Announcement

Collapse
No announcement yet.

শুদ্ধ শিখি শুদ্ধ লিখি | পর্ব ১ | ভূল নাকি ভুল? |

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শুদ্ধ শিখি শুদ্ধ লিখি | পর্ব ১ | ভূল নাকি ভুল? |

    বাংলা বানানে প্রায়ই ভুলের ছড়াছড়ি দেখা যায়। ভুল বানানকেই ভুল করে আমরা লিখি ভূল। একটি সুন্দর লেখাকে ম্লান করে দিতে একটি ভুল বানানই যথেষ্ট।
    বাঙালি হয়েও ইংরেজি শব্দের তুলনায় আমরা বাংলা শব্দ লিখতে গিয়ে বেশি ভুল করি। যা খুবই লজ্জার।

    আমাদের অনেকের তথ্যবহুল কিংবা আকর্ষণীয় লেখাটির জৌলুস থাকে না ভুল বানানের কারণে। যা অন্যের সামনে নিজের ব্যক্তিত্বও খর্ব করে। তাই প্রমিত বাংলা বানানের কিছু নিয়ম এখানে হাজির করলাম।

    ব্যানার, ফেস্টুন, দোকান, অফিস-আদালতের নামফলক ইত্যাদি নানা জায়গায় অনেক ভুল বানান লেখা থাকে। এগুলো দেখে দেখে মানুষ ভুলটাই শেখে। ভুল বানানকেই অনেকে অনেক সময় সঠিক মনে করে।

    একটু সচেতন থাকলেই এটা প্রতিরোধ করা যায়।

    ‘কি’ না ‘কী’?

    প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকি। আর প্রশ্ন করতে গিয়ে ‘কি’ এবং ‘কী’ শব্দ দুটি প্রায়ই ব্যবহার করতে হয়। অনেকেরই ধারণা শব্দ দুটির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুটির একটি লিখেলেই হবে। কিন্তু না! এটি একটি ভুল ধারণা। মনে রাখা উচিত, যেসব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না দ্বারা এক কথায় দেওয়া যায়, সেসব প্রশ্নে ‘কি’ ব্যবহৃত হয়। আর যেসব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না দ্বারা দেওয়া যায় না, সেসব ক্ষেত্রে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়।

    যেমন:

    (ক) কিছু ফেলে গেলেন কি?

    (খ) কী ফেলে গেলেন?

    আবার,

    (ক) তুমি কি গান গাও?

    উত্তর হবে হ্যাঁ বা না।

    (খ) তুমি কী গান গাও?

    উত্তর হবে ‘আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই’ বা ‘আমি নজরুলসঙ্গীত’ গাই।

    এখানে (ক) নম্বর প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ বা না দ্বারা দেওয়া সম্ভব বলে সেগুলোতে ‘কি’ বসেছে।

    আর (খ) নম্বর প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ বা না দ্বারা দেওয়া সম্ভব নয় বলে সেগুলোতে বসেছে ‘কী’।

    ২. পদের শেষে আবলি থাকলে ই-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন: নিয়মাবলি, কার্যাবলি, শর্তাবলি ইত্যাদি।

    ৩. আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন: রুপালি, মিতালি, স্বর্ণালি, সোনালি, খেয়ালি ইত্যাদি।

    ৪. অঞ্জলি দ্বারা গঠিত শব্দের শেষে ই-কার হবে। যেমন: গীতাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি ইত্যাদি।

    ৫. ভাষা ও জাতি বোঝালে ই-কার হবে। যেমন: বাঙালি, জাপানি, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি।

    ৬. সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে ই-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: গাড়ি, বাড়ি, সরকারি, চাকরি, খুশি, দাবি, চুরি, বেশি ইত্যাদি।

    ৭. পেশাগত পরিচয় বোঝাতে ‘জীবী’ ব্যবহৃত হবে। যেমন: আইনজীবী, চাকরিজীবী, কৃষিজীবী ইত্যাদি।

    ৮. ব্যক্তির ‘কারী’ বা ‘আরী’-তে ঈ-কার হবে। যেমন: সহকারী, অধিকারী, পথচারী, কর্মচারী, উপকারী ইত্যাদি।

    ৯. ‘ঈ’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দের সঙ্গে ‘গণ’ যোগ করতে হলে ঈ-কারের বদলে ই-কার হবে। যেমন: সহকারী >সহকারিগণ, আবেদনকারী >আবেদনকারিগণ, কর্মচারী >কর্মচারিগণ ইত্যাদি।

    ১০. ‘প্রতিযোগী’ শব্দটির সঙ্গে ‘তা’ যোগ করলে ‘প্রতিযোগিতা’ হয়। তেমনি ‘সহযোগী’ হয় ‘সহযোগিতা’।

    ১১. ‘দু’ দিয়ে গঠিত শব্দের বানান মনে রাখার একটি ভাল উপায় হল: দূরত্ব না বোঝালে দু হবে। যেমন: দুর্গা, দুর্নীতি, দুর্ঘটনা, দুরন্ত, দুর্বল ইত্যাদি। আর দূরত্ব বোঝালে ‘দূ’। যেমন: দূর, দূরবীক্ষণ, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ ইত্যাদি।

