Announcement

Collapse
No announcement yet.

শাইখ ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এর কাছে প্রশ্ন – ৪

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শাইখ ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এর কাছে প্রশ্ন – ৪

    সালাফে সালেহীনদের মধ্য থেকে কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম, কোন কোন সীরাত বিশেষজ্ঞ, কোন কোন উসুলশাস্ত্রবিদ আপনার উল্লেখিত ঘটনাগুলোর কারণে জিহাদের জন্য একজন রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি / ঘোষণাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
    ১। উল্লেখিত আলোচনার ১ ঘন্টা ৫ মিনিট ১৪ সেকেন্ড এ শাইখ ডঃ সাইফুল্লাহ এক প্রশ্ন-উত্তরে বলেছেন, “শাসক ছাড়া জিহাদের ডাক দেয়া যাবে না, এ ব্যাপারে ক্লিয়ার কাট এভিডেন্স রয়েছে কি? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। অবশ্যই আছে। একটা-দুইটা না। আমরা তো এতগুলো (দলীল দিলাম)। এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর এতগুলো দলীল দিলাম। এবং সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর এতগুলো দলীল দিলাম। যেখানে রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে, মানে, আমীর নির্ধারন করে দিয়েছেন এবং আমীরের অনুমতির মাধ্যমে জিহাদ করার কথা বলা হয়েছে”।

    অর্থাৎ শাইখের এই কথার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে, উনি মনে করেনঃ শাসকের অনুমতি অথবা ঘোষনা ছাড়া কোন জিহাদ করা যাবে না। সেটা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ হলেও। শাইখের এই মতবাদের পক্ষে একটি দলীল হলো রাসুল (সাঃ) এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা।

    আমরা এই পর্বে উক্ত আলোচনায় শাইখ ডঃ সাইফুল্লাহর আলোচনায় আসা ঘটনাগুলো একটু বিস্তারিত দেখার চেষ্টা করবো এবং শাইখের দেয়া দলীল বিস্তারিতভাবে বুঝার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

    ঘটনা-১।
    আলোচনার ২২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের দিকে শাইখ বলেছেনঃ “সুবহানাল্লাহ রাসুল (সাঃ) এর উপস্থিতিতে, রাসুল (সাঃ) মদীনায় আছেন, নির্যাতিত হচ্ছিল মক্কায়, একদল মুসলমান ঠিক কিনা? কুরআনে কারীমের এই আয়াত সাক্ষী। তাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। কিন্তু রাসুল (সাঃ) জিহাদ ঘোষনা করেছেন কিনা? ঘোষণা করার তো আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ না দিলে ঘোষণা করতে পারবেন না। নিজের খায়েস মতো জিহাদ ঘোষনা করে দিলে এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে চার আনারও কোন দাম নাই। রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করেন নাই। তারপর যখন এই আয়াত নাযিল হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘যাদেরকে অত্যাচার করা হচ্ছে, তাদেরকে জিহাদের অনুমতি দেয়া হলো, কারণ তারা নির্যাতিত’। অন্যায়ের কারণে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ আসার পর রাসুল (সাঃ) জিহাদের কমন ঘোষণা দিলেন যে, হ্যাঁ এখন জিহাদ করা যেতে পারে। শুধু একটা প্রেক্ষাপট তৈরী হলেই (হবে না), সেখানে ইসলাম কি দাবী করে - সেটা আমাদেরকে জানতে হবে।”। [উল্লেখ্যঃ আলোচনার সময় শাইখকে বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছিল]

