Announcement

Collapse
No announcement yet.

সতর্কতার মধ্যম পন্থা- শায়খ আবু মুহাম্মাদ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সতর্কতার মধ্যম পন্থা- শায়খ আবু মুহাম্মাদ

    সতর্কতার মধ্যম পন্থা- শায়খ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদেসী- (Collected)


    ডাউনলোড লিংকঃ http://anonym.to/?https://archive.or...Transcript.pdf
    http://anonym.to/?https://archive.or...ranscript.docx


    আল্লাহ (সুবঃ) আপনাদের রক্ষা করুন ও সাহায্য করুন নেক আমল সমূহ কবুল করুন। আল্লাহ যেন সমাজের খালেস মানুষদেরকে আপনাদের চারপাশে জড়ো করে দেন। আল্লাহ আপনাদের কাজে বরকত দান করুন।
    (এবং সম্মান আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) এবং বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না)


    ------------------------------------------------------------------------------------------
    সতর্কতার মধ্যম পন্থা শায়খ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদেসী

    বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

    আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈমানদারদেরকে আদেশ দিয়ে বলছেন-

    হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করো, অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে কিংবা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে অভিযানে বেরিয়ে পড়। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৭১)

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আরও বলেন-

    তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১০২)

    অতএব আল কুরআনের এ সব আয়াত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, সতর্কতামুলক উপায় অবলম্বন করা, সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া, সাবধান থাকা এবং সতর্কতামুলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োজনে বিশেষ কোন তথ্য অন্যের কাছ থেকে গোপন রাখা অবশ্যই শরিয়াহ সম্মত; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা ফরয বা আবশ্যক হয়ে দাড়ায় । আর একারণে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে কোন প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখার এমন কি তা সামরিক বিষয়াদি না হলেও। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সতর্কতা অবলম্বন কর এবং লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য প্রার্থনা করো, কেননা যে ব্যক্তিই কোন অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয় তাকেই ঈর্ষার পাত্র হতে হয়।

    রসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র শত্রুদের ব্যপারে সতর্কীকরণের ক্ষেত্রে যে সব শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন এক্ষেত্রে তাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি তামওয়ীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন যার অর্থ হল, মেকি, মিথ্যা ঘটনা সাজানো, জালিয়াতি; তিনি ব্যবহার করেছেন মুখাদা’য়াহ যার অর্থ হল বোকা বানানো, ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা করা ইত্যাদি। আল্লাহ্র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কতা বলতে নিছক স্পর্শকাতর তথ্য গোপন করাকেই বুঝাননি বরং এসব শব্দ তিনি প্রয়োগ করেছেন আগ বাড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে শত্রু সেনাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ, মতবিরোধ ও বিভক্তি তৈরী, ফাটল ধরানো, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করার নির্দেশ দান প্রসঙ্গে। এর প্রধান উদ্দেশ্য শত্রু সেনা ও তাদের গোয়েন্দাদেরকে বিভ্রান্ত করা।

    তাবুক যুদ্ধে দুই সাহাবীর অংশ্রগ্রহণ না করা সম্পর্কিত ঘটনা প্রসঙ্গে সহীহ আল বুখারীর বর্ণনায় কা’ব বিন মালেক রাঃ বলেন ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন তখন (কোন অঞ্চলে বা কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করবেন সে সম্পর্কে) অভিযান শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সব সময় ভুল তথ্য দিয়ে রাখতেন’।
    তিনি তার সাহাবীদের মিশন এবং তার সেনা অভিযানের সফলতার লক্ষে যে সকল বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন তার মধ্যে অন্যতম হল কিতমান বা গোপনীয়তা রক্ষা। যেমন অনেক সময় তিনি কোন দিকে সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন কিন্তু স্বয়ং সেই বাহিনীকেও বলতেন না যে তাদের গন্তব্যস্থান কোথায় ও লক্ষবস্তু কি, তিনি তাদেরকে একটি চিঠিতে তাদের গন্তব্য ও লক্ষবস্তুর কথা লিখে দিয়ে নির্দেশ দিতেন যে অমুক স্থানে না গিয়ে বা কোন নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যেন চিঠিটি না খোলা হয়।

    এমনই একটি সেনা অভিযান ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রাঃ এর নেতৃতে পরিচালিত সেই অভিযান যে অভিযানে আল হাদরামী নিহত হয়। এ ঘটনা আমাদেরকে স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। এবং শুধু সাধারণ জনগণ নয় বরং স্বয়ং মুজাহিদদের থেকেও অপারেশন বা যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তথ্য গোপন রাখার প্রমাণ রয়েছে।
    এর উদ্দেশ্য হল, মুজাহিদদের কেউ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, কিংবা কেউ যদি কাফেরদের হাতে বন্দি হয়ে যায় তাহলে সে যেন তাদের কাছে কোন তথ্য ফাস করে না দিতে পারে , এমনকি তাকে যদি কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তবুও ।

    এমন আর একটি ঘটনা হল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনা। যে ঘটনার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ হল এমন যে-

    ১) তিনি এমন সময় আবু বকর রাঃ এর কাছে এসেছিলেন যে সময়ে তিনি সাধারনতঃ কখনো আসতেন না।

    ২) তিনি মুখ ঢেকে আসেন।

    ৩) সাহাবীদেরকে তার নিজের হিজরতের পূর্বে হিজরত করার নির্দেশ প্রদান; অথচ আবু বকর রাঃ অনুযোগ করে বলেছিলেন ‘তারা আপনার অনুসারী! (কিভাবে তারা আপনাকে এই বিপদের মধ্যে রেখে চলে যাবে?)

