Announcement

Collapse
No announcement yet.

শবে বরাত সম্পর্কে আলেম ভাইদের নিকট একটি প্রশ্ন

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শবে বরাত সম্পর্কে আলেম ভাইদের নিকট একটি প্রশ্ন

    আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ ।
    ভাইদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন ।
    ১। আমরা জানি শবে বরাত একটি স্পষ্ট বিদ'আত । কিন্তু আমার পরিবার ও সমাজ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ । এছাড়া শবে বরাতকে যারা বিদাত বলে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার মসজিদে জুমুয়াতে খুব জোড়েসোরে বয়ান চলে । এখন আমি যদি শবে বরাতের আমল(রাত্রি জাগরণ, নামায, কুরআন তিলাওয়াত) না করি আমার পরিবার ও সমাজ আমাকে পথভ্রষ্ট মনে করবে । তাই শবে বরাতের নিয়তে না, বরং স্বাভাবিক দিনগুলোতে যেমন ইবাদত করি সেই নিয়তে শবে বরাতে ইবাদত করলে কি তা বিদাত হবে । যদি হয় তাহলে আমার পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান কী ?

    ২। আমার জানামতে বিদাতের সংজ্ঞা হচ্ছে - "ইসলামে ইবাদতের আকারে সওয়াবের নিয়তে করা কুরআন সুন্নাহ বহির্ভূত নব্য আবিস্কৃত কাজই হচ্ছে বিদাত" । ভুল হলে মুসলিম ভাই হিসেবে আমাকে ধরিয়ে দিবেন ইন শা আল্লাহ ।
    এখন শবে বরাতে যে হালুয়া রুটি খা্ওয়া হয় সেটা কি বিদাত বা হারাম হবে । আমার জানা সংজ্ঞানুযায়ী আমার মতে এটি বিদাত হয় না । কারন হালুয়া রুটি তো আর ইবাদতের আকারে সওয়াবের নিয়তে খাওয়া হচ্ছে না । যদিও এই প্রথাটি নব্য আবিস্কৃত । শুধু নব্য আবিস্কৃত হওয়ার কারনেই যদি এটি বিদাত ও হারাম হয় তাহলে তো ফ্যান, লাইট ব্যবহার করা বাস ট্রেনে ভ্রমণ করাও বিদাত যদিও এগুলোর কোনটিই ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয় না ।

  • #2
    প্রিয় আখি, বিজ্ঞ ভাইয়েরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিবেন। ইনশাআল্লাহ।
    #আমার ব্যক্তিগত কিছু কথা,
    # আপনি বলেছেন, শবে বরাত বিদাত, আসলে বিদাত নয়। এব্যাপারে একাদিক সাহাবির হাদিস আছে। হয় তো কেউ একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে।
    # নব্য না লিখে নতুন লিখলে ই বেশি সুন্দর দেখাই।
    #হালুওয়া রুটি যেহেতু এই দিনট উপলক্ষেই করা হচ্ছে, তাই অপ্রয়োজনিয় হওয়ার ধরুন পরিত্যাগ যোগ্য।
    #আপনার ফ্যান ব্যবহার করা, লাইট ব্যবহার করা, বাস ট্রেন, উড়োজাহাজ সবই হচ্ছে মানুষের প্রয়োজনের আওতায়।।।।
    আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
    আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

    Comment


    • #3
      আপনি অন্যান্য দ্বীনের মতো তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন ফিৎনা থেকে বাচার জন্য।
      আর স্বাভাবিক নিয়মে একটু বেশি ইবাদাত করতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন এ দ্বীনের বিশেষ
      ফজিলত প্রমানিত না থাকায় এ বিস্বাস না রেখে আমল করতে হবে।
      হালুয়া রুটি এটি যারা দেয় তারা সওয়াবের নিয়তে দিলে বিদয়াত হবে,আর সওয়াবের নিয়ত না
      থাকলে কুসংস্কার হবে এতে যাদেরকে দেওয়া হয় তাদের নিয়ত ধর্তব্য নয়।
      আর বখতিয়ার ভাইয়ের কথা এটি সাহাবীদের থেকে প্রমানিত সঠিক নয়।
      সাহাবীদের্ থেকে নির্ভরযোগ্য সুত্রে প্রমানিত হওয়া শর্ত।ইতিহাস বা যয়ীফ ভাবে প্রমানিত
      হলে তার কোন মুল্যই নেই।

