Announcement

Collapse
No announcement yet.

দারুল হারবের পরিচয়ঃ বাংলাদেশ কি দারুল হারব?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দারুল হারবের পরিচয়ঃ বাংলাদেশ কি দারুল হারব?

    ‘দারুল হরব’ এর পরিচয়

    ১। الموسوعة الفقهية الكويتية তে বলা হয়েছে:
    دار الحرب هي كل بقعة تكون أحكام الكفر فيها ظاهرة
    দারুল হরব এমন ভুমি যেখানে কুফুরী শাষন বিজয়ী থাকে।

    ২। ফাতওয়ায়ে মাহমূদিয়াতে বলা হয়েছে: খ:২০ পৃ:৩৬৬
    دار الحرب وه هے كه جو مقام ايسا هو كه وهاں اهل شرك كے احكام جاري هو اور اسكى آس پاس متصل مقامات كا حال بھي ايسا هي هو اور وهاں كوئي مسلمان اپنے اسلام كي بنا پر مأمون نه هو وه دار الحرب هے۔
    দারুল হরব এমন রাষ্ট্রকে বলে যেখানে কাফেরদের বিধান কার্যকর থাকে এবং তার আশপাশের অঞ্চলগুলোও এমনই এবং সেখানে কোন মুসলমান ইসলামের বলে বলীয়ান ও নিরাপদ নয়।

    ৩। جامع الرموز গ্রন্থে বলা হয়েছে:
    دار الإسلام ما يجري فيه حكم إمام المسلمين وكانوا فيه آمنين ودار الحرب ما خافوا فيه من الكافرين .
    দারুল ইসলাম সে রাষ্ট্রকে বলে যেখানে মুসলমানদের মুসলিম শাসকের হুকুম বলবৎ থাকে এবং মুসলমানগণ সেখানে নিরাপদ।

    আর দারুল হরব সে রাষ্ট্র যেখানে মুসলমানগণ কাফেরদের কারণে জান মালের ক্ষতির আশংকা করে।

    দারুল হরবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দানের পর এখানে আমরা ফকীহুন নফস রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহীর ফতোয়ার কিছু আলোচনা পেশ করতে পারি।
    হযরত বলেন, “ শোন! কোন শহর বা রাষ্ট্র দারুল হরব বা দারুল ইসলাম হবার ভিত্তি হল ক্ষমতা ও শক্তির উপর। ক্ষমতা ও শক্তি কাফেরদের হাতে না মুসলমানদের হাতে। বাস এতটুকুই। তাই যে সকল স্থান মুসলমানদের বিধি বিধানের অধীন তা দারুল ইসলাম আর যা কাফেরদের বিধি বিধানের অধীন তা দারুর হরব। পূর্বোক্ত সংজ্ঞা সমূহ থেকেও এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে।“

    তাই তো কারীউল হিদায়া -ইবনুল হুমামের উস্তাদ প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ- কে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সমুদ্রের ব্যাপারে। জবাবে তিনি বলেছিলেন, (যেহেতু সেখানে মুসলিম বা কাফের কারো কর্তৃত্ব নেই) তাই তা দারুল ইসলাম ও হবে না আবার দারুল হরব ও হবে না।

    যখন এ মাসআলার ভিত্তিই হলো ক্ষমতা ও শক্তি তাই কোন অঞ্চলে শুধু মুসলমানদের বসবাসের কারণে কিংবা কাফরদের অনুমতি নিয়ে কিছু শা‘আইরে ইসলাম পালনের কারণে ( যেমন জুমা, ঈদ, মসজিদ, মাদরাসা, খানকা, তাবলীগ জামাতের কার্যাদী দ্বীনী মাহফিল সমূহ ইত্যাদি) তা দারুল ইসলাম হবে না। অনুরূপ কোন ভূখন্ডের উপর যদি মুসলমানদের ক্ষমতা থাকে তাহলে সেটা দারুল ইসলাম।
    যদিও তার অধিকাংশ অধিবাসীই কাফের হয় এবং মুসলিম শাসকের অনুমতিতে তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম খোলাখুলিভাবে পালন করে।

