Announcement

Collapse
No announcement yet.

সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নিয়ে ভয়- আরিফুজ্জামান তুহিন

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নিয়ে ভয়- আরিফুজ্জামান তুহিন

    বাংলাদেশে শুরু হয়েছে হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন। এ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে বায়োমেট্রিক। আগে কেনা সিমগুলো এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করতে হবে। নতুবা এপ্রিলের পর থেকে ফোন নম্বরটি সচল থাকবে না।

    আর যারা নতুন সিম কিনবেন, তাদের শুরুতেই এই প্রক্রিয়ায় সিম কিনতে হবে। কিন্তু সারা পৃথিবীতে কি এই প্রক্রিয়ায় সিম নিবন্ধন ও বিক্রি হয়ে থাকে? বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে পাকিস্তান ছাড়া আর কোথাও এমন নজির পাওয়া যায়নি। আমরা এই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে পৃথিবীতে দ্বিতীয় উদাহরণ হব।

    নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বিদেশে কীভাবে সিম কিনতে হয়। ভারতে সিম পাওয়া কঠিন বিষয়। কিন্তু যদি আপনি আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি দেন, তাহলে তারা আপনাকে সিম দেবে। যদি সিঙ্গাপুর থেকে সিম কিনতে চান, তাহলে আপনার পাসপোর্টের একটি স্ক্যান কপি দিলে সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে সিম দেবে। ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে সিম কেনার ক্ষেত্রে আমাকে অনলাইনে একটি ফরম পূরণ করতে হয়েছে। সেখানে আমার বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার পর সিমটি সচল করতে পেরেছি। এ ছাড়াও সেখানে পথ থেকে সিম কেনা যায়, তবে তা সচল করতে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়।

    তাহলে বাংলাদেশে সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ কেন দরকার? পাকিস্তানে যে কারণে দরকার হয়েছিল- ক্রমাগত তালেবান হামলা ঠেকানোর জন্য ও জঙ্গিদের পাকড়াও করার জন্য?

    বাংলাদেশে কী প্রয়োজন? ইসলামি জঙ্গিবাদীদের হামলা ঠেকাতে কি এই গোয়েন্দাগিরি? আমি বলব, মোটেও না। বাংলাদেশের সব পক্ষের ওপর নিরঙ্কুশ নজরদারির জন্যই এই ব্যবস্থা। নামটি ব্যবহার হয় রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে। কিন্তু আদৌ এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র কি নিরাপদ হয়? নাকি আরো বেশি উন্মুক্ত হয়ে যায় বিদেশি গোয়েন্দা ও বহুপক্ষীয় স্বার্থের দ্বারা? সেই বিষয়টিই আমরা বোঝার চেষ্টা করব।

    পাকিস্তানের তথ্য এনএসএর হাতে : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) ২০১২ সালের জুন মাসের একটি ডকুমেন্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ওই ডকুমেন্ট অনুযায়ী, এনএসএ স্কাইনেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানের পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ (৫৫ মিলিয়ন) ফোনকল রেকর্ড করেছে। এসব কল রেকর্ড পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারা দেখেছে যে এসব রেকর্ডের মধ্যে আইএস কর্মীদেরও ফোনকল রয়েছে। তবে এই ফোন কল কীভাবে এনএসও রেকর্ড করেছে, সে বিষয়ে তারা কিছুই বলেনি।

    পশ্চিমারা একজোট : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা, যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড ও কানাডা আন্তর্জাতিকভাবে গোয়েন্দাগিরিতে পারদর্শিতা অর্জন করেছে। এদের একের সঙ্গে অন্যের সম্পর্ক খুবই গভীর। এরা একে অন্যকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। পাকিস্তানের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর তথ্য একযোগে নিয়েছে আমেরিকার এনএসএ ও ব্রিটেনের জিসিএইচও (গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেড কোয়ার্টার)।

    নিউজিলান্ডের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে কাজ করছে মূলত সিআইএ ও এনএসএর সঙ্গে একসাথে। কারণ বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের কোনো দূতাবাস নেই, নেই কোনো স্থাপনা। এরপরও বছরের পর বছর ধরে এ দেশে গোয়েন্দা মিশন চালিয়েছে নিউজিল্যান্ডের ইলেকট্রনিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন সিকিউরিটি ব্যুরো’ (জিসিএসবি)। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসএ) হুইসেল ব্লোয়ার অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের কাছ থেকে পাওয়া নথির ভিত্তিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দি ইন্টারসেপ্টের সঙ্গে মিলে বিশ্লেষণ করে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।

    নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এনএসএর সম্পর্ক নিয়ে সংস্থাটির ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশে গোয়েন্দা কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া যায়। ‘এনএসএকে তার অংশীদার কী দেয়?’ শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদে এনএসএ বলেছে, ‘২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী লক্ষ্যগুলোর ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সম্প্রদায়গুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে জিসিএসবি।’ এতে আরো বলা হয়, জিসিএসবি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী তথ্য দেওয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

    দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জিসিএসবির গোয়েন্দা কার্যক্রম অত্যন্ত বিস্ময়কর এবং এখনো অজানা। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ খুব কমই গুরুত্ব পায়। দেশটির বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে যোগাযোগ কম।’
    নিউজিল্যান্ড সরকারের একটি সূত্র দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে বলেছে, জিসিএসবির চারটি বিশ্লেষণ শাখার একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস মোকাবিলা, আন্তদেশীয় ইস্যু শাখা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ শাখার মূল ফোকাস বাংলাদেশ।

    বাংলাদেশে জিসিএসবি কীভাবে গোয়েন্দাগিরি করছে সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় ২০০৯ সালের একটি গোয়েন্দা নথি থেকে। এতে বলা হয়, সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট টিম 'ওসিআর' নামে জিসিএসবির একটি ইউনিটের স্টাফ নজরদারির বিষয়ে তদন্ত করে থাকেন। জিসিএসবি নিজে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে না বরং মিত্র একটি সংস্থার নজরদারি যন্ত্র ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে।

    ২০০৯ সালের নথি থেকে দেখা যায়, স্থানীয় যোগাযোগ বার্তাগুলোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ঢাকায় একটি বিশেষ সংগ্রহ কেন্দ্র আছে। আড়ি পেতে শোনার জন্য বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের কোনো হাইকমিশন বা সরকারি স্থাপনা নেই। স্নোডেনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা পাওয়া যায়, জিসিএসবির ঢাকা ইউনিটের অবস্থান বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও এনএসএ পরিচালিত একটি ভবনে থাকতে পারে।

    ২০০৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ঢাকা এফ-৬ এনভায়রনমেন্ট সার্ভের বর্ধিত অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাল জিএসএম (মোবাইল ফোন) তথ্য সংগ্রহ চলছে।' এফ-৬ সিআইএ/এনএসএর একটি যৌথ ইউনিট যা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর মধ্যে তথ্য চলাচলে নজরদারি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিসিএসবি মূলত মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে গোপনে কথাবার্তা শোনে।

    আপনার তথ্য কার নিয়ন্ত্রণে : আমেরিকার এনএসএ প্রিজম নামের যে অপারেশনটি শুরু করেছিল, তা ছিল পৃথিবীর মানুষ ফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে তথ্য আদান প্রদান করে তার ওপর আড়িপাতা। এই আড়িপাততে গিয়ে তারা বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে টেলিকমিউনিকেশন সেবা দেওয়া হয় তার ওপর আড়ি পাতে। এতে কাজ সহজ হয়। অতি সহজেই টেলিকমিউনিকেশন ব্যবহারকারির তথ্য চলে যায় এনএসএ কর্মীদের হাতে।

    পৃথিবীব্যাপী অনলাইন বিভিন্ন নিরাপত্তা ও এর ব্যবহারের সফটওয়ার তৈরিকারক সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান হোল জেমালতো (gemalto)। এটি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি। এই কোম্পানি সারা দুনিয়ার সব বড় প্রতিষ্ঠানকে সফটওয়ার ও নিরাপত্তা সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এরা কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মাইক্রোসফট, ভিসাসহ পৃথিবীর তাবৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থায়।

