Announcement

Collapse
No announcement yet.

যেসব কারণে একজন মুসলমান হত্যার উপযুক্ত হয়ে পড়ে: পর্ব-২

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যেসব কারণে একজন মুসলমান হত্যার উপযুক্ত হয়ে পড়ে: পর্ব-২

    لا يحل دم امرئ مسلم ... إلا بإحدى ثلاث- হাদিস নিয়ে কিছু কথা

    এ হাদিস থেকে অনেকেই সংশয়ে পড়েছেন যে, তিন শ্রেণীর মুসলমান ব্যতীত অন্য কোন মুসলমানকে হত্যা বৈধ নয়। অথচ বাস্তবে এদের বাইরে আরো অনেককে শরীয়ত হত্যার বৈধতা দিয়ে রেখেছে। এ হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আইম্মায়ে কেরাম তাদের কথা উল্লেখ করেছেন। বাহ্যিকভাবে এ হাদিসের সাথে ঐসব হত্যার যে বিরোধ দেখা যায়, তাও তারা নিরসন করেছেন। উপরে এ ব্যাপারে কিঞ্চিত ইশারা করা হয়েছে। এখানে বিষয়টাকে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।


    ইমাম নববী রহ. (মৃত্যু: ৬৭৬হি.) বলেন,

    قال العلماء: ويتناول أيضا كل خارج عن الجماعة ببدعة أو بغي أوغيرهما، وكذا الخوارج، والله أعلم. واعلم أن هذا عام يخص منه الصائل ونحوه فيباح قتله في الدفع. اهـ
    “আইম্মায়ে কেরাম বলেন, প্রত্যেক এমন মুসলিম, যে বিদআত বা (ইমামের বিরুদ্ধে) বাগাওয়াত (তথা বিদ্রোহে) লিপ্ত হয়ে কিংবা অন্য কোনভাবে মুসলিম জামাআত থেকে বের হয়ে যায়, তার উপরও এ (হত্যার) বিধান প্রযোজ্য। তদ্রূপ খাওয়ারেজরাও এ বিধানের আওতাভুক্ত- ওয়াল্লাহু আ’লাম। শোন, (জান, মাল বা ইজ্জত-আব্রুর উপর) আক্রমণকারীসহ এ জাতীয় অন্যান্য ব্যক্তি এ হাদিসের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত। কাজেই অনিষ্ট প্রতিহত করণার্থে এদেরকে হত্যা করা যাবে।” (শরহু মুসলিম লিন-নববী: ১১/১৬৫)



    এ বক্তব্যে ইমাম নববী রহ. এ হাদিসে উল্লিখিত তিন শ্রেণীর ব্যক্তি ছাড়াও আরো কয়েক শ্রেণীর মুসলিমের কথা উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে হত্যা করা বৈধ-
    ১. বিদআতী (তবে সকল বিদআতী নয়, কিছু কিছু চরমপন্থী বিদআতী)।
    ২. শরয়ী ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী বাগী।
    ৩. খাওয়ারেজ।
    ৪. জান, মাল বা ইজ্জত-আব্রুর উপর আক্রমণকারী।
    এ ছাড়াও আরো অনেকে যাদের তিনি নাম নেননি, শুধু ইশারা করে গেছেন।



    হাফেয ইবনে হাজার রহ. (মৃত্যু: ৮৫২হি.) ইমাম আবু হাফস কুরতুবী রহ. (মৃত্যু: ৬৫৬হি.) থেকে বর্ণনা করেন-

