Announcement

Collapse
No announcement yet.

রমজান উপলক্ষে আমরা কিভাবে প্রস্তুতি নিব

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রমজান উপলক্ষে আমরা কিভাবে প্রস্তুতি নিব

    সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আমাদের উপর রমুজানের সিয়াম ফরজ করেছেন তাকওয়া হাসিলের জন্যে। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, রমযানের যার ইবাদত অন্য মাসের তুলনায় বহুগুন বেড়ে যেত।
    প্রিয় মুসলিম ভাই,
    বর্তমানে আমরা এমন একটি ফিতনার যুগে এসে পৌঁছেছি, যখন সিয়াম সম্পর্কে বহু মানুষের ধ্যান ধারণা পাল্টে গেছে। তারা এই মাসকে খাবার-দাবার, পান-পানীয়, মিষ্টি-মিষ্টান্ন, রাত জাগা ও স্যাটেলাইট চ্যানেল উপভোগ করার মৌসুম বানিয়ে ফেলেছে। এর জন্য তারা রমজান মাসের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে; এই আশংকায় যে- কিছু খাদ্যদ্রব্য কেনা বাদ পড়ে যেতে পারে অথবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এভাবে তারা খাদ্যদ্রব্য কেনা, হরেক রকম পানীয় প্রস্তুত করা এবং কী অনুষ্ঠান দেখবে, আর কী দেখবে না সেটা জানার জন্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর প্রোগ্রামসূচী অনুসন্ধান করার মাধ্যমে এর জন্য প্রস্তুতি নেয়। অথচ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই তারা অজ্ঞ। তারা এ মাসকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে উদরপূর্তি ও চক্ষুবিলাসের মৌসুমে পরিণত করে।
    অপরদিকে কিছু মানুষ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন। তারা শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমনকি তাদের কেউ কেউ শাবান মাসের আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

    রমজানের জন্য প্রস্তুতির কিছু পদক্ষেপ:
    ১. একনিষ্ঠভাবে তওবা করা :
    তওবা করা সবসময় ওয়াজিব। তবে ব্যক্তি যেহেতু এক মহান মাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই অনতিবিলম্বে নিজের মাঝে ও স্বীয় রবের মাঝে যে গুনাহগুলো রয়েছে এবং নিজের মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে অধিকার ক্ষুণ্ণের যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো থেকে দ্রুত তওবা করে নেয়া উচিত। যাতে করে সে পূত-পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে এ মুবারক মাসে প্রবেশ করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মশগুল হতে পারে।
    আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্*র কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার।”[২৪ আন-নূর : ৩১]
    আল-আগার্*র ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
    ( يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ) رواه مسلم ( 2702 )
    “হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহ্*র কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তওবা করি।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম (২৭০২)]
    ২. বেশি বেশি দোআ করা:
    কিছু কিছু সলফে সালেহীন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। রমজানের পর পাঁচ মাস দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাঁদের আমলগুলো কবুল করে নেন।
    তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে, উত্তম দ্বীনদারির সাথে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন।
    ৩. এই মহান মাসের আসন্ন আগমনে খুশি হওয়া :
    রমজান মাস পাওয়াটা একজন মুসলিমের প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। যেহেতু রমজান কল্যাণের মৌসুম। যে সময় জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। রমজান হচ্ছে- কুরআনের মাস, সত্যমিথ্যার মধ্যে পার্থক্য রচনাকারী জিহাদি অভিযানগুলোর মাস। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
    ( قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ) [10 يونس : 58]
    “বলুন, এটি আল্লাহ্*র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক । এটি তারা যা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।” [১০ ইঊনুস : ৫৮]
    ৪. কোন ওয়াজিব রোজা নিজ দায়িত্বে থেকে থাকলে তা হতে মুক্ত হওয়া :
    আবু সালামাহ্* হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:
    كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ . رواه البخاري ( 1849 ) ومسلم ( 1146 )
    “আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শা‘বান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১৮৪৯) ও ইমাম মুসলিম (১১৪৬)]
    হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আয়েশা (রাঃ) এর শাবান মাসে কাযা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।” [ফাতহুল বারী (৪/১৯১)]
    ৫. রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেয়া এবং রমজানের ফজিলত অবগত হওয়া।

    ৬. যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।
    ৭. স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে বসে রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা এবং ছোটদেরকেও রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
    ৮. রমজানের রোজার প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাসে কিছু রোজা রাখা:
    عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلا رَمَضَانَ ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ . رواه البخاري ( 1868 ) ومسلم ( 1156 )
    আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরাবলতাম – তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে সিয়াম ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম – তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। আমিরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসেঅধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৮৬৮) ও মুসলিম (১১৫৬)]
    عَنْ أُسَامَة بْن زَيْدٍ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنْ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ ، قَالَ : ( ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ ) . رواه النسائي ( 2357 ) وحسَّنه الألباني في " صحيح النسائي "

    উসামাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি বললাম : ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোন মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন: “এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামীনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম নাসা’ঈ (২৩৫৭) এবং আলবানী একে ‘সহীহুন নাসা’ঈ’ গ্রন্থে হাসান বলেছেন।]
    এ হাদিসে শাবান মাসে রোজা পালনের হেকমত (গুঢ় রহস্য) বর্ণনা করা হয়েছে। সে হেকমত হচ্ছে- এ মাসে বান্দার আমলগুলো উত্তোলন করা হয়। জনৈক আলেম আরো একটি হেকমত উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে- শাবান মাসের রোজা যেন ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজের তুল্য। এই্ সুন্নতের মাধ্যমে ফরজ পালনের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করা হয় এবং ফরজ পালনের জন্য প্রেরণা তৈরী করা হয়। একই হেকমত রমজানের পূর্বে শাবানের রোজার ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।
    ৯. কুরআন তেলাওয়াত করা
    সালামাহ ইবনে কুহাইল বলেছেন: “শাবান মাসকে তেলাওয়াতকারীদের মাস বলা হত।” শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তাঁর দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কুরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন।
    আবু বকর আল-বালখী বলেছেন: “রজব মাস হল- বীজ বপনের মাস। শাবান মাস হল- ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হল- ফসল তোলার মাস।” তিনি আরও বলেছেন: “রজব মাসের উদাহরণ হল- বাতাসের ন্যায়, শাবান মাসের উদাহরণ হল- মেঘের ন্যায়, রমজান মাসের উদাহরণ হল- বৃষ্টির ন্যায়। তাই যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ বপন করল না, শাবান মাসে সেচ প্রদান করল না, সে কিভাবে রমজান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?”
    এখন তো রজব মাস গত হয়ে গেছে। আপনি যদি রমজান মাস পেতে চান তাহলে শাবান মাসের জন্য আপনার কি পরিকল্পনা? এই হল এই মুবারক মাসে আপনার নবী ও উম্মতের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অবস্থা। এই সমস্ত আমল ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কী হবে!!