    বিষয়টি বাস্তব উদাহরন দিয়ে বুঝুন।

    ১. হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম হিজরীতে ওমরাতুল কাযার জন্য এক বিশাল জামাত নিয়ে কাফেরদের অনুমতিতে মক্কায় প্রবেশ করেন। তিন দিন সেখানে অবস্থান করেন। এই তিন দিনে প্রকাশে ওমরা পালন, জামাতে নামায আদায় ও অন্যান্য ইবাদত সবই পালন করেছেন। কিন্তু মুসলমানদের এই বিশাল সংখ্যা ও প্রকাশ্য ইবাদতের কারণে এ তিন দিন মক্কা দারুল ইসলাম হয়ে যায়নি। বরং আগে যেমন দারুল হরব ছিল ঐ সময়ও দারুল হরবই থেকেছে।

    ২. মদীনায় রাষ্ট্র গঠণের পর প্রথম কয়েক বছর সেখানে ইহুদীদের তিন তিনটি গোত্র ছিল। তাদের এলাকা সমূহে তারা আপন ধর্ম পালন করত। তাদের সংখ্যাও কম ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার বাগডোর যেহেতু হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে ছিল তাই ইহুদীদের এলাকাগুলোও দারুল ইসলাম ছিল। কেউ তাকে দারুল হরব বলেনি।
    باقيات فتاوى رشيديه ص: ৪৯৭-৪৯৮

    এটাতো হল প্রথম থেকেই কোন্ অঞ্চল দারুল ইসলাম আর কোনটা দারুল হরব তা চিহ্নিত করার উপায়। এবার আসুন জেনে নেই, যে অঞ্চল দারুল ইসলাম ছিল তা কখন দারুল হরবে পরিণত হয়।
    ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া/আলমগীরীর খ:২ পৃ:২৪৮ (দারুল ফিকর বৈরুত) এতে বলা হয়েছে:
    قال محمد رحمه الله في الزيادات : إنما تصير دار الإسلام دار الحرب عند أبي حنيفة رح بشروط ثلاثة: أحدها: إجراء أحكام الكفار على سبيل الاشتهار ، وأن لا يحكم فها بأحكام الإسلام . الثاني: أن تكون متصلة بدار الحرب ، لا يتخلل بينهما بلد من بلاد الإسلام . الثالث: أن لا يبقى فيها مؤمن ولا ذمي آمنا بأمانه الأول الذي كان ثابتا قبل استيلاء الكفار ، للمسلم بإسلامه وللذمي بعقد الذمة . ......... وقال أبو يوسف ومحمد رح بشرط واحد لا غير ، وهو إظهار أحكام الكفر .

    ইমাম মুহাম্মদ রঃ তার ‘যিয়াদাত’ কিতাবে বলেন, আবূ হানীফা রঃ এর মতে দারুল ইসলাম তিন শর্তে দারুল হরব হয়।
    ১. খোলাখুলিভাবে কাফেরদের আহকাম বাস্তবায়ন।
    ২. দারুল হরবের সাথে মিলে থাকা তথা উক্ত অঞ্চল ও দারুল হরবের মাঝে কোন দারুল ইসলাম না থাকা।
    ৩. এখানে বসবাসরত মু‘মিন ও যিম্মীদের পূর্বে অর্জিত আমান উঠে যাওয়া যা তারা মুসলিম শাসক থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল।

    আর সাহেবাইন ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর মতে শুধু এক শর্তই যথেষ্ট, তা হলো কুফুরী শাসন বাস্তবায়ন করা।
    জামিউর রুমূয গ্রন্থেও অনুরূপ কথাই বলা হয়েছে। আদ দুররুল মুখতারের ইবারতও এমনই। এই উক্তিগুলো ফাতাওয়ায়ে আযীযী পৃ: ৫৮৩ ও ৪৫৪ তে উল্লেখ করা হয়েছে। বাদায়েউস সানায়ে কিতাবের ভাষ্যও এরকম।
    এখন আমাদের জানতে হবে إجراء أحكام الكفر এর কী অর্থ এবং আবূ হানীফা রঃ এর শর্তগুলোর বাস্তবতা কী।