    ৪) আবু বকর রাঃ এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাতে তাদের সাথে সেই গোপন স্থানে থাকলেও দিন শুরুর পূর্বেই তাদেরকে রেখে আবার মক্কায় চলে আসতেন, যাতে কুরায়শরা ভাবে যে তিনি রাতেও মক্কাতেই ছিলেন। এবং কাফিররা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রাঃ এর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করে সে তথ্য সংগ্রহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। আর রাতের আঁধার নেমে আসার সাথে সাথে তিনি চলে যেতেন সেই পাহাড়ের গুহায় যেখানে তারা লুকিয়ে থাকতেন এবং তাদেরকে সকল বিষয়ে অবহিত করতেন ।

    উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ এর বর্ণনায় সহীহ আল বুখারীতে ৩৯০৫ নং হাদিসে হিজরতের যে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণীত রয়েছে সেখানে আমাদের এখানে আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয় পাওয় যাবে । সে বর্ণনায় এও রয়েছে যে পথিমধ্যে সুরাকার সাথে দেখা হলে রসুলল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন যে, ‘আমাদের বিষয়টি অন্যদের থেকে গোপন রেখো’।

    সহীহ আল বুখারীতে ‘যুদ্ধ মানেই ধোঁকা’ শিরোনামে একটি স্বত্য্ত্র্ অধ্যায়ই রয়েছে; আর উল্লেখিত এ হাদিসটি সে অধ্যায়েই সংকলিত । হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী এ হাদিসে উল্লেখিত ধোঁকার ব্যাখ্যায় বলেন ‘ধোঁকা অর্থ হল কোন এক জিনিস প্রকাশ করে তার অন্তরালে অন্য জিনিস গোপন রাখা। এ হাদিসে যুদ্ধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রতারণামূলক কাজ করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার শত্রুদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখে না এবং যে এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয় সে তার চারপাশের ঘটনা প্রবাহ তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়া থেকে মোটেই নিরাপদ নয়।

    ইমাম বুখারী রহঃ ‘যুদ্ধে মিথ্যা বলা’ নামে আরও একটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেছেন, আর এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ইহুদী তাগুত কা’ব বিন আশরাফকে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কিভাবে হত্যা করেছিলেন। তারা তাকে মিথ্যা কথা বলে এমনভাবে বিভ্রান্ত করেছিলেন যে সে ভাবছিল যে সাহাবায়ে কেরামগন সত্যিই আল্লাহ্র রসুলের উপর চরমভাবে বিরক্ত, আল্লাহ্র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাদের উপর আরপিত দান সাদাকা করতে করতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে তার সাথে তারা মিথ্যা মিথ্যি কথা বলতে থাকে যতক্ষণ না তারা তাকে সম্পূর্ণরূপে বাগে আনতে পেরেছিলেন এবং অতঃপর আল্লাহ্র এ দুশমনকে তারা হত্যা করে ফেলেন ।
    হাফেজ ইবনে হাজার এই হাদিসের ব্যখ্যায় তার ফতহুল বারী গ্রন্থে তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলার বৈধতা প্রসঙ্গে অন্য আরও একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন যে হাদিসটি ইমাম তিরমিযী রহঃ তার সুনানে উম্মে কুলসুম রাঃ এর বর্ণনায় সংকলণ করেছেন। এই তিনটি ক্ষেত্রের একটি হল যুদ্ধ। হাফিজ ইবনে হাজার রহঃ হাজ্জাজ ইবনে ইলাতের ঘটনাটিও সেখানে উল্লেখ করেছেন যেখানে দেখা যায় হাজ্জাজ ইবনে ইলাত তার সম্পদ মক্কার লোকদের কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মিথ্যা বলার অনুমতি প্রার্থনা করেন।

