Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইজতিহাদী মাসাইলে মতভিন্নতার ক্ষেত্রে সঠ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইজতিহাদী মাসাইলে মতভিন্নতার ক্ষেত্রে সঠ

    ইজতিহাদী মাসাইল বা ফূরুয়ী মাসাইলে মতভিন্নতার ক্ষেত্রে সঠিক কর্মপন্থা


    আজ মুসলিম উম্মাহর ট্রাজেডি এই যে, শাখাগত বা অপ্রধান বিষয়কে কেন্দ্র করে তারা কলহ-বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে এবং নিজেদের শক্তি খর্ব করছে। যেন কুরআন মজীদের নিষেধ-
    ولا تنازعوا فتفشلوا
    এর বাস্তব দৃষ্টান্ত। বিষয়টা আরব-আজমের সংবেদনশীল উলামা-মাশাইখকে অস্থির করে রেখেছে। তাঁরা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন।

    গত শতাব্দীতে আরবের কিছু ব্যক্তি তাকলীদের বিরুদ্ধে এত বলেছেন এবং ফূরূয়ী মাসাইলের ক্ষেত্রে এত কড়াকড়ি করেছেন যে, যুবশ্রেণীর মাঝে দ্বীনের বিষয়ে স্বেচ্ছাচার ও লাগামহীনতার
    বিস্তার ঘটেছে, যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেখানের বড়দেরকে রীতিমতো পরিশ্রম করতে হয়েছে। তো এখানেও ঐ তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় না থেকে আগেভাগেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।

    আমি প্রথমে সালাফে সালেহীনের কিছু ঘটনা ও নির্দেশনা উল্লেখ করছি। এরপর ইনশাআল্লাহ বর্তমান যুগের আরব-আজমের কয়েকজন মুরববী আলিমের নির্দেশনা তুলে ধরব।

    ১. ইমাম দারিমী রাহ. (১৮১-২৫৫ হি.) তাঁর কিতাবুস সুনানে বর্ণনা করেছেন যে, (তাবেয়ী) হুমাইদ আততবীল (আমীরুল মুমিনীন) উমার ইবনে আবদুল আযীয রাহ.কে বললেন, ‘আপনি যদি সকল মানুষকে এক বিষয়ে (এক মাযহাবে) একত্র করতেন তাহলে ভালো হত।’ তিনি বললেন, ‘তাদের মাঝে মতপার্থক্য না হলে আমি খুশি হতাম না।’ এরপর তিনি ইসলামী শহরের গভর্ণরদের উদ্দেশে ফরমান পাঠালেন-
    ليقض كل قوم بما اجتمع عليه فقهاءهم
    প্রত্যেক কওম যেন ঐ সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফায়সালা করে, যে বিষয়ে তাদের ফকীহগণ (আলিমগণ) একমত।-সুনানুদ দারিমী, পৃষ্ঠা : ১৩৪

    ২. ইমাম ইবনে আবী হাতেম ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেন যে, খলীফা আবু জাফর মানসুর আগ্রহ প্রকাশ করলেন যে, আমি চাই গোটা মুসলিম সাম্রাজ্যে এক ইলমের (অর্থাৎ মুয়াত্তা মালিকের) অনুসরণ হোক। আমি সকল এলাকার কাযী ও সেনাপ্রধানের নিকট এ ব্যাপারে ফরমান জারি করতে চাই।

    ইমাম মালেক রাহ. বললেন, ‘জনাব! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতের মাঝে ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জনপদে সেনাদল প্রেরণ করেছেন, কিন্তু ইসলামের দিগ্বিজয়ের আগেই তাঁর ওফাত হয়ে গেছে। এরপর আবু বকর খলীফা হয়েছেন। তাঁর আমলেও বেশি কিছু রাজ্য বিস্তার হয়নি। এরপর উমর খলীফা হয়েছেন। তাঁর সময়ে প্রচুর শহর ও জনপদ বিজিত হয়েছে। তিনি সেসব বিজিত এলাকায় শিক্ষা-দীক্ষার জন্য সাহাবীগণকে প্রেরণ করেছেন। সেই সময় থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত (প্রত্যেক জনপদে সাহাবীগণের শিক্ষাই) এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছেছে।

    ‘অতএব আপনি যদি তাদেরকে তাদের পরিচিত অবস্থান থেকে অপরিচিত কোনো অবস্থানে ফেরাতে চান তবে তারা একে কুফরী মনে করবে। সুতরাং প্রত্যেক জনপদকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিন এবং নিজের জন্য এই ইলমকে (মুয়াত্তা মালেক) গ্রহণ করুন।’
    আবু জাফর তাঁর কথা মেনে নিলেন।’-তাকদিমাতুল জারহি ওয়াত তাদীল ২৯

    ইবনে সা’দের বর্ণনায় ইমাম মালেকের বক্তব্যে উল্লেখ আছে যে-
    يا أمير المؤمنين! لا تفعل هذا، فإن الناس قد سبقت إليهم أقاويل، وسمعوا أحاديث، ورووا روايات، وأخذ كل قوم بما سبق إليهم وعملوا.
    ইয়া আমীরাল মুমিনীন! এমনটি করবেন না। কেননা, লোকেরা (সাহাবীগণের) বক্তব্য শুনেছে, হাদীস শুনেছে, রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছে এবং প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তাই গ্রহণ করেছে, যা তাদের নিকট পৌঁছেছে এবং তদনুযায়ী আমল করেছে।’-আততবাকাত ৪৪০