    শরহুয যিয়াদাত কিতাবে কাযী খান রঃ -মৃত ৫৯২হিঃ- ইমাম মুহাম্মদের উপরোক্ত ক্বাওলের ব্যাখ্যায় বলেন,
    إن الدار إنما تنسب إلى أهلها باعتبار الولاية واليد ، وإجراء الأحكام يدل على الولاية ، فتثبت النسبة .
    কোন অঞ্চল তার অধিবাসীদের দিকে নিসবাত করা হয় ক্ষমতা এবং শক্তির ভিত্তিতে। আহকাম বাস্তবায়ন করা এটা ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে বুঝায়। তাই এর দ্বারাই নিসবাত সাব্যস্ত হবে। (অর্থাৎ ক্ষমতা কাফেরদের হলে দারুল হরব, অন্যথায় দারুল ইসলাম।)

    রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রঃ আরো সাফ করে বলেন,
    كيونكه اجرائے احكام سے شوكت وغلبه مراد هے نه سركاري ملازمين وحكام كي اجازت سى مراسيم دين كي ادائيگي۔ باقيات فتاوى رشيديه ص৫০৩
    অর্থাৎ জুমু’আ, ঈদ, জামাতসহ অন্যান্য শা‘আইরে ইসলাম পালন করা না করার দ্বারা কিছু যায় আসে না। কেননা إجراء احكام দ্বারা উদ্দেশ্যই হলো শাওকত ও গালাবা। সরকারি কর্মকর্তা এবং শাসকদের অনুমতি নিয়ে ইসলামের বিধি-নিষেধ পালন করতে পারলে এই হুকুমের মাঝে কোন পার্থক্য আসবে না। - ফাতাওয়ায়ে আযীযী পৃ:৪৫৫

    এমনকি কোন এলাকা যদি এমন হয় যে, সেখানে কাফেরদের পূর্ণ দখলদারিত্ব পাওয়অ গেছে। মুসলমানদের ক্ষমতা একেবারে শেষ হয়ে গেছে এতদসত্ত্বেও কাফেররা ঐ অঞ্চলে তাদের একটিও কুফুরী আইন বাস্তাবায়ন করেনি, বরং ঐ অঞ্চলেরই কোন একজন মুসলমানকে শাসক বানিয়ে বলে দিল, তুমি তোমার ধর্মের নিয়মানুযায়ী শাসনকার্য চালিয়ে যাও তবে ক্ষমতা আমাদের হাতে থাকবে।

    যেমন ১৯৩৫ সালে ভারত শাসনের ক্ষেত্রে ইংরেজরা এক নতুন প্রক্রিয়া চালু করে। যার নাম দেয়া হয় ‘‘ইন্ডিয়ান এ্যাক্ট”। এই এ্যাক্ট এর সার কথা ছিল, প্রদেশ ভিত্তিক নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে মুসলিম প্রদেশ গুলোতে মুসলিম গভর্ণর নির্বাচিত হবেন। হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগ যেমন পররাষ্ট্র বিভাগ, স্বরাষ্ট্র বিভাগ, প্রচার বিভাগ ও যোগাযোগ বিভাগ এগুলো ইংরেজদের নিয়ন্ত্রনে থাকবে। এছাড়া অন্যান্য সকল বিভাগ প্রাদেশিক সরকারের ও কেন্দ্রের হাতে ন্যাস্ত থাকবে।

    উল্লিখিত সুরতেও ঐ অঞ্চল দারুল হরবই থাকবে। মূল ক্ষমতা কাফেরদের হাতে থাকার কারণে।

    এখানে আমরা বারবার একটি কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, শাসন কার চলে না চলে আমরা ইসলামী আহকামগুলো পালন করতে পারি কি না, এর সাথে হুকুমের কোন সম্পর্ক নেই। বরং মূল বিষয় হলো, ক্ষমতা কার হাতে। ব্যাস। (ফোকাহায়ে কেরাম এ কথাটিই বুঝাতে চেয়েছেন) (বাকিয়াত পৃ:৫০১)

