আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স পরিবেশিত
“জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || শেষ পর্ব
==================================================
=====
“জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || শেষ পর্ব
==================================================
=====
২. জিহাদ ছেড়ে দেয়ার কারণে শিরক ও জুলুম সর্বত্র ছড়িয়ে পরে, কুফর ও কাফিররা শক্তিশালী হয়ে যায় এবং মানুষ মানুষের দাসে পরিণত হয় এবং এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে এর অনুপুস্থিতিতে মানুষের মাঝে দুর্দশা ও দূর্নীতি ছড়িয়ে পরে। আল্লাহ বলেছেনঃ
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعٰلَمِينَ
“আল্লাহ্যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন তবে পৃথিবীবিপর্যস্ত হইয়া যাইত। কিন্তু আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।”
আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيٰرِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّآ أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوٰمِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوٰتٌ وَمَسٰجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ
“তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্।’ আল্লাহ্ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিষ্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ-যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নামে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যেতাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।”
সুতরাং ব্যাপারটা যদি এরূপ না হত যে আল্লাহ্ ঈমানদারদের জিহাদের মাধ্যমে কাফিরদেরকে বিতাড়িত করবেন, তাহলে কাফিররা তাদের জুলুমের মাধ্যমে ঈমানদারদের উপর কর্তৃত্ব লাভ করতো আর যদি তারা কর্তৃত্ব পায়, তাহলে তারা মানুষকে জোর করে আল্লাহর পরিবর্তে তাদের দাসে পরিণত করতো। যদি মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের ইবাদত করতো, তাহলে সমস্ত বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেত যেহেতু জীবন সঠিকভাবে পরিচালিত হবেনা যদি না তা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী পরিচালিত না হয় এবং এটাই আল্লাহর দাসত্ব কায়েমের পথ। এই ভাবেই উন্নত, সৎ ও প্রশংসিত চরিত্র মানবজাতি দ্বারা রচিত হয়েছে কারণ যে এই পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন তিনি আল্লাহ, তিনি সেই মহান সত্ত্বা যিনি জীবন সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানেন কি আছে জীবের বুকের গভীরে। অন্য দিকে যদি কোন দেশে কাফিররা কর্তৃত্ব লাভ করে, তারা নিজেদের খেয়াল খুশি অনুযায়ী মানুষের আইন প্রনয়ন করে। কিন্তু সব বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই এবং তারা ভুল-ভ্রান্তি ও কামনা-বাসনার উর্ধ্বে নয় এবং তারা জানেনা প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির জন্য কি সবচেয়ে উত্তম। ফলে তারা যা ইচ্ছা তা করে বেড়ায়, মানুষের জীবনেকে দূষিত করে ফেলে যা বর্তমানে ঘটছে এবং যেখানে কাফিররা শাসন করছে দেখুন বাস্তবে কি ঘটছে ঐ সব দেশে যা এই বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট। এটা কি জিহাদ ত্যাগ করার ফল নয় যার জন্য আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন? মানুষের জীবন অনেক সুন্দর ও ভালো হতো যদি শারী‘আ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত হতো। এই কারণেই রসূল সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম হুকুম দিয়েছেন জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এমনকি তা কোন জালেম শাসকের অধিনে হলেও যে কিনা কাফির হয়ে যায় নাই। কারণ কাফির শাসকদের মানব রচিত আইনের অধিনে শাসিত হওয়ার চেয়ে জালেম শাসকের অধিনে আল্লাহর আইন দ্বারা শাসিত হওয়া অনেক ভালো কেননা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন দিয়ে শাসনই পৃথিবীতে দূর্নীতির প্রধান কারণ।
