Announcement

Collapse
No announcement yet.

সালাউদ্দিন আল আয়ুবির জেরুজালেম বিজয়।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সালাউদ্দিন আল আয়ুবির জেরুজালেম বিজয়।

    ইসলামী ইতিহাস:
    || সালাউদ্দিন আল আয়ুবির জেরুজালেম বিজয় - শাইখ ওমার সুলেইমান ||

    রাসূল (সঃ) যেমন বলেছেন- প্রতি একশ বছরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একজন মুজাদ্দিদ পাঠান। তিনি একজন পুনর্জাগরণকারী পাঠান। ঠিক সেই বছর সালাউদ্দিন আয়ুবি (র) জন্মগ্রহণ করেন। আরব বিশ্বের প্রতি তাঁর কোন আগ্রহ ছিল না। আর আসলে তিনি নিজেও আরব ছিলেন না, তিনি ছিলেন কুর্দি। সালাউদ্দিন জন্মগ্রহণ করার পূর্বে তাঁর মা (র) একটি স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন - আমি স্বপ্নে দেখি যে আমার গর্ভে একটি তরবারি ধারণ করে আছি। সুবহানাল্লাহ। তো, সালাউদ্দিন জন্মগ্রহণ করেন, তিনি নুরুদ্দিন (র) এর কাছে লালিত পালিত হন।

    সালাউদ্দিন বুঝতে পেরেছিলেন যে আগামী কাল (খুব দ্রুত) জেরুজালেম বিজয় করা সম্ভব নয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাই তিনি আবেগতাড়িত হয়ে কোন পদক্ষেপ নেন নি। আল কুদসে আক্রমণ করার পূর্বে তিনি মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত করেন। তিনি মুসলমানদের পত্র লিখতে শুরু করেন। তিনি মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র পত্র পাঠাতে লাগলেন। তাদের মনে করিয়ে দিলেন আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি তাদের কর্তব্যের কথা। আকিদা এবং ফিকহের উপর তিনি মিশরে সাপ্তাহিক ক্লাস নিতেন। তিনি পুনরায় রাসুলের দেখানো নিয়মে আযান দেয়ার পদ্ধতি চালু করেন। তিনি তাদেরকে পুনরায় সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।

    তারপর তিনি যখন মুসলিম বিশ্বের হৃদয় জয় করেন, তিনি তাঁর সেনাবাহিনী গঠন করেন। তারপর তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হন। তিনি একটার পর একটা শহর জয় করতে লাগলেন। তিনি শুধু মুসলমানদের নয়, অমুসলিমদের মনও জয় করলেন। কারণ তিনি কুফফারদের মত ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করেন নি। এভাবে যখন তিনি শহরগুলোকে ইসলামী শাসনের অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি মহিলা এবং শিশুদের রেহাই দেন। তিনি নিরপরাধ লোকদের ছেড়ে দেন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি অপরাধীদেরও ছেড়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি সারা দুনিয়ার কাছে একটি বার্তা পাঠান যে আমরা তাদের মত নই। ইবনে শাদ্দাদ (র) বলেন- আল কুদসের জন্য সালাউদ্দিনের মনে যে তীব্র বাসনা ছিল তা যদি কোন পর্বতের উপর রাখা হত, তবে পর্বত সমতল ভূমিতে পরিণত হত।

    প্রতিদিন তিনি আল কুদস নিয়ে কথা বলতেন। তিনি প্রতিদিন জেরুজালেম নিয়ে কথা বলতেন। "আমাদের অবস্থার দিকে তাকান! আমাদের কি করুণ অবস্থা! কিভাবে আপনি আল কুদস বিজয়ের কথা বলেন? আমাদের মিশরে সমস্যা আছে, সিরিয়াতে সমস্যা আছে। রাসূল (স) এর দেহ মোবারক প্রায় চুরি করে ফেলা হয়েছিল। হজ্ব বন্ধ করা হয়েছিল এক পথভ্রষ্ট দলের দ্বারা। আপনি কিভাবে জেরুজালেম বিজয়ের কথা বলেন! কিভাবে আমরা আবার জেরুজালেম বিজয় করবো?"