    এটা হচ্ছে, শাইখ ডঃ সাইফুল্লাহ মাদানী এর উল্লেখকৃত রাসুল (সাঃ) এর জীবনের ১ম ঘটনা। এই ঘটনা কিভাবে শাইখের দাবীকে প্রমাণ করে, তা মোটেও সুস্পষ্ট না যেটাকে উপরুক্ত প্রশ্নের উত্তরে একটা দলীল হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এই ঘটনা থেকে শুধু এতটুকু বুঝা যাচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জিহাদের বিধান নাযিল করার আগ পর্যন্ত রাসুল (সাঃ) জিহাদের অনুমতি দেন নাই। বরং মক্কার মুসলিমদের উপর অনেক নির্যাতন চললেও তিনি সবর করেছেন। অতঃপর জিহাদের অনুমতির আয়াত নাযিল হবার পর তারা জিহাদ শুরু করেছেন।

    এই ঘটনা থেকে যদি শাইখ ডঃ সাইফুল্লাহ এই দাবী করে থাকেন যে, জিহাদের অনুমতির আয়াত নাযিলের সময় যেহেতু রাসুল (সাঃ) রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, এবং তিনিই সাহাবা (রাঃ)-দেরকে জিহাদের প্রতি আহবান করেছেন এবং বিভিন্ন জিহাদে প্রেরণ করেছেন, তাই এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিহাদের জন্য (হোক সেটা প্রতিরক্ষামূলক কিংবা আক্রমণাত্বক) রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি / ঘোষণা একটি শর্ত। এটা না হলে জিহাদ সহীহ হবে না।

    এক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন থাকবে, সম্মানিত শাইখঃ

    ক) রাসুল (সাঃ) এর জীবনে / উপস্থিতিতে যেকোন ঘটনা ঘটলে কি সেই সময় উপস্থিত সকল কিছু সেই আমলের জন্য শর্ত হয়ে যায়? যদি রাসুল (সাঃ) এর অনুমতিতে / ঘোষণায় জিহাদ হবার কারণে জিহাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান শর্ত হয়, তাহলেঃ

    - কেন জিহাদের জন্য একজন নবী উপস্থিত থাকাও একটি শর্ত হবে না?
    - কেন জিহাদের জন্য একজন রাসুল (শুধু নবী হলেই চলবে না) উপস্থিত থাকাও একটি শর্ত হবে না?
    - কেন একজন নবী / রাসুল এর অনুমতি / ঘোষণা জিহাদ এর জন্য শর্ত হবে না?

    কারণ রাসুল (সাঃ) তো ঐসময় একাধারে নবীও ছিলেন, রাসুলও ছিলেন, রাষ্ট্রপ্রধানও ছিলেন। আপনি কোন কোন দলীলের ভিত্তিতে রাসুল (সাঃ) এর রাষ্ট্রপ্রধান সত্ত্বাকে এর জন্য শর্ত করেছেন কিন্তু নবী কিংবা রাসুল এর সত্ত্বাকে শর্ত করেন নি?

    খ) একইভাবে প্রশ্ন আসবে, রাসুল (সাঃ) এর সময় মুসলিমরা রোযাও রেখেছেন। যেভাবে ‘কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম’ নাযিল হয়েছে একইভাবে ‘কুতিবা আলাইকুমুল ক্বিতাল’ও নাযিল হয়েছে। যদি রাসুল (সাঃ) এর অনুমতিতে / ঘোষণায় জিহাদ হবার কারণে জিহাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান শর্ত হয়, তাহলেঃ

    - কেন রোযার জন্য একজন নবী উপস্থিত থাকাও শর্ত হবে না?
    - কেন রোযার জন্য একজন রাসুল (শুধু নবী হলেই চলবে না) উপস্থিত থাকাও একটি শর্ত হবে না?

    অনুরুপভাবে রাসুল (সাঃ) হজ্ব করেছেন, যাকাত আদায় করেছেন – এই সবকিছুতে কি একই রকম শর্ত জুড়ে দেয়া যায় না?

    গ) সম্মানিত শাইখ, আপনারাই তো সবাইকে শেখান যে, কুরআন-হাদিসকে নিজের উপলব্ধি অনুযায়ী বুঝলে হবে না, সালাফে সালেহীনদের উপলব্ধি অনুযায়ী বুঝতে হবে। তাহলে সালাফে সালেহীনদের মধ্য থেকেঃ

    - কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম?
    - কোন কোন সীরাত বিশেষজ্ঞ?
    - কোন কোন ফকীহ?
    - কোন কোন উসুলশাস্ত্রবিদ?

