Announcement

Collapse
No announcement yet.

শায়েখ আলবানী রাহ. : শায়েখ শুআইব আরনাঊতের দৃষ্টিতে

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শায়েখ আলবানী রাহ. : শায়েখ শুআইব আরনাঊতের দৃষ্টিতে

    তথ্যসূত্রঃ http://www.alkawsar.com/article/1794

    [শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ (১৩৩২ হি./১৯১৪ ঈ.-১৪২০ হি./ ১৯৯৯ ঈ.) ছিলেন বিগত শতাব্দির আরব বিশ্বের প্রসিদ্ধ আলেম। জীবনের শুরুতেই তার বংশের লোকেরা আলবানিয়া থেকে হিজরত করে শামের দামেশক শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তাঁর ইলমী ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় অনেকটা ব্যক্তিগত পড়াশোনার ভিত্তিতে। তার বিশেষ শাস্ত্র ছিল ‘ইলমে হাদীস’। যৌবনের প্রারম্ভেই এ শাস্ত্রের সাথে তার সম্পর্ক হয় এবং মৃত্যুবধি এতেই নিমগ্ন থাকেন। নিজের কিছু বিচ্ছিন্ন মতামতের কারণে শায়েখ সমকালীন আহলে ইলমের কাছে সমালোচিত হতে থাকেন।[1] তাদের মধ্যে বর্তমান যুগের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক শায়েখ শুআইব আরনাঊতও রয়েছেন। যিনি নিজেও আলবেনিয়ার এক খান্দানের মানুষ। তার বংশের লোকেরাও শামে হিজরত করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহর সাথে তার পারিবারিক সম্পর্কও ছিল স্বাভাবিক। কিছুদিন পূর্বে শায়েখ আরনাঊত হাফিযাহুল্লাহ-এর এক শিষ্য শায়েখ ইবরাহীম তার জীবন ও কর্মের উপর একটি কিতাব রচনা করেন। যা المحدث العلامة الشيخ شعيب الأرنؤوط، سيرته في طلب العلم وجهوده في تحقيق التراث নামে আরব বিশ্বের প্রসিদ্ধ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান دار البشائر الإسلامية থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ঐ কিতাবের এক অধ্যায়ে শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহর গবেষণা বিষয়ে তার কিছু সমালোচনা ও পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। ইলম ও গবেষণার ময়দানে মতভিন্নতা ও মতপার্থক্য কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। ‘আদাবে ইখতিলাফ’ রক্ষা করে মার্জিত ভাষা ও পরিশীলিত উপায়ে নিজের মতামত প্রকাশ ছিল ভারসাম্য-চিন্তার অধিকারী আহলে ইলমের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। শায়েখ শুআইব আরনাঊত হাফিযাহুল্লাহ-এর এই আলোচনাও ঐ ধারার একটি দৃষ্টান্ত। যেহেতু শায়েখ নিজেও একজন সুপ্রসিদ্ধ মুহাক্কিক, শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহর সাথে খানদানী যোগাযোগও ছিল, তার সঙ্গে চলাফেরা ও কাজ করার সুযোগও তিনি পেয়েছেন, বিশেষত শায়েখের কিতাবসমূহ ও গবেষণাকর্মের বিষয়ে তার গভীর পর্যবেক্ষণ ছিল। তাই কিতাবের ঐ অধ্যায়টি কিছুটা সংক্ষেপ করে বাংলাভাষী পাঠকের সামনে পেশ করা হল। -অনুবাদক]

    শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহর বিশেষ অবদান

    প্রথমত আমি অস্বীকার করি না যে, শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ একইসাথে তার পক্ষ-বিপক্ষ উভয় শ্রেণিকে ইলমে হাদীসের অধ্যয়ন ও অধিকতর গবেষণায় আগ্রহী করে তোলার কৃতিত্বের অধিকারী। বলা যায়, (নিকট অতীতে) তার কারণে মিশর ও সিরিয়ায় ইলমে হাদীসের অধ্যয়ন ও গবেষণায় নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই অবদানের জন্য আল্লাহ তাআলা তাকে মুসলমানদের পক্ষ থেকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। এর সাওয়াব ও প্রতিদান তার আমলনামায় সংরক্ষিত রাখুন। কিন্তু তিনিই এ ময়দানের প্রথম ‘অশ্বারোহী’ ছিলেন না। তার আগে মিশরে শায়েখ মুহাম্মাদ রশীদ রেযা, শায়েখ আহমদ শাকের প্রমুখ ও তাদের মত অন্যান্য আযহারী আলিম এবং সিরিয়ার শায়েখ জামালুদ্দীন কাসেমী ও শায়েখ মুহাম্মাদ বাহজাতুল বাইতারের মতো মুহাদ্দিস গত হয়েছেন। এ কারণে তাকলীদ বর্জন ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের প্রথম আহ্বানকারী তাকে বলা যায় না। তবে তিনি তার পূর্বসূরীদের শান্ত-শালীন ও প্রশান্তিদায়ক কর্ম-পন্থা গ্রহণ করেননি। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক পন্থা অবলম্বন করেছেন। এ উপায়ে তিনি তাদের বোঝাবার পরিবর্তে পরাস্ত করতে আগ্রহী ছিলেন। ফলে মুসলমানদের দুই শিবিরে ‘লড়াইয়ে’র সূত্রপাত ঘটল এবং জ্ঞান-গবেষণামূলক আলোচনা-পর্যালোচনার পরিবর্তে বিবাদ ও কটূক্তির আগুন প্রজ্বলিত হল।

