Announcement

Collapse
No announcement yet.

অনুবাদঃ বৈশ্বিক জিহাদের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ [from-The book-"Trends in Global Jihad Movement"]

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অনুবাদঃ বৈশ্বিক জিহাদের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ [from-The book-"Trends in Global Jihad Movement"]


    আলহামদুলিল্লাহ্*। মহান আল্লহর জন্যই সকল প্রশংসা যিনি তাওফিক দিলেন। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর উপর।


    ১- বৈশ্বিক জিহাদের বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণঃ

    সাক্ষাৎকার গ্রহীতাঃ IS এর মিডিয়া কার্যক্রম ও এর মুখপাত্র আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানি-এর IS সাফল্য সম্পর্কিত প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয়ার তৎপরতার কারণে ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট ভূমি দখল করে যাচ্ছিল। এ সময়ে, আল-কায়দার নেতা আইমান আল যাওয়াহিরি চুপ ছিলেন। এখন, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে যে, IS তার দখলকৃত ভূমি হারাচ্ছে এবং মিডিয়া ক্ষেত্রেও আদনানির শূন্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপর দিকে, আইমান আল যাওয়াহিরি সম্প্রতি “ইসলামি বসন্ত”, “বিজয়ী উম্মতের প্রতি সংক্ষিপ্ত বার্তা” এর মত কিছু বক্তৃতা দানের মাধ্যমে অনেক সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এধরণের অবস্থা কি বোঝায় বলে আপনি মনে করেন?
    আহমেদ আল হামদানঃ এর পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, আদনানি যে সময়ে সক্রিয় ছিল তখন দলটি কিছু সফলতা অর্জন করেছিল, যেমন- ইরাক ও সিরিয়ার অনেক অঞ্চল দখল করা এবং ইরাক ও সিরিয়ার বাইরে শাখা বিস্তার করা। সাধারণত দেখা যায় যে, কোনো কোম্পানি বেশি মুনাফা
    অর্জন করলে তা কোম্পানির বিজ্ঞাপন ও বিপণনের কাজে ব্যয় করা হয়। তাই, এ সময়ে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে IS দিন অতিবাহিত করছিল তাতে আদনানির সক্রিয় ভূমিকা থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। যাই হোক, এ সময়ে আইমান আল যাওয়াহিরির দেখা খুব কমই পাওয়া যেত। আর, এর পিছনে কতগুলো কারণ রয়েছে। যেমনঃ
    • প্রথমত, আল ফাযর সেন্টার (মুজাহিদিনের মিডিয়া ফোরাম) আল-কায়দার সকল শাখার মিডিয়া কার্যক্রম প্রকাশ করত এবং এখানে আল-কায়দার সে সমস্ত উচ্চ পদস্ত লোকও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা ইসলামিক স্টেটের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। আর, এসব লোক আল-কায়দার কোনো শাখার মৌখিক আক্রমণ সংক্রান্ত পাবলিকেশন রিলিজ করার ব্যাপারে দেরি করত। এছাড়া, তারা এ বিষয়ে যেকোনো উত্তর দিতে বিলম্ব করত, এমনকি তা ISIS এর নেতাদের কাছেও পৌঁছে দিত। পরবর্তীতে, ISIS পূর্বপ্রস্তুতি মূলক ব্যবস্থা নিতো যাতে তারা আল ফাযর সেন্টারে প্রেরিত আল-কায়দার যেকোনো প্রকাশনা মোকাবেলা করতে পারে। আস-সাহাব ফাউন্ডেশন কর্তৃক নেয়া শাইখ আইমান আল যাওয়াহিরির সপ্তম সাক্ষাৎকার এ বিষয়ের একটি উদাহরণ যা “ব্যথা ও আশার মাঝে বাস্তবতা” নামে প্রকাশিত হয়। এ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার আগেই ISIS “এটা আমাদের পদ্ধতি না এবং কখনো এমন হবেও না” শিরোনামে আদনানির বক্তব্য প্রকাশ করে। অধিকন্তু, আস-সাহাব ফাউন্ডেশনের নেয়া ঐ সপ্তম সাক্ষাৎকারটি প্রায় ১২ দিন দেরীতে প্রকাশিত হয়েছিল যদিও আদনানির বক্তব্যের আগেই আস-সাহাবের নেয়া সাক্ষাৎকারটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু, আদনানির বক্তব্য সেটিরে আগেই রিলিজ করা হয়েছিল। তাই, এভাবে জিহাদি আন্দোলনের অনেক মানুষের মাঝে ISIS এর প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টিতে আল ফাযর সেন্টার অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। আর এতে আল ফাযর ISIS এর জন্য রক্ষাকবজ হিসেবে পরিণত হয়েছিল।

