Abu Anwar al Hindi
07-29-2016, 10:28 PM
“উম্মাহর স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে যেকোন রাষ্ট্রের (দাউলা কিংবা ইমারাহ)স্বার্থের উপর। রাষ্ট্রের স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে কোন জামা’আর স্বার্থের উপর, এবং জামা’আর স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে ব্যক্তির স্বার্থের উপর।“
আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামাহ্* বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ
জাবহাতু ফাতহিশ শাম নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক জল্পনা-কল্পনা করা হয়েছে। আরো হবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারন জিহাদ সমর্থক এবং জামাতুল বাগদাদীর সমর্থকদের দিক থেকে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। বিশেষ করে জামাতুল বাগদাদি এবং ইরজা সম্পন্ন বিভিন্ন ফিরকা ও দলের পক্ষ থেকেও অনেক ভুল ব্যাখ্যা এবং তির্যক মন্তব্য হয়তো আমাদের শুনতে হবে। একারনে শামের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের বর্তমান পরিকল্পনা (যার বাস্তবায়ন হল জাবহাত আন-নুসরার সাম্প্রতিক ঘোষণা) নিয়ে পরিষ্কার ধারনা থাকা প্রয়োজন। এটি প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে দৃঢ় আত্ববিশ্বাসের জন্য, এবং প্রয়োজন সংশয়বাদী, গুজব রটনাকারী এবং অপবাদ দানকারীদের মোকাবেলার জন্য। একারনে এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিশয় তুলে ধরছি। বস্তুত শামের এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উভয় ধরনের জিহাদের ক্ষেত্রেই।
এ সিদ্ধান্ত কার?
জাবহাতু ফাতহিশ শাম –এর ঘোষণা নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল এ সিদ্ধান্তটি আসলে কাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে তা অনুধাবন করা। পশ্চিমা মিডিয়া-বিশ্লেষক, জামাতুল বাগদাদীপন্থীরা এবং ইরজাগ্রস্থরা ইতিমধ্যেই প্রচার করা শুরু করেছে এ সিদ্ধান্ত আন-নুসরার নিজের। নিজ উদ্যোগে নুসরা আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অনেক বলছে আল-ক্বা’ইদাহ্* তাদের সবচেয়ে শক্তিশালি শাখাকে হারিয়ে ফেলেছে ইত্যাদি।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এ সিদ্ধান্ত আল-ক্বা’ইদাহ্* সেন্ট্রালের পক্ষ থেকেই আসা। বস্তুত শামের জিহাদের শুরু থেকেই আল-ক্বা’ইদাহ্*র উদ্দেশ্য ছিল শামে নিজেদের উপস্থিতি গোপন করা। সালাফি জিহাদের মানহাজকে আল-ক্বা’ইদাহ্*র ব্র্যান্ডিং ছাড়া শামের মানুষের কাছে উপস্থাপন করা এবং শামের মানুষের চিন্তা ও চেতনায়, ও সর্বোপরি শামের জিহাদের মাঝে এ বিশুদ্ধ মানহাজকে প্রোথিত করা। শুধুমাত্র আল-বাগদাদির হঠকারী সিদ্ধান্তের কারনেই বাধ্য হয়ে শায়খ জাওলানি, আল-ক্বা’ইদাহ্*র শাখা হিসেবে আল-নুসরার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন।
সুতরাং আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্কে ঘোষণাই ছিল মূল পরিকল্পনার ব্যত্যয়, উল্টোটা না।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার শামের অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হলেও নুসরার পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হয় নি দুটো কারনে।
১। এক নাজুক পরিস্থিতিতে এরকম ঘোষণা দিলে অনেক সদস্যের জামাতুল বাগদাদির দিকে ঝুঁকে যাবার সম্ভাবনা ছিল। একারনে চিন্তাশীল সকল মুজাহিদের কাছে বিশেষ করে মুজাহিরিনের কাছে এবং বৈশ্বিকভাবে সকল জিহাদ সমর্থক ও তানযীমের কাছে জামাতুল বাগদাদির বিচ্যুতি স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন ছিল।
২। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু অন্যান্য দলগুলো গুরুত্বের সাথে চিন্তা করছিল, তাই এ বিষয়টিকে ঘিরে সর্বোচ্চ লাভ কিভাবে এবং কোন সময়ে করা যায় এটি নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন ছিল। (ইন শা আল্লাহ, পরবর্তী আলোচনাতে এটা আরো পরিষ্কার হবে)
অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে – টাইমিং। এ সিদ্ধান্তের জন্য সঠিক সময় নির্ধারন করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
শায়খ আইমানের হাফিযাহুল্লাহর বার্তাতে উনি খোলাখুলি ভাবেই সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে, এবং কোন পরিস্থিতিতে সম্পর্কচ্ছেদকে আল-ক্বা’ইদাহ্* গ্রহনযোগ্য মনে করে সেটাও তিনি উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্যেই বুঝদারদের জন্য ইঙ্গিত ছিল।
পরবর্তীতে শায়খ আবু খাইর আল-মাসরির বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয় যে এ সিদ্ধান্ত আল-ক্বা’ইদাহ্* সেন্ট্রাল এবং আল-ক্বা’ইদাহ্* শামের মধ্যে কো-অর্ডিনেশানের মাধ্যমেই নেওয়া।
২। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কারন কি?
এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমটির চাইতেও বেশি বিভ্রান্তিতে অনেকে পতিত হচ্ছেন। প্রায় ৯৯% পশ্চিমা-আরব-আঞ্চলিক মিডিয়া ও বিশ্লেষকের ধারনা নুসরার এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিজেদের নাম কাটানোর জন্য। আমার ধারনা জামাতুল বাগদাদির সমর্থকরাও ব্যাপকভাবে এটি প্রচার/ব্যবহার করবে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, নুসরা/ক্বা’ইদাহ্*র এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিশ্চিত ভাবে জানে তারা যাই করুক অ্যামেরিকা তাদের উপর বম্বিং করবেই। অ্যামেরিকা যখন “আইএস” দমনের ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ তে প্রথমবারের শামে বোমা হামলা শুরু করে তখন দ্বিতীয় দিনেই তারা নুসরার উপর হামলা করে। আল ক্বান্নাস শায়খ আবু ইউসুফ আল তুর্কির রাহিমাহুল্লাহ এলিট ইউনিট যেটা আন্তর্জাতিক হামলা নিয়ে কাজ করছিল তাদের উপর হামলা চালায়। সুতরাং এখন অ্যামেরিকা হামলা চালাবে না এমন মনে করার কোন কারন নেই।
বস্তুত নুসরা যা করছে সেটা অ্যামেরিকার বোমা হামলাকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে ধরে নিয়েই তারা করছে। বস্তুত গেইম থিওরির (Game Theory) এর আলোকে বিষয়টিকে চিন্তা করলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে। সহজ ভাষায় গেইম থিওরি হল সম্ভাব্য বিভিন্ন পরিস্থিতির আলোকে সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের নির্ধারন।
ধরুন দুটি পক্ষ বিরোধে লিপ্ত। প্রথম পক্ষের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তার প্রতিপক্ষের কি কি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত হতে পারে এবং প্রতিটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রথম পক্ষের জন্য কি কি সিদ্ধান্তে নেবার সু্যোগ থাকবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের কি কি লাভ ও লোকসান হতে পারে [Payoff matrix]– ধাপে ধাপে এই বিবেচনা করা হয় গেইম থিওরিতে। এখানে ধাপ একটি হতে পারে ২ টি হতে পারে, ১০টি হতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রে জন্য কোন সিদ্ধান্তের জন্য কি লাভ ও কি লোকসান সেটা অত্যন্ত জরুরী।
নুসরার জন্য বাস্তবতা হল অ্যামেরিকা তাদের উপর হামলা করবেই। এটি অবশ্যম্ভাবী হিসেবেই নুসরা ধরে নিয়েছে। নাম বদল করা হোক বা না হোক, আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হোক বা না হোক – তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন গন্য করা হবে, এবং তাদের উপর হামলা করা হবে। তাই এ হামলা এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন অর্থ নেই।