    ইমাম বুখারী রহঃ ৩৮৬১ নং হাদিসে হযরত আবু যার রাঃ এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলেও আমরা সতর্কতা অবলম্বন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। আর এ ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ যে কোন কাজে নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন, সতর্ক থাকতেন এবং সব সময় যত্নের সাথে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতেন; নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণকে কখনো তারা অবহেলা করতেন না। আবু যার রাঃ এর এ ঘটনায় আমরা দেখতে পাই আলী রাঃ সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু না বলে কিভাবে টানা তিন দিন পর্যন্ত তাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি অপেক্ষা করেছেন তার আগমনের উদ্দেশ্য তার থেকে না জানা পর্যন্ত; এভাবে তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছেন যে তিনি সত্যিই ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্র রসুলের সাথে সাক্ষাত করতেই এসেছেন। এরপরি তিনি সম্মত হন তাকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যেতে এবং তাকে বলেন দূর থেকে তাকে অনুসরণ করতে যাতে কুরায়শরা কিছু টের না পায়। আমরা দেখতে পাই কত সতর্কভাবে আলী রাঃ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন! তিনি আবু যার রাঃ কে বলেন ‘আমি যদি আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোন কিছু আঁচ করি তাহলে আমি প্রশ্রাব করার ভান করে রাস্তার পাশে চলে যাবো; এর পর যখন আমি আবার চলা আরম্ভ করবো আপনি আমাকে অনুসরণ করে চলতে থাকবেন যতক্ষণ না আপনিও সেই বাড়িতে প্রবেশ করেন যে বাড়িতে আমি প্রবেশ করি’।

    কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তা’য়ালা আসহাবে কাহাফের ঘটনায় আমাদেরকে দেখিয়েছেন কিভাবে সেই যুবকরা তাদের জাতির লোকদের থেকে সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন। তাদের মধ্য থেকে যাকে তারা খাবার ক্রয় করতে শহরে পাঠিয়েছিলেন তাকে তারা বলেছিলেন-


    তোমরা তোমাদের একজনকে তোমাদের পয়সা দিয়ে বাজারে পাঠাও, সে গিয়ে দেখুক কোন খাবার উত্তম,অতঃপর তা থেকে তোমাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসুক; সে যেন অবশ্যই বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে এবং তোমাদের ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলে। (সুরা আল কাহাফ, আয়াত ১৯-২০)

    এখানে উল্লেখিত এবং এমন অন্য আরও অনেক ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাবধানতা অবলম্বন, সতর্কতা মুলক পদক্ষেপ গ্রহণ, গোপনীয়তা বজায় রাখা, আল্লাহর শত্রুদের কাছে বানোয়াট ঘটনা সাজানো, তাদেরকে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করা, তাদের দুষ্কৃতি থেকে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য মিথ্যা কথা বলা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহ সম্মত হালাল ও বৈধ এবং একারণে কোন মুসলমানকে কিছুতেই দোষারোপ কিংবা ভর্তসনা করা যাবে না। আর একথা অনস্বীকার্য সত্য যে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হালাল করে দেয়া এ সুযোগকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করা, সাবধানতা অবলম্বনের এসব পদক্ষেপকে অবহেলা আল্লাহ্র শত্রুদেরকে দ্বীনের দায়ী ও মুজাহিদদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেবে এবং কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে নস্যাত করে দেবে, তাদের জান মাল কোরবানি করে পরিচালিত জিহাদকে বিফল করে দেবে।

    শর’য়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির বৈধতা প্রমানিত হওয়ার পর এখন আমরা এর বাস্তব প্রয়োগের ব্যপারে কিছু আলোচনা করবো।
    সাবধানতা অবলম্বনের ব্যপারে লোকেরা উভয় দিকেই প্রান্তিকতার শিকার; একদল হয়তো সতর্কতার ব্যপারে এমন মারাত্নক উদাসীন যে বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেয় না; অন্য দিকে একদল সতর্কতার নামে এমন বাড়াবাড়ি আরম্ভ করেছে যে সব কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে একেবারে স্থবির হয়ে বসে আছে, ভীতি তাদের অন্তরে এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে তারা তাদের নিজ ছায়া দেখেও ভয়ে কেপে ওঠে, তারা মনে করে আশপাশের সব কিছু বুঝি শুধু তারই বিরুদ্ধে কাজ করছে। কাজ আরম্ভ করার প্রথম দিকে নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিকে অবহেলা হেতু তাদের উপর আপতিত বিপদ মুসীবতের কারণে তারা দাওয়াহ ও জিহাদের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরের কোণে ঘাপটি মেরে অলস হয়ে বসে থাকে। এবং মানসিক দিক থেকে এমনভাবে ভেঙ্গে পড়ে যে তারা মনে করে তাদের সকল গোপন তথ্য বুঝি আল্লাহ্র শত্রুদের জানা। আল্লাহ্র শত্রুদের আড়ি পাতা, দলের মধ্যে গোপন অনুপ্রবেশ, গোপন পর্যবেক্ষণ, তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদির ভয়ে সে এমনভাবে কুঁচকে যায় যে সে ফোন, কম্পিউটার বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার একেবারেই ছেড়ে দেয়। তার অবস্থা এমন হয়ে দাড়ায় যে সে যদি যোগাযোগের জন্য বার্তাবাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার করতে পারতো তাহলে অন্য কিছুই ব্যবহার করতো না।