    এ ছাড়া কোনো দেশ যখন ই-গর্ভনমেন্ট আইডি, ই-হেলথ কার্ড, ই-আইডি সিটিজেন কার্ড, ই-ড্রাইভার লাইসেন্স, ই-পাসপোর্টের মতো সেবা চালু করে, তখন এদের ডাক পড়ে। তারা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়। এ ছাড়া তাদের সব থেকে বড় সেবার একটি হলো তারা মোবাইল ফোনসেটে ব্যবহৃত সিমকার্ড নির্মাণ ও তার সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। মজার তথ্য হলো, বাংলাদেশে গ্রামীণফোনসহ সব মোবাইল অপারেটর এই জেমালতোর সিমকার্ড ব্যবহার করে। পৃথিবীর বেশির ভাগ মোবাইল অপারেটরই জেমালতোর সিমকার্ড ব্যবহার ও তাদের নিরাপত্তা সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। পাকিস্তানের পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানিও জেমালতোর সিমকার্ড ও নিরাপত্তা ব্যবহার করে।
    এনএসএর সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বলছেন, ২০১২ সালে পাকিস্তানের পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানির ব্যবহৃত সিমকার্ডের ওপর নজরদারি করছে আমেরিকার এনএসএ ও ব্রিটেনের জিসিএইচও (গর্ভনমেন্ট কমিউনিকেশন হেড কোয়ার্টার)। তবেএটি অস্বীকার করে জেমালতো। তাদের বক্তব্য এটি তারা চেষ্টা করে থাকতে পারে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।

    জিমালতো খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষার কাজে যুক্ত। তাই জিমালতোর কাছ থেকে সব তথ্য পাওয়া এনএসএর জন্য কঠিন কিছু নয়। কারণ এনএসএ বলছে, তারা ২০১২ সালের শুধু এপ্রিল মাসেই সাড়ে পাঁচ কোটি ফোনকল রেকর্ড করেছে, যার মধ্যে বহুসংখ্যক আইএস কর্মীর কথোপকথন রয়েছে।

    বাংলাদেশে স্যাটেলাইট স্থাপনে কানাডার আগ্রহ কেন : আগামী বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বরে) দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ফ্রান্সের কম্পানি থালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এই স্যাটেলাইট তৈরির কাজ করবে। এতেই নাখোশ হয়েছে কানাডা। কালের কণ্ঠে গত বছরের ২২ অক্টোবর একটি ছোট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের একটি অংশের বলা হয়েছে, ‘প্রতিযোগিতায় ফ্রান্স জিতে যাওয়ায় হতাশ হয়েছে দরপত্রে অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। কারণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো বৃহৎ প্রকল্প কৌশলগত কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রকল্পের কাজ পেতে ভারত ও চীন আগ্রহী ছিল।’

    এনএসএ প্রিজম অপারেশন কাহিনী আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছে। আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে, স্যাটাইলট শুধু টেলিভিশন সম্প্রচার করবে না, তথ্য আদান প্রদান করবে না, একই সময় বাংলাদেশের সব তথ্যও জমা থাকবে। আর এটির নিয়ন্ত্রক ফ্রান্স হলে সেটি তাদের স্বার্থে ব্যবহার করবে। তাতে আদৌ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন ভাগ পাবে কি না তাতে ঘোর সন্দেহ আছে।


    সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত : বাংলাদেশের সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে বেসরকারি ফোন কোম্পানিগুলোকে আমাদের তথ্যভান্ডার ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটি স্পর্শকাতর একটি সিদ্ধান্ত ছিল। এখন বেসরকারি ফোন কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকের আরো স্পর্শকাতর হাতের আঙুলের ছাপ চলে যাচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানগুলোর সিম থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় জিমালতোর এমন বহু কোম্পানিই যুক্ত, ফলে নিরাপত্তা বলে আসলেই কিছু থাকছে না।

    অনিবন্ধিত সিমের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি কী? সেটি আগে আমাদের বের করতে হবে। যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমনটি জাতীয় পরিচয়পত্র সেনাবাহিনী করে দিয়েছিল, এ রকমটি করা গেলে যা হবে তাহলো আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তত রাষ্ট্রের হাতে থাকবে। আর এটি না করা গেলে হাতের আঙুলের ছাপগুলো বেসরকারি কোম্পানির হাতে দেওয়া উচিত হবে না।