    আমি এ কথাও মানি যে, শায়েখ কিতাব ও সুন্নাহর দায়ী ছিলেন, যা প্রশংসনীয়। তবে তিনি সুন্নাহর দায়ী ছিলেন তার নিজের ‘তাসহীহ’ (হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধির সিদ্ধান্ত) অনুসারে। তিনি চাইতেন, সুন্নাহর শুদ্ধাশুদ্ধির বিষয়ে তার সিদ্ধান্তকে পূববর্তী ইমামগণের ইজতিহাদের মর্যাদা দেওয়া হোক এবং মতবিরোধপূর্ণ মাসআলায় তার সিদ্ধান্তকেই ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ মেনে নেওয়া হোক। কিন্তু এই মর্যাদা না তার ক্ষেত্রে পূর্ণ হয়েছে, না অন্য কারো ক্ষেত্রে হতে পারে। কারণ ফুকাহায়ে কেরামের এই স্বীকৃত মতপার্থক্য আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য পছন্দ করেছেন আর তা তাঁরই সৃষ্ট বিভিন্ন কারণ থেকে উদ্ভূত।

    (একটু চিন্তা করুন!) সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুম আজমাঈন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কারো থেকে দ্বীন ও ইলম গ্রহণ করেননি। তারপরও বিভিন্ন মাসআলায় তাদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছে। মতবিরোধপূর্ণ যে মাসআলাতেই নুসূসের ভিত্তিতে ইমামগণ কোনো মত গ্রহণ করেছেন, তার দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনে কেরামের মাঝেও পাওয়া যায়। সুতরাং ফিকহী মাসআলায় মতভিন্নতা সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই ছিল। এ-ই আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও পছন্দ। কারণ এর ফলে ইসলামী তাহযীবে বৈচিত্র এসেছে এবং চিন্তা-গবেষণার ক্ষেত্রে প্রশস্ততা সৃষ্টি হয়েছে। আর এর দ্বারা চিন্তাগত ও ইজতিহাদী বিষয়ে উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতার উন্মুক্ত ময়দান সৃষ্টি হয়েছে। যদি এই ইলমী ইখতিলাফ না থাকত তাহলে ইসলামী গবেষণা ও রচনার বিশাল এই ভাণ্ডার অস্তিত্বে আসত না, যা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের গ্রন্থাগারগুলোকে আলোকিত করে রেখেছে।

    ইলমে হাদীস ও আলবানী রাহিমাহুল্লাহ

    শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহর বিশেষজ্ঞতার বিষয় ছিল ‘ইলমে হাদীস’। এই ইলমের অধ্যয়ন ও গবেষণার মাঝে তিনি জীবনের বড় একটি অংশ প্রায় ৬০ বছর ব্যয় করেছেন। তবে এক্ষেত্রে তিনিও তার পূর্বসূরী মুহাদ্দিসগণের মতোই। অর্থাৎ তার সিদ্ধান্তেও ভুল-শুদ্ধ দুই-ই রয়েছে।

    ‘নকদে মতন’-এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা

    আমি শায়েখের এ বিষয়টিতে যার-পর-নাই আশ্চর্য হয়েছি যে, তিনি তো ‘ইলমু মুসতালাহিল হাদীসে’ অবশ্যই পড়েছেন, “‘সহীহ’ হাদীস হল, যে হাদীসের সনদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন এবং বর্ণনাটি ‘ইল্লত’ অথবা ‘শুযূয’ মুক্ত।” কিন্তু আফসোস! শায়েখ বর্ণনার শুদ্ধাশুদ্ধি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দানের ক্ষেত্রে ‘শুযূয’ ও ‘ইল্লত’কে বিবেচনায় আনেননি, হাদীসের মতনের পর্যালোচনায় এ দুটো বিষয়কে আমলে নেননি। তাই তার কাছে হাদীসের সনদ সহীহ হলেই হাদীসটি ‘সহীহ’। এ কারণে তিনি এমন বহু হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন, যার ‘মতন’ সম্পর্কে আলিমগণের আপত্তি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

    এক. ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’[2] ও ‘সহীহুল জামিইস সাগীর’[3] -এর একটি বর্ণনা:

    الوائدة والموءودة في النار

    “যে নারী তার সন্তানকে জীবন্ত কবর দিয়েছে সে আর জীবন্ত প্রোথিত কন্যা উভয়েই জাহান্নামী।”

    শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ এ বর্ণনাকে ‘সহীহ’ বলেছেন। অথচ তা কুরআনের আয়াত

    وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ

    “এবং যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে”...(সূরা তাকবীর (৮১) : ৮)-এর সুস্পষ্ট বিরোধী। যদিও তিনি বর্ণনাটির এমন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়াস পেয়েছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

    দুই. ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’ (হাদীস ৯৫৯)-এ শায়েখ নিচের রেওয়ায়েতকে ‘সহীহ’ বলেছেন:

    أمتي أمة مرحومة، ليس عليها عذاب في الآخرة، عذابها في الدنيا الفتن والزلازل والقتل.

    “আমার উম্মতের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত রয়েছে। আখেরাতে তাদের কোনো আযাব হবে না। তাদের আযাব দুনিয়াতেই ফিৎনা, ভূমিকম্প ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে হবে।”

    শায়েখ বর্ণনাটি ‘সহীহ’ হওয়ার কারণ উল্লেখ করার প্রয়াস পেয়েছেন এই বলে যে, “উম্মত দ্বারা উদ্দেশ্য উম্মতের অধিকাংশ সদস্য। কারণ, এ তো সুস্পষ্ট যে, অনেক লোককে গোনাহ থেকে পবিত্র করার জন্য জাহান্নামে দেওয়া হবে।”

    আমরা ‘মুসনাদে আহমাদে[4]’র টিকায় এ হাদীসকে ‘যয়ীফ’ বলেছি। হাদীস শাস্ত্রের ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহও ‘আততারীখুল কাবীর’ (খণ্ড : ১ , পৃষ্ঠা : ৩৮-৩৯)-এ হাদীসটি ‘যয়ীফ’ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কারণ তিনি হাদীসের ‘বিভিন্ন বর্ণনাসূত্র’ এবং তাতে ‘এযতেরাব’ থাকার কথা উল্লেখের পর বলেন-

    والخبر عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الشفاعة وأن قوما يعذبون ثم يخرجون أكثر وأبين وأشهر.

