Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুসলিম ভূমিতে দখলদার ও জঙ্গিতত্ত্ব

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুসলিম ভূমিতে দখলদার ও জঙ্গিতত্ত্ব

    মুসলিম ভূমিতে দখলদার ও জঙ্গিতত্ত্ব
    ourislam24.com
    সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭

    যুবায়ের আহমাদ

    তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মুসলমানদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো আজ দখল ষড়যন্ত্রের শিকার। ইহুদিরা ব্রিটেনের মদদে ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করে স্বাধীন ফিলিস্তিনের মোট ভূখেণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হয়ে যায়।

    ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলে বিষয়টি সুরাহা করতে ‘এগিয়ে’ আসে জাতিসংঘ। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ১০ শতাংশ জমির মালিকদের জন্য গোটা ফিলিস্তিনের অর্ধেকেরও বেশি ভূমি বরাদ্দ করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। রাতারাতি ইসরায়েলকে তারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।

    কিন্তু যে স্বাধীন রাষ্ট্রের জায়গা দখল করে ইসরায়েল নামক বিষফোঁড়ার জন্ম দেওয়া হলো সে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আজও দেয়নি জাতিসংঘ।

    ইসরায়েলিদের ট্যাঙ্ক বা কামানের বিপরীতে শান্তিকামী ফিলিস্তিনীরা যখনই আত্মরক্ষার জন্য ইট পাটকেল হাতে নিয়েছে তখন ইহুদি নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মিডিয়া ট্যাঙ্ক বা কামানের দিকে তাদের ক্যামেরাটা না ধরে ট্যাঙ্কের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়া লোকটির ছবি তুলে পৃথিবীবাসীকে দেখিয়েছে, স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনীরাই ‘মস্তবড় জঙ্গি’।

    আর জঙ্গিদের নিধনে তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপোষহীন। তাই ফিলিস্তিনীদের নিধনও ‘বৈধ’। জঙ্গি তকমায় ঢাকা পড়ে গেল ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার অধিকার প্রসঙ্গ।

    প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভূসর্গ হয়েও দখলদারের আক্রমণে আক্রান্ত কাশ্মীর আজ ধ্বংসস্তুপে পরিণত। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় কাশ্মীরকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে না রেখে একে পূর্ণ আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে রাখা হয়। রাখা হয় তাদের জন্য আলাদা জাতীয় পতাকা ও স্বায়ত্মশাসনের ব্যবস্থা।

    কাশ্মীরের সরকারপ্রধানের পদকে রাখা হয় প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎ কাশ্মীরিদের বুকেরর ওপর জগদ্দল পাথরের মতোই চেপে বসে ভারতীয় দখলদার বাহিনী। রাতের অন্ধকারে কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহকে তার পদ থেকে অপসারণ করে গ্রেফতার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

    কাশ্মীরের স্বতন্ত্র মর্যাদা লুপ্ত করে একে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে এর প্রধানমন্ত্রীর পদকে করা হয় মূখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করা হয় ‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ’। কেড়ে নেওয়া হয় কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার অধিকার।

    কাশ্মীরিরা তা মেনে নেয়নি। তারা নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের চেষ্টাকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে দখলদার ভারত। স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের অব্যাহত চেষ্টায় ক্রমেই যখন স্বাধীন কাশ্মীরের সম্ভাবনার সূর্যোদয় হয়েছেভ তখনই প্রয়োগ করা হয় সর্বশেষ অবলম্বনটি। দিয়ে দেয়া হলো ‘জঙ্গি’ তকমা। ব্যাস। কেল্লা ফতে।

    দখলদার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেই জঙ্গি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভুলে গেল যে এদের স্বাধীন ভূমি ছিল, যাদের বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম করছে তারা দখলদার। যেহেতু কাশ্মীরিরা ‘জঙ্গি’ তাই তাদের নিধনের আর কোনো বাধা রইল না। এখানেও ‘জঙ্গি’ শব্দের নিচে চাপা পড়ে গেল কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার অধিকারের কথা।

    রোহিঙ্গা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম বড় সমস্যা। তারা তো তাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র আরাকানে (বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ) হাজার বছর ধরে বংশানুক্রমেকভাবে বসবাস করে আসছিল। আরাকানের বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হওয়া এবং এতে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকায় এতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এর পাশে থাকা বার্মার দখলদার সরকার ১৭৮৪ সালে স্বাধীন রাষ্ট্রটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করে নেয়।

