Announcement

Collapse
No announcement yet.

মুসলিম খলিফার অপসারণের বিধান!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মুসলিম খলিফার অপসারণের বিধান!

    এক ভাই প্রশ্ন করেছেন, যার খোলাসা:

    (মুসলিম খলিফা বা আমীর যদি এমন কোন সিদ্ধান্ত নেন, যা উম্মাহর জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে, ফিতনার রাস্তা খুলে দেবে- তাহলে আহলে হল ওয়াল আকদ ও ক্ষমতাশীল নেতৃবৃন্দ তাকে অপসারণ করতে পারবেন কি’না?)



    ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর প্রদানকল্পেই আমার এ লেখা।



    প্রথমে এখানে কয়েকটি মূলনীতি বুঝে নেয়া চাই-

    - আনুগত্য একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশের বিপরীতে কারোও আনুগত্য বৈধ নয়। কাজেই ইমাম যদি এমন কোন কাজের আদেশ দেন, যা শরীয়ত বিরোধি- তাহলে তা মান্য করা জায়েয হবে না, বরং শরীয়তের আদেশের উপরই অটল অবিচল থাকতে হবে।

    - ইমাম নিয়োগ দেয়া হয় উম্মাহর দ্বীনি ও দুনিয়াবি মাসলাহাত দেখাশুনার জন্য। কাজেই ইমামের দ্বারা যদি মুসলিম উম্মাহর দ্বীন ও দুনিয়ার মাসলাহাত অর্জন ও সংরক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে বরং তা নষ্ট হয়, তাহলে সেই ইমাম আর ইমামের আসনে থাকার যোগ্য থাকে না।

    উম্মাহর মাসলাহাত নষ্ট হতে পারে কয়েক কারণে-
    # ইমামের ফিসক ও জুলুমের কারণে।
    # ইমামের অযোগ্যতা ও অদূরদর্শিতার কারণে (যদিও ইমাম পরহেযগার ও মুত্তাকী ব্যক্তি হয়।)
    # ইমামের অক্ষমতা ও ক্ষমতাহীনতার কারণে (যদিও ইমাম পরহেযগার ও মুত্তাকী ব্যক্তি হয়।)

    এ সকল ক্ষেত্রেই ইমাম আর ইমামতের আসনে থাকার যোগ্য থাকে না, বরং বরখাস্ত করার করার উপযুক্ত হয়ে পড়ে।

    - বরখাস্তের উপযুক্ত হয়ে পড়া আর তার বিরোদ্ধে স্বশস্ত্র বিদ্রোহ করে তাকে বরখাস্ত করে ফেলা এক জিনিস নয়। বরখাস্তের উপযুক্ত হয়ে পড়ার অর্থ- তিনি এখনও মুসলমানদের ইমাম হিসেবেই বহাল আছেন, তবে মুসলমানদের উচিৎ হল তাকে বরখাস্ত করে যোগ্য ইমাম নিয়োগ দেয়া।

    - ইমাম যত দিন ইমাম হিসেবে বহাল আছেন (যদিও ফাসেক ও জালেম হয়; কাফের, মুরতাদ বা তাগুত না হয়) তত দিন তার জন্য দোয়া করতে হবে। শরীয়তসম্মত সকল কাজে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। (তবে শরীয়ত বিরোধি কোন কাজে তাকে সহযোগিতা করা যাবে না, তার শরীয়ত বিরোধি কোন আদেশ পালন করা যাবে না।) তাকে সুপরামর্শ দিতে হবে। আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।

    - প্রজাসাধারণের উপর জুলুম করলেও খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে বরং জুলুম অত্যাচার সহ্য করে যাওয়ার প্রতি হাদিসে তা’কিদ ও উৎসাহ এসেছে। তবে তা তত দিন, যত দিন তিনি শরীয়ত কায়েম রাখেন; শরীয়তের বুনিয়াদি ও মৌলিক বিধানে কোন পরিবর্তন না আনেন।

    - ক্ষমতাধর কোন জালেম ও ফাসেক মুসলিম ইমামকে বরখাস্ত করতে গেলে রক্তপাত অবধারিত। ইসলাম যথাসম্ভব মুসলমানদের পারস্পরিক রক্তপাত এড়িয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেয়।

    - যেখানে লাভ-ক্ষতি উভয়টারই সম্ভবনা আছে, ইসলাম সেখানে লাভ যেটাতে তুলনামূলক বেশি সেটা করার আদেশ দেয়, অপরটা বর্জন করার আদেশ দেয়।