    আমরা একটু আগে বলে এসেছি যে, যে অঞ্চলে কাফেরদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর মুসলমানদের ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে।

    এই ২য় কথাটির অর্থ আমাদের বুঝতে হবে। কেননা এর মাধ্যমে আবূ হানীফা ও সাহেবাইনের মাঝে এখতেলাফের কারণ এবং আবূ হানীফা রঃ এর অতিরিক্ত শর্ত সমূহের বাস্তবতা বুঝে আসবে।
    প্রথমে রশীদ আহমদ গাঙ্গহী রঃ এর কথা থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হচ্ছে, হযরত বলেন,
    مگر غلبه اقتدار بالكل ختم هونے كي كيا حد هے اس ميں همارے ائمه فقه كے درميان اختلاف هے ۔ صاحبين فرماتے هيں .........
    ক্ষমতা একেবারে নিঃশেষ হবার সীমা কতটুকু এ নিয়ে আমাদের ইমামগণের মাঝে এখতেলাফ রয়েছে।
    সাহেবাইন বলেন, কাফের মুসলিম উভয় দলই যদি নিজেদের ক্ষমতা, নিজেদের বিধান, বিচার আচার গুলো কার্যকর করতে পারে তাহলে বুঝা যাবে মুসলমানদের ক্ষমতা এখনো শেষ হয়নি। তখন الإسلام يعلو ولا يُعلى এর কায়েদা মত এটাকে দারুল ইসলামই ধরা হবে। কিন্তু যদি এর জন্য মুসলমানরা কাফেরদের থেকে অনুমতি নিতে হয় (যদিও তা মৌন সমর্থনই হোকনা কেন, অর্থাৎ মুসলমানরা তাদের হুকুমগুলো পালন করে যাচ্ছে কিন্তু কাফেররা বাধা দেবার ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও বাধা দিচ্ছে না) তাহলে ধরা হবে এখানে মুসলমানদের আর কোন ক্ষমতা বাকী রইল না।

    আর আবূ হানীফা রঃ সূক্ষ্ম দৃষ্টির কারণে استحسانًا এই মত পোষণ করেছেন যে, কোন দারুল ইসলামকে দারুল হরব ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। তাই যতক্ষন পর্যন্ত ঐ অঞ্চলে ইসলামী গালাবার নিশানাসমূহ হতে সামান্য নিশানাও বাকী থাকে এবং কাফেরদের ক্ষমতা বিস্তারের মধ্যে একটুও দূর্বলতা পাওয়া যায় ততক্ষন তাকে দারুল হরব ঘোষণা দেয়া হবে না।
    অতিরিক্ত শর্তদ্বয়ের প্রথম শর্ত, মাঝখানে কোন দারুল ইসলাম থাকা এটা কাফেরদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে এক ধরণের বাধা। কারণ যে যেকোন সময় পার্শ্বস্থ দারুল ইসলামের লোকেরা হামলা চালিয়ে অত্র অঞ্চল কাফেরদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে।

    অধিকন্তু হযরত বলেছেন, এ শর্তটির সম্পর্ক ছোট ছোট বসতী ও শহরের সাথে। কোন রাষ্ট্র বা বড় এলাকার জন্য এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না। (বাকিয়াত পৃ: ৫০৪)
    আর ২য় শর্ত তথা মুসলিম শাসক থেকে অর্জিত আমান বাকি থাকা। এর দ্বারাও উদ্দেশ্য হলো মুসলিম শাসকের ক্ষমত বাকি থাকা। কারণ এই আমানের হাকীকত হল মুসলিম শাসকের ভয়ে এসে অপরের অনিষ্টসাধন থেকে বিরত থাকা। শাসক ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তো এই ভয় বাকী থাকার প্রশ্নই আসে না।