    (القسم المتمم)
    খতীব বাগদাদীর বর্ণনায় আছে, ইমাম মালেক বলেন-
    يا أمير المؤمنين! إن اختلاف العلماء رحمة من الله تعالى على هذه الأمة، كل يتبع ما صح عنده، وكل على هدى، وكل يريد الله تعالى.
    ইয়া আমীরাল মুমিনীন! নিঃসন্দেহে আলেমগণের মতপার্থক্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এ উম্মতের জন্য রহমত। প্রত্যেকে তাই অনুসরণ করে, যা তার নিকট সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে, প্রত্যেকেই হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং প্রত্যেকেই আল্লাহর (সন্তুষ্টি) কামী।’-কাশফুল খাফা, আলআজলূনী ১/৫৭-৫৮; উকূদুল জুমান, আসসালেহী ১১

    বিচক্ষণ ব্যক্তিদের জন্য এই দুটি ঘটনায় জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অনেক উপাদান আছে।

    বর্তমান যুগের আকাবির ও মাশাইখ

    ১. মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. (১৩১৪ হি.-১৩৯৬ হি.)

    জাওয়াহিরুল ফিকহের প্রথম খন্ডে হযরতের দুটি রিসালা আছে। দুটোই মূলত আলিমদের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য : ১. ওয়াহদাতে উম্মত, ২. ইখতিলাফে উম্মত পর এক নজর আওর মুসলমানোঁ কে লিয়ে রাহে আমল।

    দুটো রিসালাই আমাদের পাঠ করা উচিত।

    প্রথম পুস্তিকার শেষে হযরত বলেন, দায়িত্বশীল আলিমদের প্রতি ব্যথিত নিবেদন-‘রাজনীতি ও অর্থনীতির অঙ্গনে এবং পদ ও পদবীর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে যে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন তার প্রতিকার তো আমাদের সাধ্যে নেই। কিন্তু দ্বীনী ও ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত দলগুলোর নীতি ও কর্মপন্থার যে বিরোধ তা বোধ হয় দূর করা সম্ভব। কারণ সবার লক্ষ্য অভিন্ন। আর লক্ষ্য অর্জনে সফলতার জন্য তা অপরিহার্য। যদি আমরা ইসলামের বুনিয়াদী উসূল ও মৌলনীতি সংরক্ষণের এবং নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার স্রোত মোকাবেলাকে সত্যিকার অর্থে মূল লক্ষ্য মনে করি তাহলে এটিই সেই ঐক্যের বিন্দু, যেখানে এসে মুসলমানদের সকল ফের্কা ও সব দল একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারে আর তখনই এই স্রোতের বিপরীতে কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে।

    কিন্তু বাস্তব অবস্থার দিকে তাকালে বলতে হয়, এই মূল লক্ষ্যটিই আমাদের দৃষ্টি থেকে গায়েব হয়ে গেছে। এ কারণে আমাদের সমস্ত সামর্থ্য এবং জ্ঞান ও গবেষণার সমুদয় শক্তি নিজেদের ইখতিলাফি মাসআলায় ব্যয় হচ্ছে। ওগুলোই আমাদের ওয়াজ, জলসা, পত্রিকা ও বই-পুস্তকের আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এমন কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ এ কথা মনে করতে বাধ্য হচ্ছে যে, ইসলাম ধর্ম কেবল এই দুই-চার জিনিসেরই নাম। আরো আক্ষেপের বিষয় এই যে, ইখতিলাফী মাসআলাসমূহে যেই দিকটি কেউ অবলম্বন করেছে তার বিপরীতটিকে গোমরাহী এবং ইসলামের শত্রুতা আখ্যা দিচ্ছে। ফলে আমাদের যে শক্তি কুফুরি, নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা এবং সমাজে বাড়তে থাকা বেহায়াপনার মোকাবেলায় ব্যয় হতে পারত তা এখন পরস্পর কলহ-বিবাদে ব্যয় হচ্ছে। ইসলাম ও ঈমান আমাদেরকে যে ময়দানে লড়াই ও আত্মত্যাগের আহবান জানায় সেই ময়দান শত্রুর আক্রমণের জন্য খালি পড়ে আছে। আমাদের সমাজ অপরাধ ও অন্যায়ে ভরপুর, আমল-আখলাক বরবাদ, চুক্তি ও লেনদেনে ধোঁকাবাজি, সুদ, জুয়া, মদ, শূকর, অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ও অপরাধপ্রবণতা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মিশে গেছে।

    প্রশ্ন হল, আম্বিয়া কেরামের উত্তরসূরী এবং দেশ ও ধর্মের প্রহরীদের নিজেদের মধ্যেকার মতপার্থক্যের বেলায় যতটা সংক্ষুব্ধ হতে দেখা যায় তার অর্ধেকও কেন সেসব খোদাদ্রোহীদের বেলায় দেখা যায় না? এবং পরস্পর চিন্তাগত মতপার্থক্যের বেলায় যেমন ঈমানী জোশ প্রকাশ পায় তা ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কেন প্রকাশ পায় না? আমাদের বাকশক্তি এবং লেখনীশক্তি যেমন শৌর্যবীর্যের সাথে নিজেদের ইখতিলাফি মাসআলায় লড়াই করে তার সামান্যতম অংশও কেন ঈমানের মৌলিক বিষয়ের উপর আসা হুমকির মোকাবেলায় ব্যয় হয় না? মুসলমানদেরকে মুরতাদ বানানোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা সকলে কেন সিসাঢালা প্রাচীরের মতো রুখে দাঁড়াই না?