    এটি এই মুবারক মাসে একজন মুসলিমের জন্য প্রস্তাবিত রুটিন :
    রমজান মাসে একজন মুসলিমের সারাদিন :
    আল্লাহ তাআলা সকলের সৎ কথা ও কাজ কবুল করুন এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে আমাদেরকে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) দান করুন।
    একজন মুসলিম তাঁর দিন শুরু করবে ফজরের সালাতের আগে সেহেরী গ্রহণের মাধ্যমে। উত্তম হচ্ছে যদি রাতের শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সেহেরী গ্রহণ করা যায়। আযানের আগে তিনি ফজরের সালাতের জন্য প্রস্তুতি নিবেন। বাসা হতে ওজু করে আযানের আগেই মসজিদে যাবেন। মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ দুই রাকাত সালাত আদায় করবেন। এরপর মুয়াজ্জিন আযান দেয়ার আগ পর্যন্ত বসে বসে দোয়া দরুদ, কুরআন তিলাওয়াত বা যিকির আযকারে মশগুল থাকবেন। আযান দিলে মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে আযানের বাক্যগুলোর পুনরাবৃত্তি করবেন। আযান সমাপ্ত হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত দুআ পাঠ করবেন। এরপর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায আদায় করবেন। তারপর ফরজ সালাত দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যিকির, দুআ ও কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করবেন। “সালাতের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সালাতেই রয়েছেন”। [ বুখারী (৬৪৭) ও মুসলিম (৬৪৯)]
    জামাতের সাথে সালাত আদায় শেষে, সালাম ফিরানোর পর তিনি শরিয়ত নির্দেশিত দুআসমূহ পাঠ করবেন। এরপর চাইলে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে থেকে যিকির, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবেন। এটি করতে পারলে ভাল। ফজরের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে আমল করতেন। এরপর সূর্যোদয়ের পর সূর্য কিছুটা উপরে উঠলে এবং উদয়নের পর ১৫ মিনিটের মত অতিক্রান্ত হলে তিনি চাইলে সালাতুদ্* দোহা তথা চাশ্*তের নামায (সর্বনিম্ন দুই রাকাত) আদায় করবেন। এটি ভাল। আর চাইলে কিছুটা দেরী করে এই নামায পড়ার উত্তম সময়ে নামাযটি পড়তে পারেন। উত্তম সময় হলো- সূর্য আরো উপরে উঠলে এবং রোদের প্রখরতা বাড়লে। এই সময়ে নামাযটি পড়তে পারলে আরো ভাল। [মুসলিম (৭৪৮), তিরমিযী (৫৮৬)]
    এরপর কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতিস্বরূপ কিছু সময় ঘুমাতে চাইলে এই ঘুমের দ্বারা ‘ইবাদত ও রিযিক অন্বেষণের নিমিত্তে শক্তি অর্জনের নিয়্যত করবেন। যাতে আল্লাহ চাহেত এ ঘুমের মাধ্যমে সওয়াব পেতে পারেন। ইসলামী শরিয়ত যেসব কথা ও কাজকে ঘুমের আদব হিসেবে নির্ধারণ করেছে সেগুলো পালনে যত্নবান হওয়া উচিত। এরপর তিনি তার কর্মস্থলে যাবেন। যোহরের নামাযের ওয়াক্ত নিকটে এলে যথাসম্ভব শীঘ্রই আযানের আগে অথবা আযানের পরপরই মসজিদে হাযির হবেন। নামাযের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে থাকবেন। এরপর তিনি ২ সালামে যোহরের ৪ রাকাত সুন্নত নামায আদায় করবেন। এরপর কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না জামাত শুরু হয়। এরপর জামাতের সাথে সালাত আদায় করবেন। জামাতের পর যোহরের ২ রাকাত সুন্নত নামায আদায় করবেন। সালাত আদায় শেষে তার ডিউটির বাকী অংশ সম্পন্ন করবেন। ডিউটি শেষে তিনি বাসায় ফিরে আসবেন। যদি আসরের সালাতের পূর্বে লম্বা সময় বাকি থাকে তাহলে কিছু সময় বিশ্রাম নিবেন। আর যদি ঘুমানোর মত বেশি সময় বাকি না থাকে এবং ঘুমিয়ে পড়লে আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার আশংকা করেন তাহলে নামাযের ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত উপযুক্ত কোন কাজে ব্যস্ত থাকবেন। যেমন– বাসার লোকজনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কিনতে বাজারে যাওয়া। নতুবা কর্মস্থল থেকে ফিরে সোজা মসজিদে চলে যাবেন এবং আসরের সালাত পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করবেন। আসরের পর একজন মানুষ তার নিজের অবস্থা বিবেচনা করবে। তিনি যদি মসজিদে বসে কুরআন তিলাওয়াতে নিয়োজিত থাকার মত শক্তি পান তাহলে এটা এক মহান সুযোগ। আর যদি তিনি ক্লান্তি বোধ করেন তবে এ সময়ে বিশ্রাম নিবেন; যাতে রাতে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
    মাগরিবের আযানের আগে তিনি ইফতারের জন্য প্রস্তুতি নিবেন। এই মুহূর্তগুলোকে তিনি যে কোন ভালো কাজে ব্যয় করবেন। যেমন- কুরআন তিলাওয়াত করা, দুআ করা, অথবা পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে ভাল কোন কথা আলোচনা করা। এ সময়ের সবচেয়ে ভাল কাজ হল – রোযাদারদের ইফতার করানোতে অংশ নেওয়া। হয়তো তাদের জন্য খাবার কিনে দেয়ার মাধ্যমে অথবা তা বিতরণ করার মাধ্যমে অথবা এর ব্যবস্থাপনা করার মাধ্যমে। এই আমলের মধ্যে অপরিসীম আনন্দ রয়েছে। এটা তিনিই জানেন যিনি নিজে এ আমল করেছেন।
    ইফতারের পর তিনি জামাতের সাথে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাবেন। এরপর দুই রাকাত মাগরিবের সুন্নত সালাত আদায় করবেন। বাসায় ফিরে তিনি প্রয়োজনমাফিক খাদ্য গ্রহণ করবেন। অতিরিক্ত খাবেন না। এরপর এই সময়কে তার নিজের জন্য ও তার পরিবারের জন্য কল্যাণকর কোন পন্থায় ব্যয় করবেন। যেমন – কোন কাহিনীর বই পড়া, দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় হুকুম আহকামের কোন বই পড়া, প্রতিযোগিতার বই পড়া, বৈধ কোন আলাপ আলোচনায় রত থাকা অথবা অন্য যে কোন আকর্ষণীয় কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা এবং এগুলোর মাধ্যমে মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হারাম অনুষ্ঠান থেকে পরিবারের সদস্যদেরকে বিরত রাখা। কারণ চ্যানেলগুলোর জন্য এটি পিক আওয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই আপনি দেখবেন এ সময় তারা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। যে অনুষ্ঠানগুলো আক্বীদা বিনষ্টকারী ও আখলাক বিনষ্টকারী বিষয়াদিতে ভরপুর থাকে।
    প্রিয় ভাই, এসব অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করুন এবং আপনার অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। যাদের ব্যাপারে কিয়ামাতের দিন আপনি প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। সেদিনের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
    এরপর এশার সালাতের জন্য প্রস্তুতি নিন এবং মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। মসজিদে গিয়ে কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হোন। অথবা মসজিদে কোন ইলমী আলোচনা অনুষ্ঠান থাকলে তা শুনুন। এরপর এশার সালাত আদায় করুন। অতঃপর ২ রাকাত এশার সুন্নত নামায আদায় করুন। এরপর ইমামের পিছনে তারাবির নামায খুশূ (আল্লাহর ভয়), তাদাব্বুর (অনুধাবন), তাফাক্*কুর (চিন্তাভাবনা) এর সাথে আদায় করুন। ইমাম নামায শেষ করার আগে আপনি নামায ছেড়ে চলে যাবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
    " إنه من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة ". رواه أبو داود (1370) وغيره ، وصححه الألباني في "صلاة التراويح " (ص 15)
    “ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি তাঁর সাথে নামায আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত নামায পড়ার সওয়াব লিখে দেয়া হবে।”[হাদিসটি আবু দাউদ (নং ১৩৭০) এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সংকলন করেছেন। আলবানী সালাতুত্* তারাবীহ অধ্যায়ে হাদিসটিকে সহীহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন]