    “অর্থাৎ শাফাআত বিষয়ে এবং শাস্তি ভোগের পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের বিষয়ে যেসব হাদীস রয়েছে, তা সংখ্যায়, স্পষ্টতায় ও প্রসিদ্ধিতে অগ্রগণ্য।”

    এ থেকে বুঝা যায়, ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ সনদের ‘এযতেরাব’ বর্ণনার সাথে মতনের উপরও এভাবে ‘নকদ’ করেছেন যে, এই রেওয়ায়েত ঐ সকল হাদীসের বিপরীত যেগুলো ‘তাওয়াতুরের’ নিকটবর্তী। যেগুলো থেকে জানা যায়, “উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার কিছু লোক প্রথমে জাহান্নামে যাবে, পরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফাআতের কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।”

    তো শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ ‘নকদে মতনে’র প্রতি তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ করতেন না।[5] তার দাবি ছিল পূর্বসূরী মনীষীগণ ‘নকদে মতনে’র কোনো পন্থা নির্ধারণ করে যাননি। তাছাড়া এর সুনির্ধারিত নীতিমালাও নেই। তার এ দৃষ্টিভঙ্গি খুবই দুর্বল। এর প্রমাণ হিসেবে ইমাম যারকাশী রাহিমাহুল্লাহর কিতাব

    الاجابة فيما استدركته عائشة على الصحابة -ই যথেষ্ট। এ কিতাবের বিষয়বস্তুই ‘নকদে মতন’।

    ‘শুযুয’ ও ‘যিয়াদাতুস সিকা’র মধ্যে পার্থক্য না করা

    আমার নিকট শায়েখের আরেকটি আপত্তিকর বিষয় হল, তিনি ‘শায’ ও ‘যিয়াদাতুস সিকা’র মাঝে পার্থক্য করেন না। এক্ষেত্রে তার অবস্থান ‘মুতাআখখিরীন’ মুহাদ্দিসীনের মতো। অথচ ‘শুযুয’ ও ‘যিয়াদাতুস সিকা’ দুটি আলাদা ও সুস্পষ্ট পরিভাষা। মুহাদ্দিসীনের পরিভাষায় ‘শায’ এমন বর্ণনাকে বলে, যা কোনো শায়েখের একজন রাবী একা বর্ণনা করেন। শায়েখের অন্যান্য শীষ্য রাবীগণ তা বর্ণনা করেন না। তখন একাকি বর্ণনাকারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে, এই বর্ণনা আপনি কোথায় পেলেন, এ তো অন্যরা আপনার শায়েখ থেকে বর্ণনা করেন না?

    ‘মুতাকাদ্দিমীন’ ইমামগণ ‘নির্ভরযোগ্য ইমামে’র ‘যিয়াদাতুস সিকা’কে গ্রহণ করতেন এবং ‘যিয়াদাতুস সিকা’ ও ‘শুযুযে’র মাঝে পার্থক্যও করতেন।

    এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযিআল্লাহু আনহু থেকে তাশাহহুদের সময় শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ানোর বর্ণনাটি মনে পড়ছে। এ বর্ণনায় আসেম ইবনে কুলাইব থেকে শুধু একজন রাবী যায়েদাহ ইবনে কুদামাহ يحركها শব্দটি বর্ণনা করেন। আসেমের অন্যান্য শিষ্য আব্দুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ, শু‘বা, সুফিয়ান সাওরী, যুহাইর ইবনে মুআবিয়া, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, সাল্লাম ইবনে সুলাইম আবুল আহওয়াস, বিশর ইবনুল মুফাদ্দাল, আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীস, কায়েস ইবনে রাবী‘, আবু আওয়ানা ও খালেদ ইবনে আব্দুল্লাহ ওয়াসেতী প্রমূখ يحركها -এর স্থলে يشير بها শব্দ বর্ণনা করেন। আমি ‘মুসনাদে আহমাদে’র টীকায় এ সবগুলো বর্ণনার সূত্র-নির্দেশ করেছি। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৮৮৭০)

    শায়েখ নাসিরুদ্দীন রাহিমাহুল্লাহ ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহিহা’ (হাদীস: ৬১৮১)-তে يحركها শব্দটি ‘সহীহ’ হওয়ার কারণ উল্লেখ করে বলেন, “‘ইশারা’ শব্দ ‘তাহরীক’ (আঙ্গুল নাড়ানো) শব্দের বিপরীত অর্থবোধক নয়। বেশি থেকে বেশি এটুকু বলা যায় যে, ‘তাহরীক’ বুঝানোর জন্য ‘ইশারা’ শব্দটি দ্ব্যর্থহীন নয়। কিন্তু বিপরীতও তো নয়।”

    ‘মুতাকাদ্দিমীন’ উলামায়ে হাদীসের কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী ‘শায’ বর্ণনাকে ‘সহীহ’ বলার জন্য কি এই টীকাটি যথেষ্ট?

    নিজের মাযহাবের সমর্থক রেওয়ায়েতকে ‘সহীহ’ বলা আর মুজতাহিদ ইমামগণের অন্যায় সমালোচনা

    অনেক সময় শায়েখ এমন হাদীসকেও ‘সহীহ’ বলেছেন, যা তার মাযহাবের অনুকূলে, যদিও হাদীসটির পক্ষে শক্তিশালী কোনো ‘শাহেদ’ নেই। এ সম্পর্কে হযরত আদী ইবনে হাতেম রাযিআল্লাহু আনহুর হাদীসটি উল্লেখ করছি।

    “যখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ আয়াতে কারীমা তিলাওয়াত করতে শুনলেন:

    اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ “তারা আল্লাহর পরিবর্তে নিজেদের ধর্ম-প-িত ও সন্ন্যাসীদের রব বানিয়ে নিয়েছে ” । (সূরা তাওবা (৯) : ৩১) হযরত আদী রাযিআল্লাহু আনহু আরজ করলেন, আমরা তো তাদের উপাসনা করতাম না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ, তারাও তাদের ধর্ম-প-িতদের উপাসনা করে না। কিন্তু তারা তাদের জন্য কোনো কিছু হালাল করে দিলে তারা তা হালাল মনে করে, আর কোনো কিছু হারাম করে দিলে তা হারাম মনে করে। এটাই তাদের ইবাদত।”