    আপনার উল্লেখকৃত ঘটনার কারণে জিহাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকে শর্ত করেছেন? আমাদেরকে বিস্তারিত জানাবেন ইনশাআল্লাহ। যাতে আমরা সঠিকভাবে সালাফে সালেহীনদেরকে অনুসরণ করতে পারি।


    ঘটনা-২।
    আলোচনার ৫০ মিনিট ২০ সেকেন্ডে শাইখ জিহাদ দুই প্রকার উল্লেখ করে বলেনঃ “জিহাদে তলব এর জন্য যেমনিভাবে (খলিফা / রাষ্ট্রপ্রধান থাকা) শর্ত, জিহাদুদ দফ্* এর জন্য তেমনিভাবে শর্ত। তাহলে আপনি প্রতিহত করবেন কিভাবে? মানে বিশৃখলভাবে প্রতিহত করলে সেটা কোনদিন প্রতিহতই হবে না। রাসুল (সাঃ) ওহুদের যুদ্ধে জিহাদে তলব করেছেন নাকি জিহাদে দফ্* করেছেন এনিয়ে উলামায়ে কেরামের খেলাফ রয়েছে। অধিকাংশ আহলু সিয়ার বলেছেন, ওহুদের যুদ্ধে রাসুল (সাঃ) জিহাদে দফ্* করেছেন। এইটা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ ছিল। কারণ কাফিররা তো চলেই এসেছে মদীনার পাশে ওহুদের যুদ্ধে। তারপরে আহযাবের যুদ্ধে রাসুল (সাঃ) জিহাদে দফে করেছেন। হুনায়ুন এর যুদ্ধে রাসুল (সাঃ) জিহাদে দফে করেছেন। প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ করেছেন। এই সবগুলো যুদ্ধে রাসুল (সাঃ) কেবল নিজেই ছিলেন একমাত্র কমান্ডার। এবং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন দফ্*, রাসুল (সাঃ) বা সাহাবীরা যে বলেছেন, হ্যাঁ, কাফিররা চলে এসেছে, বের হয়ে যাও। যার যেমন যেভাবে খুশী সেভাবে বেরিয়ে যাও। তাহলে কোনদিন প্রতিরক্ষা হবে না। প্রতিরক্ষার জন্য শর্ত হচ্ছে সেটা জিহাদ হতে হবে। শৃখংলাবদ্ধ হতে হবে”।

    এই হলো শাইখের উল্লেখকৃত অপর কিছু ঘটনা যা থেকে তিনি দলীল দিয়েছেন। অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর সময় বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে তিনি আমীর বা কমান্ডার ছিলেন। এই কারণে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদেও রাষ্ট্রপ্রধান বা খলিফার অনুমতি অথবা ঘোষণা একটি শর্ত।

    এই ব্যাপারেও আমরা পূর্বের মতো উল্লেখ করবোঃ

    ক) রাসুল (সাঃ) এর জীবনে / উপস্থিতিতে যেকোন ঘটনা ঘটলে কি সেই সময় উপস্থিত সকল কিছু সেই আমলের জন্য শর্ত হয়ে যায়? যদি রাসুল (সাঃ) এর অনুমতিতে / ঘোষণায় ওহুদ, আহযাব ও হুনায়ুনের যুদ্ধ হবার কারণে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান শর্ত হয়, তাহলেঃ

    - কেন জিহাদের জন্য একজন নবী উপস্থিত থাকাও একটি শর্ত হবে না?
    - কেন জিহাদের জন্য একজন রাসুল (শুধু নবী হলেই চলবে না) উপস্থিত থাকাও একটি শর্ত হবে না?
    - কেন একজন নবী / রাসুল এর অনুমতি / ঘোষণা জিহাদ এর জন্য শর্ত হবে না?

