Announcement

Collapse
No announcement yet.

যবানের হেফাযত : সফলতার সোপান

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যবানের হেফাযত : সফলতার সোপান


    যবানের হেফাযত : সফলতার সোপান


    আল্লাহ মানুষকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। মনের ভাব প্রকাশ করার ভাষা দিয়েছেন। এ মানুষের প্রতি আল্লাহর এক মহা দান। পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়, যারা এ নিআমত থেকে চিরবঞ্চিত। সুতরাং যাদেরকে আল্লাহ এ নিআমত দান করেছেন তাদের উচিত এর যথাযথ ব্যবহারের প্রতি যত্নবান হওয়া।

    আল্লাহর এ নিআমতকে মানুষ তার ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারে- এ শক্তি আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। এখন মানুষ তার এ শক্তিকে ভালো কাজে ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে; অথবা মন্দ কাজে ব্যয় করে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পাত্রে পরিণত হতে পারে।

    অমরা যাতে আল্লাহর দেয়া এ নিআমতকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যয় করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারি, যবানের অনিষ্ট থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি- এজন্য নবীজী আমাদের এ বিষয়ে অগণিত নির্দেশনা দিয়েছেন।

    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ .

    যে আমাকে তার দুই চোয়ালের মাঝের অঙ্গ অর্থাৎ যবান এবং দুই পায়ের মাঝের অঙ্গের (সঠিক ব্যবহারের) যামানত দিবে আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭৪



    যবানের নিয়ন্ত্রণ

    উকবা ইবনে আমের রা. একবার নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! নাযাত কীসে? নবীজী উত্তরে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি উল্লেখ করলেন তা হল-

    أمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ.

    তুমি তোমার যবানের নিয়ন্ত্রণ কর। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪০৬)



    ধ্বংস ডেকে আনে যবান

    নবীজীর প্রিয় সাহাবী মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, একবার নবীজীর সাথে কোনো এক সফরে ছিলাম। পথিমধ্যে নবীজীকে একান্তে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

    يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلنِي الجَنَّةَ وَيُبَاعِدنِي عَنِ النَّارِ.

    আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।

    (তখন নবীজী তাকে দীর্ঘ উপদেশ দিলেন, এক পর্যায়ে বললেন,)

    أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ : كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ! وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ : ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ.

    এ সবকিছুর মূল কী- আমি কি তোমাকে বলে দিব? আমি বললাম, জী, আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি নিজের জিহ্বা ধরে বললেন, এটাকে সংযত কর। এ কথা শুনে আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল! আমরা আমাদের কথাবার্তার জন্যও জিজ্ঞাসিত হব? নবীজী বললেন, আরে! যবানের কামাই-ই তো মানুষকে অধঃমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে! -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬১৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৭৩

    হাঁ, যবানের অনিষ্ট এত ব্যাপক, তা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে ফেলে। বে-পরোয়াভাবে মানুষ যা ইচ্ছা তা-ই বলতে থাকে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির পাত্রে পরিণত হয়। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    إِنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللَّهِ، لاَ يُلْقِي لَهَا بَالًا، يَرْفَعُهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَاتٍ، وَإِنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللَّهِ، لاَ يُلْقِي لَهَا بَالًا، يَهْوِي بِهَا فِي جَهَنَّمَ.

    বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কথা বলে, যেদিকে সে খেয়ালই করে না, কিন্তু এর কারণে আল্লাহ তার মর্যাদাকে সমুন্নত করেন। আবার বান্দা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার মত কথা বলে, যেদিকে সে ভ্রুক্ষেপই করে না; কিন্তু তা তাকে জাহান্নামে নিয়ে পৌঁছায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭৮



    যা বলছি লিপিবদ্ধ হচ্ছে

    আমাকে ভাবতে হবে- কী বলছি, কী বলা উচিত। কারণ, আমার গুরুত্বহীনভাবে বলা কথাও আমার কত বড় ক্ষতি সাধন করতে পারে- উপরের হাদীস থেকে জানতে পারলাম। তাছাড়া আমার সব কথা তো লিপিবদ্ধ হচ্ছে। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

    اِذْ یَتَلَقَّی الْمُتَلَقِّیٰنِ عَنِ الْیَمِیْنِ وَ عَنِ الشِّمَالِ قَعِیْدٌ، مَا یَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَیْهِ رَقِیْبٌ عَتِیْدٌ.

