Announcement

Collapse
No announcement yet.

সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল ৩য় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল ৩য় পর্ব

    সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল ৩য় পর্ব
    জসীমউদ্দীন আহমদ

    দাজ্জাল তৈরি?
    রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয় দাজ্জালের আর্বিভাবের পূর্বে ধোঁকাবাজির বেশ কিছু বছর অতিক্রান্ত হবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী আর সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করা হবে। বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে খেয়ানতকারী আর খেয়ানতকারীকে বিশ্বস্ত আখ্যায়িত করা হবে।’
    ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) এর ঘোষককে ঘোষণা দিতে শুনলাম, ‘সালাতের জন্য মসজিদে যাও।’ ঘোষণা শুনে আমি মসজিদে গেলাম এবং রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং মৃদু হেসে বললেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ সালাতের স্থানে বসে থাক।’
    তারপর বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্র করেছি?’
    সাহাবিগণ বললেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-ই ভাল জানেন।’
    তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কিছু দেওয়ার জন্য বা কোনো ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি, বরং তামিম দারির একটি ঘটনা শোনানোর জন্য তোমাদেরকে একত্র করেছি। তামিম দারি ছিল খৃস্টান। সে আমার নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছে, তা ওই কথার সঙ্গে মিল রাখে, যা দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম।’
    সে বলল, ‘একদা সে ‘লাখাম’ ও ‘জুজাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক জাহাজে সফরে বের হয়েছিল। সমুদ্রের তরঙ্গমালা একমাস পর্যন্ত তাদের অজনা পথে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তারপর সূর্যাস্তের সময় তারা একটি দ্বীপে নোঙ্গর করল। জাহাজের সঙ্গে বেঁধে রাখা ছোট নৌকায় করে তারা ওই দ্বীপে অবতরণ করল। তখন অস্বাভাবিক লোমবিশিষ্ট একটি প্রাণীর সাক্ষাৎ মিলল, যার লোমের আধিক্যের কারণে আগ-পিছ বোঝা যাচ্ছিল না। প্রাণীটি তাদের সঙ্গে কথা বলল। তারা অবাক হয়ে গেল, মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণী কীভাবে কথা বলতে পারে?
    তারা ওই প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তোর অমঙ্গল হোক, তুই কে?’
    প্রাণীটি বলল, ‘আমি জাসসাসা।’
    তারা বলল, ‘জাসসাসা’ কী?
    সে বলল, আমি ‘গুপ্তসংবাদ’ অন্বেষণকারী। প্রাণীটি তাদের বলল, ‘ওই যে গির্জা দেখা যাচ্ছে, সেখানে একজন লোককে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সে তোমাদের খবর জানতে উদগ্রীব।’
    তামিম দারি বলেন, ‘প্রাণীটির নিকট লোকটির কথা শুনে আমাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হল, আমরা ভাবলাম, সে কি তবে শয়তান? তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং ওই গির্জায় প্রবেশ করলাম। সেখানে বিশালাকৃতির এক লোককে দুই হাত ঘাড়ের সঙ্গে পেচিয়ে পায়ের গোছা ও গোড়ালির মাঝ দিয়ে বুক পর্যন্তÍ শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