    সর্বোপরি আমরা এ বিষয়ে কেন চিন্তা করি না যে, নবী প্রেরণ ও কুরআন নাযিলের ঐ মহান উদ্দেশ্য, যা পৃথিবীতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে এবং যা পরকে আপন বানিয়ে নিয়েছে, যা আদম সন্তানদেরকে পশুত্ব থেকে মুক্ত করে মানবতার মর্যাদা দিয়েছে এবং যা সমগ্র দুনিয়াকে ইসলামের আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়েছে তা কি শুধু এই সব বিষয়ই ছিল, যার ভিতর আমরা লিপ্ত হয়ে আছি। এবং অন্যদেরকে হেদায়েতের পথে আনার তরীকা ও পয়গম্বরসুলভ দাওয়াত দেওয়ার কি এটাই ছিল ভাষা, যা আজ আমরা অবলম্বন করেছি?

    এখনো কি সময় হয়নি যে, ঈমানদারদের অন্তরগুলো আল্লাহর স্মরণ ও তার নাযিলকৃত সত্যের সামনে অবনত হবে ...
    শেষ পর্যন্ত তাহলে ঐ সময় কবে আসবে যখন আমরা শাখাগত বিষয়আশয় থেকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার সংরক্ষণ এবং অবক্ষয়প্রাপ্ত সমাজের সংশোধনকে নিজেদের আসল কর্তব্য মনে করব। দেশের মধ্যে খৃস্টবাদ ও কমিউনিজমের সর্বগ্রাসী সয়লাবের খবর নিব। কাদিয়ানীদের হাদীস অস্বীকার ও ধর্ম বিকৃতির জন্য কায়েম করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পয়গম্বরসুলভ দাওয়াত ও এসলাহের মাধ্যমে মোকাবেলা করব।

    আর যদি আমরা এগুলো না করি এবং হাশরের ময়দানে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ প্রশ্ন করেন যে, আমার দ্বীন ও শরীয়তের উপর এই হামলা হচ্ছিল, ইসলামের নামে কুফরি বিস্তার লাভ করছিল, আমার উম্মতকে আমার দুশমনের উম্মত বানানোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চলছিল, কুরআন ও সুন্নাহর প্রকাশ্য বিকৃতি ঘটছিল, আল্লাহ ও রাসূলের প্রকাশ্য নাফরমানি করা হচ্ছিল তখন তোমরা ইলমের দাবীদারেরা কোথায় ছিলে? তোমরা এর মোকাবেলায় কতটা মেহনত এবং ত্যাগ স্বীকার করেছ? কতজন বিপথগামী ব্যক্তিকে পথে এনেছ? তো আমাদের ভেবে দেখা উচিত সেদিন আমাদের উত্তর কী হবে?

    কর্মপন্থা

    এজন্য জাতির প্রতি সংবেদনশীল এবং ঈমান ও ইসলামের উসূল ও মাকসাদসমূহের প্রতি সচেতন উলামায়ে কেরামের কাছে আমার ব্যথাভরা নিবেদন-মাকসাদের গুরুত্ব ও নাযুকতাকে সামনে রেখে সবার আগে মন থেকে এই অঙ্গীকার করুন যে, নিজেদের ইলমী ও আমলী যোগ্যতা এবং কথা ও কলমের শক্তিকে বেশির থেকে বেশি ঐ ময়দানে নিয়োজিত করবেন, যার সংরক্ষণের জন্য কুরআন ও হাদীস আপনাদের ডাকছে।

    ১. সম্মানিত ওলামা! এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন এবং প্রতিজ্ঞা করুন যে, এ কাজের জন্য নিজের বর্তমান ব্যস্ততার মধ্য থেকে বেশির থেকে বেশি সময় বের করবেন।

    ২. পরস্পর মতপার্থক্য ও ইজতিহাদী বিরোধকে কেবল নিজেদের দরস এবং লেখালেখি ও ফতওয়া পর্যন্ত সীমিত রাখবেন। আম জলসা, পত্রপত্রিকা, বিজ্ঞপ্তি, পরস্পর বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদের মাধ্যমে তাকে বড় করবেন না। নবীদের মতো দাওয়াত ও ইসলাহের নীতির অধীনে কষ্টদায়ক ভাষা, নিন্দা, উপহাস, আক্রমণ ও বাক্যচালনা থেকে বিরত থাকবেন।

    ৩. সমাজে ছড়িয়ে পড়া ব্যধিসমূহের প্রতিকারের জন্য হৃদয়গ্রাহী শিরোনামে সেণহ ও আন্তরিকতাপূর্ণ ভাষা ও আঙ্গিকে কাজ শুরু করুন।

    ৪. নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতা এবং কুরআন-সুন্নাহর বিকৃতির মোকাবেলার জন্য পয়গম্বরদের দাওয়াতের নীতি অনুসারে প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল,
    আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনা এবং হৃদয়গ্রাহী দলিল প্রমাণের মাধ্যমে وجادلهم بالتي هي أحسن এর সাথে নিজের মুখের ভাষা ও কলমের শক্তিকে ওয়াকফ করে দিন।’