৩. লাঞ্ছনা ও অবমাননার কারণ হলো জিহাদ ত্যাগ করা যেরূপ রসূল ﷺ বলেছেন,
“যদি তুমি জিহাদ ত্যাগ কর, গরুর লেজ ধরে থাক এবং বাইয়ুল ইনাহ (এক প্রকার সুদের কারবার) তে জড়িত থাক, তাহলেআল্লাহ্ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন যা সরানো হবে না যতক্ষণ নাতোমরা আল্লাহ্র কাছে তওবা না কর এবং ফিরে না আস যার উপর তোমরা ছিলে (জিহাদে)।”
এটা এমন একটি ব্যাপার যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি আমাদের সময়ে, যেহেতু কাফিররা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে এবং মুসলিমরা পরাধীনতার মধ্যে বাস করছে- কাফিররা তাদের সম্পদ ভোগ করছে, তাদের কর্মকান্ডে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে, তাদেরকে সকল প্রকার লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার করছে। এবং এটার অন্য কোন কারণ নেই শুধুমাত্র আল্লাহর বিধান পেছনে ছুড়ে ফেলা ও শারী‘আর বিধি-বিধান ত্যাগ করার করণে যার মধ্যে জিহাদের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভূক্ত। কাফিররা মুসলিমদেরকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিবে না। চিন্তা কর তারা কি করছে। তাদের খারাপ কাজগুলো বন্ধ করবে না সহজ ও মিষ্টি কথার দ্বারা। বরং যা তাদের আতঙ্কিত করবে ও বাধ্য করবে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে তা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ; কুফর ও এর সহযোগীদের জন্য যার মধ্যে রয়েছে লাঞ্ছনা এবং মুসলিমদের জন্য শক্তি ও সম্মান । এই বাস্তবতা ইতিহাস প্রত্যক্ষ করেছে। যেহেতু এমন কোন ভূমি নেই যেখানে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছে কিন্তু মুসলিমরা সেখানে সম্মানিত হয়নি এবং কাফির শত্রুরা মুজাহিদীনদের “আল্লাহু আকবার” ধ্বনিতে আতঙ্কিত হয়নি।
আল-মওদুদী বলেছেন, “এই উম্মাহ্ নিজেকে রক্ষা করার জন্য যদি এই খারাপ কাজ থেকে তওবা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করতো এবং আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, সম্পদ, ব্যক্তিগত ইচ্ছা ত্যাগ করতো, জান কোরবানী দিত এবং এটার জন্য তার প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতো তাহলে এই উম্মাহর দূর্বল ও অত্যাচারিত জাতিতে পরিণত হওয়ার কোন উপায় থাকতো না। এবং এমন কোন শক্তি থাকতো না, তা সে যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, মুসলিমদের সম্মান ও পবিত্রতা কেড়ে নেয়। এই উম্মাহ্কে মিথ্যার কাছে মাথা নত করার চেয়ে সত্যের কাছে মাথা নত করাকে এবং মৃত্যুকে অগ্রধিকার দিতে হবে। যদি তার সত্যের বাণীকে প্রতিষ্ঠিত করার ও এটাকে সাহায্য করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে তাকে কমপক্ষে সত্যেকে যে কোন উপায়ে রক্ষা করতে হবে এবং এটাই হচ্ছে সবচেয়ে নিম্ন স্তরের সম্মান যা সে অর্জন করতে পারে।”
সাইয়্যিদ কুতুব (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া (হিজরত করা) এবং জিহাদ করাকে ভয় পায় এই জন্য যে, তাদের শাস্তি, যন্ত্রনা, শহীদ, জীবন হানি, সন্তান এবং সম্পত্তি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তাহলে তাদের ভেবে দেখা উচিত তাদের এ দুনিয়াবি ত্যাগ যেমন তাদের জীবন, সম্পদ, সন্তান এবং সর্বোপরি তাদের চরিত্র ও সম্মান আল্লাহ্ বাদে অন্য কারো জন্য…সত্যিকার অর্থে, দুনিয়ার জালিম শাসকের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য যে ত্যাগের প্রয়োজন তা দুনিয়াবি ত্যাগ যা আল্লাহ্ বাদে অন্য কারো জন্য করা হয় তার তুলনায় অনেক কম। সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো এই সব ত্যাগ লাঞ্ছনা, পাপ ও অপমান ছাড়া কিছুই বয়ে আনে না।”
