Announcement

Collapse
No announcement yet.

আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্*র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য – ৮- আলিমদের প্রশংসা ও নিন্দার মানদণ্ড ক

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্*র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য – ৮- আলিমদের প্রশংসা ও নিন্দার মানদণ্ড ক

    আলিমদের প্রশংসা ও নিন্দার মানদণ্ড কী?

    যদিও আদনানি তার মুবাহালাতে শপথ করে বলেছে, কেবল তাদের বিরোধিতা করার কারণে সে কারও নিন্দা করে না, কিন্তু আমি নিশ্চিত সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত ‘আলিমদের নিন্দার ক্ষেত্রে আইসিসের মানদণ্ড একটিই, আর তা হল তাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করা। ‘আলিমদের প্রশংসা বা নিন্দা করার ক্ষেত্রে তাদের কাজের ব্যাখ্যা আর কোন ভাবেই দেয়া যায় না। তারা কিছু আলিমের সমালোচনা করেছে, কারণ তারা ঐসব ইসলামপন্থীদের উপর তাকফির করেন না, যারা সংসদে প্রবেশ করেছে । আবার তারা এমন আলিমদের প্রশংসা করছে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহন ও সংসদে প্রবেশ করার[1] বৈধতা দেন। এরকম কিছু উদাহরণ হলো:

    শায়খ আহ্*মাদ শাকির, তার বই ‘কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহ্*ই হবে মিশরে আইনের উৎস’-র ৪০-৪১ পৃষ্ঠায় বলেন,

    ‘শারিয়াহ্*কে সাহায্য করার জন্য যা কিছু অর্জন করা প্রয়োজন তা সাংবিধানিক শান্তিপূর্ণ পথেই অর্জিত হবে- আর এ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা আমাদের দাওয়াত উম্মাহ্*র মধ্যে ছড়িয়ে দিই। আমরা এ পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রাম করি এবং খোলাখুলি কথা বলি আর এ পদ্ধতির মাধ্যমেই আমরা লক্ষ্য হাসিলের জন্য নির্বাচনে মাধ্যনে লড়াই করি। আমরা এ পদ্ধতির মাধ্যমে উম্মাহ্*কে আহ্বান জানাই। যদি এ পথে একবার পরাজিত হই তবে আমরা অনেকবার বিজয়ী হবো। বরং সূচনাতে আমাদের পরাজয়কে আমরা আমাদের সাফল্যের উপলক্ষ বানাবো, যা আমাদের অনুপ্রেরণাকে উদ্দীপিত করবে এবং সংকল্পকে জাগ্রত করবে।’

    এরকম বক্তব্য সত্ত্বেও একদিকে তারা তাদের অফিসিয়াল প্রচারপত্র ‘সাওলাত আল-আনসার’-এ শায়খ আহ্*মাদ শাকিরকে আল্লামা (উচ্চ পর্যায়ের আলিম)’ বলে অবিহিত করেছে।

    এবং অনুরূপ ভাবে তারা শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম কে তাদের “হুদা আশ শুহাদা-১” শীর্ষক প্রকাশনাতে “মুজাহিদ শায়খ” বলে অভিহিত করেছে। অথচ শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম তার “ রাজনীতি ও শাসন নিয়ে আলোচনা” শীর্ষক অডিও রেকর্ডিং এ সংসদে প্রবেশকে জায়েজ বলেছেন।

    এছাড়া আবু বকর আল-বাগদাদি তার ‘কিন্তু আল্লাহ্* তাঁর নুরকে পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় করবেন না’ শিরোনামের বক্তব্যে শায়খ আতিয়াতুল্লাহ্ আল-লিবিকে অবিহিত করেছেন জিহাদের একজন মূর্তপ্রতীক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে। এবং আইসিসের পক্ষ থেকে শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবিকে অভিহিত করা হয়েছে “সক্রিয় মুজাহিদ ‘আলিম” হিসেবে।

    আইসিস কতৃক প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে শায়খ আতিয়াতুল্লাহর ব্যাপারে বলা হয়েছে –

    ‘উম্মাহর বীরদের মধ্যে থেকে একজন বীর এবং উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন। মুসলিমদের অন্তরে গর্ব, দৃঢ়তা এবং সংকল্প বৃদ্ধি করে- এমন কথা ছাড়া অন্য কিছু আমরা তার কাছ থেকে শুনিনি। তিনি হলেন শায়খ, আলিম, মুহাজির, মুজাহিদ, বিনয়ী, উপদেশদাতা, ইবাদাতগুজার আতিয়াতুল্লাহ্ আল-লিবি।’[2]

    অথচ যেসব বিশ্বাস ও অবস্থানের কারণে তারা শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে আক্রমণ করেছে, সেই একই বিশ্বাস শাইখ আতিয়াতুল্লাহ্ পোষণ করেন! বরং শায়খ আতিয়াতুল্লাহর মাঝে এ বিষয়গুলো আরো অধিক মাত্রায় উপস্থিত ছিল। তাহলে এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কি? কেন একজনের প্রশংসা করা হচ্ছে এবং অপরজনকে তীব্রভাবে আক্রমন করা হচ্ছে?