    এ ধরনের আরেক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যে দেশকে একদিকে খৃস্টান মিশনারীরা নিজেদের পূর্ণ শক্তি এবং পার্থিব জাকজমকের সাথে খৃস্টান-রাজ্য বানানোর স্বপ্ন দেখছে আরেকদিকে প্রকাশ্যে আল্লাহর বান্দা এবং তাদের শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, অন্যদিকে কুরআন ও ইসলামের নামে ঐসব কিছু করা হচ্ছে, যাকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই কুরআন ও ইসলাম এসেছিল, সে দেশে কেবল শাখাগত মাসাইল এবং তার বিচার-পর্যালোচনা ও প্রচারণার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে ঐ মৌলিক বিষয়াদি থেকে যারা উদাসীন রয়েছি তাদের প্রতি যদি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়-তোমাদের দ্বীনের বিষয়ে যখন এই সকল বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তোমরা তার জন্য কী করেছিলে, তখন আমাদের কী জবাব হবে? আমার বিশ্বাস, কোনো ফের্কা, কোনো জামাত যখন বিভেদ-বিতর্ক থেকে উপরে উঠে এ বিষয়ে চিন্তা করবে তখন তার বর্তমান কাজকর্মের জন্য অনুশোচনা হবে এবং তার তৎপরতার রোখ বদলে যাবে। যার ফলে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ নিশ্চয়ই হ্রাসপ্রাপ্ত হবে।

    ২. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছালিহ আলউছাইমীন (১৪২১ হি.)

    তিনি এ বিষয়ে অনেক বলেছেন এবং অনেক লিখেছেন। আমরা এখানে তার কয়েকটি কথা নকল করছি :

    ক) ‘‘এ যুগের কিছু কিছু সালাফী, বিরোধীদেরকে গোমরাহ বলে থাকে, তারা হকপন্থী হলেও। আর কিছু কিছু লোক তো একে বিভিন্ন ‘ইসলামী’ দলের মত একটি দলীয় মতবাদে পরিণত করেছে। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, অবশ্যই এর প্রতিবাদ করতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে, সালাফে সালেহীনের কর্মপদ্ধতি লক্ষ করুন, ইজতিহাদগত মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে তাদের নীতি কী ছিল এবং তাঁরা কেমন উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

    তাঁদের মাঝে তো অপেক্ষাকৃত বড় বড় বিষয়েও মতভেদ হয়েছে, কোনো কোনো (শাখাগত) আকীদা বিষয়েও মতভেদ হয়েছে : দেখুন, আল্লাহর রাসূল তাঁর রবকে দেখেছেন কিনা-এ বিষয়ে কেউ বললেন, দেখেননি; কেউ বললেন, দেখেছেন। কেয়ামতের দিন আমল কীভাবে ওজন করা হবে-এ বিষয়ে কেউ বলেছেন, আমল ওজন করা হবে। কেউ বলেছেন, আমলনামা ওজন করা হবে; তেমনি ফিকহের মাসাইল- নিকাহ, ফারাইয, ইদ্দত, বুয়ূ (বেচাকেনা) ইত্যাদি বিষয়েও তাঁদের মাঝে মতভেদ হয়েছে, কিন্তু তাঁরা তো একে অপরকে গোমরাহ বলেননি।

    ‘সুতরাং যাদের বিশ্বাস, ‘সালাফী’ একটি সম্প্রদায়, যার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে, অন্যরা সবাই গোমরাহ, প্রকৃত সালাফী আদর্শের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
    সালাফী মতাদর্শের অর্থ হচ্ছে, আকিদা-বিশ্বাস, আচরণ- উচ্চারণ, মতৈক্য-মতানৈক্য এবং পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ক্ষেত্রে সালাফে সালেহীনের পথে চলা। যেমনটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; প্রীতি, করুণা ও পরস্পরের প্রতি অনুরাগে মুমিনগণ যেন একটি দেহ, যার এক অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় আর্তনাদ করতে থাকে। এটিই হচ্ছে প্রকৃত সালাফী মতাদর্শ।’ [লিকাআতুল বাবিল মাফতূহ, প্রশ্ন : ১৩২২]


    খ) শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছালিহ উছাইমিন রাহ. জামেয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারায় ২১/১২/১৪১১ হিজরী তারিখে একটি মুহাযারা (বক্তৃতা) পেশ করেছিলেন। তাতে তিনি বিশেষভাবে বলেছেন-
    سب العالم سبب لانتهاك السنة النبوية وسبب لانتهاك العلم الشرعي.
    ‘আলিমকে কটুক্তি করা সুন্নাহর অমর্যাদা ও শরয়ী ইলমের অমর্যাদার কারণ হয়ে থাকে।’

    গ. ‘যখন আলিমদের দিক (তাদের মান-মর্যাদা) দুর্বল হয় তখন সাধারণ মানুষের কিতাব ও সুন্নাহর অনুসরণও দুর্বল হয়ে যায়।’

    ঘ. ‘যারা আলিমদের অমর্যাদায় লিপ্ত বাস্তবে তারা সুন্নাহর আবরণ ছিন্ন করার কাজে লিপ্ত।’