    আর, যখন আব্দুল্লাহ আল মুহাম্মাদ এর মত একজন সুপরিচিত জিহাদি বিশ্লেষক আলজেরিয়ান জিহাদের মত ISIS এর পদেও বাইরে থেকে কারো অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার ব্যাপারে লেখালেখি করেন তখন, এ সেন্টার একটি আফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশের উদ্ভট পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা আব্দুল্লাহ আল মুহাম্মাদ-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং তার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলার অভিযোগ করে। একারণে, আল-কায়দার শাখাগুলো এই সেন্টারকে অমান্য করতে শুরু করে এবং তারা সামাজিক মিডিয়া সাইটগুলোতে সরাসরি তাদের নিজস্ব দুটি মিডিয়া প্রতিনিধিদের ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের মিডিয়ার বিষয়বস্তু প্রকাশের মাধ্যম পরিবর্তন করে। উদাহরণস্বরূপ, “আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ” নামক অ্যাকাউন্টটি ছিল আল-কায়দার ইয়েমেন শাখার আর “আবু মুসাব আশ-শানকিতি” অ্যাকাউন্টটি ছিল আল-কায়দার খোরাসান শাখার। তাই, তারা তাদের সকল মিডিয়ার কাজ বা প্রকাশনা কোনো মধ্যস্ততা ব্যতিরেকেই সরাসরি প্রকাশ করা শুরুর করল।
    আর, যে বিষয়টি অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় তা হল এসব তথ্য শুধু যারা এসব উৎসের কাছে থাকা ব্যক্তিরাই জানত না বরং জিহাদি ফোরামে ভিজিট করা যেকেউই এসব জানতে পারতো। কিন্তু বাস্তবতা বোঝানোর জন্য আমার এক বন্ধুর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সে বলেছিল যে , জিহাদি দলগুলো এবং তাদের মিডিয়ার সংক্রান্ত বিষয় হল অনেকটা বন্ধ বাক্সের মত যার ভিতরে কি আছে তা এর কাছের মানুষেরাও জানে না। যাই হোক, ISIS এর ফিতনার ফলে সকল গোপন বিষয়ই জনসম্মুখে এসে পড়েছে। আর আমি এটা বলি না যে, শুধু জিহাদি দলগুলোর সমর্থকরাই এসব জেনেছে বরং প্রায় সকলেই জেনেছে। এটা গোয়েন্দা বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য অনেক সুবিধাজনক হয়েছে। কারণ, তাদের শত্রুপক্ষের ঘরে কি আছে তা জানার জন্য আর আগের মত কষ্ট করতে হবে না। এভাবে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দুই প্রতিযোগীর মাঝে সমতা এসে যায় ও প্রত্যেকেই জনসম্মুখে গোপনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারে। এতে, এক পক্ষ অপরপক্ষকে কোনো ব্যাপারে অভিযুক্ত করতে পারে এবং তা প্রতিপক্ষকে নিজেদের প্রতিরক্ষা বা ডিফেন্স করতে বাধ্য করবে। আর ঐ প্রতিপক্ষও তার ডিফেন্সের জন্য অপর পক্ষের গোপন বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। আর, যেকোনো অবস্থায়তেই মহান আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা।
    • দ্বিতীয়ত, আরেকটি ব্যাপার হল যে আল-কায়দার আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক পদগুলো পুনরায় ঠিক করা প্রয়োজন ছিল যা একটি ঝড়ের কারনে ভেঙ্গে গিয়েছিল। পূর্বে আল-কায়দায় এমন কিছু লোক ছিল যারা ISIS এর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু, এখন বিষয়টির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও এসব লোক ইসলামিক স্টেটের আনুগত্য মেনে নিতে শুরু করেছে। আর, তারা এভাবে চালিয়ে যেতে থাকলো আল-কায়দার পদে থাকা অবস্থাতেই। তাই, এমন একটি সময়ে জনসম্মুখে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া ও বিবৃতি প্রকাশ করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ না যখন আপনার আভ্যন্তরীণ পদেই গোলমাল দেখা দিয়েছে ও তা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। ফলে, আভ্যন্তরীণ পদের সমস্যা ঠিক করা ও এই আক্রমণ প্রতিহত করাই প্রথমে প্রাধান্য পেয়েছে। মূলত, আল-কায়দার অন্যান্য শাখার নেতাদের উপর হামলা করা, তাদের অপবাদ দেয়া এবং সন্দেহজনক আনুগত্য ছড়ানো যা অনেক ক্ষেত্রে তাকফিরের পর্যায়েও চলে গিয়েছিল, ISIS এর এমন সব খামখেয়ালীপূর্ণ কাজের কারনে ISIS দ্বারা পূর্বে প্রতারিত কিছু ব্যক্তিবর্গের হুশ ফাইল এলো এবং তারা বলতে লাগল, “হ্যাঁ, এটা সত্য যে আল-কায়দার কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা একমত পোষণ করি না। কিন্তু, তা কখনোই তাকফিরের পর্যায়ে যাওয়ার মত কিছু না”।