      Comment


      • #4
        হালুয়া রুটিকে এই দিনের একটা বিষেশ রসম হিসেবেই পালন করা হয়। এই ব্যাপারে গ্রাম গঞ্জে একটা জাল হাদিস প্রচলিত আছে এই দিনে হালুয়া রুটি খেলে কেয়ামতে আরশের নিচে জায়গা হবে। কিন্তু কেওও যদি অভ্যাস বসত শবে বরাতেও নিয়াত ছাড়া রুটি খায় তাহলে বিদাত হবার কথা নয়।আল্লাহু আলাম
        বিজয় তো এসেই গেছে

        Comment


        • #5
          Originally posted by karimul islam View Post
          আর বখতিয়ার ভাইয়ের কথা এটি সাহাবীদের থেকে প্রমানিত সঠিক নয়।
          সাহাবীদের্ থেকে নির্ভরযোগ্য সুত্রে প্রমানিত হওয়া শর্ত।ইতিহাস বা যয়ীফ ভাবে প্রমানিত
          হলে তার কোন মুল্যই নেই।
          আঁখি এ ব্যপারে আপনাকে banglar omar ভাই এর 'শবে বরাত কি আসলেই বিদআত' লেখাটি এবং Tahmid ভাই এর 'শবে বরাত...' লেখার কমেন্টস এ khalid-hindustani ভাই এর লেখাটিও পড়ার অনুরোধ রইল।
          আমি কোন আলেম না তাই এ ব্যপারে কিছু বলা থেকে বিরত থাকছি। শুধু অনুরোধ করছি কোন একটি বিধানের (যেমন চুরি করলে হাত কাটা) ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের হাদিস (সহীহ, হাসান, জয়ীফ) অনুসরণ করার ক্ষেত্রে শরয়ী উসূল কি হবে এবং কোন একটি আমলের (যেমন; সোম এবং বৃহস্পতিবারের রোযা) ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের হাদিস অনুসরনের শরয়ী উসূল কি হবে তা বিস্তারিত জানার অনুরোধ করছি।
          নোটঃ কোণ একটি কমেন্টস করার পূর্বে আমার লেখার প্রতিটি শব্দের (যে লেখাগুলোর মাধ্যমে দ্বীনের কোন আমল/বিধানকে খণ্ডন করা হয়) শরয়ী ভিত্তি মেপে শতভাগ ইতমিনান হয়ে লেখার অনুরোধ করছি (এটা সবার প্রতি)

          Comment


          • #6
            আবু ফাতেমা ভাই!আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।আমিন।
            ভাই আমাদের আলেমদের মুখে এ কথা শুনতে শুনতে আমরা ভুলে নিপাতিত
            হয়েছি যে,যয়ীফ হাদিসের উপর আমল করা যায়।
            ভাই মুহাদ্দিসদের একটি দলের মতে এর উপর আমল করাও ঠিক নয় কিন্তু এ মতটি
            দুর্বল।মুহাক্বিক ও জমহুর মুহাদ্দিসদের মতে এর উপর আমল করা যায়।
            কিন্তু যয়ীফ হাদিসের উপর আমল করা কখন ঠিক হবে এ ব্যাপারে তারা
            বলেছেন ৩ টি শর্ত পাওয়া গেলে যয়ীফের উপর আমল করা যায়।১:হাদিসটি
            একেবারে দুর্বল না হওয়া।
            কিন্তু শবে বরাতের সব হাদিস হয়তো মাওযু নয়তো একেবারে দুর্বল ১ টি হাদিস ছাড়া
            এ হাদিসটি কারো মতে মুযতারিব হওয়ার কারনে যয়ীফ কারো মতে মুনকার কারো মতে
            হাসান লিহাইরিহি।এটিকে কেউ সুত্রগতভাবে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন বলে আমার জানা
            নেই কিন্তু শুধুমাত্র আব্দুল মালেক সাহেব দাঃ বাঃ কে এ দাবি করতে দেখলাম।
            ২:যয়ীফ হাদিসটি শরীয়তের আমলযোগ্য কোন মূলনীতির অধীনে হতে হবে।
            ৩:এ হাদিসটি রাসুলের থেকে প্রমানিত এমন মনে করে আমল করা যাবেনা সতর্কতাস্বরুপ আমল
            করা হবে।
            আমার কথা হলো শবে বরাত প্রমানিত নয়।কিন্তু সতর্কতাস্বরুপ আমল করতে পারেন একাকীভাবে
            জামায়াতবদ্ধভাবে নয়।কারন জামায়াতবদ্ধভাবে আমলের হাদিস জাল যয়ীফ ও নয়।

