গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ শাসনের সংকল্প নিয়ে উপমহাদেশ বিভিক্ত হলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে গণতন্ত্র নামক সোনার হরিণটি উপমহাদেশের জনগণের হাতে ধরা দেয়নি। তখন বলা হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি করা বলয়ের প্রভাবে উপমহাদেশের দেশগুলো স্বাধীনভাবে গণতন্ত্র চর্চা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কিন্তু, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্বের রাজনীতি ও কূটনীতিবিদরা যে উচ্চ আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন সেটাও এখন ফিকে হয়ে গেছে।
ভারতের কথাই ধরুন। দেশটি স্বাধীনতা লাভ করেছে ‘গণতন্ত্রের মাতৃভূমি’ ব্রিটেনের কাছ থেকে। স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত। এতদিনে ইউরোপের স্টাইলে পূর্ণ মানবিক মর্যাদা নিয়ে একটি গণতান্ত্রিকব্যবস্থা ভারতে কায়েম হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ দেশটিতে বিগত একদশকে গণতন্ত্রের প্রত্যেকটি সূচক নিম্নমুখী। ধর্ম ও সম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে বড় ধরনের মর্যাদাগত পার্থক্য তৈরি করা হচ্ছে।
শিক্ষা গ্রহণ, চাকরির সুযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে মুসলিমরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। কাশ্মির ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও আসামে হেমন্ত শর্মার নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্তৃত্বশীল শাসন। গণতন্ত্রের নামে প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ থাকলেও দেশটিতে স্বৈরাচারকে নির্বাচিত করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাই ভারতের ‘লিবারেল ডেমোক্র্যাসি’ মূলত ‘ইলেকটোরাল অটোক্রেসি’-তে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা নেয় আর না স্বৈরশাসন সেখানে কায়েম আছে। তারপরও গণতন্ত্রের সুফল পাকিস্তান ভোগ করতে পারেনি। দেশটিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ অনেক অনেক বেশি। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে - এমন সংবাদ বহুবার সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েম হওয়ার ঐতিহ্যও সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিমারা এ দেশের গণতন্ত্র বিকশিত করার জন্য প্রণোদনা বা সাহায্য দেয়ার বদলে বরাবরই দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে পাকিস্তানকে। এই দেশটি গণতান্ত্রিক শাসনের চর্চাকারী বটে; তবে এর মাধ্যমে জনগণ গণতন্ত্র থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়া এখনো বহু দূরের বিষয়।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র শব্দটি আজ এক প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তারপরও বলতে হয়, বাংলাদেশে এখন আর নির্বাচন বলে কিছু নেই। এর পরেও একদল লোক পাওয়া যাবে, বিনাশ হয়ে যাওয়া এই নির্বাচনব্যবস্থার পক্ষে তারা সাফাই গাইছে।
ক্ষমতাশীন দল ও তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছাই এখন সার্বভৌম। প্রশাসন কেবল শীর্ষ সার্বভৌম কর্তৃত্বের ইচ্ছার তামিল করছে। কারণ সংবিধান ও অন্যান্য লিখিত বিধিবিধান কিতাবে লিখিত। অন্য দিকে প্রশাসন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে সরকার।
প্রশ্ন হলো, আমেরিকা বা ইউরোপের মত একটি গণতন্ত্র কেন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হলো না?
এর অন্যতম প্রধান কারণ আমেরিকান নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখীনীতি। তারা নিজেদের জন্য প্রতিষ্ঠিত উন্নত গণতন্ত্রকে বাকি বিশ্বের কাছে রফতানি না করে সেটা একটা হাতিয়ার বানিয়েছে। গণতন্ত্র না থাকাকে একটি অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার পরিবর্তে সেটাকে বানিয়েছে চাপ প্রয়োগের মেশিন বা টুল।
গণতন্ত্রের নামে এই অরাজকতা চালাতে দিয়ে মূলত পশ্চিমারা অন্যান্য সুযোগ বাগিয়ে নিয়েছে। ব্যাপারটা ছিল, 'তোমরা জঙ্গলের শাসন কায়েম করো, আমাদের অসুবিধা নেই। তবে আমাদের স্বার্থটা রক্ষা করো।’
তাছাড়া বিশ্বাসযোগ্য হোক বা না হোক, ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের কখনো কোন আগ্রহই ছিল না। এখানে তাদের দরকার ছিল প্রভাব ধরে রাখা। ফলে এ অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি দেশের গণতন্ত্র একেবারে নড়বড়ে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অস্ত্র বানিয়ে পশ্চিমা আধিপত্য ধরে রাখার দিন যখন শেষ হতে চলেছে তখন ডেমোক্র্যাসি সামিটের আয়োজন সামান্য ‘বালির বাঁধ’ দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। এমনকি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে অনেক দেশেই পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র পরিত্যাগ করে ধর্ম বা সম্প্রদায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও শাসন ব্যাবস্থার দিকে আগ্রহী হবে।
অনেক দেশে গণতন্ত্রের নামে এমন সব জঘন্যতার চর্চা হয়েছে; যা সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছে যে, পশ্চিমারা মানুষের অধিকার রক্ষায় নির্ভরযোগ্য কোন মাধ্যম নয়। এদের বিশ্বাস করে বারবার ঠকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
