Announcement

Collapse
No announcement yet.

অপারেশন উডেন লেগ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অপারেশন উডেন লেগ

    অপারেশন উডেন লেগ: মিলিটারি অপারেশনের গল্প
    পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত সফল মিলিটারি অপারেশন উডেন লেগ বা কাঠের পা সংঘটিত হয় ১৯৮৫ সালের ১ অক্টোবর । এর মূল পরিকল্পনা ছিল ইজরায়েলের স্পাই অর্গানাইজেশন মোসাদের। আর পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেয় ইজরায়েলি এয়ার ফোর্স বা IAF। অপারেশনটা সেসময় এতই সাকসেসফুল হয়, যে IAF এর ক্ষমতা ও অধিকার ইজরায়েল ডিফেন্সের বিভিন্ন শাখায় দ্বিগুন হয়ে যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ স্বয়ং এয়ারফোর্স চিফকে ধন্যবাদ জানান।




    কাহিনীর শুরুটা একটু কম্প্লিকেটেড। ১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধের পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা PLO কুঝতে পারে যে তাদের হেডকোয়ার্টার নিরাপদ কোথাও সরানো দরকার। কারন লেবানন আর সেভাবে নিরাপদ ছিলো না। একটা দুটো ঘাঁটিতে বোমা হামলা সহ্য করা যায়, কিন্তু হেডকোয়ার্টারে কিছু হলেই বিপদ। তাই সবদিক ভেবে হেডকোয়ার্টার তিউনিসিয়া তে স্থানান্তর করা হয়, আর এটা ছিল ইজরায়েলি মিলিটারির আওতার বাইরে, অন্তত তৎকালীন মধ্যপ্রাচ্য তাই ভাবত।

    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫ ছিল ইহুদী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পবিত্র দিন। এদিন পিএলওর এলিট ফোর্স সাইপ্রাসের উপকূলে একটি ইহুদী ইয়ট কিডন্যাপ করে। সেখানে তখন তিন ইজরায়েলি টুরিস্ট ছিলেন। পিএলওর সদস্যরা তাদের হত্যা করেন এবং হত্যার আগে তাদের শেষ ইচ্ছে কাগজে লিখতে বলেন। এই খবর প্রচারিত হলে সারা বিশ্ব মোটামুটি বড় একটা ধাক্কা খায়। পিএলওর তরফ থেকে বলা হয়, এই হামলা ছিল ইজরায়েলি নেভি কর্তৃক এলিট ফোর্স ১৭ এর কমান্ডার Faisal Abu Sharah এর আটকের প্রতিশোধ।

    এই ঘটনা ইজরায়েলে এতই আলোড়ন সৃষ্টি করে যে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স তৎক্ষনাৎ প্রতিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। আর্মি থেকে লেবাননে আবার স্থল হামলা চালানোর কথা বলা হয়। কিন্তু এইবার ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স এতটাই ক্ষেপেছিল, যে তারা এর থেকেও বড় প্রতিশোধের টার্গেট করে। পিএলওর হেডকোয়ার্টারের একজ্যাক্ট লোকেশন সরবরাহ করে মোসাদ ।

    মজার ব্যাপার কি জানেন, সিআইএও এই তথ্য দিতে রাজি হয়নি। Jonathan Pollard নামে সিআইএর এক ইন্টেলিজেন্স অফিসারকে মোসাদ ঘুষ দিয়ে তথ্যটা কেনে। আর টপ সিক্রেট এই হামলার দায়িত্ব দেয়া হয় ইজরায়েলি এয়ার ফোর্সকে।

    দায়িত্ব পেয়ে আইএএফ চিফ স্বভাবতই একটু ঘাবড়ে যান, কারন তখন আইএএফ কে যা করতে হবে, তা আগে কখনো করা হয় নি। একশ দুশ নয়, পুরো ১২৮০ মাইল দুরে গিয়ে বোমা ফেলতে হবে। তাও সরাসরি গেলে এক কথা, যেতে হবে বিভিন্ন দেশের রাডার এড়িয়ে আর অবশ্যই ফুল ওয়েপন লোড নিয়ে।