            Comment


            • #7
              যঈফ হাদসের ব্যাপারে পরবর্তী কোন পোস্টে আলোচনা করবো। ইনশা-আল্লাহ। তবে শবে বরাত সম্পর্কে মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব দা: বা: এর চলতি মাসের আল কাউসারে দেওয়া লেখাটি বেশ সমৃদ্ধশালী মনে হল বলে আমি এখানে কপি করে দিলাম।


              শবে বরাত : কিছু ভ্রান্তি নিরসন

              মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

              আলকাউসারের শাবান ১৪২৬ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৫ ঈ.) সংখ্যায় ‘বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবে বরাত’ শিরোনামে, শাবান ১৪২৭ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৬ ঈ.) সংখ্যায় ‘উলামায়ে সালাফের উক্তির আলোকে শাবান শবে বরাত’ শিরোনামে এবং রজব ১৪২৮ হি. (আগষ্ট ’০৭ ঈ.) সংখ্যায় ‘অজ্ঞতা ও রসম-রেওয়াজের কবলে শাবান-শবে বরাত : নববী নিদের্শনাই মুক্তির উপায়’ শিরোনামে শাবান ও শবে বরাত সম্পর্কে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় কথা পাঠকের সামনে এসে গেছে। ওয়াল হামদু লিল্লাহি তাআলা আলা যালিকা হামদান কাছীরা।

              এ সংখ্যায় শুধু কিছু ভুল ধারণা চিহ্নিত করে দিতে চাই। কেননা এগুলো সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন এসে থাকে।

              প্রশ্ন ১ : আমি এক কিতাবে পড়েছি যে, শবে বরাত বিষয়ক সকল হাদীস ‘মওযু’। ইবনে দিহয়ার উদ্ধৃতিতে কথাটা ওই কিতাবে লেখা হয়েছে।

              উত্তর : এটা একটা ভুল কথা। ইবনে দিহয়া কখনো এমন কথা বলতে পারেন না। যিনি তার উদ্ধৃতিতে এ কথা লিখেছেন তিনি ভুল লিখেছেন। ইবনে দিহয়া শুধু এটুকু বলেছেন যে, শবে বরাতে বিশেষ নিয়মের নামায এবং সে নামাযের বিশেষ ফযীলতের যে কথাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তা মওযু। তাঁর মূল আরবী বক্তব্য তুলে দিচ্ছি :

              أحاديث صلاة البراءة موضوعة

              ‘শবে বরাতের বিশেষ নামায সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মওজু।’

              (তাযকিরাতুল মওজুআত, মুহাম্মাদ তাহের পাটনী পৃ. ৪৫)

              আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’

              আল্লামা শাওকানীও ‘আল ফাওয়াইদুল মাজমূআ’ পৃ. ৫১)তে এই ভুল ধারণা সংশোধন করেছেন।

              প্রশ্ন ২ : একজন আলিমের কাছে শুনেছি যে, শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়া ‘মাসনূন’ নয়। আর আজকাল যেভাবে এ রাতে কবরস্থানে মেলা বসানো হয় এবং মহিলারাও বেপর্দা হয়ে সেখানে গিয়ে ভিড় করে, তা তো একেবারেই নাজায়েয।

              প্রশ্ন এই যে, যতটুকু নাজায়েয তা তো অবশ্যই নাজায়েয, কিন্তু যদি মহিলারা বেপর্দা না হয় এবং কোনো গুনাহর কাজও সেখানে না হয় তবুও কি এ রাতে কবর যিয়ারত মাসনূন বলা যাবে না? হাকীমুল উম্মত ‘ইসলাহুর রুছূম’ কিতাবে একে ‘মাসনূন’ লিখেছেন।

              উত্তর : মহিলাদের জন্য যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে যাওয়া এমনিতেও নিষেধ। এরপর যদি পর্দাহীনতা ও অন্যান্য আপত্তিকর বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তা আরো কঠিন হয়ে যায়। আর কবরস্থান যদি নিকটবর্তী হয় এবং মাযার না হয় আর সেখানে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কাজকর্ম না হয় তাহলে পুরুষের জন্য এ রাতে সেখানে গিয়ে যিয়ারত করার বিধান কী? হাকীমুল উম্মত রাহ. প্রথমে একে মাসনূন লিখেছিলেন। পরে আরো চিন্তা-ভাবনা ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মত বিনিময় করার পর ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন এবং লেখেন যে, আমি কবরস্থানে যাওয়া থেকে বারণ করাকেই অধিক সতর্কতার বিষয় মনে করি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৮) শরীয়তের নীতিমালার আলোকে হযরত থানভী রাহ-এর দ্বিতীয় মতই অগ্রগণ্য।

