আন নাসর মিডিয়া মিডিয়া পরিবেশিত
“‘মুসলিম উম্মাহর প্রতি ইমামের বার্তা
।।শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– তৃতীয় পর্ব
“‘মুসলিম উম্মাহর প্রতি ইমামের বার্তা
।।শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– তৃতীয় পর্ব
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ: আমেরিকা শাইখের ভাবমূর্তি বিকৃত করতে চেষ্টা করেছে। তাকে একজন ‘ আধপাগল’ , ‘ রক্তপিপাসু’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে। তিনি নাকি সর্বত্র ধ্বংস বিস্তার করেন। ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে ‘ ৯/১১ কমিশন রিপোর্টে’ কংগ্রেসের বিবৃতিতে অত্যন্ত হাস্যকর মিথ্যাচার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে—
“মার্কিন সরকার বিশ্ববাসীকে কি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছে সেটা আগে ঠিক করতে হবে। সেই ম্যাসেজটির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত কার্যকারণও বের করতে হবে। আমরা পৃথিবী বাসীকে দেখাব যে, আমরা মানবিক নেতৃত্বের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমরা মানুষকে ‘ মানুষ’ হিসেবে বিবেচনা করি এবং সে অনুযায়ী আচরণ করি। আমরা দেখাবো যে – আমরা আইনের শাসন মেনে চলি এবং আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। আমরা আরও দেখাবো – আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের খোজ খবর রাখি।
আমেরিকা এবং তার মুসলিম বন্ধুরা ‘ মানবিক মর্যাদা’ কে সম্মান করার ব্যাপারে একমত হতে পারে এবং বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। মুসলিম বাবা-মায়েদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, উসামা বিন লাদেনের মতো সন্ত্রাসীদের কাছে সহিংসতা ও মৃত্যুর দর্শন ছাড়া দেওয়ার মতো কিছুই নেই। আমেরিকা এবং তার বন্ধুদের এক্ষেত্রে দারুণ একটা সুযোগ রয়েছে। আমরা মুসলিম পিতামাতাদেরকে এটা বুঝাব যে, আমাদের সাথে থাকলে তাদের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। আমরা যদি এই দৃষ্টিভঙ্গি আরব ও মুসলিম দেশগুলোর বুদ্ধিজীবীদের মাথায় দিয়ে দিতে পারি তবে কিছুকাল পড়ে অধিকাংশ মানুষ এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিবে”।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ: এই স্পষ্ট মিথ্যাচার আমেরিকা বরাবরই চর্চা করে আসছে। তারা বহু মানুষকে বলতে চেষ্টা করেছে – ‘ যদি তোমরা আল কায়দা ও তাদের পন্থার নিকটবর্তী হও, তাহলে ধ্বংস ও উজাড় করা ছাড়া তোমরা আর কিছুই করতে পারবেনা। আর যদি তোমরা আমাদের সঙ্গে কাজ কর, তবে দেখবে কত শান্তি, কত সমৃদ্ধি’ !
এভাবেই আমেরিকা তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয়। আমেরিকার প্রতিশ্রুতি কতইনা বড় প্রতারণা!! যারা তাদের সঙ্গে কাজ করবে তারা দ্বীন দুনিয়াতে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই লাভ করবে না। এতে কি কোন সন্দেহ আছে?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের শাইখ রহিমাহুল্লাহ’ কে তাওফিক দান করেছিলেন বিধায় তিনি আমেরিকার কুটিলতা ও অন্তঃসারশূন্য দাবি বাতিল প্রমাণিত করতে পেরেছিলেন। তিনি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও কৌশলপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করে আমেরিকার অপপ্রচারকে চপেটাঘাত করেছিলেন। তার সেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ছিল – গণ বিপ্লবে উৎসাহ দান, নিজের পক্ষ থেকে গণবিপ্লব সমর্থন, শুরাঈ প্রশাসনকে সাহায্য-সহায়তা দান। এমন একটি প্রশাসন গঠনের জন্য উম্মাহকে উৎসাহ দেয়া, যে প্রশাসনের পরিচালনায় মুসলিম জনসাধারণ বিপ্লবে অংশগ্রহণ করবে। গণবিপ্লবগুলোতে তার অংশগ্রহণের মাত্রা এমন ছিল যে, সেগুলোর ব্যাপারে তিনি নিজে কবিতা রচনা করেছেন।
শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ, আল কায়দা এবং আমার সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সেগুলোর অধিকাংশই মিথ্যা। আমরা কোন বিষয়ে নীরব থাকার অর্থ এটা নয় যে, আমরা সেটা পুরোপুরি সমর্থন ও সাব্যস্ত করছি। আমরা কেবল সেগুলোর ব্যাপারে দায়িত্বশীল যেগুলো আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বিবৃত করেছি। অন্যরা আমাদের উপর কিছু চাপিয়ে দিলে, আমাদের অজ্ঞানতায় আমাদের নামে প্রচার করলে সেটার জন্য আমরা দায়ী নয়।
