Announcement

Collapse
No announcement yet.

শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসীর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসীর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ।

    আপনি কি দয়া করে নিজেকে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন ?
    আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি যিনি সমস্ত প্রশংসার যোগ্য ; শান্তি এবং রহমত বর্ষিত হোক আল্লাহ্*র রাসূল(সাঃ) এর উপর যারা তাঁকে সমর্থন করে ।
    আমি ১৩৭৮ হিজরিতে (১৯৫৯ইংরেজী ) প্যালেস্টাইনের নাবালুস প্রদেশে জন্মগ্রহণ করি এবং আমার বয়স যখন তিন অথবা চার বছর তখন আমি আমার পরিবারের সাথে শহরটি ত্যাগ করি এবং কুয়েত বসবাস শুরু করি,সেখানে আমি আমার হাইস্কুল অধ্যয়ন শেষ করি । তারপর আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল মদীনাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ‘শরীয়াহ’-র উপর অধ্যয়ন করা । যাই হোক আমার পিতা-মাতাকে খুশী করার জন্য আমি ইরাকের উওরাংশে অবস্থিত আল-মাওমুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য যাই । এই সময়েই আমি ইসলামের সাথে নিজের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাই আমি অনেক দলের সংস্পর্শে এসেছিলাম । আমার উপর ভাইদের এবং শায়েখদের যে অনুগ্রহ রয়েছে আমি তা ভুলতে পারব না ।

