Announcement

Collapse
No announcement yet.

কুরআন এবং আপনি (পর্ব ৩)

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কুরআন এবং আপনি (পর্ব ৩)

    সূরা বাকারা আয়াত ৬১, আল্লাহ বনী ইসরাইলদের উদ্দেশ্য করে বলেন,

    “আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা।...”

    কোন গোষ্ঠী বা জাতি দীর্ঘদিন যাবত অন্যায়-অবিচার এর শিকার হতে হতে একসময় এই অবস্থার উপর অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর এই সময়কাল যদি আরও বর্ধিত হয় তবে এই হীনমন্যতার গ্লানি তাদের অন্তরকে গভীরভবে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ফির’আউনের নিষ্পেষণ এবং অনাচার বনী ঈসরাইলের হৃদয়-আত্মাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলো আর তাদের চরিত্রে দাসত্বের বীজ বপন করেছিল। আল্লাহ মুসা (আঃ) কে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে তিনি বনী ইসরাইলকে রক্ষা করে মিশর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন, এতে করে বনী ইসরাইল সম্প্রদায় দাসত্বের লাঞ্ছনা থেকে পরিত্রাণ পাবে এবং সম্মানিত ও গৌরবময় জাতিতে পরিণত করবেন।
    কিন্তু মিশর ত্যাগ করে কিছুদুর যাবার পরই তারা ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লো। এমতাবস্থায় তারা মুসা(আঃ) কে তারা দোষারোপ করতে লাগলো। এক্সোডাস ১৬:৩ এ আছে যে তারা মূসা(আঃ) এবং হারুন(আঃ) কে বলেছিল যে,

    “হায়! যদি আমরা কেবল মিশরে আমাদের প্রভুর হাতে নিহত হতে সম্মত হতাম, সেখানে আমরা মাংসের পাত্রের পাশে বসে থাকতাম আর ইচ্ছামতো রুটি খেতে পারতাম; কিন্তু তোমরা আমাদেরকে এই বিরান এলাকায় এনে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছ”।

    একটা বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাবার পর এরকম একটি অবস্থায় তারা আরও নানা রকম খাদ্য উপকরণ চেয়ে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছিলো, সেই কথাই সূরা বাকারার উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে। মিশরে তাদের কঠিন দুর্দশা ভোগ করা সত্তেও কেবল এইসব দুনিয়াবী ভোগের সামগ্রীর জন্য তারা সেই অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ করছিলো! এছাড়াও যখন মূসা(আঃ) আল্লাহর সাথে কথা বলতে কয়েকদিনের জন্য তাদের ছেড়ে গিয়েছিলেন, তখন তারা তাদের সাথে ইতোমধ্যে থাকা ফির’আউনের অলংকার দিয়ে স্বর্ণের বাছুর নির্মাণ করে তার ইবাদাত করা আরম্ভ করে দেয়! তাদের মনে তাদের মিথ্যে প্রভুদের ভক্তি এতটাই তীব্র ছিলো, যে তারা একেবারে তাদের দাসে পরিণত হয়েছিল।

    অর্থাৎ বাহ্যত মুক্ত হলেও বনী ঈসরাইল জাতি হীনমন্যতা মানসিক দাসত্বের বেঁড়াজালে বন্দী ছিল। আর এটি এমন মারাত্মক পর্যায়ের ছিল যে, যখন তাদেরকে প্রতিশ্রুত জেরুজালেমে প্রবেশ করতে বলা হল তখন তারা উত্তরে মুসা (আঃ) কে বলে বসে, “তুমি আর তোমার প্রতিপালক গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসে থাকব।” তাদের আত্মসম্মানবোধ বলে কিছু ছিল না।