৪. জিহাদ পরিত্যাগের মাধ্যমে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতের ঐসব পুরষ্কার হতে বঞ্চিত হচ্ছো যা আল্লাহ্ মুজাহিদীন ও শহীদদের জন্য আখিরাতে রেখেছেন । তুমি আরও বঞ্চিত হচ্ছো এই দুনিয়ার সম্মানের জীবন যা শারী‘আর উপর স্থাপিত এবং বঞ্চিত হচ্ছো শাহাদাত ও যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ (গণীমতের মাল) থেকে। এবং ঈমানের উপর বেড়ে উঠা হতে বঞ্চিত হচ্ছো যা জিহাদ ও আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও যুদ্ধ ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।
৫. জিহাদ পরিত্যাগের ফলে মুসলিমদের মধ্যে শত্রুতা ও বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং এটা এমন একটি ব্যাপার যা আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি। এমন কোন যুগ অতিবাহিত হয়নি যখন মুসলিম উম্মাহ্ জিহাদকে ভুলে গিয়েছিল যার ফলশ্র“তিতে তারা নিজেরা নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল, এক মুসলিম অপর মুসলিম ভাই এর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলি নিয়েছিল এবং একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। আমাদের বর্তমান পরিস্থিত সম্পর্কে আরেকটি পর্যবেক্ষণ হলো যা আল্লাহর শারী’আ ও জিহাদ ত্যাগের কারণে হয়েছে তা হলো মুসলিমরা তাদের জন্য বিভেদ, ভাগাভাগি ও অনৈক্যকে নিয়মে পরিনত করেছে এবং তারা নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। এটা আর অন্য কোন কারণে নয় শুধুমাত্র সত্যিকারের মানহাজ (কর্ম পদ্ধতি) ও আল্লাহর এই ইবাদত (শরী’আ বাস্তবায়ন) একেবারে বাদ দেওয়ার কারণে হয়েছে।
যার ফলে কাফিররা মুসলিমদের ভূমিতে আধিপত্য বিস্তার করছে এবং তারা মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ও ঝগড়াকে উস্কে দিয়েছে। আল্লাহর শারী’আ থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের ব্যাপারে এটাই আল্লাহর পন্থা এবং তাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার একটি প্রধান অংশ ভুলে গিয়েছে, কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ
وَمِنَ الَّذِينَ قَالُوٓا إِنَّا نَصٰرٰىٓ أَخَذْنَا مِيثٰقَهُمْ فَنَسُوا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا بِهِۦ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ إِلٰى يَوْمِ الْقِيٰمَةِ ۚ وَسَوْفَ يُنَبِّئُهُمُ اللَّهُ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ
“যারা বলে, ‘আমরা খৃষ্টান’, তাদেরও অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম; কিন্তুতারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার এক অংশ ভুলে গিয়েছে। সুতরাং আমি তাদের মধ্যেকিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরূক রেখেছি; তারা যা করত আল্লাহ্ তাদেরকে অচিরেই তা জানাইয়া দিবেন।”
হে আল্লাহ! আমাদের তা শিক্ষা দিন যা আমাদের উপকারে আসবে এবং আমাদের উপকৃত করুন যা আমরা শিক্ষা লাভ করেছি।
হেআল্লাহ! আমাদের সত্যকে সত্য বলে জানার এবং তা অনুসরণ করা তৌফিক দিন এবংমিথ্যাকে মিথ্যা বলে জানার ও তা বর্জন করার তৌফিক দান করুন।
হেআল্লাহ! আমাদেরকে জিহাদের মাধ্যমে সম্মান দান করুন এবং শহীদের কাফেলায় অংশগ্রহন করার তৌফিক দান করুন এবং আমাদেরকে আপনার আনুগত্য ও সন্তুষ্টির জন্যকবুল করুন।
আমাদের সর্বশেষ দো’আ হলো সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন রসূল সাল্লালাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সঙ্গীদের উপর। আল্লাহুম্মা আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
আরও পড়ুন
Comment