    উক্ত বিষয়টি ‘শরহুয যিয়াদাত’ কিতাবে আরো গোছালো ভাবে বলা হয়েছে। খ:৬ পৃ:২০২৩
    ولأبي حنيفة رح ان الدار إنما تنسب إلى أهل الحرب عند ظهور قدرة أهل الحرب وغلبتهم وقوتهم ولا تظهر إلا عند وجود هذه الشرائط كلها ، أما عند عدم بعضها كانت الدلائل في حد التعارض ........
    আহলে হারবের দিকে রাষ্ট্রর নিসবাত তাদের ক্ষমতা ও শক্তির ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। আর এই সবগুলো শর্ত পাওয়া গেলেই তাদের ক্ষমতাটা সুস্পষ্ট হয়। কোন একটা শর্ত অনুপস্থিত হলে দলীলের মধ্রে বিরোধ দেখা দেয় (বিধায় তাদের গালাবার নিশ্চয়তা লাভের জন্য এ শর্তগুলো প্রয়োগ করা হয়।)

    এ বিষয়টি হুবহু ঐ হাদীসের মতই যেখানে বলা হয়েছে তোমাদের কারো যদি পেছনের রাস্তায় কিছু বের হবার অনুভুতি হয় তাহলে আওয়াজ শোনা অথবা দুর্গন্ধ পাওয়া ব্যতীত নামায ছাড়বেনা। এই হাদিসে আওয়াজ শোনা ও দুর্গন্ধ পাওয়ার শর্ত শুধুমাত্র নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে তার বাতাস বের হয়েছে। অন্যথায় যদি কেউ এ দুটি ছাড়াও নিশ্চিত হয়ে যায় তবে তার জন্য নামায জারি রাখা বৈধ হবে না।

    কাফেরের গালাবা হলে দারুল ইসলাম দারুল হরব হয়ে যায়। এটা কি শুধু ভিনদেশী কাফেরের হামলার মাঝেই সীমাবদ্ধ না এর আরো সুরত রয়েছে ?

    ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে খ:২ পৃ:২৪৮ বলা হয়েছে:
    وصورة المسئلة على ثلاثة أوجه ، إما أن يغلب أهل الحرب على دار من دورنا أو ارتدّ أهل مصر وغلبوا وأجروا أحكام الكفر أو نقض أهل الذمة العهد وتغلبوا على دارهم .
    দারুল ইসলাম দারুল হরবে পরিণত হওয়ার তিনটি সূরত রয়েছে:
    ১. ভিনদেশী আহলে হরব আমাদের কোন দারুল ইসলামে হামলা করে তাতে ক্ষমতা বিস্তার করল।
    ২. কোন শহরবাসী মুরতাদ হয়ে ঐ শহরের ক্ষমতা দখল করল এবং তাতে কুফুরী শাসন বাস্তবায়ন করল।
    ৩. যিম্মীরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে শহরের ক্ষমতা দখল করল।

    এই তিন সুরতের যে কোন এক সুরত পাওয়া গেলেই সে অঞ্চল দারুল হরবে পরিণত হবে।

    আমভাবে দারুল হরবের পরিচয় লাভের পর এবার আমরা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান নিয়ে একটু পর্যালোচনা করে দেখি:

    কেউ কি এই দুঃসাহস দেখাতে পারবে যে বলবে ‘‘বাংলাদেশে ইসলামী শাসন চালু আছে।”

    এটা একটা স্পষ্ট ও চাক্ষুস বিষয় যে বাংলাদেশের সংবিধান হল কুফুরী সংবিধান। এতে যদি কারো সংশয় থাকে তাহলে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে যে জ্ঞান রাখে সে যেন একটু কষ্ট করে বাংলাদেশের সংবিধানটা আদ্যোপান্ত পড়ে নেয়।
    বিশেষ করে অনুচ্ছেদ সাতের ধারা এক ও দুই, অনুচ্ছেদ ৬৫ এর ধারা ১, অনুচ্ছেদ ৭৫ এর ধারা ১ এর খ, অনুচ্ছেদ ৮০ এর ধারা ১,২,৩,৪,৫ অনুচ্ছেদ ৪৮ এর ধারা ২, অনুচ্ছেদ ৫৯ এর ধারা ১, অনুচ্ছেদ ৫৮ এর ধারা ২, অনুচ্ছেদ ৫৫ এর ধারা ২, অনুচ্ছেদ ১৪২ এর ধারা ১, অনুচ্ছেদ ২৮ এর ধারা ১,২ অনুচ্ছেদ ২৬ এর ধারা ১,২ অনুচ্ছেদ ২৯ এর ধারা ১,২ অনুচ্ছেদ ৩৯ এর ধারা ১,২ক অনুচ্ছেদ ৩২ এবং ৪৯। এখানে সহজের জন্য কিছু অনুচ্ছেদ ও ধারার কথা উল্লেখ করলাম। তবে পুরা সংবিধান পড়ে নিলে আরো সাফ হবে।