    আমি কুয়েত এবং হিযাজ-এ ভ্রমণ করেছিলাম যেখানে জ্ঞান পীপাসু ছাএ এবং শায়েখদের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল যারা আমাকে ইসলামী জ্ঞান উপলব্ধির কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন । তবে তারা আমার কিছু প্রশ্নের উওর দিতে পারেননি যেগুলো আজকের তরুণ সমাজ জানতে উদগ্রীব ;যেমন পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঠিক উপলব্ধি,বর্তমান পরিস্থিতিতে কিভাবে বিভিন্ন ক্ষেএে সঠিক হুকুমসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব, আমাদের সময়কার শাসকদের ব্যাপারে আমাদের প্রকৃত অবস্থান কি, সেই পথের সত্যিকার দিক নির্দেশনাই বা কি যা এই উম্মতের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে, ইত্যাদ । পরবর্তীতে আমি নিজেকে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এবং তাঁর ছাএ ইবনুল কাইয়্যিম রচিত বইসমূহের প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত করি।
    আমি কয়েক বার পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান সফর করেছি যারা ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিল। আমি সেখানে কিছু শিক্ষামূলক এবং দা’ওয়াহ কার্যক্রমে জড়িত ছিলাম । সেখানে থাকাকালীন আমি ‘মিল্লাত ইব্রাহীম’ ( ইব্রাহীম(আঃ) এর বিশ্বাস ও মূল্যবোধ) বইটি রচনা করি।
    ‘মুকাফিরাত’(মুকাফিরাত অথবা তাকফীরকারী হচ্ছে চরমপন্থী যারা বিশ্বাস করে যে , যদি একটি লোক বা দল একটি কবীরা গুনাহ করে এবং আন্তরিকভাবে তওবাহ না করে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে । তাদের কেউ কেউ আজকের মুসলিম সমাজের লোকদের অমুসলিম হিসাবে গণ্য করে । আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামাহ মুসলিম পাপীদের কাফির হিসাবে গণ্য করে না । )-দের সাথে আমার কিছু বিতর্ক হয়েছিল যা কিছু গ্রন্থের রচনার খোরাক জোগায়; বইগুলো এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত আছে । এছারাও আমার সাথে কিছু ‘ইরজাঈ’ ( ‘ইরজাঈ’ হচ্ছে আল-মরজিয়াহ দলের ধর্মমত যারা বিশ্বাস করে যে ঈমানের বিশুদ্ধ সাক্ষ্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ একটি মানুষকে মুসলিম বানাবে তার পাপ কার্যাবলী অগ্রাহ্য । অর্থাৎ একজন মানুষের কথা ও কাজ ঈমানে সম্পূর্ণ অংশ নয়, কিন্তু বাহ্যিক অংশ । আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ অপরিহার্যভাবে আমলকে ঈমানের অংশ বলে বিশ্বাস করে, এবং ঈমানের বিভিন্ন স্তর ও প্রকাশ রয়েছে।) দলের সাক্ষাত এবং বিতর্ক হয়েছিল , এ ব্যাপারে কিছু গ্রন্থ রচিত হয়েছে ; যেমন, ‘সমকালীন মুরজিয়াদের কুফরের পর্দা উন্মোচন করে চক্ষু শীতল করা’।
    পরিশেষে আমার গ্রেফতারের দুই বছর পূর্বে ১৯৯২ সালে আমি জর্ডানে বসবাস শুরু করি । আমি এই দেশটিকে ইরজাঈ ফিরকার সাথে ঝাঁক বেঁধে চলতে দেখেছি যারা উদ্দেশ্যহীনভাবে আনন্দে ঘুরে বেড়ায় । আমি তিনটি ভিন্ন জায়গায় শিক্ষাদানের মাধ্যমে এই বরকতময় দাওয়াহ শুরু করি, এর মধ্যে দু’টি পাঠ ছিল জনসম্মুখে এবং তৃতীয়টি ছিল ব্যক্তিগত । পাঠগুলোতে আমি গুরুত্ব দিয়েছি তাওহীদের সঠিক জ্ঞান এর প্রভাব ও এর দায়িত্বের উপর; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শ্রতসমূহ, বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ এবং এর মজবুত বন্ধনসমূহের উপর । পাঠগুলো ইরজাঈ ফিরকার উপস্থাপিত সন্দেহগুলো খণ্ডন করে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট করে যেগুলোর ব্যাপারে অনেক মানুষ অজ্ঞ ।