              প্রশ্ন ৩ : সুনানে ইবনে মাজাহ-তে (হাদীস নং : ১৩৮৮) পনেরো শা‘বান রাত সম্পর্কে এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে :

              قوموا ليلها وصوموا نهارها

              এই রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে (অর্থাৎ পনেরো শা’বান) রোযা রাখ।

              এই হাদীসটি থানভী রাহ. ‘খুতবাতুল আহকাম’-এ উল্লেখ করেছেন এবং ‘ইসলাহুর রুসূম’-এ পনেরো শাবান-এর রোযাকে মাসনূন বলেছেন। কিন্তু এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে মওযু বলেছেন। এরপর হযরত মাওলানা মুহাম্মদ তকী উছমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘ইসলাহী খুতবাত’-এ দেখলাম যে, সেখানে এই হাদীসটিকে ‘জয়ীফ’ লেখা হয়েছে এবং এই রোযাকে ‘সুন্নত’ মনে করা ভুল বলা হয়েছে। প্রকৃত বিষয়টি বুঝে আসছে না। আশা করি সাহায্য করবেন।

              উত্তর : ইবনে মাজাহর উপরোক্ত হাদীসটি ‘মওজু’ তো কখনোই নয়। তবে সনদের দিক থেকে ‘জয়ীফ’। যেহেতু ফাযাইলের ক্ষেত্রে ‘জয়ীফ’ গ্রহণযোগ্য তাই আলিমগণ শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে এ হাদীস বয়ান করে থাকেন।



              শায়খ আলবানী ‘সিলসিলাতুয যয়ীফা’ (৫/১৫৪) তে এই বর্ণনাকে ‘মওজূউস সনদ’ লিখেছেন। অর্থাৎ এর ‘সনদ’ মওজূ। যেহেতু অন্যান্য ‘সহীহ’ বর্ণনা উপরোক্ত বর্ণনার বক্তব্যকে সমর্থন করে সম্ভবত এজন্যই শায়খ আলবানী সরাসরি ‘মওজূ’ না বলে ‘মওজূউস সনদ’ বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তথাপি শায়খ আলবানীর এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা এই যে, এই বর্ণনা ‘মওজূ’ নয়, শুধু ‘জয়ীফ’। ইবনে রজব রাহ. প্রমুখ বিশেষজ্ঞদের এই মতই আলবানী সাহেব নিজেও বর্ণনা করেছেন।

              এ প্রসঙ্গে আলবানী সাহেব যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা এই যে, এ বর্ণনার সনদে ‘ইবনে আবী ছাবুরা’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। তার সম্পর্কে হাদীস জাল করার অভিযোগ রয়েছে। অতএব এই বর্ণনা ‘মওজু’ হওয়া উচিত। তবে এই ধারণা এ জন্য সঠিক নয় যে, ইবনে আবী সাবুরাহ সম্পর্কে উপরোক্ত অভিযোগ ঠিক নয়। তার সম্পর্কে খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, জয়ীফ রাবীদের মতো তার স্মৃতিশক্তিতে দুর্বলতা ছিল। রিজাল শাস্ত্রের ইমাম আল্লামা যাহাবী রাহ. পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণেই তাকে জয়ীফ বলা হয়েছে।’ দেখুন সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/২৫০

              সারকথা এই যে, উপরোক্ত বর্ণনা মওজু নয়, শুধু জয়ীফ।

              পনেরো শাবানের রোযা সম্পর্কে থানভী রাহ. যে ‘মাসনূন’ বলেছেন তার অর্থ হল মুস্তাহাব। আর ইসলাহী খুতবাতের আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়া হলে দেখা যায় যে, তা এ কথার বিপরীত নয়। ওই আলোচনায় ‘জয়ীফ’ হাদীসের ওপর আমল করার পন্থা বিষয়ে একটি ইলমী আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। হযরত মাওলানা পনেরো তারিখের রোযা রাখতে নিষেধ করেননি। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন যে, একে শবে বরাতের রোযা বলবে না। গোটা শাবান মাসেই শুধু শেষের দুই দিন ছাড়া, রোযা রাখা মুস্তাহাব। তাছাড়া প্রতিমাসের ‘আয়্যামে বীজ’ (চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ) রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ দিনের রোযা রাখা হলে ইনশাআল্লাহ ছওয়াব পাওয়া যাবে।



              প্রশ্ন ৪ : আমি একটি পুস্তিকায় পড়েছি যে, শবে বরাত সম্পর্কে যেসব রেওয়ায়েত পাওয়া যায় তন্মধ্যে সনদের বিবেচনায় সবচেয়ে উত্তম রেওয়ায়েতটিই হল ‘জয়ীফ।’ তাহলে অন্যগুলোর অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। এ কথা কি সঠিক?