    অথচ এসব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা সত্ত্বেও নিজেকে এর ক্ষতিকারক দিক থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এমন কোন মহা পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, সামান্য একটু সচেতনতাই এত্থেকে আপনাকে নিরাপদ রাখতে পারতো। এজন্য আল্লাহ্র শত্রুদের বিভ্রান্ত করার কিছু পদ্ধতি জানা, নিপুন কভার স্টোরি তৈরি করতে শেখা, তথ্য গোপন রাখার প্রযুক্তিগত আধুনিক কিছু টেকনিক শিখে নেয়া প্রতিটি মুজাহিদ ভাইয়েরই একান্ত কর্তব্য। এর ফলে দেখা যাবে আল্লাহ্র ইচ্ছায় যাদুকর তার নিজ যাদুতেই আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

    ‘সব কিছুই তাদের পর্যবেক্ষণের আওতাধীন’ এমন কথা বলে কিংবা তাদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আধুনিক এসব উপায় উপকরণসমুহকে দাওয়াহ ও জিহাদের কাজে ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া, যৌক্তিক কোন বৈধ কারণ ছাড়া আধুনিক এসব যোগাযোগ মাধ্যমসমুহকে উপেক্ষা করা সেচ্ছায় পরাজয় বরণ করা ও আত্নপ্রবঞ্চনা বৈ কিছুই নয়। এর অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহ্র শত্রুদের বোগাস সব প্রযুক্তির সামনে অকারণ ভেংগে পড়া এবং আল্লাহ্র শত্রুদের ‘ক্ষমতাকে’ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে অতি মুল্যায়ন করা।
    জেলের কষ্টকর জীবন থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া কয়েকজন যুবকের সাথে আমি দেখা করেছিলাম যারা জেলে থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় একে অপরের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছে। এদের এক জনের সাথে কথা বলার জন্য যখন আমি বসলাম তখন সে উঠে গিয়ে রেডিওর একটি চ্যানেল ছেড়ে দিল যাতে শুধু উচ্চস্বরে বিরক্তিকর শব্দ হচ্ছিল, আমি তাকে বললাম, তুমি রেডিও ছাড়ছো কেন, ওটা বন্ধ করে দাও, শব্দে তো কিছু শোনা যাচ্ছে না! সে বলল, না এটা বন্ধ করা যাবে না, আমাদের কথোপকথনকে অবোধগম্য করার জন্য এর প্রয়োজন আছে, যদি কেউ আমাদের কথাবার্তায় আড়ি পাতে? আমি তাকে বললাম, এটা তোমার নিজের ঘর, আর আমাদের কথাবার্তা একান্তই সাধারণ সামাজিক কথাবার্তা, আমরা না দাওয়াহর বিষয়ে কথা বলছি না জিহাদের, না নিরাপত্তা বিষয়ক কোন ব্যপারে; আমার তো মনে হয় তোমার এই রেডিওর অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বরং অন্যদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক করা ছাড়া অন্য কোন উপকারে আসবে না।

    এদের অনেককে দেখা যায় এরা কারো সাথে ফোনে কথা বলার সময় কোন প্রয়োজন ছাড়াই এমন সব বিকৃত ও সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে যে শুনে মনে হয় যে সে অন্য কোন ভাষায় কথা বলছে, অনেক সময় দেখবেন আপনি বুঝতেই পারবেন না এরা কি বলছে; অথচ তাদের আলোচনার বিষয় বস্তু হয়তো ছিল এমন একান্তই সাধারণ যেক্ষেত্রে এরকম সন্দেহজনক আচরণের কোনই প্রয়োজন ছিল না। আল্লাহ্র শত্রুরা যদি সত্যিই তাদের এসব সন্দেহজনক সাংকেতিক কথাবার্তা আড়ি পেতে শুনে থাকে তাহলে তারাও হয়তো বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিবে, হয়তো ভাববে যে এই সাংকেতিক কথাবার্তার পেছনে নিশ্চই নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার আক্রমনের চেয়েও ভয়াবহ কোন আক্রমনের পরিকল্পনা লুকিয়ে আছে।

    আমাদের বুঝা উচিত যে সন্দেহজনক ভঙ্গিতে কথা না বলে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলাই উত্তম; অকারণ সন্দেহ সৃষ্টি করা মোটেই ঠিক নয়। এতদসত্ত্বেও কিছু লোক আছে যারা বিনা কারণেই এমন সন্দেহজনক আচরণ করতে পছন্দ করে। দেখা যায় এদের কেউ হয়তো আপনাকে ফোন করে বললো যে ‘আপনার কাছে আমার একটা আমানত আছে’ কিংবা বললো, ‘আপনি আজ অবশ্যই আসবেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ আছে’। হয়তো দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ আমানতটি হল এক প্যাকেট চকলেট বা কোন কাপড় চোপড়, বা এক জোড়া সানগ্লাস যেটা তার থেকে আপনি হয়তো ধার নিয়েছিলেন; আর মহা গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজটি হল এক সাথে আনন্দ করে লাঞ্চ বা ডিনার করা। এরা অকারণ অস্পষ্টতা ও নাটকীয়তা পছন্দ করে। এই বোকারা অনুধাবন করেনা যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই স্থুল নাটকীয়তা কত ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে যাদের সাথে এভাবে কথা বলছে তারা যদি এমন ব্যক্তি হন যাদেরকে সরকারী গোয়েন্দারা পর্যবেক্ষণ করছে, যাদেরকে আল্লাহ্র শত্রুরা মনিটর করছে।