    সালাতুত্* তারাবীর পর আপনি আপনার নিজস্ব ব্যতিব্যস্ততার সাথে সামঞ্জস্যশীল প্রোগ্রাম তৈরি করে নিন। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবেন:
    - সমস্ত হারাম থেকে এবং হারামের আহ্বায়ক বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকুন।
    - আপনার বাসার সদস্যদেরকে হারাম থেকে ও হারামের যাবতীয় উপকরণ থেকে কৌশলে বিরত রাখুন। যেমন– তাদের জন্য বিশেষ কোন প্রোগ্রাম তৈরি করুন। অথবা তাদের নিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত স্থানে ঘুরতে বের হোন। তাদেরকে অসৎসঙ্গ থেকে দূরে রাখুন। তাদের জন্য সৎ সাহচর্যের অনুসন্ধান করুন।
    - কম ফজিলতপূর্ণ বিষয়ের পরিবর্তে বেশি ফজিলতপূর্ণ আমলে মশগুল হওয়া।
    আগে আগে বিছানায় যেতে চেষ্টা করুন। ইসলামী শরিয়ত যেসব কথা ও কাজকে ঘুমের আদব হিসেবে নির্ধারণ করেছে সেগুলো পালনে যত্নবান হবেন। ঘুমের আগে যদি কিছু কুরআন তেলাওয়াত বা ভাল কোন বইয়ের কিছু অংশ পড়তে পারেন তবে তা ভাল। বিশেষ করে আপনি যদি কুরআন থেকে আপনার দৈনন্দিন পাঠ্য (ওয়াজীফাহ্) শেষ না-করে থাকেন তবে তা সম্পন্ন না করে ঘুমাবেন না। এরপর সেহেরীর আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ঘুম থেকে উঠুন। যাতে দুআতে ব্যস্ত হতে পারেন। কারণ এই সময় – রাতের শেষ তৃতীয়াংশ – আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা এ সময়ে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের প্রশংসা করেছেন। এ সময়ে দুআকারীদের দুআ কবুলের এবং তওবাকারীদের তওবা কবুলের ওয়াদা করেছেন। তাই এই মহা সুযোগটি আপনার হাতছাড়া করা উচিত হবে না।
    জুমাবার:
    জুমাবার সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম। তাই এই দিনের ‘ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম থাকা উচিত। এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার :
    # জুমার সালাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আগে আগে বের হওয়া।
    # আসরের সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা এবং এ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিলাওয়াত ও দুআতে ব্যস্ত থাকা। কারণ এ সময়ে দুআ কবুল হওয়ার আশা করা হয়।
    # সপ্তাহের মাঝে যে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারেননি তা সম্পন্ন করতে এই দিনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। যেমন কুরআনের সাপ্তাহিক পাঠ্য (ওয়াজীফাহ) বা কোন বই পাঠ অথবা ক্যাসেট শোনা অথবা এ জাতীয় কোন ভাল কাজের কিছু অসম্পন্ন থাকলে এদিনে তা সম্পন্ন করুন।
    শেষ দশক: লাইলাতুল কদর
    রমজানের শেষ দশকে আছে লাইলাতুল কদর (ভাগ্য রজনী)। যে রাত হাজার মাস থেকে উত্তম। তাই এই দশকে মসজিদে ই‘তিকাফ করার বিধান এসেছে। লাইলাতুল ক্বদর পাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে ইতিকাফ করেছেন। সুতরাং যার ইতিকাফ করার সুযোগ রয়েছে তার জানা উচিত এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য এক মহান করুণা। আর যার পুরো দশদিন ইতিকাফ করার সুযোগ নেই তিনি যে কয়দিন পারেন ইতিকাফ করতে পারেন। আর যার একেবারেই ইতিকাফ করার সুযোগ নেই তিনি যেন এ রাত্রিগুলোতে ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে কাটাতে সচেষ্ট হন। যেমন কুরআন তিলাওয়াত করা, যিকির করা, দু‘আ’ করা। রাতজেগে এসব আমল করার জন্য তিনি যেন দিনের বেলা বিশ্রাম নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
    লক্ষণীয় কিছু বিষয় :
    # এই রুটিন একটি প্রস্তাবিত রুটিন। এটি একটি পরিবর্তনযোগ্য রুটিন। যে কেউ তার ব্যতিব্যস্ততার আলোকে এটি পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
    # এই রুটিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে প্রমাণিত সুন্নতসমূহ যথাযথভাবে পালনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, এতে উল্লেখিত সবকিছুই ওয়াজিব বা ফরজ। বরং এতে অনেক সুন্নাহ ও মুস্*তাহাব্ব কাজ রয়েছে।
    # আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হল সে কাজ যা নিয়মিত করা হয় – তা অল্প হলেও। রমজান মাসের শুরুতে মানুষ আনুগত্য ও ইবাদতের খুব যোশ নিয়ে সক্রিয় থাকে। কিছুদিন পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকুন এবং এই মহান মাসে পালনকৃত সমস্ত কাজ নিয়মিতভাবে ধরে রাখতে সচেষ্ট হউন।
    # একজন মুসলিমের উচিত এই মুবারক মাসে তার সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনায় সচেষ্ট হওয়া। যাতে করে কল্যাণ ও ভাল কাজে এগিয়ে যাওয়ার বড় বড় সুযোগ তার হাতছাড়া হয়ে না যায়। যেমন– রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনে দিতে সচেষ্ট হওয়া। একইভাবে দৈনিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এমন সময়ে কিনতে সচেষ্ট হওয়া যখন বাজারে ভিড় থাকে না। আরেকটি উদাহরণ হল: ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দেখা সাক্ষাতের জন্য এমন রুটিন করে নেয়া যাতে ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে।
    # এই মুবারক মাসে বেশি বেশি ইবাদত করা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভকে আপনার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করুন।
    # সালাতের নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই মসজিদে হাযির হওয়ার ব্যাপারে মাসের শুরুতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। আল্লাহ তাআলার কিতাব তিলাওয়াত খতম (সমাপ্ত) করার সিদ্ধান্ত নিন। এই মহান মাসে নিয়মিত ক্বিয়ামুল লাইল পালন করার সংকল্প করুন। স্বীয় সম্পদ থেকে সাধ্যানুপাতে দান করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হউন।
    # এই রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার কিতাবের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার সুযোগ গ্রহণ করুন। নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে হতে পারে:
    - সঠিক উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত করা। ভাল একজন কুরআনের শিক্ষকের (ক্বারীর) নিকট কুরআন পড়া সংশোধন করে নেয়া। আর তা সম্ভব না হলে দক্ষ ক্বারীগণের তিলাওয়াতের ক্যাসেট অনুসরণ করা।
    - আল্লাহ আপনাকে যতটুকু কুরআন হিফ্*জ করার তাওফিক দিয়েছেন তা রিভিশন দেওয়া এবং হিফ্*জ করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া।
    - কুরআনের আয়াতের তাফসীর পাঠ করা। এটা হতে পারে যে আয়াত বুঝতে আপনার সমস্যা হয় সে আয়াতের তাফসীর নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থগুলো (যেমন– তাফসীরে বাগাবী, তাফসীরে ইবনে কাছীর ও তাফসীরে সা‘দী) থেকে সেটা জেনে নেওয়া। অথবা নির্দিষ্ট কোন তাফসীর গ্রন্থ থেকে নিয়মিত পড়ার জন্য রুটিন তৈরি করে নেয়া। প্রথমে আমপারা (পারা-৩০), তারপর তাবারাকা পারা (পারা-২৯) এভাবে পড়তে থাকবেন।
    - আল্লাহ তাআলার কিতাবে যে আদেশাবলী পাওয়া যায় তা বাস্তবায়নে যত্নশীল হওয়া।
    আমরা দু‘আ’ করছি যাতে আল্লাহ তাআলা সিয়াম, ক্বিয়াম সম্পন্ন করার তাওফিক দানের মাধ্যমে আমাদের উপর রমজান মাস পাওয়ার নেয়ামত পূর্ণ করে দেন। আমাদের পক্ষ থেকে তা কবুল করে নেন এবং আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মাফ করে দেন।
    ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