    يلتحق به من خرج عن جماعة المسلمين وان لم يرتد كمن يمتنع من إقامة الحد عليه إذا وجب ويقاتل على ذلك كأهل البغي وقطاع الطريق والمحاربين من الخوارج وغيرهم. اهـ
    “দ্বীনত্যাগীর বিধান প্রযোজ্য হবে এমন সব মুসলিমের উপরও, যারা মুরতাদ তো হয়নি কিন্তু মুসলিমদের জামাআত থেকে বের হয়ে গেছে। যেমন- এমন মুসলিম, যার উপর শরীয়ত নির্ধারিত কোন হদ (শাস্তি) বর্তিয়েছে কিন্তু সে নিজের উপর তা কায়েম করতে দিচ্ছে না, বরং এর বিপরীতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। যেমন- (শরয়ী ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী) বাগী, ডাকাত, যুদ্ধে লিপ্ত খাওয়ারেজ এবং এ জাতীয় অন্যান্য মুসলমান।” (ফাতহুল বারি: ৭/৩৫৩)


    এখানে হত্যাপোযুক্ত আরো কয়েক শ্রেণীর মুসলমান পাওয়া গেল-
    ৫. যার উপর শরীয়ত নির্ধারিত কোন হদ (যেমন- যিনার শাস্তি) বর্তিয়েছে কিন্তু সে নিজের উপর তা কায়েম করতে দিচ্ছে না, বরং এর বিপরীতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ব্যতীত তার উপর উক্ত হদ কায়েম করা সম্ভব নয়।
    ৬. ডাকাত ও লুটতরাজ।
    এ ছাড়াও আরোও অনেকে।



    ইবনে হাজার রহ. আরোও বলেন-

    حكى بن التين عن الداودي أن هذا الحديث منسوخ بآية المحاربة {من قتل نفسا بغير نفس أو فساد في الارض} قال: فأباح القتل بمجرد الفساد في الارض.
    قال: ورد في القتل بغير الثلاث أشياء، منها:
    - قوله تعالى: {فقاتلوا التي تبغي}
    - وحديث (من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوه)
    - وحديث (من اتى بهيمة فاقتلوه)
    - وحديث (من خرج وأمر الناس جمع يريد تفريقهم فاقتلوه)
    - وقول عمر (تغرة أن يقتلا)
    - قول جماعة من الائمة: إن تاب أهل القدر وإلا قتلوا
    - وقول جماعة من الائمة: يضرب المبتدع حتى يرجع أو يموت
    - وقول جماعة من الائمة: يقتل تارك الصلاة.
    قال: وهذا كله زائد على الثلاثة.
    قلت: وزاد غيره قتل:
    - من طلب أخذ مال إنسان أو حريمه بغير حق
    - ومانع الزكاة المفروضة
    - ومن ارتد ولم يفارق الجماعة
    - ومن خالف الاجماع وأظهر الشقاق والخلاف
    - والزنديق إذا تاب على رأي
    - والساحر. اهـ

    “ইবনুত-ত্বীন রহ. দাউদী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, এ হাদিসটি আয়াতে মুহারাবা দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। আয়াতে মুহারাবা হলো-
    {من قتل نفسا بغير نفس أو فساد في الارض}
    “কাউকে হত্যা করা কিংবা যমিনে ফাসাদ-অশান্তি বিস্তার করা ব্যতীতই কেউ কাউকে হত্যা করলে, (সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল)।” (মায়েদা: ৩২)
    তিনি বলেন, (এ আয়াতে) শুধু যমিনে ফাসাদ বিস্তার করার কারণেই হত্যার বৈধতা দিয়েছেন।
    তিনি আরোও বলেন, হাদিসে উল্লিখিত তিন কারণ ছাড়াও হত্যার বৈধতা সম্বলিত আরোও বিভিন্ন কারণ বিভিন্ন আয়াত-হাদিসে এসেছে। যেমন-
    - আল্লাহ তাআলার বাণী: {فقاتلوا التي تبغي} ‘(মুসলিমদের দুটি দল পরস্পর আত্মকলহে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। অতঃপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে) যে দল বাড়াবাড়ি করছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, (যাবত না সে আল্লাহর হুকুমের দিক ফিরে আসে।)’ (হুজুরাত: ৯)
    - হাদিস: (من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوه) ‘কাউকে লূত আলাইহিস সালামের কাওমের মতো কাজ (অর্থাৎ সমকামিতা) করতে দেখলে তাকে হত্যা করে দাও।’
    - হাদিস: (من اتى بهيمة فاقتلوه) ‘যে ব্যক্তি কোন পশুর সাথে সঙ্গম করে, তাকে হত্যা করে দাও।’