    এমনিতেই আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সব তথ্য ফেসবুক, জিমেইলসহ নানান সাইটে নানানভাবেই দিয়ে নিজেকেই অরক্ষিত করছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে গিয়েছি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন এমপির সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম ইইউ এমপিরা বেসিক ফোন ব্যবহার করেন। আমি তাদের প্রশ্ন করেছি, কেন বেসিক ফোন ব্যবহার করেন? উত্তরে তারা আমাকে বলেন, ‘ফোন ব্যবহার না করতে পারলেই সব থেকে ভালো হতো। তাহলে আপনি বেশি করে সুরক্ষিত থাকতেন। সেটা যেহেতু সম্ভব নয়, সে কারণে বেসিক ফোন ব্যবহার করি। যত আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করবেন ততবেশি আপনি নিজের নিরাপত্তা নষ্ট করবেন।’

    শেষ করছি নিবন্ধনকৃত সিমের করুণ ও বিপজ্জনক ব্যবহারের নমুনা দিয়ে। নিরাপত্তা ইস্যুতে আমি মাঝেমধ্যে প্রতিবেদন করে থাকি। সম্প্রতি কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে এ বিষয়ে কিছু কাজ করেছি। বিশেষত কক্সবাজারের পাশে মিয়ানমার সীমান্ত। কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকাতে দেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর টাওয়ার বেশ ঘন ঘন। এসব টাওয়ার মিয়ানমারের ভেতরে নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিয়েছে। এতে দেশের নিরাপত্তা কিন্তু বিঘ্নিত হয়েছে। সমস্যাটি এত গভীরে গেছে যে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশের) সদস্যরা বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। আপনারা অনেকেই জানেন, বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমার ৩৭টি ইয়াবা কারখানা করেছে। এসব কারখানার উৎপাদিত ইয়াবা বাংলাদেশে অনেকটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাঠানো হয়। আর মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি এটি বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে যে ইয়াবা চক্রটি গড়ে ওঠেছে এদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মিয়ানমারের বিজিএফ বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এ রকম বেশ কিছু মোবাইল ফোন নম্বরকে আমি শনাক্ত করতে পেরেছি। আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো এসব মোবাইল ফোন আবার সঠিক নামে নিবন্ধিত। রবির একটি সিম ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের টেকনাফের হ্নীলা এলাকার ঠিক বিপরীত স্থানে মিয়ানমারের মংডু এলাকার বিজিপি কমান্ডার। আমার সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়েছে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সাড়ে ৬টার দিকে। তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি সেখানকার বিজিপির কমান্ডার।

    গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এই বিজিপি কমান্ডার যে নম্বরটি ব্যবহার করছেন, সেটি কিন্তু বাংলাদেশের একজনের নামে নিবন্ধনকৃত! ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি মো. সিরাজুল হক রবির সিমটি কেনেন। নিবন্ধন ফরমে তথ্য দেওয়া আছে, মো. সিরাজুল হকের পিতা মৃত ফারুক আহমেদ, মা আলম নাহা, বাহারছড়া, কক্সবাজার।

    ফলে বায়োমেট্রিক বা নিবন্ধনে কী যায়-আসে? মূল বিষয় হলো রাষ্ট্রের নজরদারি। সেই নজরদারি ইতিবাচক অর্থে, জনকল্যাণ অর্থে হোক। কিন্তু তা না না করে বায়োমেট্রিকের নামে কোটি মানুষের হাতের আঙুলের ছাপ বিদেশি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক হবে।

    লেখক: সাংবাদিক
    Last edited by ibnmasud2016; 02-22-2016, 12:22 AM.

  • #2
    jazakallahu khairan

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহু খাইরান.......
      "বল সত্য আসিয়াছে মিথ্যা বিলুপ্ত হইয়াছে,মিথ্যাতো বিলুপ্ত হবারি" (সূরা ইসরা ১৭ঃ৮১)

      Comment


      • #4
        রাস্ট্র যন্ত্রের পশুগুলোর কাছে আমরা যত কিছু আবদার করিনা কেন তা কিন্তু ভুলই হবে। তাই এটার সমাধান এখন আমাদেরই খুজে বের করতে হবে।

        বিশেষ কথা হচ্ছে দাজ্জালের এই ফেত্না থেকে বাচার জন্য জুধ্যের ময়দানে বা পাহাড়ের ঘুহায় চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

        Comment

        Working...
        X