  • #2
    জাজাকাল্লাহ আখি,
    হে আল্লাহ সবাইকে আমল করার তওফিক দান করুন| আমীন..

    Comment


    • #3
      جزاك الله أحسن الجزاء علي ما قدمت إلينا من النصائح الغالية

      Comment


      • #4
        জাজাকাল্লাহ আখি ফিল্লাহ

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ্বারাইনি।
          আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
          আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

          Comment


          • #6
            Originally posted by আবু জাবের View Post
            جزاك الله أحسن الجزاء علي ما قدمت إلينا من النصائح الغالية


            প্রিয় আখি, আরবি বুঝেন?? শুকরিয়া।
            আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
            আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

            Comment


            • #7
              চমৎকার আলোচনা। যাজাকুমুল্লাহ খাইরান।
              كتب عليكم القتال وهو كره لكم

              Comment


              • #8
                জাযাকাল্লাহ আখি

                Comment


                • #9
                  জাজাকাল্লাহ

                  Comment


                  • #10
                    রমযান মাস মুসলিমের জন্য আল্লাহর বিরাট নেয়ামত। এ মাস কল্যাণ ও সৌভাগ্যপূর্ণ। এটি হচ্ছে নেক কাজের মওসুম। এই মওসুমে নেক কাজ করার সুযোগ অনেক বেশী। তাই একজন মুমিন নিজে ঈমান ও আমলকে উন্নত করার জন্য ১১ মাস অপেক্ষা করে। যারা বেশী বেশী নেক কাজ করে এই কাজে লাগাতে পারে, তারা কতই না সৌভাগ্যবান! পক্ষান্তরে, যারা এই মাসকে কাজে লাগাতে পারে না, তারা অবশ্যই হতভাগ্য।
                    ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                    Comment


                    • #11
                      জাযাকাল্লাহ।

                      Comment


                      • #12
                        আল্লাহ তায়ালা আমাদের যথাযথ ভাবে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন
                        ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                        Comment


                        • #13
                          রমযানের আমাদের করণীয়গুলো নিম্নরূপ:

                          1. রমযান তাকওয়ার মাস। তাই সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অধিকতর তাকওয়া অর্জন সম্ভব।

                          2. এই মাসে বড় বড় শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমযানের প্রতি রাত্রে রোযাদার মুমিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। রমযানের শেষ এক রাত্রেই সারা মাসের সমান সংখ্যক লোককে মুক্তি দেওয়া হয়। সেমতে আমাদের বেশী করে নেক আমল করা উচিত।

                          3. এই মাসে কদরের রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। শ্রমিক কর্মদিবসের শেষে যেমন পারিশ্রমিক পায়, রোযাদারও তেমনি রমযানের শেষ দিন ক্ষমা লাভ করে। সূতরাং আমাদের উচিত কদরকে অন্বেষণ করা।

                          4. অন্য মাসে যে কোনো নেক কাজের বিনিময়ে ১০ থেকে ৭শ গুণ। কিন্তু রমযানের রোযার প্রতিদান এর চাইতেও অনেক বেশি। আল্লাহ নিজ হাতে সেই সীমা-সংখ্যাহীন পুরষ্কার দান করবেন। তাই আমাদের বেশী করে নেক আমল করা উচিত।

                          5. এই মাস দান-সদকার মাস। এই মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক দান করতেন। অতএব আমাদের উচিত এ মাসে যাকাত আদায় করা এবং সার্মথানুযায়ী নফল দান সাদকাহ করা।

                          6. রমযান মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে, তাই এটি কুরআনের মাস। ফলে আমাদের বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত।

                          7. রমযান হচ্ছে জেহাদের মাস। এই মাসে মুসলিমদের বড় বড় ঐতিহাসিক বিজয় সাধিত হয়েছে। তাই এটাকে কুরআনে বিজয়ের মাসও বলা হয়েছে।

                          8. এই মাসে এতেকাফ করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমযানে এতেকাফ করতেন।

                          9. ইফতার রমযানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ইফতারের সময় দো‘আ কবুল হয়। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো বেশী করে ইফতারের সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

                          10. এই মাসের ওমরায় হজ্জের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। অতএব, আমাদের যাদের সামর্থ আছে তাদের এ মাসে ওমরার সুযোগ নেয়া ।

                          11. রমযান সবর ও ধৈর্যের মাস। আমাদের সবার এ থেকে ধৈর্যের শিক্ষা নেয়া আবশ্যক।

                          12. রমযান রাত্রি জাগরণের মাস। এই মাসে সালাতুল কেয়াম অর্থাৎ তাহাজ্জুদসহ তারাবীর নামায পড়া হয়। তারাবীর নামায দ্বারা অতীতের সকল গুণাহ মাফ হয়ে যায়। তাই আমাদেরকে তারাবীহ পড়ার গুরুত্বারোপ করতে হবে।

                          13. রমযানে সাদাকাতুল ফিতর দিতে হয়। এর মাধ্যমে রোযার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর হয়।

                          14. রোযার মাধ্যমে মুখ-চোখ ও কানকে সংযত রাখার মাধ্যমে মুসলিম সমাজ থেকে নিন্দা-গীবত, অপবাদ ও চোগলখুরীর মতো সামাজিক ব্যাধি হ্রাস পাওয়া সম্ভব হয়।

                          15. রমযান হচ্ছে তাওবার মাস। তাওবার মাধ্যমে গুণাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

                          16. রোযার উপবাসের মাধ্যমে ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর অভাবী মানুষের দুঃখ বুঝা সহজ এবং এভাবেই রোযা মুসলিমদের মধ্যে সহানুভূতি, মমত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সৃষ্টি করা যায়।

                          আমরা রমযানের মূল শিক্ষা যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারি। রমযান যেন আমাদের জীবনে গতানুগতিক না হয়ে কল্যাণ ও মুক্তির প্রতীক হতে পারে সে চেষ্টা সবাইকে করতে হবে। আল্লাহ আমাদের জীবনে রমযানকে বারবার ফিরিয়ে আনুক, এটাই হোক আমাদের প্রার্থনা।
                          ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                          Comment


                          • #14
                            রমযান ফযীলত ও শিক্ষা পর্ব ১
                            রোযা ইসলামের অন্যতম ফরয ইবাদাত। ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের কল্যাণের জন্য রোযার বিধান চালু হয়েছে। ইসলাম হচ্ছে মুসলিমের পাঁচ স্তম্ভ বিশিষ্ট ঘর। রোযা হচ্ছে সেই ঘরের তৃতীয় স্তম্ভ।



                            রোযার পরিচয়

                            رمضان শব্দটি رمض শব্দ হতে নির্গত। এর অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। রোযা রাখলে গুনাহ মাফ হয়। রমযান গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। তাই এর নাম রমযান।

                            পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনসম্ভোগ হতে বিরত থাকার নাম রোযা।

                            রমযানের রোযা কেন ফরজ করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:

                            ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣]

                            ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল। সম্ভবতঃ এর ফলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’’(সূরা আল বাকারা: ১৮৩)

                            এই আয়াতে রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার বলা হয়েছে। রোযার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। তাকওয়া শব্দটি وقى হতে। যার অর্থ বাঁচা। মহান আল্লাহ বলেন-

                            ﴿ فَوَقَىٰهُمُ ٱللَّهُ شَرَّ ذَٰلِكَ ٱلۡيَوۡمِ ١١ ﴾ [الانسان: ١١]

                            ‘আল্লাহ তাদেরকে ঐ দিনের ক্ষতি থেকে বাঁচিয়েছেন।’



                            রোযার ফযীলত



                            রমযানের রোযার ফযীলত অনেক। ইসলামের যে সকল ইবাদতের সওয়াব ও পুরষ্কার সর্বাধিক তার মধ্যে রমযানের রোযা অন্যতম। অন্য কোনো ইবাদতের ফযীলত এতো বেশী বর্ণিত হয় নি। এখানে আমরা রমযানের রোযার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করব।

                            আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                            «من صام رمضان إيماناً واحتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه»

                            ‘যে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখবে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।’ বুখারী,খ২,পৃ.৭০৭,হাদীস নং ১৯০৫।

                            এখানে ঈমান বলতে সত্যিকার ও যথার্থ ঈমান এবং সওয়াবের নিয়ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া লোক দেখানো কিংবা অন্য কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে রোযা না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

                            « كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِى وَأَنَا أَجْزِى بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِى لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ. وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ »

                            ‘‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের জন্য ১০ থেকে ৭শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন, রোযা এর ব্যতিক্রম। সে একমাত্র আমার জন্যই রোযা রেখেছে এবং আমিই নিজ হাতে এর পুরষ্কার দেবো। সে আমার জন্যই যৌন বাসনা ও খানা-পিনা ত্যাগ করেছে। রোযাদারের রয়েছে দুইটা আনন্দ। একটা হচ্ছে ইফতারের সময় এবং অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। আল্লাহর কাছে রোযাদারের মুখের গন্ধ মেশক-আম্বরের সুঘ্রাণের চাইতেও উত্তম।’’ সহীহ মুসলিম,পর্ব:১৩, সাওম,অধ্যায় ৩০,হাদীস নং১১৫১।

