।

                  কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

                  Comment


                  • #10
                    “মুসলিমরা যখন পারস্যসাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদরত ছিল, উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হরমুযানের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন, কারণ হরমুযান ছিল পারস্যের ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ। পারস্যবাসীদের আক্রমণ করা সর্বোত্তম কৌশল কি হবে, উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তা হরমুযানের কাছে জানতে চাইলেন। হরমুযান জবাবে বললোঃ ‘আজকে পারস্য সাম্রাজ্যের তুলনা হল, দুটি ডানা, শরীর এবং একটি মাথার সমন্বয়ে গঠিত একটি পাখির ন্যায়।‘ উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রশ্ন করলেন, ‘মাথা কোনটা?’ হরমুযান বললোঃ ‘নাহওয়ান্দ’। যে দুটি শক্তি পারস্য সাম্রাজ্যের দুই ডানা স্বরূপ। হরমুযান সেগুলো সম্পর্কেও উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জানালেন। তারপর হরমুযান বললোঃ ‘হে আমীরুল মু’মিনীন, পারস্য সাম্রাজ্যকে কিভাবে পরাজিত করতে হবে, এই প্রশ্নের জবাব হল, ডানা দুটোকে আগে কেটে ফেলুন, তারপর মাথাটাকে সরানো সহজ হয়ে যাবে।‘ উমার রাদ্বিয়াল্লহু আনহু সাথে সাথে বললেনঃ ‘হে আল্লাহ-র শত্রু! তুমি মিথ্যা বলছো। নিশ্চয় আগে মাথা কেটে ফেলতে হবে, তাহলে ডানা দুটোকে সরানো সহজ হবে।‘

                    এ ব্যাপারে আমি নিজে একটি উদাহরণ তৈরি করেছি। সম্ভবত এর আগেও আমি এ বিষয়ে কথা বলেছি। বর্তমানে আমাদের শত্রুদের তুলনা হল একটি বিষাক্ত গাছের ন্যায়। ধরা যাক, এই গাছের কান্ডের পুরুত্ব হল ৫০ সেমি। গাছটির বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের ও পুরুত্বের অনেক ডাল-পালা, শাখা-প্রশাখা আছে।

                    গাছটির কান্ড হল আম্রিকা। আর ন্যাটোর সদস্য অন্যান্য দেশগুলো, আরব শাসকগোষ্ঠী, ইত্যাদি হল গাছটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা স্বরূপ। আর আমাদের (মুজাহিদিন) তুলনা হল, সে ব্যক্তির মতো যে এই গাছ কেটে ফেলতে চায়। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা, সামর্থ্য এবং উপকরণ সীমিত। তাই আমরা দ্রুত এ কাজটি (গাছ কেটে ফেলা) করতে সক্ষম নই। আমদের একমাত্র উপায় হল, ক্রমাগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি করাতের মাধ্যমে এই গাছে কান্ডটিকে কেটে ফেলা। আমাদের লক্ষ্য হল, এই গাছের কান্ড কেটে ফেলা, এবং গাছটি ভূপাতিত হবার আগে না থামা।

                    ধরুন, আমরা গাছে কান্ডের ৩০ সেমির মতো কেটে ফেলেছি। এখন, আমরা একটা সু্যোগ পেলাম গাছে কোন একটি ডাল, যেমন ব্রিটেন; সম্পূর্ণ ভাবে কেটে ফেলার। এক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ হবে এই সু্যোগ উপেক্ষা করে, কান্ড সম্পূর্ণভাবে কাঁটার কাজে মনোনিবেশ করা।

                    যদি আমরা এই ডাল, কিংবা সেই ডাল কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি, তাহলে আমরা কখনোই আমাদের মূল কাজ (কান্ড কেটে কুফরের গাছকে ভূপাতিত করা) সম্পন্ন করতে পারবো না। এভাবে আমাদের কাজের গতিও বাধাপ্রাপ্ত হবে, এবং আরো গুরুতর ব্যাপার হল, আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

                    গাছ ভূপাতিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরা কান্ড কাটার কাজ চালিয়ে যাবো। ইন শা আল্লাহ্*, গাছ ভূপাতিত হবার পর, শাখাগুলো আপনাআপনিই মারা যাবে।

                    আপনারা দেখেছে আফগানিস্তানে রাশিয়ার কি অবস্থা হয়েছে। যখন মুজাহিদিন কমিউনিযমের কান্ড, রাশিয়াকে কাটার দিকে মনোনিবেশ করলেন, কমিউনিযমের গাছ ভুপাতিত হয়ে গেলো। আর তারপর দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত সকল ডাল-পালা (বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্র) মরে গেল। অথচ এই ডালপালাগুলো কাটার ব্যাপারে মুজাহিদিনের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না।

                    সুতরাং আমাদের অবশ্যই সকল তীর, সকল ল্যান্ডমাইন, সকল অস্ত্র আম্রিকার প্রতি তাক করতে হবে। শুধুমাত্র আম্রিকার প্রতি, আর কারো প্রতি না, হোক সেটা ন্যাটো বা অন্য কোন দেশ।“

                    -আল ইমাম আল মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ
                    অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টস থেকে গৃহীত


                    গত পর্বে উসামার মানহাজের ব্যাপারে যে পর্যালোচনা এসেছে তার সারসংক্ষেপ ফুটে উঠেছে শাইখের নিজের এই কথায়। আমি আমার ভাইদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ করবো, অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টস গুলো গভীর মনোযোগের সাথে পড়ার জন্য। ভালো হয় যদি কোন ভাই, নির্বাচিত কিছু অংশ অনুবাদের কাজে হাত দেন। যদি ভাইরা চান এবং সময় হয় তাহলে- আমি এই থ্রেডে অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টস কিছু নির্বাচিত অংশ নিয়ে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করতে পারি বিইযনিল্লাহ। মানহাজ, মাসলাক, মাসআলাগত পার্থক্য, আক্বীদাগত পার্থক্য, স্ট্র্যাটেজি এরকম বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের দেশের ভাইদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং প্রান্তিকতা দেখা যায়। এটা সালাফী এবং হানাফি-দেওবন্দি, দুই পক্ষের ভাইদের মধ্যেই দেখা যায়। আলহামদুলিল্লাহ, সক্রিয়ভাবে মানহাজের কাজের সাথে যারা জড়িত, বিশেষ করে তরুণ ভাইদের মধ্যে- এ ব্যাপারটা কম । কিন্তু যারা নিজেদের মানহাজের সমর্থক দাবি করেন, কিন্তু সক্রিয় ভাবে কাজের সাথে জড়িত নন, তাদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে এই ভ্রান্তিগুলো বিদ্যমান। ইন শা আল্লাহ্*, আমাদের ভাইদের জন্য অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টস গুলোর অধ্যায়ন এক্ষেত্রে অত্যন্ত ফায়দামান হতে পারে। উল্লেখ্য যে শাইখ নাসির বিন আলি আল-আনসি রাহিমাহুল্লাহ এবং শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ দুজনেই অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টসগুলো যে সত্য এবং জেনুইন এ স্বীকৃতি দিয়েছেন। এবং মুজাহিদিন এবং মানহাজের সাথে জড়িত ভাইদের এই ডকুমেন্টসগুলো অধ্যায়ন এবং এগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণের কথা বলেছেন। সাথে তারাও এও বলেছেন- যদিও এ ডকুমেন্টগুলো সঠিক, তবে অ্যামেরিকা এগুলো আংশিকভাবে প্রকাশ করেছে এবং সবগুলো প্রকাশ করেনি।