    এরপরেও আমি ভাবতাম ও এখনো ভাবি যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল-কায়দার মিডিয়ার ভূমিকা নেতিবাচক ছিল। কারন, তারা এমন আশা করা চালিয়ে গেল যে, ISIS হয়তো আবার সঠিক পথে ফিরে আসবে। পাশাপাশি, আল-কায়দার মিডিয়া যে ভুলের মধ্যে একটি ছিল যে, ISIS তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করত তা অফিসিয়াল পন্থায় মোকাবেলা না করা। উদাহরণস্বরূপ, ISIS এর আনুগত্য স্বীকারের কারণে পদচ্যুত করার আগে আবু উবায়দা আল-লুবানি ছিলেন আল-কায়দার সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন আল-কায়দার খোরাসান শাখার একজন সদস্য ছিলেন। তিনি “আন-নাবা” নামক ISIS এর একটি প্রকাশনায় তার প্রামান্য দলিল প্রকাশ করেন। পরে, “আবু কারিমাহ” নামক তার সাবেক একজন বন্ধু ঐ দলিল অস্বীকার করার উপর একটি আর্টিকেল লেখেন, কিন্তু, এটা তিনি তার ব্যক্তিগত সামর্থের মধ্যে থেকেই “Justpaste” নামক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তিনি আল-লুবানির দলিলের অনেক ভুল ও পরস্পর বিরোধী বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
    যাই হোক, আমি প্রশ্ন করি যে, কোনটির প্রভাব বেশি হত- যখন আল-কায়দা তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে অফিসিয়ালি এ আর্টিকেলটি প্রকাশ করত নাকি যখন লেখক নিজের সামর্থের মধ্যে থেকে তা প্রকাশ করত? এভাবে, তুমি মানুষের মাঝে এ প্রশ্ন জাগিয়ে তুলবে যে, এর প্রমাণ কি যে আবু কারেমাহ আসলেই খোরাসানের একজন মুজাহিদ? এবং এরই বা প্রমাণ কি যে, তিনিই এই আর্টিকেলের আসল লেখক? এটা নিঃসন্দেহে মলা যায় যে, মানুষ আফিসিয়ালি প্রকাশ হওয়া কোনো বিষয়ের উপরই বেশি আস্থা রাখতে পারে। অপর পক্ষে, “দাবিক” এর প্রতিটি ইস্যতেই ISIS আল-কায়দার বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় তোলে, এমনকি তারা আল-কায়দাকে এজেন্ট ও কাফের বলেও অভিযুক্ত করে। কিন্তু, আল-কায়দার দুটি অফিসিয়াল ম্যাগাজিন- “রিসারজেন্স” ও “ইন্সপায়ার” এ এ সম্পর্কিত অভিযোগের উত্তর দেয়া সম্পুর্ণই এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং এতে কিছু নেতা ও সৈনিকদের এমন লেখা থাকে যারা আনঅফিসিয়ালি তা প্রকাশ করেন।
    আমি যদি জিহাদের কোনো সাধারণ অনুসারী হতাম তবে, আমি আল-কায়দার এমন অফিসিয়াল উত্তরের অভাবকে এর দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করতাম এবং এটা আমার মাথায় কখনোই আসত না যে, এ ধরণের আচরণ হল পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে না দেয়ার প্রচেষ্টা যাতে করে ISIS এর সঠিক পথে আসার রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে না যায়। বরং, আমি বলতাম, “এ ব্যাপারে যে কথার ছড়াছড়ি হচ্ছে তা যদি সঠিক না হয় তবে তারা তো অবশ্যই অতি সত্বর এর প্রত্যুত্তর দিত”। কিন্তু, এটা ছিল একটি ভুল নীতি যা জিহাদের অনেক সমর্থকদেরকে ISIS এর অনুসারীতে পরিণত করেছিল।
    সাম্প্রতিক সময়ে ড. আইমানের ঘন ঘন আগমনের ব্যাপারে আমি আমার সাথিদের সাথে বসেছিলাম এবং তাদের বলেছিলাম যে, “চলুন, গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা যেভাবে চিন্তা করে সেভাবে চিন্তা করা যাক। এটা কি হতে পারে যে, ড. আইমানের এই বক্তব্যগুলো সাম্প্রতিক সময়ের? এগুলো কি রেকর্ড করার সামান্য কিছু দিন পরেই প্রকাশ করা হয়েছে? নাকি এগুলো প্রকাশ করার কয়েক সপ্তাহ বা মাস আগে রেকর্ড করা হয়েছে এবং পরে অল্প অল্প করে প্রকাশ করা হয়েছে?” স্পষ্টত, দ্বিতীয় অপশনটিই সঠিক। আর, গোয়েন্দাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা প্রথম ব্যক্তির জন্য নিরাপত্তা বিবেচনায় তার বক্তব্যগুলো অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রকাশ করা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারন, এটা গোয়েন্দা সংস্থাকে ঐ ব্যক্তির লিংক পেতে ও তাকে খুঁজে বের করতে সহায়ক হবে। আল-কায়দার নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা, আব্দুল্লাহ আদম বলেছেন, “এমন দুজন মানুষ পরস্পরের সাথে একই স্থানে মিলবেই যদি তারা উভয়েই চলাচল করতে থাকে”। কিন্তু, এ চলাচলই যদি কমিয়ে দেয়া হয় তবে নিরাপত্তার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
    তোরে হাম্মিং কর্তৃক আহমেদ আল মাহদানের উত্তরের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণঃ
    আল-কায়দার নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে প্রথম দিকে ইসলামিক স্টেট যুদ্ধক্ষেত্রে ও মিডিয়ায় বিজয় অর্জন করেছিল। ফিতনা জন্ম নেয়ার কারনে আল-কায়দার নেতা আইমান আল-যাওয়াহিরি তেমন একটা প্রতিবাদ বা প্রতিক্রিয়া দেখাননি। যাই হোক, এ সম্পর্কে জিহাদি মিডিয়া ফাউন্ডেশনের অবস্থান ও প্রভাব বিবেচনায় আনা গুরুত্বপূর্ণ। আহমেদ আল হামদানের কথা অনুযায়ী, আইমান আল যাওয়াহিরির ইসলামিক স্টেটের আক্রমণের জবাব দেয়ার প্রচেষ্টাকে বিলম্বিত করার পিছনে আল-ফাযর সেন্টার যে ভূমিকা পালন করেছে তা যদি সত্য হয় তাহলে এ বিষয়টি মিডিয়া ফাউন্ডেশনগুলোর একধরণের জটিল ও সংকটপূর্ণ হস্তক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত করে। মজার বিষয় হল, আল ফাযর সেন্টারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে যে, তারা আবু বকর আল-বাগদাদির “ইরাক এবং লিভান্টে অবস্থান” শীর্ষক একটি বক্তব্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করে। যাওয়াহিরির আদেশ ছিল যে, “ইসলামিক স্টেটের অফ ইরাক অ্যান্ড শাম” এর উচিত শুধুমাত্র ইরাকেই অবস্থান করা। আর আবু বকর আল-বাগদাদির “ইরাক এবং লিভান্টে অবস্থান” শীর্ষক ঐ বক্তব্যটি ছিল মূলত যাওয়াহিরির এ আদেশেরই একটি জবাব। এখন, যদি উভয় কথাই সত্য হয় তাহলে বোঝা যায় যে, আল-ফাযরের ভূমিকা ছিল অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক এবং এ সেন্টার পক্ষ নির্বাচনের এক আভ্যন্তরীণ লড়াই লড়ে গিয়েছিল।
    আল হামদানের বক্তব্যে আরো একটি বিষয়ের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায় যা যাওয়াহিরির প্রাথমিক নিষ্ক্রিয়তার কারন সম্পর্কে ধারণা দেয়। ISIS এর প্রতি বর্ধিষ্ণু সহানুভূতির কারনে জনসম্মুখে কোনো কিছু প্রকাশ করার চেয়ে নিজেদের আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা আনা যাওয়াহিরির জন্য বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যদি তিনি ইসলামিক স্টেটের সমালোচনায় বেশি সক্রিয় হতেন তবে আল-কায়দার অনেক সদস্যদের দল ত্যাগের ঝুঁকি থাকতো। যদিও আইমান আল যাওয়াহিরির নিষ্ক্রিয়তাকে অনেকে তাদের দলীয় দুর্বলতা হিসেবে দেখেছিলেন কিন্তু তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এমন বিপদের জন্ম দিতেই পারতো।
    হয়তো আল-কায়দা এ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তেমন দ্রুত বুঝে উঠতে পারেনি। অপরপক্ষে, ISIS যোগাযোগ ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর সকল রাস্তাই যতটা সম্ভব কাজে লাগিয়েছিল। আর, অফিসিয়াল মিডিয়া সেন্টারগুলোর ব্যবহার করে অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে আল-কায়দা দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিল ও তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুব রক্ষণশীল ভূমিকা রেখেছিল। এই পয়েন্টে আহমেদ আল হামদান সঠিক ছিলেন।
    সার কথা হল যে, যাওয়াহিরি বা তার সংগঠন নিজেদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শাখার আক্রমণ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে এর মিডিয়া ফাউন্ডেশন ও কিছু অনুসারীর দল বিমুখতা আল-কায়দাকে এক কোণঠাসা অবস্থানে উপস্থিত করেছিল। কিন্তু, এ স্রোতের পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। ইসলামিক স্টেট তার দম্ভ হারিয়ে ফেলেছে। আর আইমান আল যাওয়াহিরির পুর্বের অবস্থান ও ভূমিকার যথার্থতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে যিনি দীর্ঘ সময় ব্যাপী পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এবং ধিরে ধিরে জনসমর্থন বাড়িয়েছেন ও দলচ্যুত সদস্যদের পুনরায় ফিরিয়েছেন। দল দুটির নেতাদের প্রকাশিত বিবৃতির সংখ্যা থেকে এ বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। যখন, বাগদাদি অথবা আদনানির (মৃত্যুর পূর্বে) দেয়া বিবৃতির সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল তখন সাম্প্রতিক সময়ে যাওয়াহিরি দুটি লেকচার সিরিজ প্রকাশ করেন। এর প্রথমটি ছিল “ইসলামিক বসন্ত” এবং পরবর্তীটি ছিল “বিজয়ী উম্মাহের প্রতি সংক্ষিপ্ত বার্তা”। ফলে, এমন ভাব আবার প্রকাশিত হতে থাকে যে, শাইখ আইমান আল যাওয়াহিরিই পুনরায় বৈশ্বিক জিহাদি আন্দোলনের মূল আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
    .................................................. .................................................. ........
    ২- “সন্ত্রাসবাদের উৎপাদক” সিরিজ, তৃতীয় অধ্যায়