    উপরোক্ত বিষয়গুলো বুঝার পর এবার আসুন প্রশ্নের জওয়াবে-

    ইমাম যদি এমন কোন কাজের আদেশ দেন যা শরীয়তে নিষিদ্ধ, কিংবা এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য নিশ্চিত ক্ষতিকর- তাহলে মুসলমানদের প্রথম কাজ হল- দলীল প্রমাণ দিয়ে ইমামকে বুঝানো যে, উক্ত কাজ শরীয়তে নিষিদ্ধ কিংবা উম্মাহর জন্য ক্ষতিকর। বুঝানোও পর যদি ইমাম তার আদেশ ও সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন, তাহলে তো আলহামদু লিল্লাহ। কিন্তু দলীল প্রমাণ দিয়ে স্পষ্টরূপে বুঝানোও পরও যদি তিনি তার সিদ্ধানে অটল থাকেন কিংবা জোরপূর্বক উম্মাহকে উক্ত নাজায়েয ও ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন, তাহলে উক্ত ইমাম বরখাস্তের উপযুক্ত হয়ে পড়েছে (তবে এখনও বরখাস্ত হননি।) এমতাবস্থায় মুসলমানদের করণীয় হল-

    প্রথমত: উক্ত নাজায়েয ও ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। ইমামকে এ কাজে কোন ধরণের সহায়তা না করা।

    দ্বিতীয়ত: যদি রক্তপাত ছাড়াই তাকে বরখাস্ত করে যোগ্য ইমাম নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলে বরখাস্ত করে যোগ্য ইমাম নিয়োগ দেয়া।

    তৃতীয়ত: যদি রক্তপাত ছাড়া বরখাস্ত করা সম্ভব না হয়, তাহলে দেখতে হবে- তাকে বরখাস্ত করাতে মাসলাহাত বেশি, না’কি তাকে বহাল রেখে তার জুলুম অত্যাচার সহ্য করে যাওয়াতে মাসলাহাত বেশি। যদি বরখাস্তের মধ্যে মাসলাহাত বেশি হয়, তাহলে তাকে বরখাস্ত করা হবে। পক্ষান্তরে যদি বরখাস্ত করতে গেলে আরোও বেশি ফেতনা ফাসাদের সম্মুখিন হওয়ার আশঙ্খা থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা, বরং জুলুম অত্যাচার সহ্য করে যাওয়া। যথাসম্ভব আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে সমাজ ও খলিফাকে সংশোধনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।



    বি.দ্র-১:
    মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস স্বাক্ষী- এ পর্যন্ত যত জালেম মুসলিম শাসককে অপসারণ করতে বিদ্রোহ করা হয়েছে, সবগুলোতেই লাভের বদলে ক্ষতি হয়েছে। তাই আহলে হল ওয়াল আকদকে বিষয়টি অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে বিবেচনা করে দেখতে হবে। যদি বিদ্রোহের মধ্যে লাভটা নিশ্চিত না হয়, তাহলে বিদ্রোহ না করা চাই। তবে ইতিহাসের আলোকে বলা যায়- সাধারণত এসব ক্ষেত্রে বিদ্রোহের দ্বারা ফায়েদা হবে না। তাই বিদ্রোহ না করে অন্য উপায়ে (যেমন- মজলিসে শূরার মাধ্যমে) বরখাস্ত করার চেষ্টা করা উচিৎ। যদি বরখাস্ত সম্ভব না হয়, তাহলে ইসলাহের চেষ্টা করে যাওয়া উচিৎ। এতেই ইনশাআল্লাহ মাসলাহাত।

    বি.দ্র-২:
    উপরোক্ত বিধান মুসলিম খলিফার ব্যাপারে। পক্ষান্তরে খলিফা যদি মুরতাদ হয়ে যায় (যেমন- বর্তমান শাসকগোষ্ঠী) তাহলে উক্ত বিধান নয়। বরং মুরতাদ হওয়ার সাথে সাথে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারিত হয়ে যাবে। তাকে আর ক্ষমতায় বহাল রাখা যাবে না। যতই রক্তপাত হোক, তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কখন, কিভাবে করা হবে- সেটা উম্মাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ভেবে দেখবেন। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তখন কাজ করে যেতে হবে। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা আ’লাম!


    [যদি আমার লেখায় কোন ভুল হয়ে থাকে, তাহলে কোন ভাই শুধরিয়ে দিলে আমি বড়ই কৃতজ্ঞ থাকবো।]


  • #2
    জাযাকাল্লাহু খাইরান।
    ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

    Comment


    • #3
      হে শায়েখ, আল্লাহ (সূব) আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুন।

      আল্লাহ (সুব) বলেনঃ " আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী, আর তাঁর সাহায্যই হচ্ছে উত্তম সাহায্য" (সূরা আলে ইমরানঃ ১৫০)

      তিনি (সুব) আরো বলেনঃ "যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাঁর জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন।" (সূরা ত্বালাক্বঃ ২)

      তিনি (সুব) আরো বলেনঃ "যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর জন্যে তিনিই যথেষ্ট" (সূরা ত্বালাক্বঃ ৩)

      Comment

      Working...
      X