                            এই হাদীসে অন্যান্য ইবাদতের সওয়াবের পরিমাণ উল্লেখ করে রোযাকে ভিন্নধর্মী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি নিজ হাতে রোযার সওয়াব দান করবেন এবং সেটা হবে প্রচলিত হিসেবে চাইতে অনেক বেশি। অর্থাৎ আল্লাহ রোযাদারকে রোযার জন্য অনেক বেশি সওয়াব, পুরষ্কার ও বিনিময় দান করবেন।

                            সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                            « إن في الجنة بابا يقال له الريان يدخل منه الصائمون يوم القيامة لا يدخل منه أحد غيرهم يقال أين الصائمون فيقومون لا يدخل منه أحد غيرهم فإذا دخلوا أغلق فلن يدخل منه أحد »

                            ‘জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে। রোযাদার ছাড়া আর কেউ সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রোযাদাররা প্রবেশ করলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না।’ সহীহ বুখারী,খ.২,সাওম অধ্যায়,হাদীস ১৭৯৭,সহীহ মুসলিম , সাওম,অধ্যায়,হাদীস নং১১৫২।

                            রোযার বিশেষ ফযীলত হচ্ছে জান্নাতের রাইয়ান দরজা। এটা রোযাদারের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা। রাইয়ান শব্দটি আরবী رى এসেছে। এর অর্থ হলো চূড়ান্ত তৃপ্তি সহকারে পান করা। রোযাদাররা জান্নাতে প্রবেশের পর সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যার ফলে কোনো দিন তারা তৃষ্ণার্ত হবে না। ইবনে খুযাইমা উপরোক্ত হাদীসের আরো একটু বর্ধিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাহলো: যারা প্রবেশ করবে, তারা পান করবে এবং যে পান করবে সে আর কোনোদিন তৃষ্ণার্ত হবে না। রোযাদারের জন্য জান্নাতের দরজা রাইয়ান নামকরণের তাৎপর্যও তাই। রাইয়ানের শাব্দিক অর্থের সাথে তাৎপর্যের মিল রয়েছে।

                            রোযাদারের ক্ষুধার চাইতে পিপাসার কষ্টই বেশী। তাই ক্ষুধার তৃপ্তির পরিবর্তে পানীয় পান করার তৃপ্তি উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও জান্নাতে সকল খাবারই মওজুদ রয়েছে।

                            উপর্যুক্ত হাদীসসমূহে বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যে রোযাকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে চিত্রিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোযার সওয়াব অগনিত ও অসংখ্য। আল্লাহ কি পরিমাণ সওয়াব বান্দাকে দেবেন, তা তিনিই ভাল জানেন। অথচ অন্যান্য ইবাদতের সওয়াবের পরিমাণ পূর্বাহ্নেই জানিয়ে দেওয়ায় সবাই তা জানে। নিঃসন্দেহে রোযার বিনিময় ও পুরস্কার রহস্যময়। আমরা যেন রোযার এই রহস্যময় বিনিময় থেকে উদাসীন না থাকি।

                            আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

                            «عن أبي أمامة قال أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت مرني بأمر آخذه عنك قال عليك بالصوم فإنه لا مثل له»

                            আমি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহ রাসূল ! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি রোযা রাখ। রোযার সমতুল্য কিছু নেই। নাসাঈ,খ২,পৃ.৯২,হাদীস নং২৫২৯।
                            ইবনে হিব্বান উল্লেখ করেছেন, এরপর মেহমান ছাড়া আবু উমামার ঘরে দিনে কখনও ধোঁয়া দেখা যায়নি। অর্থাৎ তিনি রোযা রাখতেন। রমযানের রোযা ছাড়া নফল রোযাও বিরাট সওয়াব রয়েছে। আরেক বর্ণনায় এসেছে, আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন: আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রাখার কথা বলেন।

                            অন্য হাদীসে রোযা রাখলে ভাল স্বাস্থ্য লাভ করা যাবে বলা হয়েছে। এটা কতইনা বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক সত্য। কতগুলো রোগের জন্য রোযা নজীরবিহীন চিকিৎসা। যেমন-মেদ ভুঁড়ি, ইত্যাদি। এগুলো থেকে বহুমুত্র, রক্তচাপ অন্যান্য রোগ দেখা দেয়। রোযা বহুমুত্র রোগীর জন্য ঈদ স্বরূপ। কেননা, এর মাধ্যমে রক্তে সুগারের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। মারাত্মক পর্যায়ের ডায়াবেটিস ব্যতীত বাদ বাকী ডায়াবেটিসের জন্য রোযা অত্যন্ত ফলদায়ক। এছাড়াও পেটের বিভিন্ন অসুখ ও বদহজমীর জন্য, আলসার ও গ্যাস্টিকের রোগীর জন্য রোযা বিশেষ উপকারী। তাছাড়া সারা বছর হজমযন্ত্রকে দীর্ঘ মেয়াদী বিশ্রাম দেওয়া সম্ভব হয় না। রোযার মাধ্যমে হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধিত হয়।

                            কোনো কোনো বর্ণনায় রোযাকে শরীরের যাকাত বলা হয়েছে। কেননা, সম্পদের যাকাতের মতো রোযাও শরীর থেকে অতিরিক্ত কিছু জিনিস বের করে দেয়। যাকাত শব্দের অর্থ হচ্ছে: ১) বৃদ্ধি করা ২) পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি অর্জন।

                            সম্পদের যাকাত দিলে আল্লাহ তা বাড়িয়ে দেন এবং তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসে। অনুরূপভাবে তার নৈতিক পবিত্রতাও অর্জিত হয়। রোযার মাধ্যমে মানুষের দৈহিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং নফসের লাগামহীন চাহিদা ও খারাপ লোভ-লালসা দূর হয়। ফলে নৈতিক দিক থেকে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে। যদিও বাহ্যিক দিক থেকে শরীরের কিছু ঘাটতি হয় বলে মনে হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                            «الصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنٌ حَصِينٌ مِنْ النَّار»ِ

                            “রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুরক্ষিত দুর্গ বিশেষ। মুসনাদে আহমদ, খ,১৫,পৃ১২৩,হাদীস নং ৯২২৫।

                            রোযাকে ঢাল বলার কারণ হলো, যুদ্ধে ঢাল যেমন শত্রুর তলোয়ার ও তীর বল্লম থেকে যোদ্ধাকে হেফাজত করে, রোযাও তেমনি রোযাদারকে গুনাহ কাজ ও শয়তান থেকে রক্ষা করে। সত্যিকার রোযাদার তাকওয়ার অনুশীলন করতে গিয়ে হাত, পা, চোখ, কান ও নাকের রোযা রাখে। অর্থাৎ পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে, যা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুরক্ষিত দুর্গ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ রোযাদার জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে।

                            সুফিয়ান ইবন উয়াইনাহ রহ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, ‘রোযা আমার জন্য রাখা হয়’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন: কেয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার নেক ও পাপ কাজের হিসেব নেবেন। তিনি তাদের নেকির বিনিময়ে পাপ কমাতে থাকবেন। তারপরও যদি পাপ অবশিষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন এবং রোযার বিনিময়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

                            এখানে রোযার সওয়াবকে বিনিময়ের উর্ধ্বে রাখার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য নেক কাজের সওয়াবের বিনিময়ে গুনাহ মাফ করা হবে। কিন্তু রোযার সওয়াব গুনাহ মাফের মোকাবিলায় নয়; বরং জান্নাতে প্রবেশের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। রোযার সওয়াব ও মর্যাদা কতইনা বেশী। হাদীসে এসেছে:
                            রোযাদারের মুখের না খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম। সহীহ বুখারী,পর্ব ৩০,সাওম অধ্যায়৪,হাদীস ১৮৯৬,সহীহ মুসলিম,পর্ব:১৩, সাওম,অধ্যায় ৩০,হাদীস নং১১৫১।


