Announcement

Collapse
No announcement yet.

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর... / লিখেছেন - শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর... / লিখেছেন - শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি

    মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয়
    বা, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর... ... !
    .

    লিখেছেন - শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি
    .
    .

    [মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার অভিযোগে ১৯৮১ সালে আমীরুল মুজাহিদীন হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহকে মিসরের তাগুত সরকার কারাগারে বন্দি করে। লাগাতার তিন বছর কারাগারে থাকার পর মুক্তি পান। মুক্তির পরবর্তী অভিজ্ঞতা নিয়ে এই লেখা, যা ইসলামি আন্দোলনে কর্মরতদের জন্যে একটি উত্তম শিক্ষা। লেখাটির আরবি শিরোনাম হচ্ছে- ‘শারিবাত ও সুক্কার’। এটার শাব্দিক অনুবাদ ‘সুপেয় পানীয় ও মিষ্টান্ন’ হবে, বা ইংরেজি ‘ড্রিঙ্কস এন্ড সুইটমিট’ বলতে পারেন, কিন্তু পাঠকের বোঝার স্বার্থে আমি শিরোনাম দিয়েছি, ‘কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর’। যাইহোক এবার লেখাটি পড়ুন, আশাকরি আপনার থলিতে অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হবে ইনশা আল্লাহ!]
    .

    পাঠক বন্ধুরা হয়তো অবাক হবেন, যে, বর্তমানে যখন লড়াই, যুদ্ধ, নির্যাতন, ধ্বংসস্তূপ, রাজনৈতিক গাদ্দারী, নষ্টের আধিপত্যে চলছে তখন এই শিরোনামে লেখা কেনো? অনেক পাঠক হয়তো ভাববেন, যে, এ ধরনের ঘটনা বাচ্চাদের পত্রিকা বা রম্য কাগজ বা কৌতুকের কাগজে শোভা পাবে।
    কিন্তু আমি এজন্য এটা নির্বাচন করলাম, যাতে পাঠকরা কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে সতর্ক হন, আর এগুলো ইসলামি আন্দোলনরত একজন মুজাহিদদের অবশ্যই বোঝা উচিৎ যে, তাঁরা এগুলোর মুখোমুখী তখন হবেন, যখন তাদেরকে বিভিন্ন বিষ্ফোরণ, কিতাল, নির্যাতন ও ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হবে।
    .

    কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর:
    তিনবছর কারাগারে থাকার পর যখন আমি মুক্তি পাই, তখন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুমহল-প্রতিবেশী আমার ঘরে শুভেচ্ছা জানানোর জন্যে আসলো, এইসব অভিনন্দনকারীরা স্বাভাবিক নিয়মেই মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানি নিয়ে আসলেন... এ ছাড়াও তারা রকমারী খাবার ও হাদিয়া নিয়ে আসলেন। কিন্তু এসব সাক্ষাৎকারীদের তিনজন ছিলেন যারা আমার স্মৃতির তলে পড়ে গেছেন। তাদেরকে অনেক কষ্ট করে স্মরণ করতে হলো।
    .

    এদের প্রথমজন:
    স্থুল অবয়ববিশিষ্ট এক ব্যক্তি যে আমার প্রাথমিক মাদরাসা(স্কুলে)য় বাগানে মালীর কাজ করতো, সে তার গ্রাম ত্যাগ করার পর আমাদের সড়কেই একটি জীর্ণ-শীর্ণ ঘরে বাস করতো। আমাদের পরিবারের সাথে তার বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক ছিল, এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, তাকে দেখা যায় নি, কিন্তু আমি যখন কারাগার থেকে বের হলাম তখন সে মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয় নিয়ে উপস্থিত হলো।
    .