                    বৈশ্বিক জিহাদের দুটি অক্ষ আছে। একটি হল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিহাদ, যা হল বহিঃশত্রুর মোকাবেলায়। আরেকটি হল আঞ্চলিক পর্যায়ে জিহাদ, যা হল আভ্যন্তরীণ শত্রুর বিরুদ্ধে। গত দুই পর্বে, আমরা মূলত প্রথম অংশটি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকে আমরা আলোচনা করবো, আভ্যন্তরীন শত্রুর মোকাবেলায় উসামা তথা তানজীম আল-ক্বাইদাতুল জিহাদের মানহাজ কি – তা নিয়ে। এ আলোচনার জন্য, গত দশকে আল-ক্বাইদার আঞ্চলিক শাখাগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতার একটি পর্যালোচনা করার চেষ্টা চালাবো। আশা করা যায়, এই আলোচনা থেকে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে জিহাদি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে, কোন ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ, এবং কোন কৌশলগুলো অনুসরণ করা উচিৎ, সে বিষয়ে আমরা কিছুটা ধারণা পাবো। এখানে আমরা, বিশেষ করে তিনটি আঞ্চলিক জিহাদের অঙ্গন – ইরাক, ইয়েমেন এবং শাম নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা AQI [Al Qaidah in Iraq], AQAP [Al Qaeda in the Arabian Peninsula], Jabhat al Nusra [Tandhim al-Qaidah fi BIlad ash-Sham] এবং ISIS/IS [জামাতুল বাগদাদী] এই দলগুলোর কার্যক্রম ও কৌশলের দিকে নজর দেবো। আমরা এখানে AQIM [Al Qaidah in the Islamic Maghrib] নিয়ে আলোচনায় যাবো না, কারণ AQAP এবং AQIM এর গৃহীত কৌশল এবং পরিস্থতির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান, যেকারনে AQAP নিয়ে আলোচনা করাটাই যথেষ্ট হবে।

                    কেন আমরা এই দলগুলো, তাদের কার্যক্রম, এবং সাফল্য-ব্যার্থতা নিয়ে আলোচনা করছি? আমাদের এই আলোচনা উদ্দেশ্য হল অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। যে ভুল ইতিমধ্যে আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে গেছে তার পুনরাবৃত্তি না করা। কারণ মু’মিন এক গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না। যুদ্ধে লোকবল, অস্ত্রের সংখ্যা ও শক্তি, আর্থিক শক্তির চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কৌশল। এবং বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তির সুযোগ যুদ্ধ আপনাকে দেবে না। যুদ্ধ এক নির্মম ও কঠোর শিক্ষক। কিন্তু যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের জন্য এই শিক্ষা ফলপ্রসু। একই সাথে এটাও পরিষ্কার করা দরকার, কোন মুজাহিদিন জামা’আ এবং মুজাহিদিন উমারাহ এর সমালোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের উদ্দেশ্য একমাত্র শিক্ষা গ্রহণ।

                    AQI:

                    AQI হল আল-ক্বায়িদার প্রথম আঞ্চলিক শাখা, যা গঠিত হয় ২০০৩ সালে। এর আমীর ছিলেন শাইখ আবু মুসাব আল যারক্বাউয়ী রাহিমাহুল্লাহ। শাইখ যারক্বাউয়ী তাওহীদ ওয়াল জিহাদ নামের একটি তানজীমের আমীর ছিলেন, যে তানজীমের প্রতিষ্ঠাতা আমীর ছিলেন আল মুওয়াহিদ, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাক্বদিসি হাফিযাহুল্লাহ। পরবর্তীতে শাইখ মাক্বদিসি, ‘ইলমের ক্ষেত্রে গভীরতর মনোনিবেশের জন্য আমীর পদ শাইখ যারক্বাউয়ীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার উপর অর্পণ করেন। ইরাক যুদ্ধের প্রথম বছর তাওহীদ ওয়াল জিহাদ স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করলেও, ২০০৪ এর অক্টোবরে শাইখ যারক্বাউয়ী আনুষ্ঠানিক ভাবে শাইখ উসামা তথা আল-ক্বাইদার কাছে বাইয়াহবদ্ধ হন। তবে আল-ক্বাইদা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত, কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে বাইয়াহবদ্ধ না এমন দল এসময়ে ইরাকে জিহাদরত অবস্থায় ছিল [আনসার আল ইসলাম]। শাইখ যারক্বাউয়ীর বাইয়াহর পর, খুরাসান থেকে বেশ কিছু আল-ক্বাইদা সদস্যকে ইরাকে পাঠানো হয়, শাইখ যারক্বাউয়ীকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করার জন্য। যার মধ্যে শাইখ আবু হামযা আল মুহাজির রাহিমাহুল্লাহ, এবং শাইখ আবু সুলাইমান আল উতায়বী অন্যতম। পরবর্তীতে শাইখ উসামার পরামর্শে AQI কে বিলুপ্ত ঘোষণা করে মুজাহেদীন শূরা কাউন্সিল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এটি দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাকে রূপ নেয়।

                    শাইখ যারক্বাউয়ীর মৃত্যুর পর, দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক নামক ইমারাহর ঘোষণা দেয়া হয়, শাইখ উসামার সাথে আলোচনা না করে, এবং তার সম্মতি ছাড়াই। শাইখ উসামা এই ঘোষনার কথা জানতে পারেন মিডিইয়ার মাধ্যমে। তিনি তখন এক চিঠিতে জানান, যদি ইমারাহ ঘোষণার আগে তার কাছে অনুমতি চাওয়া হতো, তবে তিনি কক্ষনোই তাতে সম্মতি দিতেন না, কারণ ময়দানের বাস্তব পরিস্থিতি ইমারাহ ঘোষণার উপযুক্ত ছিল না। তবে যেহেতু একবার ঘোষণা দেয়া হয়ে গেছে তাই কোন রকম বিভেদ যেন সৃষ্টি না হয়, এবং মুজাহিদিনের ভাবমূর্তি যেন না নষ্ট হয়, সেকারনে তিনি রাষ্ট্র ঘোষণার স্বীকৃতি দিচ্ছেন। সত্যবাদী শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরি এই কথার স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। ইমারাহ গঠন এবং তাতে শাইখ উসামার আপত্তি সংক্রান্ত এই পয়েন্টটি গুরত্বপূর্ণ, এবং আমরা পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

                    আল-ক্বাইদা ইরাককে বিলুপ্ত করে মুজাহেদীন শূরা কাউন্সিল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, ইরাকের জিহাদকে আল-ক্বাইদার জিহাদ হিসেবে চিত্রিত করার পরিবর্তে, ইরাকী জনগণ এবং উম্মাহর জিহাদ হিসেবে চিত্রিত করা। একারণেই যখন দাওলাতুল ইসলামিয়্যা ফিল ইরাক গঠিত হয়, তখন শাইখ উসামার কাছে শাইখ আবু উমার আল বাগদাদির বাইয়াহর প্রদান করলেও, মিডিয়াতে এই বাইয়াহর কথা প্রকাশ করা হয় নি। শাইখ আইমান, শাইখ আল-মাকদিসি, এবং শাইখ আবু ক্বাতাদা সহ আরো অনেকে এই বাইয়াহর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। জামাতুল বাগদাদির পক্ষ থেকে অনেক সময় বলা হয় আবু উমার আল বাগদাদী এবং আবু বাকর আল বাগদাদীর কখনো শাইখ উসামা এবং পরবর্তীতে শাইখ আইমানের কাছে বাইয়াহ ছিল না। কিন্তু এটা নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। মিথ্যাবাদি আদনানীও এক সময় এ সত্য স্বীকার করেছে, যদিও সে এই বাইয়াহর হাস্যকর ব্যাখ্যা দিয়েছে।