    স্মরণ রেখ, দুই গ্রহণকারী ফিরিশতা তার ডানে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে; মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত। -সূরা কফ (৫০) : ১৭-১৮

    সালাফ তাদের শীষ্য-সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্ক করতেন। সুফিয়ান ছাওরী রাহ. একদিন তাঁর সঙ্গীদের বললেন-

    لَوْ كَانَ مَعَكُم مَنْ يَرْفَعُ حَدِيْثَكم إِلَى السُّلْطَانِ، أَكُنْتُم تَتَكَلَّمُوْنَ بِشَيْءٍ؟

    তোমাদের সঙ্গে যদি এমন কেউ থাকে, যে তোমাদের কথা সুলতানের কাছে পৌঁছে দিবে, তোমরা কি কোনো কথা বলবে?

    সঙ্গীরা বললেন- لا জী না

    তিনি তখন বললেন-

    فَإِنَّ مَعَكُم مَنْ يَرْفَعُ الحَدِيْثَ.

    তাহলে জেনে রেখ, তোমাদের সাথে এমন লোক আছেন যিনি কথা পৌঁছান। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ। -সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৬৮



    কথার তিক্ততা চিরতার চেয়েও তীব্র

    চিরতার তিক্ততা সবাই জানে। যে চিরতা-পানি পান করেছে সেও জানে, যে পান করেনি সেও জানে। কিন্তু মানুষের কথার তিক্ততা চিরতা থেকেও তিক্ত। এক হাদীসে আয়েশা রা. নিজের কথা বর্ণনা করেন-

    তিনি বলেন একবার আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (উম্মুল মুমিনীন) সাফিয়্যা সম্বন্ধে বললাম, সাফিয়্যা তো এই এই। (তার মাঝে তো এই এই দোষ আছে। কোনো কোনো বর্ণনাকারী বলেন, তার উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়্যা তো বেঁটে ইত্যাদি।) এ কথা শুনে নবীজী বললেন,

    لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِمَاءِ الْبَحْرِ لَمَزَجَتْهُ.

    তুমি এমন (জঘন্য) কথা বলেছ, যদি তা সাগরের পানিতে মিশিয়ে দেয়া হয় তাহলে সাগরের পানি ঘোলা হয়ে যাবে। (অর্থাৎ এমন তিক্ত ও নোংরা কথা তুমি বলেছ।) -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৭৫



    কথার বর্শায় হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়


    আমি যখন কোনো হিসাব নিকাশ ছাড়া কথা বলব তো আমার যবান থেকে এমন কথা বের হয়ে যেতে পারে, যা কোনো ভাইয়ের হৃদয়কে জখম করবে। আমার কথার বর্শায় কারো হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হবে। কবি বলেন,

    جراحات السنان لها التـئـام

    ولا يلتام ما جرح اللســان

    বর্শার যখম শুকিয়ে যায়

    কিন্তু যবানের যখম শুকায় না

    আমার মুখের কথার দ্বারা কত মানুষের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। আমার কোনো খবরই নেই। আর যবানের যখম এত মারাত্মক, যার কোনো দাওয়াই নেই। নিচে যবানের দ্বারা ঘটে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে, যা মানুষের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে।



    তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ও মন্দ নামে ডাকা

    এ বিষয়টিকে আমরা অনেকেই হালকা মনে করি। হাসি-ঠাট্টার ছলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কাউকে নিয়ে হাসাহাসি করা বা মন্দ নামে ডাকা যেন আমাদের কাছে তেমন কোনো বিষয়ই না। অথচ এটি এমনই একটি মন্দ কাজ, যে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا یَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُوْنُوْا خَیْرًا مِّنْهُمْ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُنَّ خَیْرًا مِّنْهُنَّ وَ لَا تَلْمِزُوْا اَنْفُسَكُمْ وَ لَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِیْمَانِ وَ مَنْ لَّمْ یَتُبْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.

    হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই যালেম। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১১

    হযরত মাওলানা তাকী উসমানী দামাত বারকাতুহুম তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে এ আয়াতের টীকায় বলেন,

    “যেসব কারণে সমাজে ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেয়, এ আয়াতসমূহে (এ আয়াত এবং এর আগের পরের আয়াত) সেগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল কাউকে কোনো খারাপ নাম দিয়ে দেওয়া, যা তার জন্য পীড়াদায়ক হয়। আল্লাহ তাআলা বলছেন, এরূপ করা গুনাহ আর এটা যে করবে সে নিজে গুনাহগার (ফাসেক) হয়ে যাবে। তার নাম পড়ে যাবে যে, সে একজন ফাসেক (গুনাহগার)। ঈমান আনার পর কোনো মুসলিমের ফাসেক নামে অভিহিত হওয়াটা খুবই খারাপ কথা। এর ফল দাঁড়াবে এই যে, তুমি তো অন্যকে মন্দ নাম দিচ্ছিলে অথচ নিজেই একটা মন্দ নামে অভিহিত হয়ে গেলে। -তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (বাংলা) খ. ৩ পৃ. ৩৮৮ (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১১-এর টীকা দ্রষ্টব্য)

    কাউকে অপমান করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এটা মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    كُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ.

    তোমরা পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই; একে অপরের প্রতি যুলুম করে না, একজন আরেকজনকে লাঞ্ছিত করে না এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৪



    হাসি-মশকরার স্বরূপ

    হাসি-মশকরা মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। মৌলিকভাবে এটি নিষিদ্ধ নয়। বরং ঐ হাসি-মশকরা নিষেধ, যার মাঝে মিথ্যা, অশ্লীলতা ও কাউকে কষ্ট দেওয়ার বিষয় থাকে। নবীজীও সাহাবীগণের সাথে হাসি-মশকরা করতেন। কিন্তু তাতে মিথ্যাও থাকতো না, কাউকে কষ্ট দেওয়া বা অপমান করার বিষয় থাকতো না।

    হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম একবার (কোনো এক প্রষঙ্গে) বললেন, আল্লাহর রাসূল! আপনিও আমাদের সাথে হাসি-মশকরা করেন! তখন নবীজী বললেন, (হাঁ, আমি হাসি-মশকরা করি তবে)

    لاَ أَقُولُ إِلاَّ حَقًّا.

    তবে আমি সত্য ছাড়া বলি না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৯০



    গালি দেওয়া ও অশ্লীল কথাবার্তা বলা


    মুমিন অশ্লীল কথাও বলে না, গালিও দেয় না। এ স্বভাব মুমিনের সাথে যায় না। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

    لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ، وَلَا اللَّعَّانِ، وَلَا بِالْفَاحِشِ، وَلَا بِالْبَذِيءِ.

    মুমিন (অন্যের) দোষ চর্চাকারী হয় না, লানতকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না (বাজে কথা বলে না)। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭৭

    আর কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া তো অনেক বড় অন্যায়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ.

    মুসলিমকে গালি দেওয়া ফিস্ক (গুনাহের কাজ)। আর তাকে হত্যা করা কুফ্র। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪

    আর যে গালিগালাজ করে তাকে কেউ পছন্দ করে না। তার সাথে মিশতে চায় না, দূরে দূরে থাকে। তার সাথে মিশতেও সবাইকে বারণ করা হয়। আল্লাহও তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। এক হাদীসে নবীজী বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيءَ.

    অশ্লীল ও গালিগালাজকারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট থাকেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২০০২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৬৯৩



    রাগের সময় গালাগালি করা মুনাফিকের স্বভাব

    একসাথে চলতে গিয়ে মতের অমিল হতেই পারে। বাক-বিত-া হতেই পারে। কিন্তু এ সকল সময়ে গালিগালাজ করা- এটা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। অন্যজন গালি দিলেও মুমিন গালি দিবে না। নবীজী বলেছেন, এটা মুনাফিকের স্বভাব। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

    أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا: إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ.