    একটা ছোট্ট ব্যাপার বুঝিয়ে দিই, বিমানে আপনি দুটো জিনিস তুলতে পারেন, ফুয়েল আর আর্মামেন্ট। কিন্তু দুটোর সামঞ্জস্য করতে হয়, বেশি অস্ত্রশস্ত্র নিলে তেল কম নিতে হবে, নয়তো কম অস্ত্র নিয়ে বেশি তেল নিয়ে উড়তে হবে, নইলে বিমান উড়বে না। অবশ্য পথের মাঝখানে রিফুয়েল করলে আলাদা কথা।

    আইএএফ এই টেকনিকই বেছে নেয়। সেসময় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে দুটো দেশের এরিয়াল ট্যাঙ্কার ছিল, ইজরায়েল ও ইরান। ইজরায়েল ১৯৮৩ সালে এই ট্যাঙ্কার কেনে। আর ১৯৮৫ সালে ক্রুরা পুরোপুরি ট্রেইনড ও ছিল। কিন্তু জানেন তো, ট্রেনিং আর বাস্তবে তফাৎ অনেক।

    আইএএফ এর সেই সময়ের সেরা এয়ারক্রাফট ছিল আমেরিকান এফ ১৫ ঈগল। কিন্তু সেটা আর যাই হোক, ল্যান্ড অ্যাটাকের উপযোগি ছিলনা। যাই হোক, এই মিশনের সবচেয়ে গুরুত্ববহ দিকটা ছিল প্লেনের ডিউরেবিলিটি। পাইলটের থেকেও বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল প্লেনের ফিটনেস, তাই আইএএফ এর সবচেয়ে দক্ষ মেইনটেন্যান্স ম্যানদের কাজে লাগানো হয়।

    ১৯৮৫ সালের ১ অক্টোবর, অপারেশন উডেন লেগ শুরু হলো। হামলায় অংশ নিলো ছয়টা এফ ১৫ ডি ও দুটো এফ ১৫ সি। আইএএফ এর সবচেয়ে দক্ষ আটজন পাইলট ও তাদের নেভিগেটররা উড়ান দিলেন মিশনের উদ্দেশ্যে।

    মেডিটেরিয়ান সাগরের উপর তাদের রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার, একটি মডিফায়েড বোয়িং ৭০৭ এর সাথে দেখা হলো রিফুয়েলিং সেরে আবার টার্গেটের উদ্দেশ্যে রওনা।

    সেসময় আইএএফ চিফ Amos Lapidot ভেবেছিলেন তিউনিসিয়ান এয়ার ফোর্স তেমন কিছু করতে পারবে না, তবুও মাল্টাতে একটি ইজরায়েলি নেভির হেলিকপ্টার বাহী জাহাজ অপেক্ষায় ছিল, যদি কোন প্লেন ক্র্যাশ করে, পাইলটকে উদ্ধার করতে। এমনকি ফার্স্ট রিফুয়েলিং পয়েন্টে দুটো এক্সট্রা এফ ফিফটিন ও ছিলো, যদি মিশনের কোন প্লেনের টেকনিকাল ফল্ট দেখা দেয়।

    এই রুটের নকশা করা হয়েছিল লিবিয়ান ও ইজিপশিয়ান রাডার এড়াতে, এমনকি আমেরিকার জাহাজের রাডারগুলোও। কারন একবার রাডারে ধরা পড়লে লিবিয়ানরা স্যাম মারত, আর আমেরিকানরা জবাবদিহি চাইত। দুটোর কোনটাই সেসময় পাইলটরা চায়নি।

    এইবার আসি আসল কথায়, বিমান নিয়ে যাদের মোটামুটি জ্ঞান আছে, তারা জানেন, ভিয়েতনামে এফ ৪ ফ্যান্টম নিয়ে মার খাবার পর ইউএস এয়ার ফোর্স এফ ফিফটিন বানায়। এটা ছিল পুরোপুরি একটি এয়ার সুপিয়রিটি ফাইটার। শুধুমাত্র ডগফাইটের জন্য। বাট এই মিশনের জন্য ছয়টা এফ ফিফটিন ডি তে দুহাজার পাউন্ডের GBU 15 অপটিকাল গাইডেড বোমা ছিল, যার নিয়ন্ত্রণ ছিল