                    আল ক্বাইদা ইরাকের কিছু যুদ্ধ কৌশলের সমালোচনা শাইখ উসামা শুরু থেকেই করে আসছিলেন। যার মধ্যে তিনটি মূল সমালোচনা ছিলঃ ১) শিরচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ, ২) শি’আদের উপাসনালয়, মার্কেট ইত্যাদি জায়গায় নির্বিচারে হামলা, এবং ৩) সাধারণ মুসলিম, যাদের মধ্যে অনেক বিদ’আ, গোমরাহি এবং অজ্ঞতা আছে, তাদের প্রতি অতি কঠোরতার কারণে জিহাদকে সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। এই ব্যাপারে শাইখ উসামার নির্দেশে শাইখ আইমান, বেশ কয়েকবার শাইখ যারক্বাউয়ীকে চিঠি লেখেন। শাইখ উসামার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল অ্যামেরিকাকে আক্রমণের মূল ফোকাস বানানো। কিন্তু শাইখ যারক্বাউয়ী সিদ্ধান্ত নেন, শি’আদের আক্রমণের মাধ্যমে জিহাদকে একটি শি’আ বিরোধী রূপ দেয়া। এর ফলে শি’আরা যখন আক্রমণ চালাবে, সুন্নিরা বাধ্য হয়েই শাইখ যারক্বাউয়ীকে সমর্থন দেবে। কিছু সময়ের জন্য এই পদ্ধতি সাফল্য পায়। কিন্তু দাওলাতুল ইরাক অঠনের পর, আনবারের গোত্রগুলোর সাথে দাওলাহ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে, জিহাদ জনসমর্থন হারিয়ে ফেলে, এবং অ্যামেরিকা এটা সুচারু ভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে।

                    মূলত আল ক্বাইদা ইরাক এবং পরবর্তীতে দাউলাতুল ইরাকের নীতি ছিল অনেকটা “একলা চলো রে” ধরণের। তার সর্বদা, অধিক শোরগোল হয় - আক্ষরিক এবং মিডিয়াগত ভাবে – এমন অপারেশান এবং ঘোষণার দিকে অনুরক্ত ছিল, এবং তাৎক্ষণিক বিজয়কে দীর্ঘমেয়াদী বিজয়ের উপরে প্রাধান্য দিতো। এছাড়া এক্সক্লুসিভলি সামরিক টার্গেটে হামলার পরিবর্তে বেসামরিক “সফট টার্গেটে” হামলা করার প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি ছিল। আর তারা ঢালাওভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি অত্যন্ত কঠোর ছিল যা তাঁদেরকে সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরবর্তীতে জামাতুল বাগদাদী এই সবগুলো বৈশিষ্টকে গ্রহণ করে এবং এগুলোর তীব্রতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আর যে তিনটি সমালোচনা শাইখ উসামা করেছিলেন, সেগুলো ব্যাপকভাবে তারা গ্রহণ করেছে। একারণে আল-আদনানী যদিও একজন মিথ্যাবাদী, কিন্তু যখন সে বলেছিল “ এ আমাদের মানহাজ নয়” তখন সে সত্যই বলেছিল। ওয়াল্লাহি – নিশ্চয় উসামার মানহাজ, আর আল বাগদাদীর মানহাজ এক না। নিশ্চয় তানজীম আল-ক্বাইদাতুল জিহাদ আর জামাতুল বাগদাদীর মানহাজ এক না। উসামা এবং তানজীম আল-ক্বাইদাতুল জিহাদের উদ্দেশ্য সাধারণ মুসলিম জনগণের মধ্যে জিহাদের জন্য সমর্থন সৃষ্টি করা, এবং উম্মাহকে জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত করা। আর জামাতুল বাগদাদীর উদ্দেশ্য হল, উম্মাহকে তাকফির করা এবং জিহাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। হয় আমাদের সাথে, অথবা আমদের বিরুদ্ধে – বুশের এই মানহাজই হল আল-বাগদাদীর জামা’আর মানহাজ।

                    AQAP:


                    আনুষ্ঠানিক ভাবে AQAP গঠিত হয় ২০০৯ সালে, আল-ক্বাইদা ইন ইয়েমেন এবং আল-ক্বাইদা ইন বিলাদুল হারামাইন এর একীভূতীকরনের মাধ্যমে। শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরী রাহিমাহুল্লাহ নেতৃত্বে ২০০১ এর পর বিলাদুল হারামাইন এবং ইয়েমেনে আল-ক্বাইদার কিছু সক্রিয় সেল গড়ে ওঠে, পরবর্তীতে এগুলোই একীভূত হয়ে AQAP গঠন করে। AQAP এর প্রথম আমীর ছিলেন শাইখ আবু বাসীর নাসির আল-উহায়শী রাহিমাহুল্লাহ, যিনি তানজীম আল-ক্বাইদার নায়েবে আমীরও ছিলেন। বর্তমানে AQAP এর আমীর হলেন শাইখ আবু হুরায়রা ক্বাসিম আর-রাইমি হাফিযাহুল্লাহ। বিশিষ্ট শাইখ এবং আমাদের সবার প্রিয়, ইমাম আনওয়ার আল-আওলাক্বি রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন AQAP এর সদস্য। তবে তিনি এর আমীর ছিলেন না। শাইখ নাসির আল উহায়শী, শাইখ উসামার কাছে একটি চিঠি লিখে শাইখ আওলাকীকে AQAP এর আমীর বানানোর প্রস্তাব দেন, কিন্তু শাইখ উসামা বলেন, শাইখ আওলাকীর ব্যাপারে অনেক প্রশংসা এবং উত্তম কথা তার কানে এসেছে, যদি আল্লাহ্* সু্যোগ দেন তিনি শাইখ আওলাকীর সাথে মুখোমুখি কথা বলতে আগ্রহী, কিন্তু আমীর বানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি শাইখ আওলাকী আরো পর্যবেক্ষন করার পক্ষপাতী [সূত্র অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টস]।

                    এখান থেকে তানজীম আল-ক্বাইদার নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি রকম শক্ত এবং অনমনীয় নিয়ম গৃহীত হয়, তার একটি উদাহরণ পাওয়া যায়। শাইখ আওলাকীর ব্যাপারে শাইখ উসামার কোন বিশেষ সন্দেহ ছিল না। না তার যোগ্যতা সম্পর্কে উমারাহদের মধ্যে সন্দেহ ছিল। কিন্তু যেহেতু শাইখ আওলাকী ছিলেন ময়দানের জিহাদে তুলনামূলকভাবে নতুন, তাই শাইখ উসামা, শাইখ আওলাকীকে তখনি আমীর না বানিয়ে, শাইখ নাসির আল উহায়শীকে আমীর পদে থাকার নির্দেশ দেন। এখান থেকে আমাদের ভাইদের শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপার আছে। শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত যোগ্যতাই যদি একমাত্র মাপকাঠি হতো তাহলে শাইখ আওলাকিকে আমীর না বানানোর কোন কারণ আপাতদৃষ্টিতে পাওয়া যায় না। কিন্তু ব্যক্তিগত যোগ্যতা থাকাই যথেস্ট না। প্রয়োজন অভিজ্ঞতা, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায়, আনুগত্য মেনে কাজ করার উপযোগী মানসিকতা, তাযকিয়্যাহ এবং কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করা। আমাদের দেশে যোগ্য ভাইদের অভাব নেই আলহামদুলিলাহ- কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আমরা দেখি, আনুগত্য মেনে কাজ করার লোকের অভাব। আমাদের এ ব্যাপারটা ভালো ভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নেয়া উচিৎ যে, আমাদের যার যে যোগ্যতাই থাকুক না কেন, আমরা সবাই হলাম আল্লাহ ও তার রাসূল ﷺ এর নগন্য সৈন্যমাত্র। আমাদের চারপাশের বলয়ের প্রেক্ষিতে হয়তো আমাদের নিজেদের অনেক যোগ্য মনে করছি, কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখা উচিৎ, এই তানজীম পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জিহাদ চালিয়ে আসা, বিভিন্ন তানজীমের সব চাইতে মেধাবী, অভিজ্ঞ এবং বিচক্ষণ উমারাহ এবং উলেমার দ্বারা, যারা চার-পাঁচ দশক ধরে ময়দানে জিহাদ করে আসছেন। অতএব, চারপাশের মানুষের মাপকাঠিতে নিজের যোগ্যতা না মেপে আমাদের উচিৎ এই মানুষগুলোর তুলনায়, আমার বা আপনার সামরিক কিংবা কৌশলগত মতামত বা পরিকল্পনার ওজন কতটুকু, তা মাপা। একইসাথে আমাদের এটাও স্মরণ করা উচিৎ, আমাদের অনেক আপাতদৃষ্টিতে যোগ্য ভাইদের কথা AQAP এর ম্যাগাযিন ইন্সপায়ারে আসেনি। আমাদের অনেক আপাতদৃষ্টিতে বিচক্ষণ ভাইদের কথা আল-নুসরার ভাইদের মধ্যে আলোচিত হয় নি। বরং ইন্সপায়ারে কথা বলা হয় আমাদের সেসব নাম না জানা ভাইদের কথা, যারা শুনেছেন এবং মেনেছেন, এবং আল্লাহ্* তাদের মাধ্যমে আল্লাহ-র শত্রু এবং আমাদের শত্রু অভিজিৎ, নিলয়, ওয়াশিকুরদের হত্যা করেছেন। AQAP এর সম্মানিত শাইখ, আমাদের অনালাইনে লেখালেখির কারনে তুমুল জনপ্রিয় কোন ভাইয়ের মতো হবার ইচ্ছে ব্যাক্ত করেন নি, বরং তিনি ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন, আফসোস করেছেন, ফয়সাল বিন নাইম দ্বীপ, জিকরুল্লাহ আর আরিফুলের মতো হবার জন্য। আল্লাহ্* আমাদের সকলকে এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার এবং অনুধাবন করার তাউফীক্ব দান করুন।


