Announcement

Collapse
No announcement yet.

যুদ্ধজয়ের কৌশলঃ- প্রতিপক্ষকে নিজের পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যুদ্ধজয়ের কৌশলঃ- প্রতিপক্ষকে নিজের পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা

    যুদ্ধজয়ের কৌশলঃ-

    প্রতিপক্ষকে নিজের পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা

    -
    যুদ্ধজয়ের অন্যতম প্রধান কৌশল হলো: প্রতিপক্ষকে নিজের পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা। বদর যুদ্ধে কী হলো? নবীজি সা. আগেই ময়দানে গিয়ে সুবিধাজনক কৌশলগত স্থান নিজেদের দখলে নিলেন। আবু জাহলকে বাধ্য করলেন শুরুতেই তার অধীনতা মেনে নিতে! ওহুদে কী হলো? হুবহু একই ঘটনা। নবীজি পছন্দসই জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। খন্দকেও একই অবস্থা।
    -
    ইসলামী ইতিহাসে ভয়াবহ ত্রাস: মোঙ্গলদেরকে কিভাবে দমন করা সম্ভব হলো? হুবহু সুন্নত তরীকার যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করে। রুকনুদ্দীন বায়বার্স তাতারদেরকে আইনে জালুতের ময়দানে আসতে বাধ্য করলেন। তাতাররা টোপ গিলল। বিশ্ব ইতিহাসের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর অন্যতম একটা হয়ে গেল সেটা। মুসলমানরা কচুকাটা করলো রক্তপিপাসু তাতারদেরকে।
    -
    খালিদ বিন ওয়ালীদ রা.-এর কৌশলগুলো বিশ্লেষণ করলেও এতবেশি মুগ্ধতা আসে, বলার নয়। যুদ্ধে জিততে হলে প্রথম চাল নিজেকেই দিতে হয়। নিজের অবস্থান পোক্ত করে প্রতিপক্ষের সামনে খুব বেশি সুযোগ না রাখা।
    -
    বাসায় মেহমান এল। তাকে প্রস্তাব দেয়া হলো:
    -কী খাবেন? চা না কফি?
    শতকরা নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর আসবে চা অথবা কফি। দুইয়ের কোনও একটা। তৃতীয় কোনও ‘পছন্দ’ খুবই কম আসে। না না ‘একগ্লাস জুস’ হবে? এমন বেয়াড়া বায়না সবাই করে না।
    শ্রোতার চিন্তাকে এভাবে সীমাবদ্ধ করে ফেলাকে আরবীতে বলে:
    - ‘উসলূবুত-তা’তীর’ (اسلوب التأطير) বেড় দেয়া পদ্ধতি। অনেকে এই পদ্ধতিকে সচেতনভাবেই ব্যবহার করে। অন্যের অজান্তেই।
    -
    মা শিশুকে বলে: তুমি আজ কয়টায় ঘুমুতে যাবে? আটটায় নাকি নয়টা? শিশু চাইবে আরেকটু বেশি জেগে থাকতে। আরেকটু খেলা করতে। সে উত্তর দিবে: নয়টায়। মা কিন্তু শিশুটিকে কৌশলে তার চিন্তা মেনে নিতে বাধ্য করলো।
    -
    হুবহু এই কৌশলটাই রাজনীতির বড় খেলোয়াড়রা সুকৌশলে ব্যবহার করে। ইহুদিমিডিয়া ব্যবহার করে। একবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে একটা মার্কিন বিমান চীনা এলাকায় ভূপাতিত হলো। দু’পক্ষে টানটান উত্তেজনা দেখা দিল। চীনা পক্ষ থেকে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বললো:
    -চীনা কর্তৃপক্ষ আমাদের বিমান দিতে বড় বেশি বিলম্ব করছে! আমরা তাদের এই ধীরেচলা নীতির কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছি!
    চীনা কর্তৃপক্ষ থেকে সাথে সাথে উত্তপ্ত জবাব এল:
    -আমরা পরীক্ষা করে দেখছি, বিমানটা কোনও গোপন তৎপরতা চালাচ্ছিল কি না!
    -
    এই বিমান সংকটে মূল আলোচ্য বিষয় কী ছিল? চায়নারা বিমানটা ফেরত দিবে কি দিবে না! কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাকভঙ্গি লক্ষ্যণীয়। কথা শুরুই করেছে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে। তার কথায় প্রকাশ পেলো: বিমান হস্তান্তরের বিলম্বিতকরন। বিমানটা হস্তান্তর করা হবে কি না সেটা আলোচনাতেই এল না। চীনের চিন্তাকে প্রথমেই বেঁধে ফেলা হলো। বিমান দিবে কি দিবে না, ভাবনাকে এদিকে গড়ানোরই সুযোগ দেয়া হলো না।
    -
    ফিলাস্তীনের ক্ষেত্রেও ইহুদিরা একই কৌশল অবলম্বন করছে। শুরু থেকেই তারা গলা উচিয়ে বলে আসছে: আরবরা সন্ত্রাসী। ফলে কী হলো? ফিলাস্তীনিরা ইসরাঈলকে স্বীকৃতি তো দিলই, উল্টো তারাই এখন অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে লড়ছে। এবং বিশ্ব তাদেরকেই সন্ত্রাসী ভাবছে!