পাশাপাশি সাধারণ জনগণ আজ ধর্মভিত্তিক আদর্শিক শাসনের কথাই অত্যধিক মাত্রায় চিন্তা করছে। জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে এমন শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভালো। তাই বলা যায়, আমেরিকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর বলেই মনে হচ্ছে।
কিন্তু, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্বের রাজনীতি ও কূটনীতিবিদরা যে উচ্চ আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন সেটাও এখন ফিকে হয়ে গেছে।
ভারতের কথাই ধরুন। দেশটি স্বাধীনতা লাভ করেছে ‘গণতন্ত্রের মাতৃভূমি’ ব্রিটেনের কাছ থেকে। স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত। এতদিনে ইউরোপের স্টাইলে পূর্ণ মানবিক মর্যাদা নিয়ে একটি গণতান্ত্রিকব্যবস্থা ভারতে কায়েম হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ দেশটিতে বিগত একদশকে গণতন্ত্রের প্রত্যেকটি সূচক নিম্নমুখী। ধর্ম ও সম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে বড় ধরনের মর্যাদাগত পার্থক্য তৈরি করা হচ্ছে।
শিক্ষা গ্রহণ, চাকরির সুযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে মুসলিমরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। কাশ্মির ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও আসামে হেমন্ত শর্মার নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্তৃত্বশীল শাসন। গণতন্ত্রের নামে প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ থাকলেও দেশটিতে স্বৈরাচারকে নির্বাচিত করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাই ভারতের ‘লিবারেল ডেমোক্র্যাসি’ মূলত ‘ইলেকটোরাল অটোক্রেসি’-তে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা নেয় আর না স্বৈরশাসন সেখানে কায়েম আছে। তারপরও গণতন্ত্রের সুফল পাকিস্তান ভোগ করতে পারেনি। দেশটিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ অনেক অনেক বেশি। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে - এমন সংবাদ বহুবার সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েম হওয়ার ঐতিহ্যও সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিমারা এ দেশের গণতন্ত্র বিকশিত করার জন্য প্রণোদনা বা সাহায্য দেয়ার বদলে বরাবরই দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে পাকিস্তানকে। এই দেশটি গণতান্ত্রিক শাসনের চর্চাকারী বটে; তবে এর মাধ্যমে জনগণ গণতন্ত্র থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়া এখনো বহু দূরের বিষয়।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র শব্দটি আজ এক প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তারপরও বলতে হয়, বাংলাদেশে এখন আর নির্বাচন বলে কিছু নেই। এর পরেও একদল লোক পাওয়া যাবে, বিনাশ হয়ে যাওয়া এই নির্বাচনব্যবস্থার পক্ষে তারা সাফাই গাইছে।
ক্ষমতাশীন দল ও তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছাই এখন সার্বভৌম। প্রশাসন কেবল শীর্ষ সার্বভৌম কর্তৃত্বের ইচ্ছার তামিল করছে। কারণ সংবিধান ও অন্যান্য লিখিত বিধিবিধান কিতাবে লিখিত। অন্য দিকে প্রশাসন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে সরকার।
প্রশ্ন হলো, আমেরিকা বা ইউরোপের মত একটি গণতন্ত্র কেন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হলো না?
এর অন্যতম প্রধান কারণ আমেরিকান নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখীনীতি। তারা নিজেদের জন্য প্রতিষ্ঠিত উন্নত গণতন্ত্রকে বাকি বিশ্বের কাছে রফতানি না করে সেটা একটা হাতিয়ার বানিয়েছে। গণতন্ত্র না থাকাকে একটি অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার পরিবর্তে সেটাকে বানিয়েছে চাপ প্রয়োগের মেশিন বা টুল।
গণতন্ত্রের নামে এই অরাজকতা চালাতে দিয়ে মূলত পশ্চিমারা অন্যান্য সুযোগ বাগিয়ে নিয়েছে। ব্যাপারটা ছিল, 'তোমরা জঙ্গলের শাসন কায়েম করো, আমাদের অসুবিধা নেই। তবে আমাদের স্বার্থটা রক্ষা করো।’
তাছাড়া বিশ্বাসযোগ্য হোক বা না হোক, ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোর গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের কখনো কোন আগ্রহই ছিল না। এখানে তাদের দরকার ছিল প্রভাব ধরে রাখা। ফলে এ অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি দেশের গণতন্ত্র একেবারে নড়বড়ে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অস্ত্র বানিয়ে পশ্চিমা আধিপত্য ধরে রাখার দিন যখন শেষ হতে চলেছে তখন ডেমোক্র্যাসি সামিটের আয়োজন সামান্য ‘বালির বাঁধ’ দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। এমনকি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে অনেক দেশেই পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র পরিত্যাগ করে ধর্ম বা সম্প্রদায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও শাসন ব্যাবস্থার দিকে আগ্রহী হবে।
অনেক দেশে গণতন্ত্রের নামে এমন সব জঘন্যতার চর্চা হয়েছে; যা সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছে যে, পশ্চিমারা মানুষের অধিকার রক্ষায় নির্ভরযোগ্য কোন মাধ্যম নয়। এদের বিশ্বাস করে বারবার ঠকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
পাশাপাশি সাধারণ জনগণ আজ ধর্মভিত্তিক আদর্শিক শাসনের কথাই অত্যধিক মাত্রায় চিন্তা করছে। জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে এমন শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভালো। তাই বলা যায়, আমেরিকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর বলেই মনে হচ্ছে।
Comment