    এরা যদি কখনো কারাবন্দি হয় তাহলে শত কসম করে বললেও আল্লাহ্র শত্রুরা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না যে সেই আমানতটি ছিল একান্তই তুচ্ছ কোন জিনিস, আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ছিল নিছক লাঞ্চ বা ডিনার। তারা একথা বললে কিছুতেই তাদেরকে ছাড়বে না, তারা তাদের শরীর ক্ষত বিক্ষত করবে, তাদের নখ উপড়ে ফেলবে যতক্ষন না তারা ‘স্বীকার’ করবে যে তাদের অস্ত্রসস্ত্র ও গোলা বারুদের মজুদ কোথায় লুকানো আছে; যতক্ষণ না তারা ‘গোপন সামরিক মিটিং’ কিংবা ‘সংগঠনের’ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার ব্যপারে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয় যা সেই সাংকেতিক কথার আড়ালে লুকিয়ে আছে।

    কিছু লোক আছে যারা সামান্য নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়ার আগেই আল্লাহ্র শত্রুদের কাছে সব কথা গড়গড় করে বলে দেয়, সবার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে দেয় এবং অজুহাত দেয় যে তারা শুনেছে নতুন এক ধরণের প্রযুক্তি এসেছে যার সাহায্যে মানুষের কণ্ঠস্বর সনাক্ত করা যায়, মিথ্যা শনাক্তকারী মেশীনের সাহায্যে কেউ মিথ্যা বললে তাও ধরে ফেলা যায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দুনিয়ার সকল ফোনের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়... ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা শুনে মনে হয় যেন তারা ব্যপক গন বিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়ে কথাবার্তা বলছিল। এসব হাইপোথেটিক চিন্তা করে গোয়েন্দাদের কাছে তারা মিথ্যা কথা বলাকে সমীচীন মনে করে না।

    আমি বুঝি না এর চেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি আর কি হতে পারে যে আল্লাহ্র শত্রুরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে এবং তারা এও বুঝতে পেরেছে যে সে তাদের কাছে মিথ্যা বলছে। নাকি সে তাদের থেকে নিরীহ সাধারণ ও অমায়িক ভদ্রলোক হওয়ার সার্টিফিকেট চায়! নাকি সে মিথ্যা বলতে লজ্জাবোধ করছে সেই সব লোকদের কাছে যারা সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিশ্বাসঘাতক ও পথভ্রষ্টকারী! অথচ তার এই মিথ্যা হয়তো আল্লাহ্র দ্বীনের দাওয়াহ ও জিহাদকে আল্লাহ্র শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারতো, তাকে ও তার দ্বীনী ভাইদেরকে তাদের যুলুম অত্যাচার থেকে বাঁচাতে পারতো। পক্ষান্তরে আল্লাহ্র শত্রুদের এই জঘন্য মিথ্যাচার তো দ্বীনের দাওয়াহকে বন্ধ ও জিহাদকে উৎখাত করার জন্য; তার দ্বীনী ভাইদের উপর দমন পীড়ন ও যুলুম নির্যাতন চালানোর জন্য।

    এই হল আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও আল্লাহ্র শত্রুদের ক্ষমতা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা পোষণ করা, তাদেরকে খুব ভয় করা এবং তাদেরকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বোকার মতো অপ্রয়োজন অতি বাড়াবাড়ি করার পরিণাম।

    এতো গেল আমাদের এক শ্রেনীর ভাইদের অবস্থা, অন্য দিকে রয়েছে আমাদের সে সব ভাইয়েরা যারা সাবধানতা অবলম্বন ও নিরাপত্তা ইস্যুকে মোটেই গুরুত্ব দেয় না। দেখা যায় যে তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও স্থানের নাম, সংগঠনের সদস্যদের নাম ঠিকানা, তাদের পরিকল্পনা, তাদের অর্থের উৎস, খরচের খাত ইত্যাদি সব কোন রকম সিকিউরিটি কোড ছাড়াই প্রকাশ্যে ও সাধারণ বোধ্য ভাষায় বিস্তারিত লিখে রাখে; অথচ আমরা তথ্য প্রযুক্তির এমন উন্নতির যুগে বাস করছি যেখানে তথ্য গোপন রাখার অনেক রকম নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতি আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে।
    এসব ভাইদেরকে দেখা যায় সাংগঠনিক, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বা গুরুত্বপূর্ণ কোন বার্তা তার কাছে আসার পর সে সেটিকে দিনের পর দিন সপ্তাহের পর সপ্তাহ পকেটে নিয়ে ঘুরছে, কিংবা তার ঘরে হয়তো মাসের পর মাস বসরের পর বসর ধরে পড়ে আছে অথচ সে তা নষ্ট রে ফেলছে না। যেন সে অপেক্ষা করছে কখন আল্লাহ্র শত্রুরা আকস্মিক তার বাড়িতে হানা দেবে আর দাবি করবে যে ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা’ তারা নস্যাত করে দিয়েছে; আর সেও সেই অরক্ষিত অবহেলায় ফেলে রাখা তথ্যটির কারণে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তা অস্বীকার করার সুযোগ পাবে না, আর এটিই তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ সন্ত্রাসী কাজে সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