    কারণ রাসুল (সাঃ) তো ঐসময় একাধারে নবীও ছিলেন, রাসুলও ছিলেন, রাষ্ট্রপ্রধানও ছিলেন। আপনি কোন কোন দলীলের ভিত্তিতে রাসুল (সাঃ) এর রাষ্ট্রপ্রধান সত্ত্বাকে এর জন্য শর্ত করেছেন কিন্তু নবী কিংবা রাসুল এর সত্ত্বাকে শর্ত করেন নি?

    খ) একইভাবে প্রশ্ন আসবে, রাসুল (সাঃ) এর সময় মুসলিমরা রোযাও রেখেছেন। যেভাবে ‘কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম’ নাযিল হয়েছে একইভাবে ‘কুতিবা আলাইকুমুল ক্বিতাল’ও নাযিল হয়েছে। যদি রাসুল (সাঃ) এর অনুমতিতে / ঘোষণায় জিহাদ হবার কারণে জিহাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান শর্ত হয়, তাহলেঃ

    - কেন রোযার জন্য একজন নবী উপস্থিত থাকাও শর্ত হবে না?
    - কেন রোযার জন্য একজন রাসুল (শুধু নবী হলেই চলবে না) উপস্থিত থাকাও একটি শর্ত হবে না?

    অনুরুপভাবে রাসুল (সাঃ) হজ্ব করেছেন, যাকাত আদায় করেছেন – এই সবকিছুতে কি একই রকম শর্ত জুড়ে দেয়া যায় না?

    গ) সম্মানিত শাইখ, আপনারাই তো সবাইকে শেখান যে, কুরআন-হাদিসকে নিজের উপলব্ধি অনুযায়ী বুঝলে হবে না, সালাফে সালেহীনদের উপলব্ধি অনুযায়ী বুঝতে হবে। তাহলে সালাফে সালেহীনদের মধ্য থেকেঃ

    - কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম?
    - কোন কোন সীরাত বিশেষজ্ঞ?
    - কোন কোন ফকীহ?
    - কোন কোন উসুলশাস্ত্রবিদ?

    ওহুদ, আহযাব ও হুনায়ুনের যুদ্ধের ঘটনার কারণে জিহাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান / খলিফার অনুমতি অথবা ঘোষণা থাকা শর্ত করেছেন? আমাদেরকে বিস্তারিত জানাবেন ইনশাআল্লাহ। যাতে আমরা সঠিকভাবে সালাফে সালেহীনদেরকে অনুসরণ করতে পারি।

    নিজেদেরকে ধংশে নিক্ষেপ করাঃ
    ২। আলোচনার ২৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডের সময় আরাকানের মুসলিমদের জন্য কি করা যাবে তা আলোচনা করতে গিয়ে শাইখ বলেছেনঃ

    “কিন্তু আমাদের সাধ্যের বাইরে যা সেটা আমরা করতে পারবো না। এখন গোটা পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আপনার যাবার কোন ক্ষমতা নেই। এর বাইরে যাবার চেষ্টা করলে আপনি নিজেকে হালাক্* বা ধ্বংশ করলেন। وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
    তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিলে ইচ্ছাকৃতভাবে। আপনি সেখানে গেলেই আপনাকে গুলি করে হত্যা করা হবে। সেখানে আপনার যাবারই কোন সুযোগ নেই”।