    আমরা তাকে দেখে বললাম, ‘ছি, তোর একি অবস্থা?’
    লোকটি বলল, ‘তোমরা আমার খবর জানতে পারবে। আগে বল, তোমরা কারা?’
    আমরা বললাম, ‘আমরা আরবের লোক। একটি সামুদ্রিক যানে আমরা সফর করছিলাম। হঠাৎ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে পড়ে গেলাম। সেই তরঙ্গ আমাদেরকে ক্রমাগত একমাস ভাসিয়ে নিয়ে চলল। তারপর আমরা এই দ্বীপে নোঙ্গর করলাম এবং ছোট নৌকায় করে এখানে অবতরণ করলাম। এখানে আমরা বহুলোম বিশিষ্ট এক প্রাণীর সাক্ষাৎ পেলাম, লোমের আধিক্যে যার অগ্র-পশ্চাৎ চেনা যায় না। সে বলল, সে জাসসাসা। সে আমাদেরকে, তোমার সংবাদ বলল।’
    লোকটি বলল, ‘বিসানের খেজুর বাগানের কী অবস্থা। তা কি এখনো ফল দেয়?’ (বিসান ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চল)
    আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, এখনো ফল দেয়।’
    সে বলল, ‘শোন, শীঘ্রই তা ফল দেবে না।’
    সে বলল, ‘তাবরিয়া’ (সি অব গ্যলিলি) সাগরের অবস্থা কী? তা কি শুকিয়ে গেছে?’
    আমরা বললাম, ‘না তা শুকায়নি।’
    সে বলল, ‘শীঘ্রই তা পানিশূন্য হয়ে যাবে।’
    এরপর সে বলল, ‘তোমরা আমাকে ‘জুর’ ঝর্ণার খবর দাও। তাতে কি পানি আছে?’ (জুর সিরিয়ার একটি অঞ্চল)
    আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, তাতে প্রচুর পানি আছে। মানুষ ওই পানি দিয়ে চাষাবাদ করে।’
    সে বলল, ‘তোমরা আমাকে উম্মি নবির খবর বল। তিনি কি করছেন?’
    আমরা বললাম, ‘তিনি মক্কায় আর্বিভূত হয়েছেন। এবং সঙ্গীদের নিয়ে মদীনায় হিজরত করেছেন।’
    সে বলল, ‘তার বিরুদ্ধে আরবরা কি যুদ্ধ করেছে?’
    আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’
    সে বলল, ‘তিনি তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন?’
    আমরা বললাম, ‘তিনি তার পার্শ¦বর্তী আরবদের ওপর বিজয় লাভ করেছেন এবং তারা তাঁর অনুগত হয়ে গেছে।’
    সে বলল, ‘এমনই হবে।’
    আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’
    সে বলল, ‘তাঁর আনুগত্য করাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। আচ্ছা, এবার আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি, আমি ‘মসিহ দাজ্জাল’। অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করব, শুধু মক্কা-মদিনা ব্যতীত। চল্লিশ দিনের মধ্যে পৃথিবীর সব স্থানে গমন করব। কিন্তু মক্কা-মদিনায় প্রবেশ আমার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার কোনো একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে আমাকে বাধা প্রদান করবে। বস্তুত তার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতা পাহারারত রয়েছে।’
    বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসুল আপন লাঠি দ্বারা মিম্বরে টোকা দিয়ে তিনবার বললেন, ‘এটাই মদিনা, এটাই মদিনা, এটাই মদিনা।’
    তারপর তিনি বললেন, ‘আমি কি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে এ হাদিসটি বর্ণনা করিনি?’
    লোকেরা বলল, ‘জি হ্যাঁ।’
    তারপর তিনি বললেন, ‘দাজ্জাল সিরিয়ার কোনো এক সাগরে অথবা ইয়েমেনের কোনো এক সাগরে রয়েছে। পরে বললেন, বরং সে পূর্ব দিক থেকে আগমন করবে। এই বলে তিনি হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করলেন।’ (সহিহ মুসলিম)
    সি অব গ্যালিলি;