    এই পাঠগুলো বিধান সায় নির্বাচনের সময় হয়েছিল । পরবর্তীতে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের সমর্থক এবং আমার ছাএদের মধ্যে অকস্মাৎ আলোচনা জমে ওঠে । এই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার ছিল । আর এ কারণেই আমি এই লোকদের উপস্থাপিত প্রধান প্রধান যুক্তিসমূহ খণ্ডন করি । আমি তাড়াতাড়ি প্রস্তুতকৃত এই প্রবন্ধের নাম দিয়েছিলাম ‘গণতন্ত্র একটি দ্বীন’ এবং ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য দ্বীন অন্বেষণ করে, তার থেকে এটা কখনো গ্রহণ করা হবে না’। আমার প্রবন্ধটি ছাপাই এবং বিতরণ করি । অধিকন্তু আমি একটি জুময়ার খুৎবা দিয়েছিলাম যেটাকে আমি আত-তাওহীদের দা’ওয়াহ ব্যাক্ষা করি, এবং আমি প্রকাশ্য জনসম্মুখে মানব রচিত আইন বর্জন করার জন্য, বিধান সভা অস্বীকার করার জন্য এবং এটাতে অংশগ্রহণ না করার জন্য লোকদেরকে আহ্বান জানাই ।
    আমি আমাদের দা’ওয়াহ-র পরিধি বাড়ানোর জন্য উদগ্রীব ছিলাম, তাই ভাইদের নিয়ে আমি দেশটির উত্তর এবং দক্ষিণে সফরে রওয়ানা হয় । আমরা আমাদের কিছু ভাইদের সাথে সাক্ষাত করি যারা আফগান জিহাদে অংশগ্রহণ করছিল এবং যাদের দা’ওয়াহ-র ব্যাপারে ভাল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল । আমরা তাদেরকে আমাদের লিখিত গ্রন্থাদি প্রদান করি এবং তাদেরকে দা’ওয়াহর গতি ও এর গুরুত্ব বৃদ্ধির জন্য অনুপ্রাণিত করি ।
    এই দা’ওয়াহ-র বয়স অল্প হওয়া সত্ত্বেও এটা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মনযোগ আকর্ষণ করে । এটা ইরজাঈ দল এবং সরকারের গোলামদের কাছেও অসহনীয় ছিল । যেহেতু প্রত্যেক চক্রন্তকারী নিজস্ব দূরত প্রক্রিয়ায় এই দা’ওয়াহ-র সাথে আচরণ করে । সরকারের গোলামরা এই দা’ওয়াহ-র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দারুণভাবে নিয়োজিত ছিল এবং আমাদের ভাইদের ‘ তাকফীরকারী’ এবং ‘চরমপন্থি’ খেতাব দিয়ে অভিযুক্ত করছিল । এসব খেতাব ইরজাঈ দলগুলো সত্যের অনুসরণকারী লোকদের গালি দেওয়ার জন্য অহরহ ব্যবহার করে থাকে ।
    তারপর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাদের ভাইদেরকে খুঁজতে আরম্ভ করে এবং একের পর এক গ্রেফতার করতে শুরু করে । তারা আমাদের ভাইদেরকে এই দা’ওয়াহ-র ব্যাপারে, আমার ব্যাপারে, আমার দেয়া পাঠগুলোর ধরনের ব্যাপারে এবং যে আদর্শের প্রতি আমি আহ্বান করছি সেগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে । এইসব ঘটনাবলী আমার কাছে খুব সাধারণ ছিল এবং যে কোন মুহূর্তে আমি এটার জন্য অপেক্ষা এবং প্রত্যাশা করছিলাম যেহেতু এটাই হচ্ছে এই পথের জন্মগত বৈশিষ্ঠ্য । আল্লাহ্*র শত্রুরা যেকোনো সংস্থা বা দলের স্বীকার করে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ এটি ইরজাঈ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, কারণ তারা গ্রেফতার হওয়া আমাদের কিছু ভাইদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিল; ‘ কেন তোমরা তোমাদের শিক্ষা আলি-হালাবী, আবূ-শাক্বরাহ অথবা আল-আলবানি এবং অন্যান্যদের অনুসরণ কর না ? একজন সন্ত্রাসীর জন্য তোমরা এইসব শায়খদের পরিত্যাগ করেছ ?