কিন্তু এ হামলা পরবর্তী প্রেক্ষাপটকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারন এখানে পক্ষ শুধুমাত্র দুটি – অ্যামেরিকা বনাম নুসরা – এমন কিন্তু না। এখানে শামের জনগণ আছে, আছে অন্যান্য দল যারা অন্যান্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখে। নুসরার এ ঘোষণার উদ্দেশ্য বা Target Audience হল শামের সাধারন মানুষ ও অন্যান্য দলগূলো।
নুসরা চাচ্ছে যেহেতু অ্যামেরিকা আক্রমন করবেন তাই শেষ মূহুর্তে নিজেদের আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্কহীন দাবি করার মাধ্যমে বেশ কিছু লক্ষ্য অর্জন করতে –
১) শামের সাধারন জনগনকে দেখানো নুসরার কাছে শামের মুসলিম, শামের জিহাদ বেশি গুরুত্বপূর্ন – সাংগঠনিক পরিচয় না।
২) বিশ্বের মুসলিমদের দেখানো যে আল-ক্বা’ইদাহ্* নিজেদের স্বার্থের আগে উম্মাহর স্বার্থ দেখে। এবং এর মাধ্যমে জামাতুল বাগদাদির সাথে নিজেদের পার্থক্য তুলে ধরা এবং উম্মাহর নেতৃত্ব দেবার উপযোগী তানযীম যে আল-ক্বা’ইদাহ্* তা তুলে ধরা।
৩) শামের মুসলিম ও বিশ্ব মুসলিমকে দেখানো বিষয়টা আসলে আল-ক্বা’ইদাহ্* বা “সন্ত্রাসের” না। অ্যামেরিকা আসলে শারীয়াহ, জিহাদ, মুসলিমদের ক্ষমতায়ন এসব কিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাই আল-ক্বা’ইদাহ্* থাক বা না থাক, যখনি মুসলিমরা জিহাদের দাবিতে একত্রিত হবে, মযলুমের অধিকার আদায়ার জন্য অস্ত্র হাতে নেবে, শারীয়াহ কায়েমের চেষ্টা করবে তখনই অ্যামেরিকা মুসলিমদের আক্রমন করবে।
৪) শামের জনগনের কাছে তুলে ধরা, অ্যামেরিকা ও যালিম-তাওয়গীতের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর, মুসলিম জনগণের আত্বরক্ষার একমাত্র উপায় জিহাদ এবং আল্লাহর পর দুনিয়াতে উম্মাহর রক্ষক হল মুজাহিদিন
৫) শামের অন্যান্য দলের উপর চাপ প্রয়োগ করা সাউদি-কাতার ইত্যাদির দেশের তাওয়াগীতের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য।
৬) শামের অন্যান্য দলের উপর চাপ প্রয়োগ করা বাশারের বিরুদ্ধে নুসরার সাথে এবং নুসরার অধীনে বা নির্দেশনায় কাজ করা – কারন সামরিক, কৌশল, সাহস ও শৃঙ্খলা সকল দিকে দিয়েই নুসরা শামের সবচ্যে অগ্রগামী দল।
৭) বাশার বিরোধী জিহাদের নেতৃত্ব নিজের অধীনে নিয়ে নেওয়া।
(বোমা হামলা+সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা) এবং (বোমা হামলা+সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা না দিয়ে আগে যা চলছিল তা চালিয়ে যাওয়া) এ দুটী সম্ভাব্য ফলাফলের মধ্যে নুসরা প্রথমটিকে বেছে নিয়েছে।
৫,৬ ও ৭ নং পয়েন্ট নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন, তবে এ পয়েন্ট তিনটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ফ্যাক্টরের আলোচনা। আর এ ফ্যাক্টরটি হল আহরার আশ-শাম। একারনে ইন শা আল্লাহ পৃথকভাবে আহরার আশ-শাম, উপরোক্ত তিনটি পয়েন্ট এবং কিভাবে জাবহাতু ফাতহিশ শামের ঘোষণা - এ বিষয়গুলো একসূত্রে গাথা তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
[ইন শা আল্লাহ চলবে ]
আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামাহ্* বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ
জাবহাতু ফাতহিশ শাম নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক জল্পনা-কল্পনা করা হয়েছে। আরো হবে এটাই স্বাভাবিক। সাধারন জিহাদ সমর্থক এবং জামাতুল বাগদাদীর সমর্থকদের দিক থেকে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। বিশেষ করে জামাতুল বাগদাদি এবং ইরজা সম্পন্ন বিভিন্ন ফিরকা ও দলের পক্ষ থেকেও অনেক ভুল ব্যাখ্যা এবং তির্যক মন্তব্য হয়তো আমাদের শুনতে হবে। একারনে শামের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের বর্তমান পরিকল্পনা (যার বাস্তবায়ন হল জাবহাত আন-নুসরার সাম্প্রতিক ঘোষণা) নিয়ে পরিষ্কার ধারনা থাকা প্রয়োজন। এটি প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে দৃঢ় আত্ববিশ্বাসের জন্য, এবং প্রয়োজন সংশয়বাদী, গুজব রটনাকারী এবং অপবাদ দানকারীদের মোকাবেলার জন্য। একারনে এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিশয় তুলে ধরছি। বস্তুত শামের এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উভয় ধরনের জিহাদের ক্ষেত্রেই।
এ সিদ্ধান্ত কার?
জাবহাতু ফাতহিশ শাম –এর ঘোষণা নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল এ সিদ্ধান্তটি আসলে কাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে তা অনুধাবন করা। পশ্চিমা মিডিয়া-বিশ্লেষক, জামাতুল বাগদাদীপন্থীরা এবং ইরজাগ্রস্থরা ইতিমধ্যেই প্রচার করা শুরু করেছে এ সিদ্ধান্ত আন-নুসরার নিজের। নিজ উদ্যোগে নুসরা আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অনেক বলছে আল-ক্বা’ইদাহ্* তাদের সবচেয়ে শক্তিশালি শাখাকে হারিয়ে ফেলেছে ইত্যাদি।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এ সিদ্ধান্ত আল-ক্বা’ইদাহ্* সেন্ট্রালের পক্ষ থেকেই আসা। বস্তুত শামের জিহাদের শুরু থেকেই আল-ক্বা’ইদাহ্*র উদ্দেশ্য ছিল শামে নিজেদের উপস্থিতি গোপন করা। সালাফি জিহাদের মানহাজকে আল-ক্বা’ইদাহ্*র ব্র্যান্ডিং ছাড়া শামের মানুষের কাছে উপস্থাপন করা এবং শামের মানুষের চিন্তা ও চেতনায়, ও সর্বোপরি শামের জিহাদের মাঝে এ বিশুদ্ধ মানহাজকে প্রোথিত করা। শুধুমাত্র আল-বাগদাদির হঠকারী সিদ্ধান্তের কারনেই বাধ্য হয়ে শায়খ জাওলানি, আল-ক্বা’ইদাহ্*র শাখা হিসেবে আল-নুসরার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন।
সুতরাং আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্কে ঘোষণাই ছিল মূল পরিকল্পনার ব্যত্যয়, উল্টোটা না।
পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার শামের অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হলেও নুসরার পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হয় নি দুটো কারনে।
১। এক নাজুক পরিস্থিতিতে এরকম ঘোষণা দিলে অনেক সদস্যের জামাতুল বাগদাদির দিকে ঝুঁকে যাবার সম্ভাবনা ছিল। একারনে চিন্তাশীল সকল মুজাহিদের কাছে বিশেষ করে মুজাহিরিনের কাছে এবং বৈশ্বিকভাবে সকল জিহাদ সমর্থক ও তানযীমের কাছে জামাতুল বাগদাদির বিচ্যুতি স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন ছিল।
২। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু অন্যান্য দলগুলো গুরুত্বের সাথে চিন্তা করছিল, তাই এ বিষয়টিকে ঘিরে সর্বোচ্চ লাভ কিভাবে এবং কোন সময়ে করা যায় এটি নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন ছিল। (ইন শা আল্লাহ, পরবর্তী আলোচনাতে এটা আরো পরিষ্কার হবে)
অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে – টাইমিং। এ সিদ্ধান্তের জন্য সঠিক সময় নির্ধারন করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
শায়খ আইমানের হাফিযাহুল্লাহর বার্তাতে উনি খোলাখুলি ভাবেই সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে, এবং কোন পরিস্থিতিতে সম্পর্কচ্ছেদকে আল-ক্বা’ইদাহ্* গ্রহনযোগ্য মনে করে সেটাও তিনি উল্লেখ করেছেন। এ বক্তব্যেই বুঝদারদের জন্য ইঙ্গিত ছিল।
পরবর্তীতে শায়খ আবু খাইর আল-মাসরির বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয় যে এ সিদ্ধান্ত আল-ক্বা’ইদাহ্* সেন্ট্রাল এবং আল-ক্বা’ইদাহ্* শামের মধ্যে কো-অর্ডিনেশানের মাধ্যমেই নেওয়া।
২। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কারন কি?
এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমটির চাইতেও বেশি বিভ্রান্তিতে অনেকে পতিত হচ্ছেন। প্রায় ৯৯% পশ্চিমা-আরব-আঞ্চলিক মিডিয়া ও বিশ্লেষকের ধারনা নুসরার এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিজেদের নাম কাটানোর জন্য। আমার ধারনা জামাতুল বাগদাদির সমর্থকরাও ব্যাপকভাবে এটি প্রচার/ব্যবহার করবে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, নুসরা/ক্বা’ইদাহ্*র এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিশ্চিত ভাবে জানে তারা যাই করুক অ্যামেরিকা তাদের উপর বম্বিং করবেই। অ্যামেরিকা যখন “আইএস” দমনের ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ তে প্রথমবারের শামে বোমা হামলা শুরু করে তখন দ্বিতীয় দিনেই তারা নুসরার উপর হামলা করে। আল ক্বান্নাস শায়খ আবু ইউসুফ আল তুর্কির রাহিমাহুল্লাহ এলিট ইউনিট যেটা আন্তর্জাতিক হামলা নিয়ে কাজ করছিল তাদের উপর হামলা চালায়। সুতরাং এখন অ্যামেরিকা হামলা চালাবে না এমন মনে করার কোন কারন নেই।
বস্তুত নুসরা যা করছে সেটা অ্যামেরিকার বোমা হামলাকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে ধরে নিয়েই তারা করছে। বস্তুত গেইম থিওরির (Game Theory) এর আলোকে বিষয়টিকে চিন্তা করলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে। সহজ ভাষায় গেইম থিওরি হল সম্ভাব্য বিভিন্ন পরিস্থিতির আলোকে সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের নির্ধারন।
ধরুন দুটি পক্ষ বিরোধে লিপ্ত। প্রথম পক্ষের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তার প্রতিপক্ষের কি কি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত হতে পারে এবং প্রতিটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রথম পক্ষের জন্য কি কি সিদ্ধান্তে নেবার সু্যোগ থাকবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের কি কি লাভ ও লোকসান হতে পারে [Payoff matrix]– ধাপে ধাপে এই বিবেচনা করা হয় গেইম থিওরিতে। এখানে ধাপ একটি হতে পারে ২ টি হতে পারে, ১০টি হতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রে জন্য কোন সিদ্ধান্তের জন্য কি লাভ ও কি লোকসান সেটা অত্যন্ত জরুরী।
নুসরার জন্য বাস্তবতা হল অ্যামেরিকা তাদের উপর হামলা করবেই। এটি অবশ্যম্ভাবী হিসেবেই নুসরা ধরে নিয়েছে। নাম বদল করা হোক বা না হোক, আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হোক বা না হোক – তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন গন্য করা হবে, এবং তাদের উপর হামলা করা হবে। তাই এ হামলা এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন অর্থ নেই।
