Announcement

Collapse
No announcement yet.

তুরস্কের সেনা অভুত্থান ----- দি গুলেন ইনস্টিটিউট

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তুরস্কের সেনা অভুত্থান ----- দি গুলেন ইনস্টিটিউট

    বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় আমি লক্ষ্য করেছিলাম মূলত না জানার কারণে ফেতুল্লা গুলেনকে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের একজন সেবক হিসেবেই সবাই মনে করতো। এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইসলামপন্থীদের ফেতুল্লা গুলেনের পলিসির আলোকে কাজ করার পরামর্শ দিতেও শুনেছি এবং তার পক্ষে অনেকে লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রাথমিক জীবনে ইসলামের কারণে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী এই ব্যক্তিই সময়ের ব্যবধানে ইহুদি এবং পশ্চিমাদের এজেন্ট হিসেবে গোটা দুনিয়ায় মুসলমানদের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করতে এতটুকুও দ্বিধা করেনি।

    ফেতুল্লা গুলেন ১৯৪১ সালের ২৭ এপ্রিল তুরস্কের এরজুরুম নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি কুরআন শিক্ষা শুরু করেন। এরপর তিনি ১৯৪৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে তার বাবা অন্য একটা শহরে বদলি হওয়াই তিনিও সেখানে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি কুরআনে হাফিজ হন ১৯৫১ সালে। এরপর বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন ও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটান। এর পর তিনি ইমাম হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। আবেগঘন ওয়াজ নাসিহতের মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইজমিরে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে সে সময়ে বদিউযযামান সাইদ নুরসির আন্দোলন থেকে ইস্তফা দেন কিন্তু তিনি তার জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখার জন্য সাইদ নুরসির লেখা তাফসির ‘রিসালায়ই নুর’কে অবলম্বন করে তার ওয়াজ নসিহত চালিয়ে যেতে থাকেন। ফেতুল্লা গুলেন সেই সময়ের রাজনৈতিক ব্যাপারে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন ও সেনা অভ্যুত্থান এর বিরুদ্ধে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। এই সকল কারণে তিনি জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

    ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত ধরে তুরস্কে ১৯৬০ সালের দিকে শুরু হওয়া আন্দোলন হিজমেত বা স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন নামে পরিচিত। শিক্ষা, গণমাধ্যম, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইত্যাদি নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করে। এই আন্দোলনের আওতায় সেক্যুলার কারিকুলাম অনুসারে তুরস্কে তিন শতাধিক এবং বিশ্বের ১৮০টি দেশে সহস্রাধিক স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। যদিও গত বছর রাশিয়ান সরকার ফেতুল্লা গুলেনের সকল কর্মকান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের রাশিয়া থেকে বিতাড়িত করেন। তুরস্কের প্রভাবশালী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েরও তিনি মালিক। এছাড়া তুর্কি ও ইংরেজি ভাষায় বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এই আন্দোলনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঈরযধহ ঘবংি অমবহপু-এর মতো প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিডিয়া গ্রুপও রয়েছে। ’৯০-এর দশকে গুলেনের ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ’ এই আন্দোলনকে বেশ জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৯৮ সালে ফেতুল্লা গুলেনের আয়োজনে দেশের সেক্যুলার ও ইসলামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। যা দেশে-বিদেশে সবার নজর কাড়ে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তার ওয়াজ নসিহত ইসলামের আলোকে হওয়াই তিনি জনগণের ভালোবাসা ও সহানুভূতি অর্জন করেন।