    আহমেদ আল হামদান কর্তৃক তোরে হাম্মিং-এর বিশ্লেষণের জবাব ও জিহাদি মিডিয়ার ভূমিকা সম্পর্কিত ব্যাখ্যাঃ
    “ইরাক এবং শামে অবস্থান” শিরোনামে বাগদাদির বক্তব্যটি ইসলামিক স্টেট স্বাধীনভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং তারা তাদের মিডিয়ার কার্যক্রম দ্রুত ও সরাসরি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম ছিল। তাই, তাদের এ অবস্থা ঐ ব্যক্তির থেকে আলাদা যিনি কেবলমাত্র আল ফাযর সেন্টারের মাধ্যমেই তার মিডিয়া সংক্রান্ত কাজ প্রকাশ করতে বদ্ধ পরিকর। তাই, যদি এই ব্যক্তি তার কর্মপন্থা পরিবর্তন করতে চায় তবে অন্য কোনো মিডিয়ার খোজ পাওয়াটা যেমন কঠিন তেমনি নতুন মাধ্যমকে পুরাতন মিডিয়া মাধ্যমের সাথে প্রতিস্থাপন করার আগে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করাও জরুরী। আল-কায়দার মিডিয়া প্রকাশনার ক্ষেত্রে আল ফাযর সেন্টারই একমাত্র মাধ্যম ছিল। আর এ বিষয়টির সুবিধা নিয়েছিল আল ফাযর সেন্টারের কিছু ব্যক্তি যারা ইসলামিক স্টেটের প্রতি সহানুভব ছিলেন। ফলে তারা ইসলামিক স্টেট সম্পর্কিত আল-কায়দার বিভিন্ন শাখার মাঝের যোগাযোগ এবং তাদের প্রকাশিত যেকোনো বিষয়ের প্রকাশ হওয়াকে বিলম্বিত এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বাঁধাগ্রস্থ করতো। এ ব্যাপারে কিছু উদাহরণ হল-
    আবু উমার আল নাজদি নামক ইয়েমেনের এক মুজাহিদ ভাই "বিশ্বস্ত সঙ্গি" শিরোনামে টুইটারে একটি লেখা পোস্ট করেন যা টুইটারে থাকা অন্যান্য ইয়েমেনের মুজাহিদ ভাইয়েরাও পড়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। যেমন- "মুহাম্মাদ আল মালিকি"- যিনি প্রথমে ছিলেন আফগানিস্থানে এবং পরে ইয়েমেনে চলে যান। এই ভাই সিরিয়ায় অবস্থানরত "মুহসিন আল ফাদি" নামক আল-কায়দার একজন অভিজ্ঞ ও বয়োজেষ্ঠ সদস্যের মাধ্যমে আল-কায়দার আরব ভূমধ্য সাগরীয় শাখার নেতাকে একটি গোপন চিঠি পাঠান যাতে তিনি বলেন-
    "এই চিঠির সাথে সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে- এই ফিতনার প্রথম দিনের ডাঃ আইমানের নিকটে শাইখ আবু খালিদ আল সুরি(আল্লাহ তাকে কবুল করুন) এর পাঠানো চিঠি, আল নুসরা ও ইসলামিক স্টেটের বিবৃতি ও দাবি যা ডাঃ আইমানের কাছে পূর্ববর্তী সময়ে পাঠানো হয়েছিল, আল-জাওলানির একটি বার্তা যেখানে তিনি এ সমস্যার কারণগুলো পরিষ্কার করে দিয়েছেন এবং আজিজ আল কাতারি ও (...) এর অডিও সাক্ষ্যপ্রমাণ। আর আপনাকে এ বিষয়টি জানাচ্ছি যে, (...) নামক আল ফাযর সেন্টারের নেতৃবৃন্দের একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে এই চিঠি আগে একবার পাঠানোর পরেও আমি আবার এটি পাঠাচ্ছি একারণে যাতে করে আমি নিশ্চিত হতে পারি যে চিঠিটি আপনার কাছে পৌঁছিয়েছে।"
    আবু উমার আল নাজদি উপরের চিঠিটির সারাংশ হিসেবে মন্তব্য করেন যে-