    এ হাদীসকে ইমাম তিরমিজী রহিমাহুল্লাহ ‘জামে তিরমিযী’ (হাদীস : ৩০৯৫)-তে ‘যয়ীফ’ বলেছেন। আর এর পক্ষে কোনো শক্তিশালী ‘শাহেদ’ও নেই। তা সত্ত্বেও শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ ‘সহীহুত তিরমিজী (খ- : ৩, পৃষ্ঠা : ৫৬ হাদীস ২৮৭১)-এ হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। আর ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’ (হাদীস : ৩২৯৩)-এ ‘রুহুল মাআনী’ (খ- : ৫, পৃষ্ঠা : ২৭৬) থেকে আল্লামা আলূসী রাহিমাহুল্লাহর এই বক্তব্য উল্লেখ করেছেন :

    والآية ناعية على كثير من الفرق الضالة الذين تركوا كتاب الله تعالى وسنة نبيه عليه الصلاة والسلام لكلام علمائهم ورؤسائهم، والحق أحق بالاتباع، فمتى ظهر وجب على المسلم اتباعه، وإن أخطأ اجتهاد مقلده.

    “এ আয়াতে কারীমায় ঐ সকল ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের নিন্দা করা হয়েছে যারা তাদের প-িত ও নেতৃস্থানীয় লোকদের কথার ভিত্তিতে কিতাব ও সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অথচ ‘হকে’র অনুসরণ বেশি উপযুক্ত। তাই যখনই ‘হক’ প্রকাশিত হয়ে যাবে মুসলমানদের তা অনুসরণ করা আবশ্যক। যদিও নিজের অনুসরণীয়ের ইজতিহাদকে ভুল বলতে হয়।”

    শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ উপরোক্ত হাদীসের মাধ্যমে মুজতাহিদ ইমামগণের প্রতি কটাক্ষ করেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, আল্লাহকে ছেড়ে ধর্ম-পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের রব বানানো আর মুজতাহিদ ইমামগণের তাকলীদ এককথা নয়। কারণ, ইহুদী-খ্রিস্টানদের ধর্ম-পণ্ডিতেরা তো আল্লাহ তাআলার হারামকৃত জিনিসকে তাদের জন্য হালাল করে দিত। আর ইসলামের মুজতাহিদ ইমামগণ নিজেদের ইজতিহাদের ক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাহকেই ভিত্তিরূপে গ্রহণ করেছেন। ফলে (প্রসিদ্ধ হাদীস অনুযায়ী) যার ইজতিহাদ সঠিক হবে তিনি দুই সাওয়াব পাবেন আর ভুল হলে তার জন্য রয়েছে এক সাওয়াব। মুজতাহিদ ইমামগণকে ইহুদী-খ্রিস্টান ধর্ম-পণ্ডিতদের কাতারে দাঁড় করানো বড়ই অন্যায়।

    ‘তাহকীকে’র অস্পষ্ট ‘মানহাজ’

    ছোট কিছু পুস্তিকা ছাড়া অন্যান্য গবেষণাকর্মে শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহর সুস্পষ্ট কোনো নীতি ছিল না। প্রথম প্রথম তিনি ইমাম সুয়ূতী রহিমাহুল্লাহর ‘আলজামেউল কাবীর’ ও ‘আলজামেউস সগীর’ থেকে ‘যয়ীফ’ বর্ণনাগুলো আলাদা করতেন এবং ‘মাকতাবা জাহিরিয়্যা’য় সংরক্ষিত হাদীসের ‘জুয’গুলোতে ঐ সকল বর্ণনা সম্পর্কে যে আলোচনা পেতেন তা খাতায় লিখে রাখতেন। এভাবে একশ বা তার বেশি হাদীস একত্র হলে একটি ছোট পুস্তিকা আকারে ছেপে দিতেন। তাতে জাল ও বাতিল বর্ণনাও থাকত।

    আমার মতে এ সকল বর্ণনা নতুন করে মানুষের মাঝে প্রচারের তেমন কোনো জরুরত ছিল না। এগুলো তো বিস্মৃতই হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানের লোকেরা এগুলো জানতই না। উদাহরণস্বরূপ:

    عليكم بالعدس فإنه قدس على لسان سبعين نبيا

    “তোমরা ডালকে আবশ্যকীয় বস্তু হিসেবে গ্রহণ কর, কারণ সত্তুরজন নবীর জবানীতে এটি এক পবিত্র খাবার।”(দ্র. সিলসিলাতুল আহাদীসিয যয়ীফা, হাদীস ৫১০)

    এর মতো আরো অনেক বর্ণনা শায়েখ ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিয যয়ীফা’য় সংকলন করেছেন। ভালো হত যদি এসব বর্ণনা বিস্মৃতির মধ্যেই থাকত। তবে হ্যাঁ মানুষের মাঝে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ বর্ণনাসমূহের উপর আলোচনা ও এগুলোর স্বরূপ উন্মোচনে কোনো অসুবিধা নেই। এ ক্ষেত্রে তার প্রয়াস অবশ্যই গুরুত্ব ও প্রশংসার দাবীদার। আল্লাহ তাআলা তাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

    এমনিভাবে ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহিহা’তেও তার কোনো সুস্পষ্ট নীতি ছিল না। এ জন্যই তিনি যে কোনো প্রকারের ‘সহীহ’ বর্ণনা পেয়েছেন তা সিলসিলাতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই বর্ণনাগুলোতে ঐক্যের একমাত্র সূত্র এই যে, এগুলো তার নিজস্ব তাহকীক অনুযায়ী ‘সহীহ’। আমার মতে শুধু এটুকু ব্যাপার হাদীসের একটি আলাদা কিতাব সংকলনের উপযুক্ত কারণ হতে পারে না। তিনি যদি হাদীসগুলোকে বিষয়ভিত্তিক কোনো বিন্যাসে সংকলন করতেন তাহলে ভালো হতো।