    এমন দা’ওয়াহ-কে মুক্তভাবে ছড়াতে দেওয়া হয় না যেটি নবীদের পথকে অনুসরণ করে, ইবরাহীম(আ-এর মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং আত-তাওহীদকে অজ্ঞাত অবস্থা হতে উদ্ধার করে । এই দাবীর সমর্থনে রয়েছে । নবুওতের সূর্যোদয়ে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ওয়ারাকাহ বিন নাওফালের উক্তি, ‘অতীতে নিই (অর্থাৎ নবী) তোমার মত কিছু (অর্থাৎ অহী) নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শ্ত্রুতা করা হয়েছে। ‘ সুতরাং সেই ব্যক্তি আল্লাহ্*র শত্রুদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হবে না যে প্রেরিত বাণী (অর্থাৎ দা’ওয়াহ) পৌঁছেনি এবং অবশ্যই তার মধ্যে ত্রুটি, বিপথগামিতা বা পথভ্রষ্টতা থাকবে ।
    আমার ভাইয়েরা এবং আমি নিজেদেরকে আত্মসমর্পণ না করার প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছি । আমাকে গ্রেফতারের খোঁজে সাতবার বাড়ি ভেঙ্গে অনুসন্ধান করে জোর করে আমার অনেক বই, কাগজপত্র, লিখিত গ্রন্থাদি এবং যা কিছু তাদের ইচ্ছা হয়েছে বাজেয়াপ্ত করেছে । পুলিশের প্রত্যেকটি অপ্রত্যাশিত অভিযানে তারা দাবি করত যেন আমি নিজেকে ফিরিয়ে আনি ।
    পরিশেষে আমি একদল ভাইয়ের সাথে গ্রেফতার হই, এদের মধ্যে কয়েকজন আমার সংগৃহীত কিছু বিস্ফোরক ব্যবহার করে নদীর ওপারে ‘প্যালেস্টাইনে’ গিয়ে একটি গুপ্ত হামলার ব্যাপারে আমার কাছে ফতোয়া চেয়েছিল । যদিও এরূপ হামালার বিরোধিতা করি না তারপরও আমি বলি যে, এই অবস্থায় এই দেশে আত-তাওহীদের দা’ওয়াহ, ধৈর্য ধারন করা এবং এর জন্য কঠোরভাবে চেষ্টা করা বেশী জরুরী । এর কারন হচ্ছে (ইহুদীদের বিরুদ্ধে এরূপ হামলায় অনেক সমর্থন রয়েছে বিশেষ করে এই দেশে,প্যালেস্টাইনের সাথে এর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে । যেখানে তাওহীদের দা’ওয়াহ-র সমর্থন রয়েছে অল্প সংখ্যক যারা কাফির নেতাদের সাথে জিহাদ করার জন্য অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে । বাস্তবে এ সমস্ত বিশ্বাস ঘাতকরা ইসরাঈলের রক্ষাকর্তা এবং তাদের যারা এটিকে মুসলিম বিশ্বের হৃদয়ে স্থাপন করেছে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কাফেরদের দ্বারা আমাদের সম্পদ ও ভাগ্যকে ধ্বংস করার সুযোগ করে দিয়েছে ।
    অবশ্যই আল্লাহ্* সত্য বলেছেন,
    ‘ওরা তার বিরুদ্ধে একটি ফন্দি আঁটতে চাইলো, আর আমি তাদের (উল্টো ) ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম’। (সূরা আম্বিয়া ৭০আয়াত) ।
    আল্লাহ্*র শত্রুদের এই গ্রেফতার ও (দা’ওয়াহ) গোপন করার কৌশল এই বিষয়কে এবং তাদেরই দ্বারা সৃষ্ট প্রচার মাধ্যমের বিক্ষোভকে বিবর্ধিত করে তুলে যেটা আমাদের দা’ওয়াহ প্রকাশ করতে, এর বৃদ্ধি ও প্রসার ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে, আল্লাহ্*র অনুগ্রহে, পকৃতপক্ষে খারাপ সময়ে আল্লাহ্*র পরিকল্পনার মধ্যে অনেক বেশি কল্যাণ রয়েছে যা ভাল সময়ে বিদ্যমান থাকে না ।