    যে ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা জাতি দীর্ঘদিন ধরে অবিচার, অন্যায় আর পরাজয়ের শিকার হয়ে আসছে তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রথম পদক্ষেপ হল তাদের মধ্যে মুক্ত, স্বাধীন এবং মর্যাদাভিত্তিক বৈশিষ্ট্য আর মানসিকতার উন্মেষ ঘটানো, যেটাকে আমরা বলে থাকি “হার-না-মানা-মানসিকতা”। দ্বিতীয় ধাপে আসবে জ্ঞান অর্জন, এ ধাপে সাহসী ব্যাক্তিত্বের মাঝে শরীয়ার জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাতে হবে এবং তারপরের ধাপে আসবে সে জ্ঞানের প্রয়োগ। অজ্ঞতা এবং বিপথগামীতাই কেবল আমাদের এক নম্বর সমস্যা নয়। আজ আমরা অনেক দা’য়ী আর আ’ইম্মাহদের দেখি যারা অনেক শিক্ষিত এবং সুন্নাহর উপর অনেক জ্ঞান রাখেন অথচ তাদের মাঝে কি যেন একটা নেই।

    আমাদের যেটা অনুধাবন করতে হবে তা হল – যে আদর্শ বা বিশ্বাস একজন মানুষ গ্রহণ করুক বা সে অনুসারে জীবনযাপন করুক না কেন, তার পক্ষে বিস্ময়কর কিছু করে দেখানো সম্ভব হবে তখনই, যখন সে শারীরিক ও মানসিক উভয়বলয়ে থাকে মুক্ত আর অবাধ। দুনিয়াতে এভাবেই কাজ হয়। সুতরাং বনী ইসরাইলের জন্য এবং অনুরূপভাবে আমাদের জন্যও প্রথম লক্ষ্য - জ্ঞানার্জন অথবা ইবাদাতে নিমগ্ন হওয়া নয়। বরং আমাদের প্রথম করণীয় হচ্ছে একজন সত্যিকার মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, নিজের মর্যাদা অনুধাবন করা, নিজেদেরকে মনস্তাত্ত্বিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করা। আমাদের জন্য এটাই জীবন; দুর্বলতা আর বশ্যতাকে হটিয়ে শৌর্যের সাথে উঠে দাঁড়ানো। অন্যথায় আমরা চলমান লাশ।

    অতএব আমাদের প্রথম সমস্যার প্রথম সমাধান শুরু হওয়া উচিত এই অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের মাধ্যমে। (প্রাতিষ্ঠানিক) অজ্ঞতা, গৌণ বিষয়াদিতে মতভেদ, ঐক্যের অভাব ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর বড় বড় সমস্যা ঠিকই কিন্তু মৌলিক সমস্যা নয়। আমাদেরকে অবশ্যই একেবারে প্রাথমিক, সার্বজনীন ও মানবিক বিষয়গুলো থেকে আরম্ভ করতে হবে। নতুবা সত্যিকারের দাওয়াহ প্রদানের ক্ষেত্রে এবং সাধারন মুসলিম হিসেবে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ব। বনী ইসরাইলের মানুষেরা আল্লাহকে বিশ্বাস করত, ইবাদাত করত। প্রভুর বাহ্যিক দাসত্ব থেকে মুক্তি পেলেও, তাদের অন্তর ছিল বন্দী। আর তাই যখনই তারা ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল, দাসত্ব-অবস্থার খাদ্য-পানীয়কে তারা স্বাধীন অবস্থার ক্ষুধা থেকেও শ্রেয় মনে করল।


    তারিক মেহান্না
    প্লিমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি,
    আইসোলেশন ইউনিট – সেল # ১০৮,

    তারিখঃ
    বুধবার, ১৭ ই রবি-উল-আওয়াল, ১৪৩১ হিজরি,
    ৩রা মার্চ, ২০১০।

    Collected:

  • #2
    ভাই তারেক মিহান্না, কুরাআন ও আপনি সিরিজের সব গুলো লেখাই কাল পতাকা ভাই সুন্দর সুন্দর শিরোনাম দিয়ে আল কোরান মেনুতে পোস্ট করেছেন। তাই সুন্দর অন্যান্য লেখা থাকলে তা দিলেই ভাল হত।

    Comment

    Working...
    X