    দখলদার বার্মিজরা ক্রমেই আরাকানিদের সুযোগ সুবিধার পথ সংকোচিত করতে থাকে। সর্বশেষ ১৯৮২ সালে তথাকথিত নিউ সিটিজেনশিপ ল বা নতুন নাগরিত্ব আইন প্রণয়ন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বটুকুও কেড়ে নেয়। তাদের বিদেশী হেসেবে গণ্য করা হয়। হাজার বছরের আবাসভূমিতে পরবাসী হয়ে পড়ে তারা। তারা যখনই তাদের মৌলিক অধিকারের দাবি করেছে তখনই তাদের ওপর নেমে এসেছে আইয়ামে জাহিলিয়াতকে হার মানানো নির্যাতন।

    বার্মা সরকার স্বাধীন আরাকান দখল করে আরাকানীদের জন্মগত অধিকার কেড়ে নিয়ে চরম মানবতাবিরোধী অন্যায় করেছে। এরপরও মিয়ানমার সরকার চাইলে আরাকানীদের শান্তিপূর্ণভাবে থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু শতবছরেরও বেশি সময়ের নির্দয় আচরণে একটি বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট যে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের অধিকার পাওয়ার আশা আর করা যায় না।

    দখলদার মিয়ানমার সরকারের কর্তৃক তাদের নাগরিকত্বসহ সব অধিকার কেড়ে নেওয়া ও তাদের ওপর চালানো ভয়াল নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে করতে যখন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল তখনই তারা প্রতিরোধের পথ বেছে নিল। এবার তার স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র তুলে নিয়ে ন্যায়যুদ্ধ শুরু করেছে।

    বিশ্বের কাছে ব্যাপারটা মোটামুটে স্পষ্ট যে স্বাধীন আরাকান প্রতিষ্ঠাই রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের সর্বোত্তম পথ। কিস্তু এখানেও ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদী’ শব্দ আরাকানীদের স্বাধীনতার অন্তরায় হয়ে যেতে পারে। কারণ, আরাকানের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান।

    স্বাধীন রাষ্ট্র হলে সেটা হবে মুসলিম রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মোড়লরা চাবে না যে নতুন আরেকটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক। অথচ তারাই পূর্বতিমূরের স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে কথা বলেছে। ইন্দোনেশিয়াকে ভেঙ্গে স্বাধীন পূর্ব তিমুর প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

    পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতাকামীদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আনুকূল্য পেতে কোনো সমস্যা হয়নি কারণ তারা মুসলমান নয়, খ্রিস্টান।

    আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আরাকানের স্বাধীনতাকামীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে তুলে ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার মিয়ানমার। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘সন্ত্রাস দমনের নামে রাখাইনে গণহত্যা’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট করে ওঠে আসে। অচিরেই হয়তো মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াও স্বাধীনতাকামী আরাকানীদের ‘জঙ্গি’ তকমাটা দিয়ে দেবে। এটা করা গেলেই আরাকানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ যুদ্ধ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যাবে।

    পৃথিবীতে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বলতে যদি কিছু থাকে তাহলে তা বৌদ্ধদের মধ্যেই আছে। মুসলিমরা ‘জঙ্গি’ বা সন্ত্রাসী এর সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকলেও অকারণে তাদের ‘ধর্মীয় চরমপন্থী’ বলেই অনেকে তৃপ্তি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াও অনায়াসেই মুসলমানদের ‘জঙ্গি’ বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন তারা বোধ করে না।

    অথচ হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মুসলমানদের জবাই করে হিংস্র বৌদ্ধরা যে উৎসবে মেতে উঠে এর হাজারো প্রমাণ থাকলেও সেই প্রকৃত সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের কিন্তু ধর্মীয় সন্ত্রাসী বলবে না। শুধু মুসলমানদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বন্ধ করতেই শান্তিকামী মুসলমানদের সঙ্গে শব্দগুলো প্রয়োগ করে।

