Announcement

Collapse
No announcement yet.

মগের মুল্লুক এবং ঢাকার মগবাজার

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মগের মুল্লুক এবং ঢাকার মগবাজার

    প্রায় সবাই হয়তো "মগের মুল্লুক" বলে একটা শব্দ শুনে থাকেবেন।
    কিন্তু জানেনকি "মগের মুল্লুক" আসলে কী জিনিস?
    এছাড়া ঢাকার মগবাজার এর নামকরণের কারণ কি জানেন?
    ----------------
    আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বের কথা। বুর্তমান আরাকানে তখন ২টা জাতি বাস করত। এক হল রোহিঙ্গা আর দ্বিতীয়ত হল মগ বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গা মুসলিমদের তখন একটি সভ্যতা থাকলেও এই মগরা ছিল বর্বর, উগ্র একটি সম্প্রদায়। তারা সভ্যতার আলো থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ডাকাতি, জলদস্যুগিরি কে বেছে নিয়েছিল অরাজকতা সৃষ্টিতে। আজকের মিয়ানমারমারের বৌদ্ধদের আদিপুরুষ এই মগ জলদস্যুরা সে সময় এই বাংলায় এক বিস্তীর্ণ এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে বসেছিল ৷ ফরাসি পরিব্রাজক বার্নিয়ের সে কথা বর্ণনা করে লুণ্ঠন ও অত্যাচারের যে বিবরণ দিয়েছেন, তা পড়ে এখনো যেন রক্ত হিম হয়ে আসে! কথায় বলে রতনে রতন চেনে। কথাটা পর্তুগিজ জলদস্যু আর মগদের বেলায় ষোল আনা খাটে। পর্তুগিজ জলদস্যুরা যখন চট্টগ্রাম পেরিয়ে আরাকানে পৌঁছাল, মগদের সঙ্গে দ্রুতই গলায় গলায় ভাব হয়ে গেল তাদের। এই উভয় জাতিই পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকা বা জাহাজে যাযাবর জীবন যাপন করত এবং লুটপাট, ডাকাতি, অপহরণ—ইত্যাদিই ছিল তাদের মূল পেশা। ফলে এই দুই ত্রাস একত্র হতে পেরে বাংলার বুকে অপকর্মের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল।
    “পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের সঙ্গে যখন আরাকানী বৌদ্ধরা হাত মিলিয়ে বাঙলার উপকূলীয় এলাকায় সম্ভ্রমহরণ-লুণ্ঠন-হত্যার মতো জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় তখন থেকেই ‘মগ’ ও ‘মগের মুলুক’ জাতি ও দেশবাচক শব্দ দুটি অরাজকতার নামান্তর রূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। ‘মগ’ মানে আরাকানী বৌদ্ধ আর ‘মগের মুলুক’ মানে আরাকান এ পরিচয় আজ অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। বরং সমাজ-জীবনের কোথাও অনাচার-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিলে তাকেই বলা হয় ‘মগের মুলুক’।” (তথ্যসূত্র: বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গী ও বর্গীর অত্যাচার, মুহম্মদ আবদুল জলিল, বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ২৫)
    এই বাংলার ধন-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে বারংবার বিদেশী অবাঙালি ও অমুসলিম দস্যুরা এই ভূখ-ে হানা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ছিল পর্তুগীজ হার্মাদ নৌদুস্য, মগ নৌদস্যু, অশ্বারোহী মারাঠা বর্গী দস্যুদল প্রভৃতি। এর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগদের ভয়াবহ যুলুম নিয়ে ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দীন তালিশ লিখেছিলেন- “চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাতায়াতের পথে নদীর উভয় পার্শ্বে একজন গৃহস্থও থাকলো না। এই মগের ধ্বংস ক্রিয়ার ফলে বাকলার মতো সমৃদ্ধশালী জনবসতি পূর্ণ জেলায় এমন একটি গৃহও ছিল না, যার মানুষ একটি প্রদীপ জ্বালাতে পারে।” (সূত্র: ঐ, পৃষ্ঠা ৩৫)
    মোটকথা প্রাচীন বাংলার দক্ষিনাঞ্চল থেকে শুরু করে, পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ সহ বর্তমান ঢাকা পর্যন্ত এই বহিরাগত মগ ও পর্তুগীজরা যে পাশবিক হামলা ও লুণ্ঠন চালিয়েছিল ইতিহাসের পাতায় তা এখনো জীবন্ত হয়ে আছে। মগরা এতই দুর্দান্ত ছিল যে, হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুণ্ঠন প্রভৃতি তো ছিলই, এছাড়াও তারা এদেশের নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠনেও ব্যাপকভাবে লিপ্ত ছিল। তারা ঢাকার একজন মোগল সেনাপতির স্ত্রীকেও পর্তুগীজদের সহায়তায় অপহরণ করে। খুলনার ইতিহাস প্রণেতা সতীশ চন্দ্র মিত্র মগ ফিরিঙ্গিদের অত্যাচারের পাশাপাশি বর্ণ হিন্দুদের অত্যাচার-নিগ্রহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। তাদের সহযোগিতায় “মগ হামলার শিকার বাংলার গৃহস্থরা নিজেদের দুর্ভাগ্য অথবা অরক্ষিত অরাজক দেশের দোষে সমাজের পতিত ও অপবাদগ্রস্থ হইয়া থাকিত।” ক্রমাগত মগ হামলায় বহু জনপদ জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল। নদীর দুই ধারে সন্ধ্যাবাতি জ্বালানোর মত মানুষও ছিল না। তাদের নির্মম অত্যাচারে এদেশের অনেক মানুষ পৈতৃক ঘর গৃহস্থালী ফেলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিত। যা ইচ্ছা তাই তারা করত! প্রকৃতপক্ষে স্বেচ্ছাচারিতা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি এবং হত্যা-লুণ্ঠন, জবরদখল, চাঁদাবাজি, প্রভৃতি অরাজক অবস্থা বুঝানোর জন্যেই মগের মুল্লুক শব্দটি ব্যবহৃত হয়।