Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাংলাদেশ ক্রমশঃ উপনিবেশ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাংলাদেশ ক্রমশঃ উপনিবেশ

    কাশিমপুর জেলে প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশে ইসলামের আগমন এবং বিস্তার নিয়ে ইংরেজীতে এক দীর্ঘ, ইতিহাসভিত্তিক বইয়ের খসড়া শেষ করেছিলাম। গত এ মাস এক নানা রকম অসুস্থতার মধ্যে সেই খসড়াটা নিয়েই কাজ করে চলেছি। আশা করছি শারীরিক সুস্থতা সাপেক্ষে এবং সিন্দাবাদের দৈত্যরুপী সরকার তৃতীয় দফায় জেলে না নিলে ইনশাল্লাহ্ আগামী মাস তিনেকের মধ্যে বইটা শেষ করতে পারবো।

    এর মধ্যে বাংলায় আর তেমন কিছু লিখিনি। জানুয়ারী ৩১ তারিখ থেকে আকস্মাৎ রোজনামচা লেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু তিন-চার দিনের বেশি লেখার উৎসাহ ধরে রাখতে পারিনি। মনে হয়েছিল অযথা পশুশ্রম। আমার দেশ ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী বেআইনী দখলে। কাজেই আমার রোজনামচা ছাপার জায়গা কোথায়? কোন পত্রিকার সম্পাদক আমার লেখা ছেপে অফিসে পুলিশ ডেকে আনতে চাইবেন? সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ইংরেজী বইটা শেষ না করে আর নতুন কিছু লিখবো না।

    অনেকটা হঠাৎ করেই মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ ধরে বসলেন তাদের বার্ষিকীতে একটা লেখা দিতে হবে। তাদের বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ পহেলা এপ্রিল ২০১৭, স্থান জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তন। আব্দুল্লাহ শুধু সাংবাদিক নেতা নন, তিনি আমার সহকর্মীও। আমার দেশ পত্রিকার নগর সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

    তবু তার লেখা দেওয়ার প্রস্তাব শুরুতেই নাকচ করে দিয়েছিলাম। তারপর মনে হলো প্রেসক্লাবের বর্তমান আওয়ামী কর্মকাতারা সেখানে আমার প্রবেশে নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ আমাকে বেশ কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে দুই ব্যক্তিকে নিয়ে যে কোনরকম অনুষ্ঠান আয়োজনের উপর অলিখিত নিষিধাজ্ঞা জারি করে রেখেছেন। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শফিকুর রহমান, যিনি আওয়ামীলীগের টিকেটে চাঁদপুর থেকে একাধিকবার সংসদ নির্বাচন করেছেন।

    বাংলাদেশের তাবৎ সংগঠন ও সংস্থা দখলের ধারাবাহিকতায় জাতীয় প্রেসক্লাব ও আওয়ামী দখলে চলে গেছে। দুভার্গ্যজনকভাবে প্রেস ক্লাব দখল প্রক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামপন্থী সাংবাদিকদের একটি সুবিধাবাদী অংশ ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মিলিয়েছে। বাংলাদেশের উর্বর মাটিতে বরাবরই দেখা গেছে মীরজাফররা অধিক সংখ্যায় জন্ম নিয়েছে। সেই তুলনায় সিরাজউদ্দৌলাহদের সংখ্যা অতিশয় নগন্য। এই কথাগুলো বলার জন্যেই অনির্বারিত এই লেখায় হাত দিতে হলো।

    প্রেসক্লাব চত্বরে যে দুজনকে পারসনা নান গ্রাটা (PNG) করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন যে আমি সেতো বলেই ফেলেছি। দ্বিতীয় জন হলেন বাংলাদেশের তিনবার জনগনের ভোটে নিবার্চিত প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় তার দীর্ঘ সংগ্রাম ও বিপুল অবদানের কথা না হয় ছেড়েই দিচ্ছি।
    কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, সে স্থানে আওয়ামীলীগ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছেন সেই স্থানটুকু সরকারী অনুদানরুপে সাংবাদিকদের দিয়েছিলেন বেগম জিয়ারই প্রয়াত স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। শুধু তাই নয় ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া তার স্বামীর দেয়া প্রেসক্লাবের জমির ৩৩ বছরের লীজ ৯৯ বছরে বর্ধিত করেছিলেন এবং জমির পরিমাণও বাড়িয়ে বর্তমান আয়তনে এনেছিলেন। তবে কিনা ফ্যাসিস্টরা লজ্জা-শরমের ধার ধারে না।