    যখন এদেশে শাসনও কুফুরী অথচ ফোকাহায়ে কেরাম দারুল ইসলামের পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই উল্লেখ করেছেন, যেখানে إجراء أحكام الإسلام পাওয়া যায় তাই দারুল ইসলাম। যেমন আমরা শুরুতে جامع الرموز এর ইবারতে উল্লেখ করেছি।

    কেউ বলবেন, আপনিই না বলেছেন, إجراء أحكام الإسلام দ্বারা غلبة المسلمين উদ্দেশ্য, হুকুম চলুক বা না চলুক এর উপর মাসআলার ভিত্তি নয়। হ্যা, আমরা বলেছি, এখানেও আমি সরাসরি এ কথাটা দিয়ে শুরু করতে পারতাম। কিন্তু আলোচনার সকল দিক বুঝে আসার জন্য আমরা একটু দূর থেকে আসলাম। আসলেই মূল উদ্দেশ্য হল অঞ্চলটা কাদের ক্ষমতাধীন।

    যেমনটা আমরা পূর্বে বিশদ আলোচনা করেছি এবং আল্লামা সারাখসী রঃ ও শরহুস সিয়ারিল কাবীরের মধ্যে সাফ করে বলেছেন,
    فإن دار الإسلام اسم للموضع الذي يكون تحت يد المسلمين .
    দারুল ইসলাম এমন ভূমীকেই বলে যা মুসলমানদের ক্ষমতাধীন থাকে। (চাই তারা সেখানে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করুক বা না করুক।)

    এবার আমাদের সমাধানে পৌছতে হলে ক্ষমতাসীনদের দিকে তাকাতে হবে। এই ক্ষমতাসনিদের শরঈ হুকুম যদি আমরা সঠিকভাবে বুঝতে না পারি তাহলে এতক্ষনের এ দীর্ঘ আলোচনা সবই পন্ড ও অর্থহীন। তবে আলোচনার বিস্তৃতি অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমরা এখানে শুধু ক্ষমতাসীনদের হুকুম আলোচনা করে সমাধানে পৌছতে চাই।

    আমাদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী অন্যান্য সংসদ সদস্য মুরতাদ। সে মতে ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে বর্ণিত দারুল হরব হবার তিন সুরতের ২য় সুরত এখানে পাওয়া যাওয়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশ বর্তমানে দারুল হরব।

    সবশেষে আমরা এ দাবী সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী করনের নিমিত্তে সামান্য কিছু দালিলিক আলোচনা করবো।
    ১. মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী রঃ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হযরত! ইংরেজদের যামানায় হিন্দুস্তান আপনাদের মতে দারুল হরব ছিল কি ? ইংরেজদের পর বর্তমান সময়ে আগের হুকুমে কোন পার্থক্য এসেছে কি ?
    হযরত জবাবে বললেন, হ্যা আমাদের মতে হিন্দুস্তান দারুল হরব ছিল ঐ সকল দলীলের ভিত্তিতে যা হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রঃ ও শাহ আব্দুল আযীয রঃ লিখে গেছেন। বর্তমান যমানায়ও হিন্দুস্তান দারুল হরব। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে তা দারুল ইসলামে পরিণত হয়নি। (ফাতাওয়ায়ে মাহমূদীয়া খ:২০ পৃ:৩৬০)