    আল ফাযর সেন্টারের পথ ধরে সৃষ্ট ইসলামিক স্টেটের ফিতনার প্রথম সময়ে লেখক ঐ চিঠিটির সাথে যেসব সংযুক্তি ও সাক্ষ্যপ্রমাণ পাঠিয়েছিল তা কখনোই শাইখ আবু বাসির (উহাইশি) এর কাছে পৌঁছায়নি বরং সেগুলো কেবল এই চিঠির মাধ্যমেই পৌঁছিয়েছিল।। এবং, তিনি সবাইকে আল ফাযত সেন্টারের সাথে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছেন। এ ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন যে এই সেন্টারে অভ্যন্তরে সন্দেহজনক ও ভীতিকর কর্মকাণ্ড ঘটছে যা কোনো নতুন সদস্যের দ্বারা নয় বরং পুরাতন ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারাই সৃষ্ট। সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্যই কাম্য।
    এসব ঘটনা আল-কায়দার ইয়েমেন শাখার মিডিয়া প্রকাশনা আল ফাযর সেন্টারের মাধ্যমে প্রকাশ করা বন্ধ করে নিজেদের "আব্দুল্লাহ মুজাহিদ" অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রকাশ করার কারণ স্পষ্ট করে দেয়।
    তাই, যদি ইসলামিক স্টেট আল ফাযর সেন্টারের মাধ্যম বাদে অন্য কোনোভাবেই তাদের মিডিয়া কর্মকাণ্ড প্রকাশ করতে একেবারেই অক্ষম হত এবং এটা সত্বেও আল ফাযর মিডিয়া তাদের মিডিয়ার কাজগুলো প্রকাশ না করতো তখন আমাদের ভিতরে একধরণের সন্দেহের সৃষ্টি হতো এবং এই প্রশ্ন জাগত যে, "এই সেন্টার কি আসলেই ইসলামিক স্টেটের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল?"
    চমকপ্রদ বিষয়টি হল যে, যোদ্ধাদের ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার কারণগুলো সম্পর্কে তার সাথে আমার মতের মিল রয়েছে। আর দেখুন, এই নেতা আবু বাসিরকে কি বলেছিল-"এখন, মুজাহিদিনের তৃতীয় প্রজন্ম ইসলামিক স্টেটের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এবং এর পিছনে কতগুলো কারণ রয়েছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- ইসলামিক স্টেটের শক্তিশালী মিডিয়া, আল-কায়দার নেতাদের এ সম্পর্কে নিরব অবস্থান এবং ইসলামিক স্টেটের পদ্ধতিগত ভুলগুলো পরিষ্কার না করা। এগুলো জাতির যুবকদেরকে ইসলামিক স্টেটের দিকে ধাবিত করছে এবং জিহাদি আন্দোলন এসব ভুল সংক্রান্ত নিরবতা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। আর শাইখ হারিথ আল নাদহারি এর বিবৃতি প্রকাশের জন্য মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন যা এ সংক্রান্ত বিষয় ও বেশ কিছু নিয়ম পরিষ্কার করে দিয়েছে। আর কেন আপনি আল বাগদাদির মিথ্যা খিলাফাহ- এর ব্যাপারে কথা বললেন না এবং এ সংক্রান্ত নীতিগুলো পরিষ্কার করে দিলেন না? আল-কায়দায় উম্মাহের বিবেকবান, আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী যুবকদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলা থেকে বিরত হবেন না যেহেতু, এ ধরণের কর্মপন্থা ইসলামিক স্টেটের নির্বুদ্ধিতা ও হটকারী আচরণের সামনে কার্যকরী হবে না।