    - হাদিস: (من خرج وأمر الناس جمع يريد تفريقهم فاقتلوه) ‘লোকজন কোন এক ইমামের বাইয়াতে ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ বিদ্রোহ করে তাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায়, তাহলে তাকে হত্যা করে দাও।
    - উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য: (تغرة أن يقتلا) ‘(মুসলমানদের পরামর্শ ছাড়াই কেউ কারো হাতে বাইয়াত হয়ে গেলে, তাকেও বাইয়াত দেয়া যাবে না, সে যাকে বাইয়াত দিয়েছে তাকেও না। কারণ,) হতে পারে তাদের উভয়কে হত্যা করে দেয়া হবে।’
    - আইম্মায়ে কেরামের এক দল বলেন: কদরিয়্যা ফেরকা তওবা করলে তো ভাল, অন্যথায় তাদের হত্যা করে দেয়া হবে।
    - আরেক দল আইম্মা বলেন: বিদআতিদেরকে মারতেই থাকা হবে; হয়তো তাওবা করবে, নয়তো মার খেতে খেতে মৃত্যুমুখে পতিত হবে।
    - আরেক দল আইম্মা বলেন: নামাযত্যাগীকে হত্যা করে দেয়া হবে।
    তিনি বলেন, এ সবগুলোই হাদিসে উল্লিখিত তিন শ্রেণীর বাইরে।
    আমি বলি, অন্যরা আরো কয়েকটি বাড়িয়েছেন:
    - যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো মাল বা ইজ্জতের উপর হামলা করবে।
    - ফরয যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী।
    - যে মুরতাদ হয়ে গেছে, কিন্তু মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়নি।
    - যে ইজমায়ী তথা সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিরোধিতা করে, অনৈক্য ও অহেতুক মতবিরোধের প্রকাশ ঘটায়।
    - এক মত অনুযায়ী: যিনদ্বীক, যখন সে তাওবা করে।
    - যাদুকর।” (ফাতহুল বারি: ৭/৩৫৬)



    এ বক্তব্য থেকে আরো কয়েক শ্রেণীর মুসলমান হত্যার বৈধতা পাওয়া গেল:
    ৭. যমিনে ফাসাদ বিস্তারকারী।
    ৮. কোন দল অন্যায়ভাবে অন্য দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে।
    ৯. সমকামী।
    ১০. পশুর সাথে সঙ্গমকারী।
    ১১. আহলে হল ওয়াল আকদের পরামর্শ ছাড়াই কাউকে বাইয়াত দিয়ে দিলে এবং আহলে হল ওয়াল আকদের অসম্মতি সত্ত্বেও উক্ত বাইয়াতে অটল থাকলে। এমতাবস্থায় যে বাইয়াত দিয়েছে এবং যাকে বাইয়াত দিয়েছে তাদের উভয়কে হত্যা করে দেয়া হবে।
    ১২. কদরিয়্যা ফেরকা।
    ১৩. বিদআতী।
    ১৪. নামায আদায়ে অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী।
    ১৫. ফরয যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী।
    ১৬. যে ইজমায়ী তথা সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিরোধিতা করে, অনৈক্য ও অহেতুক মতবিরোধের প্রকাশ ঘটায়।
    ১৭. যিনদ্বীক (যদিও তাওবা করে।)
    ১৮. যাদুকর (পুরুষ হোক, কি মহিলা।)





    অতএব, উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে আইম্মায়ে কেরামে বক্তব্য থেকে নিম্নোক্ত ১৮ শ্রেণীর মুসলমান পাওয়া গেল, যাদেরকে হত্যা করার বৈধতা শরীয়ত দিয়েছে, কিন্তু উল্লিখিত হাদিসে এদের কারোরই উল্লেখ নেই:

