Announcement

Collapse
No announcement yet.

শবে বরাত ...

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শবে বরাত ...

    আল্লাহ সুবঃ মুসলিম জাতীর জন্য বিভিন্ন ইবাদত নির্ধারণ করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে । কিন্তু মানুষ আল্লাহ সুবঃ দেয়া নির্ধারিত ইবাদত বাদ দিয়ে মনগড়া নতুন নতুন বিদআত তৈরি করেছে । এর মধ্য থেকে একটা হল শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্র । বাংলাদেশসহ পাক ভারত উপমহাদেশে এ রাতটি “ শবে বরাত ” হিসাবে পরিচিত । ‘শবে বরাত’ শব্দ দুটি ফার্সি । ‘শব’ মানে রাত আর ‘বরাত’ মনে ভাগ্য । একত্রে শব্দ দুটির অর্থ হচ্ছে ‘ভাগ্যরজনী’ । অনেকে এ রাতে অনেক কিছু করে যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই । আর একশ্রেনির আলেম আছে যারা সবার কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য এবং হাদিয়া-তোহফা পাওয়ার জন্য কোরআনের আয়াত কে বিকৃত করে এ রাতের ফযিলত ও মর্যাদা বর্ণনা করে থাকে যা ইহুদীদের অভ্যাস ছিল । তাদের ধারণা অনুযায়ী এ রাতে মানুষের আগামী এক বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয় , তারা তাদের ধারণা ও বিশ্বাসের পক্ষে কুরআনের সূরা দুখানের নিচের আয়াতগুলোকে প্রমান হিসাবে পেশ করে থাকে ।
    আল্লাহ সুবঃ এরশাদ করেন
    ‘হা-মীম । সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ । নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে ; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী । সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’ । ( সূরা দুখান আয়াত ১-৪ )
    যারা বিশ্বাস করে শবে বরাতের মর্যাদা ও এ রাতে সকল বিষয়ে আল্লাহ সুবঃ চূড়ান্ত ফায়সালা হয় তারা বলে যে , আয়াতে উল্লেখিত ‘লাইলাতুন মুবারাকাতুন’ বরকতময় রাত হচ্ছে শবে বরাত । আর এ রাতেই সকল বিষয়ে ফায়সালা হয় ।

    আমরা বিষয়টা চিন্তা করলেই বুঝা যাবে যে , বরকতময় রাত কোনটি ?
    সূরা দুখানের তিন নং আয়াতে আল্লাহ সুবঃ বিলেছেন ‘ আমি এটি (কোরআন ) নাযিল করেছি বরকতময় রাতে’ । এর আগে দুই নং আয়াতে বলেছেন ‘কিতাবুম মুবীন’ মানে সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ । যেহেতু কোরআন কে আল্লাহ সুবঃ সুস্পষ্ট কিতাব বলেছেন সেজন্য সুস্পষ্ট কিতাব থেকে জেনে নিব বরকতময় রাত কোনটি । সুস্পষ্ট কিতাব বলে দিয়েছেন কোরআন নাযিল হয়েছে রামাদান মাসে , শাবান মাসে নয় । আর বরকতময় রাত সেটিই যে রাতে কোরআন নাযিল হয়েছে ।

    সুস্পষ্ট কিতাব বলে দিয়েছেন আমি রমাদান মাসে নাযিল হয়েছি ।
    ‘ রমযান মাস যাতে কোরআন নাযিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা ১৮৫ আয়াত ) এবার আমরা বুঝলাম রমযান মাসে কোরআন নাযিল হয়েছ , এবার সুস্পষ্ট কিতাবকে জিজ্ঞাসা করব রমযান মাসে দিনে না রাতে নাযিল হয়েছ ? রাতে হলে কোন রাতে ? সুস্পষ্ট কিতাব উত্তর দেয় ।
    ‘নিশ্চয় আমি ইহা (কোরআন ) কদরের রাতে নাযিল করেছি’ ( সূরা কদর ১ আয়াত ) এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে রমযান মাসের লাইলাতুল কদরে বা শবে কদরে শবে বরাতে নয় । আর সূরা দুখানের তিন নং আয়াতে কোরআন নাযিলের রাতকেই লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রাত বাল হয়েছে । ইরশাদ হয়েছে
    ‘নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে’ ( সূরা দুখান ৩ আয়াত ) কুরআন যে মহান আল্লাহর কিতাব , তিনি নিজে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন কোরআন রমযান মাসে নাযিল হয়েছে । রমযানের কোন রাতে নাযিল হয়েছে তাও সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে , তিনি কদরের রাতে নাযিল করেছেন এত সুস্পষ্টভাবে বলার পরও ‘বরকতময় রাত’ বলে কোন রাত কে বুঝানো হয়েছে তা অস্পষ্ট থাকবে কিভবে । বরকতময় রাত বলে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর কেই বুঝানো হয়েছে , শবে বরাত কে নয় ।