    সম্মানিত শাইখ, আপনি নিজেকে একটি সামান্য মোবাইল চালনায়ও অক্ষম মনে করলেও আপনিই তো সৌদি আরবে দীর্ঘদিন থেকে থিসিস কমপ্লিট করেছেন। আপনি একা একা হয়তো সেখানে একাধিকবার সফর করেছেন। আপনি নিজেকে এত দূর্বল, হীন মনে করছেন কেন? প্রস্তুতি নিলে আপনিও ইনশাআল্লাহ দুনিয়ার মুজাহিদীনদের মতো মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবেন। কাফিরদের আঁকা নিতান্ত তুচ্ছ একটা বর্ডার অতিক্রম করাকে এত বড় কঠিন ব্যাপার বলে মনে হবে না ইনশাআল্লাহ। দুনিয়ার মানুষতো দুই-চারশো টাকা অর্জনের জন্যও বর্ডারে মালামাল এইপার-ঐপার করছে আর আপনি কাফিরদের আঁকা এই বর্ডার অতিক্রম করাকে নিজেকে হালাক্* করার সমপর্যায়ে চিন্তা করছেন। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছায়, আজ না হোক কাল তো এ সকল বর্ডার মুসলিমরা-মুজাহিদরা ধ্বংস করেই দিবে। তাই কুফফারদের তৈরী এই বর্ডারগুলোকে আমাদের এত সমীহ করার কিছু নেই। তদপুরি এটা বিষাক্ত জাতীয়তাবাদেরও একটা হাতিয়ার যাকে রাসুল (সাঃ) নিজ পিতার গুপ্তাংগ কামড়ে ধরা ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন।

    তবে এটা ঠিক কুফফারদের সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার এই বর্ডার উঠিয়ে দিতে মুজাহিদদেরকে আল্লাহর দ্বীন এর জন্য অনেক রক্ত, অনেক জীবন কুরবানী দিতে হবে। কিন্তু শাইখ, আপনি এসকল বর্ডার এর বাইরে যাবার কোন ক্ষমতা নেই বলছেন কেন? কুফফারদেরকে এত ভয় পেলে কিভাবে হবে? আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, শয়তান আমাদেরকে তার চেলা-চামুন্ডাদের ব্যাপারে ভয় দেখায় কিন্তু শয়তানের চক্রান্ত অত্যন্ত দূর্বল। এটা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষনা করেছেন।

    যদি কোন মুজাহিদ আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে কোন সারিয়া অথবা গাযওয়াতে শরীক হবার জন্য কুফফারদের দেয়া এ সকল বর্ডার অতিক্রম করে, আর বাস্তবে মুজাহিদরা প্রতিনিয়ত তা করছেন। আফগানিস্তানে প্রবেশের জন্য পাকিস্তান ও ইরানের বর্ডার মুজাহিদরা প্রতিনিয়ত অতিক্রম করছেন, ইরাক ও তুরস্ক এর বর্ডার অতিক্রম করে তারা প্রতিনিয়ত সিরিয়াতে প্রবেশ করছেন। সৌদি বর্ডার অতিক্রম করে ইয়েমেনে জিহাদে গিয়ে শরীক হচ্ছে।

    আপনি জিহাদের সাথে শরীক নেই বলে, সামান্য বর্ডার অতিক্রমকে একেবারে নিজেকে ‘ধ্বংশে নিক্ষেপ করার সামিল’ হিসেবে চিন্তা করছেন। সুবহানাল্লাহ!! যদি মুজাহিদরা এ সকল বর্ডার অতিক্রম করার সময় বর্ডারে কোন বিপদে পতিত হন, আল্লাহ যদি তাদের কাউকে কোন পরীক্ষায় নিক্ষেপ করেন – তাহলেঃ

    - সেটা কি নিজেকে ধ্বংশ করার সামিল বলে সাব্যস্থ হবে?
    - আলোচ্য আয়াতে কি এই রকম কোন কাজকে ধ্বংশে নিক্ষেপ করা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে?
    - আল্লাহর চোখে ধ্বংশে নিক্ষেপ করার মতো কাজ কোনটি?
    - শুধু নিজের নিরাপত্তা, ধন-সম্পদের কথা চিন্তা করে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দেয়া?
    - নাকি নিজের জান-মাল কুরবানী করে জিহাদের পথে অটল থাকা?