    তুরস্কে নাজিমুদ্দিন এরবাকানের নেতৃত্বে রেফাহ পার্টির জনপ্রিয়তা ও পরবর্তীতে ক্ষমতা গ্রহণ তুরস্কের মুসলিমদের মনে এক আশার আলো জ্বলে ওঠে। এরবাকান সেই সময়ে প্রায় সকল ইসলামপন্থীদের সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে সমর্থন লাভ করলেও ফেতুল্লাহ গুলেন থেকে তিনি কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা পাননি। এরবাকান ক্ষমতায় আরোহণ করার পর পরই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজ করা শুরু করেন। যেটা আমেরিকা-ইসরাইলসহ অন্যান্য ইয়াহুদিবাদী শক্তি ভালো ভাবে নেয়নি। এবং এরবাকান কে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তারা ওঠে পড়ে লাগে, এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে পদচ্যুত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য এর পেছনে ফেতুল্লা গুলেনেরও হাত ছিল। ১৯৯৭ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে বলেছিলেন, এরবাকান তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার যোগ্য ছিলেন না। তিনি জনগণের আমানতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারেননি।’ তার এই মন্তব্যে মুসলিমরা খুবই মর্মাহত হন। একদিকে বাম ও জাতীয়তাবাদীরা অপরদিকে ফেতুল্লা গুলেনের কথা বার্তা ও তাদের বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতি রেফাহ পার্টির জন্য মোকাবেলা করতে খুবই হিমশিম খেতে হয়। নাজিমুদ্দিন এরবাকানের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা বন্ধ করার ব্যাপারে তার প্রকাশ্য সম্মতি ছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হিজাব পরার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সর্বত্র এর বিপক্ষে নতুন করে আন্দোলন গড়ে ওঠে। গুলেন সে সময় এসব মুসলমানদের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং তার সংগঠনের অধীনস্থ মেয়েদেরকে হিজাব খুলে ক্লাস করার জন্য বলেন। ফেতুল্লাহ গুলেন রেফাহ পার্টি যাতে ক্ষমতায় না থাকতে পারে সে জন্য ইয়াহুদিদের সাথে হাত মিলান এবং পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক বাম আন্দোলনের নেতা বুলেন্ত এযেভিতকে সমর্থন করেন। সেই সময়ে টিভি-পত্রপত্রিকাতে এরবাকানকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং আখিরাতে তিনি বুলেন্ত এযেভিত কে শাফায়াত করবেন বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি আমেরিকাতে পাড়ি জমান।

    ২০০০ সালে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করে দেয়ার পর ফাযিলেত পার্টি খুলা হয়। আর সেখানে যুবক নেতা হিসেবে পরিচিত আবদুল্লাহ গুল; রিজেপ তায়্যিপ এরদগান; বুলেন্ত আরিঞ্ছদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ২০০১ সালে এদের নেতৃত্বে একে পার্টি গঠন করার সময় কৌশলগত কারণে এরদুগান ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার সংগঠন গুলেন আন্দোলন যা তুরস্কে ‘হিযমেত’ এর সহযোগিতা নেন।

    এরদোগান ও তার প্রথম ৯ বছরের শাসনামলে তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন। সরকারি সকল জায়গাতেই তারা স্থান দখল করে সরকার এর ভেতর সরকার গঠন করেন। কিন্তু নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ফেতুল্লাহ গুলেন এর সাথে এরদোগানের একে পার্টির সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে পরবর্তীতে ২০১৩ সালে একেপি ও গুলেন এর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সবশেষ গেজে পার্কের আন্দোলনের সময় এরদুগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য প্রশাসনে তার লোকজন এবং বামদের ঐক্যবদ্ধ করেন ফেতুল্লা গুলেন। কিন্তু এরদুগান অনেকটা সফলতার সাথে সে সমস্যা কাটিয়ে ওঠেন।