    বাংলাদেশের ইতিহাসে সংবাদমাধ্যম দলনের কলংকজনক নজির স্থাপন করা হয়েছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশেই। বাকশালী জামানায় সরকারি প্রেসনোট প্রচার এবং ক্ষমতাসীন মহলের গুনকীর্তনের জন্যে চারটি সংবাদপত্র সরকারী মারিকানায় রেখে দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ফ্যাসিস্ট মানসিকতা থেকে আওয়ামীলীগ এবং তাদের সমর্থক গোষ্ঠী কোন কালেই মুক্তি পায়নি। সুতরাং ক্ষমতাসীনদের পক্ষাবলম্বী দলবাজ সাংবাদিক নেতারাও যে চরিত্রে ফ্যাসিস্ট হবেন তাদের আর বিচিত্র কী?

    আজ থেকে ৯ বছর আগে ২০০৮ সালের নভেম্বর আমার দেশ পত্রিকায় লেখা আমার মন্তব্য প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “নবরুপে বাকশাল”। আমি যখন প্রথম দফায় কারাবন্দী সেই সময় একুশে বইমেলায় আমার স্ত্রী অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমার যে দুটি বই প্রকাশ করেছিল। তার একটির নাম ও ছিল “নবরুপে বাকশাল”। এটা ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের কথা।

    আমার বাল্যবন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সালা উদ্দিন সেদিন আমার মন্তব্য প্রতিবেদন পড়ে বেশ বিরক্তই হয়েছিল। যথেষ্ট অনুযোগের সাথে আমাকে বলেছিল, “তুই বড় বাড়িয়ে লিখছিস” বাকশালী শাসন পতনের ৩৩ বছর বাদে তুই আাবার বাকশাল আবিস্কার করলি কোথায়? গনতন্ত্রের স্বাদ একবার পাওয়ার পর বাংলাদেশের জনগন কি কখনও এক দলীয় শাসন মেনে নিতে পারে?

    আমি বন্ধুবরকে বলেছিলাম, ধীরে বন্ধু, অধৈর্য হয়ো না, হাড়ে হাড়ে টের পাবে। ২০১৭ সালে পৌছে আজ আমি পরম বন্ধুকে প্রশ্ন করার সাথে বাংলাদেশের জনগনকেও বলছি, কী ভাই বাংলাদেশের ষোল কেটি লড়াুক (?) জনতা, নবরুপে বাকশালের জ্বালা ভালো মতো টের পাচ্ছেন তো? নাকি আরো জুলুম দরকার?

    বাংলাদেশের জনগণের অধিকার হরণ এবং দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া ২০০৭ সালের এগারোতেই আরম্ভ হয়েছিল। বিগত দশ বছরে শাসক গোষ্ঠী এক স্বাধীন রাষ্ট্রকে হিন্দুত্ববাদী ভারতের উপনিবেশ বানিয়ে ছেড়েছে। আজ দেশের একজন নিতান্ত সাধারণ নাগরিক ও জানেন কোন দেশের রাজধানীর নির্দেশে বাংলাদেশে সরকার পরিচালিত হয়।

    এই তো সেদিনের কথা। ২০১৪ সালের নির্বাচনী তামাশার পূর্ব মুহুর্তে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা উড়ে গিয়ে দিল্লিতে ধর্না দিয়েছিলেন যাতে একদলীয়, ভোটারবিহীন নির্বাচন অন্ততঃ কিছু দিনের জন্য হলেও বিলম্বিত করা যায়। তার চেষ্ঠা কতটা লোকদেখানো ছিলো, আর কতখানিই বা আন্তরিক ছিলো সেটা আমার জানা নেই।

    আমি শুধু কাশিমপুর জেলে বসে চেতনাধারীদের হাতে আমার নিজ মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব লোপাট হওয়ার মনোকষ্টে জর্জরিত হচ্ছিলাম। ড্যান মোজেনা দিল্লি থেকে অশ্বডিম্ব নিয়েই ফিরেছিলেন। সচরাচর বিস্মৃতির রোগে ভোগা বাঙ্গালী মুসলমান জাতির সকলেই হয়তো এখন ও ভুলে জাননি যে ২০০৭ সালের মহা প্রতাপশালী খর্বকায় জেনারেল মঈন দিল্লি থেকেই স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার বিনিময়ে সঙ্গে কয়েকটি অশ্ব নিয়ে ফিরেছিলেন। মঈনের অশ্ব এবং ড্যান মোজেনার অশ্বডিম্বের পরিবর্তে পুরো বাংলাদেশের ললাটে মোদির ভারত পরাধিনতার ছাপ একেবারে খোদাই করে দিয়েছে।

    দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জবরদখলকারী সরকারের বিরোধী হলেও তাদের প্রকাশ্যে প্রতিবাদের সাহস নেই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ে তারা ভীত। কখন যে কার গৃহে মধ্যরাতে পোশাকধারী অথবা সাধারণ পোশাকের পুলিশ হানা দিয়ে গুম করে ফেলে কিংবা ক্রয়ফায়ারে হত্যা করে তার কোন ঠিক নেই। এই ভীতিকে ব্যবহার করেই ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী গনতন্ত্রের সঙ্গে স্বাধীনতাও লোপাট করে দিয়েছে।
    জনগণ কোনক্রমে প্রাণ বাঁচানোতেই ব্যস্ত। রবার্ট ক্লাইভ যেদিন হাজার তিনেক গোরা সৈন্য নিয়ে পলাশীর প্রান্তরের যুদ্ধে যুদ্ধ খেলায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ’র ষাট হাজার পুতুল সৈন্যের বাহিনীকে পরাজিত করেছিল, সেদিনও এ দেশের মানুষ আপন প্রাণ বাঁচানোকেই প্রধান কর্তব্য স্থির করে নিয়েছিল।

    আজকের মতোই মীরজাফর, মীরজাফর, রাজবল্লভরা, দেশের স্বাধীনতা বিদেশী আক্রমনকারীর পদতলে লুটিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিল। আজ যেমন করে গণতন্ত্র নয়, উন্নয়ন চাই বলে আওয়ামী প্রচারষন্ত্রের ঢঙ্কা-নিনাদ চলছে, সেদিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আগমনকে প্রগতিশীলতার বিজয় বলে উদ্বাহু নৃত্য দেওয়ার মতো লোকের অভাব বাংলাদেশে হয়নি। কথিত প্রগতিশীলরা বোধহয় সবকালেই দেশদ্রোহী হয়ে থাকে।

    ২০১১ সালে প্রথম দফায় জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের ব্যানারে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দুই দফা লংমার্চে অংশ নিয়েছিলাম। সিলেটের লংমার্চে আমার সঙ্গে একই গাড়ীতে পরবর্তীতে গুম হয়ে যাওয়া লড়াকু নেতা ইলিয়াস আলীও ছিলেন।

    আখাউড়ার লংমার্চ ছিল ভারতের ট্রানজিটের নাম করিডোর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে। দেশের পরিবেশ আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিতাস নদী হত্যা করে ভারতীয় দালালরা আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছিল। সেই নদী হত্যাকারী বাঁধের উপর দিয়েই ১৩০ চাকার ভারতীয় ট্রেইলরের সারি মাসের পর মাস আশুগঞ্জ থেকে ত্রিপুরায় মামলাল বহন করে নিয়ে গেছে।

    আমি এবং আরও কয়েকজন পেশাজীবি নেতা ভারতীয় উপনিবেশের প্রতীক সেই কুৎসিত বাঁধে প্রতীকি কোদাল চালিয়েছিলাম। সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আমি বাদী হয়ে মামলা ও করেছিলাম। কিন্তু, আন্দোলনে আমরা সফল হতে পারিনি। জনগনকে জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি। তারা রাষ্ট্রের স্বাধীনতার চেয়ে ব্যক্তিগত লাভকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

    এলাকার লোকজনের ধারনা ছিল, ট্রানজিট হলে জমির দাম এবং ব্যবসার সুযোগ দুটোই বাড়বে। লোভাতুর শ্রেণী আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে যোগদান না করে নিস্পৃহ থেকেছে। দীর্ঘ চার বছর পর কাশিমপুর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেখলাম কার্যত বিনাশুল্কে ভারতে ট্রানজিট দেয়া হয়ে গেছে।

    আশুগঞ্জ এবং আখাউড়া অঞ্চলে জমির দাম কতটা বেড়েছ, এলাকার ভারতীয় দুধ আর মধুর নহর বয়ে যাচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। আমি শুধু জানি, এই যে স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হলো সেটি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগবে, অনেক আত্মাত্যাগ অনেক রক্তের প্রয়োজন হবে।

    এ দেশের ভারতপন্থী, সেক্যুলার সুশীল (!) গোষ্ঠী দুই দশক ধরে ট্রানজিটের বিনিময়ে বছরে বিলিয়ন ডলার আয়ের গল্পের ফানুস উড়িয়েছে। দিল্লিভিত্তিক সরকারী এবং বেসরকারী গবেষনা সংস্থারসমূহ থেকে আহরণ করা বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যমূলক তথ্য দিয়ে এদেশের সুশীল (?) পত্রিকার পাতা ট্রানজিটের পক্ষে ভরিয়ে ফেলা হয়েছে।