              উত্তর : এ কথাটা একেবারেই ভুল। শবে বরাত সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদীস এসেছে। তার মধ্যে একটি হাদীস ‘সহীহ’, কিছু হাদীস ‘হাসান’ আর কিছু ‘জয়ীফ’। এ জন্য শবে বরাতের ফযীলত বিষয়ক সকল হাদীস জয়ীফ-একথা ঠিক নয়। সনদের বিচারে সবচেয়ে উত্তম বর্ণনা সেটা যা ইবনে হিববান ‘কিতাবুস সহীহ’ তে (হাদীস ৫৬৬৫) বর্ণনা করেছেন।

              عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.

              হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’

              আরো একাধিক হাদীসে এ বিষয়টি এসেছে। যেগুলোর সনদ ‘হাসান লিযাতিহী বা হাসান লিগায়রিহী।’ যথা মুসনাদে আহমদ এর ৬৬৪২ নং হাদীস, এবং মুসনাদুল বাযযার (২০৪৫)-এ আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণিত হাদীস।

              এছাড়া এ রাতের আমল সম্পর্কে ‘শুআবুল ঈমান’ বায়হাকীর নিম্নোক্ত হাদীসটি লক্ষণীয়।

              হযরত আলা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মৃত্যু বরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

              هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

              ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২-৩৮৩



              ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

              هذا مرسل جيد

              এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য।

              এধরনের বেশ কয়েকটি সহীহ ও হাসান হাদীস বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কি এ কথা বলা উচিত যে, এ বিষয়ে সর্বোত্তম হাদীসটি সনদের বিচারে জয়ীফ? ভালোভাবে না জেনে কথা বলা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন।

              প্রশ্ন ৫ : লোকেরা বলে, এ রাতের ফযীলত শবে কদরের সমান। কুরআন মজীদে ‘লায়লাতিন মুবারাকা’ বলে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। এ কথাটা কি সঠিক?

              উত্তর : দুটো কথাই ভুল। শবে বরাতকে শবে কদরের সমান মনে করা ভুল। কুরআন-হাদীসে শবে কদরের যত ফযীলত এসেছে শবে বরাত সম্পর্কে আসেনি। বিশেষত কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার মতো বরকতময় ঘটনা শবে কদরেই সংঘটিত হয়েছে। এই ফযীলত অন্য কোনো রজনীতে নেই।

              ‘লায়লাতিন মুবারাকা’ বলে শবে কদরকেই বোঝানো হয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সূরা কদরে। এজন্য এখানে শবে বরাত উদ্দেশ্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

              আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরনের প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক অবস্থানে দৃঢ়পদ থাকার তাওফীক দান করুন। ইমাম ইবনে রজব রাহ. এর ভাষায় : ‘মুমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেস দিলে তওবা করে যিকির, দুআ ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাবে। যত্নের সঙ্গে নফল নামায পড়বে। কেননা কখন মৃত্যু এসে যায় বলা যায় না। তাই কল্যানের মওসুম শেষ হওয়ার আগেই তার মূল্য দেওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে ছওয়াব লাভের আশা নিয়ে পনেরো তারিখের রোযাও রাখবে। তবে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল, ওইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, যেগুলো এ রাতের সাধারণ ক্ষমা ও দুআ কবুল হওয়া থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। যথা : শিরক, হত্যা, হিংসা-বিদ্বেষ। এগুলো সবগুলোই কবীরা গুনাহ। আর হিংসা-বিদ্বেষ তো এতই গর্হিত বিষয় যে, এটা অধিকাংশ সময়ই মানুষকে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

              যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীন সম্পর্কে অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষ বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত ভয়াবহ ও গর্হিত অপরাধ। এজন্য মুসলমানদের কর্তব্য হল সর্বদা অন্তরকে পরিষ্কার রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পাক-পবিত্র রাখা। বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরী ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফিরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’ -লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ১৫৫-১৫৬#

              Comment


              • #8
                মাসিক আলকাউসারের পোস্টের লিংক

                http://alkawsar.com/article/1547

                Comment

                Working...
                X