    ঙ. ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মন ও মুখকে সুস্থ ও সংযত রাখা।’

    চ. ‘আলিম ও দায়ীগণের নিন্দা-সমালোচনাকারী উম্মতকে আলিম ও দায়ীদের প্রতি বিরূপ করে থাকে। উম্মত আলিম ও দায়ীদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। তখন দ্বীন-শরীয়তের প্রতিও তাদের আস্থা থাকে না।

    ‘সমালোচিতদের প্রতি আস্থা নষ্ট হওয়ার পর সমালোচনাকারীদের প্রতিও লোকের আস্থা থাকে না। আর এতে আনন্দিত হয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী (ইসলামের দুশমনেরা)’।-আদদাওয়াতু ইলাল জামাআতি ওয়াল ইতিলাফ পৃষ্ঠা : ১০১

    ৩. ড. নাসির ইবনে আবদুল কারীম আলআকল

    তিনি জামিআতুল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সাউদ আলইসলামিয়া রিয়াদের প্রফেসর। তিনি ‘আলইফতিরাক : মাফহূমুহু, আসবাবুহূ, সুবুলুল বিকায়াতি মিনহু’ নামে একটি সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ পুস্তিকা লিখেছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, জেনে বুঝে সচেতনতার সাথে ইমামগণের অনুসরণ করা হলে একেও তাকলীদ নামে আখ্যায়িত করা হয়! বলা হয়, মাশাইখের অনুসরণ হচ্ছে তাকলীদ আর তা নাজায়েয! আমাদের কাছে কিতাব আছে, জ্ঞানের বিভিন্ন মাধ্যম আছে, এখন কেন আলিমদের কাছে যেতে হবে? এই ভুল চিন্তা খন্ডন করে তিনি বলেন, ইমাম, মাশাইখ ও আলিমগণের অনুসরণ করা ওয়াজিব ...।

    ‘শরীয়তের দৃষ্টিতে (আহলে ইলমের) ইত্তিবা ও অনুসরণ অপরিহার্য। কারণ আম মুসলিম জনসাধারণ; বরং ইলম চর্চায় নিয়োজিত অনেকেই ইজতিহাদ তথা সঠিক পন্থায় দলীল-প্রমাণ গ্রহণে ও বিশ্লেষণে পারদর্শী নয়। তো এরা কাদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করবে? এবং কীভাবে ইলম অর্জনের পদ্ধতি, সুন্নাহর নিয়ম এবং সালাফে সালেহীন ও ইমামগণের নীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে? এ তো আহলে ইলমের অনুসরণ ছাড়া সম্ভব নয়। একে (নিন্দিত ও বর্জনীয়) তাকলীদ বলে না। নতুবা প্রত্যেকেই নিজের ইমাম হবে এবং যত ব্যক্তি তত দলের উদ্ভব ঘটবে। এটা নিঃসন্দেহে ভুল। সুতরাং সঠিক পন্থায় ইমামদের অনুসরণ (নিন্দিত) তাকলীদ নয়। নিন্দিত তাকলীদ হচ্ছে অন্ধ অনুসরণ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (তরজমা) ‘যদি না জান তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।’

    ‘উলামা মাশায়েখ ও দ্বীনদার মুবাল্লিগদের থেকে বিমুখ হয়ে শুধু বইপত্রের মাধ্যমে ইলম অর্জনের চেষ্টা করা এবং মনে করা যে, এখন বইপত্র আছে, ক্যাসেট আছে, প্রচারমাধ্যম আছে, ইলম অর্জনের জন্য এগুলোই যথেষ্ট, এটা ইলম অন্বেষণের একটা মারাত্মক ভুল পদ্ধতি।’

    তিনি আরো বলেন, ‘বিভেদের আরেকটি কারণ ‘ফিকহুল খিলাফ’ তথা মতপার্থক্যের প্রকার, বিধান ও নীতি সম্পর্কে এবং ‘ফিকহুল জামাআতি ওয়াল ইজতিমা’ তথা ঐক্য ও মতৈক্যের নীতি ও বিধান সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধির অভাব। কোন মতপার্থক্য বৈধ, কোন মতপার্থক্য বৈধ নয় অপর পক্ষকে কোন ক্ষেত্রে মাযূর মনে করা হবে, কোন ক্ষেত্রে মনে করা হবে না, তেমনি জামাআ ও ইজতিমার অর্থ কী, বিভেদ-অনৈক্যের ক্ষতি ও অনিষ্ট কী-এসব বিষয় সঠিকভাবে বোঝা উচিত।

    আমার সামনে এ কিতাবের ইন্টারনেট সংস্করণ রয়েছে।

    ৫. শায়খ আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আলমু’তায

    তিনি ‘আদদাওয়াতু ইলাল জামাআতি ওয়াল ইতিলাফ ওয়ান নাহয়ু আনিত তাফাররুকি ওয়াল ইখতিলাফ’ নামে একটি ছোট পুস্তিকা লিখেছেন। তাতে ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্বেষ-অনৈক্য পরিহারের আহবান জানিয়েছেন।