    বিমানের নেভিগেটরের উপর। এটার গাইডেড সিস্টেম ছিল টু ওয়ে ডাটা লিংক। ২৫০০০ ফুট উপর থেকে ফেললে, এতে ১৫ মাইল মত রেঞ্জ পাওয়া যায়।

    অপর দুই এফ ফিফটিন সি বহন করছিলো মার্ক ৮২ বোমা। আর এসব কিছু ছাড়াও প্রত্যেক প্লেনে AIM 7 স্প্যারো মিসাইল ছিলো, এরিয়াল থ্রেটের জন্য। যদি আকাশপথে কোন বিপদ সত্যিই আসে, মানে কোন ইন্টারসেপ্টর যদি বাধা দিতে আসে,তাই ।

    তো, সফলভাবে রাডার এড়িয়ে বিমানগুলো টার্গেট এরিয়ায় চলে আসে। প্রথমেই তিনটা ডি মডেল তাদের জিবিইউ ১৫ লঞ্চ করে। এর পরপরই অপর তিন ডি মডেল আক্রমনে যায় এবং তাদের জিবিইউ ১৫ লঞ্চ করে। এর পর আক্রমনে যায় সি মডেল। এগুলোর মার্ক ৮২ বোমা নিক্ষেপিত হয়। এগুলোর আরো একটা কাজ ছিল, সেটা হলো আকাশ থেকো ফটো তোলা। যা পরবর্তীতে কেবিনেট মিটিঙে দেখানো হয়।( প্রমান তো লাগবে)

    এই হামলার ফলাফল ছিল রীতিমত ভয়াবহ। পিএলওর হেডকোয়ার্টারে প্রায় ৪৭ জন মানুষ নিহত হন ও দুশোরও বেশি আহত হন। আর পিএলওর প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও নথিপত্র ধ্বংস হয়। নেহাৎ ভাগ্যগুনে ফিলিস্তিদের আশা ভরসা ইয়াসির আরাফাত বাইরে থাকায় বেঁচে যান।

    মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলো তো বটেই, ইজরায়েলের বাপ আমেরিকাও বড় একটা ধাক্কা খায়। তাদের বিমান দিয়ে যে ল্যান্ড অ্যাটাক করা যায়, তাও আবার এত দূরে গিয়ে, তাদের নাকের ডগা দিয়ে, অথচ সিআইএ কিচ্ছু জানে না।( তাহলেই বুঝুন মোসাদ কি জিনিস) সিআইএ অফিসে অনুসন্ধান শুরু হয় এবং ধরা পড়ে Jonathan Pollard। তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।( আহা বেচারা, দেখ কেমন লাগে)

    মোটামুটি আরো একবার সমালোচনা শুরু হয় ইজরায়েলের বিরুদ্ধে, এমনকি আমেরিকাতেও। বাট আদতে কিছুই হয়নি( কবেই বা হয়েছে, এসব নিন্দা প্রস্তাব প্রহসন ছাড়া কিচ্ছু না ) ।

    এই হামলার দুসপ্তাহ আগে ইজিপশিয়ান ইন্টেলিজেন্স থেকে তিউনিস সরকারকে সতর্ক করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট Habib Bourguiba আমেরিকান দূতাবাসের সিআইএ কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রেসিডেন্ট কে আশ্বস্ত করেন। এব্যাপারে আমেরিকা কিছু জানে না।

    পৃথিবীর ইতিহাসে সফল মিলিটারি অপারেশনের তালিকায় উডেন লেগ একটা। এটা এফ ফিফটিন এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়িয়ে দেয়। আর ইজরায়েলি টেকনিশিয়ানদের আইডিয়া নিয়েই ১৯৮৮ সালে সার্ভিসে আসে এফ ফিফটিনের ল্যান্ড অ্যাটাক ভার্সন, স্ট্রাইক ঈগল।কিন্তু এর পথিকৃৎ ছিল আইএএফ ই।

    ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

  • #2
    সুন্দর বিষয়।

    Comment

    Working...
    X