Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || দ্বিতীয় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || দ্বিতীয় পর্ব

    ফিলিস্তিনের স্মৃতি
    ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
    এর থেকেদ্বিতীয় পর্ব


    বাইতুল মাক্‌দিস থেকে কাবুল

    আমার ভাইয়েরা, গত মজলিসে আমরা ফিলিস্তিনের জিহাদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। বস্তুত আরবের যে দেশটিতে নির্বিচারে হত্যা ও নিপীড়ন চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে সেটা হলো ফিলিস্তিন। কোনো আরব মুসলমান বা পৃথিবীর অন্য কোনো মুসলমান এ-ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা পাবেন না। কারণ ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে মুসলমানেরা যথাযথ ভূমিকা পালন করেন নি বা করছেন না। কোনো মুসলমানের হাঁচির জবাব দেয়া ফরযে কেফায়া অথবা সুন্নতে কেফায়া। কেউ হাঁচি দিয়ে দোয়া পড়লে উপস্থিত কাউকে না কাউকে তার জবাব দিতে হবে। অন্যথায় সবাইকে গুনাহগার হতে হবে। সহিহুল বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারি এবং সহিহু মুসলিম-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ শারহুন নাবাবিতে এ-ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। কারো আগ্রহ জাগলে দেখে নেবেন।

    হাঁচির উত্তর দেয়ার বিধান সম্পর্কিত ব্যাখ্যা যেমন রয়েছে তেমনি এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের কী হক তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে যদি মুসলিম জাতি আক্রান্ত হয় এবং পীড়নের শিকার হয়, তাহলে তাদের উদ্ধার ও সহযোগিতায় গোটা মুসলিম জাতির এগিয়ে আসা ফরয। যদি কোনো দেশের মুসলমানেরা এগিয়ে আসে এবং আক্রান্ত দের উদ্ধারের জন্যে প্রচেষ্টা ব্যয় করে তাহলে হয়তো পাপ থেকে বাঁচা যাবে। অন্যথায় সব মুসলমানই গুনাহগার হবে।

    দুঃখের কথা, ফিলিস্তিনিদের প্রতি কোনো মুসলিম রাষ্ট্রই সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসে নি এবং যথাযথ ভূমিকা পালন করে নি। মুসলিম বিশ্ব যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করতো তাহলে ১৯৬৭ সালের বিপর্যয় এড়ানো যেতো। ১৯৬৭ সালের বিপর্যয় এতোটাই ভয়াবহ ছিলো—আমি মনে করি না আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের জীবনে এ-ধরনের বিপর্যয় কখনো ঘটেছিলো।

    ১৯৬৭ সালের ৫ই জুন ইসরাইল পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মাত্র তিন ঘণ্টার হামলায় সে জর্ডান, মিসর, ইরাক ও সিরিয়ার আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। মাত্র তিন ঘণ্টায় ছোটো একটি রাষ্ট্রের হাতে তিনটি দেশের পরাজয় ঘটে। ইসরাইল—যার আয়তন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর বিশ ভাগের একভাগও নয়, যার জনগোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর জনগোষ্ঠীর পনেরো ভাগের একভাগও নয় এবং যার সৈন্যসংখ্যা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সৈন্যসংখ্যার অর্ধেকও নয়—সেই ইসরাইলের হাতে তিনটি রাষ্ট্রের পরাজয় ঘটে। আরবদের কপালে এই কলঙ্কতিলক কেয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে ।

    হামলার তিনদিনের মাথায় ইসরাইলি স্থলবাহিনী সুয়েজ এলাকা দখল করে নেয়। একই গতিতে তারা মিসর ফ্রন্টে গাজা ও সিনাই উপত্যকা, জর্ডান ফ্রন্টে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীর এবং সিরিয়া ফ্রন্টে গোলান মালভূমি দখল করে নেয় । হস্তান্তর ছাড়া গোলান মালভূমির পতনের কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না।