    ১২. পদের শেষে ‘গ্রস্থ’ নয়, ‘গ্রস্ত’হবে। যেমন: অভাবগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, বাধাগ্রস্ত ইত্যাদি।

    ১৩. ‘ৎ’-এর সঙ্গে কারচিহ্ন যোগ করতে হলে ‘ত’ হবে। যেমন: বিদ্যুৎ >বিদ্যুতে, ভবিষ্যৎ >ভবিষ্যতে, সাক্ষাৎ >সাক্ষাতে ইত্যাদি।

    ১৪. ‘না’ ও ‘নেই’ আলাদা করে লিখতে হবে। যেমন: এটা এখানে হবে না, আমার ভাই-বোন নেই ইত্যাদি।

    ১৫. সমাসবদ্ধ পদ ও বহুবচনবাচক শব্দ একসঙ্গে লিখতে হয়। যেমন: চিঠিপত্র, আবেদনপত্র, রচনামূলক, ভালোভাবে, শীতকালীন ইত্যাদি।

    ১৬. ‘পড়ি’ নাকি ‘পরি’? এই দ্বিধায় আমরা অনেকেই পড়ি। উদাহরণ দিয়ে সুন্দর করে এটা বুঝে নিতে পারি। ‘পড়ি’ দিয়ে কিছু বাক্য হল: আমি স্কুলে পড়ি, আমি বই পড়ি, আমি স্ট্যাটাস পড়ি। আর ‘পরি’ দিয়ে কিছু বাক্য হল: আমি শার্ট পরি, আমি শাড়ি পরি ইত্যাদি।

    ১৭. ক্রিয়াপদের শেষে ও-কার নিয়েও আমাদের দ্বিধার শেষ নেই। হল নাকি হলো? গেল নাকি গেলো? করব নাকি করবো? মনে রাখা উচিত, ক্রিয়াপদের শেষে অযথা ও-কারের দরকার নেই। ক্রিয়া মানে কর্ম বা কাজ। ক্রিয়া এমন একটি পদ যা কোনো কাজকে বোঝায়। হল, করব, করত, করছ, করছিল, করেছিল, হব ইত্যাদি হল ক্রিয়াপদ।

    ১৮. কখন ‘ই’ আর কখন ‘য়’ ব্যবহৃত হয়? এটাও ভুল করে থাকে অনেকে। শুধু এতটুকু মনে রাখলেই হবে, নিজের কথা বোঝালে মানে উত্তম পুরুষে ‘ই’ আর অন্যের কথা মানে নাম পুরুষ বোঝালে ‘য়’ হয়। যেমন: আমি ভাত খাই, আমি হেঁটে যাই, আমি স্কুলে যাই—এ বাক্যগুলোতে নিজের কথা বলা হচ্ছে। তাই ‘ই’ ব্যবহৃত হয়েছে। সে ভাত খায়, সে হেঁটে যায়, রহিম স্কুলে যায়—এগুলোতে অন্যের কথা বলা হচ্ছে। তাই ‘য়’ ব্যবহৃত হয়েছে।


    আরও জানতে পড়তে পারেন বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম'। বাংলা ভাষা শুদ্ধ করতে বন্ধু বানাতে পারেন অভিধানকে।


    সংগৃহীত

    চলবে ইনশাআল্লাহ...
    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

  • #2
    এমন একটা সিরিজ খুবই প্রয়োজন ছিলো প্রিয় আখি,
    আল্লাহ্ আপনার কাজকে সহজ করুন আমীন।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ
      অনেক উপকারী পোষ্ট ৷
      সকলের উচিত এর থেকে উপকৃত হওয়া ৷
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        ভাই অনেক উপকারি পোষ্ট আশা করি এভাবে জারি রাখবেন। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন, আমীন।

        Comment


        • #5
          মাশাআল্লাহ।
          অনেক সুন্দর ও উপকারি পোষ্ট।
          আল্লাক কবুল করুন,আমিন।
          ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

          Comment


          • #6
            খুবই শিক্ষণীয় পোষ্ট। ভাই আশা করছি আপনার এই খেদমত টি অব্যাহত রাখবেন।

            Comment


            • #7
              ❝বাংলা একাডেমি - প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম❞ বইটির এ্যাপস প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।

              অথবা ❝উইকিপিডিয়া❞ থেকেও পড়তে পারেন।

              আর বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসরণে ❝সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা❞ পিডিএফ বইটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

              ৭৫ পৃষ্ঠার এ বইয়ে কী থাকছে?

