হাদিসে কি জিহাদে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে?
এক ভাই জানতে চেয়েছেন, حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ صَالِحٍ حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ عَنْ هِلَالِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ جَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ جَلَسَ فِيْ أَرْضِهِ الَّتِيْ وُلِدَ فِيْهَا فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا نُبَشِّرُ النَّاسَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوْهُ الْفِرْدَوْسَ فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ أُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ فُلَيْحٍ عَنْ أَبِيْهِ وَفَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ
২৭৯০. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমাযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের মত। তোমরা আল্লাহর নিকট চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবনু ফুলাইহ্ (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপর রয়েছে আরশে রহমান। (৭৪২৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৫)এই হাদিসকে কেউ যদি জিহাদ থেকে পিছনে বসে থাকার পক্ষে দলিল দেয়। তাহলে এর নির্ভরযোগ্য উত্তর কিভাবে দেওয়া হবে।
উত্তর:
০১. মুহতারাম ভাই, হাদিসটিতে জিহাদ করার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। ইমাম বুখারী রহ. হাদিসটি জিহাদের উঁচু মর্তবা বয়ান করতে নিম্নোক্ত শিরোনামের অধীনে এনেছেন:
بَابُ دَرَجَاتِ المُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ– আল্লাহর পথের মুজাহিদদের উঁচু মর্তবার বিবরণ সংক্রান্ত বাব
তাই এ হাদিস দিয়ে জিহাদ থেকে বসে থাকার দলীল দেয়া সহীহ নয়।
হাদিসটিতে বলা হয়েছে: জান্নাতে একশো স্তর মুজাহিদদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। তোমরা যদিও সালাত সাওমের মতো ফরযে আইনগুলো আদায় করলে জান্নাতে যেতে পারবে, তবে তোমাদের উচিত –জিহাদ যখন ফরযে আইন থাকে না তখনও- জিহাদ করা, যাতে উঁচু মর্তবা লাভ করতে পারো। এ কারণে মুআজ রাদি. যখন মানুষজনকে সুসংবাদ দিতে অনুমতি চাইলেন যে, শুধু সালাত সাওমের মতো ফরযে আইন আদায় করলেই জান্নাত মিলবে, তখন রাসূল নিষেধ করে দেন। কারণ, এ বিষয়টি জানতে পারলে লোকজন জিহাদের মতো উঁচু মর্তবার আমল ছেড়ে দিয়ে জান্নাতের উচ্চ স্তর থেকে মাহরুম হবে। তিরমিযির বর্ণনায় বিষয়টি এসেছে,
قَالَ مُعَاذٌ: أَلَا أُخْبِرُ بِهَذَا النَّاسَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَرِ النَّاسَ يَعْمَلُونَ». -سنن الترمذي ت شاكر (4/ 675): 2530
“মুআজ রাদি. আরজ করেন, (হে আল্লাহর রাসূল) লোকজনকে কি বিষয়টি জানাবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দেন, ‘লোকজনকে আমল করতে দাও’।” –সুনানে তিরমিযি: ২৫৩০
