বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
প্রাথমিক গেরিলা যুদ্ধ পাঠ-৫
প্রাথমিক গেরিলা যুদ্ধ পাঠ-৫
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এই পাঠে আমরা আগের পাঠের ধারাবাহিকতা অবলম্বন করব ইনশাআল্লাহ। চতুর্থ পাঠে আমরা গেরিলা যুদ্ধে সফলতা লাভে শায়েখ আবু মুসাব ফা: আ: (ইদারাহ ও তাঞ্জিমু হারবিল ইসাবাত কিতাব থেকে) এর বলা ৪টি কারণ সম্পর্কে জেনেছি আলহামদুলিল্লাহ। এই পাঠে এগুলোর কিছু ব্যাক্ষা বুঝার চেস্টা করব ইনশাআল্লাহ।
শায়েখ বলেছেন গেরিলা যুদ্ধে সফলতার জন্য চারটি প্রধান কারন রয়েছে
১. একটি ইসলামী সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন থাকবে।
২. এটি জনগনের নামে চলবে বা আন্দোলিত হবে।
৩. গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার মত অবস্থা/কারণ/ পরিস্থিতি থাকা লাগবে।
৪. পরিপূর্ণ পরিকল্পনা ও কৌশল থাকা লাগবে।""
মনে রাখতে হবে এই চারটি কারনের আগে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল। আপনার কাছে যদি সব উপাদান-উপকরণ থাকে কিন্তু ইখলাস ও তাওয়াক্কুল না থাকে তাহলে এই মহান আমলের চেস্টা করে কি লাভ হল।
১. একটি ইসলামী সংগঠন থাকবে:
এই ইসলামী দলটি ভ্যানগার্ড বা অগ্রবর্তী বাহিনী হিসেবে থাকবে। দলটি জনগণের কাংখিত দল হিসেবে থাকবে। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার দিকে নজর রাখবে। এই দলের সবর, কুরবানী হবে সব থেকে বেশী। এই দলে অবশ্যই অনেক বেশী মেধা সম্পন্ন ব্যক্তিরা থাকবে যারা অনেক গতিশীল, অনেক উদ্যমী, উত্তম আখলাক থাকবে। গেরিলা যুদ্ধ মানুষের যুদ্ধ এটা মানুষের উপর নির্ভর করে। যদি আপনার জনগণের সমর্থন না থাকে আপনি খুব সহজেই ব্যর্থ হবে। এই দলটি গেরিলা যুদ্ধ যখন শুরু হবে কিভাবে মানুষকে উত্তেজিত, ঠান্ডা, তার অনুভুতি কাজে লাগানো এগুলো পারা লাগবে। এই কারনে এই সংগঠনের নেতাদের সশিয়াল সাইকলজী বা সামাজিক মনবিজ্ঞান জানতে হয়। আর এই শাস্ত্র আপনাকে শিখাবে কিভাবে আপনি তাদের আন্দোলিত করতে পারেন(১)।
২. মুসলিম জনগণের নামে আন্দোলন করা:
গেরিলা যুদ্ধের সফলতার জন্য এটি প্রধান ও মৌলিক কারণ। এই কারণ আঞ্জাম না দেয়া গেলে খুব সহজেই আপনার শত্রু আপনাকে এক ঘরে করে ফেলবে। যেমনটি আমেরিকা ও তার মিত্রগণ মুসলিম জনগণ থেকে মুজাহিদ শ্রেণীকে আলাদা করার চেস্টা করেছে বিভিন্ন কুটচালের মাধ্যমে। গেরিলাদের থাকা খাওয়া, রিক্রটমেন্ট, লুকানোর জায়গা, তহবিল, ইনফরমেশন ইত্যাদি প্রায় সব কিছুতেই জনগণকে প্রয়োজন। মাও সেতুংএর একটি বিখ্যাত কথা আছে এমন " জনগণ হচ্ছে বিপ্লব এবং গেরিলাদের জন্য মাছের কাছে সমুদ্রের মতো।" মাছ সমুদ্রে লুকিয়ে থাকে, এর মধ্যে সাঁতার কাটে, এটি থেকে খায় এবং এতে চলাচল করে এবং এই সমুদ্রের উপস্থিতি ছাড়া মাছ বাঁচতে পারে না। ঠিক গেরিলারাও জনগণের মাঝে এভাবে থাকে। আর বিশেষ করে যদি বাংলাদেশের কথা ধরা হয় তাহলে এই অঞ্চলে শহুরে গেরিলা টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এটাতে জনগণ ও মুজাহিদদের অবস্থান পাশাপাশি হয়। তাই এতে জনসম্প্রক্ততা আরও বেশী থাকা চাই।
জনগণ যদি জাহেল থাকে জিহাদের বিষয় তাহলে আগে জনগণকে জিহাদের জন্য উপযুক্ত করতে হবে তাদের উপর মেহনত করতে হবে সবরের সাথে। এর আগে শুরু করলেই উম্মতের বিফলতা আসতে পারে।
আপনাকে দেখতে হবে আপনার কাছে কি এমন কোন বাক্য, ইচ্ছা আছে যা জনগণের সাথে মিলে। জনগণ কি আপনার সাথে জিহাদ করতে চায়, জনগণ কি সশস্ত্র পরিবর্তন চায় ইত্যাদি। আপনাকে জিহাদের আবহাওয়া তৈরি করতে হবে, মানুষের হৃদয়ে আপনার প্রতি টান তৈরি করতে হবে।