                    ফিরে যাই AQAP-র কথায়। আল-ক্বাইদা ইন ইরাকের ভুল থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ইয়েমেনে প্রয়োগ করা হয়। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের সময় আল-ক্বাইদা ইন ইয়েমেন আদেন প্রদেশের বিশাল অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়, এবং সেখানে শারীয়াহর শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তবে এই কাজগুলো আল-ক্বাইদার ব্যানারের পরিবর্তে আনসার আশ-শারীয়াহর ব্যানারে করা হয়। যখন দেখা গেল মুরতাদ ও কাফিররা ব্যাপকভাবে আদেনে হামলা চালাতে যাচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মুসলিমদের ক্ষয়ক্ষতি হবে, তখন আনসার আল-শারীয়াহ আদেনের নিয়ন্ত্রন ছেড়ে দেয়। এছাড়া ২০১৫তে আল-ক্বাইদা মুকাল্লা দখল করে নেয়। মুকাল্লার মূল ব্যাংক থেকে ট্রাকে করে টাকা উঠিয়ে নিয়ে আল-ক্বাইদা মুসলিম জনগণের মধ্যে বিতরণ করে। যখন ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়, তখন সরকারি বিশাল বিশাল অফিস এবং গভর্নরদের রাজকীয় বাসভবনগুলোকে আল-ক্বাইদা সাধারণ মুসলিম জনগণের আশ্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। মুকাল্লাতেও আল-ক্বাইদা নিয়ন্ত্রন গ্রহনের পর, সরাসরি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে না রেখে, শাসনভার Sons of Hadhramaut/হাদরামাউতের সন্তানেরা নামে একটি কোয়ালিশনের কাছে অর্পণ করে। ২০১১ সালে এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বেশ কয়েকবার ইয়েমেনে ইমারাহ ঘোষণার গুজব শোনা গেলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে কখনোই এরকম কিছু বলা হয় নি। বরং আল –ক্বাইদা ইয়েমেনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে তারা একটি গেরিলা দল, মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত একটি দল, অন্য মুসলিমদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং তারা তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলে সাধ্যমতো শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়।

                    এসব কৌশলের ফলে আল-ক্বাইদা ইয়েমেনে, বিশেষ করে দক্ষিণ ইয়েমেনে ব্যাপক জনসমর্থন উপভোগ করে। আনসার আশ-শারীয়াহর বিরুদ্ধে আমেরিকার হামলাকে সাধারণ জনগণ নিজেদের উপর হামলা বলেই গণ্য করে। একই সাথে এটাও লক্ষণীয়, আর সব আল-ক্বাইদা শাখার মধ্যে ইয়েমেনের শাখাটিই আমেরিকার উপর হামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। এ থেকে এ সত্যেরই প্রমাণ মেলে, সাধারণ মুসলিম জনগণের সমর্থনপুষ্ট একটি স্থিতিশীল ঘাঁটি পশ্চিমা দেশগুলোতে, বিশেষ করে আমেরিকাতে হামলা চালানোর জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। ইয়েমেনের এই শাখার ব্যাপারে আরেকটি গুরত্বপূর্ণ তথ্য হল, রাসূলুল্লাহ ﷺ হাদিসে বর্ণিত আদান-আবইয়ানের ১২,০০০ সৈন্যের বাহিনী তৈরির কাজ এই দল করে যাচ্ছে।

                    জাবহাত আল-নুসরাঃ

                    আল-ক্বাইদা ইন ইরাকের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আঞ্চলিক শাখাগুলোকে সতর্ক করার ব্যাপারে বারবার শাইখ উসামা তৎকালীন নায়েবে আমীর শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিব্বির কাছে চিঠি পাঠান। তিনি বারবার আঞ্চলিক শাখাগুলোর জন্য একটি লিখিত দিকনির্দেশনা বা গাইডলাইন তৈরির তাগাদা দেন। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় হাকীম আল উম্মাহ আশ-শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরি লিখিত ‘জিহাদের সাধারণ নির্দেশনাবলী’। এই ফোরামের ভাইরা নিশ্চিত ভাবেই এই লেখার সাথে পরিচিত। যাদের এখনো পড়ার সুযোগ হয় নি তারা অবশ্যই এটা পড়ে নেবেন, এবং আত্বস্থ করবেন।

                    এই লেখাতে হামলার টার্গেট নির্ধারণ এবং দাওয়াহর ব্যাপারে কিছু মূলনীতি তুলে ধরা হয়েছে যার অনুসরণ স্থানীয় পরিসর এবং আন্তর্জাতিক পরিসর, উভয় ক্ষেত্রে প্রয়োজন। এ দিকনির্দেশনায়, আন্তর্জাতিক ভাবে হামলা, অর্থাৎ অ্যামেরিকান টার্গেটে হামলা, কিংবা মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অন্য কোন পশ্চিমা টার্গেটে হামলা আর স্থানীয় জিহাদের ক্ষেত্রে হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের জন্য কিছু মুল্যবান এবং মৌলিক পার্থক্য করা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে হারবি কুফফার, বিশেষ করে অ্যামেরিকার, সামরিক-বেসামরিক যেকোন টার্গেটে হামলা করা উৎসাহিত করা হয়েছে। হতে পারে সেটা বোস্টন হামলার মতো “সফট টার্গেটে”, কিংবা ফোর্ট হুডে নিদাল হাসানের হামলার মতো, সামরিক টার্গেটে। ইন্সপায়ার ম্যাগাযিনের মাধ্যমেও এ বার্তা ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে অবস্থিত কুফফারদের বিরুদ্ধে হামলার ক্ষেত্রে কিংবা তাগুতের সেনাদের বিরুদ্ধে হামলার ক্ষেত্রে সফট টার্গেট এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে যাতে করে এতে মুসলিমদের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। এ কারণে প্যারিসে জামাতুল বাগদাদীর হামলার কৌশল বিরোধিতা আমরা করি না, বরং প্রশংসা করি। কিন্তু জাকার্তা কিংবা ইস্তানবুলে বোমা হামলার কৌশলগত সমর্থন আমরা করি না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনি ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন, অভিজিৎ জনসম্মুখে কুপিয়ে মারা আমরা সমর্থন করি, কিন্তু যদি অভিজিৎকে মারার জন্য বইমেলাতে বোমা হামলা হতো তবে কৌশলগত দিক থেকে তা সমর্থনযোগ্য না, কারণ এতে করে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
                    এ গাইডলাইনের সবচেয়ে সুচারু বাস্তবায়ন আমরা দেখি তানজীম আল-ক্বাইদা ফিল বিলাদ আশ- শাম বা জাবহাত আল-নুসরার কাজের মধ্যে।