    -
    নাইন ইলেভেনের পর, আফগানিস্তানে যখন মার্কিন আগ্রাসন হলো, কাবুল বিমান বন্দর দখলের পরই কার্যত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ বুশের হাতে চলে এল। মার্কিন সমর বিশেষজ্ঞরা কাবুলের পরিণতি দেখে, চমকপ্রদ এক যুদ্ধকৌশল আবিষ্কার করলো। তারা দেখলো, শহরের মূল অঞ্চলটা দখল করে প্রচারমাধ্যমে ঢাকঢোল পিটিয়ে হৈ চৈ শুরু করতে পারলে, পুরো দেশটাই দখল করা হয়ে যায়। ( কাফেরদের কৌশল মনে রাখতে হবে )
    -
    কৌশলটা তারা ইরাকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলো। ২০০৩ সালে বাগদাদের পতন হয়েছিল। বাগদাদ দখলের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছিল: বিমানবন্দরের যুদ্ধ। যুদ্ধের আগে থেকেই পাশ্চাত্য গণমাধ্যম বিপুল আয়োজনে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে-ফেনিয়ে প্রচার করতে শুরু করলো:
    -বাগদাদ বিমানবন্দর দখল করতে পারলেই পুরো ইরাক দখল করা হয়ে যাবে। সাদ্দামের আর কিছুই করার থাকবে না।
    -
    সাদ্দাম হোসেন আগের বার কুয়েত দখলের মতোই ফাঁদে পা দিলেন। অবশ্য না দিয়ে উপায় ছিল না এবার। তিনি বিমানবন্দর ঘিরে ব্যাপক রণপ্রস্তুতি নিয়ে রাখলেন। সৈন্যরাও মানসিকভাবে প্রপাগান্ডার টোপ গিলে বসে আছে: বিমানবন্দরকে যে কোনও মূল্যেই রক্ষা করতে হবে। না হলে সব শেষ হয়ে যাবে।
    -
    নির্দিষ্ট সময়ে মার্কিন বিমানগুলো এমন ‘ফুলস্কেপ এয়ারস্ট্রাইক’ করলো, কোনও মানুষের পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। বর্তমান ইসলামী জোট ও বাশশারের মতো তখনো মার্কিন বিমানগুলো পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করলো। তারা যে কোনও মূল্যে বিমানবন্দরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে হামলা করে যেতে থাকলো। ক্রমাগত। ইরাকী বাহিনীও নজিরবিহীন দৃঢ়তার পরিচয় দিল। তারা মাটি কামড়ে পড়ে থাকলো। কিন্তু অব্যাহত বর্বরোচিত বিমান হামলার সামনে কতোক্ষণ টিকে থাকা যায়?
    -
    বিমানবন্দর দখলে চলে গেলো মার্কিনী জোটের। আগেই মানুষের মনে গেঁথে দেয়া হয়েছিল:
    -বিমানবন্দর মানেই পুরো ইরাক। জিততে হলে বিমানবন্দর দখলে রাখতে হবে সাদ্দামকে। নইলে পুরো ইরাক হারাবে।
    -
    সবকিছু হিশেব মতোই ঘটলো। ইরাকী বাহিনীর প্রতিরোধ হুড়মুর করে ভেঙে পড়লো। যে যেদিকে পারলো ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। অথচ তখনো পুরো বাগদাদে লাখ রাখ সেনা রয়ে গেছে। পুরো ইরাকে সাদ্দামের অবস্থান অটুট!
    -
    নাইন ইলেভেনের পর, বুশের সেই বিখ্যাত ভাষণও এই কৌশলের বহিঃপ্রকাশ
    Either you are with us or you are with the terrorists
    তুমি হয় আমাদের সাথে না হয় সন্ত্রাসীদের সাথে।
    তৃতীয় কোনও ‘অপশন’ নেই। এভাবেই আমাদের চিন্তাকে তারা ‘ডমিনেট’ করে। আমাদের দেশেও মূল ঘরানা দুইটা! আমাদের অত্যন্ত সচেতনভাবেই এসব কৌশলকে এড়িয়ে তৃতীয় এবং নিজস্ব মতের ওপর অটল থাকা আবশ্যক।
    -
    ইমাম মাহদী যখন আসবেন, তখনও কিন্তু দল থাকবে দুইটা:
    = তুমি হয় আমাদের সাথে না হয় কাফেরের সাথে!
    তৃতীয় কোনও অপশন তখন থাকবে না। এটা বান্দার নয় আল্লাহ তা‘আলারই ঠিক করে দেয়া ‘স্ট্র্যাটেজী’। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিও ক্রমে ক্রমে সেই পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।


    ~ কালেক্টেড ~
    মুমিনদেরকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব
    রোম- ৪৭

  • #2
    জাঝাকাল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

    Comment


    • #3
      চমৎকার বিশ্লেষণ

      Comment

      Working...
      X