    এর চেয়েও যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে তা হল তার এই অসতর্কতার কারণে অনেক ভাইয়েরা গ্রেফতারের শিকার হতে পারে, দাওয়াহ ও জিহাদের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এদেরকে দেখা যায় কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া নির্বিঘ্নে সব ধরণের যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে চলছে, আর কেউ যদি তাকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেয়, কোন মিটিঙের বিষয়বস্তু গোপন রাখতে বলে, বার্তাটি পড়ার পর যদি চিরকুটটি ছিড়ে ফেলতে বলে, ভাইদের আসল নাম ঠিকানা না রাখতে বলে এবং তাকে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে বলে তখন সে বিরক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, কল্যাণকামী ভাইদেরকে গালমন্দ করে; এমনকি এগুলোকে লজ্জস্কর, দুঃখজনক ও কাপুরুষতা বলে আখ্যায়িত করে।

    আমি জানি না তার মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হতো যদি সে আফগানিস্তানের সেই দৃশ্য দেখত যখন সাপের গর্তে ভরা এবং দুজন মানুষের জন্য জায়গা হয় না এমন সংকীর্ণ গুহার মধ্য তার অনেক মুজাহিদ ভাইদেরকে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে।

    সত্যিই এমন ব্যক্তিকে ভর্তসনা করাটা কোন অন্যায় নয় যে দুর্দশায় পতিত হওয়ার একমাত্র কারণ হল আল্লাহ্র রসুলের জীবনী সম্পর্কে তার অসচেতনতা, আরাম আয়েশের মধ্যে ডুবে যাওয়া, আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য একজন সত্যিকার মুজাহিদ হিসেবে সৈনিক সুলভ জীবন যাপন থেকে দূরে থাকা এবং দুনিয়াদার সাধারণ মানুষদের মতো তাগুতদের প্রচারিত তথাকথিত নিরাপদ জীবনের কুহেলিকায় ডুবে থাকা।
    কঠোর পরিশ্রম, ত্যগ তিতিক্ষা ও সাধনা করে সফলতার দ্বার প্রান্তে আনা অনেক পরিকল্পনা কেবল এই অসতর্কতা, অসাবধানতা ও বেখেয়ালীপনার কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং মুসলিমদেরকে হতাশার মধ্যে ফেলেছে; একই সাথে আল্লাহ্র শত্রুদের জন্য এ ঘটনা বয়ে এনেছে এক মহা আনন্দ বার্তা, তারা এটাকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে’ তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরাট সাফল্য হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরছে। অথচ বাস্তবে বিষয়টি হয়তো মোটেই তা নয়, এই ব্যর্থতা আল্লাহ্র শত্রুদের গোয়েন্দাদের কোন সফলতা ছিল না, বরং এটা ছিল ভাইদের অসতর্কতা, অসাবধানতা ও নিরাপত্তা ইস্যুকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।

    আমার সত্যি কষ্ট হয় যখন দেখি অনেক যুবকেরা এ বিষয়ে উপদেশ গায়ে মাখে না, অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না এবং একই ভুল বারবার করতে থাকে; আর একারণে একই পরিণতির শিকার হয়। এদের কেউ যখন জিহাদে অংশগ্রহণ করার নিয়ত করে এবং এ উদ্দেশ্যে যদি কিছু অস্ত্রশস্ত্র এদের হস্তগত হয় তাহলে সে অন্যদের কাছে কেবল অস্ত্রের কথা বলেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার লক্ষ উদ্দেশ্য ও জিহাদের পরিকল্পনা ইত্যাদি বলতে গর্ব বোধ করে। তারপর যখন আকস্মিকভাবে তাকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কিংবা তার বাড়ি রেইড দেয়া হয় তখন সে ভাবে কিভাবে তার পরিকল্পনা তারা জেনে গেলো!