    গোলান মালভূমিতে বিশাল বিশাল পাহাড়ের সমাবেশ এবং সেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। বিমান থেকে ছয়মাস বোমা বর্ষণ করেও তার একটি পাহাড় ধসানো যেতো না। আমি মনে করি, এই রাষ্ট্রগুলো দখল করতে পাঁচশো ইহুদিও নিহত হয় নি। অথচ [আফগানিস্তানের] কেবল জাজি[1] ফ্রন্টে—সেই রমজানে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম — শত শত রুশ সেনা নিহত হয়েছে। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের তিনটি ফ্রন্ট মিলিয়েও সে-পরিমাণ ইহুদি সেনা নিহত হয় নি। ইসরাইল যা করেছে ঠিকই করেছে। তাদের তো কেউ প্রতিরোধ করে নি।

    মিসরীয় সেনাবাহিনী সংবাদ সম্মেলন করে জোর গলায় ঘোষণা দিয়েছিলো, আমরা ইসরাইল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। তারা এমন ভাব দেখিয়েছিলো যে, হে সমুদ্রের মৎসকুল, তোমরা ক্ষুধার্ত হও; আমরা ইহুদিদের ধরে তোমাদের মুখের ওপর নিক্ষেপ করবো। তারা ভেবেছিলো তেলআবিব তাদের দখলে চলে আসবে এবং মিসরের গায়িকা উম্মে কুলসুম[2] সেখানে গান গাইবে। তারা এগিয়ে গেলো এবং সিনাই উপত্যকায় একমাসব্যাপী অবস্থান করলো। ওখানে তারা ভোজ ও সংগীতে মেতে থাকে। তারা জপতে থাকে... উম্মে কুলসুম এই যুদ্ধে তোমার সঙ্গে আছে... আবদুল হালিম এই যুদ্ধে তোমার সঙ্গে আছে... আরো নানা কিছু। আফসোস, আমরা একবারও তাদের বলতে শুনি নি এই যুদ্ধে আল্লাহপাক তোমার সঙ্গে আছেন।

    প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসেরের[3] নিকট রিপোর্ট পেশ করা হলো: সোমবারের[4] আক্রমণ কারো কোনো ক্ষতি হয় নি; কেউ হতাহত হয় নি। কোনো ভূমি হাতাছাড়া হয় নি, কেউ পালিয়ে যায় নি, কোনো কিছুর পরিবর্তন ঘটে নি মিসরীয় সৈন্যরা এমনি এমনি অবস্থান করেছে। তারা মরুভূমিতে বাঙ্কার বা প্রতিরক্ষাদুর্গ নির্মাণ করে নি; যদিও সৈনিকদের জন্যে আবশ্যক হলো বাঙ্কার বা প্রতিরক্ষাদুর্গ নির্মাণ করা। তারা যে-বাঙ্কার নির্মাণ করে নি তার কারণ আছে। একজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট আবদুন নাসেরকে জিজ্ঞেস করলেন, `আপনারা কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন?' প্রেসিডেন্ট বললেন, আপনি কি মনে করেন আমরা যুদ্ধ করবো? আপনি যা দেখছেন তার সবকিছু হলো রাজনৈতিক প্রদর্শনী। গোলান মালভূমি থেকে ট্যাঙ্কগুলোকে ফিরে আসতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    চার্চিল বলেন[5] ‘যখন সিরিয়ার গোলন্দাজ বাহিনী ইসরাইলে দখলকৃত এলাকায় স্তূপীকৃত আবর্জনা ও শুকনো ঘাসের ওপর হাজার হাজার টন গোলা ফেলছিলো তখন ইসরাইল তাদের ট্যাঙ্কবহরের বেষ্টনীতে বুলডোজার দিয়ে গোলান মালভূমির দিকে পথ তৈরি করছিলো।’ তিনি আরো বলেন, ‘মিসরীয় ট্যাঙ্কগুলোর প্রত্যাবর্তনের সময় তাদের একটি ট্যাঙ্কের চেইন বিকল হয়ে পড়ে। সেই ট্যাঙ্ক-চালক তার ট্যাঙ্কের গোলামুখ মালভূমিতে নিয়োজিত ইসরাইলের ট্যাঙ্কবহরের দিকে তাক করে এবং হামলা করে বসে। সে তাদের ছয়টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে এবং আট ঘণ্টার জন্যে ইসরাইলের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়। বিধ্বস্ত ট্যাঙ্কগুলো অন্যান্য ট্যাঙ্ক চালনার জন্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’ সেই মুহূর্তে ইসরাইল এই সামান্য বাধার মুখে পড়ে।

    জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী সা'দ জুমআ[6]–যিনি সেই ভয়াবহ বিপর্যয়কালে জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন—বলেন, ‘আমরা এবং সিরিয়া একমত হয়েছি, আকাশপ্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আমরা শত্রুদের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখবো।' ইনিই জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী, ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি তাঁর কৃতপাপাচারের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যে আল্লাহর দরবারে তওবা করেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, যাঁরা প্রতিটি যুদ্ধফ্রন্টে বিশ্বাসঘাতকের কর্মকাণ্ড করেছিলেন, তাদের সবার অপদস্থতার কারণে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। সা'দ জুমআ মৃত্যুর পূর্বে তাঁর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব আল্লাহর নিকট সমর্পণ করে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলন الله أو الدمار[আল্লাহর পথ অথবা ধ্বংস], أبناء الأفاعي [সর্প-সন্তান], المؤامرة ومعركة المصير[ষড়যন্ত্র ও শেষ লড়াই] ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থ; এসব গ্রন্থ লিখে তিনি মর্মযাতনা ও যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে সান্ত্বনা লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি সুস্থ থাকেন নি। ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি যা দেখেছিলেন সবই সত্য বর্ণনা করেছিলেন। তিনি যা দেখেছিলেন ও জেনেছিলেন জনসম্মুখে তা প্রকাশ করে দিয়ে কৃতপাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন।

    সা'দ জুমআ বলেন,‘সিরিয়ার সঙ্গে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছি যে আকাশপ্রতিরক্ষাব্যবস্থা অটুট রাখা আমাদের আবশ্যক কর্তব্য। এ-ব্যাপারে আমি সকাল এগারোটার দিকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’

    সা'দ জুমআ বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসেরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। জিজ্ঞেস করি, “পরিস্থিতি কী?” প্রথমে আবদুন নাসের বলেন, “আমরা শত্রুদের তিনটি বিমান ভূপাতিত করতে পেরেছি। আমাদের বিমান তেলআবিবের আকাশে রয়েছে। মহারাজ আপনার কৌশল সুদৃঢ় হোক।’

    এই তারবার্তার লিখিত কপিতে “সালমা” নামের স্বাক্ষর ছিলো। এমনকি সঙ্কেতলিপিতেও আবদুন নাসেরের নাম “সালমা” ছিলো; সালমান নয়। দুঃখ ও আফসোস হলো, এই তারবার্তা ইসরাইলের হস্তগত হয়। আমি সেই লড়াইয়ের সময় পশ্চিমতীরে ছিলাম। ইসরাইলি রেডিও স্টেশন সেই তারবার্তা ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার করছিলো: 'আমরা শত্রুদের তিনটি বিমান ভূপাতিত করতে পেরেছি। আমাদের বিমান তেলআবিবের আকাশে রয়েছে। মহারাজ আপনার কৌশল সুদৃঢ় হোক। স্বাক্ষর— সালমা।' সবকিছু ছিলো রহস্যময় ও হতাশাব্যঞ্জক।

    সেই দিন সকাল এগারোটার সময়ই মিসরের বিমান চলাচলব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয় এবং তাদের কোনো বিমান ইসরাইলি সীমান্তে পৌঁছতে পারে নি। ঠিক সেসময়ে জর্ডান যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে এই আশ্বাসে যে মিসরীয় বাহিনীর বিমান তেলআবিবের আকাশে রয়েছে।

    সা'দ জুমআ বলেন, “আমরা সিরিয়ার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা বলেন, আমাদেরকে এক ঘণ্টা সময় দিন। আমরা বারোটার সময় আবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা বলেন, আমাদেরকে এক ঘণ্টা সময় দিন। কিন্তু তার এক ঘণ্টা পরও তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব আসে না।' তিনি বলেন 'এখনো আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।' ১৯৬৭ সালে মসজিদুল আকসার পতন ঘটে এবং ইহুদিরা তাতে প্রবেশ করে। আমি তখন সেখানে ছিলাম। অর্থাৎ, ইহুদিরা যখন মসজিদুল আকসা দখল করে নেয় তখন আমি পশ্চিমতীরে অবস্থান করছি। তারা মসজিদে প্রবেশ করে এবং চিৎকার শুরু করে দেয়। তারা চিৎকার করছিলো এবং আমি শুনছিলাম : 'মুহাম্মদ মারা গেছে; মুহাম্মদ মারা গেছে এবং কিছু অবলা তার উত্তরাধিকারী হয়েছে। মোশে দায়ান (Moshe Dayan)[7] জেরুজালেম থেকে ইয়াসরিব পর্যন্ত এই ঘোষণা দেন।