    উনার লিখিত বই পুস্তকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আকিদার বিপরীত কথাবার্তাসমূহ দেখলেই আমরা তার সম্পর্কে ধারণা পাবো। ফাসিল থেকে ফাসিলা (ঋধংহ্নষফধহ ঋধংহ্নষধ) বইয়ের ৩ নব্বর খন্ডের ১৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন যে ‘বিশেষ করে কালেমায়ে শাহাদাত সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন করে বিবেচনা করা দরকার। এমন কি সেই কালেমার অর্ধেক অর্থাৎ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ যারা না বলবে তারাও মরহুম ও রহমতের দৃষ্টিতে দেখার যোগ্য। কেননা হাদিসে বলা আছে আল্লাহ তার বিশাল রহমতের দ্বারা আখেরাতে এমনভাবে নুরান্নিত করবেন যে; শয়তান পর্যন্ত বলবে যে, ‘আমিও যদি ফিরে আসি তাহলে মুক্তি পাবো কি?’ এই কথা বলে শয়তানও আশা পোষণ করতে থাকবে। এখন এমন এক দয়াবান রবের দয়ার বিপরীতে আমাদের কৃপণতা এবং সেই কৃপণতার প্রতিনিধিত্ব আমরা কেন করব? সেই সাথে আমাদের কি আসে যায়? সমগ্র সৃষ্টি জগৎ তার; সকল সম্পদের মালিক তিনি সকল বান্দার রবও হলেন তিনি। তাই আমাদের সকলকেই আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানা থাকা উচিত। ‘লেখক ও সাংবাদিক সংগঠন এর দ্বারা প্রকাশিত কুরেসেল বারিশা দরু (খুজাদান কেলেবেগে-৩) নামক বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন যে “ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে নাজিলকৃত আয়াতসমূহ; অথবা হযরত মুহাম্মাদ সা:-এর সময়ে কিংবা তাদের নিজেদের নবীদের সময়ে বসবাস রত ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে সেই আয়াতগুলো এখন আর প্রযোজ্য নয়।”

    সারা দুনিয়ার প্রায় ১৮০টি দেশে স্কুল রয়েছে সেই সকল স্কুল থেকে প্রতিবছর ১৫-১৬ বসরের যুবতী মেয়েদেরকে নিয়ে তার্কিশ অলিম্পিয়াডের নামে নাচগানের অনুষ্ঠান করে থাকে । সে সম্পর্কে তিনি বলছেন যে সেখানে নাকি রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং উপস্থিত থাকেন (নাউজুবিল্লাহ)। আর সেই অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করা নাকি ওহুদের ময়দানে জিহাদ করার সমতুল্য।

    গুলেন আন্দোলন এদের সর্বনিম্নস্থল হলো বিভিন্ন মেস, কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট স্কুল, হোস্টেল ও তাদের পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। তাদের এই সকল মেসে ও বাসার ছাত্রদেরকে তাদের মন মানসিকতার আলোকে গড়ে তুলা হয়। তাদের বাসা ও মেসে থাকা অধিকাংশ ছাত্র নিজেদের পরিচয়কে গোপন করে চলে। তারা এতটায় গোপনীয় যে একই বিল্ডিংয়ে ২টা অ্যাপার্টমেন্টে এ থাকলেও তারা একজন আরেকজন সম্পর্কে বেখবর। তাদের তৈরি করা এই সকল যুবক শ্রেণী তাদের বড়দের পরিকল্পনা মত কেউ সেনাবাহিনীতে কেউবা আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ তাদের হর্তাকর্তাদের মন মত তারা নিজেদেরকে গঠন করে থাকে।

    এই ভাবে লোক তৈরি করার ফলে ও তাদের জানা অজানা সকল সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সরকারি বাজেটের কাছাকাছি। তাদের প্রচারিত পত্রিকার গ্রাহকসংখা প্রায় ১ মিলিয়ন ও তাদের টিভি মিডিয়া হল সামানইয়ল টিভি পাশাপাশি তাদের ৩৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর পাশাপাশি দুনিয়ার প্রায় ১৮০টি দেশে এদের স্কুল রয়েছে। এগুলোতে ইসলামী শিক্ষা দেয়ার এ কথা বলা হলেও মূলত পাশ্চাত্য ধাঁচেই শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে।

    সিআইএ এবং এফবিআইয়ের সাথে গুলেনের গভীর সম্পর্কের কথা সেই ৯০ দশক থেকে ওপেন সিক্রেট।