    ‘তাবরিয়া উপসাগর’ শুকিয়ে যাচ্ছে!
    দাজ্জালসংক্রান্ত তামিম দারির হাদিসে দাজ্জালের আগমনের যেসব আলামতের কথা উল্লেখিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ‘তাবরিয়া উপসাগর’, ‘বিসানের খেজুর বাগান’ এবং ‘আল-জুর ঝর্ণা’। এছাড়া হায়কলে সোলায়মানিকেও ইয়াহুদিধর্ম বিশ্বাসীরা দাজ্জাল আগমনের উপলক্ষ বলে মনে করে থাকে। এই পর্বে আমরা ভূ-তাত্ত্বিক এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।



    ইসরইলের সর্ববৃহৎ উষ্ণপানির লেক হচ্ছে, ‘সি অব গ্যালিলি’ যাকে আরবিতে বলা হয়েছে, ‘বাহরিয়ায়ে তাবরিয়া’। ৫৩ কিলোমিটার পরিধির এই হ্রদটি লম্বায় ২১ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৪৩ মিটার বা ১৪১ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০৫ ফুট নি¤œ এই হ্রদটি মৃতসাগরের পরে পৃথিবীর সর্বনি¤œ হ্রদ। সুমিষ্ট পানি এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। ‘তাবরিয়া উপসাগরের’ অবস্থান হচ্ছে পূর্ব ইসরাইল জর্দান সীমান্তের সন্নিকটে। এ সময় পর্যন্ত তাতে নানা প্রজাতির সাধু পানির মাছ পাওয়া যায়।
    ‘তাবরিয়া উপসাগর’ ইসরাইল মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় আধার। এই উপসাগরের পানির প্রধান উৎস হল জর্দান নদী। নদীটি গোলান মালভূমির জাবালুশ-শায়খ চূড়া থেকে নেমে এসেছে। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের ‘আরব-ইসরঈল যুদ্ধে’ ইসরঈলি ইয়াহুদিরা সিরিয়ার নিকট থেকে গোলান মালভূমি জবরদখল করে। যা অদ্যবধি তাদের মজবুত কব্জার মধ্যে রয়েছে। জাবালুশ-শায়খ গোলানের পাহাড়ি ধারার সবচেয়ে উঁচু চূড়া। এর উচ্চতা ৯২৩২ ফুট। যার এদিকে রয়েছে ‘বায়তুল মাকদিস’ আর অন্যদিকে সিরিয়ার রাজধানী ‘দামেস্ক’।
    ইসরঈল জাবালুশ-শায়খ থেকে নেমে আসা তাবরিয়া উপসাগরের গতি ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গেছে। ইসরাইল পানির বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হয় তাবরিয়া দরিয়ার মাধ্যমে। এখান থেকে বছরে প্রায় ৪০ কোটি কিউবিক লিটার পানি পুরো ইসরঈলে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ইসরাইল মিনারেল ওয়াটারের (সুপেয় পানি) বিরাট উৎস এই তাবরিয়া উপসাগর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ অঞ্চলের মুসলমানদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করার জন্যে নিজের চাহিদা পূরণের পর ইসরঈল অবশিষ্ট পানি মরুভূমিতে নিয়ে ফেলছে। এতে একদিকে জর্দানের ভূমি বন্ধ্যা হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে তাবরিয়া উপসাগরও শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল কিছু সচেতন মানুষ ‘সেভ সি অব গ্যালিলি’ নামে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সামাজিক ফোরামে প্রচারণা শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াটার স্ট্যাটিস্টিকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইল বর্তমান ওয়াটার প্লান চালু থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে সি অব গ্যালিলি বা তাবরিয়া উপসাগর শুকিয়ে যেতে পারে।
    মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইয়াহুদিদের ‘মেগডের’ মাঠ আর খৃস্টানদের ‘আরমাগেদনের’ প্রান্তর এই তাবরিয়া উপসাগরের কাছাকাছি পশ্চিমে অবস্থিত। এছাড়া হাদিসে দাজ্জাল কর্তৃক মুসলমানদের অবরোধ করে রাখার যে ‘আফিক’ ঘাঁটির কথা বলা হয়েছে, সেই স্থানটির অবস্থানও এই উপসাগরের দক্ষিণে।

    বাকি অংশ নিচে.......