কিন্তু এ হামলা পরবর্তী প্রেক্ষাপটকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারন এখানে পক্ষ শুধুমাত্র দুটি – অ্যামেরিকা বনাম নুসরা – এমন কিন্তু না। এখানে শামের জনগণ আছে, আছে অন্যান্য দল যারা অন্যান্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখে। নুসরার এ ঘোষণার উদ্দেশ্য বা Target Audience হল শামের সাধারন মানুষ ও অন্যান্য দলগূলো।
নুসরা চাচ্ছে যেহেতু অ্যামেরিকা আক্রমন করবেন তাই শেষ মূহুর্তে নিজেদের আল-ক্বা’ইদাহ্*র সাথে সম্পর্কহীন দাবি করার মাধ্যমে বেশ কিছু লক্ষ্য অর্জন করতে –
১) শামের সাধারন জনগনকে দেখানো নুসরার কাছে শামের মুসলিম, শামের জিহাদ বেশি গুরুত্বপূর্ন – সাংগঠনিক পরিচয় না।
২) বিশ্বের মুসলিমদের দেখানো যে আল-ক্বা’ইদাহ্* নিজেদের স্বার্থের আগে উম্মাহর স্বার্থ দেখে। এবং এর মাধ্যমে জামাতুল বাগদাদির সাথে নিজেদের পার্থক্য তুলে ধরা এবং উম্মাহর নেতৃত্ব দেবার উপযোগী তানযীম যে আল-ক্বা’ইদাহ্* তা তুলে ধরা।
৩) শামের মুসলিম ও বিশ্ব মুসলিমকে দেখানো বিষয়টা আসলে আল-ক্বা’ইদাহ্* বা “সন্ত্রাসের” না। অ্যামেরিকা আসলে শারীয়াহ, জিহাদ, মুসলিমদের ক্ষমতায়ন এসব কিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তাই আল-ক্বা’ইদাহ্* থাক বা না থাক, যখনি মুসলিমরা জিহাদের দাবিতে একত্রিত হবে, মযলুমের অধিকার আদায়ার জন্য অস্ত্র হাতে নেবে, শারীয়াহ কায়েমের চেষ্টা করবে তখনই অ্যামেরিকা মুসলিমদের আক্রমন করবে।
৪) শামের জনগনের কাছে তুলে ধরা, অ্যামেরিকা ও যালিম-তাওয়গীতের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর, মুসলিম জনগণের আত্বরক্ষার একমাত্র উপায় জিহাদ এবং আল্লাহর পর দুনিয়াতে উম্মাহর রক্ষক হল মুজাহিদিন
৫) শামের অন্যান্য দলের উপর চাপ প্রয়োগ করা সাউদি-কাতার ইত্যাদির দেশের তাওয়াগীতের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য।
৬) শামের অন্যান্য দলের উপর চাপ প্রয়োগ করা বাশারের বিরুদ্ধে নুসরার সাথে এবং নুসরার অধীনে বা নির্দেশনায় কাজ করা – কারন সামরিক, কৌশল, সাহস ও শৃঙ্খলা সকল দিকে দিয়েই নুসরা শামের সবচ্যে অগ্রগামী দল।
৭) বাশার বিরোধী জিহাদের নেতৃত্ব নিজের অধীনে নিয়ে নেওয়া।
(বোমা হামলা+সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার মাধ্যমে এসব লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা) এবং (বোমা হামলা+সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা না দিয়ে আগে যা চলছিল তা চালিয়ে যাওয়া) এ দুটী সম্ভাব্য ফলাফলের মধ্যে নুসরা প্রথমটিকে বেছে নিয়েছে।
৫,৬ ও ৭ নং পয়েন্ট নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন, তবে এ পয়েন্ট তিনটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ফ্যাক্টরের আলোচনা। আর এ ফ্যাক্টরটি হল আহরার আশ-শাম। একারনে ইন শা আল্লাহ পৃথকভাবে আহরার আশ-শাম, উপরোক্ত তিনটি পয়েন্ট এবং কিভাবে জাবহাতু ফাতহিশ শামের ঘোষণা - এ বিষয়গুলো একসূত্রে গাথা তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
[ইন শা আল্লাহ চলবে ]