    পুরো আয়াতটা আমরা দেখলে বুঝতে পারি যে, আপনি যে অর্থে এই আয়াত ব্যবহার করেছেন, সেই অর্থে এই আয়াত ব্যবহার করা যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
    وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

    অর্থাৎ, ‘এবং তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো। এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। আর উত্তমভাবে কাজ করো, নিশ্চয় আল্লাহ উত্তমভাবে কর্ম সম্পাদনকারীকে পছন্দ করেন’।
    তাহলে দেখা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ এখানে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলছেন। আর আল্লাহর পথে ব্যয় না করাকে নিজেকে ধ্বংশে নিক্ষেপ করা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

    এই আয়াতের তাফসীরে ইবরাহীম আল কাত্তান (রঃ) বলেন,
    التهلكة : الهلاك والمراد به هنا التقصير في المال استعداداً للجهاد . تيسير التفسير - إبراهيم القطان
    এখানে ধ্বংসের মাধ্যমে উদেশ্য হচ্ছে – জিহাদের প্রস্তুতির জন্য মাল ব্যয় করতে কৃপণতা বা অলসতা করা। অর্থাৎ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য কম দান করা।

    ইমাম তাবারী (রঃ) বলেছেনঃ
    ولا تُلقوا بأيديكم إلى التهلكة - يقول: ولا تتركوا النفقة في سبيل الله، فإن الله يُعوِّضكم منها أجرًا ويرزقكم عاجلا .

    ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংশের মধ্যে নিক্ষেপ করো না – আল্লাহ বলছেন, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান করা ছেড়ে দিও না, কারণ আল্লাহ তোমাদেরকে এর বদলে (পরকালে) সওয়াব দিবেন এবং দুনিয়াতে রিযিক দান করবেন’।

    ইবনে কাসীর (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ

    عن حذيفة: { وأنفقوا في سبيل الله ولا تلقوا بأيديكم إلى التهلكة } قال: نزلت في النفقة
    "ইমাম বুখারী হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নাযিল হয়েছে নাফাকাত (জিহাদে খরচ) এর ব্যাপারে।

    ورواه ابن أبي حاتم، عن الحسن بن محمد بن الصباح، عن أبي معاوية عن الأعمش، به مثله. قال: وروي عن ابن عباس، ومجاهد، وعكرمة، وسعيد بن جبير، وعطاء، والضحاك، والحسن، وقتادة، والسدي، ومقاتل بن حيان، نحو ذلك.
    ইবনে আবি হাতিম সনদক্রমে ইমাম আয়মাশ থেকে একই রকম বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সায়িদ বিন জুবায়ের, আ’তা, দাহহাক, আল-হাসান, কাতাদাহ, সুদ্দী এবং মুকাতাল বিন হাইয়্যান থেকেও অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।

    وقال الليث بن سعد، عن يزيد بن أبي حبيب، عن أسلم أبي عمران قال: حمل رجل من المهاجرين بالقسطنطينية على صف العدو حتى خرقه، ومعنا أبو أيوب الأنصاري، فقال ناس: ألقى بيده إلى التهلكة.
    লাইস বিন সা’দ ইয়াজিদ বিন আবি হাবিব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবু ইমরান আসলাম থেকে, তিনি বলেন কনস্টান্টিনোপলে এক মুহাজির শত্রু সারিতে হামলা করে তাদের সারি ভেদ করে চলে যান। তখন আমাদের সাথে আবু আইয়্যুব আল আনসারী (রাঃ) ছিলেন। মানুষ বলে উঠলো, সে নিজেকে ধ্বংশের মধ্যে নিক্ষেপ করলো।