    আমাদের দেশের কতিপয় মিডিয়ার কাছেও ‘জঙ্গি’ শব্দটি একটা বড় পুঁজি। তারা সন্ত্রাসী বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করেন। কারণে অকারণে কাওকে জঙ্গি বা জিহাদী বলে চালিয়ে দিতে পারলেই তারা মহাখুশি। ইসলামী বই দেখলেই তাদের মনে হয় ‘জিহাদী বই’।

    দৈনিক জনকণ্ঠ ১৫-১০-২০১৫ ‘ফুটপাথে জিহাদী বইয়ের ছড়াছড়ি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বিখ্যাত আরবি ব্যাকরণের গ্রন্থ ‘শরহে মিআতে আমেল’ ও দোয়ার বই ‘হিসনুল মুসলিম’কে ‘জিহাদী বই’ হিসেবে প্রকাশ করে। এটা অজ্ঞতা নাকি ধৃষ্টতা?

    আরবি ব্যাকরণ ও দোয়ার বই যদি ‘জিহাদি বই’ তাহলে তো তাদের এটিই মেনে নিতে হবে, সরকারের অর্থে পরিচালিত আলিয়া মাদরাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জিহাদি বই’ পড়ানো হচ্ছে।

    আসলে এদের অজ্ঞতার কারণেই ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদি’ শব্দগুলো আজ সবচেয়ে মজলুম শব্দে পরিণত। জঙ্গি শব্দের অর্থ হলো যোদ্ধা। বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘জঙ্গ’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে যুদ্ধ বা লড়াই। আর জঙ্গি শব্দের অর্থ হলো ‘রণনিপুণ’; ‘রণদক্ষ’। (বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা : ৪৪৮)।

    মহান স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও জঙ্গি বলে অভিহিত করা হতো। একাত্তরের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ‘শেখ মুজিব প্রতিদিন পেসিডেন্ট ভবনে যাচ্ছেন আলোচনা করতে, বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলছেন আলোচনা এগোচ্ছে; ওদিকে আন্দোলনকারী জঙ্গী জনতাকে বলছেন দাবি আদায়ে জন্য আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ (একাত্তরের দিনগুলি : ৩৬)।

    অন্যত্র লিখেছেন, ‘(মা ছেলেকে বলেছেন) তোরা হলি জঙ্গী বাঙ্গালি, খালি মার-মার কাট কাট।’ (একাত্তরের দিনগুলি : ৩৭)।

    এখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গী বা ন্যয়যোদ্ধা বলে অভিহিত করেছেন। সে অর্থে আইএস (ইসলামিক স্টেট), শোলাকিয়া বা হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা জঙ্গি নয়, সন্ত্রাসী।

    জিহাদ হলো সন্ত্রাস বা দখলদারের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত লড়াই। জিহাদী বই হলো পবিত্র কুরআন শরিফ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জালেমদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন করতে আমাদের বাপ-দাদারা জিহাদ করেছেন।

    আসলে মানবতাবিরোধী ইহুদি খ্রিস্টান সন্ত্রাসীরা ভেবে দেখেছে যে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একমাত্র অন্তরায় হলো জিহাদ। জিহাদ থাকলে তারা সন্ত্রাস অব্যাহত করতে পারবে না। তাই তারা এ শব্দগুলোর নেতিবাচক ব্যবহার শুরু করেছে।

    ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদী’ শব্দের অপব্যবহারের মাধ্যমে দখলদার সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ‘বৈধ’ করার এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীর পৃথিবীকে হয়তো আরও চরম মূল্য দিতে হবে। মিয়ানমার ও ইসরায়েলের মতো প্রকৃত সন্ত্রাসীরা আড়ালেই থেকে গিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রকে ক্ষতবিক্ষত করবে।

    লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্বারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ড বাজার (আ.গণি রোড), গাজীপুর

  • #2
    Originally posted by ফুরসান৪৭ View Post
    মুসলিম ভূমিতে দখলদার ও জঙ্গিতত্ত্ব
    ourislam24.com
    সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭

    যুবায়ের আহমাদ

    তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মুসলমানদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো আজ দখল ষড়যন্ত্রের শিকার। ইহুদিরা ব্রিটেনের মদদে ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করে স্বাধীন ফিলিস্তিনের মোট ভূখেণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হয়ে যায়।

    ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হলে বিষয়টি সুরাহা করতে ‘এগিয়ে’ আসে জাতিসংঘ। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ১০ শতাংশ জমির মালিকদের জন্য গোটা ফিলিস্তিনের অর্ধেকেরও বেশি ভূমি বরাদ্দ করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। রাতারাতি ইসরায়েলকে তারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়।

    কিন্তু যে স্বাধীন রাষ্ট্রের জায়গা দখল করে ইসরায়েল নামক বিষফোঁড়ার জন্ম দেওয়া হলো সে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আজও দেয়নি জাতিসংঘ।

    ইসরায়েলিদের ট্যাঙ্ক বা কামানের বিপরীতে শান্তিকামী ফিলিস্তিনীরা যখনই আত্মরক্ষার জন্য ইট পাটকেল হাতে নিয়েছে তখন ইহুদি নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মিডিয়া ট্যাঙ্ক বা কামানের দিকে তাদের ক্যামেরাটা না ধরে ট্যাঙ্কের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়া লোকটির ছবি তুলে পৃথিবীবাসীকে দেখিয়েছে, স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনীরাই ‘মস্তবড় জঙ্গি’।

    আর জঙ্গিদের নিধনে তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপোষহীন। তাই ফিলিস্তিনীদের নিধনও ‘বৈধ’। জঙ্গি তকমায় ঢাকা পড়ে গেল ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার অধিকার প্রসঙ্গ।

    প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভূসর্গ হয়েও দখলদারের আক্রমণে আক্রান্ত কাশ্মীর আজ ধ্বংসস্তুপে পরিণত। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় কাশ্মীরকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে না রেখে একে পূর্ণ আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে রাখা হয়। রাখা হয় তাদের জন্য আলাদা জাতীয় পতাকা ও স্বায়ত্মশাসনের ব্যবস্থা।

    কাশ্মীরের সরকারপ্রধানের পদকে রাখা হয় প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎ কাশ্মীরিদের বুকেরর ওপর জগদ্দল পাথরের মতোই চেপে বসে ভারতীয় দখলদার বাহিনী। রাতের অন্ধকারে কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহকে তার পদ থেকে অপসারণ করে গ্রেফতার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

    কাশ্মীরের স্বতন্ত্র মর্যাদা লুপ্ত করে একে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে এর প্রধানমন্ত্রীর পদকে করা হয় মূখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করা হয় ‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ’। কেড়ে নেওয়া হয় কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার অধিকার।

    কাশ্মীরিরা তা মেনে নেয়নি। তারা নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের চেষ্টাকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে দখলদার ভারত। স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের অব্যাহত চেষ্টায় ক্রমেই যখন স্বাধীন কাশ্মীরের সম্ভাবনার সূর্যোদয় হয়েছেভ তখনই প্রয়োগ করা হয় সর্বশেষ অবলম্বনটি। দিয়ে দেয়া হলো ‘জঙ্গি’ তকমা। ব্যাস। কেল্লা ফতে।

    দখলদার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেই জঙ্গি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভুলে গেল যে এদের স্বাধীন ভূমি ছিল, যাদের বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম করছে তারা দখলদার। যেহেতু কাশ্মীরিরা ‘জঙ্গি’ তাই তাদের নিধনের আর কোনো বাধা রইল না। এখানেও ‘জঙ্গি’ শব্দের নিচে চাপা পড়ে গেল কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার অধিকারের কথা।

    রোহিঙ্গা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম বড় সমস্যা। তারা তো তাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র আরাকানে (বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ) হাজার বছর ধরে বংশানুক্রমেকভাবে বসবাস করে আসছিল। আরাকানের বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হওয়া এবং এতে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকায় এতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এর পাশে থাকা বার্মার দখলদার সরকার ১৭৮৪ সালে স্বাধীন রাষ্ট্রটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করে নেয়।

    দখলদার বার্মিজরা ক্রমেই আরাকানিদের সুযোগ সুবিধার পথ সংকোচিত করতে থাকে। সর্বশেষ ১৯৮২ সালে তথাকথিত নিউ সিটিজেনশিপ ল বা নতুন নাগরিত্ব আইন প্রণয়ন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বটুকুও কেড়ে নেয়। তাদের বিদেশী হেসেবে গণ্য করা হয়। হাজার বছরের আবাসভূমিতে পরবাসী হয়ে পড়ে তারা। তারা যখনই তাদের মৌলিক অধিকারের দাবি করেছে তখনই তাদের ওপর নেমে এসেছে আইয়ামে জাহিলিয়াতকে হার মানানো নির্যাতন।