অর্থাৎ তুমি জেনেছো, ব্যস। এতটুকুই থাকুক। লোকজনকে জানানোর দরকার নেই। এতে তারা শুধু ফরযে আইনে ক্ষান্ত থাকবে, জিহাদের মতো উঁচু মর্তবার আমল ছেড়ে দিয়ে মাহরুম হবে। (ফাতহুল বারি: ৬/১৫, মাকতাবাতুস সাফা)[1]উল্লেখ্য, এ ধরনের হাদিস সাহাবায়ে কেরাম সারা জীবন গোপন রাখতেন। মৃত্যুর সময় সন্নিকট হলে নির্ভরযোগ্য বিশেষ ব্যক্তির কাছে বয়ান করতেন, যাতে রাসূলের হাদিসটি একেবারে হারিয়ে না যায়। কাজেই এ ধরনের হাদিস আমভাবে মানুষের মাঝে বয়ান করা ঠিক না। বরং আমাদের উচিত সালাত সাওমের পাশাপাশি জিহাদের মতো ফজিলতপূর্ণ আমলগুলোর প্রতি লোকজনকে উৎসাহিত করা, যাতে রাসূলের আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। রাসূলের উম্মত জান্নাতের আ’লা দরজা লাভ করতে পারে।
০২. হাদিসটিতে যারা জিহাদ করতে না পারার দুঃখে দুঃখিত তাদেরকে শান্তনা দেয়া হয়েছে যে, তোমরা এতো বেশি পেরেশান হয়ো না। জিহাদ যদি করতে নাও পারলে, জিহাদের ফজিলত যদি লাভ করতে নাও পারলে, তথাপি সালাত সাওমের মতো ফরযে আইনগুলো যেহেতু করেছো, তোমরাও জান্নাতে যাবে। (ফাতহুল বারি: ৬/১৪, মাকতাবাতুস সাফা)[2]
০৩. হাদিসটিতে ঈমান আনার পর শুধু সালাত ও সাওম পালন করলেই জান্নাত অবধারিত বলা হয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, অন্যান্য বর্ণনায় হজ্বের কথাও এসেছে, তবে যাকাতের কথা আসেনি কোনো বর্ণনায়। এখন কি এ কথা বলা সহীহ হবে যে, যাকাত না দিলেও জান্নাত অবধারিত? অবশ্যই না।
সালাত-সাওম ধনী গরীব সবার উপর ফরযে আইন। হজ্ব যাকাত সামর্থ্য থাকলে ফরয, অন্যথায় ফরয নয়।
বুঝানো উদ্দেশ্য: যার উপর যেটি ফরযে আইন, সে যদি সেটি আদায় করে, অতিরিক্ত অন্যান্য নেক আমল যেগুলোর দ্বারা দরজা বুলন্দ হয় –যেমন জিহাদ- নাও করে, তবুও সে জান্নাতে যাবে। যেহেতু সে কোনো ফরয তরক করেনি। অতএব, কারও উপর যদি হজ্ব ফরয হয় কিন্তু সে হজ্ব না করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত না। বরং পাকড়াওয়ের সম্মুখীন হবে। কারও উপর যদি যাকাত ফরয হয় আর সে যাকাত আদায় না করে, তাহলে সেও পাকড়াওয়ের সম্মুখীন হবে। এমনিভাবে কারও উপর যদি জিহাদ ফরযে আইন হয় আর সে জিহাদে শরীক না হয় তাহলে সেও পাকড়াওয়ের সম্মুখীন হবে। তখন আমাদের করণীয় হবে নিজেরাও জিহাদ করা, অন্যদেরকেও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা। যেমনটা আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন:
{يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ} [الأنفال: 65]
“হে নবী, আপনি মুমিনদেরকে কিতালে উৎসাহিত করুন।” –আনফাল: ৬৫
***
“হে নবী, আপনি মুমিনদেরকে কিতালে উৎসাহিত করুন।” –আনফাল: ৬৫
***
[1] فتح الباري لابن حجر (6/ 12): وردت في الحديث زيادة دلت على أن قوله في الجنة مائة درجة تعليل لترك البشارة المذكورة فعند الترمذي من رواية معاذ المذكورة قلت يا رسول الله ألا أخبر الناس قال ذر الناس يعملون فإن في الجنة مائة درجة فظهر أن المراد لا تبشر الناس بما ذكرته من دخول الجنة لمن آمن وعمل الأعمال المفروضة عليه فيقفوا عند ذلك ولا يتجاوزوه إلى ما هو أفضل منه من الدرجات التي تحصل بالجهاد وهذه هي النكتة في قوله أعدها الله للمجاهدين. اهـ
[2] فتح الباري لابن حجر (6/ 12): قوله وجلس في بيته فيه تأنيس لمن حرم الجهاد وأنه ليس محروما من الأجر بل له من الإيمان والتزام الفرائض ما يوصله إلى الجنة وإن قصر عن درجة المجاهدين. اهـ
Comment