    فقال أبو أيوب: نحن أعلم بهذه الآية إنما نزلت فينا، صحبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وشهدنا معه المشاهد ونصرناه، فلما فشا الإسلام وظهر، اجتمعنا معشر الأنصار نجيا، فقلنا: قد أكرمنا الله بصحبة نبيه صلى الله عليه وسلم ونصره، حتى فشا الإسلام وكثر أهله، وكنا قد آثرناه على الأهلين والأموال والأولاد، وقد وضعت الحرب أوزارها، فنرجع إلى أهلينا وأولادنا فنقيم فيهما. فنزل (2) فينا: { وأنفقوا في سبيل الله ولا تلقوا بأيديكم إلى التهلكة } فكانت التهلكة [في] (3) الإقامة في الأهل والمال وترك الجهاد.
    ‘তখন আবু আইয়্যুব (রাঃ) বললেন, আমরাই এই আয়াত সম্পর্কে সবার চেয়ে ভাল জানি, কারণ এই আয়াত আমাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। (এর প্রেক্ষাপট ছিল এই যে) আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহচর্য্যে থাকলাম, তাঁর সাথে অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহে অংশগ্রহণ করলাম এবং আমাদের বিজয় অর্জিত হল। যখন ইসলাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল এবং বিজয়ী হল তখন আমরা আনসার সম্প্রদায় একান্তে মিলিত হলাম। আমরা বললাম, আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নবীর সান্নিধ্য লাভে ও তাঁকে সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে ধন্য করেছেন। এখন ইসলাম প্রসার লাভ করেছে এবং তার অনুসারীও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতকাল আমরা আমাদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ ও সন্তানাদীর উপর ইসলামকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। ইতিমধ্যে যুদ্ধের প্রচন্ডতাও শেষ হয়েছে। তাই চল এখন আমরা আামদের পরিবার-পরিজন ও সন্তানাদির প্রতি মনোনিবেশ করি এবং তাদেরকে সময় দেই। তখন আমাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে- ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো। নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না’। তাই ধ্বংস হল, জিহাদ ছেড়ে দিয়ে পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের মাঝে বসে থাকা"।

    দেখা যাচ্ছে, আপনি যে অর্থে এই আয়াত ব্যবহার করেছেন, সালাফে সালেহীনদের মধ্য হতে শ্রেষ্ট তাফসীরকারকরা এই আয়াতকে এইভাবে ব্যাখ্যা করেন নি। বরং ভিন্ন অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন। এখন আমরা কোনটা সঠিক বলে মনে করবো?

    তাই আমরা শাইখ ডঃ সাইফুল্লাহ এর কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই,

    - রাসুল (সাঃ) এর সীরাত থেকে আপনার উল্লেখিত ঘটনাগুলোর কারণে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি / ঘোষনা শর্ত সাব্যস্থ হলে, একই ঘটনার কারনে একজন নবী / রাসুলের অনুমতি কিংবা ঘোষণা শর্ত হবে না কেন?
    - সালাফে সালেহীনদের মধ্যে কোন কোন মুজতাহিদ ইমাম, সীরাত বিশেষজ্ঞ, উসুলশাস্ত্রবিদ আপনার উল্লেখিত ঘটনাগুলোর কারণে জিহাদের জন্য একজন রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি / ঘোষণাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন?
    - উপরে উল্লেখিত আয়াতের কোন ব্যাখ্যাকে আমরা সঠিক মনে করবো? আপনার দেয়া ব্যাখ্যা নাকি স্বনামধন্য তাফসীরকারকদের উল্লেখকৃত ব্যাখ্যা?
    আশা করি শাইখ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন। এতে আমরা ও এদেশে আপনার দর্শক-শ্রোতা এই ব্যাপারে সঠিক ধারনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।

    শাইখ ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এর কাছে প্রশ্ন ১ - http://bit.ly/1XCMmCU
    শাইখ ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এর কাছে প্রশ্ন ২ – http://bit.ly/1XYRrFG
    শাইখ ডঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এর কাছে প্রশ্ন ৩ – http://bit.ly/28WEgjn

  • #2
    সকল প্রশ্ন একত্রেঃ https://www.facebook.com/Questions-t...6642045277718/

    Comment


    • #3
      উনার বাসের ড্রাইভার নাই।তাই উনি এক্সিডেন্ট করে খালে পরবে।

      Comment

      Working...
      X