                    আনুষ্ঠানিক ভাবে জাবহাত আল নুসরার কার্যক্রমের শুরু ২০১২ সালে। সিরিয়াতে বাশার বিরোধী জিহাদ শুরুর পর, শাইখ আইমান আল যাওয়াহিরির নির্দেশে আবু বাকর আল-বাগদাদি, শাইখ আল ফাতিহ আবু মুহাম্মাদ আল জাওলানী সহ কয়েকজনকে সিরিয়াতে পাঠান সিরিয়াতে আল-ক্বাইদার একটি শাখা গড়ে তোলার জন্য। শাইখ আল জাওলানী সহ মোট ছয়জন ব্যক্তির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে জাবহাত আল-নুসরা। বাগদাদীর পক্ষ থেকে জাবহাত আল নুসরার জন্য সাহায্য ছিল প্রথম দিকের আর্থিক সাহায্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অল্প দিনের মধ্যেই আসাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর, দুঃসাহসী এবং সামরিক ভাবে দক্ষ বাহিনী হিসেবে জাবহাত আল নুসরা পরিচিত হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে আবু বাকরা আল বাগদাদী দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক কে দাওয়ালাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক আশ-শামের রূপান্তরের ঘোষণা দেন। শাইখ জাওলানী এই ঘোষণার বিরোধিতা করেন, এ ধরণের সিদ্ধান্ত শামের জিহাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে, এই যুক্তিতে। তিনি বলেন, যেহেতু তার এবং বাগদাদী দুজনেরই আমীর শাইখ আইমান তাই তিনি এই সিদ্ধান্তের ভার তার উপর অর্পণ করছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই শাইখ জাওলানী মেনে নেবেন। এর আগ পর্যন্ত জাবহাত আল নুসরাহর আল-ক্বাইদার সাথে সম্পৃক্ততার কথা গোপন রাখা হয়েছিল। বাগদাদীও শাইখ আইমানের কাছে একটি চিঠি লেখে, এবং শাইখ জাওলানীর ব্যাপারে অভিযোগ করে বিচারের দায়িত্ব শাইখ আইমানের উপর ন্যস্ত করে। পরবর্তীতে শাইখ আইমান শাইখ জাওলানীর পক্ষে রায় দেন, নিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত না যাওয়ায় বাগদাদী তার আমীরের অবাধ্য হয়, এবং বাইয়াহ ভঙ্গ করে।

                    জাবহাত আল নুসরা শুরু থেকে “জিহাদের সাধারণ দিকনির্দেশনা” মেনে চলার চেষ্টা করে। এর ফলে তারা সিরিয়ান জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে। শামের সাধারণ জনগণ জাবহাত আল নুসরাকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। সমগ্র বিশ্ব থেকে জাবহাত আল নুসরার সাথে সম্পর্কছেদের জন্য চাপ প্রয়োগ করা সত্ত্বেও, প্রকৃত ভাবে ইসলামের জন্য লড়াই করছে এবং কোন জামা’আ আল-নুসরার সাথে সম্পর্ক ছেদে রাজি হয় নি। আল-নুসরা গভীরভাবে শামের জনগণ এবং শামের জিহাদের মধ্যে নিজেদের প্রোথিত [Embed] করতে সক্ষম হয়েছে। যেকারনে, বাশার-ইরান-হিযবুল্লাত-রাশিয়া-অ্যামেরিকা সব পক্ষই মূল হুমকি মনে করে, জাবহাতকে। এর প্রমাণ হল, অনেক ক্ষেত্রেই বাশারের সেনাদল এবং জামাতুল বাগদাদীর সেনারা পাশপাশি অবস্থান করেছে [যেমন হাসাকাহ] কিন্তু একে অপরকে আক্রমণ করে নি। অনেক ক্ষেত্রেই দুই দিক থেকে বাশার/হিযবুল্লাত এবং জামাতুল বাগদাদী জাবহাত আল নুসরাকে আক্রমণ করেছে [যেমন ক্বালামুন, এবং দেইর আয যুর]। এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে রাশিয়ান জেট জাবহাতের উপর বোমা ফেলছে আর দুই দিক থেকে বাশার-বাগদাদীর সেনা আক্রমণ করছে [যেমন আলেপ্পো।]। কেন রাশিয়া-ইরান-হিযবুল্লাত-বাশার-অ্যামেরিকা জাবহাতকে মূল হুমকি মনে করে কিন্তু মিডিয়াতে ক্রমাগত জামাতুল বাগদাদীর বিরুদ্ধে আক্রমণের কথা বলে? এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে।

                    - জামাতুল বাগদাদীর কোন আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু শামে যদি কোন সমঝোতায় আসতে হয় তাহলে আল-নুসরাকে বাইরে রাখা যাবে না। তাই যদি তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করা যায় তাহলে, কাফির ও রাফিদ্বাদের মনমতো এক সমঝোতা করা সম্ভব, যা আল নুসরা টিকে থাকলে সম্ভব না।

                    -যারা বাশারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, জামাতুল বাগদাদী তাঁদেরকে আক্রমণ করছে, এবং হত্যা করছে। সুতরাং এক্ষেত্রে জামাতুল বাগদাদী বাশারের কাজকে সহজ করে দিচ্ছে। বাশার বিরোধী জিহাদকে বিভক্ত করছে। জামাতুল বাগদাদীর কারণে আগে যে দলগুলো তাদের সবগুলো বন্দুকের নল বাশারের দিকে ঘুড়িয়ে রেখেছিল, তারা এখন অর্ধেক নল নিজেদের আত্বরক্ষার জন্যই বাগদাদীর দিকে ঘুড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া এমন সব উচ্চ পর্যায়ের মুজাহিদ নেতাকে বাগদাদীর সেনারা খুজে খুজে হত্যা করছে, যাদের নাগাল বাশারের সেনারা পাচ্ছিলো না। বাগদাদীর টীকে থাকার অর্থ বাশারের বিরোধীদের শক্তিক্ষয় হওয়া।

                    -অন্যদিকে বাগদাদীর দলের পক্ষে বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক, এমনকি সিরিয়ার জনগণের, এবং বাগদাদীর নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলের মুসলিমদেরই কোন সমর্থন নেই। তাই একবার সব বাশারবিরোধী দল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে, বাগদাদীর দলের বিরুদ্ধে সর্বাত্বক যুদ্ধ করে তাদের মুছে ফেলা কঠিন কিছু না। কিন্তু জাবহাত সিরিয়ার সব দলকে বাশারের বিরুদ্ধে একত্রিত করতে চায়। তাদের আছে ব্যাপক জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিকভাবে মুসলিমদের সমর্থন। একারণে তাদের সরানো অধিক লাভজনক।

                    -সিরিয়াতে জামাতুল বাগদাদীর চেইন অফ কমান্ড হল মূলত ইরাকিদের দ্বারা গঠিত। যাদের সিরিয়ার জনগণ এবং সমাজের সাথে গভীর সম্পর্ক নেই। একারণে তাদের সিরিয়া থেকে উপরে ফেলা সহজ।

                    - জামাতুল বাগদাদীর ক্ষমতা প্রপাগ্যান্ডা নির্ভর, ফুলিয়ে ফাপিয়ে প্রচার করা। তাদের অধীনে থাকা অধিকাংশ অঞ্চল হল জনবিরল মরুভূমি। আর জাবহাতের কৌশল হল তাদের ভূমিকা এবং ক্ষমতা ছোট করে দেখানো। তারা এমন সব জায়গা নিয়ন্ত্রন করে যেগুলো কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ইদলিব।