    হাদীসের শ্রেণীবিভাগ ও সনদ বিলুপ্ত করা

    তার আপত্তিকর কর্মগুলোর একটি এই যে, তিনি চার ‘সুনানে’র (‘সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ) ‘সহীহ’ ও ‘যয়ীফ’ হাদীসগুলো পৃথক পৃথক প্রকাশ করার সময় সেগুলোর সনদ বাদ দিয়ে দিয়েছেন। অথচ ইলমী আমানতের দাবি ছিল সনদ বাদ না দেওয়া। কারণ, ‘সহীহ’ ও ‘যয়ীফ’ চেনার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে সনদ। আমার মনে হয় এ পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি যেন বলছেন, সবার কর্তব্য, তাঁর গবেষণার উপরই নির্ভর করা এবং তাঁর সিদ্ধান্তকে পর্যালোচনার ঊর্ধে জ্ঞান করা।

    তাছাড়া (সুনানের কিতাবসমূহের) ‘সহীহ’ ও ‘যয়ীফ’ হাদীসের এই পৃথকিকরণ নিতান্তই ‘তাকাল্লুফ’ ও অর্থহীন। হয়ত মূলে চার ‘সুনানে’র ‘যয়ীফ’ হাদীসগুলোকে অকেজো সাব্যস্ত করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। অথচ এই ‘যয়ীফ’ হাদীসগুলোর অনেকগুলো ‘সহীহ’ হাদীসের ‘শাহেদ’। তাই এগুলোকে ‘সহীহ’ হাদীস থেকে এভাবে পৃথক করা উচিত নয়।

    বাস্তবতা হল, কিতাবগুলো সংকলনের ক্ষেত্রে স্বয়ং ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী, ইমাম ইবনে মাজাহ রাহিমাহুমুল্লাহরও এ সংকল্প ছিল না। কারণ তারা চাইলে শুধু ‘সহীহ’ হাদীসও সংকলন করতে পারতেন। এ কারণে আমি ‘সুনানে’র উপর শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহর এই কাজকে অনুচিত কর্ম গণ্য করি।

    বর্ণনায় শুদ্ধাশুদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দানের ক্ষেত্রে অন্যান্য ইমামগণের বক্তব্যের প্রতি ঔদাসীন্য

    আরেকটি আপত্তিকর বিষয় হল, এমন কোনো বর্ণনা, যাকে অন্যান্য ইমাম ‘যয়ীফ’ বলেছেন সেই বর্ণনাকে ‘সহীহ’ বলার ক্ষেত্রে তিনি ইমামগণের বক্তব্য উল্লেখ করেন না। যদি তিনি ঐ বক্তব্যগুলোও উল্লেখ করে দিতেন তাহলে তার ও অন্যান্য ইমামগণের সিদ্ধান্তের মাঝে তুলনা করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হত। কিন্তু তিনি তা করেননি। তার কাজ দেখে মনে হয়, তিনি লোকদের শুধু তারই মতামত অনুসরণে অভ্যস্ত করতে চাইতেন, যা কোনোক্রমেই ন্যায়সঙ্গত নয়।

    এ কারণে আমার মতে শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহর ইলমী কাজগুলোর পর্যালোচনা হওয়া উচিত আর তা নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে হতে পারে।

    ১. যেসব হাদীসকে তিনি ‘সহীহ’ বা ‘যয়ীফ’ বলেছেন এবং তার পূর্বে মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণও ‘সহীহ’ বা ‘যয়ীফ’ বলেছেন সেগুলোকে আপন অবস্থায় রেখে দেওয়া হবে।

    ২. যেসব হাদীসের ব্যাপারে মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণের মতামতের বিপরীতে শায়েখ রাহিমাহুল্লাহ ‘সহীহ’ অথবা ‘যয়ীফ’ হওয়ার হুকুম দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে উভয় হুকুমের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হবে এবং দলীল-প্রমাণ ও শাস্ত্রীয় লক্ষণাদির আলোকে ভিন্ন বা অভিন্ন হুকুম বর্ণনা করা হবে।

    আবারও বলছি, শায়েখ নাসিরুদ্দীন রাহিমাহুল্লাহ ‘মুহাদ্দিস’ ছিলেন। আমি বলছি না যে, তিনি ‘হাফেজুল আসর’ যুগশ্রেষ্ঠ হাফেজুল হাদীস ছিলেন। তিনি তার জীবনের প্রায় ৬০ বছর ইলমে হাদীসের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনায় ব্যয় করেছেন। এই দীর্ঘ নিমগ্নতা তার মাঝে বেশ ভালো জানাশোনা সৃষ্টি করেছিল। তাই এই ময়দানে তার শাস্ত্রীয় যোগ্যতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা অন্যায় হবে।

    শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহর ফিকহী মাকাম

    কিন্তু ফিকহ শাস্ত্র? তো কোনো মাসআলায় শায়েখের দলীল-প্রমাণের উপর আস্থাশীল হয়ে আমি তা গ্রহণ করেছি বলে আমার মনে পড়ছে না। কেননা, ফিকহ তার ‘বিষয়’ ছিল না এবং হাদীস শাস্ত্রের মতো ফিকহ শাস্ত্রের জন্য একান্ত নিমগ্নতার সুযোগ তার হয়নি। মূলত তিনি পূর্ববর্তীদের কিছু বিচ্ছিন্ন মতামতকে একসূত্রে গেঁথে তার উপর নিজের ফিকহী ‘মানহাজে’র ভিত্তি স্থাপনে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