আমরা ভালভাবেই জানি এবং শত্রুর কাছ থেকে আমাদের এমনটাই আশা করা উচিত যে, তারা মুসলিমদেরকে এই পথ ও পন্থা হতে দূরে সরানোর সবরকম চেষ্টা জারি রাখবে। মুসলিমদেরকে বিশুদ্ধ শরিয়াহ পদ্ধতি হতে বিচ্যুত করবে।
একাজ তারা অকস্মাৎ করে ফেলবে, এমনটা জরুরী নয়। এর জন্য তারা ধারাবাহিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ধীরে ধীরে তারা উক্ত লক্ষ্যপানে এগোবে। কখনো ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির মাধ্যমে, ব্যক্তিস্বার্থ বা লোভ-লালসা উস্কে দিয়ে, জিহাদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং মুসলিমদের মাঝে গৃহ যুদ্ধ বাধানোর জন্য বিভিন্ন উপহার উপঢৌকন প্রেরণের মাধ্যমে তারা এ কাজ করতে চেষ্টা করবে।
উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রধানদের, যায়নবাদী সৌদি নিয়ন্ত্রকদের এবং আতাতুর্কের শাসনব্যবস্থার লোকদের এক্ষেত্রে গভীর হাত রয়েছে। কিন্তু তাদের সবচেয়ে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেটা, যেটা তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে করে থাকে।
এরা উম্মাহর সাধারণ অংশ এবং মুজাহিদদের মধ্যেকার অসচেতন অংশ, সাধারণভাবে মুসলিমদের মাঝে এবং বিশেষভাবে মুজাহিদিনের মাঝে শরীয়ত বিরোধী বিভিন্ন দাওয়াত প্রচার করে। উদাহরণতঃ ক্ষমতা লাভের পন্থা হলো – জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল অথবা অনাচার পাপাচারের পন্থা অবলম্বন করে হলেও যেকোনো মূল্যে কর্তৃত্ব লাভ করতে হবে।
এছাড়া মাসলাহাত বা কল্যাণ বিবেচনার নামে মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট করা, কাতার বিক্ষিপ্ত করা, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি থেকে ছিটকে বের হয়ে আসা ইত্যাদির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তারা উম্মাহকে বিভ্রান্ত করছে। এমনিভাবে দুটো অনিষ্টের মাঝে অধিক তীব্র ও মারাত্মক অনিষ্ট অপসারণের নামে মুসলিম ভূমিগুলোতে চালানো আগ্রাসনের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ দখলদারদেরকে সাহায্য করার পক্ষে যৌক্তিকতা দেখিয়ে উম্মাহকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া পশ্চিমারা ইসলামিক ভ্রাতৃত্বের চেয়ে এবং মুসলিম উম্মাহর পতাকাতলে সমবেত হওয়ার পরিবর্তে জাতীয়তাবাদী সম্পর্কসূত্রকে প্রাধান্য দেয়ার দাওয়াত দিচ্ছে। ক্রমান্বয়ে প্রয়োজন বিবেচনায় এ ধরনের আরও বিভিন্ন আত্মপ্রতারণামূলক মিথ্যা ও কৃত্রিম দাবির মাধ্যমে ‘ ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও সংবিধানকে শাসনতন্ত্র হিসেবে মেনে নেয়ার দিকে আহবান জানাচ্ছে।
এমনিভাবে প্রতি অঞ্চল এবং প্রত্যেক ভূখণ্ডের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে – এমন কথা বলে মুসলিমদেরকে তাদের ভাইদের সাহায্য সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখছে।
একইভাবে আমাদের জানা রয়েছে, কেউ কেউ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’ র সঙ্গে ন্যূনতম পূর্ব সম্পর্ক থাকলেও সেটা দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। যদিও সে সম্পর্ক হয় অনেক দূরবর্তী এবং বহুমাধ্যম ঘুরে আসা। এরপর শাইখের নাম ব্যবহার করে যখন তাদের কিছুটা প্রতিষ্ঠা লাভ হয় অথবা কিছু কিছু স্বার্থ অর্জন হয় তখন তারা তাঁর আদর্শ থেকে পিছু হটতে শুরু করে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।
এসব কিছুই আমরা জানি এবং তাদের কাছ থেকে আমরা এগুলোই আশা করি।
আমরা আল্লাহর কাছে ফেতনা হতে মুক্তির দোয়া করি। আমরা আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হিসেবে সেই সত্যের ওপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতে চাই – যা আমরা বিশ্বাস করি, যার প্রতি আমরা মুসলিমদেরকে আহ্বান করি এবং বরাবরই আল্লাহর অনুগ্রহে যার দাওয়াত আমরা দিয়ে যাই।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------- শেষ পর্ব
Comment