                    -জামাতুল বাগদাদী একসাথে সবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে বসে আছে। কিন্তু আল-নুসরা কৌশলগত কারণে একটি, একটি করে শত্রু নিধনের নীতি গ্রহণ করেছে। আর সু্যোগের সদ্ব্যবহার করছে। যেমন জামাল মারুফের সেক্যুলার SRF এর বিরুদ্ধে জামাতুল বাগদাদী অনেক হাকডাক করেছে কিন্তু তাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারে নি। আর নুসরা তাদের ব্যাপারে চুপ থেকেছে, কিন্তু সু্যোগ পাওয়া মাত্রই, SRF কে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। এবং একাজের পর জনগণের সমর্থনও পেয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে হারকাত হাযমের ব্যাপারেও। একারণে শাম পশ্চিমা পরিকলনা বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আল-নুসরা।
                    -জামাতুল বাগদাদী দমনের কথা বলে সিরিয়া আক্রমণ করার পলিসি পশ্চিমাদের গেলানো যতোটা সহজ, জাবহাত আল নুসরাকে আক্রমণ করার কথা বলে তা করা অতোটা সহজ না।

                    জাবহাত আল-নুসরার সবচেয়ে বড় সফলতা হল নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে সিরিয়ার সমাজ এবং শামের জিহাদের মধ্যে প্রোথিত করতে সক্ষম হওয়া। আর এটা সম্ভব হয়েছে মূলত এই সাধারণ দিকনির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমে। ২০১৪ সালে একটি লিকড অডিও বার্তায় শামে একটি সম্ভাব্য ইমারাহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ কথা শাইখ জাওলানীর মুখ থেকে শোনা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে জাবহাত আল নুসরার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, এই মুহূর্তে কোন ইমারাহ ঘোষণার পরিকল্পনা তাদের নেই।

                    গেরিলা যুদ্ধের দুটি পদ্ধতিঃ


                    AQAP, জাবহাত আল নুসরা এবং জামাতুল বাগদাদীর কৌশলের দিকে তাকালে গেরিলা যুদ্ধের দুটি মডেলের উদাহরণ দেখা যায়। প্রথমটি হল, জনসমর্থন কেন্দ্রিক গেরিলা যুদ্ধ। এই গেরিলা যুদ্ধে সামরিক শক্তির চেয়ে রাজনৈতিক শক্তিকে, জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের প্রোথিত করাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। একে মাওইস্ট গেরিলা ডকট্রিনও বলা হয়। আধুনিক কালে যতগুলো গেরিলা যুদ্ধ সফল হয়েছে, মাও সে তুং কৃষক বাহিনী থেকে শুরু করে, ভিয়েতনামের ভিয়েতকং, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদ, অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদ – এসবগুলোতেই মাওইস্ট গেরিলা যুদ্ধের নীতি অনুসৃত হয়েছে। এ ধরণের যুদ্ধের একটি মূলনীতি হল জনগণের সাথে গেরিলা যোদ্ধার গভীর সম্পৃক্ততা। একে মাও সে তুং বর্ণনা করেছিল এভাবে – জনগণ হল পানি যার মধ্যে গেরিলরূপী মাছ সাঁতরে বেড়ায়। একই কথা শাইখ উসামা এবং শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিব্বির কথায় বারবার ফুটে উঠেছে। জনসমর্থন ব্যাতীত মুজাহিদিনের অবস্থা হবে পানি ছাড়া মাছের মতো, যার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব না। এজন্য সামরিক সক্ষমতার পাশাপাশি জনসমর্থন তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অনেক ক্ষেত্রে তা সামরিক সক্ষমতার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

                    একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তি [অর্থাৎ মুজাহিদিনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি জনসমর্থন] ছাড়া গেরিলা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা এবং অপারেশান চালানোর মতো সক্ষমতা অর্জন দুঃসাধ্য। সহজ ভাষায় মুজাহিদিনের কার্যক্রম সুচারু ভাবে চালানোর জন্য একটি নিরাপদ ঘাঁটি দরকার, যেখানে থেকে গিয়ে আক্রমণ চালিয়ে তারা পুনরায় সেখানে ফিরে এসে সংগঠিত হতে পারবে। চূড়ান্ত সম্মুখ যুদ্ধের পর্যায়ে প্রবেশ করার আগে, এরকম সমর্থন তৈরির মাধ্যমে শক্তি, সামর্থ্য ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যারা শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের দাওয়াহ-ইদাদ-রিবাত-ক্বিতালের পর্যায়ক্রমিক মডেলের ব্যাপারে পড়েছেন, তাদের কাছে মাওইস্ট গেরিলা ডক্ট্রিনের সাথে শাইখ আব্দুলাহ আযযামের মডেলের সাদৃশ্য পরিষ্কার ফুটে উঠবে। এ মডেল অনুযায়ী সামরিক কার্যক্রম শুরুর আগে, “জনগণকে জাগিয়ে তোলা এবং সংগঠিত করা”, তারপর “আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বা আদর্শিক ঐক্য গঠন” অপরিহার্য। এপর্যায়ের পর আসবে ক্রমান্বয়ে শক্তি বৃদ্ধি ও প্রসারের একটি পর্যায়, এবং তারপর আসবে চূড়ান্ত পর্যায়, যা হল চূড়ান্ত সম্মুখ যুদ্ধ এবং শত্রুর ধ্বংস

                    অর্থাৎ মাওইস্ট মডেলের ধাপগুলো হচ্ছেঃ

                    ১।জনগণকে জাগিয়ে তোলা এবং সংগঠিত করা
                    ২।আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বা আদর্শিক ঐক্য গঠন
                    ৩।ক্রমান্বয়ে
                    ৪।চূড়ান্ত সম্মুখ যুদ্ধ এবং শত্রুর ধ্বংস

                    আর শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম যে ধাপগুলোর কথা বলেছেনঃ

                    ১।দাওয়াহ
                    ২।ইদাদ(প্রস্তুতি)
                    ৩।রিবাত (সীমান্ত প্রতিরক্ষা)
                    ৪। ক্বিতাল

                    এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কেন আমরা এক কাফিরের তৈরি মডেল অনুসরণ করবো? এক্ষেত্রে উত্তর হবে, আমরা দ্বীনের ক্ষেত্রে কাফিরের কাছ থেকে গ্রহণ করছি না, গ্রহণ করছি রণকৌশলের ক্ষেত্রে। খোদ রাসূলুল্লাহ ﷺ এমনটা করেছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়, যখন তিনি ﷺ, সালমান আল ফারেসি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শে খন্দক খনন করেছিলেন, যা ছিল পারস্যবাসীর একটি রণকৌশল। এছাড়া আমরা যদি হিজরতের পরের সারিয়্যার দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায়, গাযয়াতুল বদরের আগে ও পরের অধিকাংশ সারিয়্যাই ছিল আক্রমণ ও পশ্চাৎপসরনের, যাকে আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের ভাষায় “হিট অ্যান্ড রান” [Hit & Run] আক্রমণ বলা হয়। আরেকটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি ছিল আল-ইঘতিয়াল বা গুপ্তহত্যার – যার সফল ব্যবহার, আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। এছাড়া আমরা দেখি আবু বাসির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ক্বুরাইশের বাণিজ্য কাফেলার বিরুদ্ধে যে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন তার জন্য তিনি একটি নিরাপদ ঘাঁটি/সেফ যোন এবং “হিট অ্যান্ড রান” পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন।