              ৪ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে শুদ্ধ বানানের রীতি ও উদাহরণ। আর এর পর হতে শেষ অবধি রয়েছে "সঠিক ও বেঠিক" বানানের সুদীর্ঘ তালিকা। যা থেকে সহজেই আপনি আপনার শুদ্ধ বানানটি খুঁজে নিতে পারেন।





              ডাউনলোড: 740 KB

              হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

              Comment


              • #8
                যে সকল ভাইয়েরা ভাষা, সাহিত্য ও শুদ্ধ বানানে আগ্রহী, সে সকল ভাইয়েরা মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ সাহেবের ❝এসো কলম মেরামত করি❞ বইটি অধ্যয়ন করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। যথেষ্ট ফায়দা হবে।


                ডাউনলোড করুনঃ 8 MB



                হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

                Comment


                • #9
                  মাশাআল্লাহ আঁখি ৷
                  আমরা চাই আপনার এই পর্বগুলোর ধারাবাহিকতা চলতে থাকুক ৷
                  খুবই উপকৃত হবো আমরা ৷
                  বারাকাল্লাহু ফি ইলমিকা ৷ আমীন ৷
                  আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
                  আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

                  Comment


                  • #10
                    Originally posted by Rumman Al Hind View Post
                    এমন একটা সিরিজ খুবই প্রয়োজন ছিলো প্রিয় আখি,
                    আল্লাহ্ আপনার কাজকে সহজ করুন, আমীন।

                    জ্বী প্রিয় ভাই। আমার কাছেও এমন একটা কিছুর প্রয়োজনীয়তা খুব অনুভব হচ্ছিল।

                    আল্লাহুম্মা আমীন।
                    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

                    Comment


                    • #11
                      Originally posted by ABDULLAH BIN ADAM BD View Post
                      মাশাআল্লাহ
                      অনেক উপকারী পোষ্ট ৷
                      সকলের উচিত এর থেকে উপকৃত হওয়া ৷

                      শুকরিয়া প্রিয় ভাই। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমীন।
                      হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

                      Comment


                      • #12
                        Originally posted by মোহাঃ সুলাইমান View Post
                        ভাই অনেক উপকারি পোষ্ট আশা করি এভাবে জারি রাখবেন। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন, আমীন।

                        শুকরিয়া প্রিয় ভাই। আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা।
                        হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

                        Comment


                        • #13
                          বানান শুদ্ধ হওয়া লেখার অপর এক শর্ত! আসলেই আমাদের লেখায় ভুল থাকে প্রচুর। তাই আশা করি এই পর্বগুলো আমাদের খুব কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ ।
                          তবে এখানে সরকারি বানানের যে ভুলগুলো দেখানো হয়েছে, তাতে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে ।
                          সেগুলো হল নিম্ন:
                          আমরা যখন আরবী বা উর্দূ বা হিন্দী ভাষার কোন শব্দ লিখি, তখন আমরা সেখানে কিছু কায়দা-কানুনের প্রতি লক্ষ রাখি অনেকে। যেমনঃ আরবী বা উর্দূ বা হিন্দী শব্দে যেখানে ''ইয়া ও ওয়াও'' থাকে, সেখানে আমরা টেনে পড়ি ও লিখি। টেনে লেখার জন্য আমরা সেখানে 'ইয়া' এর স্থানে ী-কার ও 'ওয়াও' এর স্থানে ূ-কার দিয়ে থাকি। যেমন দেখুন: আরবী, হিন্দী, বাঁদী, মাক্কী, মাদানী, চীন, তাহকীক, তামজীদ, তাহলীল, তালীম, ঈমান, এখানে ইয়ার কারণে এমন।
                          আবারঃ
                          উর্দূ, ইয়াহূদ, নমরূদ, হারূন, কারূন, কাফিরূন, মুনাফিকূন, মুমিনূন, নূর, হূর, তূর, দূর, এখানে ওয়াও এর কারণে।
                          তো আমাদের এমন লেখায়ও কি ভুল হবে নাকি ঐ সরকারি বইতে যা ভুল বলা হয়েছে?
                          কারণ উপরে আমার উদাহরণগুলো কুরআন তরজমায়ও বহু আগেই এমন লেখা হয়েছিল।

                          নোট: এটা মূলত অন্য ভাষার মান ঠিক রাখতে অনেক সহায়ক হয় ও উচ্চারণগুলো বুঝতে খুব সুবিধা হয়।

                          আশা করি এবিষয়েও কিছু নির্দেশনা দিবেন ইনশাআল্লাহ ।
                          হক্বের মাধ্যমে ব্যক্তি চিনো,
                          ব্যক্তির মাধ্যমে হক্ব চিনো না।

                          Comment


                          • #14
                            Originally posted by abu mosa View Post
                            মাশাআল্লাহ।
                            অনেক সুন্দর ও উপকারি পোষ্ট।
                            আল্লাক কবুল করুন,আমিন।

                            শুকরিয়া প্রিয় ভাই। আল্লাহুুম্মা আমীন।
                            হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

                            Comment


                            • #15
                              আমার কাছে শুদ্ধ বানান লেখার জন্য আবু তাহের মিসবাহ দাঃবাঃ এর লিখীত 'এসো কলম মেরামত করি' বইটি খুব উপকারী মনে হয়। ঐকিতাবটি অধ্যয়ন করা যেতে পারে ইনশাআল্লাহ । তার কথার সাথে সরকারি বইতে যেমন দেখানো হয়েছে তা থেকে কিছু ভিন্ন আছে।
                              হক্বের মাধ্যমে ব্যক্তি চিনো,
                              ব্যক্তির মাধ্যমে হক্ব চিনো না।

                              Comment

                              Working...
                              X