    ২০০৫ সালে এফবিআই নিজেদের ওয়েবসাইটে তাদের সহযোগী সংস্থাদের নাম প্রকাশ করেন যাতে চার নাম্বারে ছিল ‘দি গুলেন ইনস্টিটিউট’ তথা গুলেন মুভমেন্ট। প্রথমদিকে রজব তায়েফ এরদোগানের ক্ষমতায় আসার জন্য একটি বড় গোষ্ঠীর ভোটের প্রয়োজন ছিল। কারণ তুর্কিবাসীর বিশাল একটা অংশের ওপর গুলেনের অনেক প্রভাব রয়েছে। তাই গুলেন মুভমেন্টের সাথে গভীর একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং পার্টি গঠনের এক বছরের মাথায় ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় আসার পর ফেতুল্লাহ গুলেন যেন অদৃশ্য প্রধানমন্ত্রী বনে গেলেন। তিনি আমেরিকার পেনসিলভানিয়াতে বসে যাকে যে পোস্টে দিতে বলেন তাকে সে পোস্টে দেয়া হয় এক পর্যায়ে দেখা যায় পুলিশ-সেনাবাহিনী থেকে শুরু অফিস-আদালত পর্যন্ত সব জায়গায় গুলেন মুভমেন্টের লোকের ব্যাপক এবং ভয়ঙ্কর উপস্থিতি। গুলেন মুভমেন্টের লোক হলেই পদ দেয়া হয়েছে। যা জেনেশুনে পায়ে কুড়াল মারারই শামিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার ফলাফল হিসেবে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ট্র্যাজেডির উৎপত্তি।

    দেশজুড়ে রয়েছে গুলেন মুভমেন্টের হাজার হাজার কোচিং সেন্টার। সেসব কোচিং সেন্টারের গোপনে গুলেন মুভমেন্ট সম্পর্কে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়। সেটা ছিল ওপেন সিক্রেট একটা ব্যাপার। এবং কোচিং সেন্টার গুলোর ফিও ছিল গরিবদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরদোগান তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্রমান্বয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির কাজটা করে যাচ্ছিলেন এবং গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়ে তদস্থলে ফ্রি কোর্সের ব্যবস্থা করা হবে। এরকম একটা সিদ্ধান্ত গুলেন মুভমেন্ট সহজভাবে নিতে পারেনি। তারা এর পর থেকে এরদোগানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। এর মধ্যে এরদোগানের বিরুদ্ধে ফেতুল্লাহ গুলেনের করা একটা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার শিকার হয়েছে। এবং গত ১৭ ডিসেম্বর তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে এরদোগানসহ মন্ত্রিপরিষদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যেটা চলে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত। কিছু মন্ত্রীর রদবদলের মাধ্যমে কোন রকম কাটিয়ে ওঠেন এ বিপদ থেকে। ঐ দিকে গুলেন মিডিয়াতে এরদোগানের বিরুদ্ধে চলছে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা। কয়েক মাস আগে ইসরাইলি হামলায় সাত ফিলিস্তিনি শহীদ হলে গুলেনের মুখপাত্র সামানিয়ল টিভি বলে, ‘ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের সাত সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।’ আল কুদসের রক্ষার সংগ্রামে অবিরাম যুদ্ধরত ফিলিস্তিনি মোজাহিদদেরকে সন্ত্রাসী বলতে দ্বিধা করেনি এ তথাকথিত ইসলামিস্ট জামাত গুলেন মুভমেন্টের মিডিয়া। ১৭ ডিসেম্বরের ঘটনার পর থেকে এরদুগান বলে আসছেন, আমি তোমাদেরকে (গুলেন মুভমেন্ট) বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমার এতবড় ক্ষতি করলে।’

    ২০১১ সালে তুরস্কের একটা এনজিও আইএইচএস মাভি মারমারা নামের জাহাজে করে ফিলিস্তিনের দুর্গত অঞ্চলে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল, ভুমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় ইসরাইল সেখানে বিমান হামলা চালায়, ফলে ৯ জন নিহত হয়। সমগ্র দুনিয়ায় বিষয়টি আলোড়ন তৈরি করে এবং সবাই ইসরাইলকে আইনের মুখোমুখি করানোর দাবি জানায়। কিন্তু ফেতুল্লা গুলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি বলেন মাভি মারমারার উচিত ছিল ইসরাইলের অনুমতি নেয়া। এ ছাড়াও মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা চালানোর সময় তিনি বৌদ্ধদের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, ‘বৌদ্ধ একটা হক ধর্ম।’

    এভাবেই বিভিন্ন সময়ে ফেতুল্লা গুলেন মুসলমানদের স্বার্থের চেয়ে অন্যদের বড় করে দেখেন। মূলত তার পেছনে ইহুদি এবং পশ্চিমাদের কোটি কোটি মিলিয়ন ডলার খরচের মাধ্যমে এভাবেই তাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। কিন্তু মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী এই ব্যক্তিকে পশ্চিমারা তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করার মিথ্যা প্রয়াস চালান।


    (collected)

  • #2
    গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট । জাজাকাল্লাহ..............