    এদের দ্বিতীয়জন:
    একজন দরিদ্র মহিলা, যে আমাদের প্রাথমিক স্কুলে কাজ করত। সে আমাদের সড়কেই বাস করতো, আমার মনে হয় না, কয়েক বছর যাবত তাকে দেখছি বলে। বরং কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমি জানতাম না সে আমাদের সড়কেই বাস করে, এজন্য সে যখন মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয় নিয়ে আসে তখন আমি হতভম্ব হয়ে যাই । এরপর আমি স্মরণ করি যে, সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল যা অপসারণের প্রয়োজন পড়ে ছিল, তা ছাড়া তার একজন নিকটাত্মীয় আছে যে ইসলামী আন্দোলনের জন্যে কারাগারে ছিল।

    .

    এদের তৃতীয়জন:
    হাসপাতালের একজন সেবক যে গ্রেফতারির পূর্বে আমার সেবা করতো, এই বিশাল দেহের ব্যক্তি প্রকৃত মিসরের স্বরূপ, কিন্তু জীবনের কষ্ট তাকে পিষে ফেলেছে। সে সকালে একটি সরকারী হাসপাতালে সহকারী বাবুর্চির পেশায় নিযুক্ত ছিলো। সে গ্রাম ত্যাগ করার পর, একটি আবাসিক এলাকায় মাটির নিচে একটি কক্ষে সে এবং তার বিশাল পরিবার কষ্ট করে জীবন যাপন করতো। আমার সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে এই বিশাল বপুকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
    আমি গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে পাকড়াও করা হয়, তারপর তার উপর অভিযোগ করা হয় যে, সে আমার ও মুজাহিদ ভাইদের মধ্যে বার্তাবাহক ছিলো। তাছাড়া তাকে বলা হয়, সে যেনো মুজাহিদদের মধ্যে যাদেরকে চিনে তাদের নাম বলে, এই বেচারা বার বার চেষ্টা করে একথা প্রমাণ করার যে, মুজাহিদদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সব চেষ্টাই অনর্থক হয়। এরচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো যে, তার অসহায় স্ত্রী যখন তার গ্রেফতারির খবর পেয়ে জিজ্ঞাসা করতে যায়, তখন তাকেও পুলিশ গ্রেফতার করে নিকৃষ্ট ও অপরাধীদের সাথে রাখে। সে আমার কারণে অনেক নির্যাতন ও কষ্ট শিকারের পরও আমি তাকে পেয়েছি আমার অভিনন্দনদাতাদের তালিকায়। সেও আসলো আমার জন্যে এমনভাবে মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয় নিয়ে যেনো এর কিছুই ঘটে নি।
    বরং আমাকে দেখতে সে এবং ওই দুনোজন কোনো ধরনের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ ছাড়াই বার বার মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয় নিয়ে আসা-যাওয়া করতে লাগলো। এতে আমাকে প্রকাশ্যে-গোপনে নজরদারি করতে কোনো জালিম পুলিশের পরওয়া তারা করে নি। অথচ আমার ঘরে দিন-রাত এসব পুলিশ বিভিন্ন অজুহাতে তল্লাশি করতে আসত।

    এসব ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে পুলিশি নির্যাতনের কোনো কেয়ারই করে নি, মিসরের পুলিশের নির্যাতন-অত্যাচার যে, কত ভয়ঙ্কর তা কারো কাছে অস্পষ্ট নয়। তারা জানতো যে, আমার কাছে এসব মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয়ের মূল্য পুলিশের কাছে কী দিতে হবে। কিন্তু এরপরও তারা থেমে থাকে নি।
    .

