Announcement

Collapse
No announcement yet.

সবর, তাকওয়া ও দৃঢ়তাঃ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সবর, তাকওয়া ও দৃঢ়তাঃ

    উক্ত পোষ্ট প্রথমত পোষ্টদাতার জন্যই সবর এবং তাকওয়া অবলম্বনের নাসিহা
    পরবর্তীতে দ্বীনি ভাইদের জন্য (আল্লাহ আমাদেরকে সবর, তাকওয়া এবং দৃঢ়তা অবলম্বনের জন্য কবুল করুন)


    সূরাহ আলি ইমরানের ১২০ নাম্বার আয়াতের তাফসীর


    وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّـهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ


    “এবং যদি তোমরা সবর করো আর তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। তারা যা কিছু করছে তা সবই আল্লাহ’র (জ্ঞান ও শক্তির) আওতাভুক্ত।” (সূরাহ আলি ইমরান, ৩ :১২০)



    ইমাম ইবনে কাসির তাফসীর করেছেন –


    আল্লাহ মুমিনদের সম্বোধন করে বলছেনঃ হে মুমিনগণ, যদি তোমরা তাদের দুষ্টামি থেকে মুক্তি পেতে চাও, তবে ধৈর্যধারণ করো, সংযমী হও আর আমার উপর নির্ভর করো, আমি তোমাদের শত্রুদেরকে ঘিরে নেবো। কোন মঙ্গল লাভ করা আর কোন অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, যা চান না তা হতে পারে না। তোমরা যদি আল্লাহ’র উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করো, তবে তিনিই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।


    এ সম্পর্কেই এখন উহুদ যুদ্ধের বর্ণনা শুরু হচ্ছে – যার মধ্যে মুসলমানদের ধৈর্য ও সহনশীলতার বর্ণনা রয়েছে, আর যার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ’র পরীক্ষার পূর্ণচিত্র, যা দ্বারা মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য প্রকাশ পেয়েছে। (এরপর উহুদ যুদ্ধ সংক্রান্ত আয়াত শুরু)

    (তাফসীর ইবনে কাসির)



    ইমাম আত-তাবারি তার তাফসীরে বলেছেন –

    ইবনে জুরাইজ এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেছেন, “এর অর্থ হল, আল্লাহ মুমিনদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন, যদি তোমরা আল্লাহ’র অনুগত হও আর তাদের আদেশ পালন ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সবর করো, যেসব ইয়াহুদির সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য আল্লাহ নিষেধ করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করো, অনুরূপভাবে আল্লাহ’র সব নিষেধাজ্ঞা মেনে চল, তাকওয়া অবলম্বন করো, মহান আল্লাহ’র হক ও রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হক সম্পর্কে সতর্ক হও – তাহলে যেসব ইয়াহুদির বর্ণনা আল্লাহ মুসলমানদের অবহিত করেছেন, মুসলমানদের সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য যারা সব সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের কোন ষড়যন্ত্রই তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।”

    (তাফসীর তাবারি)



    সাইয়েদ কুতুব এ আয়াত প্রসঙ্গে তাফসীর করেছেন –


    “অর্থাৎ, তাদের ক্ষতি ও চক্রান্ত থেকে বাঁচার উপায় হল, তারা শক্তিশালী হলেও তাদের শক্তির সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্যধারণ করা, আর তারা যদি যুদ্ধ কিংবা ষড়যন্ত্রের পথ ধরে, তবে তাকেও দৃঢ়তার সাথে রুখে দাঁড়ানো। তাদের মৈত্রী ও বন্ধুত্ব লাভের আশায় আদর্শের ব্যাপারে আপোষ করার বদলে দৃঢ়তা ও সবর অবলম্বনই মুসলমানদের বাঁচার একমাত্র পথ। সেই সাথে একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করা আর আল্লাহ’র সাথে সব কিছুকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আল্লাহভীরু মানুষ আদর্শের প্রশ্নে কারো সাথে আপোষ করে না আর আল্লাহ’র রজ্জু ছাড়া আর কোন রজ্জু ধারণ করে না। হৃদয় যখন আল্লাহ’র সাথে মিলিত হবে, তখন তা আল্লাহ’র শক্তি ছাড়া আর সকল শক্তিকে তুচ্ছ মনে করবে, আর এ সম্পর্ককেই সে নিজের অত্যাবশ্যকীয় বস্তু মনে করবে। এর ফলে আত্মরক্ষার্থে বা সম্মান লাভের উদ্দেশ্যে কোন দুশমনকে তোয়ায করবে না।


    বস্তুত সবর, তাকওয়া, দৃঢ়তা ও আল্লাহ’র রজ্জু ধারণ – এ কয়টি জিনিষই হল মুসলমানদের বাঁচার উপায়। যতদিন মুসলমানেরা একমাত্র আল্লাহ’র রজ্জকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছে আর নিজেদের সমগ্র জীবনে আল্লাহ’র বিধানকে বাস্তবায়িত করেছে, ততদিন তারা শ্রদ্ধাভাজন থেকেছে, বিজয়ী হয়েছে। আল্লাহও তাদেরকে তাদের শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছেন আর তাদের আদর্শই সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছে। মুসলমানেরা তাদের ইতিহাসের কোন পর্যায়ে যখনই তাদের আজন্ম দুশমন (ইয়াহুদি, খ্রিস্টান বা পৌত্তলিকদের) ধ্বজাধারী ও পদলেহি হয়েছে, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছে আর তাদেরকে উপদেষ্টা, বিশেষজ্ঞ ও সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করেছে, তখনই আল্লাহ তাদের ভাগ্যে জুটিয়েছেন পরাজয় ও লাঞ্ছনা। মুসলমানদের এই আজন্ম শত্রুরা প্রকাশ্যে হোক আর গোপনেই হোক – ইসলামী আকিদা, আদর্শ ও জীবন পদ্ধতির বিরুদ্ধে সবসময়ই যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, আল্লাহ’র বাণীই চিরস্থায়ী আর আল্লাহ’র নীতিই কার্যকর। আল্লাহ’র এই নীতির প্রতি যারা ভ্রূক্ষেপ করে না, তাদের ভাগ্যে অপমান ও লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছুই জুটে না।”