    কিন্তু তিনি প্রতিদিন এটা নিয়ে কথা বলতেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাম নিয়ে কথা বলতেন, তিনি আল কুদস নিয়ে কথা বলতেন। মি'রাজের রজনী ছাড়া রাসূল (স) কখনো আল কুদসে প্রবেশ করেন নি। কিন্তু তিনি জেরুজালেমকে ভালবাসতেন। তিনি আল কুদসকে ভালবাসতেন।

    ১১৮৭ সালের ২০ই সেপ্টেম্বর সালাউদ্দিন (র) তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে জেরুজালেমের সীমান্তে এসে উপস্থিত হন। তিনি আল হিত্তিন পাহাড়ে তাঁবু গাড়েন। প্রতি রাতে সালাউদ্দিন সেনা ছাউনিগুলো ভ্রমণ করতেন এবং বাতি জ্বালানো আছি কিনা তা পরীক্ষা করতেন। যদি তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য এগুলো জ্বালানো না থাকতো... লোকজন যখন এসে বলত আমরা কি আক্রমণ করবো না? আমরা কি এখনো প্রস্তুত নই? তিনি বলতেন - এখান থেকেই পরাজয়ের শুরু। প্রতি রাতে তিনি সৈন্যদের পর্যবেক্ষণ করতেন যে তারা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছে কিনা।

    অবশেষে যখন তিনি দেখলেন রাতের বেলা তাঁবুগুলোতে বাতি জ্বলছে, যখন তিনি দেখলেন এমন এক উম্মাহকে যারা গভীর রাতে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান এবং বিজয়ের জন্য কান্নাকাটি করছে- তিনি বললেন এখান থেকেই বিজয় আসে।
    অতঃপর তিনি ২৭শে রজব শুক্রবারে জেরুজালেমে প্রবেশ করেন। এ রাতেই ইসরা এবং মি'রাজ সংঘটিত হয়েছিল। এ দিনেই রাসূল (সঃ) মক্কা বিজয় করেন এবং মক্কায় প্রবেশ করেন।

    তিনি প্রবেশ করলেন। তিনি সেখানকার অধিবাসীদের উপর অত্যাচার এবং নির্যাতন করার পরিবর্তে যেভাবে তারা মুসলমানদের নির্যাতন করেছিল, তিনি তাদেরকে দয়া প্রদর্শন করেন। তিনি তাদের প্রতি ইসলামের সম্মান এবং মর্যাদার গৌরব দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেন। তিনি জেরুজালেমে প্রবেশ করেন সেভাবে যেভাবে উমর (রা) তাঁর ৫০০ বছর পূর্বে একফোঁটা রক্তপাত ব্যতীত প্রবেশ করেন।

    কিছু দিন আগে এক কমেন্টেটর মন্তব্য করেন - "যদি ইসরাইলিরা তাদের অস্ত্র পরিত্যাগ করে তবে ইহুদিরা প্যালেস্টাইন থেকে নিঃশেষ হয়ে যাবে, তাদের বিলুপ্তি ঘটবে। আর যদি আরবরা তাদের অস্ত্র পরিত্যাগ করে তাহলে তারা শান্তিতে বসবাস করবে।" কি এক জঘন্য মিথ্যা! কি এক জঘন্য মিথ্যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে! কি এক জঘন্য মিথ্যা এই ধর্মের বিরুদ্ধে! আমরা যখন জেরুজালেমে প্রবেশ করি আমরা নিরপরাধ মানুষের রক্ত ঝরাইনি।

    সুব হানাল্লাহ! ঐতিহাসিকরা বলেন- সালাউদ্দিন যখন জেরুজালেমে প্রবেশ করেন তখন সেখানকার মহিলারা তাদের মাথা কামিয়ে ফেলে এবং তাদের চেহারা কেটে ফেলে এবং তাদের সন্তানদের লোহিত সাগরে ফেলে দেয়। কারণ তারা ভয়ে ছিল যে তাদের সন্তানদের কি ঘটে। তারা নিজেদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে কারণ তারা ভয়ে ছিল যে, মুসলিম সৈন্যরা না জানি তাদের সাথে কেমন আচরণ করে। কারণ তারা মনে করেছিল - আমরা মুসলিমরা তাদের মত। তারা মনে করেছিল - মুসলমানরাও তাদের বিরুদ্ধে তেমন আচরণ করবে যেমন ক্রুসেডাররা মুসলমানদের বিরুদ্ধে করেছিল। কিন্তু আমরা তাদের মত নই।

    সেদিনের বিজয় শুধু অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারীতের বিজয় ছিল না, এটা শুধু একটা খ্রিস্টান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর বিজয় ছিল না - এ বিজয় ছিল জুলুমের উপর ক্ষমার, সীমালঙ্ঘনের উপর সহানুভূতির, অশুভ শক্তির উপর কল্যাণের বিজয়।

  • #2
    জাযাকাল্লাহ ভাই। আল্লাহ তায়ালা আপনার মেহনতকে কবুল করুন। আমিন।
    ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

    Comment

    Working...
    X