    আমরা মিসরীয় সেনাবাহিনীর আলোচনায় ফিরে আসি। ইসরাইলি ট্যাঙ্কবহর এগিয়ে আসে এবং সুয়েজ খাল দখল করে নেয়। মিসরীয় সৈন্যদল মরুভূমিতে অবস্থান করতে থাকে। তাদের একটি বৃহৎ অংশ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মারা পড়ে। তাদের উদ্ধার কাজের জন্যে রেডক্রসকে অনুমতি দেয়া হয়। যেসব সৈন্য কায়রোতে ফিরে যেতে ইচ্ছুক, ইহুদিরা তাদেরকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তারা হাজার হাজার মিসরীয় সৈনিককে বন্দি করে এবং তেলআবিবে পাঠায়। তেলআবিবে বন্দি সৈনিকদের জিজ্ঞেস করা হয়, 'তোমরা এখন কোথায়?' স্বাভাবিক কারণেই তাদের চোখ বাঁধা ছিলো। তারা জবাব দেয়, ‘আমরা জানি না আমরা এখন কোথায়।' ইহুদিরা বলে, 'তোমরা এখন তেলআবিবে আছো। উম্মে কুলসুম তেলআবিবে তোমাদের গান গেয়ে শোনাবে।' হায়, উম্মে কুলসুম তেলআবিবে গান গেয়েছিলো!

    এই লজ্জাজনক পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ শেষ হয়, যার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না।



    [1] পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। এখানে ১৯৮৭ সালের ২০ শে মে থেকে ১৩ই জুন পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুজাহিদদের পক্ষে নেতা ও কমান্ডার ছিলেন জালালুদ্দিন হক্কানি, মুহাম্মদ আনোয়ার ও আবদুল্লাহ আযযাম এবং সোভিয়েত বাহিনীর পক্ষে নেতা ও কমান্ডার ছিলেন বরিস গ্রোমভ, গর্ভাচেভ, নাজিবুল্লাহ ও মুহাম্মদ রফি। এখানে বহু রুশ সেনা হতাহত হয়। এই যুদ্ধ জাজির যুদ্ধ নামে পরিচিত।

    [2] উম্মে কুলসুম: বিখ্যাত আরব গায়িকা; ‘প্রাচ্যের নক্ষত্র’ অভিধায় পরিচিত। তাঁর আসল নাম ফাতেমা ইবরাহিম। মিসরের সমুদ্রতীরবর্তী জেলা দাকহালিয়া-এর তামাই আয- যাহায়ারা অঞ্চলে তিনি ১৯১০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন এবং কুরআন শরিফ হিফয করেন। চমৎকার কণ্ঠের অধিকারী হওয়ার কারণে সংগীতে অল্প বয়সেই খ্যাতি অর্জন করেন। সমকালীন বিখ্যাত কবি আহমদ শাওকি, হাফিয ইবরাহিম, আযিয আবাযা, আহমদ রামি প্রমুখের লেখা গানে সুরারোপ করেন। অন্যান্য শ্রেষ্ঠ আরব কবি ও পাকিস্তানের জাতীয় কবি মুহাম্মদ ইকবালের লেখা গানেও সুর দেন তিনি। গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি কয়েকটি ফিল্মে অভিনয়ও করেন। বিপুল বিত্তের অধিকারী উম্মে কুলসুম সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন এবং মিসরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে দান করতেন।