                            কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লামা কাস্তাল্লানী বলেছেন, হাশরের দিন রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ সুগন্ধে পরিণত হবে এবং তা রোযাদারের বিশেষ চি‎হ্ন হিসেবে বিবেচিত হবে। বস্তুত এ ধরনের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং রোযার সময় উপবাসের কারণে পেট খালি থাকার ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। মানুষের কাছে তার দুর্গন্ধ ও ঘৃনিত কিন্তু আল্লাহর কাছে তা পবিত্র। কেননা আল্লাহর আনুগত্য ও সন্তুষ্টির কারণেই তা মুখ থেকে বের হয়। তাই এর এই অসাধারণ মর্যাদা।

                            আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                            «الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة يقول الصيام أي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفعني فيه ويقول القرآن منعته النوم بالليل فشفعني فيه قال فيشفعان »

                            “কেয়ামতের দিন রোযা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে আমার রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি, আমাকে তার ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দিন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে রাত্রে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। আমাকে তার ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দিন। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের উভয়কে সুপারিশ করার অনুমতি দেওয়া হবে। আহমদ, খ.২,পৃ.১৭৪,হাদীস নং ৬৬২৬।
                            রোযা ও কুরআন যদি বান্দার ব্যাপারে সুপারিশ করে, তাহলে হাশরের কঠিন দিনে তা অন্য যে কোনো সাহায্যকারীর চাইতে উৎকৃষ্ট হবে। যদিও সেখানে কেউ কারুর সাহায্য তো দূরে থাক, সাহায্যের নাম শুনতেও পালিয়ে যাবে।

                            মহান আল্লাহ বলেন:

                            ﴿ يَوۡمَ يَفِرُّ ٱلۡمَرۡءُ مِنۡ أَخِيهِ ٣٤ وَأُمِّهِۦ وَأَبِيهِ ٣٥ ﴾ [عبس: ٣٤، ٣٥]

                            ““সেদিন ভাই তার ভাই থেকে, মা বাবা থেকে এবং স্ত্রী স্বামী ধেকে বাচ্চারা নিজ পিতা থেকে পালিয়ে যাবে।”
                            সেদিন প্রত্যেকে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। কারুর ব্যাপারে কেউ সাহায্য করতে পারবে না। হ্যাঁ, যাদেরকে আল্লাহ অনুমতি দিবেন, তারা পারবেন।

                            আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                            « الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ »

                            “পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুম’আ থেকে আরেক জুম’আ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান মধ্যবর্তী সময়ের সগীরাহ গুনাহ ক্ষতিপূরণ হবে যদি কবীরা গুণাহ না করা হয়। মুসলিম,পৃ.১৪৪,খ.১,হাদীস নং ৫৭৪।

                            এই হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং জুমআর পাশাপাশি রমযানকেও মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর কাফ্ফারা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ছোট গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। তবে শর্ত হলো, কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। তওবা করলে আল্লাহ কবীরা গুণাহও মাফ করেন। রমযানের রোযা দ্বারা এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। সত্যিই রমযান কতই না মহান।



                            রমযান মাসে ক্ষমা না পাওয়ার জন্য লা‘নত



                            হাদীসে এসেছে,

                            «صعد رسول الله صلى الله عليه و سلم المنبر فلما رقي عتبة قال : ( آمين ) ثم رقي عتبة أخرى فقال : ( آمين ) ثم رقي عتبة ثالثة فقال : ( آمين ) ثم قال : ( أتاني جبريل فقال : يا محمد من أدرك رمضان فلم يغفر له فأبعده الله قلت : آمين قال : ومن أدرك والديه أو أحدهما فدخل النار فأبعده الله قلت : آمين فقال : ومن ذكرت عنده فلم يصل عليك فأبعده الله قل : آمين فقلت : آمين »

                            রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আরোহন করলেন। তারপর যখন তিনি মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন, আমীন। তারপর দ্বিতীয় সিড়িতে পা রেখে বললেন ‘আমীন’। তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে বললেন ‘আমিন’। তিনি মিম্বার থেকে নামার পর আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, (আমরা আপনার কাছে আজ এমন জিনিস শুনতে পেলাম যা আগে কখনও শুনতে পাইনি।) তখন তিনি বললেন, জিব্রাইল(আ.) এসেছিলেন। তিনি বললেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হউক, যে রমযান পাওয়া সত্বেও তার গুনাহ মাফ হয়নি, আমি তখন বললাম ‘আমিন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, কবুল করুন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার পর বললেন, সেই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হউক, যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হয়েছে কিন্তু সে আপনার উপর দরুদ পাঠ করেনি। তখন আমি বলেছি ‘আমিন’। তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখার পর জিব্রাইল (আ.) বললেন, সেই ব্যক্তিও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হউক, যে ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মা-বাবা দুইজনকে কিংবা একজনকে পাওয়া সত্ত্বেও তাদের সেবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেনি। আমি তখন বললাম, আমীন। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং৪০৯।

                            এই হাদীস রমযানের গুরুত্ব আরো পরিস্কারভারে ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ রমযান থেকে যে সকল পুরস্কার পাওয়ার কথা, তা না হলে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকা ছাড়া আর কি গতি হতে পারে? রমযানে রহমত, মাগফেরাত ও নাযাত রয়েছে। রয়েছে আরো অনেক পুরস্কার আল্লাহর পক্ষ থেকে। সিয়াম ও কেয়াম ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে তা লাভ করা যায়। যদি কেউ সিয়াম কেয়াম ও ইবাদত না করে, তাহলে তার ভাগ্যে জিবরীল (আ.) এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বদদো‘আ ছাড়া আর কি থাকতে পারে? আর এ কথা তো দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, ঐ দুইজনের বদদো‘আ আল্লাহর কাছে অবশ্যই কবুল হবে এবং হতভাগ্য ব্যক্তির দুর্ভাগ্য সুনিশ্চিত হবে।

                            আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                            «إذا جاء شهر رمضان فتحت أبواب الجنة و غلقت أبواب النار و صفدت الشياطين »

                            “যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল পরানো হয়। সহীহ ইবনে খুযাইমা,খ.৩,পৃ.১৮৮,হাদীস নং ১৮৪২।

                            নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে খুযাইমা এবং তিরমিযী এই হাদীসটি আরো দীর্ঘায়িত করে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
                            রমযানের প্রথম রাতে শয়তান এবং অবাধ্য জিনকে শিকল পরিয়ে আটক করা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং একটি বন্ধ করা হয় না। একজন আওয়াজ দানকারী এই বলে আওয়াজ দেন, হে কল্যাণ প্রার্থী। এগিয়ে এসো, হে অকল্যাণ প্রার্থী! বিরত থাকো। প্রত্যেক রাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে বহু লোককে মুক্তি দেন।

                            বায়হাকী এক রেওয়ায়াতে বলেছেন: ‘দুষ্ট ও কট্টর জিনগুলোকে রমযানে আটক রাখা হয়।’ এ দ্বারা বুঝা যায়, সকল শয়তানকে রমযানে আটক করা হয় না। শুধু মাত্র বেশী দুষ্টু কিংবা বড় শয়তানগুলোকে রমযানে আটক করা হয়। ছোট শয়তানগুলো আগের মতোই মুক্ত থাকে। ফলে রমযানে শয়তানের তৎপরতা ও অনিষ্ট কম থাকে কিংবা সীমিত থাকে, একেবারে বন্ধ হয় না। সে জন্য রমযানেও গুনাহর কাজ সংগঠিত হয়। কিন্তু মুমিনরা এ মাসে নেককার হওয়ার চেষ্টা করলে শয়তানের প্রবল বিরোধীতার সম্মুখীন হবে না। কেননা নাফরমান, দুষ্টু ও বড় শয়তানগুলোকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাই এ মাসে পাপী লোকদের নেককার হওয়ার সুযোগ বেশী। মাসব্যাপী জান্নাতের দরজা খোলা এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ রেখে আল্লাহ মূলতঃ মানুষের জন্য এক নেক ও রহমতের পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
                            ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                            Comment


                            • #15
                              রমযান ফযীলত ও শিক্ষা পর্ব ২
                              শয়তান দুই প্রকার। জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান।