    এখানে হযরতের সর্বশেষ বাক্যটি লক্ষ্যনীয়। কারণ অনেকের সংশয় হতে পারে যে, হযরতকে তো হিন্দুস্তান তথা বর্তমান ভারতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। ভারত যেহেতু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তাই দারুল হরব হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদেরর বাংলাদেশে তো সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান। আমরা বলবো, আপরি হযরতের শেষ বাক্যটি আরেকবার পড়ে দেখুন। গণতন্ত্র এটা এমন এক শাসন ব্যবস্থা যা ধর্ম বিভেদ, রাষ্ট্র বিভেদ ও পরিবেশ বিভেদে এর মূল কাঠামোতে কোন পরিবর্তন আসে না। জনৈক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীর ভাষায় ‘‘গণতন্ত্র এমন এক সর্বগ্রাসী মতবাদ যা তার পূর্বের পৃথিবীর সকল ধর্ম, মতবাদ ও বিশ্বাসকে হজম করে ফেলেছে।

    ২. আহসানুল ফাতাওয়ায় খ:৬ পৃ:২১ হযরত রশীদ আহমদ লুধীয়ানবী রঃ বলেন,
    جس ملك ميں اگر چه عملا احكام اسلام كا نفاذ نه هو مگر تنفيذ احكام پر قدرت هو وه دار الاسلام هے۔
    কোন দেশে যদিও কার্য্যত ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত নয় কিন্তু প্রতিষ্ঠা করার সামর্থ রয়েছে (তথা ইসলামী সরকারের হাতে ক্ষমতা যে কোন মুহূর্তে চাইলেই সে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে) তাহলে তা দারুল ইসলাম।
    আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,
    جهاں احكام اسلام كي تنفيذ پر قدرت نه هو وه دار الحرب هے۔
    কিন্তু যেখানে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার শক্তি নেই তা দারুল হরব। অনুরূপ কথা হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীও বলেছেন। (বাকীযাত পৃ: ৫০৪)
    আমরা একটু বাস্তব অবস্থার দিকে তাকাই। আমাদের দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পথে সবচে‘ বড় বাধা হলো এই মুরতাদ শাসকগোষ্ঠি। আর জনগণ কি এই অবস্থানে রয়েছে যে, যে কোন মুহূর্তে চাইলেই তারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এমন বাস্তব বিরোধী কথা বা মনোভাব কে পোষণ করতে পারে।

    যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত নয় খালেছ একটি দ্বীনী দাবী তথা নাস্তিকদের শাস্তি প্রদানের দাবীতে গণতন্ত্র স্বীকৃত আন্দোলন করেও যে শত শত লাশ গুনতে হয় সেখানে যারা এমন মনোভাব পোষণ করে তাদের ব্যাপারে আমরা অধমরা আর কী বলতে পারি। অথচ সমকালিন প্রসিদ্ধ আলেমদের কয়েকজন এরকম মনোভাব থেকেই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে দারুল ইসলাম ফতোয়া দিয়েছেন।
    দলীল স্বরূপ তারা শামীর এবারত নকল করেছেন:
    وبهذا ظهر أن ما في الشام من جبل تيم الله المسمى بجبل الدروز وبعض البلاد التابعة كلها دار إسلام، لانها وإن كانت لها حكام دروز أو نصارى، ولهم قضاة على دينهم وبعضهم يعلنون بشتم الاسلام والمسلمين، لكنهم تحت حكم ولاة أمورنا، وبلاد الاسلام محيطة ببلادهم من كل جانب وإذا أراد ولي الامر تنفيذ أحكامنا فيهم نفذها.
    অনুবাদ: এর দ্বারা এ বিষয়টি সুস্প হল যে, শামে জাবালে তাইমুল্লাহ নামে যে অঞ্চল রয়েছে যাকে অন্য নামে জাবালুদ দুরুজও বলা হয় সেসব এলাকা ও তার অধীনস্থ এলাকা সমূহ সব দারুল ইসলাম। কেননা ঐ সকল এলাকায় যদিও খৃস্টান ও দুরুজী শাসকরা বিদ্যমান এবং এমন বিচারক রয়েছে যারা তাদের ধর্ম অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে এমনকি তাদের কতক ইসলাম ও মুসলামনদের প্রকাশ্যে গালি দেয়। কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও তারা যেহেতু আমাদের মুসলিম শাসকদের হুকুমের অধীন এবং তাদের এই অঞ্চলগুলো চতুর্দিক থেকে দারুল ইসলাম দ্বারা বেষ্টিত এবং আমাদের মুসলিম শাসক যখনই ইচ্ছা করে ঐ অঞ্চরগুলোতে আমাদের ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। (তাই এই তিন কারণে ঐ অঞ্চলগুলোর উপর দারুল হরবের হুকুম আরোপ করা হবে না।)