    (তাফসীর ফি জিলালিল কুরআন)



    মাওলানা মুফতি শফি তাফসীর করেছেন –

    যাবতীয় বিপদাপদ ও অস্থিরতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য সবর ও তাকওয়াকে কুরআন শুধু এ আয়াতেই নয়, বরং অন্যান্য আয়াতেও একটি কার্যকরী প্রতিষেধক হিসেবে বর্ণিত করেছে।

    (মা’রিফুল কুরআন)



    আয-যামাখশারী তাফসীর করেছেন –

    এটি আল্লাহ’র পক্ষ থেকে শিক্ষা ও নির্দেশনা যে, শত্রুদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবর ও তাকওয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা হোক।

    (আল-কাসশাফ)



    আব্দুর রহমান ইবনে নাসির আস-সাদি তাফসীর করেছেন –

    মহান আল্লাহ তাদের কঠিন শত্রুতা বর্ণনা ও তাদের কুস্বভাবগুলো স্পষ্ট করার পর মুমিন বান্দাদেরকে সবর ও তাকওয়ার সাথে জড়িত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। (আর বলেছেন যে,) যখন তারা এমন করবে, তখন শত্রুদের ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারন মহান আল্লাহ তাদেরকে আর তাদের কাজগুলো ও ষড়যন্ত্রগুলোকে বেস্টন করে রেখেছেন এবং তিনি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তোমাদের তাকওয়া অবলম্বন করার স্থিতিতে তারা তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।

    (তাফসীরে সাদি)



    মাহমুদ আল-আলুসি তাফসীর করেছেন –

    সবর ও তাকওয়ার বরকতের কারনে তার তোমাদের ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না – না বেশী, না কম। কারন এ দুটো হল উত্তম আনুগত্য আর উৎকৃষ্ট চরিত্রের শামিল। এ দুটি বৈশিষ্ট্যতে নিজেকে সুসজ্জিতকারী ব্যক্তি শত্রুর ষড়যন্ত্রের মুকাবিলায় মহান আল্লাহ’র সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে চলে আসে।

    (রুহুল মা’আনি, তাফসীরে কুরতুবি)



    মুফতি মুহাম্মাদ আশিক ইলাহি তাফসীর করেছেন –

    “সবর অবলম্বন করা, সৎ কাজ করা আর পাপ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মুসলিমেরা তাদের শত্রুদের আক্রমণকে পরাস্ত করতে পারে, এগুলোই হল তাদের আক্রমণ নিবৃত্ত করার সত্যিকারের অস্ত্র।”

    (তাফসীর আনওয়ারুল বায়ান)



    ইমাম ফখরুদ্দিন আর-রাযি তাফসীর করেছেন,

    এ আয়াতের অর্থ হল, যে ব্যক্তি আল্লাহ’র আদেশ পালনে সবর করে আর তার নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকে, সে আল্লাহ’র নিরাপত্তায় চলে আসে আর তাকে কাফিরদের ষড়যন্ত্র তথা ফন্দিবাজদের ফন্দি ক্ষতি পৌঁছাতে পারে না।

    মুল বাস্তব কথা হল তো এটাই, মহান আল্লাহ সৃষ্টিকে নিজের ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাই এ সম্পর্কে বন্দেগীর চুক্তি পূর্ণ না করা মহান আল্লাহ’র মাহাত্ম্যের পরিপন্থি। এ বাস্তবতার দিকেই মহান আল্লাহ’র নিন্মোক্ত বাণীতে ইঙ্গিত করা হয়েছে –

    “আর যে কেউ আল্লাহ’র (প্রতি) তাকওয়া অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ বের করে দিবেন আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রুযী দান করবেন।” (সূরাহ আত-তালাক, ৬৫ :২-৩)

    (তাফসীরে কাবির)



    "তারা ষড়যন্ত্র করেছিলো, আল্লাহ কৌশল করেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ কৌশলীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ"
    Last edited by Mujaheed of Hind; 08-19-2016, 07:28 PM.

  • #2
    জাযাকাল্লহ ভাই। অন্তরটা কিছুটা অস্থির ছিল। এখন বুঝে গিয়েছি যে আল্লাহ আমাদের কাছে এখন কি চাচ্ছেন।
    জাযাকাল্লাহ ভাই...
    "তুমি রবের বান্দার প্রতি দয়া কর
    বান্দার রবও তোমার প্রতি দয়া করবেন।"

    Comment


    • #3
      জাঝাকাল্লাহু খাইরান ভাই।

      এই রকম বিভিন্ন আয়াতের শিক্ষা তুলে ধরলে আমাদের সবার অনেক উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ

        Comment


        • #5
          জাঝাকাল্লাহু খাইরান ভাই।

          Comment

          Working...
          X