                    আল-ক্বাইদা কতৃক এই পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়, আরব বসন্তের পরবর্তী অরাজকতাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। আরব বসন্তের সময় যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়, তার সু্যোগে আল-ক্বাইদা এমন সব জায়গায় তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার দিকে মনোনিবেশ করে, যেসব অঞ্চলে পূর্বে তাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল না। যেমন তিউনিসিয়া, মিশর এবং লিবিয়া। এখানে উল্লেখ্য এসব অঞ্চল থেকে বেশ কিছু দল জামাতুল বাগদাদীকে বাইয়াহ দিয়েছে এটা সত্যি, তবে জামাতুল বাগদাদী এই দলগুলোর কোনটিই গড়ে তোলেনি। বরং এদলগুলোর সবগুলোই ছিল আল-ক্বাইদার সাথে কোন না কোন ভাবে সম্পৃক্ত। পরবর্তীতে জামাতুল বাগদাদীর সাফল্য দেখে, এবং সামরিক ও আর্থিক সহায়তার আশ্বাসের কারণে কিছু দল তাদেরকে বাই’য়াহ দেয়। কিন্তু একটা অনস্বীকার্য খোদ ইরাক থেকে শুরু করে, যে জায়গাতেই জামাতুল বাগদাদীর সম্প্রসারণ ঘটেছে কোন একটি জায়গাতে তারা জিহাদের ফিল্ড তৈরি করে নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আল-ক্বাইদা ফিল্ড তৈরি করেছে, আর তার পর জামাতুল বাগদাদী সেটার সু্যোগ নিয়েছে।

                    এছাড়া আল-ক্বাইদার ব্যবহৃত আরেকটি কৌশল হল গোপনে নিজেদের প্রসার ঘটানো, বৃদ্ধি, বিভিন্ন দলের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা গোপন করা, এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে মিডিয়াতে প্রচারে না যাওয়া। অন্যদিকে জামাতুল বাগদাদীর আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল-ক্বাইদা চায় সবাইকে বোঝাতে যে, তারা কোথাও নেই। জামাতুল বগাদাদী চায়, সবাইকে বোঝাতে যে তারা সব জায়গায় আছে। বিভিন্ন দলের সাথে সম্পৃক্ততা গোপন করার ব্যাপারে শাইখ উসামার যুক্তি ছিল- যখনই আল-ক্বাইদার সাথে কোন দলের সম্পৃক্ততার প্রকাশ পায় তখনই তাদের বিরুদ্ধে কুফফারের আক্রমণ বেড়ে যায়। এ কারণে এটা গোপন রাখাই উত্তম।

                    গেরিলা যুদ্ধের অন্য পদ্ধতিটিকে বলা হয় ফোকোইস্ট ডক্ট্রিন। এ পদ্ধতির প্রবক্তা হল চে গুয়েভারা। এ পদ্ধতিতে ধরে নেওয়া সফল গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যে জনসমর্থন প্রয়োজন তা সহিংসতার মাধ্যমেই তৈরি করা সম্ভব। গুয়েভারা মাও সে তুং-এর মডেলকে মূলত উলটে দেয় এবং এই মত প্রচার করে, যখন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগ করা হবে, সহিংসতা চালানো হবে, তখন আপনাআপনি মানুষের মধ্যে বিপ্লব-বিদ্রোহ-জাগরন সৃষ্টি হবে। জামাতুল বাগদাদী এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করেছে। তারা সমর্থন সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সহিংসতার ব্যবহারে বিশ্বাসী, যা তাদের হলিউড ধাঁচের হরর ফিল্ম ধরণের ভিডিও গুলো থেকে প্রতিভাত হয়। মজার ব্যাপার হল, সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় উচ্চজীবিত ইরাকি বা’থ পার্টিও এই ফোকোইস্ট মডেলে বিশ্বাসী ছিল। জামাতুল বাগদাদীর দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদী সাফল্যকে গুরুত্ব দেয়, যদি এই স্বল্পমেয়াদী সাফল্যকে মিডিয়া প্রপাগ্যান্ডার কাজে লাগানো যায়। ফোকোইস্ট ধারার একমাত্র সফল প্রয়োগ হয়েছে কিউবাতে। এছাড়া কঙ্গো, বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়া সব জায়গাতেই এ ধারা ব্যর্থ হয়েছে। একমাত্র কলম্বিয়াতে ফার্ক এখনো টিকে আছে, তবে তারা আদর্শিক গেরিলা বাহিনীর বদলে, বর্তমানে কোকেন ব্যাবসায়ী একটি মিলিশিয়াতে পরিণত হয়েছে।

                    একথা ধরে নেয়া ভুল হবে যে আল-ক্বাইদা বা জামাতুল বাগদাদী পুরোপুরি মাওইস্ট বা ফোকোইস্ট গেরিলা যুদ্ধের মডেল অনুসরণ করে। বরং এটা বলাই অধিক সঠিক যে দুটি দলই এ দুটোড় মডেলের মিশেলে একটি হাইব্রিড মডেল ব্যবহার করে। তবে আল-ক্বাইদার মডেল মাওইস্ট মডেলের অধিক নিকটবর্তী, বিশেষত জনসমর্থন কেন্দ্রিক দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধের নীতি অনুসরণের মাধ্যমে। আর জামাতুল বাগদাদীর মডেল ফোকোইস্ট মডেলের অধিক নিকটবর্তী।

                    মুসলিম বিশ্বে গেরিলা যুদ্ধে সর্বাধিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে আফগানিস্তান। সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের সেনাবাহিনীর তুমুল আক্রমণের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী এক যুদ্ধ করে তালিবান টিকে আছে, এবং বিজয় অর্জন করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই বিজয়ের পেছনে আফগান জনগণের গভীর ও ব্যাপক সমর্থনের প্রভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অন্যদিকে জামাতুল বাগদাদীর গৃহীত মডেলের মাধ্যমে তারা সাইয়িক সাফল্য পেয়েছে এটা সত্য, কিন্তু সার্বিক ভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিজেদের সাথে এবং নিজেদের আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। খোদ ইরাকের গোত্রগুলোই সামরিক সক্ষমতা শেষ হবার সাথে সাথে জামাতুল বাগদাদীকে ত্যাগ করবে, এটা প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা চলে। কারণ তাদের উপর জামাতুল বাগদাদীর নিয়ন্ত্রন সম্পূর্ণভাবে শক্তির মাধ্যমে অর্জিত। কিন্তু না পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ, আর নাই বা এটা নাবুওয়্যাতের মানহাজ। ইরাক এবং সিরিয়াতে কৌশলগত ভাবে জামাতুল বাগদাদীর সবচেয়ে প্রশংসনীয় দুটি পদক্ষেপ হল তেলক্ষেত্র সমূহ দখলে নেয়া, এবং ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে যোগযোগের রুট নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়া। প্রথমটির কারণে তারা অর্থের একটি স্থায়ী উৎস পেয়েছে। আর দ্বিতীয়টির কারণে তারা ইরাক থেকে সিরিয়াতে খুব দ্রুত সেনাদের আনা-নেয়া করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু যখনই এদুটীর নিয়ন্ত্রন তারা হারিয়ে ফেলবে, তৎক্ষণাৎ তারা একটি ইমারাহর বদলে “হিট অ্যান্ড রান” পদ্ধতির একটি আন্ডারগ্রাউন্ড তানজীমের পর্যায়ে ফিরে যাবে। যখন সেটা ঘটবে তখন ইরাকী গোত্রগুলো, এবং সিরিয়ার গোত্রগুলো তাদের সমর্থন দেবে না। বরং তারা তখন প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। জামাতুল বাগদাদীর তখন আক্ষরিক অর্থেই ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো অবস্থা হবে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, তালিবান গেরিলারা যখন শহরগুলো থেকে পশ্চাৎপসরন করছে তখন, তারা জনগণের মাঝে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সাধারণ মুসলিমদের মাঝে মিশে গেছে, জনগণ তাদের আশ্রয় দিয়েছে, শায়তা দিয়েছে এবং রক্ষা করেছে। তারপর তারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে, আক্রমণ করেছে- এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয় অর্জন করেছে।