    এসব সরলরা যাদের জন্যে সম্ভব ছিলো আমাকে ভূলে যাওয়া, তারা যদি আমাকে মুক্তির পর অভিনন্দন নাও জানাতো, এতে তাদেরকে তিরষ্কার করার কোনো কারণ ছিলো না।
    কিন্তু এদের বিপরীতে আমার পড়ালেখার এক সহপাঠির কথা স্মরণ করি, একসাথেই আমরা পড়ালেখা করেছি, একসাথেই কলেজের পড়ালেখা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা অর্জন করি, সে আমার এমন সহপাঠি ছিলো যাকে না দেখে আমার একদিনও অতিবাহিত হত না, এমনিভাবে তারও অবস্থা ছিলো। কিন্তু যেইমাত্র সে আমার গ্রেফতারির খবর পেলে সাথে সাথে আমাদের মধ্যকার উষ্ণ সম্পর্ক সমাপ্ত হয়ে গেলো।
    আজ আমার মুক্তির চৌদ্দ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে, এইসময়ে আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হচ্ছি, এমনিভাবে সেও হচ্ছে, চাকুরীতে তার অনেক পদোন্নতি হয়েছে, এমনকি বর্তমানে সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকে উন্নীত হয়েছে। এই দীর্ঘ বৎসরে তা আমার গ্রেফতারির সময় হোক, বা এরপরে, বা মিসরে আমার অবস্থানরত সময়ে, বা সেখান থেকে আমার বের হওয়ার পরেও আমার প্রতি সে একটি শব্দও ছুড়ে নি, স্বাভাবিকভাবে আমিও চাই নি যোগাযোগ করে তাকে কোনো কষ্টে ফেলতে।

    .

    এমনিভাবে আমি এক প্রসিদ্ধ দাঈ’র কথা স্মরণ করবো, তিনি আমাদের মহল্লায়ই বাস করতেন, তিনি বাহ্যিকভাবে দ্বীনের পথপ্রদর্শক হওয়ার সব ধরনের নিদর্শন গ্রহণ করেছেন। যেমন- দাড়ি, লাঠি, পাগড়ী, জুব্বা... ইত্যাদি। এই প্রসিদ্ধ দাঈ আমাকে ভালোভাবে চিনতেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আমাকে তিনি চলার পথে মুখোমুখী দেখেন, কিন্তু তিনি এমনভাবে অতিক্রম করে গেলেন, তার চোখের পলক সামান্য নড়লো না, যেনো আমি ছায়াগুলোর একটি ছায়া। শেষপর্যন্ত এই দাঈ সংসদ পর্যন্ত যান এবং হোসনী মুবারকের হাতে মুসলমানদের ইমাম হিসেবে বাইয়াহ দেন!!

    এই মহান দরিদ্র সরলপ্রাণ লোকদের বিপরীতে নিরাপত্তালিপ্সু ওইলোকদের কথা আমার মনে আজও সুস্পষ্টরূপে বিদ্যমান আছে।

    .

    এই সরল ব্যক্তিদের আকৃতি আমাকে প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেয়, তাদের সাথে সাচ্চা উত্তম দিলের এসব জনতার কথা, যখন ইসলামী আন্দোলন বড় কঠিন দুর্দিন অতিক্রম করছিল, তখন তারা এইসময়েও কোনো ধরনের প্রতিদান ও বিনিময় চাওয়া ব্যতীতই মুজাহিদদের প্রতি নিজেদের সহানুভূতি প্রকাশ করছিল।
    আমরা কি সক্ষম হবো এসব উত্তম ব্যক্তিদের পর্যন্ত পৌঁছতে, তাদেরকে কি বোঝাতে সক্ষম হবো যে, মুজাহিদরা তাদের দ্বীন, সম্মান-মর্যাদা রক্ষার জন্যে জিহাদ করছে?

    যদি আমরা এ ক্ষেত্রে সফল হই, যদি এটা বাস্তবে হয় তাহলে এটাই হবে তাদের মিষ্টান্ন ও সুপেয় পানীয়ের উত্তম জবাব।
    وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين


    লিখেছেন, শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি
    ‘আল-মুজাহিদুন’ ম্যাগাজিন, সংখ্যা- ১৮, বর্ষ- ১ম
    ১২ যি ক্বাদ্দাহ ১৪১৫ হিজরী

    [‘মিম্বার আত-তাওহীদ ওয়াল জিহাদে’র সূত্রে ‘হাকীবাতুল মুজাহিদ’ সফট মাকতাবাহ থেকে অনূদিত]

  • #2
    jazakallah khairan bhai arbi bujhar porjaye jete amk kotodin kivabe sadhona korte hobe janale valo hoy, ami general..

    Comment

    Working...
    X