    আল্লাহ্* আমাদের হেদায়েত করেছেন এবং গ্রেফতারের প্রথম মুহূর্ত থেকে আমাদের হৃদয়কে সত্যের উপর অটল রেখেছেন । কোন রকম ধোঁকা বা অস্পষ্টতা ছাড়াই তাগুতের হুকুম এবং তাদের বিধান থেকে আমরা আমাদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করি । তখন জেলে এবং কোর্টরুমে নিয়মিত খুৎবা, লেখা এবং পাঠের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান সুসংহত হয়েছিল । যা অত্যন্ত সফলভাবে আল্লাহ্*র শত্রুদের রাগান্বিত করে, তারা তাদের বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া তাদের প্রতি যারা আমাদেরকে চিনত, আমাদের বই পড়ত অথবা আমাদের সাথে যুক্ত ছিল ।
    ফলশ্রুতিতে আমাদের ভাইয়েরা সরকারী গুপ্তচর বিভাগের নিঃসঙ্গ কারাগারে বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দীর্ঘসময় ধরে বাস করে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই দেশে বন্দীদের ক্ষেত্রে পূর্বে এরূপ আচরণ লক্ষ্য করা যায়নি । কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনেক মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ পুরো এক বছর সেখানে বাস করে, বাকীরা কমপক্ষে ছয় মাস । যার কারনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আকস্মিক পরিদর্শন থেকে তারা অনেক ভাইকে গোপন করতে বাধ্য হয়েছিল । তা সত্বেও এটি ছিল একটি অনুপম এবং বরকতময় অভিজ্ঞতা যা অনেক ভাইকে শক্তিশালী করেছিল ।
    তারপর তারা আমাকে নিঃসঙ্গ সেল থেকে বাইরে নিয়ে এবং কারাগারের ক্ষুদ্র কক্ষে রাখা হয় । যখন আমাকে উত্তরাঞ্চলের ‘ক্বাফক্বাফাহ’ জেলে পাঠানো হয়, তখন বাকী অধিকাংশ ভাইদের দক্ষিণ জর্ডানে ‘সোয়াক্বাহ’ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল । আমাদেরকে পৃথক এবং দুর্বল করার জন্য তাদের অদম্য ইচ্ছার প্রতিফলন ছিল এই পরিকল্পনা,
    ‘তারা ষড়যন্ত্র করছিল,আল্লাহ্* তা’আলাও কৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন, আর আল্লাহ্* তা’আলাই হচ্ছেন সর্বোৎকৃষ্ট কৌশলী’ । (সূরা আনফাল ৩০ আয়াত)
    তখন থেকে আমি জেলের যেখানেই পা বাড়াতাম, সেখানেই আকুলভাবে দা’ওয়াহ শুরু করেছিলাম । তাই একটি সিরিজের অংশ হিসাবে আমি একটি সাহিত্য রচনা শুরু করি যার নাম দিয়ে ছিলাম ‘হে আমার কারাগারের সাথীরা ভিন্ন ভিন্ন রব ভালো না এক আল্লাহ্* তা’আলা যিনি মহাপ্ররাক্রমশীল?’(সূরা ইউসুফ৩৯ আয়াত থেকে সংগ্রহীত ), আমি এটাকে তাওহীদ, ইবরাহীম (আঃ) পথ, ইবাদত, শিরক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে বর্ণনা করি । আমি এই ক্ষুদ্র পুস্তকটি বন্দীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম ।
    প্রকৃতপক্ষে কেছু বন্দী ছাড়া পাওয়ার পর এই পুস্তকটি বাইরে নিয়ে গিয়েছিল । তারা এটার উপর আমার নাম মুদ্রিত করে কারাগারের বাইরে এই পুস্তকটি প্রকাশ করেছিল । এটা অবশ্যই আল্লাহ্*র শত্রুদের রাগান্বিত করেছিল, যখন কিছু মুক্তিপ্রাপ্ত ভাই অবিরতভাবে ঐ সমস্ত কারারুদ্ধদের সাথে আমার লেখা সংগ্রহ করার জন্য যোগাযোগ করছিল। পরবর্তীতে জর্ডানের গোয়েন্দা অফিসে একটি সশস্ত্র হামলায় অংশ গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ্* ঐ সমস্ত ছেড়ে যাওয়া বন্দীদের পূর্ব হতে নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু গ্রেফতার হয়েছিল এবং আমার সাথে কারাগারে সাক্ষাত করেছিল, এবং তাদের সাথে আমার কিছু লেখা পাওয়া গিয়েছিল । সর্বশক্তিমান আল্লাহ্* আমার ভাইদের সাথে আমাকে পুনরায় একত্রিত হওয়ার জন্য এই ঘটনাকে একটি উছিলা করে দিলেন; কারণ এই ঘটনার পর তৎক্ষণাৎ আমাকে দক্ষিণে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল ।