    এ কিতাবে শায়খ ড. সালিহ ইবনে ফাওযান আলফাওযানের অভিমতও রয়েছে। পুস্তিকাটিতে অনেক উদ্ধৃতি ও দলিলের সাথে বারবার বলা হয়েছে যে, ফুরূয়ী মাসআলায় মতভেদের পরও আমাদেরকে ঐক্য ও সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। সকল মতভেদ কিন্তু বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতাকে অপরিহার্য করে না। কোনো মতপার্থক্যের বিষয়ে যদি সংশয় হয় যে, তা সহনীয় কি না তাহলে এর সমাধান বড় বড় আলিমরা করবেন।

    ৬. মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম

    হযরত তার সফরনামা ‘সফর দর সফর’ এ কিরগিজিস্তানের বিবরণে লেখেন, ‘এখন সেখানকার পরিস্থিতি কতকটা এমন যে, একদিকে সাধারণ মুসলমান সোভিয়েত ইউনিয়নের চলমান মতবাদ ও কৃষ্টি-কালচারে প্রভাবিত হয়ে দ্বীনের প্রাথমিক বিষয়গুলো সম্পর্কেও অজ্ঞ এবং পশ্চিমা সংস্কৃতিতে মেতে ইসলামের বিধিনিষেধ থেকে সম্পূর্ণ উদাসীন; রাস্তাঘাটে চলাচলকারী নারীদের পোশাক থেকে বোঝার উপায় নেই যে, ইসলামী জীবনধারার সাথে তাদের ন্যূনতম যোগাযোগ আছে। অপর দিকে ধর্মীয় অভিভাবকদের মাঝে দ্বিতীয় জামাত করা, জুমার সাথে সতর্কতামূলক যোহর আদায় করা আর সালাফী বন্ধুদের উপস্থিতির সুবাদে ‘আরশে সমাসীন হওয়া’র মত জটিল জটিল মাসআলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

    ‘আলোচনার মূল বিষয় ছিল কিরগিজিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বীনী মেহনতকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং এ ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনী ব্যক্তিবর্গের করণীয় কী হওয়া উচিৎ। এ প্রসঙ্গে শ্রোতাদের কাছে সবিনয় নিবেদন করি যে, শাখাগত মাসআলায় ইখতিলাফ থেকে আপনাদের মনোযোগ ফিরিয়ে নিন। আপনারা নজর দিন উম্মাহর মৌলিক ও স্বতঃসিদ্ধ বিষয়গুলোর শিক্ষা ও প্রচার প্রসারে, অধিকাংশ জনসাধারণ যে সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ।
    ‘আলহামদু লিল্লাহ এ সম্মেলন শ্রোতাদের একথার উপর শেষ হয়েছে যে, আল্লাহর রহমতে কিছু ইখতিলাফ তো মিটে গেছে। বাকিগুলোর ব্যাপারে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এগুলোকে আলোচনার বিষয় বানাব না। বরং এখন আমাদের সর্বাত্নক চেষ্টা হবে দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোর দাওয়াত ও তালীমে মনোযোগ দেওয়া। (পৃ : ১৩৬- ১৩৮)

    রাশিয়ার সফরের বিবরণে লেখেন-

    ‘রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু তরুণ আরব ভার্সিটি থেকে কম বেশি পড়াশোনা করে এসেছে। তারা কট্টর সালাফী হয়ে দেশে ফিরেছে। যেহেতু দাগিস্তানের অধিকাংশ আলিম শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী, তাঁদের মাঝে দীর্ঘকাল থেকে তাসাওউফের সিলসিলা অব্যাহতভাবে চলে আসছে আর শাফেয়ী মাযহাবের (পরবর্তী কিছু আলিমের মধ্যে কোনো কোনো) বিদআতের ব্যাপারে কিছু ছাড় আছে-এ কারণে ঐসব তরুণ এখানে এসে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর তাকলীদ এবং তাসাওউফের বিরুদ্ধে তারা কঠোরভাবে বিরোধিতা শুরু করেছে। কেউ কেউ তো এখানকার প্রবীণ আলেমদের মুশরিক পর্যন্ত বলেছে। এর ভিত্তিতে এখানকার মুসলমানদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।

    ‘এ প্রেক্ষাপটে আমার আলোচনার মূল বিষয়বস্ত্ত ছিল, কমিউনিজমের আধিপত্য ও নির্যাতন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর রাশিয়ার মুসলমানদের কর্মপদ্ধতি কী হওয়া উচিৎ। এ প্রসঙ্গে আমি বললাম যে, আজ রাশিয়ার মুসলমানদের মাঝে যদি ইসলাম ও ইসলামী জীবনপদ্ধতির কোন চিহ্ন বাকি থেকে থাকে তা কেবল প্রবীণ উলামায়ে কেরামের মেহনতের ফসল। যারা কমিউনিস্ট শাসনের অন্ধকার রাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইলমে দ্বীনের আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন এবং যারা জীবন ও জীবিকার সকল সুযোগ-সুবিধা ও আরাম-আহার ত্যাগ করে ভবিষ্যত প্রজন্মের দ্বীন ও ঈমানের হেফাযত করেছেন।