    Comment


    • #3
      কতটা প্রভাবশালী গুলেন ও গুলেনপন্থিরা?
      =======================
      সারা দুনিয়ায় যে নামটি এখন আলোচিত। সামালোচিত। যিনি বিদেশে থেকেও প্রভাব কাটান নিজ ভূমিতে। তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন ফেতুল্লাহ গুলেন। তার পুরো নাম মোহাম্মদ ফেতুল্লাহ গুলেন। তুরস্কের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের নেপথ্য-কারিগর হিসেবে এ নামটি উচ্চারিত হচ্ছে জোরেশোরে। অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ব্যক্তিগতভাবে তাকে ও তার হিজমেত আন্দোলনকে দায়ী করতে দেরি করেননি।

      এরপরই যুক্তরাষ্ট্র-নিবাসী এ রহস্যময় ধর্মীয় নেতাকে নিয়ে সারা বিশ্বে কৌতূহল তুঙ্গে উঠে। অবশ্য, ফেতুল্লাহ গুলেন ওই অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ১৯৪১ সালে তুরস্কের ছোট্ট গ্রাম কোরুচুকে তার জন্ম। ষাট ও সত্তরের দশকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন গুলেন।

      নব্বইয়ের দশকে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সংলাপের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মোহাম্মদ ফেতুল্লাহ গুলেন ইসরাইলের সেফার্ডিক প্রধান রাবাই এলিয়াহু বাকশি ডোরনসহ ভিন্ন ধর্মের অনেক নেতার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।



      ১৯৯৯ সালের জুনে তিনি চিকিৎসার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। কিন্তু পরে জানা যায়, গ্রেপ্তার এড়াতেই তার যুক্তরাষ্ট্র গমন। ১৯৯৯ থেকে আজ অবদি তিনি স্বঘোষিত নির্বাসনে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ছোট শহর সেলর্সবার্গের ২৫ একরজুড়ে অবস্থিত একটি বিশাল বাড়িতে খুবই নিভৃতে তিনি বাস করেন।কারও সঙ্গেই তিনি তেমন কোন কথা বলেন না। বহু অনুরোধ সত্ত্বেও, গণমাধ্যমকে তিনি সাক্ষাৎকার দেন না বলেই চলে। এ বাড়িটিতে বসেই অনেকটা রিমোট কন্ট্রোলের মতো তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন হিজমেত আন্দোলনের বিশাল সাম্রাজ্য। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, থিংকট্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, গণমাধ্যম- সব মিলিয়ে শ’ শ’ কোটি ডলারের সম্পত্তি তার।সবচেয়ে বড় কথা তুরস্কের সরকার, প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ প্রায় সবখানে প্রভাবশালী অবস্থানে আছেন তার বহু অনুসারী, যাদেরকে ‘গুলেনিস্ট’ বলা হয়।


      কিছু তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ওই বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘বর্তমান সিস্টেম এখনও ক্ষমতায় আছে। আইনসভা ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানে আমাদের যেসব বন্ধু প্রভাবশালী অবস্থানে আছেন, তাদের উচিত বিস্তারিত জেনে নেয়া ও সতর্ক থাকা। যাতে করে এ সিস্টেমকে তারা পাল্টে দিতে পারেন । যতক্ষণ না আপনারা ক্ষমতার সব কেন্দ্রে পৌঁছবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের অবশ্যই এ সিস্টেমের ধমনিতে প্রবেশ করতে হবে, কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই। কিন্তু পরিস্থিতি আরও অনুকূলে আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।’



      ২০০১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি পান, যদিও তখন তুরস্কে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলছিল। তবে তিনি কখন গ্রিনকার্ড পান তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেখা গেছে মার্কিন গণমাধ্যমে। একবার মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেয়। তখন তার সমর্থনে এগিয়ে আসেন সাবেক উচ্চপদস্থ সিআইএ কর্মকর্তা ও ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গ্রাহাম ই. ফুলার।