এই পর্তুগীজ ও মগ দস্যুরা মিলে বাংলায় যে অবস্থা সৃষ্টি করেছিল তা হচ্ছে বর্ণনাতীত। তাদের অত্যাচারে চট্টগ্রাম থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত গোটা উপকূল জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। এমনকি উপকূলীয় এলাকা থেকে ঢাকা পর্যন্ত নদনদীর দুই ধারের গ্রামগুলো মনুষ্য বসবাসের যোগ্য ছিল না।এরা নদীপথে চলাচল করত এবং গ্রামের পর গ্রামে লুটপাট চালাত। হেন অপকর্ম নেই, যা তারা করতে পারত না। লুটপাটের পর বাকি সবই তারা আগুন দিয়ে ছাই বানিয়ে রেখে যেত। যুবা, নারী-পুরুষদের তারা ধরে নিয়ে যেত দাস বানিয়ে রাখতে বা অন্য কোথাও বিক্রি করে দিতে। নারীরাই তাদের শিকার হত সবচেয়ে বেশি। এভাবে বাংলার কত হতভাগিনীর যে কপাল পুড়েছে, সে ইতিহাস আর জানা যাবে না কোন দিন। পিতা-মাতা, স্বামী-সন্তান ছেড়ে তাদের চলে যেতে হত দূর দেশে। আর কখনো আপনজনদের কাছে ফেরা হত না তাদের। লুণ্ঠনের পর যুবক-যুবতীদের হাতের তালু ও পায়ের পাতা ফুটো করে বেত দিয়ে বেঁধে নৌকা বা জাহাজের পাটাতনের নিচে গাদাগাদি করে ফেলে রাখত হাঁস-মুরগির মত। এ বন্দর থেকে আরেক বন্দরে নিয়ে যেত তাদের বিক্রি করার জন্য। তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হত, জীব-যন্তুর সঙ্গেও তেমন আচরণ করতে যে কোন মানুষেরই বিবেকে বাধে। মগদের অবশ্য বিবেক বলে, হূদয় বলে কিছু ছিল না। এমন জঘন্য ও পিশাচ প্রকৃতির মানুষ পৃথিবীতে সচরাচর দেখা যায় না। মগরা তিন-তিনবার ঢাকা আক্রমণ করে ব্যাপক লুণ্ঠন কাজ চালিয়েছিল। ঢাকার যেখানে তাদের ছাউনি গেড়েছিল সেটার বর্তমান নাম এখন মগবাজার! পর্যটক সোবাস্তিয়ান মানরিকের বিবরণ অনুযায়ী ১৬২৯ থেকে ১৬৩৫ সালের মধ্যে তারা বাংলাদেশ থেকে আঠারো হাজার মানুষ ধরে নিয়ে গিয়ে দিয়াঙ্গা ও আরাকানে বিক্রি করে দিয়েছিল। মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে মগদের পতন ঘটে। যিনি ছিলেন বাদশাহ আলমগির কিংবা আওরঙ্গজেব (রাহিঃ)র মামা। তাঁর অন্যতম কীর্তি হচ্ছে এই মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদের কবল থেকে এদেশের মানুষদের রক্ষা করা। ১৬৬৪ সালে বাংলার শাসনভার হাতে নিয়েই তিনি প্রথম নজর দেন দস্যু দমনে। ১৬৬৫ সালে তিনি এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন এবং ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম জয়ের মাধ্যমে তিনি এদের সমূলে বিনাশ করেন। বাংলায় দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা মগের মুল্লুকের অবসান ঘটে। তাঁর আমলে আইনের শাসন ফিরে আসায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও স্বস্তি এবং নিরাপত্তা ফিরে এসেছিল। এ জন্য শায়েস্তা খাঁ কে এদেশের মানুষদের চিরস্মরণীয় করে রাখা উচিৎ!

  • #2
    জাযাকাল্লাহ। আসলে আমরা যে জনপদ এ আছি তাঁর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখার দরকার আছে। এটা দাওয়াত এবং জিহাদ এর ক্ষেত্রে অনেক উপকারি হবে ইংশাআল্লাহ। বর্তমানে ও আরাকানি মুসলিম কিংবা রোহিঙ্গা দের উপর এই মুশরিক মগ এবং তাদের দোসর বর্মী মুশরিক বৌদ্ধরা জঘন্য জুলুম-অত্যাচার চালাচ্ছে। যুগ যুগ থেকে নির্যাতিত আরাকানি মুসলিমদের কে আল্লাহ্* সাহায্য করুন এবং তাদের জন্য মুক্তির পথ করে দিন।
    "মদীনাবাসী ও পাশ্ববর্তী পল্লীবাসীদের উচিত নয় রসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রসূলুল্লাহর প্রাণ থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে করা। এটি এজন্য যে, আল্লাহর পথে যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা তাদের স্পর্শ করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয়-তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয়ে নেক আমল। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক নষ্ট করেন না।"(সূরাঃতাওবা,আয়াতঃ১২০)

    Comment

    Working...
    X