Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || অষ্টম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || অষ্টম পর্ব

    ফিলিস্তিনের স্মৃতি
    ।।শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
    এর থেকে – অষ্টম পর্ব


    কাবুল থেকে বায়তুল মাক্‌দিস : এক

    সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা আমাদের নফসের অনিষ্টতা থেকে এবং আমাদের কাজের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। আল্লাহপাক যাকে সরল পথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ সরল পথে পরিচালিত করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সা. আল্লাহপাকের বান্দা ও তাঁর রাসুল। তিনি তাঁর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন এবং উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আমাদের নেতা মুহাম্মদ সা., তাঁর পরিবার এবং তাঁর সঙ্গীদের ওপর আল্লাহপাক রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহপাকের কাছে পানাহ চাই। আল্লাহপাক এরশাদ করেন—

    أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِن دُونِهِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ ﴿٣٦﴾‏ وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّضِلٍّ ۗ أَلَيْسَ اللَّهُ بِعَزِيزٍ ذِي انتِقَامٍ ﴿٣٧﴾‏ وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ ۚ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ ۖ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ ‎﴿٣٨﴾‏


    'আল্লাহপাক কি তাঁর বান্দার জন্যে যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অপরের ভয় দেখায়। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্যে কেনো পথপ্রদর্শক নেই। এবং আল্লাহ যাকে হেদায়াত করেন তার জন্যে কোনো পথভ্রষ্টকারী নেই; আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, দণ্ডবিধায়ক নন? তুমি যদি এদের জিজ্ঞেস করো, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? এরা অবশ্যই বলবে, 'আল্লাহ'। বলো, তোমরা ভেবে দেখেছো কি, আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে। বলো, আমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করে।' [সুরা যুমার : আয়াত ৩৬-৩৮]

    বিশ্বাস ও রক্তের অভিন্নতা

    রক্তাক্ত কাবুলের যে কাহিনি, আক্রান্ত ফিলিস্তিনের কসাইখানার একই কাহিনি। যে-রক্ত হিন্দুকুশে প্রবাহিত হচ্ছে সেই একই রক্ত গাজায় শুকাচ্ছে। হেলমান্দ, বালখ ও হেরাতে সন্তানহারা আর বিধবাদের যে-বিলাপ শোনা যায়, শোনা যায় যে হাহাকার একই বিলাপ আর একই হাহাকার শোনা যায় নাবলুস, উম্মে নুর, খলিল ও জেরুজালেমে। তা একই কাহিনি; আক্রান্ত ইসলামের কাহিনি—যে-ইসলামের ওপর পুরো বিশ্ব ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই দীনের কাহিনি—যে-দীনের ওপর গোটা দুনিয়া আক্রমণ করেছে। হিংস্র খাদকদের কাহিনি—যে খাদকেরা মুসলমানের দস্তরখানে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধিই করে চলছে।

    জিহাদ যখন থেমে যায়, শত্রুর অন্তর থেকে যখন ভয় দূর হয়ে যায় এবং মুসলমানদের অন্তরে দুর্বলতা বৃদ্ধি পায় তখন উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যায় এবং খড়কুটায় পরিণত হয়। তাদের 'সমগ্রতা' অর্থহীনতা ছাড়া আর কিছু বোঝায় না। মনে রাখুন, যেদিন তরবারি খাপমুক্ত হবে, যেদিন হাতে হাতে ঝলকে উঠবে কৃপাণ, যেদিন শোনা যাবে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেদিনই কেবল শেয়ালেরা তাদের গর্তে আশ্রয় নেবে।

    এই দীন সর্বশ্রেষ্ঠ দীন। বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ দীন। আমাদের রব আমাদের জন্যে আমাদের রাসুলকে প্রেরণ করেছেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—

    بُعِثْتُ بَيْنَ يَدَيْ السَّاعَةِ بِالسَّيْفِ حَتَّى يُعْبَدَ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَظِلِّ رُمْحِي وَجُعِلَ الذُّلُّ وَالصَّغَارُ عَلَى مَنْ خَالَفَ أَمْرِي وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ


    'আমি কেয়ামতের পূর্বে তরবারি হাতে প্রেরিত হয়েছি, যাতে এক আল্লাহর এবাদত করা হয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমার বর্শার ছায়ায় আমার রিযিক নির্ধারিত আছে। যে আমার নির্দেশ অমান্য করবে তার জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা। যে যে-দলের অনুকরণ করবে সে সেই দলের অন্তর্ভূক্ত।[1]

    তরবারি ছাড়া তাওহিদ রক্ষা করা যায় না

    এই দীন তরবারির মাধ্যমে এসেছে, তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তরবারির মাধ্যমেই টিকে থাকবে। তরবারি যখন খোয়া যাবে, নষ্ট হবে— এই দীনও নষ্ট হবে। এই ধর্ম শক্তির ধর্ম, শৌর্যবীর্যের ধর্ম। এই ধর্ম ভীতির ধর্ম। এই ধর্ম নেতৃত্ব ও অভিযানের ধর্ম। এই ধর্ম সম্মান ও মর্যাদার ধর্ম । ভীরুতার এখানে স্থান নেই এবং দুর্বলতা এখানে অপরাধ। ভীরু ও দুর্বল জাহান্নামের উপযুক্ত। আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন—

    إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا فَأُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءَتْمصِيرًا


    “নিশ্চয় তারা ঐ সমস্ত লোক ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটাবে নিজেদের প্রতি জুলুম করা অবস্থায় এবং ফেরেশতারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে-তোমরা কেমন ছিলে? তারা বলবে, আমরা দুনিয়াতে নিজেদেরকে দুর্বল মনে করেছিলাম। ফেরেশতারা বলবে, আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিলো না যে তোমরা তাতে হিজরত করতে পারো? সুতরাং তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম। সেটা কতোই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল।' [সুরা নিসা : আয়াত ৯৭]

    সুতরাং 'দুর্বলতা' আল্লাহর কাছে আপত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। নিশ্চয় তা কঠিন অপরাধ; অপরাধী অবশ্যই জাহান্নামের উপযুক্ত। তবে আল্লাহপাক যাদেরকে ছাড় দিয়েছেন তাদের কথা ভিন্ন। তারা হলো অন্ধ, খোঁড়া ও অসুস্থ। এরপর আল্লাহপাক এরশাদ করেন—

    إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيعُونَ حِيلَةً وَلَا يَهْتَدُونَ سَبِيلًا (۹۸) فَأُولَئِكَ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَعْفُو عَنْهُمْ وَكَانَ اللَّهُ عَفُوا غَفُورًا


    “তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোনো কৌশল অবলম্বন করতে পারে না এবং যারা সামনে কোনো পথ পায় না (তাদের কথা ভিন্ন)। অচিরেই আল্লাহপাক তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।' [সুরা নিসা আয়াত ৯৮-৯৯]

    আমরা কিছুতেই তোতলামি করছি না বা আবোলতাবোল বকছি না। আমরা যা বলছি স্পষ্ট করে বলছি। আমরা আমাদের দীনকে মানবিকতার কল্যাণে অগ্রগামী করতে চাই। নিশ্চয় এই দীন সমস্ত মানুষকে উদ্ধার করার জন্যে এসেছে। গোটা দুনিয়ার মানুষের কল্যাণের জন্যে এসেছে। মানুষকে উদ্ধার করার জন্যে এই দীন এসেছে বলতে পৃথিবীর সব মানুষকেই বোঝায়। 'মানুষ' বলতে আমরা পৃথিবীর সব মানুষকেই বুঝি। আমরা বলতে লজ্জাবোধ করবো না যে, নিশ্চয় আমাদের দীন আমাদের শত্রুদের ওপর আক্রমণ করতে আদেশ দিয়েছে। এবং শত্রুকে আক্রমণ করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফরয । আল্লাহপাক ইরশাদ করেন—

    وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ


    'তোমরা তাদেরকে (তোমাদের ও আল্লাহর শত্রুদের) মোকাবিলা করার জন্যে যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে এবং তারা ব্যতীত অন্যদেরকে যাদের কথা তোমরা জানো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আল্লাহর পথে যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।' [সুরা আনফাল : আয়াত ৬০]

    আমাদের এই নীতি কখনো প্রভাবিত হবে না এবং বর্তমান সময়ে নিপীড়ন- নিষ্পেষণ সত্ত্বেও দীনের ক্ষেত্রে পরাজিত মুসলিম সন্তান-সন্ততির স্বভাবে কোনো পরিবর্তন আসবে না। যদিও ধূর্ত পশ্চিমা শক্তি গত তিন শতাব্দী ধরে জিহাদের এবাদত ও এর আকিদার বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলে, তোমাদের ধর্ম তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বলি, আমাদের ধর্ম ভালোবাসা ও শান্তির ধর্ম এবং বিশ্বনিখিলের জন্যে রহমত। কিন্তু এই ধর্ম তরবারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তরবারির মাধ্যমেই রক্ষিত হবে। কারণ তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ) তরবারি ছাড়া রক্ষা করা সম্ভব নয়। আর আমাদের নবী তরবারি হাতে প্রেরিত হয়েছিলেন। তারা বলে, তোমরা সন্ত্রাসী। আমরা বলি, আমরা বিশ্বজগতের জন্যে শান্তি। আমরা কেবল এই দীনের-ইসলামের শত্রুদের জন্যে ত্রাস; অন্য কারো জন্যে নয়। আমরা কেবল তাদের জন্যেই ভীতিকর যারা আমাদের উদ্দেশ্যকে ভণ্ডুল করতে চায়, আমাদের অধিকারকে ছিনিয়ে নিতে চায় এবং আমাদের দীনকে মানবিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত করতে চায় ।


    [1] মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৫১১৫, ৫৬৬৭; কানযুল উম্মাল, হাদিস ১০৫২৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪০৩১।




    আরও পড়ুন
    সপ্তম পর্ব ---------------------------------------------------------------------------------------------- নবম পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 4 hours ago.
Working...
X