                              আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: ‘ওয়াসওয়াসা দানকারী জিন ও মানুষ থেকে আশ্রয় চাই।’ (সূরা নাস:৬)

                              জিন শয়তানকে বাঁধা হলেও মানুষ শয়তানকে বাঁধার কথা বলা হয়নি। তাই রমযান মাসে মানুষ শয়তানসহ ছোট ছোট জিন শয়তানগুলো অপকর্মে লিপ্ত থাকার ফলে রমযানের পাপ কাজ অব্যাহত থাকে। কিন্তু কেউ নেক কাজ করতে চাইলে আসমানের রহমতের দরজা ও জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত এবং সেদিকে আকর্ষণের পথে বাধা কম।

                              রমযান হচ্ছে ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। রমযান সহানুভূতির মাস। এই মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোযাদারকে ইফতার করায় তা তার গুনাহের ক্ষমা ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির উপায় হবে। সেও রোযাদারের সমান সওয়াব পাবে, কিন্তু তাই বলে রোযাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না।

                              রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হচ্ছে, যদি মেঘের কারণে ২৯শে শাবানের রাতে চাঁদ দেখা না যেতো, তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করেই রমযানের রোযা রাখতেন। (আবু দাউদ)



                              বিভিন্ন ধর্মে রোযা



                              যুগে যুগে এই তাকওয়া অর্জনের সুযোগ ও চেষ্টা বিদ্যমান ছিল। তাই আমরা দেখি, অন্যান্য আসমানী কিতাবের অনুসারীদের উপরও রোযা ফরয ছিল। একথাই আল্লাহ বলেছেন:

                              ﴿ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٨٣]

                              ‘যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছিল।’ সূরা আল বাকারাহ: ১৮৩।

                              অন্যান্য উম্মতের উপর কি আমাদের মতই রোযা ফরয করা হয়েছিল, না অন্যভাবে, তা আমাদের জানা নেই। হাদীসে এসেছে, দাউদ (আ) রোযা রাখতেন। তিনি একদিন পর পর বছরের ৬ মাস রোযা রাখতেন। তবে তাঁর রোযার ধরন আমাদের জানা নেই। ইহুদীরা ১০ই মুহররমে আশুরার রোযা রাখে। সেই দিন আল্লাহ মূসা (আ) কে পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন।

                              অতীতের বহু জাতি রোযা রেখেছে। পারস্য, রোমার, হিন্দু, গ্রীক, ব্যাবিলনীয় ও পুরাতন মিসরীয়রা রোযা রাখত। ক্যাথলিক গীর্জা রোযার কোনো নির্দেশ ও নীতিমালা জারি করেনি। তবে গীর্জার দৃষ্টিতে কোনো কোন সময় পূর্ণ উপবাস কিংবা আংশিক উপবাসের মাধ্যমে কিছু গুণাহ মাফ হয় এবং তা এক প্রকারের তাওবা হিসেবে গণ্য হয়। রোমান গীর্জা, মাঝে মধ্যে দিনে এক বেলা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আংশিক রোযার উপদেশ দেয়।

                              প্রাচীন খৃষ্টানরা বুধবার, শুক্রবার ও শনিবারে রোযা রাখত। তারা তাদের উপর আপতিত বিপদ মুক্তির জন্য রোযা রাখত। ৪র্থ খৃষ্টাব্দের শুরুতে খৃষ্টানদের উপর মারাত্মক নির্যাতন নেমে আসে। সে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য নবী মূসা (আ) এর অনুকরণে তারা ৪০ দিন ব্যাপী বড় রোযা রাখত।

                              এছাড়াও ঐ সময়ে মানুষের মধ্যে এ ধারণা বিরাজ করে যে, মানুষের খাওয়ার সময় শয়তান শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা জরুরী, যেন শয়তানকে তাড়িয়ে নফসকে পবিত্র করা যায়। সে জন্য তারা রোযা রাখত। মথি লিখিত সুসমাচারে আছে, নামায ও রোযা দ্বারা শয়তান বেরিয়ে যায়।

                              প্রাচীন হিব্রুরা শোক কিংবা বিপদের মুহূর্তে রোযা রাখত। বিপদ দূর হয়ে গেলে আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রাখত। হিব্রু ক্যালেন্ডারে আজও ক্ষমা দিবসে ইহুদীদের রোযা রাখার নিয়ম আছে। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা বছরে কয়েকদিন একাধারে রোযা রাখত। তাদের মতে, এটা আত্মাকে বিশুদ্ধ করার উত্তম পদ্ধতি। দার্শনিক পিথাগোথ ৪০ দিন রোযা রাখতেন। তার মতে, রোযা চিন্তার সহায়ক। সক্রেটিস এবং আফলাতুনও ১০ দিন রোযা রাখতেন। প্রাচীন সিরিয়ানরা প্রতি ৭ম দিনে রোযা রাখত। আর মঙ্গোলিয়ানরা রাখত প্রতি ১০ম দিবসে। সর্বযুগেই রোযার প্রচলন ছিল।

                              অনুরূপভাবে, বৌদ্ধ, হিন্দু, তারকা পূজারী ও আধ্যাত্মবাদীদেরও উপবাস সাধনার নিয়ম রয়েছে। তারা বিশেষ কিছু খাবার পরিহার করে আত্মাকে উন্নত করার চেষ্টা করে। তাদের ধারণা, দেহকে দূর্বল করার মাধ্যমে আত্মা শক্তিশালী হয়। আত্মাকে সবল করার জন্য তাদের এই উপবাস প্রথার আবিষ্কার হয়েছে। মূলকথা, রোযা প্রায় সকল জাতি ও ধর্মের মধ্যে রয়েছে। যদিও তার ধরণ-প্রকৃতি আমাদের জানা নেই।



                              শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোযা



                              এতক্ষণ আমরা রোযার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, রোযার ফযীলত ও মর্যাদা কত অসীম। এখন আমরা এর পাশাপাশি ব্যাপকার্থে রোযার ধারণা সম্পর্কে আরেকটি হাদীস আলোচনা করবো যা প্রতিটি রোযাদার মুসলিমের চিন্তার বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                              «رب صائم حظه من صيامه الجوع والعطش ورب قائم حظه من قيامه السهر»

                              “বহু রোযাদার রোযার মাধ্যমে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কিছুই লাভ করে না এবং রাত্রের বহু নামাযী রাত্রী জাগরণ ছাড়া আর কিছুই পায় না। মুসনাদে আহমদ,খ২,পৃ.৩৭৩।

                              চিন্তার বিষয় হলো, রোযার এতো অগণিত পুরস্কার ও মর্যাদা সত্ত্বেও বহু রোযাদার এবং তারাবী ও তাহাজ্জুদ গুজারের ভাগ্যে ক্ষুধা-পিপাসা এবং রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছু জোটে না। রমযান মাসে আল্লাহর সকল মাখলুক আল্লাহর রহমতের স্পর্শ লাভ করে, সেখানে বহু রোযাদারের এই দুরবস্থা কেন? এর কারণ ও প্রতিকার জানা না থাকলে আমরাও সেই দুর্ভাগ্যের মিছিলের অংশীদার হয়ে যেতে পারি। মোটেও বিচিত্র নয় যে, এতদিন আমরা আমাদের রোযার মাধ্যমে ক্ষুধা-পিপাসা ও রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারিনি।

                              তাই রমযানের রোযা সম্পর্কে আজ আমাদেরকে আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনা করতে হবে। আসলে রোযা বলতে শুধু সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকা নয়, বরং রোযাদারকে অবশ্যই তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও রোযার আওতায় আনতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের রোযাকে সফল করে তুলতে পারবো ইনশাল্লাহ। আর এক্ষেত্রে অন্তর,পেট,জিহ্ব্বা ,কান প্রভৃতিরও রোযা থাকা আবশ্যক।


                              ক. অন্তরের রোযা

                              দেহের রোযার ভিত্তি হচ্ছে অন্তরের রোযা। শুধু তাই নয়, যে কোনো ইবাদতে অন্তরের স্থান সবার আগে। মহান আল্লাহ বলেন,

                              ﴿وَمَن يُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ يَهۡدِ قَلۡبَهُۥۚ ١١ ﴾ [التغابن: ١١]