৩. গেরিলা যুদ্ধের সাফল্যের তৃতীয় কারণ: "এমন পরিস্থিতির অস্তিত্ব যা বিপ্লবকে প্রয়োজনীয়তা এবং উপযুক্ততা দেয়।"
এমন একটি বিষয় থাকতে হবে যা মানুষকে একত্রিত করে। তা হতে পারে ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক সমস্যা বা জুলুম বা দখলদারিত্ব। যার কারনে আপনি জনগনকে বোঝাতে সক্ষম হবেন আপনি কেন যুদ্ধ করবেন এবং কেন তাদের করা উচিত। এমন এক বিষয় যার জন্য মরে যাওয়া এবং যদি সে মারা যায় তবে এটি তার জন্য বেঁচে থাকার চেয়ে কার্যত ভাল হবে৷ উদাহরণস্বরূপ, যে ব্যক্তির ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, তার ছেলেকে বন্দী করা হয়েছে, তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তার বোনকে অপহরণ করা হয়েছে, তার অর্থ কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তার বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে, কারণ এই মৃত্যু তার জন্য বেঁচে থাকার চেয়ে ভাল। এমন একটি সমস্যা অবশ্যই থাকতে পারে যা বিপ্লবের আবহাওয়ার দিকে নিয়ে যায়। জিহাদের একটি আবহাওয়া, একটি বায়ুমণ্ডল এটি মানুষকে বিপ্লবে বিশ্বাসী করে তোলে।
৪. গেরিলা যুদ্ধের সাফল্যের চতুর্থ কারণ: একটি ব্যাপক এবং সমন্বিত পরিকল্পনা এবং কৌশল থাকা;
জিহাদ এই পৃথিবীর অন্যান্য কর্মের মত তাই এটি সফল হওয়ার জন্য, একটি ব্যাপক এবং সমন্বিত পরিকল্পনা এবং কৌশল থাকতে হবে যাতে যে বিপ্লব চায় সে জানে যে সে এখান থেকে শুরু করে এবং ওখানে গিয়ে শেষ হয় এবং সে কাজটিকে পর্যায়গুলিতে ভাগ করে এবং পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করা, ১০ বছর ইত্যাদি। লং ও শরট প্ল্যান থাকা, এবং তার একটি ব্যাপক পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি রয়েছে যেখানে তিনি জানেন কিভাবে তিনি যা চান তা অর্জন করবেন।
শায়েখ আবু মুসাব বলেন,
""পরিকল্পনা না থাকলে, কাজ বিশৃঙ্খল হয়ে উঠবে। এটি একটি খুব বড় প্রবল স্রোতের মতো, যা কিছুক্ষণ পরে উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়বে এবং একটি মূল্যহীন স্রোতে পরিণত হয়, যখন এই প্রবাহ, যদি এটি দখল করা হয় এবং একটি বাঁধ তৈরি করা হয়, আপনি দেখতে পাবেন যে এটি জমিতে সেচ দেয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, কাজ তৈরি করে এবং এটির সম্পূর্ণ ব্যবহার করে এবং এটি করে পরিকল্পনা এবং বুদ্ধির মাধ্যমে।
(শাইখের ইদারাহ ওয়া তাঞ্জিমু হারবিল ইসাবাত থেকে পেজ-২০)
(১)শুধু এক শাস্ত্রই নয়, বরং এই আন্দোলনের নেতাদের অনেক বেশী দুনিয়াবি ইল্ম প্রয়োজন, যেমন: ব্যবস্থাপনা, সাইকলজী, ভূগোল, নেতৃত্ব, যুদ্ধশাস্ত্র ও অভিজ্ঞতা, মিডিয়া, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি।
আজকের পাঠ এতটুকু রাখা হল। প্রিয় ভাইয়েরা ইল্ম অর্জনে অনেক মেহনত প্রয়োজন। আপনি হয়ত স্ক্রল করে একবার পড়লেন, বা ২বার পড়লেন। এটি যথেস্ট নয় এটি আপনার হ্রদয়ে গাথার জন্য আপনি বারবার এই বিদ্যা সম্পর্কে পড়তে হবে, এটি মনে রাখা আপনার জন্য অনেক জরুরী কারণ এটি সরাসরি জিহাদের সাথে সম্প্রিক্ত বিষয়। আপনি এই বিদ্যা মনে রাখার জন্য বারবার রিভাইস, সামারী (সারাংশ), নোট করে পড়ার চেস্টা করতে পারেন। ৭-১০-১৫ দিন পরপর আপনার নোট খুলে পড়লেন, তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে আপনি এগুলো এমন কোথায় লেখবেননা যে তাগুত হাতের নাগালে পেয়ে যাবে। আল্লাহ আপনাদের হৃদয়ে বসিয়ে দেক এই ইল্ম।
Comment