    ১. বিদআতী (তবে সকল বিদআতী নয়, কিছু কিছু চরমপন্থী বিদআতী)।
    ২. শরয়ী ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী বাগী।
    ৩. খাওয়ারেজ।
    ৪. জান, মাল বা ইজ্জত-আব্রুর উপর আক্রমণকারী।
    ৫. যার উপর শরীয়ত নির্ধারিত কোন হদ (যেমন- যিনার শাস্তি) বর্তিয়েছে কিন্তু সে নিজের উপর তা কায়েম করতে দিচ্ছে না, বরং এর বিপরীতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ব্যতীত তার উপর তা কায়েম করা সম্ভব নয়।
    ৬. ডাকাত ও লুটতরাজ।
    ৭. যমিনে ফাসাদ বিস্তারকারী।
    ৮. কোন দল অন্যায়ভাবে অন্য দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে।
    ৯. সমকামী।
    ১০. পশুর সাথে সঙ্গমকারী।
    ১১. আহলে হল ওয়াল আকদের পরামর্শ ছাড়াই কাউকে বাইয়াত দিয়ে দিলে এবং আহলে হল ওয়াল আকদের অসম্মতি সত্ত্বেও উক্ত বাইয়াতে অটল থাকলে। এমতাবস্থায় এদের উভয়কে হত্যা করে দেয়া হবে।
    ১২. কদরিয়্যা ফেরকা।
    ১৩. বিদআতী।
    ১৪. নামায আদায়ে অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী।
    ১৫. ফরয যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী।
    ১৬. যে ইজমায়ী তথা সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিরোধিতা করে, অনৈক্য ও অহেতুক মতবিরোধের প্রকাশ ঘটায়।
    ১৭. যিনদ্বীক (যদিও তাওবা করে।)
    ১৮. যাদুকর (পুরুষ হোক, কি মহিলা।)



    সতর্কতা: এদের সকলকে ঢালাওভাবে হত্যা বৈধ নয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে, বিশেষ শর্তসাপেক্ষে বৈধ, অন্যথায় নয়। সামনে পৃথক পৃথক এদের সকলের আলেচনা আসবে ইনশাআল্লাহ। তখন আশাকরি পরিষ্কার হবে।


  • #2
    জাযাকাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আপনার ইলম ও আমলের মধ্যে বরকত দান করেন। আমিন।
    ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

    Comment


    • #3
      আখিঁ ফিল্লাহ,জাযাকাল্লাহ। প্রিয় আখিঁ, আপনাকে ধন্যবাদ। প্রত্যেকটি দলের কোকদের হত্যার মাসলা আলাদা আলাদাভাবে পোস্ট দিবেন প্লিজ। আল্লাহ আপনার কলমে বারাকাহ দান করুন, আমিন।

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ ভাই। আরেকটু পরিষ্কারভাবে ব্যাখা বিশ্লেষণ সহ করার চেষ্টা করবেন বলে আশারাখি।

        Comment


        • #5
          Originally posted by রক্ত ভেজা পথ View Post
          জাযাকাল্লাহ ভাই। আরেকটু পরিষ্কারভাবে ব্যাখা বিশ্লেষণ সহ করার চেষ্টা করবেন বলে আশারাখি।
          আপাতত শুধু এতটুকু দেখানো হচ্ছে যে, হাদিসে উল্লিখিত তিন শ্রেণী ছাড়াও শরীয়ত আরো অনেককে হত্যার বৈধতা দিয়েছে। পরিষ্কার আলোচনা ইনশাআল্লাহ সামনে আসবে।

          Comment


          • #6
            জাযাকাল্লাহ ভাই

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহ আল্লাহ আপনার কলমে বরকত দান করুন। আমিন।

              Comment


              • #8
                জাযাকাল্লাহ, আল্লাহ আপনার এলেমে বরকত দান করুন।

                Comment


                • #9
                  জাযাকাল্লাহ

                  Comment


                  • #10
                    জাযাকাল্লাহ আল্লাহ আপনার কলমে বরকত দান করুন। আমিন।

                    Comment

                    Working...
                    X