                              “যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত করেন।”

                              অন্তরের হেদায়াত সকল ইবাদতের মূল কথা। তাই রোযার জন্য মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা এবং প্রবৃত্তিকে পবিত্র ও কলুষমুক্ত হতে হবে। সৎ নিয়ত, সৎ চিন্তা, পরিকল্পনা, একনিষ্ঠতা কিংবা এখলাস হচ্ছে অন্তরের মূল কথা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

                              «إنما الأعمال بالنيات»

                              “সকল আমলের মূল ভিত্তি হচ্ছে নিয়ত।”[ বোখারী,খ.১,হাদীস নং ১।

                              রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

                              «أَلاَ وَإِنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً: إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الجَسَدُ كُلُّهُ، أَلاَ وَهِيَ القَلْبُ»

                              “হুশিয়ার! শরীরের মধ্যে এক টুকরা গোশত এমন আছে যা ঠিক ও সংশোধিত হলে, গোটা শরীর ঠিক ও সংশোধিত থাকে এবং তা খারাপ হলে গোটা শরীর খারাপ হয়ে যায়। হুশিয়ার! সেটি হচ্ছে অন্তর। বুখারী,খ১,হাদীস নং ৫২।

                              মন বা অন্তর দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক ধরনের অন্তর হচ্ছে, ঈমানের রসে সিক্ত ও আল্লাহ ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ। তা দ্বীন ও ঈমানের প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রতি সকল ত্যাগ তিতিক্ষার জন্য নিবেদিত। সেই মন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ নিষেধ মানার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে এবং বাতিল ও অনইসলামী কাজের প্রতি তার থাকে প্রচন্ড ঘৃণা ও বিদ্রোহের মনোভাব। আরেক ধরনের অন্তর হচ্ছে, মৃত ও অসুস্থ্য। তাকে পাপী অন্তরও বলা যায়। এই অন্তরের প্রধান কাজ হলো, দ্বীন ও ঈমান এবং নেক কাজে অনীহা, অনাগ্রহ ও ইসলাম বিরোধী কাজে উৎসাহবোধ করা। শেষোক্ত ধরনের অন্তর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:

                              ﴿ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ ﴾ [البقرة: ١٠]

                              ‘তাদের অন্তরে রয়েছে রোগ এবং আল্লাহ সে রোগ আরো বাড়িয়ে দেন” [সূরা আল বাকারা:১০]

                              ﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ أَمۡ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقۡفَالُهَآ ٢٤ ﴾ [محمد: ٢٤]

                              “তারা কি কুরআনকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা লাগানো” (সূরা মোহাম্মদ: ২৪)

                              সে জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি করে নিম্নের এই দো‘আ পড়তেন।

                              «يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك»

                              “হে অন্তর পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও।”[ তিরমিযী, কিতাবুল কদর,খ.১৩পৃ.২১, হাদীস নং ৩৮৬৪। 15]

                              এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তরের রোযা বলতে কি বুঝায়? অন্তরের রোযা বলতে বুঝায় অন্তরকে শির্ক থেকে মুক্ত, বাতিল আকীদা বিশ্বাস থেকে দূরে এবং খারাপ ও নিকৃষ্ট ওসওয়াসা মনোভাব ও নিয়ত থেকে খালি রাখা। মনকে গর্ব অহংকার থেকে দূরে, হিংসা-বিদ্বেষ ও লোক দেখানোর মনোবৃত্তি থেকে মুক্ত রাখা। কেননা, তা নেক আমলকে ধ্বংস করে ও জ্বালিয়ে দেয়। তখন গুনাহের কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ উদ্দীপনা থাকবে না।

                              মনকে এ সকল খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখলেই অন্তরের রোযা হয়ে যায়। তখন রোযাদারের মন আল্লাহর ভালোবাসা পূর্ণ থাকে এবং তাকে তাঁর নাম ও গুণাবলীসহ স্মরণ করতে থাকে। অন্তর সর্বদা আল্লাহর সৃষ্ট জগত ও বিচিত্র কুদরত সম্পর্কে ধ্যানে থাকে এবং মন্দ ও খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।

                              মুমিনের অন্তরে ঈমানের রোশনী বা আলো থাকে। এর সাথে অন্ধকার সহ-অবস্থান করতে পারে না। ঈমানী নূর বা আলো বলতে বুঝায়, চিরন্তন পয়গাম, আসমানী শিক্ষা ও আল্লাহর আইনের আলোকবর্তিকা। ঐ নূরের সাথে আল্লাহর তৈরি ফিতরাত বা স্বভাব-প্রকৃতির নূরও যোগ হয়। তখন দুই নূর এক সাথে হয়- এ কথাই মহান আল্লাহ বলেছেন:

                              ﴿ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٖۚ يَهۡدِي ٱللَّهُ لِنُورِهِۦ مَن يَشَآءُۚ ﴾ [النور: ٣٥]

                              ‘নূরের উপরে নূর, আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ নূরের দিকে হেদায়াত দান করেন।’ (সূরা নূর: ৩৫)

                              অন্তর রোযা রাখলে তা আল্লাহর ভালোবাসায় আবাদ হয়। তখন তা বাতির মতো মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করে। দিনে তা সূর্যের মতো আলো দান করে এবং ভোর রাতে সোবহে সাদিকের লালিমার মতো জ্বলতে থাকে। অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা ও ধোঁকাবাজি থেকে দূরে রাখতে পারলে জান্নাতে প্রবেশের রাস্তা প্রশস্ত হবে। অন্তরের রোযার এটাও একটা বিশেষ উদ্দেশ্য। আল্লাহ রোযার মাধ্যমে আমাদের অন্তরকে পূত পবিত্র ও নিষ্কলুষ করুন।


                              খ. পেটের রোযা

                              পেটের রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর উপর দেহের রোযার বিশুদ্ধতা নির্ভর করে। মানুষের জীবন, কাজ-কর্ম, চরিত্র ও আচরণের উপর হালাল ও হারাম খাদ্যের প্রভাব পড়ে। তাই হালাল খাবার খেলে ভাল ও নেক কাজ করার প্রেরণা জাগে। পক্ষান্তরে হারাম খাবার খেলে গুনাহ ও নিষিদ্ধ কাজ করার প্রেরণা জাগে। সে জন্য হালাল খাদ্য গ্রহণের জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।

                              ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون: ٥١]

                              ‘হে রাসূলেরা! তোমরা পবিত্র জিনিস থেকে খাবার গ্রহণ কর এবং নেক কাজ কর।’

                              এখানে পবিত্র খাবারের সাথে নেক আমলকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র ও হালাল খাবারের অনিবার্য দাবী হচ্ছে নেক কাজ করা। (সূরা আল-মোমিনুন: ৫১)

                              মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:

                              ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِلَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ١٧٢ ﴾ [البقرة: ١٧٢]

                              ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার প্রদত্ত পবিত্র রিযিক খাও এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।’ (সূরা আল বাকারা: ১৭২)

                              আল্লাহ পবিত্র জিনিসকে হালাল ও অপবিত্র জিনিসকে হারাম করেছেন। তিনি বলেছেন:

                              ﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

                              ‘আল্লাহ পবিত্র জিনিসসমূহকে হালাল ও অপবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করেছেন।’ (সূরা আ‘রাফ: ১৫৭)

                              পেটের রোযা বলতে বুঝায় পেটকে হারাম খাদ্য ও পানীয় থেকে বাঁচানো। ভুঁড়িভোজ বা অতিরিক্ত আহার না করা, রোযার সময় দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং হারাম জিনিস দিয়ে ইফতার না করা। হারাম খাবার যেমন:

                              আল্লাহ অনেক খাবার হারাম ঘোষণা করেছেন। যেমন- শুকরের গোশত, হাতী, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণী, চিল, বাজ ও কাকসহ পা দিয়ে ছোঁ মেরে শিকার করা বিভিন্ন পাখী, মদ, মলমূত্রসহ যাবতীয় অপবিত্র জিনিস।

                              হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ খাওয়াও হারাম। হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ অনেক।

                              ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

                              Comment

                              Working...
                              X