    বার্মা সরকার স্বাধীন আরাকান দখল করে আরাকানীদের জন্মগত অধিকার কেড়ে নিয়ে চরম মানবতাবিরোধী অন্যায় করেছে। এরপরও মিয়ানমার সরকার চাইলে আরাকানীদের শান্তিপূর্ণভাবে থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু শতবছরেরও বেশি সময়ের নির্দয় আচরণে একটি বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট যে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের অধিকার পাওয়ার আশা আর করা যায় না।

    দখলদার মিয়ানমার সরকারের কর্তৃক তাদের নাগরিকত্বসহ সব অধিকার কেড়ে নেওয়া ও তাদের ওপর চালানো ভয়াল নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে করতে যখন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল তখনই তারা প্রতিরোধের পথ বেছে নিল। এবার তার স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র তুলে নিয়ে ন্যায়যুদ্ধ শুরু করেছে।

    বিশ্বের কাছে ব্যাপারটা মোটামুটে স্পষ্ট যে স্বাধীন আরাকান প্রতিষ্ঠাই রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের সর্বোত্তম পথ। কিস্তু এখানেও ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদী’ শব্দ আরাকানীদের স্বাধীনতার অন্তরায় হয়ে যেতে পারে। কারণ, আরাকানের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান।

    স্বাধীন রাষ্ট্র হলে সেটা হবে মুসলিম রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মোড়লরা চাবে না যে নতুন আরেকটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক। অথচ তারাই পূর্বতিমূরের স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে কথা বলেছে। ইন্দোনেশিয়াকে ভেঙ্গে স্বাধীন পূর্ব তিমুর প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

    পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতাকামীদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আনুকূল্য পেতে কোনো সমস্যা হয়নি কারণ তারা মুসলমান নয়, খ্রিস্টান।

    আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আরাকানের স্বাধীনতাকামীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে তুলে ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার মিয়ানমার। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘সন্ত্রাস দমনের নামে রাখাইনে গণহত্যা’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট করে ওঠে আসে। অচিরেই হয়তো মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াও স্বাধীনতাকামী আরাকানীদের ‘জঙ্গি’ তকমাটা দিয়ে দেবে। এটা করা গেলেই আরাকানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ যুদ্ধ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যাবে।

    পৃথিবীতে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বলতে যদি কিছু থাকে তাহলে তা বৌদ্ধদের মধ্যেই আছে। মুসলিমরা ‘জঙ্গি’ বা সন্ত্রাসী এর সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকলেও অকারণে তাদের ‘ধর্মীয় চরমপন্থী’ বলেই অনেকে তৃপ্তি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াও অনায়াসেই মুসলমানদের ‘জঙ্গি’ বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন তারা বোধ করে না।

    অথচ হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মুসলমানদের জবাই করে হিংস্র বৌদ্ধরা যে উৎসবে মেতে উঠে এর হাজারো প্রমাণ থাকলেও সেই প্রকৃত সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের কিন্তু ধর্মীয় সন্ত্রাসী বলবে না। শুধু মুসলমানদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বন্ধ করতেই শান্তিকামী মুসলমানদের সঙ্গে শব্দগুলো প্রয়োগ করে।

    আমাদের দেশের কতিপয় মিডিয়ার কাছেও ‘জঙ্গি’ শব্দটি একটা বড় পুঁজি। তারা সন্ত্রাসী বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করেন। কারণে অকারণে কাওকে জঙ্গি বা জিহাদী বলে চালিয়ে দিতে পারলেই তারা মহাখুশি। ইসলামী বই দেখলেই তাদের মনে হয় ‘জিহাদী বই’।

    দৈনিক জনকণ্ঠ ১৫-১০-২০১৫ ‘ফুটপাথে জিহাদী বইয়ের ছড়াছড়ি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বিখ্যাত আরবি ব্যাকরণের গ্রন্থ ‘শরহে মিআতে আমেল’ ও দোয়ার বই ‘হিসনুল মুসলিম’কে ‘জিহাদী বই’ হিসেবে প্রকাশ করে। এটা অজ্ঞতা নাকি ধৃষ্টতা?