    এটা সত্যিই দুঃখজনক যে আমরা দ্বীনী বিষয়ে যে নিয়ম শৃঙ্খলা পালন করতে পারি না, দেখা যায় দুনিয়াবী বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন সে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে। সশস্ত্র সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, গোপন সংগঠনের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা অনেক সচেতন। আপনি দেখবেন কোন অপারেশন চালানোর ক্ষেত্রে তারাও চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে, তারা কাউকে কিছু জানায় না, এমনকি স্বয়ং যারা অপারেশন চালাবে তাদেরকেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশী কিছুই বুঝতে দেয়া হয় না। অপারেশনে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কেও কাউকে কিছু টের পেতে দেয় না, এমন কি কোথায় অপারেশন চালাবে তাও জানানো হয় কেবল অপারেশনের একান্ত পূর্ব মুহূর্তে। যারা অপারেশন চালায় তারা পর্যন্ত প্রয়োজনের চেয়ে বেশী কিছুই জানে না, অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য ঠিক যতটুকু না জানলেই নয় ঠিক ততটুকুই কেবল জানে। তারা জানে না অর্থায়ন কে করে, অস্ত্র কোত্থেকে আসে, অস্ত্রের মজুদ কোথায়, কে এটা আমদানি করেছে, কে বহন করে এনে দিয়েছে, অন্য সদস্যরা অন্য কোথাও আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না। এ ধরণের প্রতিটি স্তর হল একেকটা নিরাপত্তা চাদর; এসব বিশেষ তথ্যের ব্যপারে সংগঠনের কোন সদস্যের উচিত নয় অযাচিত প্রশ্ন করা কিংবা অনধিকার চর্চা করা। যে ব্যক্তি তার নিজ সামরিক কার্যক্রমের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে সে কিছুতেই এ ধরণের স্পর্শকাতর তথ্য যাকে না জানালেই নয় তাকে ছাড়া অন্য কাউকে দিতে পারে না। একারণে দেখা যায় এই ধরণের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে যেসব অপারেশন পরিচালনা করা হয় তার ব্যর্থতার আনুপাতিক হার খুবই কম। অন্য দিকে দেখা যায় সশস্ত্র সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলার কঠোরতা সম্পর্কে কোন রকম ধারণা না নিয়ে দরবেশ গোছের বোকা ও নির্বোধ লোকেরা এসব সংগঠনে যোগ দিয়ে এমন ভয়াবহ রকম আত্নঘাতি ভুল করে বসে যে তার কারণে গোটা সংগঠনের কার্যক্রম ও এর সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। অথচ নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা, সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ, সাবধানতা অবলম্বন ও গোপনীয়তা বজায় রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গোটা মানবজাতির সামনে মুসলিমদের হওয়া উচিত ছিল অনুসরনীয় আদর্শ। কেননা তাদের মহান আদর্শ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের জীবনে এ বিষয়ের উপর শিক্ষণীয় এতো উদাহরণ রয়েছে যা গুনে শেষ করা যাবে না; যার কয়েকটি আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। আসলে আল্লাহ্র পথে জিহাদের জন্য প্রয়োজন চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র ও বাজ পাখির মতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের; সুফী দরবেশ আর তোতা পাখির কোন প্রয়োজন এখানে নেই।

    অসাবধানতার আর একটি উদাহরণ হল জাহেলী সময়ের মতো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। অনেক যুবককে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে হেদায়াত দান করার পরও দেখা যায় জাহেলী সময়ে সে যেমন অস্ত্রের বরাই দেখিয়ে বেড়াতো তেমনি এখনো সে একই রকম আচরণ করে যাচ্ছে। আগেও যেমন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতো এখনো তেমনি করে চলছে। সে জানে না তার পূর্বেকার জীবনের সাথে এই জীবনের কতো বিস্তর ফারাক রয়েছে, সে জানে না আল্লাহ্র শত্রুরা তাকে আগে যে দৃষ্টিতে দেখত এখন তার মুখে দাড়ি গজানোর পর কিন্তু আর সেই একই দৃষ্টিতে দেখবে না। সে নতুন যে সব লোকের সাথে এখন চলা ফেরা করে, যাদের সাথে যোগাযোগ রাখে তাদের সংস্পর্শে আসার পর আল্লাহ্র শত্রুদের দৃষ্টিভঙ্গি তার ব্যপারে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাবে। অথচ এদেরকে যদি সাবধানতা অবলম্বনের উপদেশ দেয়া হয় এরা সাবধানতাকে কাপুরুষতা ও দুর্বলতা বলে উড়িয়ে দেয়। এরপর এই অসাবধানতার কারণে যখন সে জেলে যায়, রিমান্ডের মুখোমুখি হয় তখন আর বিষয়টা সাধারণ থাকে না; এ ধরণের লোকেরা যখন একবার বিপদে পড়ে তখন মানসিক দিক থেকে একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। এরপর এই ‘দুঃসাহসী বীর বাহাদুররা’ তাদের নিজ ছায়াকেও ভয় পেতে শুরু করে, জিজ্ঞাসাবাদের আধুনিক প্রযুক্তির সামনে একাবারে ভেঙ্গে পড়ে, আল্লাহ্র শত্রুদের চতুর গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের ক্ষমতার সামনে সে একেবারে কুঁচকে যায়। সে তার নিজের অসাবধানতা ও বোকামির কথা ঢাকতে গিয়ে আল্লাহ্র শত্রুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তাদের গোয়েন্দা সংস্থার চতুরতা ও ক্ষমতার গুণকীর্তন আরম্ভ করে দেয়।