    আমরা আমাদের বাংলাদেশের অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখি, যেই তিনটি বিষয় পাওয়া যাওয়ার কারণে শামের ঐ অঞ্চলগুলোকে দারুল ইসলাম বলা হয়েছে তার কোন একটাও আমাদের দেশের বেলায় পাওয়া যায় কি না।

    ৩. বনী ইয়ারবু‘ নামক আরবের এক অঞ্চলকে হযরত সিদ্দীকে আকবরের যুগে দারুল হরব ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অথচ সেখানে জুমা, ঈদ ও আযান বহাল ছিল। সে অঞ্চলের মানুষ শুধু যাকাত অস্বীকার করেছিল। (জামেউল ফাতাওয়া খ:৮ পৃ:৩২২)

    সব আদায় করে শুধু যাকাত অস্বীকারের কারণে যদি সে অঞ্চল দারুল হরব ঘোষিত হয় তাহলে আইন করে, ক্ষমতা বলে যারা মদের হারাম, যিনার হারাম, সুদের হারাম হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে, ফরয নামায, রোযা ও যাকাতকে যারা ফরযের স্তর থেকে নামিয়ে রাষ্ট্রিয় ভাবে শুধু বৈধ রেখেছে।

    বাক স্বাধীনতার নামে নবী-রাসূল, আল্লাহ ও শা‘আইরে ইসলাম নিয়ে ব্যাঙ্গ করার বৈধতা দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার বাহিনী মোতায়েন করেছে। তাদের ক্ষমতাসীন দেশ যদি দারুল হরব না হয় তাহলে কোরআন, হাদীস, সীরাতসহ ইসলামের সকল পরিভাষার কোন সঠিক প্রয়োগক্ষেত্র থাকে বলে আমার বুঝে আসে না।

    সারকথা: দারুল হরব হলো, যেখানে কাফেরের ক্ষমতা বিরাজমান থাকে এবং ইসলামের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়। এর হদ্দ ও মাপকাঠি কী তা নিয়ে ওলামায়ে আহনাফের মাঝে এখতেলাফ। সাহেবাইনের মতে শুধু কুফুরী শাসন প্রতিষ্ঠ করাই যথেষ্ট। আবূ হানীফা রঃ সতর্কতাবশতঃ আরো দুই শর্ত আরোপ করেন। তবে সকলের উদ্দেশ্য একই। বাংলাদেশ ও এ জাতিয় অন্যান্য মুসলিম দেশ (অধিকাংশগুলোই) দারুল হরব, শাসকবর্গ মুরতাদ হওয়ার কারণে।
    إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ ‏

    "যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌছি যুদ্ধের জন্য, এটি তাদের জন্য দুর্বিষহ সকাল যাদেরকে পূর্বে সতর্ক করা হয়েছিল।"

    (সহিহ বুখারি, ৩৭১)

  • #2
    মাশা আল্লাহ জাযাকাল্লাহুতায়ালা ওয়াবারাকা ফি ইলমি ওয়া আমালিকুম।

    Comment


    • #3
      হ্যাঁ ভাই ! বাংলাদেশ একটি দারুল কুফর । জিহাদ করে এটাকে দারুল ঈমান বানাতে হবে।

      Comment


      • #4
        এ বিষয়টি বাংলাদেশের আলেমদেরকে বুঝানোই যায়না? তারা তকি উসমানি সাহেবের বরাত দিয়ে ৩য় একটি বলে তা হচ্ছে, দারুল আমান
        দ্বীনকে আপন করে ভালোবেসেছে যারা,
        জীবনের বিনিময়ে জান্নাত কিনেছে তারা।

        Comment

        Working...
        X