    শুধুমাত্র আইসিসের সাথে মতপার্থক্যের কারনে।

    শায়খ সুলায়মান আল-‘উলওয়ানের[3] ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।

    আমরা সবাই জানি, আবু মায়সারা আশ্*শামি হলো আইসিসের মিডিয়া মুখপাত্র যার লেখা তাদের অফিসিয়াল ম্যাগাযিন ‘দাবিক্ব’-এর প্রতিটি সংখ্যাতে আছে।

    আবু মাইসারা আশ-শামী তার “আল হাযমিঃ জাহমিয়্যাহদের গোমরাহী ও পেছনে পড়ে থাকার কবীর গুনাহর মাঝে” – শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছে –

    “বিদ’আতি, আর তাগুতের ‘আলিমদের কথা দূরে থাক যখন জিহাদ ফারযুল আইনে পরিণত হয়, তখন জিহাদের ময়দানের ছাত্ররা পেছনে বসে থাকাদের কারো কাছ থেকেই ‘ইলম গ্রহন করবে না। পেছনে বসে থাকা ও তোষামোদকারী সমসাময়িক ফাসিক (কবিরা গুনাহ্*গার) ‘আলিমদের ওপর তারা সেইসব তাওহিদ ও জিহাদের ইমামের ইল্*মকে প্রধান্য দেয়- যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন…অতঃপর যখন মুজাহিদিনের সারি বিভক্ত হল যখন মুজাহিদিনের মধ্যে কেউ কেউ আল-মাক্বদিসি (যে ইরাকের জিহাদকে গণহত্যা মনে করতো), আল-‘উলওয়ানের (এ ব্যক্তির ব্যাপারে শহীদ শায়খ সুলতান ইবন বাজাদ আল-উতায়বির লেখা যুক্তিখন্ডন পড়তে পারেন। কারন এখানে আল-সুলুল ও তাদের সেনাদের ব্যাপারে এ ব্যক্তির উদ্ভুত অবস্থানের স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে) , এবং সুরুরি এবং হিযবুল উম্মাহর গোমরাহ আল-তুরাইফি, আল-আযামি এবং আল-মুতাইরিদের মতো ‘আলিমদের নিজেদের নিকটবর্তী হিসেবে গ্রহন করলো।“

    আবু-মাইসারা আশ-শামীর লেখা থেকে নিচের বিষয়গুলো বুঝা যায়:

    -শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান হচ্ছেন ফাসিক্ব, কবিরা গুনাহ্*কারী, যিনি পেছনে বসে থাকেন।

    -শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা মুজাহিদিনের সারিগুলোকে বিভক্ত করে।

    – শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানকে, হিজবুল উম্মাহ্* ও সুরুরিদের সাথে একই কাতারে ফেলা হয়েছে।

    মজার ব্যাপার হল, আবু-মাইসারা তার বক্তব্যে শায়খ সুলতান ইবন বাজাদ আল-উতায়বির যে লেখার কথা বলেছে, তা লিখিত হয়েছিল ২০০৩ এর শুরু দিকে। তা সত্ত্বেও, ২০০৩ থেকে পরবর্তী প্রায় ১২ বছর তারা শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানের ওপর প্রশংসার বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকে এবং তার গুণকীর্তন করতে থাকে। এই সুদীর্ঘ সময়ে তারা শায়খ সুলাইমান ইবন বাজাদ আল-উতায়বির এ লেখার কথা উল্লেখ করে নি। কিন্তু যখন আইসিসের বিরুদ্ধে ব্যাপারে শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানের একটি অডিও রেকর্ডিং ইন্টারনেটে প্রকাশ পেল। তখন তারা তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগলো এবং এতো বছর ধরে যে লেখার কথা তারা ভুলে ছিল তা হঠাৎ তাদের মনে পড়ে গেল।[4]

    শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান তার এ বক্তব্যে বলেছেন-

    “দাউলার (আইসিস) জন্য কোন ‘আম বাই’য়াহ (খিলাফতের বাই’য়াহ) নেই। কারন ‘আম বাই’য়াহ্*র শর্তসমূহের মধ্যে একটি হলো- তাকে আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্*দ দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে। আবু বকর আল-বাগদাদি আহলুল হাল্ল দ্বারা নির্বাচিত হয়নি এবং আহলুল আক্বদ দ্বারাও নয়।’

    একইভাবে শায়খ উমার আল-হাদ্দুশীকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল[5] তাদের সাথে যোগ দেবার। এবং যখন তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাদের বিরোধিতা করলেন, তখন তারা তার পুরনো ভুলগুলো নিয়ে একটি ভিডিও[6] প্রকাশ করলো। যার অর্থ হল তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান করার আগ পর্যন্ত এটা তাদের মনে ছিল না। আর যখন শায়খ হাদ্দুশীকে তারা তাদের সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তখনো এ ভুলগুলোর কথা তাদের মনে ছিল না, এবং তাকে প্রস্তাব দেবার ক্ষেত্রে এ ভুল্গুলো প্রতিবন্ধক ছিল না। তবে যখন তিনি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাদের বিরোধিতা করলেন তখন হঠাৎ কওরে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, যেমনটা হয়েছিল শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান, শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসি, শায়খ আবু-ক্বাতাদা, শায়খ হারিস বিন গাযী আন-নাযারি, শায়খ ইব্রাহিম রুবাইশ, আইমান আয-যাওয়াহিরী সহ অন্যান্যদের ক্ষেত্রে। কারন তারাও আইসিসের বিরোধিতা করেছিলেন।


    ========
    রেফারেন্সঃ

    [1] সংসদের প্রবেশ করা বলতে বোঝানো হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আইনসভাতে সংসদ সদস্য ও আইন প্রনেতা হিসেবে অংশগ্রহন করা।

    [2] তথ্য মন্ত্রণালয় কতৃক প্রকাশিত বিবৃতি- ‘আবু আব্দুর রাহ্*মান, আতিয়াতুল্লাহ্ আল-লিবির মৃত্যু উপলক্ষ্যে শোকপ্রকাশ করে বিবৃতি’, তারিখঃ ১৩ ডিসেম্বর ২০১১, ‘আল ফজ্*র মিডিয়া’ কতৃক প্রকাশিত। ‘আল-শুমুখ’ ফোরামের ‘ইসলামিক স্টেটের আর্কাইভ, বিবৃতি ও রিপোর্ট’ অংশে এ বার্তাটি প্রকাশ করা হয়।

    [3] শায়খ সুলাইমান বিন নাসির আল-‘উলওয়ান হলেন সেসব শায়খদের একজন যিনি মুজাহিদিনের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। ২০০৪ সালে আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ীকে সমর্থন করার অভিযোগে সাউদী সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ২০১২ সালে তিনি মুক্তি পান। ২০১৩ সালে তাকে পুনরায় বন্দী করা হয়।

    [4] আবু মাইসারা আশ-শামীর এ প্রবন্ধ ছাড়া শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানকে গোমরাহ বলা হয়েছে আইসিসের ফরাসি ভাষায় ম্যাগাযিন, “দ্বার আল-ইসলাম”-এর ষষ্ঠ সংখ্যার ২৩ নং পৃষ্ঠায়, এবং আল-বাত্তার মিডিয়া থেকে প্রকাশিত “Refutation of Al Risalah Magazine” শীর্ষক প্রকাশনাতে।

    [5] দেখুন শায়খ উমার আল হাদ্দুশীর সাথে কুয়েতি পত্রিকা “আল-রাই”-এর সাক্ষাৎকার। প্রকাশিত সোমবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫

    [6] ভিডিওটির শিরোনাম হল “ ইসলামিক স্টেটের বিরোধিতাকারীদের বাস্তবতা – উমার আল হাদ্দুশীর উদাহরন”। উবওয়াসুল লাসিক্বাহ নামক আইসিসের একটি মিডিয়া ফাউন্ডেশান থেকে প্রকাশিত।
    আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

  • #2
    জাজাজাল্লাহ। আল্লাহ তাআলার কাছে ইনসাফ বজায় রেখে চলার তাওফিক চাই

    Comment


    • #3
      জাজাকাল্লাহ ! আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইনসাফের উপর চলার তাওফিক দিন।
      ইয়া রাহমান ! বিশ্বের নির্য়াতিত মুসলিমদেরকে সাহায্য করুন। তাগুতদেরকে পরাজিত করুন। আমিন।

      Comment

      Working...
      X