    উদাহরণস্বরূপ, এক. ব্যবসা-পণ্যে যাকাত ওয়াজিব না হওয়ার বক্তব্যটিই ধরুন। তারা আগে আল্লামা ইবনে হাযম রাহিমাহুল্লাহ ‘আলমুহাল্লা’ কিতাবে (খ- : ৫, পৃষ্ঠা : ২৩২-২৪০) এ মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম শাওকানী রাহিমাহুল্লাহ ‘আদদুরারুল বাহিয়্যা (পৃষ্ঠা : ২২)-এ এবং নওয়াব সিদ্দীক হাসান রাহিমাহুল্লাহ তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আররাওযাতুন নাদিয়্যা’ (খ- : ১, পৃ. ২৮৬)-এ ইবনে হাযম রাহিমাহুল্লাহর অনুসরণ করেছেন। আর এ বিষয়ে তাদের কাছে এ ছাড়া আর কোনো দলীল নেই যে, ব্যবসা-পণ্যের যাকাতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদীস প্রমাণিত নেই।

    দুই. যমীন থেকে উৎপন্ন কোন্ কোন্ ফসলে যাকাত ওয়াজিব হবে? শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম শাওকানী[6] রাহিমাহুল্লাহর অনুসরণে এ মাসআলাকে শুধু চার শ্রেণীর ফসলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন; গম, যব, খেজুর ও কিসমিস। কারণ, নস শুধু চারটি বস্তুর ক্ষেত্রেই প্রমাণিত। অন্যান্য বস্তুকে এগুলোর উপর কিয়াস করা ঠিক হবে না। অথচ অধিকাংশ ফকীহ ব্যবসার পণ্যে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার কথা বলেছেন। তাছাড়া ইমামগণ নিজ শহরের অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যকে চার শ্রেণীর ফসলের উপর কিয়াস করেন (এবং সেগুলোতেও যাকাত ওয়াজিব হওয়ার কথা বলেন)।

    আমি অবাক হয়েছি যে, শায়েখ উপরের মত কীভাবে অবলম্বন করলেন! তার তো জানা আছে যে, ব্যবসায়ী তার সম্পদ সিন্দুকে জমা করে রাখে না। বরং ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সবসময় ব্যবসার পণ্যে তা খাটাতে থাকে। তাহলে কি এ কথা বলা যাবে যে, ব্যবসায়ী শুধু ঐ সম্পদের মালিক যা সে সিন্দুকে জমা করে রাখে? অথচ তার গুদাম ব্যবসায়ীর পণ্যে ভরপুর? এ থেকে বোঝা যায় যাকাত ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়তের যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সে ব্যাপারে শায়েখের ধারণা ছিল সীমাবদ্ধ এবং ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কেও তার তেমন জানাশোনা ছিল না।

    তিন. শায়েখের ‘শায’ ও বিচ্ছিন্ন বক্তব্যগুলোর একটি ছিল, নারীদের জন্য স্বর্ণের গোলাকার অলঙ্কার (আংটি বা কানের দুল) পরিধান করা হারাম। এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তিনি আলমুহাল্লায় উল্লেখিত ইবনে হাযম রাহ.-এর বক্তব্যের তাকলীদ করেছেন। তিনি ‘সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা’ (হাদীস ৩৩৭)-এ নিজের ধারণা অনুযায়ী হারাম হওয়ার দলীল উল্লেখ করার পর লেখেন,

    “কোনো মুসলমান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত কথার বিপরীতে অন্য কারো বক্তব্যের দিকে মনোযোগী হতে পারেন না। চাই তিনি ইলম, সম্মান ও আমলের ক্ষেত্রে যত উঁচূ মর্যাদারই অধিকারী হোন না কেন। কারণ তিনি তো আর ‘মাসূম’ নন। এ বিষয়টিই আমাদেরকে আমাদের অবস্থানে থাকতে উৎসাহিত করেছে। (আমাদের কর্মপন্থা হল) কিতাব ও সুন্নাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে এছাড়া অন্য সবকিছুকে বর্জন করতে হবে।”

    তো তার ধারণায় হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ের পর আর কোনো কাজ থাকে না। অথচ এ খুবই অপরিণত ধারণা। ‘মাআযাল্লাহ’! মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণ ‘সহীহ’ হাদীসের তরককারী কখনোই ছিলেন না। বরং তারা প্রতিটি হাদীসকে যথাযথ মান প্রদান করতেন। যেমন, হযরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহুর এ রেওয়ায়েতটি দেখুন, কয়েকজন সাহাবী রাযিআল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের নিকট এ আবেদন করলেন, আপনি আমাদের জিনিস-পত্রের দাম নির্ধারণ করে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন,

    إن الله هو المسعر، القابض، الباسط، الرزاق.

    “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলাই মূল্য নির্ধারণকারী, (রিযিক) হ্রাস ও বৃদ্ধিকারী এবং রিযিক দানকারী।”

    এই হাদীস ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ ‘জামেউত তিরমিযী’ (হাদীস ১৩১৪)-এ উল্লেখ করেছেন। তারপরও মুজতাহিদ ইমামগণ ‘বাজার দর নিয়ন্ত্রণে’র কথা বলেছেন। তাদের কথা হল, অবশ্যই এ হাদীস সত্য এবং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী। কিন্তু তা ‘আম মাখসূস মিনহুল বায’-এর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ তা বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারা এ হাদীসকে ঐ অবস্থার জন্যই নির্ধারিত করেছেন, যখন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে ন্যায়পরায়ণতার সাথে লেনদেন করবে এবং বর্তমান যুগের মত তাদের মাঝে লোভ ও ধোকার মানসিকতা থাকবে না। অবশ্যই ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে বাজারদর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সমাজব্যবস্থার অধঃপতনের পরিস্থিতিতে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক হয়ে পড়ে।