    খুবই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, এই ক বছর কত বিলিয়ন ডলার আমরা ট্রানজিট খাত থেকে আয় করেছি? আমার দেশ বন্ধ না হলে আমরা অবশ্যই এই সকল তথ্য পাঠকদের নিয়মিত জানাতে পারতাম। এখন সুশীলরা (?) একটু কষ্ঠ করে আবারও পাঁচতারা হোটেলে সেমিনার আয়োজন করে আমাদের তথ্যগুলো জানালে উপকৃত হতমা। স্বাধীনতা কি দামে বিক্রি করা হলো অন্তত সেটুকু জানার অধিকার এ দেশের নাগরিকদের থাকার কথা।
    বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রকাশনাটি যে সকল পাঠক পড়বেন তারা নিশ্চয়ই অবহিত আছেন যে ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট দক্ষিন এশিয়ার অঘোষিত মোড়লের পদে নিয়োগ দিয়েছে। এ সব নিয়োগ তো আর আনুষ্ঠানিকভাবে হয় না, কুটনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমেই জনগনকে পরিস্থিতি বুঝে নিতে হয়।

    পাকিস্তান পারমানবিক শক্তিধর দেশ হওয়াতে তাদের আঞ্চলিক মোড়ল ভারতকে পাত্তা না দিলেও চলে। তাছাড়া, চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ট কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্কের কারণেও ভারতকে পশ্চিমের প্রতিবেশীকে সামলেও চলতে হয়। কিন্তু, দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা চেতনা সমুজ্জ্বল হলে এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ও যে সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল দেশের কাছে ও আগ্রাসী শক্তিধরকে মাথা নোয়াতে হয় তার প্রমাণ আমাদের বাড়ীর কাছে হিমালয় কন্যা নেপাল।

    এ বছর ৯ মার্চ, গোবিন্দ গৌতম নামের এক নেপালী তরুনকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ ভারত-নেপাল সীমান্তে গুলি করে হত্যা করলে দলমত নির্বিশেষে নেপালের সকল নাগরিক প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। হাজার হাজার নেপালী বিএসএফ এর গুলিবর্ষণকে অগ্রাহ্য করে একেবারে ভারত সীমান্তে কাছে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে। জনতার স্বতস্ফুর্ত বিক্ষোভে কাঠমান্ডু অচল হয়ে পড়ে।

    সেখানকার ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করা হয়। নেপাল সরকার গোবিন্দ গৌতমকে শহীদ ঘোষনা করে। নেপালী জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে সাম্রাজ্যবাদী দিল্লি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আনুষ্ঠানিক ভাবে নেপালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিএসএফ এর অন্যায় গুলিবর্ষণের কারণ ও নেপালী তরুণকে হত্যায় জড়িতদের সনাক্ত করতে ভারত সরকার তদন্ত কমিশন ও গঠন করেছে। নেপালের ঘটনার সাথে পাঠক এবার বাংলাদেশের সরকারের নতজানু নীতির তুলনা করুন।

    বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিয়মিতভাবে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা চলছে। নির্যাতনে অথবা গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হলে সীমান্তে ফ্ল্যাগ মিটিং এর আয়োজন করা হয়। সেই মিটিংয়ে নিহত নাগরিকের লাশ গ্রহণ নিয়ে দেন-দরবার চলে। আমাদের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্ত হত্যার সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে রাবার স্ট্যাম্প সংসদে বিবৃতি দিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করেন। ওরা যেহেতু সবাই চোরাকারবারী অতএব বিএফএফ এর গুলি ও নির্যাতনই ওদের প্রাপ্য।

    সরকার যে নিজেই চুপ করে থাকে তাই নয়, জনগণের প্রতিবাদেও বাধা দেয়। ফেব্রুয়ারী মাসে ২৫ তারিখে জনগনতান্ত্রিক আন্দোলন নামেই একটি বেসরকারি সংগঠন “সীমান্ত হত্যা : রাষ্ট্রের দায়” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল। ওই আলোচনায় আমারই মূল প্রবদ্ধ পাঠের কথা ছিল।

    গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে সকাল দশটায় আলোচনা অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক পূর্ব মুহুর্তে গুলশান থানা থেকে এস আই সুব্রত এক জীপ ভর্তি সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ রাস্তার প্রতিবাদ বিক্ষোভ তো দূরের কথা ঘরের মধ্যে ও বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার অধিকার নেই।