  • #2
    ........... পরের অংশ

    কুববাতুস সাখরা; মসজিদে ওমর

    বর্তমানে ‘মসজিদে আল-আকসা’ বা ‘বায়তুল মাকদিস’ নামে পরিচিত যেই মসজিদটির চিত্র আমরা সচারাচর দেখতে পাই, তা সেই ‘আল-আকসা’ নয়, যেটি হজরত সোলায়মান (আ.) নির্মাণ করিয়েছিলেন। কেননা, ৫৯৭ খৃস্টপূর্ব অব্দে বাবেলের রাজা ‘নেবুচাদনেজর’ শামে আক্রমণ করে বায়তুল মাকদিস পুড়িয়ে দেয় এবং ওই মসজিদে সংরক্ষিত বনি ইসরঈলি নবিদের স্মৃতিচি‎হ্নগুলো লুণ্ঠন করে। ওই সময় দলে দলে ইয়াহুদিকে দাস হিশেবে বন্দি করে ‘বাবেল’ নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সাহাবায়ে কেরামের জমানায় ওই এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে পুরো মসজিদটি ভিত্তিসহ ধ্বসে পড়ে। বায়তুল মাকদিস ধ্বংসের প্রায় সাড়ে বারো শ’ বছর পরে হজরত ওমরের রা. খেলাফতকালে ফিলিস্তিনে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে, তিনি মসজিদটির মূলভিত্তি (হায়কলে সোলায়মানি) থেকে ২শ মিটার পূর্বদিকে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
    ইতিহাসে দেখা যায়, ৬৩৭ সালে আবু ওবায়দা বিন জাররাহ রা.-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জেরুসালেম অবরোধ করে। দীর্ঘদিন অবরোধের পর জেরুসালেমের খৃস্টান শাসক পেট্রিয়ার্ক সফ্রোনিয়াস খলিফা ওমর রা.-এর কাছে আত্মসমর্পণে রাজি হয়। এরপর ওমর রা. জেরুসালেম আসেন এবং আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হয়। হজরত ওমর রা. জেরুসালেমে ধ্বংসপ্রাপ্ত বায়তুল মাকদিস পরিদর্শনে গেলে পোপ তাকে সেখানে নামাজ পড়তে অনুরোধ করে। কিন্তু ওমর রা. তা প্রত্যাখ্যান করে বায়তুল মাকদিসের আঙিনায় নামাজ পড়েন। যেখানে দাউদ (আ.) (ইয়াহুদি পরিভাষায় ডেভিড) নামাজ পড়েছিলেন বলে কথিত আছে। রাসুল সা. মেরাজের রাতে ওই স্থান থেকে ঊর্দ্ধাকাশে গমন করেছিলেন। এই স্মৃতি বিজড়িত স্থানে হজরত ওমর রা. একটি কাঠের মসজিদ নির্মাণ করেন। ১১৯৩ সালে আইয়ুবি শাসনামলে সুলতান আল-ফজল ইবনে সালাহুদ্দীন ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) উঁচু মিনার বিশিষ্ট মসজিদের বর্তমান কাঠামোটি নির্মাণ করেন। পরে তুর্কি সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ এর পুনঃনির্মাণ করেন। বর্তমান কাঠামোটি তুর্কি আমলে নির্মিত। যাকে ‘ডোম অব রক’ বা ‘কুববাতুস সাখরা’ বলা হয়। এর অন্য নাম ‘মসজিদে ওমর’। কালে কালে মসজিদটিতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। তুর্কি সম্রাট সোলায়মানের শাসনামলে এর বাইরের দেয়াল সুদৃশ্য টাইলস দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়। সর্বশেষ জর্দানের কিং হুসাইন গম্বুজটির ওপর ৮.২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৮০ কেজি স্বর্ণের প্রলেপ দান করে। যে কারণে বহু দূর-দূরান্ত থেকেও ঝলমলে ওই সোনালি গম্বুজটি পরিদৃশ্য হয়।



    ইয়াহুদিরা বিশ্বাস করে, তাদের মধ্য থেকে হযরত দাউদ আ.-এর বংশধারায় এক সন্তান জন্ম লাভ করবে। যে সোলায়মান আ.-এর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে বসে পুরো দুনিয়া শাসন করবে। এ কারণে ইয়াহুদিরা কুব্বাতুস সাখরার চারপাশে খনন কাজ চালাচ্ছে। যাতে তা নিজে নিজে ভেঙে পড়ে। আর তারা সোলায়মান আ.-এর ভিত্তির ওপর ওই মসজিদটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
    ফ্রিম্যাসন





