Announcement

Collapse
No announcement yet.

"ইসলামের নামে জঙ্গিবাদঃ পর্যালোচনা" - ১

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • "ইসলামের নামে জঙ্গিবাদঃ পর্যালোচনা" - ১

    আলহামদুলিল্লাহ! মরহুম শায়খ খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গির ''ইসলামের নাম জঙ্গিবাদ'' নামক বইয়ের প্রথম পরিচ্ছদে (পরিচিতি ও আলোচিত কারণ) শুরুর দিকে সন্ত্রাসের আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণ ও মুসলিম দেশসমূহের উপর মার্কিন-ইজরায়েলি আগ্রাসনের ব্যাপারে চমৎকার কিছু আলোচনা করেছেন। এবং প্রমাণ করেছেন, সন্ত্রাসের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। যেমন – ইজরায়েলিদের কাছে ফিলিস্তীনিরা সন্ত্রাসী, আবার ফিলিস্তীনিদের কাছে ইজরায়েলিরা সন্ত্রাসী।


    পৃষ্ঠা ৯ এ ডক্টর খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেছেন,
    এভাবে আমরা দেখছি যে, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করা কঠিন এবং এবিষয়ে ঐক্যমত পোষণ প্রায় অসম্ভব।
    একটু নিচে তিনি আবার একটি প্রবাদ উল্লেখ করে উনার বক্তব্যের সারাংশ টেনেছেন,

    "One man's terrorist is another man's freedom fighter".

    আলেম কেন, একজন মুসলমানের কাছেও তো আমাদের দাবী তো এই যে, তার কাছে শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার মানদন্ড হবে আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কিতাব। যা শারিয়াহ’র পরিভাষায় আল-ওয়ালা ওয়াল বা’রা হিসেবে অভিহিত। কিন্তু একজন আলেম হয়েও তিনি প্রমাণ করতে চাইলেন, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীর সংজ্ঞা আপেক্ষিক।


    অথচ আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রকৃত সন্ত্রাসী/অপরাধী কারা এবং ন্যায়সঙ্গত মুসলিমদের সাথে তাদের আচরণ কেমন হয়/হবে তা বারংবার আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন,


    "তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।" [সূরা বাকারা ২:২১৭]
    "এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।" [সূরা আন'আম ৬: ১২৩]
    "যারা অপরাধী তারা তো মু'মিনদেরকে উপহাস করত।" [সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩:২৯]
    "ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপনড়ব হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৬]
    "তারা বললঃ আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ নিচু শ্রেণীর লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে।" [সূরা শূরা ২৬:১১১]
    "তার সম্প্রদায়ের কাফির প্রধানরা বললঃ 'তোমরা যদি শুআ'ইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে'।" [সূরা আ'রাফ ৭:৯০]
    "ফিরাউন বললঃ আমি যা বুঝি, আমি তোমাদেরকে তাই বলছি। আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি।" [সূরা মু'মিন ৪০:২৯]
    "কাফিররা তাদের রাসূলগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত করব।" [সূরা ইব্রাহীম ১৪:১৩]

    কিন্তু! অজ্ঞাত কারণে ডক্টর খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীর সংজ্ঞায়নে কুর’আনকে সামনে আনেন নি। মানদন্ড হিসেবে বইয়ের পরবর্তী অংশে কুর'আন ও সুন্নাহ'র আংশিক আলোকপাত থাকলেও মূল প্রশ্নে কুর'আন-সুন্নাহ থেকে একটি অক্ষরও উল্লেখিত হলো না। কেন? ওয়াল্লাহু আ'লাম।


    আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুর’আনে পরিষ্কার করেছেন সামগ্রিকভাবে কুফফার ও মুসলিমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনা।

    “'আর আল্লাহ চাইলে তিনি তাদের এক উম্মত বানিয়ে দিতেন, কিন্তু তিনি যাকে চান নিজ কৃপার অন্তর্ভুক্ত করেন।“ (সুরা আশ শুরা : ৮)
    “ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা কখনই তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের দ্বীনের অনুসরণ কর।“ [সূরা বাকারা : ১২০]

    এই আয়াতদুটি এত বড় আলেমের জানা থাকারই কথা। প্রশ্ন হচ্ছে এমনটা জানার পরও ডক্টর খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ‘সন্ত্রাস’ ও ‘সন্ত্রাসী’ চিহ্নিতকরণে ঐক্যমত কেন খুজলেন?


    এছাড়াও প্রশ্ন থেকে যায় শার’ঈ আলোচনা করা হয়েছে এমন একটি বইয়ে শ্রদ্ধেয় শায়খ কুর’আনের আয়াতের ব্যবহার না করে শুধুমাত্র নামসর্বস্ব কিছু উক্তি ও তথ্যের আলোকে কেন এই চিরন্তন সত্যটি কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন করে প্রমাণ করতে চাইলেন? যদি এমন হতো যে বইটি অমুসলিমদের জন্য লেখা এবং তাদের জন্য কুর’আন-সুন্নাহ থেকে কোনো উদ্ধৃতি চয়ন করা থেকে তিনি বিরত থেকেছেন তাহলে কোনো প্রশ্ন থাকতো না। অথচ, বইয়ের পরবর্তী অংশে তিনি অসংখ্য শার’ঈ নুসুস, সালাফদের মতামত ও ইসলামী ইতিহাসের খুটিনাটি তুলে ধরেছেন।


    সম্পূর্ণ ১.১.১ অধ্যায় পড়ার পর সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করে নিবে যে তিনি আসলে, সাম্রাজ্যবাদী ও ‘মৌলবাদী’ উভয়কেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন। উভয়কেই সন্ত্রাসী সাব্যস্ত করেছেন। ‘সন্ত্রাস’ ও ‘সন্ত্রাসী’ চিহ্নিতকরণে ডক্টর সাহেব যদি একটি কুরআনের আয়াতও মানদন্ড হিসেবে উল্লেখ করতেন তবে পাঠকের কাছে সাম্রাজ্যবাদী ও মৌলবাদী উভয়পক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা যেত না, অন্তত পাঠকদের বড় একটি অংশের কাছে।


    বাস্তবতাও তাই! জ্ঞানের ভারে ন্যুব্জ শায়খ খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরের সুপাঠ্য লেখা পড়তে পড়তে পরিচ্ছদ শেষে পাঠকের অবচেতন মন হয়েছে প্রভাবিত।

    إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ ‏

    "যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌছি যুদ্ধের জন্য, এটি তাদের জন্য দুর্বিষহ সকাল যাদেরকে পূর্বে সতর্ক করা হয়েছিল।"

    (সহিহ বুখারি, ৩৭১)

  • #2
    মাশাআল্লাহ, সুন্দর পর্যালোচনা।

    Comment


    • #3
      চালিয়ে যান। মাশ আল্লহ । চলুক ।
      "তুমি রবের বান্দার প্রতি দয়া কর
      বান্দার রবও তোমার প্রতি দয়া করবেন।"

      Comment


      • #4
        প্রায় এক বছর পরে আবার নতুন করে "abdullah bin adam bd" নামক ভাই এই বইটির নতুন পর্যালোচনা শুরু করেছেন…
        বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
        কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

        Comment

        Working...
        X