    শায়েখ মুহাম্মাদ বাখীত আল মুতীয়ী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহর ‘আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব’ কিতাবের ‘তাকমিলা’য় (খ- : ১৩, পৃ. ৩৮-৪২)-এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন বক্তব্য একত্র করেছেন। কিন্তু শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ এগুলোর দিকে কোনোরূপ ভ্রুক্ষেপই করেননি। তার মতে, (সনদের দিক থেকে) ‘সহীহ’ হাদীসের বিরোধিতা জায়েয নয়। অথচ পূর্বসূরী ইমামগণও তো ‘সহীহ’ হাদীসের বিরোধিতা করতেন না। বরং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসকে ব্যাখ্যা করতেন। এবং এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দায়িত্বের অনুসরণ করতেন। (যা এ আয়াতে কারীমায় উল্লেখ করা হয়েছে।) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

    وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ

    “(হে নবী!) আমি আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে সেই সব বিষয় ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে।” (সূরা নাহল (১৬) : ৪৪) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যকে সুস্পষ্ট করে দিবেন। মুজতাহিদ ইমামগণও এই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও মর্ম-উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট করার দায়িত্ব পালন করতেন। তবে হাঁ, তারা ভুলের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। তাদের কাজে ভুল-শুদ্ধ উভয়েরই সম্ভাবনা থাকত। তবে ‘নুসূসে’র মর্ম-উদ্দেশ্য বুঝার জন্য তারা যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা শরীয়তের সঠিক বুঝের দিকে পৌঁছে দেয়।

    আমি আগেও বলেছি, মুজতাহিদ ইমামগণ যদি কোন হাদীসের অন্যথা করেও থাকেন তবে দেখবেন সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও কেউ এর অন্যথা করেছেন। আর তারা এমন হাদীসকেই গ্রহণ করেন যার উপর কোনো না কোনো সাহাবীর আমল রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এ হাদীসটিই দেখুন,

    من مس ذكرَه فليتوضَّأ “যে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে সে যেন অযু করে।” এ হাদীস ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ ‘মুসনাসে আহমদে’ (হাদীস : ২৭২৯৩) উল্লেখ করেছেন। (সনদের ভিত্তিতে) হাদীসটি ‘সহীহ’। এ হাদীসের উপর ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর আমল। এখন আরেকটি হাদীস দেখুন: إنما هو بضعة منك “এ তো তোমার শরীরের একটি গোস্তের টুকরামাত্র।” এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ ‘মুসনাদে আহমাদে’ (হাদীস : ১৬২৮৬) উল্লেখ করেছেন। (সনদের বিচারে) এ হাদীসটি ‘হাসান’। ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এ হাদীসকে গ্রহণ করেছেন। ফলে ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর নিকট ‘লজ্জাস্থান স্পর্শ করা’ অযু ভঙ্গের কারণ। আর ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহর নিকট অযু ভঙ্গের কারণ নয়। উভয় ইমাম নিজেদের মতামতের ক্ষেত্রে সহীহ হাদীসের উপরই নির্ভর করেছেন। এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের অনেকে এই হাদীস গ্রহণ করেছেন আবার অনেকে ঐ হাদীস গ্রহণ করেছেন। এ (ফিকহী) মতপার্থক্য তো সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই চলে আসছে। আর আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করে ইরশাদ করেছেন: كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ

    “তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে।” -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১১০

    আমার বিশ্বাস ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ শুধু আচরণের ক্ষেত্রে নয়। রবং ‘ইলম’ও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, আচরণের ভিত্তি তো ‘ইলম’ এবং তা ‘ইলমে’র ফলাফল। সুতরাং মতপার্থক্য যে পর্যন্ত চিন্তা ও বুদ্ধির সীমায় থাকবে ঐ পর্যন্ত তা ‘বৈচিত্র্য’ ও ‘উন্মোচন’। ইসলাম এটা পছন্দ করে এবং এতে উৎসাহ প্রদান করে। তবে মতপার্থক্য যখন চিন্তা ও বুদ্ধির সীমানা পেরিয়ে হৃদয় ও অন্তরে প্রবেশ করে এবং পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদ, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষের মত আত্মিক ব্যাধি সৃষ্টি করে, তখন শরীয়তের দৃষ্টিতে তা নিষেধ হয়ে যায়। ইসলাম একে কখনোই পছন্দ করে না।

    শায়েখ নাসীরুদ্দীন রাহিমাহুল্লাহর ‘সালাফিয়্যাত’ না শরীয়তের ‘নুসূসে’র গভীর উপলব্ধির ভিত্তিতে ছিল, না প্রচলিত তাকলীদের ক্ষেত্রে অতি আবদ্ধতা দূর করার জন্য ছিল। বরং এ হল ‘নুসূসে’র আক্ষরিক অনুসরণ। (বর্তমান সময়ে) যা দাউদে জাহেরী ও ইবনে হাযম রাহিমাহুমাল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ তো এমন অনুসরণ যেখানে অন্য কোনো ব্যাখ্যা বা সম্ভাবনার কোনো স্বীকৃতি নেই।

    বিরোধী পক্ষের সাথে কঠোর আচরণ

    এত কিছু সত্ত্বেও আমি তাকে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ মনে করি। যিনি ধন-সম্পদ ও মান-মযার্দার পরিবর্তে খালেছ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করেছেন। শায়েখের ন্যায়নিষ্ঠার পূর্ণ স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও দ্বিমত পোষণকারীদের সাথে তার কঠোর অবস্থান -যা সাধারণত আহলে ইলমের মাঝে দেখা যায় না- আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়। কোনো মাসআলায় আপনি তার বিরোধিতা করাই তার নিকট (আপনাকে মৌখিক আক্রমণ করার জন্য) যথেষ্ট। তারপর আপনাকে এমন সব বাক্যে সম্বোধন করবেন যেমনটি তিনি সচরাচর তার বিরুদ্ধাচরণকারীদের বেলায় করে থাকেন। যেমন, ‘জমহুর’ তথা অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরামের মতামত গ্রহণকারীকে এভাবে স্মরণ করেন: هذا جمهوري (এ জমহুরের অনুসারী)। মনে হয় যেন এটা কোনো মহাপাপ। এমনিভাবে هذا لا يفقه (এর তো কোন বুঝ-বুদ্ধি নেই), هذا ليس بفنه(সে তো এ বিষয়ের ব্যক্তি নয়) ও هذا ليس عنده تحقيق (তাহকীক বলতে কোনো কিছু তার কাছে নেই)। এছাড়াও এমন এমন বাক্য ব্যবহার করেন, যা একজন আলেম তো দূরের কথা সাধারণ মানুষের মুখেও শোভা পায় না।