    খৃস্টের জন্মের প্রায় হাজার বছর আগে নবি সোলায়মান (আ.) ফিলিস্তিনে ‘মসজিদে আকসা’ বা ‘বায়তুল মাকদিস’ নির্মাণ করেছিলেন। ইয়াহুদিদের নিকট এটি ‘টেম্পল অব সলোমন’ নামে পরিচিত। ইয়াহুদি বিশ্বাস মতে, এই টেম্পল বা মন্দিরে রক্ষিত ছিল পাথরে খোদিত ‘দশম আজ্ঞা’ বা ‘টেন কমান্ডমেন্টস’। ইয়াহুদিদের আরো বিশ্বাস হচ্ছে. ওই টেম্পলে স্বয়ং ঈশ্বর বাস করতেন।
    ধারণা করা হয় সোলায়মান (আ.) ‘ইয়াওয়ের’ (হিব্রু ভাষায় ঈশ্বর) নিকট থেকে স্থাপনাটির স্বর্গীয় নকশা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। যে কারণে এটি হয়ে উঠেছিল ‘অতীন্দ্রিয় জ্ঞানের উৎস’। এই নকশাটি সম্বন্ধে আর একজন মাত্র লোক জানতেন, পশ্চিমে তিনি ‘হাইরাম আবিফ’ নামে পরিচিত। মেধাবী এই স্থপতি বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কারিগরদের অন্যতম ছিল। হিব্রু বাইবেলে (তালমুদ) তাকে ‘বিধবার সন্তান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাইরাম আবিফকে তার কয়েকজন শিষ্য গোপন আজ্ঞা লাভের বাসনা থেকে খুন করে পাহাড়ি গুহায় চাপা দিয়ে রাখে। ইয়াহুদিদের প্রাচীন সংঘ ‘ফ্রিম্যাসনারি’র (ঋৎববসধংড়হৎু) উদ্ভব এই হাইরাম আবিফকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। ধারণা করা হয়, তিনি ছিলেন ফ্রি অর্থাৎ, ‘মুক্ত’ এবং ম্যাসন- ‘কারিগর’। ফ্রিম্যাসন (আরবিতে যাদেরকে ‘মাসুনিয়া’ বলা হয়) আকিদা মতে, ‘হাইরাম আবিফ তার অতিন্দ্রীয় জ্ঞানের দলিলাদি ‘সলোমন মন্দিরের’ নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। যেখানে বিশ্বকে শাসন করা বা ‘বশীভূত’ করে রাখার জ্ঞান ও কলা-কৌশল রয়েছে।’ (যেমন বলা হয়, সোলায়মান আ. মানব ও দানবকে বশীভূত করে পৃথিবীব্যাপী তার সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন)।



    তালমুদ, জাদুর নকশা, বায়তুল মাকদিসের স্থাপত্য কৌশল এবং এ সংক্রান্ত দলিলাদি করায়ত্ত্ব করার জন্য ক্রুসেডের সময় ‘নাইট টেম্পলার’ নামে আরেক উগ্রগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। তবে বিশ্লেষক ও ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ‘নাইট টেম্পলার’ এবং ‘ফ্রিম্যাসন’ মূলত একই গোষ্ঠীর লোক। শুরুর দিকে এদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ জন। তারা খৃস্টের প্রতি আনুগত্য, দারিদ্র্য ও কৌমার্যের ব্রত নিয়েছিল। এদের রোমাঞ্চকর কার্যকলাপে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপের অভিজাত শ্রেণি তাদের সংঘে যোগ দেয়। এ সময় তারা প্রচুর অর্থ-সম্পদ ও ভূ-সম্পত্তি লাভ করে। কালে কালে এই গুপ্ত সংঘটি ফ্রিম্যাসনদের ‘গুপ্তঘাতক’ দলে পরিণত হয়। এরা প্রায় ৭৫ বছর পর্যন্ত জেরুসালেমের ‘টেম্পল অব সলোমন’কে কেন্দ্র করে তাদের গোপন কর্মকা- পরিচালনা করে। কথিত আছে, তারা ওখান থেকে ‘টেন কমান্ডমেন্টস’ ও অন্যান্য গোপন নথি হস্তগত করতে সমর্থ হয়েছিল। ক্রুসেড যুদ্ধে পরাজয়ের পর এদের প্রকাশ্য তৎপরতা চলে যায় পর্দার আড়ালে। ‘লুসিফারে’ (সর্বদর্শী আরাধ্য দেবতা) বিশ্বাসী ম্যাসনিকরা এই সময় পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তাদের গোপন কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচ- বাসনা এখনো তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে। [চলবে]
    সুত্রঃ
    http://www.weeklylikhoni.com/
    বি,দ্র, ছবি গুলো আমার সংগৃহীত

    Comment

    Working...
    X