    শয়খ মাকদিসী কোন ধরনের ভাবধারার অনুসারী ? এই ভাবধারার সাথে বর্তমান সৌদি-সালাফী আলেমদের পার্থক্য কি ?
    হকপন্থী পূর্বসূরিদের ভাবধারা ব্যতীত আমার কোন ভাবধারা নেই, তারা ছিলেন আল ফিরকাতুন নাজিয়াহ এবং আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’য়াহ । আমরা তাওহীদ ও এর প্রভাব, তাওহীদের দাবী এবং এর শক্তিশালী বন্ধনসমূহের উপর জোর দিয়ে থাকি, সেই সাথে সকল প্রকারের শিরকের মোকাবেলা করা- বিশেষ করে সমসাময়িক শিরকের স্পষ্ট কুফরসমূহকে মোকাবেলা করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি ।
    আমাদের উম্মতের সোনালী যুগের মানুষদের মত আমরাও মধ্যম পন্থা আঁকড়িয়ে ধরে থাকি, কোন বাড়াবাড়ি বা গাফলতির কারণ নেই । দা’ওয়ার একটি বিশেষত্ব হলো- প্রকাশ্য ঘোষণা; আমরা ইবরাহীম (আঃ) এর পথ অনুসারে কাফিরদের সাথে এবং তাদের মিথ্যা উপাস্য ও পৌত্তলিকদের সাথে বারা’আর (সম্পর্ক চ্ছেদ) ঘোষণা দিয়ে থাকি । আমাদের এই দা’ওয়াহ তাদের সাথে মিলে যায় যারা আল্লাহ্*র দ্বীন কায়েমার প্রচেষ্টায় লিপ্ত, আল্লাহ্* যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন । আমরা অসংগত পক্ষপাতকে অপছন্দ করি যা এই উম্মতকে দলে দলে বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট । আমরা নিজেদেরকে তাওহীদের সৈনিক এবং শরীয়তের অনুগত মনে করি । আমরা সকল মুসলিমকে আমাদের দাওয়াত প্রদান করি এবং নিজেরা কঠোরভাবে কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করি । যখনই কোন ন্যায়নিষ্ঠা ও জিহাদি দ্বীন কায়েমের লক্ষ্য আমাদের কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত করে তখন আমরা তাদের ডাকে সাড়া দেই, এবং তাদের সৈনিক, সমর্থক ও অনুসারী বনে যাই । আমরা যুবকদের উৎসাহিত করি যাতে তারা শরীয়তের জ্ঞান অন্বেষণ করে এবং নিজেদের পরিস্থিতিকে সঠিক মূল্যায়ন করে । আমরা ব্যাপক জিহাদের মাধ্যমে এইসব কাফির শাসকদের উৎখাত করে এই পৃথিবীতে আল্লাহ্*র সার্বভৌমত্ব কায়েমার ডাক দিয়ে থাকি । এদের সাথে এবং এদের ঐসব আলেমদের আমরা কুফর অস্বীকার করি; যারা তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে এবং তাদের কুফরকে হালকা করতে ও তাদের শাসনকে আরো সুসংহত করতে মিথ্যার ডালি সাজায় আর মিথ্যা মতবাদ উদ্ভাবন করে ।
    আমরা বিশ্বাস করি জিহাদ অথবা হাত দ্বারা অন্যায়কে প্রতিহত করা সম্পূর্ণভাবে জায়েয । তবে শর্ত হল জিহাদকারীকে সঠিক পন্থায়, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে আল মাসালিহ (উপকার) এবং আল মাফাসিহ (অপকার)-দের মাঝে সামঞ্জস্য রেখে জিহাদ পরিচালনা করতে হবে । আর এ কারণেই আল্লাহ্*র শত্রুরা আমাদের উপর সন্তুষ্ট নয় এবং আমরাও তাদের উপর সন্তুষ্ট নই । তারা প্রতিনিয়ত আমাদের এবং আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে । আর উপরের এই আলোচনার আলোকেই আমাদের সাথে সৌদি আলেমদের মতবাদের পার্থক্য স্পষ্ট হয় । ঐসব আলেমগণ তাগুতকে বাই’য়াত দেয়, তাদের রক্ষায় জীবন ব্যয় করে এবং এই তাগুতের অবস্থান আরো সুসংহত করতে তাদের জ্ঞানকে ব্যবহার করে থাকে ।
    আন-নিদা ম্যাগাজিন হতে সংকলিত ।

  • #2
    জাযাকাল্লাহু খইরন

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তায়ালা শাইখকে হেফাযত করুন......।

      Comment


      • #4
        কালিমার পতাকা
        আল্লাহ তায়ালা শাইখকে হেফাযত করুন......। আমিন !

        Comment


        • #5
          আল্লাহ তাআলা শাইখ এর আরো বানী আমরা যাতে জানতে পারি তার তৌফিক দান করুন।
          আমি সেই ভাইকে ভাই মনে করি না,যে নিজ ধর্মের শত্রুকে বন্ধু মনে করে।

          Comment


          • #6
            আল জিহাদ
            আল্লাহ তাআলা শাইখ এর আরো বানী আমরা যাতে জানতে পারি তার তৌফিক দান করুন। আমিন ...

            Comment


            • #7
              ভাই ইমাম আনোয়ার আল আওলাকির জীবনীর ওপর লেখা কোন বই কি কারও কাছে??

              Comment

              Working...
              X