    শায়েখের এই কঠোরতা তার অনুসারীদের মাঝেও সংক্রমিত হয়েছে। তার সিদ্ধান্তগুলোর কারণে বর্তমানে মসজিদে মসজিদে যে ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে তা এখন ব্যাপক আলোচ্য বিষয়, এর কারণে লোকেরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হচ্ছে।

    আমাদের জানামতে মুতাকদ্দিমীন ইমামগণও নিজেদের মতামত প্রকাশ করতেন। তবে অন্যান্য আহলে ইলমের মতামতের পরিপূর্ণ ও যথাযথ সম্মানও করতেন। তারা ভিন্নমত পোষণকারীদের ব্যাপারে আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করতেন না। ইমামগণের এ কথা তো সকলেই জানেন, যা তাদের থেকে বর্ণিত ও প্রসিদ্ধ:

    رأئي صواب يحتمل الخطأ، ورأي غيري خطأ يحتمل الصواب

    (আমার মতামত সঠিক, তবে ভুল হওয়ারও সম্ভাবনা আছে আর অন্যদের মতামত ভুল, তবে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।) ইসহাক ইবনে রাহুইয়াহ রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহর এই উক্তিও তো আমাদের স্মরণ আছে:

    ما عبر جسر بغداد أحد أعلم من إسحاق بن راهويه، غير أننا نخالفه في أشياء

    (ইসহাক ইবনে রাহুইয়াহ রাহিমাহুল্লাহর চেয়ে বড় আলেম বাগদাদের পুল অতিক্রম করেননি। তবে কিছু মাসআলায় তার সাথে আমাদের দ্বিমত রয়েছে।)

    শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহর এই কঠোর অবস্থান হয়ত ইমামগণের لا ينكر المختلف فيه (সালাফের মাঝে ইখতিলাফী মাসআলায় আপত্তি চলে না)-এ নীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলাফল। অর্থাৎ ইখতিলাফী মাসআলায় কোনো মুজতাহিদের উপর আপত্তি করা ঠিক নয়। কিন্তু শায়েখের কর্মপন্থা এ নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি ইখতিলাফী মাসআলার ক্ষেত্রেও তাদের উপর আপত্তি করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে মাফ করুন। তাঁকে রহমতের চাদরে ঢেকে রাখুন। 



    [অনুবাদ : আবু মাইসারা মুনশী মুহাম্মাদ মহিউদ্দিন]

    [1]বিস্তারিত দেখুন :

    الألباني شذوذه وأخطاؤه، لمولانا حبيب الرحمن الأعظمي، مكتبة دار العروبة كويت، 1404هـ- 1984 م

    خطبة الحاجة ليست سنة في مستهل الكتب والمؤلفات، للشيخ عبد الفتاح أبوغدة رحمه الله، دار البشائر الإسلامية بيروت، 1429هـ،2008م

    التعريف بأوهام من قسم السنن إلى صحيح وضعيف، للشيخ محمود سعيد ممدوح, دار البحوث للدراسات الإسلامية وإحياء التراث دبئى, 1421هـ, 2000م

    تنبيه المسلم إلى تعدي الألباني على صحيح مسلم، للشيخ محمود سعيد الموقر.

    إباحة التحلي بالذهب المحلق للنساء والرد على الألباني في تحريمه، للشيخ اسماعيل الأنصاري-رحمه الله-

    تصحيح حديث صلاة التراويح عشرين ركعة والرد على الألباني في تضعيفه، للشيخ اسماعيل الأنصاري -رحمه الله -

    [2] মিশকাতুল মাসাবীহ, তাহকীক শায়েখ আলবানী, কিতাবুল ঈমান, বাবুল ঈমান বিলকদর, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৯, হাদীস ১১২, আলমাকতাবুল ইসলামী, ১৩৯৯ হি., ১৯৭৯ ঈ.

    [3] ৩ সহীহুল জামিইস সাগীর, শায়েখ আলবানী, খ- : ২, পৃষ্ঠা : ১২০০, হাদীস ৭১৪২, আলমাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৮ হি., ১৯৮৮ ঈ.

    [4] মুসনাদে আহমাদ, তাহকীক শুআইব আরনাঊত, হাদীস ১৯৬৭৮

    [5] তার সম্পর্কে এই একই কথা আরেকজন সমকালীন আলেম প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (মৃত্যু ১৪১৭ হি.) রহিমাহুল্লাহও লিখেছেন-

    وإنما أدى الألباني إلى هذا الشذوذ اعوجاج فهمه لبعض النصوص، لضعف معرفته بأصول الفقه، بل أصول الرواية والدراية أيضاً (خطبة الحاجة ليست سنة في مستهل الكتب المؤلفات، ص ৫২)

    “কিছু নুসূসের ক্ষেত্রে তার স্থূলবুদ্ধি তাকে ‘শুযুয’ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এর কারণ হল, উসূলে ফিকহ বরং উসূলুর রিওয়ায়া ও দিরায়া সম্পর্কে পর্যাপ্ত জানাশোনা না থাকা।”

    [6] নাইলুল আওতার শরহু মুনতাকাল আখবার মিন আহাদীসি সাইয়্যিদিল আখইয়ার, (দারু ইবনিল কাইয়্যিম) খ-: ৪, পৃষ্ঠা: ১৬১
    إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ ‏

    "যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌছি যুদ্ধের জন্য, এটি তাদের জন্য দুর্বিষহ সকাল যাদেরকে পূর্বে সতর্ক করা হয়েছিল।"

    (সহিহ বুখারি, ৩৭১)

  • #2
    মাশাআল্লাহ।

    Comment

    Working...
    X