                    ইমারাহঃ

                    লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, আল-ক্বাইদার প্রতিটি শাখাই কোন না কোন সময় ইমারাহ ঘোষণার মতো তামক্বীন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। AQAP, জাবহাত আল নুসরার ব্যাপারে, আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এছাড়া AQIM এবং আল-শাবাব বিভিন্ন সময়ে ইমারাহ ঘোষণার পর্যায়ে পৌছেছিল। আল-শাবাবের পক্ষ থেকে ইমারাহ ঘোষণার ব্যাপারে তানজীম আল-ক্বাইদার অনুমতি ও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন দেয়া হয় নি। তানজীমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে অঞ্চলের উপর তামক্বীন অর্জিত হয়েছে সেখানে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার, কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে ইমারাহ ঘোষণা না করার। এর কারণ হল, যখন আল-ক্বাইদার পক্ষ থেকে ইমারাহ ঘোষণা করা হবে, তখন সাধারণ মুসলিম জনগণ এ ইমারাহকে নিজেদের ইমারাহ মনে না করে, আল-ক্বাইদার ইমারাহ মনে করবে। ইয়েমেন, সোমালিয়া, মাগরিবের মতো গোত্রীয় সমাজে এর ফলে অসন্তোষ, চাপা কিংবা প্রকাশ্য, সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে। শামের ক্ষেত্রে যদি আল-নুসরা নিজেরাই ইমারাহ ঘোষণা করতো তাহলে অন্যান্য দলগুলো নুসরাকে নিজের প্রতিপক্ষে মনে করা শুরু করতো। এর ফলে বাশারের বিরুদ্ধে জিহাদ ক্ষতিগ্রস্থ হতো। এছাড়া আরেকটি সমস্যা হল, আনুষ্ঠানিক ভাবে ইমারাহর ঘোষণা হলে, সেটা অ্যামেরিকার হামলা এবং আন্তর্জাতিকভাবে অ্যামেরিকার আগ্রাসনের পক্ষে একটি অজুহাত হিসেবে কাজ করতো। তৃতীয় কারণ, এবং অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ কারণ হল, প্রতিটি অঞ্চলে, প্রতিটি দল গেরিলা যুদ্ধের পর্যায়ে আছে। তারা কখনো তামক্বীন অর্জন করছে, আবার কৌশলগত কারণে পিছু হটছে। এ অবস্থায় যেহেতু ইমারাহর ঘোষণা দেয়া অনুচিত যেহেতু ঘোষণা না দিয়েও শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে। কারণ আগে আমরা যেমনটা বলেছি, ইমারাহ কিংবা খিলাফাহ শুধুমাত্র একটি ঘোষণা না বরং বাস্তবতাও। একই সাথে নির্দিষ্ট একটি পর্যায়ের স্থিতিশীলতা অর্জনের পূর্বে ইমারাহর ঘোষণা দেয়া উচিৎ না। কারণ ঘোষণার কিছুদিন পর, সেই ইমারাহরা নাম-গন্ধ না থাকা, এরকম ঘটনা মুজাহিদিন ও জিহাদ সম্পর্কে উম্মাহ সাধারণ মুসলিমদের ধারনাকে নষ্ট করে।

                    বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে ছিল এই পর্বে, লেখা বড় হয়ে যাবার কারণে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আল্লাহ্* চাইলে পরবর্তী পর্বে, এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
                    আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

                    Comment


                    • #11
                      তাড়াহুড়োর কারণে লেখাগুলোতে বেশ কিছু বানান ভুল আছে, ভাইরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ইন শা আল্লাহ্*
                      আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

                      Comment


                      • #12
                        Originally posted by Taalibul ilm View Post
                        কেন "উসামা মানহাজ" প্রয়োজন, তা শাইখ হানি আস সিবাঈ (হাফিজাহুল্লাহ) এর মুখে শুনুন।

                        আমি নিজে এ লিঙ্কটা পোষ্ট করতে চেয়েছিলাম, ভাই আগেই করে ফেললেন =) GII Media এর ভাইদের বেশ কিছু খুব ভালো ভিডিও আছে। আমাদের মিডিয়ার ভাইরা চাইলে কিছু বাংলা সাবটাইটেল করতে পারেন। বিশেষ করে মোবাইল ট্র্যাকিং, মানহাজ ও স্ট্র্যাটিজি সংক্রান্ত ভিডিওগুলো। আল্লাহ্* GII Media এর ভাইদের শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন, আমীন
                        আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

                        Comment


                        • #13
                          একইসাথে আমাদের এটাও স্মরণ করা উচিৎ, আমাদের অনেক আপাতদৃষ্টিতে যোগ্য ভাইদের কথা AQAP এর ম্যাগাযিন ইন্সপায়ারে আসেনি। আমাদের অনেক আপাতদৃষ্টিতে বিচক্ষণ ভাইদের কথা আল-নুসরার ভাইদের মধ্যে আলোচিত হয় নি। বরং ইন্সপায়ারে কথা বলা হয় আমাদের সেসব নাম না জানা ভাইদের কথা, যারা শুনেছেন এবং মেনেছেন, এবং আল্লাহ্* তাদের মাধ্যমে আল্লাহ-র শত্রু এবং আমাদের শত্রু অভিজিৎ, নিলয়, ওয়াশিকুরদের হত্যা করেছেন। AQAP এর সম্মানিত শাইখ, আমাদের অনালাইনে লেখালেখির কারনে তুমুল জনপ্রিয় কোন ভাইয়ের মতো হবার ইচ্ছে ব্যাক্ত করেন নি, বরং তিনি ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন, আফসোস করেছেন, ফয়সাল বিন নাইম দ্বীপ, জিকরুল্লাহ আর আরিফুলের মতো হবার জন্য। আল্লাহ্* আমাদের সকলকে এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার এবং অনুধাবন করার তাউফীক্ব দান করুন।
                          আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহু আকবার!!

                          আল্লাহ আপনার হেকমত ও বুঝ আরো বাড়িয়ে দিন। আপনার হেকমত ও সঠিক বুঝ দ্বারা উম্মাহকে সাহায্য করুন। আল্লাহ আপনাকে হেফাজতে রাখুন।

                          সত্যি সৌভাগ্যবান এবং আল্লাহর প্রিয় ঐ বান্দাহদের কাছাকাছি যাবার সামর্থ্যও আমাদের হয়নি। আল্লাহ ঐ মুজাহিদ ও মুক্বাতিল ভাইদেরকে হেফাজতে রাখুন ও তাদের সাথে আমাদেরকেও ক্ষমা করুন।

                          আমাদের রবের কাছে এই দুয়া, 'তোমার ঐ সকল নেক বান্দাহদের সাথে তাদেরকে সম্মান ও ভালবাসার কারণে আমাদেরকেও ক্ষমা করো হে মালিক'।
                          কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

                          Comment


                          • #14
                            এছাড়া আল-ক্বাইদার ব্যবহৃত আরেকটি কৌশল হল গোপনে নিজেদের প্রসার ঘটানো, বৃদ্ধি, বিভিন্ন দলের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা গোপন করা, এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে মিডিয়াতে প্রচারে না যাওয়া। অন্যদিকে জামাতুল বাগদাদীর আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল-ক্বাইদা চায় সবাইকে বোঝাতে যে, তারা কোথাও নেই। জামাতুল বগাদাদী চায়, সবাইকে বোঝাতে যে তারা সব জায়গায় আছে। বিভিন্ন দলের সাথে সম্পৃক্ততা গোপন করার ব্যাপারে শাইখ উসামার যুক্তি ছিল- যখনই আল-ক্বাইদার সাথে কোন দলের সম্পৃক্ততার প্রকাশ পায় তখনই তাদের বিরুদ্ধে কুফফারের আক্রমণ বেড়ে যায়। এ কারণে এটা গোপন রাখাই উত্তম।
                            মাশাআল্লাহ, খুবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
                            কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

                            Comment


                            • #15
                              মাশাআল্লাহ, চালিয়ে যান।

                              ফোরামের সকল মেম্বারদেরকে পোষ্টগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ার ও বুঝার আহবান জানাচ্ছি।
                              কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

                              Comment

                              Working...
                              X