    চারটি (মন্দ) স্বভাব আছে, এগুলো যার মাঝে থাকবে সে খালেছ মুনাফিক বলে গণ্য হবে। আর যার মাঝে এই চার স্বভাবের কোনো একটি থাকল, তার মাঝে মুনাফেকির একটি স্বভাব থাকল; যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে। ১. আমানত রাখলে খেয়ানত করে। ২. কথা বলে তো মিথ্যা বলে। ৩. প্রতুশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে। ৪. তর্কের সময় গালাগালি করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪

    রাগের সময়ও যেন আমার মুখ থেকে নোংরা কথা বের না হয়, গালাগালি না করি; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিয়েছেন- إِذَا غَضِبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْكُتْ.

    কেউ যখন রেগে যায় সে যেন চুপ হয়ে যায়। (যাতে গালিগালাজ, মন্দ কথা থেকে বাঁচতে পারে।) -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৬



    উপরে ঢিল ছুড়লে নিজের মাথায় পড়ে


    কোনো ব্যক্তিকে গালি দেওয়া বা ফাসেক কাফের বলা অন্যায়। কোনো ব্যক্তির মাঝে যদি ঐ দোষ থাকে তবুও তাকে ওই কথা বলে গালি দেওয়া নিষেধ। আর যদি না থাকে তাহলে ঐ গালি ফিরে এসে নিজের গায়ে পড়ে। নবীজী আমাদেরকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন-

    لاَ يَرْمِي رَجُلٌ رَجُلًا بِالفُسُوقِ، وَلاَ يَرْمِيهِ بِالكُفْرِ، إِلَّا ارْتَدَّتْ عَلَيْهِ، إِنْ لَمْ يَكُنْ صَاحِبُهُ كَذَلِكَ.

    কোনো ব্যাক্তি যদি কাউকে ফাসেক বা কাফের বলে (গালি দেয়), আর তার মাঝে ফিস্ক বা কুফ্র না থাকে। তাহলে ঐ কথা গালিদাতা ব্যক্তির দিকে ফিরে আসে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৪৫



    ব্যক্তি কি নিজের মা-বাবাকে গালি দেয়?


    নিজের মা-বাবাকে কি কেউ গালি দেয়? উত্তর হবে, কক্ষনো না। কিন্তু বাস্তবতা হল মানুষ নিজের অজান্তেই নিজের মা-বাবাকে গালি দেয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আমাদের বুঝিয়েছেন; নবীজী একবার বললেন-

    إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ.

    সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হল, ব্যক্তি তার মা-বাবাকে গালি দেওয়া।

    একথা শুনো সাহাবীগণ বললেন,

    وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟

    নিজের মা-বাবাকে আবার মানুষ গালি দেয় কীভাবে?

    উত্তরে নবীজী বললেন,

    يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ.

    ব্যক্তি কারো বাবা (মা)-কে গালি দেয়, তখন সে গালিদাতার বাবা-মা’কে গালি দেয়। (কেমন যেন পরিণামে গালিদাতা ব্যক্তি নিজের বাবা-মা’কে গালি দিল।) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৭৩



    যবানের আরো বড় বড় গুনাহ


    যবানের দ্বারা মানুষ অনেক বড় বড় গুনাহে লিপ্ত হয়। যবান আমলের খাতাকে কলুষিত করে। কিয়ামতের দিন এই যবানই মানুষের মহা বিপদের কারণ হবে। যবানের দ্বারা সংঘটিত কিছু পাপ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। আল্লাহ আমাদের যবানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।



    ১.গীবত


    যবানের দ্বারা সংঘটিত গুনাহের মধ্যে গীবতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি লিপ্ত হয়। কম মানুষই এ থেকে বাঁচতে পারে। এ ব্যাপারে অবহেলার অন্ত নেই। জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে গীবত করতে থাকে। সকালে গীবত করে, বিকালে গীবত করে, রাতে গীবত করে; গীবতই যেন কারো কারো সারাদিনের একমাত্র কাজ। ক’জন একত্র হলে প্রথম কাজ যেন গীবত।