    চূড়ান্ত কথা হল সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনকে যেমন মোটেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই তেমনি অতি সতর্কতার নামে আল্লাহ্র পথে জিহাদ ছেড়ে দিয়ে স্থবির হয়ে বসে থাকারও কোন সুযোগ নেই। বরং সকল ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত মধ্যম পন্থা অবলম্বনই বাঞ্ছনীয়। এ পথের সঙ্গীদেরকে জিহাদের রক্ত পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতেই হবে; অতএব তাদের শত্রুদের পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে শিথিলতা ও বাড়াবাড়ির উভয় প্রান্তিকতাকে পরিহার করে যথাযথ নিরাপত্তামুলক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের কোন বিকল্প নেই।

    আল্লাহ্র কাছে দোয়া করি যেন তিনি তার বন্ধুদের বিজয় দান করেন এবং তা শত্রুদের লাঞ্ছিত করেন।


    আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব সময়ই বিজয়ী, যদিও অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।
    (সুরা ইউসুফ, আয়াত ২১)
    Last edited by Raghib Ansar; 08-28-2015, 12:52 AM. Reason: Title

  • #2
    হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করো, অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে কিংবা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে অভিযানে বেরিয়ে পড়। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৭১)

    অথচ এসব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা সত্ত্বেও নিজেকে এর ক্ষতিকারক দিক থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এমন কোন মহা পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, সামান্য একটু সচেতনতাই এত্থেকে আপনাকে নিরাপদ রাখতে পারতো। এজন্য আল্লাহ্র শত্রুদের বিভ্রান্ত করার কিছু পদ্ধতি জানা, নিপুন কভার স্টোরি তৈরি করতে শেখা, তথ্য গোপন রাখার প্রযুক্তিগত আধুনিক কিছু টেকনিক শিখে নেয়া প্রতিটি মুজাহিদ ভাইয়েরই একান্ত কর্তব্য। এর ফলে দেখা যাবে আল্লাহ্র ইচ্ছায় যাদুকর তার নিজ যাদুতেই আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

    ‘সব কিছুই তাদের পর্যবেক্ষণের আওতাধীন’ এমন কথা বলে কিংবা তাদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আধুনিক এসব উপায় উপকরণসমুহকে দাওয়াহ ও জিহাদের কাজে ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া, যৌক্তিক কোন বৈধ কারণ ছাড়া আধুনিক এসব যোগাযোগ মাধ্যমসমুহকে উপেক্ষা করা সেচ্ছায় পরাজয় বরণ করা ও আত্নপ্রবঞ্চনা বৈ কিছুই নয়। এর অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহ্র শত্রুদের বোগাস সব প্রযুক্তির সামনে অকারণ ভেংগে পড়া এবং আল্লাহ্র শত্রুদের ‘ক্ষমতাকে’ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে অতি মুল্যায়ন করা।

    আমার সত্যি কষ্ট হয় যখন দেখি অনেক যুবকেরা এ বিষয়ে উপদেশ গায়ে মাখে না, অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না এবং একই ভুল বারবার করতে থাকে; আর একারণে একই পরিণতির শিকার হয়। এদের কেউ যখন জিহাদে অংশগ্রহণ করার নিয়ত করে এবং এ উদ্দেশ্যে যদি কিছু অস্ত্রশস্ত্র এদের হস্তগত হয় তাহলে সে অন্যদের কাছে কেবল অস্ত্রের কথা বলেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার লক্ষ উদ্দেশ্য ও জিহাদের পরিকল্পনা ইত্যাদি বলতে গর্ব বোধ করে। তারপর যখন আকস্মিকভাবে তাকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কিংবা তার বাড়ি রেইড দেয়া হয় তখন সে ভাবে কিভাবে তার পরিকল্পনা তারা জেনে গেলো!

    আসলে আল্লাহ্র পথে জিহাদের জন্য প্রয়োজন চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র ও বাজ পাখির মতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের; সুফী দরবেশ আর তোতা পাখির কোন প্রয়োজন এখানে নেই।

    সে তার নিজের অসাবধানতা ও বোকামির কথা ঢাকতে গিয়ে আল্লাহ্র শত্রুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তাদের গোয়েন্দা সংস্থার চতুরতা ও ক্ষমতার গুণকীর্তন আরম্ভ করে দেয়।

    আল্লাহ্র কাছে দোয়া করি যেন তিনি তার বন্ধুদের বিজয় দান করেন এবং তা শত্রুদের লাঞ্ছিত করেন।


    আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব সময়ই বিজয়ী, যদিও অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।
    (সুরা ইউসুফ, আয়াত ২১)
    কাফেলা এগিয়ে চলছে আর কুকুরেরা ঘেঊ ঘেঊ করে চলছে...

    Comment


    • #3
      সুবহানআল্লাহ্*! অতি চমৎকার!

      আল্লাহু আকবার!

      আল্লাহ্* তায়ালা সবাইকে হেফাযত করুন, সকল মুজাহিদদের হেফাযত করুন, সকল খাস নিয়ত ও উদ্দেশ্য সমূহ কবুল করুন, আমীন!

      Comment

      Working...
      X