      সিআইএ’র সাবেক কাবুল স্টেশন চিফ ফুলার তখন গুলেনের পক্ষে এফবিআই ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে চিঠি লিখেন। তার সুপারিশের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যেতে দেয়া হয় গুলেনকে। তার আরেক সুপারিশকারী ছিলেন তুরস্কে সিআইএ’র সাবেক দুই কর্মী জর্জ ফিদাস ও মর্টন আব্রামোয়িৎস, যিনি আবার পরবর্তীতে তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ছিলেন।

      তার মতো একজন ব্যক্তি কীভাবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ, তা এক রহস্য বটে। আবার এ কারণেই তার পেছনে মার্কিন আশীর্বাদ রয়েছে বলে মনে করেন এরদোগান সমর্থকরা।

      তুরস্কের সরকার, প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ প্রায় সবখানে প্রভাবশালী অবস্থানে আছেন তার বহু অনুসারী, যাদেরকে ‘গুলেনিস্ট’ বলা হয়:

      সম্ভবত, এমন কোনো খাত নেই যেখানে ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বাধীন হিজমেত আন্দোলন প্রভাব বিস্তার করেনি। বিশ্বের ১৫০টি দেশে বহু মাধ্যমিক স্কুল পরিচালনা করে তার সংগঠন। এক যুক্তরাষ্ট্রেই ১৬০টিরও বেশি এমন চার্টার স্কুল রয়েছে। এসব স্কুল থেকে বহু তুর্কি বের হয়েছেন, যাদের অনেকে পেশাগত ও শিক্ষাগত জীবনে ভীষণ সফল। একসময় তাকে বলা হতো ‘তুরস্কের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি’।


      ২০০৯ সালে তার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরে তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস জেফরি, যেগুলো পরে উইকিলিকস উন্মুক্ত করে। সেখানে তার রাজনৈতিক এজেন্ডা সমপর্কে বিশদ আলোচনা করেছিলেন রাষ্ট্রদূত জেফরি।


      তিনি উল্লেখ করেন, তুরস্কের পুলিশ বাহিনীতে শক্ত অবস্থান আছে গুলেনিস্টদের। কিন্তু পুলিশ বাহিনী গুলেনিস্টরা নিয়ন্ত্রণ করে, এমন দাবি নিশ্চিত করাটা অসম্ভব হলেও, কেউই দ্বিমত করেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বিবিসিকে বলেন, গুলেন এমন আন্দোলনের শীর্ষে রয়েছেন, বিশ্বজুড়ে যার সম্ভবত কয়েক কোটি অনুসারী আছেন।


      পাশাপাশি গণমাধ্যম, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও উন্নতমানের প্রাইভেট স্কুলের মাধ্যমে কয়েক শ’ কোটি ডলারের সমপত্তি আছে এ আন্দোলনের। তার সমপর্কে প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডলিন অলব্রাইট, সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের মতো মহারথীরা।


      দেশে হিজমেত আন্দোলনের সঙ্গে সমপর্ক থাকার দায়ে হাজার হাজার কৌঁসুলি ও বিচারককে বহিষ্কার করেছে এরদোগান প্রশাসন। এসব থেকেই অনুমেয় কতটা প্রভাবশালী হিজমেত আন্দোলন।


      সিআইএ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ: মধ্য এশিয়ার দুই দেশ উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তানে গুলেনিস্টদের কয়েকটি স্কুলের ১৩০ শিক্ষককে আটক করা হয়।


      অভিযোগ উঠে, তারা হলেন ছদ্মবেশী সিআইএ এজেন্ট। তুর্কি ইন্টিলিজেন্স সার্ভিসের ইস্তাম্বুল শাখার সাবেক প্রধান ওসমান নুরি তার স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেন, সিআইএ’র ওই অপারেশনের নাম ছিল ব্রিজেস অব ফ্রেন্ডশিপ। সাবেক এফবিআই কর্মী সাইবেল এডমন্ডসও তার একটি স্মৃতিকথায় সিআইএ কর্মীদের দ্বারা গুলেন স্কুল ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন। যদিও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ও গুলেনের সুপারিশকারী গ্রাহাম ফুলার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

      (COLLECTED & EDITED)

      Comment

      Working...
      X