    ইংশাআল্লহ, এখন থেকে অন্য অধ্যায় থেকে অনুবাদ শুরু করবো।
    কিছু অনুরোধঃ

    ১- ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন। বিশেষ করে বানান ও কাল সঙ্ক্রান্ত বিষয়গুলো। যেমন- বিবৃতি "প্রকাশ করলেন" হবে নাকি "প্রকাশ করেছিলেন।"
    ২- আবু ফাতিমা ভাইকে কেউ দয়া করে inform করবেন। কারণ, ফোরামে তার কোনো activity দেখতে পাচ্ছিনা। তিনি হয়তো কোনো কাজে আছেন। তাই, আপনারা যদি কেউ তাকে সরাসরি চেনেন তাহলে শুধু তাকে বিষয়টি মনে করিয়ে দিবেন, ইংশাআল্লহ।
    আর, বিষয়টি একটু জরুরী। কারণ, তিনি আর করতে পারবেন কিনা বা কতটুকু করেছেন এটা আমাদের পরবর্তি কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
    ৩- আমাদের হেদায়েতের জন্য দুয়া করবেন।



  • #2
    ভাই মাফ করবেন দেরি হওয়ার জন্য। আমার অংশ যেটা পোষ্ট করা হয়েছে সেটা একটু চেক করে দেখার অনুরোধ রইল। আমি অনুবাদক হিসেবে যথেষ্ট পারদর্শী নই। তবে চেষ্টা ছিল যতটা সম্ভব ত্রুটিমুক্ত রাখার।
    নোটঃ আপনি একটা পোষ্টে আমাকে আমার অংশটুকু পোষ্ট করতে বলেছিলেন। সেটা আমি ইতোপূর্বে খেয়াল করি না। গতকাল খেয়াল করেছি। হয়ত এর আগে খেয়াল করলে আগে পোষ্ট করা যেত। আমি আপনার কাছে এর আগে জানতে চাইছিলাম যে কিভাবে এটা আপনাকে পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু সেখানে তেমন কোন রেসপন্স না পাওয়ায় কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম। মাফ চাইছি ভাই আবার।

    Comment


    • #3
      জাঝাকাল্লাহ
      كتب عليكم القتال وهو كره لكم

      Comment

      Working...
      X