    এটা মানুষের সমাজে শত ফ্যাসাদের কারণ। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এর নিকৃষ্টতা ব্যক্ত করেছেন- নিজের মৃত ভাইয়ের গোস্ত ভক্ষণের সাথে তুলনার মাধ্যমে-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِیْرًا مِّنَ الظَّنِّ ؗ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوْا وَ لَا یَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًا اَیُحِبُّ اَحَدُكُمْ اَنْ یَّاْكُلَ لَحْمَ اَخِیْهِ مَیْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ وَ اتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَّحِیْمٌ.

    হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, কোনো কোনো অনুমান গুনাহ। তোমরা কারো গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না এবং একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাকো। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১২

    গীবত সম্বন্ধে আরো বহু বর্ণনা রয়েছে। গীবত থেকে বাঁচার জন্য আজ শুধু এতটুকু জেনে নিই- গীবত ও পরনিন্দার শাস্তি কত কঠিন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

    لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ، فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ، قَالَ: هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ، وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ.

    মে‘রাজের সময় আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের ছিল তামার নখ। সেই নখ দিয়ে তারা নিজেদের চেহার এবং বুক ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি বললাম, জিবরীল! এরা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, যারা (দুনিয়াতে) মানুষের গোশত খেত (গীবত করত) এবং মানুষের সম্মান হানি করত। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৩৪০



    ২. পরনিন্দা


    সামাজিক ফাসাদের ক্ষেত্রে পরনিন্দা আরো মারাত্মক। পরনিন্দা বলা হয় : বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের দোষ অন্যের কানে লাগানো। পরনিন্দাকারী অন্যকে লাঞ্ছিত করতে গিয়ে একসময় নিজে লাঞ্ছিত হয়; যখন মানুষ তার আসল উদ্দেশ্য জেনে যায়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ স্বভাবের নিন্দা করে বলেন,

    وَیْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةِ.

    দুর্ভোগ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির, যে পেছনে ও সামনে মানুষের নিন্দা করে। -সূরা হুমাযাহ, (১০৪) : ১

    আর পরনিন্দাকারীর পরিণাম বড় ভয়াবহ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ.

    পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১০৫৯০



    ৩. মিথ্যা

    মিথ্যা সকল পাপের মূল। মুনাফিকের স্বভাব। মুমিন মিথ্যা বলতে পারে না। যে এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর সামনে আমাকে দাঁড়াতে হবে, সে মিথ্যা বলতে পারে না। কবীরা গুনাহের সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মিথ্যা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সাহাবীগণকে বললেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহসমূহের কথা বলে দিব? সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলুন আল্লাহর রাসূল! তখন নবীজী বললেন,

    الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ -وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ- أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ، قَالَ: فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ.

    আল্লাহর সাথে র্শিক করা। মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া। (এতটুকু বলা পর্যন্ত নবীজী হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন) এরপর নবীজী হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে উঠে বসলেন, বললেন, আরে ভালো করে শুনে রাখ! (বড় কবীরা গুনাহের অন্যতম হল,) মিথ্যা বলা, মিথ্যা বলা, মিথ্যা বলা। নবীজী অতি গুরুত্বের সাথে এ বাক্য বারবার বলতে লাগলেন। এ দেখে আমরা (মনে মনে) বলে উঠলাম, (নবীজীর তো কষ্ট হচ্ছে!) নবীজী যদি একটু চুপ করতেন! -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৫৪



    মিথ্যার পরিণাম জাহান্নাম

    মিথ্যার পরিণাম জাহান্নাম। দুনিয়ার পরিণাম হলো লাঞ্ছনা। কারণ, মিথ্যা গোপন থাকে না; কোনো না কোনোদিন প্রকাশ পেয়েই যায়। একটি মিথ্যা দশটি মিথ্যা টেনে আনে, পাপের বোঝা বাড়াতেই থাকে। একপর্যায়ে মিথ্যার জাল থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সাময়িক ও বাহ্যিক ক্ষতি বা শাস্তি মেনে নিয়ে হলেও মিথ্যা থেকে একশ হাত দূরে! নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا.

    তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নামে নিয়ে ফেলে। ব্যক্তি মিথ্যা বলতেই থাকে, মিথ্যার খোঁজে থাকে; এক পর্যায়ে আল্লাহর খাতায় ‘কায্যাব’ (মহা মিথ্যাবাদী) হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬০৭



    ৪. মিথ্যা সাক্ষ্য

    মুমিন কখনোই মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে না। মুমিনের এই গুণের কথা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, وَ الَّذِیْنَ لَا یَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ.

    যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয় না। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২

    উপরে ‘মিথ্যা’ শিরোনামে উল্লেখিত হাদীসটিরই একটি বর্ণনার মধ্যে মিথ্যার সাথে মিথ্যা সাক্ষীর কথাও উল্লেখ হয়েছে। সে হাদীসের পাঠ হল-

    أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ، وَشَهَادَةُ الزُّورِ، أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ، وَشَهَادَةُ الزُّورِ.

    (তোমরা শুনে রাখ! বড় কবীরা গুনাহের অন্যতম হল,) মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষী...। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৭৬



    ৫. মিথ্যা কসম

    কসম করা হয় কাউকে কোনো কথা বিশ্বাস করানোর জন্য। কথার তাকিদ করার জন্য। নিজের কথা বা কাজের সুসত্যতা প্রমাণের জন্য। অথবা প্রমাণবিহীন বিষয়ে কসমকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করার জন্য। এখন যার মাধ্যমে সত্য সুপ্রমাণিত করা হয়, সেটির ভিত্তি যদি হয় মিথ্যার উপর তখন এটি কত মারাত্মক অন্যায় বলে গণ্য হয়! তাছাড়া কসম হয় আল্লাহর নামে। মিথ্যা, আবার আল্লাহর নাম নিয়ে মিথ্যা!- ‘চুরি আবার সিনাজুরি’!! এটি চূড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা অতি কঠোর ভাষায় এর নিন্দা করেছেন-

    اِنَّ الَّذِیْنَ یَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللهِ وَ اَیْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِیْلًا اُولٰٓىِٕكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِی الْاٰخِرَةِ وَ لَا یُكَلِّمُهُمُ اللهُ وَ لَا یَنْظُرُ اِلَیْهِمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وَ لَا یُزَكِّیْهِمْ وَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِیْمٌ.

    যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না; তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৭৭

    মিথ্য কসম যেখানে আল্লাহর কাছে এত বড় অন্যায়, সেখানে কীভাবে আমরা গুরুত্বহীনভাবে কোনো কোনো সময় মিথ্যা কসম করে ফেলি?

    অনেক সময়ই এমন হয়- এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সাথে কথা বলছে তো সামান্য একটি অপ্রয়োজনীয় কথা বিশ্বাস করানোর জন্য মিথ্যা কসম করে ফেলে। তেমনি তুচ্ছ কোনো বস্তু নিজের প্রমাণ করার জন্য বা অন্যের নয়- এ কথা প্রমাণ করার জন্য আমরা জেনে-বুঝে মিথ্যা কসম করে ফেলি। অথচ এটা কত বড় অন্যায় এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

    مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ، فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: وَإِنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: وَإِنْ كَانَ قَضِيبًا مِنْ أَرَاكٍ.

    কেউ যদি (মিথ্যা) কসমের মাধ্যমে কোনো মুসলিমের হক কেটে দেয় (মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কাউকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে।) আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। এ কথা শুনে এক সাহাবী বললেন, যদি সামান্য বস্তুর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে? নবীজী বললেন, হাঁ, যদি আরাকের (এক প্রকার গাছ) সামান্য একটি ডালও হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৭



    যবানের অনিষ্ট হতে বাঁচতে হলে

    আমার সব কথা লিপিবদ্ধ হচ্ছে, আমাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে- এ কথা অন্তরে যত সতেজ রাখব তত যবানের অনিষ্ট হতে বাঁচতে পরব। সাথে সাথে মনে রাখি :



    আমি মুসলিম, আর প্রকৃত মুসলিম সেই...


    المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِه.

    মুসলিম সেই, যার যবান ও হাত থেকে অপরাপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০ ; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪০



    সদা সত্য বলব, সত্যের ঠিকানা জান্নাত


    عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ، فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا.

    সদা সত্য বল, কেননা সত্য ভালো কাজের পথে পরিচালিত করে। আর ভালো কাজ জান্নাতে নিয়ে যায়। ব্যক্তি সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদীতার চেষ্টায় থাকে একপর্যায়ে আল্লাহর খাতায় ‘ছিদ্দীক’ (চির সত্যবাদী) নামে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬০৭



    অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকব


    মুমিনের গুণই হল-

    وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ.

    যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। -সূরা মুমিনূন (২৩) : ৩

    مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ.

    ব্যক্তি ভালো মুসলিম হওয়ার একটি বৈশিষ্ট্য হল, অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩১৭



    আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কথা বলব না


    নবীজীর সন্তান ইবরাহীম ইন্তেকাল করলে নবীজী কাঁদছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল! আপনিও...? (আপনিও কাঁদছেন) তখন নবীজী বললেন, হে ইবনে আউফ!...

    إِنَّ العَيْنَ تَدْمَعُ، وَالقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلاَ نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا

    চোখ থেকে অশ্রু ঝরবেই, হৃদয় ব্যাথিত হবেই। কিন্তু আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কথা আমরা বলব না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩০৩



    জিহ্বাকে আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত রাখি


    এক সাহাবী নবীজীর কাছে জিজ্ঞেস করলেন,

    يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ شَرَائِعَ الإِسْلاَمِ قَدْ كَثُرَتْ عَلَيَّ، فَأَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ أَتَشَبَّثُ بِهِ،

    ইসলামের বিধান তো অনেক; আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যা আমি গুরুত্ব সহকারে পালন করব। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

    لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا بِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ

    তোমার যবান যেন সদা আল্লাহর যিকির দ্বারা সতেজ থাকে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭৫



    ভালো কথা বলব অথবা চুপ থাকব


    مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ.

    যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৭

    আল্লাহ আমাদের যবানের যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা করুন। এ নিআমতকে ভালো কাজে ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দিন। আমীন 

    Collected.
    Last edited by Hazi Shariyatullah; 08-23-2016, 12:35 AM.

  • #2
    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যবানের হেফাযত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    ইয়া রাহমান ! বিশ্বের নির্য়াতিত মুসলিমদেরকে সাহায্য করুন। তাগুতদেরকে পরাজিত করুন। আমিন।

    Comment


    • #3
      Allah humma Ameen.

      Comment


      • #4
        হে, আল্লাহ্* আপনি যেই সকল কাজের উপর অসন্তুষ্ট তা থেকে দূরে রাখুন আর যেই সকল কাজে করলে আপনি সন্তুষ্ট সেগুল বেশি বেশি করার তফিক দান করুণ। আমীন।।

        Comment


        • #5
          মাশা আল্লাহ, বহুত উপকারী পোস্ট।
          ইয়া রব্ব! আমাদেরকে আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন
          “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

          Comment


          • #6
            من صمت نجا
            অর্থ: যে চুপ থেকেছে সে মুক্তি পেয়েছে।

            Comment


            • #7
              আলহামদুলিল্লাহ, লেখাটি পড়ে অনেক ভাল লাগল। জাযাকুমুল্লাহ
              আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন
              ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

              Comment


              • #8
                চালিয়ে যান ভাই,,,,,,
                গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

                Comment


                • #9
                  বহুত উপকারী পোষ্ট ,জাযাকুমুল্লাহ ।

                  Comment

                  Working...
                  X