    [3] জামাল আবদুন নাসের ১৫ই জানুয়ারি ১৯১৮ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার আসইয়োত জেলার বনি মুর (বাকোস) এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। আবদুন নাসের ও ফাহিমা দম্পত্তির প্রথম সন্তান তিনি। জামাল আলেকজান্দ্রিয়া ও কায়রোতে পড়াশোনা করেন। তিনি স্কুল ও কলেজে ভালো ছাত্র ছিলেন না। উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে মাত্র ৪৫ দিন উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ইজিপ্সিয়ান সোশ্যালিস্ট পার্টির মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৩৭ সালের মার্চ মাসে রয়্যাল মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তির আবেদন করে ব্যর্থ হওয়ার পর আইন কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু আইন কলেজে অকৃতকার্য হওয়ার পর পুলিশ একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সেক্রেটারি অব স্টেট ইবরাহিম খাইরি পাশার সহায়তায় সামরিক কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩৮ সালে সেকেন্ড লেফট্যানেন্‌ট পদে কমিশন লাভ করেন। সামরিক কলেজে আনোয়ার সাদাত ও আবদুল হাকিম আমের তাঁর সতীর্থ ছিলেন। ১৯৪৩ সালে কায়রোর রয়্যাল মিলিটারি একাডেমিতে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে স্বাধীন কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ২৩ শে জুলাই জেনারেল মুহাম্মদ নাজিবের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাজা প্রথম ফারুককে উৎখাত করেন। ১৯৫৩ সালে ১৮ই জুন মুহাম্মদ নাজিব প্রেসিডেন্ট এবং জামাল ডেপুটি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জামাল ১৮ই জুন ১৯৫৩ থেকে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ এবং ৪ঠা মার্চ ১৯৫৪ থেকে ১৮ই এপ্রিল ১৯৫৪ পর্যন্ত ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ১৪ই নভেম্বর তিনি রেভুল্যশনারি কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২৩ শে জুন ১৯৫৬ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭০ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি পদে আসীন থাকেন। একই সঙ্গে তিনি ১৯৫৪ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ই মার্চ ১৯৫৪, ১৮ই এপ্রিল ১৯৫৪ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬২, ১৯ শে জুন ১৯৬৭ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৫ই অক্টোবর ১৯৬৪ থেকে ৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৭০ পর্যন্ত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (NAM)- এর মহাসচিব ছিলেন। 'প্রথম ফিলিস্তিন যুদ্ধের স্মৃতি', 'মিসরের স্বাধীনতা বিপ্লবের দর্শন', “মুক্তির পথে' তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
    জামাল আবদুন নাসের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ইসলামি আন্দোলনের নেতা- কর্মীদের কাছে অপ্রিয় ছিলেন। তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের হাজার হাজার কর্মীকে কারারুদ্ধ করেছিলেন, তাদের ভয়াবহ নির্যাতন করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাইয়্যিদ কুতুবকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন।

    [4] ১৯৬৭ সালে যেদিন ইসরাইল একই সঙ্গে সিরিয়া, মিসর ও জর্ডানে আক্রমণ করেছিলো।

    [5] এখানে (এএ) চার্চিল বলে Randolph Churchill বা Winston Churchill- কে বোঝানো হয়েছে। তাঁরা দুজন যৌথভাবে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ওপর The Six Day War গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটি ১৯৬৭ সালে Houghton Mifflin Company থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই উইনস্টন চার্চিল ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ও লেখক স্যার উইনস্টন চার্চিল নন। কারণ তিনি ১৯৬৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

    [6] সা'দ মুহাম্মদ জুমআ ১৯১৬ সালে দক্ষিণ জর্ডানের তাফিলা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জাতিতে তিনি কুর্দি। দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের ২৩ শে এপ্রিল থেকে ৭ই অক্টোবর পর্যন্ত জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এর আগে তিনি আম্মানের মেয়র (১৯৫৪-১৯৫৮), উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৮-১৯৫৯), ইরান ও সিরিয়ায় রাষ্ট্রদূত (১৯৫৯-১৯৬২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত (১৯৬২-১৯৬৫), চিফ অব রয়্যাল হাশেমিয়া কোর্ট (১৯৬৫) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এ-বছরই তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। সা'দ জুমআর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: مجتمع الكراهية বা ঘৃণার সমাজ।

    [7] موشي دايان (জন্ম ১৯১৫, মৃত্যু ১৯৮১) : ইসরাইলি রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৫৬ সালের যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। মিসর, সিরিয়া ও জর্ডানের বিরুদ্ধে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৭ সালে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ইসরাইল ও আরবের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন না মনে করে ১৯৭৯ সালে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত কৃষিমন্ত্রী এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ফিলিস্তি নদখল যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।





    আরও পড়ুন​
Working...
X