    আরবি ব্যাকরণ ও দোয়ার বই যদি ‘জিহাদি বই’ তাহলে তো তাদের এটিই মেনে নিতে হবে, সরকারের অর্থে পরিচালিত আলিয়া মাদরাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জিহাদি বই’ পড়ানো হচ্ছে।

    আসলে এদের অজ্ঞতার কারণেই ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদি’ শব্দগুলো আজ সবচেয়ে মজলুম শব্দে পরিণত। জঙ্গি শব্দের অর্থ হলো যোদ্ধা। বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘জঙ্গ’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে যুদ্ধ বা লড়াই। আর জঙ্গি শব্দের অর্থ হলো ‘রণনিপুণ’; ‘রণদক্ষ’। (বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা : ৪৪৮)।

    মহান স্বাধীনতার মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও জঙ্গি বলে অভিহিত করা হতো। একাত্তরের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ‘শেখ মুজিব প্রতিদিন পেসিডেন্ট ভবনে যাচ্ছেন আলোচনা করতে, বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলছেন আলোচনা এগোচ্ছে; ওদিকে আন্দোলনকারী জঙ্গী জনতাকে বলছেন দাবি আদায়ে জন্য আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ (একাত্তরের দিনগুলি : ৩৬)।

    অন্যত্র লিখেছেন, ‘(মা ছেলেকে বলেছেন) তোরা হলি জঙ্গী বাঙ্গালি, খালি মার-মার কাট কাট।’ (একাত্তরের দিনগুলি : ৩৭)।

    এখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গী বা ন্যয়যোদ্ধা বলে অভিহিত করেছেন। সে অর্থে আইএস (ইসলামিক স্টেট), শোলাকিয়া বা হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা জঙ্গি নয়, সন্ত্রাসী।

    জিহাদ হলো সন্ত্রাস বা দখলদারের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত লড়াই। জিহাদী বই হলো পবিত্র কুরআন শরিফ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জালেমদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন করতে আমাদের বাপ-দাদারা জিহাদ করেছেন।

    আসলে মানবতাবিরোধী ইহুদি খ্রিস্টান সন্ত্রাসীরা ভেবে দেখেছে যে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একমাত্র অন্তরায় হলো জিহাদ। জিহাদ থাকলে তারা সন্ত্রাস অব্যাহত করতে পারবে না। তাই তারা এ শব্দগুলোর নেতিবাচক ব্যবহার শুরু করেছে।

    ‘জঙ্গি’ বা ‘জিহাদী’ শব্দের অপব্যবহারের মাধ্যমে দখলদার সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ‘বৈধ’ করার এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীর পৃথিবীকে হয়তো আরও চরম মূল্য দিতে হবে। মিয়ানমার ও ইসরায়েলের মতো প্রকৃত সন্ত্রাসীরা আড়ালেই থেকে গিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রকে ক্ষতবিক্ষত করবে।

    লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্বারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ড বাজার (আ.গণি রোড), গাজীপুর
    জাজাকাল্লাহ।

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ । আমাদের কিছু হুজুর আছে তারা বলে ,যদি আরসা আক্রমন না করত তাহলে মগরা তাদের হত্যা করত না । আপনারাই বলুন এখন বলব , আসলে বসে বসে যারা খানা খায় ,তারা সারা দুনিয়াকে পরিপ্তৃপ্তি মনে করে ।
        আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
        আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

        Comment


        • #5
          ফিলাস্তিনের লোকেরা কি করে ??? নিজেরা কিছু করে না ,আমাদেরও যেতে দেয় না । এ হচ্ছে তাদের স্বাধিনতা অর্জনের আশা । আমরা আলহামদুলিল্লাহ হামাসের ব্যাপারে জানি । যারা মুসলিমদের হত্যা করে ,তারা কীভাবে দেশ স্বাধিন কঅরবে??? যারা শরইয়া চাই ,হামাস তাদেরকে হত্যা ।
          আল্লাহ আমাদের ঈমানী হালতে মৃত্যু দান করুন,আমিন।
          আল্লাহ আমাদের শহিদী মৃত্যু দান করুন,আমিন।

          Comment


          • #6
            jazakumullah . bokhtiar vai eta filistini jono sadharoner dush bole mone hoy na . hamaser karone aj ei halot

            Comment

            Working...
            X