    এই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্র। সেই মেকী স্বাধীনতা নিয়ে চেতনাধীদের কত না আস্ফালন! তাহলে পরাধীনতা মেনে নেয়াই কী আমাদের বিধিলিপি? আমি তেষট্রি বছর বয়সী প্রবীন মানুষ। তবুও এমন ভাগ্য মেনে নিতে চাই না। দীর্ঘদিন কারাভোগ করে বর্তমানে নানারকম রোগে ভুগছি। এ দেশে অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও নির্দিষ্ট করে রোগ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। বিদেশে যেতে পারছি না কারণ আদালতের বাধা। জানি না আল্লাহতায়ালা কতদিন হায়াৎ রেখেছেন।

    তবে, মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দখল থেকে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াই যেন চালিয়ে যেতে পারি এটুকুই পরম করুনাময়ের কাছে প্রার্থনা। নেপালের মানুষেরা আমার মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছেন। দেশটির লড়াকু, স্বাধীনতাকামী জনগণকে স্যালুট জানিয়ে লেখা শেষ করছি। জয়তু নেপাল।

    --------
    মাহমুদুর রহমান
    লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ
    কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

  • #2
    অনেক আগে একটা ভিডীও দেখেছিলাম - মুজাহিদিনদের আঘাতে শত্রুর পতনের পর যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে এখানে সেখানে পচা গলা লাশ পড়েছিলো - একজন মুজাহিদ ভাই সেদিকে দেখিয়ে বলছিলেন -

    What they were defending? They were defending NOTHING!!

    কথাটি বেশ চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিলো। শ্রদ্ধেয় এক ভাই বলছিলেন, ময়দানের মুজাহিদদের কথার দাম আলাদা, তাদের খুব সাধারন কথার মধ্যেই অনেক জ্ঞান লুকিয়ে থাকে!

    যাই হোক, এই লেখাটি পড়ে মনে হলো, আমাদের দেশের আম জনগন আসলে স্বাধীনতার চেতনার নামে কি ডিফেন্ড করছে? কিছুই না! একদমই কিছুনা!

    এটাও কি বিশ্বাস করা যায় একটি জাতিকে শুন্য এক চেতনার উপরে ভাসিয়ে হ্যামিলনের বাশিওয়ালার মত ধংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!!!

    যে আল্লাহ কে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নিজের প্রভু হিসেবে কবুল করে নেয় - আল্লাহ তাকে তার প্রভুর জিম্মায় ছেড়ে দেন! যারা হাসিনা কিংবা ভারত কে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছে তাদের বুঝে দেখা উচিৎ, গবেষণা করা উচিৎ, অনলাইনে সিরিয়াস স্টাডী করা উচিৎ, ডেডিকেটেড টাইম দেয়া উচিৎ এটা জানার জন্য যে, তাদের প্রভুরা অতীতে কি কি কুকর্ম করেছে! তাদের এটাও খুব ভালো ভাবে জেনে নেয়া উচিৎ তাদের প্রভুরা বিপদে তাদের দোয়া, সাহায্যের আবেদনে কতটুকু সাড়া দিতে প্রস্তুত!

    কেউ যদি ভাবেন, এটা তো এক্সট্রিম হয়ে যাচ্ছে - আমি বলবো আপনি সারা জাহানের মালিক আল্লাহর প্রভুত্বকে অস্বীকার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে "হাইভ্যালু এক্সট্রিম" কাজটি অলরেডি করে ফেলেছেন! সো ফারদার আর কোন এক্সট্রিম আপনার জন্য আর অবশিষ্ট নাই!

    আরর আল্লাহ সত্যই বলেছেন - "আমি বান্দার উপরে জুলুম করিনা, বান্দা নিজেই নিজের উপরে জুলুম করে"
    Last edited by s_forayeji; 10-31-2017, 12:19 AM.
    মিডিয়া জিহাদের অর্ধেক কিংবা তারও বেশি

    Comment


    • #3
      প্রিয় ভাইয়েরা , আপনাদের পোস্ট নিয়মিত আশাকরি । আপনাদের পোস্টগুলো বেতিত হৃদয়কে শিতল করে !!
      # ভয় হয় !না জানি আমাদের ছোট্র মায়ের কলিজা হাঙ্গরের ভয়ানক থাভায় বিলিন হয়ে যায় ।
      #পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই ।
      #আল্লাহ আমাদের কবুল করুন ,আমিন।
      সম্মান নেইকো নাচে গানে,
      আছে মর্যাদা বিনিদ্র রজনী ও রণে।

      Comment


      • #4
        #আল্লাহ আমাদের কবুল করুন ,আমিন।

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহ।

          Comment

          Working...
          X