    তাই আজকের তরুণসমাজের কর্তব্য, ঐসকল মহীরূহ উলামায়ে দ্বীনের যথার্থ মূল্যায়ন ও সম্মান করা। পাশাপাশি এটা কখনো ভোলা উচিৎ নয় যে, শাখাগত মাসআলায় ইখতেলাফ সব যুগেই ছিল। এ ইখতিলাফকে কেন্দ্র করে একপক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে কাফের মুশরিক বলে ফতোয়া দেওয়া হলে এতে কেবল ইসলামের শত্রুরাই লাভবান হবে। আজ তো রাশিয়ার অবস্থা এই যে, ইসলাম ও ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে দমনপীড়নের কারণে সাধারণ মুসলমানদের কাছে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষাই অস্পষ্ট হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে তাদের কাছে দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান পৌঁছানো অবশ্যকর্তব্য।

    মুসলমানদের এমন অসহায় পরিস্থিতিতে ‘আরশে সমাসীন হওয়া’, ‘তাকলীদ চলবে, না গাইরে তাকলীদ’-এ জাতীয় মাসআলায় ইখতিলাফ করা হলে দ্বীনের ক্ষতিসাধনে এর চেয়ে বড় কোনো ফেতনা আর হতে পারে না। তাই সাধারণ মুসলমানের কর্তব্য এটাই যে, তারা প্রবীণ আলেমদের সাথে জুড়ে থাকবেন। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে আপোসে সমাধা করে নেবেন। কলহ ও কোন্দলের দিকে যাবেন না। (পৃ :১৭৯-১৮০)

    আমি নিবেদন করছিলাম যে, বর্তমান সময়ে এটি গোটা মুসলিম জাহানের সমস্যা। এজন্য বিষয়টির সংশোধন অতি প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। তবে এর জন্য শর্ত হচ্ছে ইখলাস ও হিম্মত।
    Last edited by Hazi Shariyatullah; 10-20-2015, 12:10 PM.

  • #2
    আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
    Last edited by Badr; 10-24-2015, 05:56 PM.

    Comment


    • #3
      আসসালামু আলাইকুম।
      Last edited by Badr; 10-24-2015, 05:56 PM.

      Comment


      • #4
        মুসলমানদের এমন অসহায় পরিস্থিতিতে ‘আরশে সমাসীন হওয়া’, ‘তাকলীদ চলবে, না গাইরে তাকলীদ’-এ জাতীয় মাসআলায় ইখতিলাফ করা হলে দ্বীনের ক্ষতিসাধনে এর চেয়ে বড় কোনো ফেতনা আর হতে পারে না। তাই সাধারণ মুসলমানের কর্তব্য এটাই যে, তারা প্রবীণ আলেমদের সাথে জুড়ে থাকবেন। কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে আপোসে সমাধা করে নেবেন। কলহ ও কোন্দলের দিকে যাবেন না।