    বুঝাগেল যে , সূরা দুখানের তিন নং আয়াতে মরকতময় রাত বলে লাইলাতুল কদর কে বুঝানো হয়েছে এবং চার নং আয়াতে বলা হয়েছে যে ‘প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’ তা লাইলাতুল কদরেই করা হয় , শবে বরাতে নয় । আল্লাহ সুবঃ সূরা কদরের চার নং আয়াতে বলেছেন ,
    ‘সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন’ ।
    তাহলে ভাগ্য নির্ধারণ করাও হয় লাইলাতুল কদরে শবে বরাতে নয় ।

    তাফসীরের কিতাবে এমনিই আছে । তাফসীরের কিতাবে ‘মরকতময় রাত’ কে শবে কদরের কথাই বলা হয়েছে , শবে বরাতের কথা বলা হয়নি । যেমন , তাফসীরে ইবনে কাসির , তাফসীরে আদওয়াউল বয়ান , তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন , তাফসীরে কুরতুবী এবং তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন । এখানে শুধু মাআরেফুল কোরআনের তাফসীর উল্লেখ করছি কারণ এদেশের মানুষ কাথায় কথায় এসব তাফসীরের কথাই বলে ।


    তাফসীরে মাআরেফুল কোরআনের বক্তব্য ;
    ‘অধিকাংশ তফসীরবিদের মতে এখনে শবে কদর বুঝানো হয়েছে , যা রমযান মাসের শেষ দশকে হয় । এ রাত্রিকে ‘মোবারক’ বলার কারণ এই যে , এ রাত্রিতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয় । সূরা কদরে এক নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, কোরআন পাক শবে কদরে নাযিল হয়েছে । এতে বোঝা গেল যে , এখানেও বরকতের রাত্রি বলে শবে কদরই বুঝানো হয়েছে’ ।

    একটু সামনে গিয়ে বলেন ;
    ইকরিমাহ প্রমুখ কয়েকজন তফসীরবিদ থেকে বর্ণিত আছে , এ আয়াতে বরকতের রাত্রি বলে শবে কদর অর্থাৎ শাবান মাসের পনের তারিখের রাত্রি বোঝান হয়েছে । কিন্তু এ রাত্রিতে কোরআন অবতরণ কোরআন ও হাদিসের অন্যান্য বর্ণনার পরিপন্থী । ‘ রমযান মাস যাতে কোরআন নাযিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা ১৮৫ আয়াত ) এবং ‘নিশ্চয় আমি ইহা (কোরআন ) কদরের রাতে নাযিল করেছি’ ( সূরা কদর ১ আয়াত ) এর ন্যায় সুস্পষ্ট বর্ণনা সত্ত্বেও বলা যায় না যে , কোরআন শবে বরাতে নাযিল হয়েছে । তবে কোন কোন রেওয়ায়েতে শাবানের পনের তারিখকে শবে বরাত অথবা ‘লায়লাতুসসফ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং এর বরকতময় হওয়া ও এতে রহমত নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । এর সাথে কোন কোন রেওয়ায়েতে রহমত নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । অর্থাৎ ‘ এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা আমার পক্ষ থেকে করা হয় ।

    হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন , এর অর্থ কোরআন অবতরণের রাত্রি অর্থাৎ শবে কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির করা হয় , যা পরবর্তী শবে কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে । অর্থাৎ এ বছর কারা কারা জন্মগ্রহণ করবে , কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কি পরিমাণ রিযিক দেয়া হবে । মাহদভী বলেন , এর অর্থ এই যে , আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীর পূর্বাহ্ণে স্থিরকৃত সকল ফয়সালা এ রাত্রিতে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে অর্পণ করা হয় । কেননা , কোরআন ও হাদিসের অন্যান্য বর্ণনা সাক্ষ্য দেয় যে , আল্লাহ সুবঃ এসব ফায়সালা মানুষের জন্মের পূর্বেই সৃষ্টিলগ্নে লিখে দিয়েছেন । অতএব, এ রাত্রিতে এগুলোর স্থির করার অর্থ এই যে , যে ফেরেশতাগণের মাধ্যমে ফয়সালা ও তকদীর প্রয়োগ করা হয় , এ রাত্রিতে সারা বছরের বিধানাবলী তাদের কাছে অর্পণ করা হয় । (মাআরিফুল কোরআন সূরা দুখান ৩-৪নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য )

    আলোচনা দ্বারা যা বুঝানো উদ্দেশ্য ,
    যে আলেমরা সূরা দুখানের তিন নং আয়াত দ্বারা শবে বরাতের বয়ান করে তা কোরআনের পরিপন্থী এবং তাফসীরেরও পরিপন্থী । আয়াতে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বলে শবে কদরই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে , শবে বরাত নয় যা আয়াত তাফসীরের মাধ্যমে জানতে জানা গেল ।
    সূরা দুখানের চার নং আয়াত দ্বারাও শবে কদরই উদ্দেশ্য , শবে বরাত নয় । শবে কদরেই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীর পূর্বাহ্ণে স্থিরকৃত সকল ফয়সালা শুধু ফেরেশতাগণের কাছে অর্পণ করা হয় বা বুঝিয়ে দেয়া হয় যা আগামী এক বছর ঘটবে । কারন তকদীর মানুষ সৃষ্টির বহু আগেই লেখা হয়েছে গেছে । এ রাতে তকদীর লেখা হয় না । শবে বরাতে এমন কিছুই করা হয় না ।

    আল্লাহ সুবঃ আমাদের কে সঠিক ইলম দান করুণ । আমিন ! ...

  • #2
    জাঝাকাল্লাহ আখি
    كتب عليكم القتال وهو كره لكم

    Comment


    • #3
      আখি, জাযাকাল্লাহু খাইরান। আল্লাহ আপনি ভাইয়ের মেহনতকে কবুল করুন। আমিন।
      আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
      আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

      Comment


      • #4
        جزاك الله أحسن الجزاء و رزقك الله الشهادة
        সবাই আনসার আল ইসলামে যোগ দিন

        Comment


        • #5
          জাজাকুমাল্লাহু খাইরান

          Comment


          • #6
            বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবেবরাত - মুফতি আব্দুল মালেক

            এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই এ সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল, ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

            বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

            এখানে শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফযীলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদীস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণ সহ উল্লেখ করা হল।

            ১ম হাদীসঃ

            عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء

            মুআয ইবনে জাবাল বলেন, নবী করীম স. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

            এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে। যখন কোন বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত ঘোষণা হয়, তখন তার অর্থ এই হয় যে, এই সময় এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং ঐ সব গুণাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত থেকে বঞ্চিত হয়।

            যেহেতু উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফেরাতের ঘোষণা এসেছে, তাই এ রাতটি অনেক পূর্ব থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। কেননা, এ রাতে গুনাহসমূহ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং পাপের অশুভ পরিণাম থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

            যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদীসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

            হাদীসটির সনদ বা সূত্র বিষয়ক আলোচনা

            উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার কিতাবু সহীহ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদীস। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী (রহঃ) শুআবুল ঈমান এ (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাত এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

            হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে কিতাবুস সহীহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীন সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

            ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্*তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১।

            বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদসিস্* সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেনঃ

            وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .

            এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানী (রহঃ) ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করটা, যারা কোন ধরণের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।

            ইদানিং আমাদের কতক সালাফী বা আহলে হাদিস বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরণের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিস্*ফি মিন শাবান) এর কোন ফযীলতই হাদীস শরীফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। কেননা, তাদেরকে আলবানী (রহঃ) এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতে দেখা যায়। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্*কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?

            আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্*তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

            এই রাতের আমল

            উল্লেখিত হাদীস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদীস পেশ করছি।

            হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিঞ্চেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (স) তখন ইরশাদ করলেন,

            هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرينويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

            ‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]

            ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন,

            هذا مرسل جيد

            এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে - এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্*তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

            পরদিন রোযা রাখা

            সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে

            عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

            হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জ্ঞপনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্*হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাঞ্চআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।ঞ্চ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪]

            এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। কিন্তু মুহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

            বলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্*হের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, -শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’

            তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ (স) নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, রমযানের দুএকদিন পূর্বে রোযা রেখো না।ঞ্চ যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

            একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণকে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা আইয়ামে বীয এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে তরে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট নেই।

            এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত

            এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরয নামাযতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। [ইক্*তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯]

            তবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।

            কোন কোন জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়।

            মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল রেওযাজ। শবে বরাতের ফাযায়েল ও মাসায়েল আগেই আলোচনা করা যায়। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক না। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আরামেরও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফীক দিন।

            Comment


            • #7
              শবে বরাত সম্পর্কে সম্মানিত এই আলেমকে দলিলভিতিক আলোচনা করতে শুনলাম। ভাইয়েরা আপনারা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য এটা দেখে নিতে পারেন ইনশা-আল্লাহ।

              Last edited by khalid-hindustani; 05-11-2017, 03:29 PM.

              Comment


              • #8
                একটু সামনে গিয়ে বলেন ;
                ইকরিমাহ প্রমুখ কয়েকজন তফসীরবিদ থেকে বর্ণিত আছে , এ আয়াতে বরকতের রাত্রি বলে শবে কদর অর্থাৎ শাবান মাসের পনের তারিখের রাত্রি বোঝান হয়েছে । কিন্তু এ রাত্রিতে কোরআন অবতরণ কোরআন ও হাদিসের অন্যান্য বর্ণনার পরিপন্থী । (কথাটি কেমন যেন লাগছে।শবে কদর তো শাবানের পনের তারিখ নয়।)

                Comment


                • #9
                  আবু জাবের ভাই পরের লাইনেই উত্তর দেয়া আছে । পরের কয়েকটা লাইন ভাল করে পড়েন । জাযাকাল্লাহ
                  Last edited by Tahmid; 05-12-2017, 03:52 PM.

                  Comment


                  • #10
                    আমার আলোচনা মূল বিষয় ছিল সূরা দুখানের ৩ ও ৪ নং আয়াতের দিয়ে যে আলেমরা শবে বরাত বুঝাতে চাই বা একথা বলে যে এই আয়াতগুলোতে শবে বরাতের আলোচনা এসেছে সেটা যে ভিত্তিহীন ও কোরানের শরীফের আয়াতগুলোর পরিপন্থী তা বুঝানো । সূরা দুখানের আয়াতগুলোতে শবে কদর সম্পর্কেই আলোচনা করা করা হয়েছে যা আমি বুঝাতে চেয়েছি এবং শেষ দিকে বলে দিয়েছি । কাজেই আমার আলোচনাকে শবে বরাতের সম্পূর্ণ বিরোধী মনে করা ভুল হবে ।

                    শবে বরাতের ইবাদত সম্পর্কে আমার পোষ্টে কোন আলোচনা করা হয়নি । আর এ রাত সম্পর্কে সহীহ হাদীসে যা এসেছে তা অবশ্যই আমি মানি এবং আল্লাহর কসম এ রাতে আমিও ইবাদত করেছি আল্লাহর ইচ্ছাই । আমি আমার পোষ্টে ‘বিদআত’ শব্দ প্রয়োগ করেছি তা মূলত বর্তমানে মানুষের বাড়াবাড়ির দৃষ্টিকোন থেকে বলেছিলাম যদিও আমি বিষয়টা পরিষ্কার করে তখন বলেনি যা বুঝিয়ে বলা উচিৎ ছিল ।

                    আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুণ , হে আল্লাহ !
                    আমিন ...

                    Comment

                    Working...
                    X