        Comment


        • #5
          السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

          মুহতারাম বড় ভাইয়েরা,
          আমি প্রথমেই আমার ভুল স্বীকার করছি যে, পূর্বের কমেন্টে আমি যা লিখেছি, যদিও তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তবু আরো মার্জিত ভাষা ব্যবহার করা সম্ভব ছিল কথাটি বলার জন্য। আমি দুঃখিত।
          আমি দুঃখিত, কারণ আমি কী বুঝাতে চেয়েছি তা আপনাদের কাছে স্পষ্ট করতে পারি নি। তাই আপনারা হয়তো বুঝেছেন যে আমি রাফউল ইয়াদাইন করা – না করা এ জাতীয় বিতর্ককে বুঝিয়েছি, যাতে আপনারা কখনো লিপ্ত হন না।
          আমি বোঝাতে চেয়েছি আমাদের কোন কোন ভাইয়ের ওই সব লেখাকে যেগুলোতে তারা মুতাআসসিবীনগণের ঐসব সারশূন্য শুবুহাত – হয়তোবা না বুঝেই – উল্লেখ করে থাকেন-
          *যেগুলো মুতাআসসিবগণ নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার করে থাকেন,
          *যেগুলোকে তারা وجوب الاعتصام بالكتاب والسنة এবং وجوب رد الخلافيات إلى الكتاب والسنة এর বিপক্ষে দলিল হিসাবে দাঁড় করিয়ে থাকেন,
          *যেগুলোকে কেবল আইম্মায়ে উম্মাহর ইজতিহাদী মাসআলাহই নয়, বরং প্রচলিত যে কোন গোমরাহীর পক্ষেই দলিল বানানো সম্ভব,
          *যেগুলোর ওপরে ভিত্তি করে তাদের অধিকাংশই উম্মাহর ওই অংশকে আমভাবে গোমরাহ বলে থাকেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা فتنة التعصب হতে রক্ষা করেছেন, যাদের মধ্যে উম্মাহর ওই সব মুজাদ্দিদীনও রয়েছেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা উম্মাহর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার সঠিক পথের রাহবার বানিয়েছেন,
          *সর্বপরি সেগুলো এমন কিছু শুবুহাত যেগুলো আমাদের জিহাদের মানহাজ বোঝার পথে বাঁধা ছিল। সেগুলোকে ছুড়ে ফেলে عقيدة الاعتصام গ্রহণ করেই আমরা এই পথে এসেছি। কিন্তু মুতাআসসিবগণ সেই শুবুহাত নিজেদের প্রয়জনে ব্যবহার করে থাকে।
          বোঝার সুবিধার্থে এখানে একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। শরিয়তুল্লাহ ভাই যে প্রবন্ধটির কিছু অংশ পোষ্ট করেছেন তার ১৪৪ নং পৃষ্ঠায় আছে:
          “যদি সাধারণ মানুষের কাছে উলামা মাশায়েখের আমলের বিপরিত কোন দাওয়াত পৌছে তাহলে তাদের জন্য যা করনীয় তা এই যে, তারা পরিষ্কার বলে দিবেন, ‘ভাই আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের নিজেদের পক্ষে গবেষণা ও পরিক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়, আপনাদের কথা যদি মানতেই হয় তাহলে আপনাদের ওপরই নির্ভর করে মানতে হবে, সেক্ষেত্রে ওলামা মাশায়েখের কথার ওপর নির্ভর করতে অসুবিধা কী?’”
          শ্রদ্ধেয় ভাই, লক্ষ করুন, যদিও কথাটি মুতাআসসিবগণ ইখতিলাফী মাসআলায় নিজেদের মতটি রক্ষার জন্য বলেছেন, (এবং আইম্মায়ে উম্মাহর ইজতিহাদী বিষয়গুলো হিদায়াত ও গোমরাহীর ইখতিলাফ নয়,) এই শুবহাটি কি যেকোন প্রচলিত গোমরাহীর পক্ষেই দলীল হিসাবে দাঁড় করানো যায় না? আমাদের যে সাধারণ শিক্ষিত ভাই জিহাদের দাওয়াত পেয়ে এই ভ্রান্ত দর্শনের আশ্রয় না নিয়ে ‘যে আলেমের কথা কিতাব ও সুন্নাহর সাথে মিলবে তার কথা সঠিক’ এই নীতি গ্রহণ করে জামাআতভুক্ত হয়েছেন, তিনি কি ভুল করেছেন? তিনি কি ওপরের দর্শনটি গ্রহণ করলে ঠিক করতেন? পরে সেই ভাইটির সামনে আমাদের পক্ষ থেকে এ ধরণের সারশূন্য শুবুহাত সম্বলিত প্রবন্ধ পেশ করা কি মুনাসিব হবে?
          এসব শুবুহাতের সারশূন্যতা উলামায়ে কেরামগন এগুলোর মতলব বুঝে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। সেগুলো এখানে উল্লেখ করে আমি আমার কথা দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না।
          তবে এর মানে এই নয় যে প্রবন্ধটিতে ভালো কিছু নেই। সেখানে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ আছে, যেগুলো অন্যরা شدة التعصب এর কারণে সাধারনত বলেন না।
          আর আমি কেবল ভাই ‘কালো পতাকা’ এর লেখার ব্যাপারে এই মন্তব্য করি নি, বরং এ বিষয়টি একাধিক জায়গায় দেখার পর একথা লিখেছি। আর ভাইয়ের লেখার মূল কথাগুলো তো উম্মাহর সর্বযুগের হক আলিমদের নিকট স্বীকৃত। আল্লাহ ভাইকে জাযায়ে খায়ের দিন। কিন্তু ভাই কথাগুলোর যে ফলাফল দাঁড় করিয়েছেন, সেখানে মুতাআসসিবদের দর্শনের প্রভাব স্পষ্ট। সেগুলোর ব্যাপারে আমি ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি মাত্র।
          আমি আমার ভারতীয় উপমহাদেশের ভাইদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা নিয়ে কেবল নাসীহাহ হিসাবে মনের কথাগুলো লিখেছি। আশা করি ভুল বুঝবেন না। আমি চাই আমার ভাইয়েরা الاعتصام بالكتاب والسنة এর হাতিয়ারে সুসজ্জিত থাকুক। সালাফে সালেহীনের আকীদাহ মানহাজই হোক তাদের পাথেয়। যাতে তারা আল্লাহ তাআলার নুসরাহ তাদের আরো কাছে থাকে। কমপক্ষে আমাদের মাননীয় রাহবারগণ যেন প্রচলিত কোন ভ্রান্তি দ্বারা প্রভাবিত না থাকেন। والله ما أردت إلا الخير.
          মুহতারাম ভাইয়েরা, আমি মনে করি قاعدة الجهاد এর নেতৃত্বদানকারী জীবিত ও মৃত মাশায়েখগণ আমাদের আদর্শ হতে পারে। যারা সালাফের আদর্শকে আকড়ে রেখেই উম্মাহকে সাথে নিয়ে কাজ করেছেন।
          মুহতারাম ইলমে ওহীর ওয়ারিস আমাদের বড় ভাইয়েরা, আমি এত কথা এখানে বলতে চাই নি। এভাবে আলোচনা করাটা মুনাসিবও মনে করছি না। তাই যদি আমার কথাগুলো বলার জন্য ই-মেইল এড্রেস বা অন্য কোন বিকল্প মাধ্যম দিতেন যেগুলোর মাধ্যমে আমি আমার কথাগুলো জানাতে পারি, তাহলে মনে হয় ভাল হত।
          والله إني لكم من الناصحين. وما فعلته إلا نصيحة لإخواننا الذين هم أولى بي من إخواني في الرحم.

          Comment


          • #6
            মূলত উপরের পোস্ট টি মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের একটা বই (উম্মাহর ঐক্যঃ পথ ও পন্থা ) থেকে নেওয়া হয়েছে...

            শরিয়াতুল্লাহ ভাইয়ের লিখাটির মাকসাদ ভালো এটা বুঝা যাচ্ছে...।
            জাযাকাল্লাহ খাইর বদর ভাই।

            Comment

            Working...
            X